Author : Arya Roy Bardhan

Published on Feb 08, 2024 Updated 0 Hours ago

অন্তর্বর্তিকালীন বাজেট একটি অস্থায়ী পরিকল্পনা হলেও সরকারের অগ্রাধিকার ও দেশের প্রয়োজনীয়তা অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের দিকেই ঝুঁকে আছে।

অন্তর্বর্তিকালীন বাজেট: ফিরে দেখা

ভারতের কেন্দ্রীয় বাজেটে ব্যয় ও রাজস্বের পরিপ্রেক্ষিতে আসন্ন অর্থবছরের জন্য সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে। যদিও বাজেট-পূর্ববর্তী অর্থবছরে আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির প্রতিফলন ঘটায়, এর প্রাথমিক উদ্দেশ্য হল ভারতের জনগণের কাছে সরকারের আর্থিক পরিকল্পনা ও লক্ষ্যগুলি পৌঁছে দেওয়া। যাই হোক, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪–এ একটি অন্তর্বর্তী বাজেট পেশ করেছেন, যা নতুন সরকার নির্বাচিত না–হওয়া পর্যন্ত সরকারের আর্থিক কার্যক্রমের একটি অস্থায়ী পরিকল্পনা। এই নিবন্ধটি বাজেটের প্রধান নজরের ক্ষেত্রগুলিকে চিহ্নিত করবে, এবং কীভাবে সরকার দরিদ্র, যুবক, মহিলা ও কৃষকদের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে ভারতের বৃদ্ধির কল্পনা করে, সেই বিষয়টি তুলে ধরবে।

শতাব্দীর সশক্তকরণ 

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ১১ ডিসেম্বর ২০২৩–এ ‘‌
বিকশিত ভারত@২০৪৭: যুবদের  কণ্ঠস্বর’‌ চালু করেছিলেন তরুণদের ঐক্যবদ্ধ করতে, এবং ভারতের উন্নয়নের গতিপথকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে তাদের উদ্ভাবনী ক্ষমতাকে কাজে লাগাতে। স্বাধীনতার এক শতাব্দীর মধ্যে ভারতের উন্নয়ন অর্জনের এই লক্ষ্যটি অন্তর্বর্তিকালীন বাজেট, ২০২৪–এও প্রতিধ্বনিত হয়েছে৷ বাজেটটি ভারতের 'অমৃত কাল ' তরঙ্গে চড়ে জনতত্ত্ব (‌ডেমোগ্র‌্যাফি)‌, গণতন্ত্র (‌ডেমোক্র‌্যাসি)‌ ও বৈচিত্র্য (‌ডাইভারসিটি), এই‌ ত্রিত্বের ভারসাম্য বজায় রাখার দিকে ঝুঁকেছে। সরকার একটি জনকেন্দ্রিক উন্নয়ন পদ্ধতির উপর বর্ধিত নজরের মাধ্যমে এটি অর্জনের লক্ষ্য রাখে, অর্থাৎ, সর্বোচ্চ সম্ভাব্য মাত্রার অন্তর্ভুক্তি সহ স্থিতিশীল উন্নয়ন।


বাজেটটি ভারতের 'অমৃত কাল' তরঙ্গে চড়ে জনতত্ত্ব (‌ডেমোগ্র‌্যাফি)‌, গণতন্ত্র (‌ডেমোক্র‌্যাসি)‌ এবং বৈচিত্র্য (‌ডাইভারসিটি)‌, এই ত্রিত্বের ভারসাম্য বজায় রাখার দিকে ঝুঁকেছে।

বাজেটে দেশের বৃদ্ধি ও সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য মূল পদ্ধতিগুলি তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। প্রথমত, ভৌত, ডিজিটাল ও সামাজিক, সব ধরনের পরিকাঠামোগত উন্নয়নের ভূমিকার উপর জোর দেওয়া হয়েছে, যা একটি স্থিতিশীলতার অনুসারী বৃদ্ধির জন্য পদ্ধতিগত সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। দ্বিতীয়ত, আর্থিক অন্তর্ভুক্তির মাধ্যম হিসেবে ডিজিটাল প্রযুক্তির ভূমিকাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, এবং ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার (ডিপিআই)–এর আনুষ্ঠানিকীকরণকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তৃতীয়ত, বলা হয়েছে পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি)–এর প্রসারিত ভিত্তির প্রভাবগুলিকে সরকারের রাজস্বপ্রাপ্তি বাড়ানোর জন্য আরও কাজে লাগাতে হবে। চতুর্থত, গুজরাট ইন্টারন্যাশনাল ফাইনান্স টেক–সিটি ইন্টারন্যাশনাল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস সেন্টার (গিফট আইএফএসসি)–কে একটি বিশ্বব্যাপী মূলধন ও আর্থিক পরিষেবার গেটওয়ে হিসাবে আরও উন্নীত করা হবে, যা অর্থনীতিতে প্রায় এক মিলিয়ন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। পঞ্চম, ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য স্বয়ংসক্রিয় মূল্যস্ফীতি ব্যবস্থাপনাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এই সমস্ত অনুশীলন জুড়ে, সর্বাগ্রে জনকেন্দ্রিক অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করা হবে।


মূল কর্মক্ষেত্র: বর্তমান ও ভবিষ্যৎ

যদিও সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির জন্য সমস্ত ক্ষেত্রব্যাপী নীতিগত পদক্ষেপের প্রয়োজন হবে, বাজেটে কয়েকটি নজরের ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়েছে, যেগুলি গত দশকে দুর্দান্ত সম্ভাবনা প্রদর্শন করেছে। যেমন, প্রত্যক্ষ সুবিধা হস্তান্তর (ডিবিটি) মিশন, যা ২০১৩ সালে কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলির বিতরণে বিলম্ব ও জালিয়াতিমূলক ঘটনার উপর নজর রাখার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তার মাধ্যমে
৩৪.০৬ ট্রিলিয়ন ভারতীয় রুপির ক্রমবর্ধমান সুবিধা হস্তান্তর হয়েছে৷ এটি ২.৭ ট্রিলিয়ন ভারতীয় রুপি সঞ্চয়ের দিকে চালিত করেছে, যা সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ কল্যাণমূলক উপকরণ হিসাবে এর তাৎপর্য চিহ্নিত করেছে। অধিকন্তু, বহু কল্যাণমূলক প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণে ২৫০ মিলিয়ন মানুষ বহুমাত্রিক দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে এসেছেন।

 

প্রত্যক্ষ সুবিধা হস্তান্তর (ডিবিটি) মিশন, যা ২০১৩ সালে কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলির বিতরণে বিলম্ব ও জালিয়াতিমূলক ঘটনার উপর নজর রাখার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তার মাধ্যমে ৩৪.০৬ ট্রিলিয়ন ভারতীয় রুপির ক্রমবর্ধমান সুবিধা হস্তান্তর হয়েছে৷ 

ভারতের বৃদ্ধিতে যুবকদের একটি ফলপ্রসূ ভূমিকা দেওয়া হয়েছে, এবং জোর দিয়ে বলা হয়েছে যে তরুণরাই হবে উদ্ভাবনের চালক, যা কিনা স্থিতিশীলতার অনুসারী বৃদ্ধির চাবিকাঠি। তবে, তরুণদের উদ্ভাবনী ভূমিকার দিকে নিয়ে যেতে দেশে দক্ষতার বিভাজন দূর করতে হবে। যদিও ১৪ মিলিয়ন যুবাকে ইতিমধ্যেই স্কিল ইন্ডিয়া মিশনের অধীনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, তবে মানসম্পন্ন শিক্ষাকে জনসাধারণের কল্যাণে পরিণত করতে হবে। এটি সহজতর করার জন্য অন্তর্বর্তী বাজেট, ২০২৪–এ পিএম শ্রী স্কুল কর্মসূচির জন্য ব্যয় ৪০ বিলিয়ন ভারতীয় রুপি থেকে বাড়িয়ে ৬০.৫ বিলিয়ন ভারতীয় রুপি করা হয়েছে৷ তরুণদের মধ্যে বিনিয়োগ একটি সময়োপযোগী কৌশল, এবং ভারতের জনসংখ্যাগত লভ্যাংশের সম্পূর্ণ লাভ তোলার জন্য এটিকে প্রসারিত করা উচিত৷

 

 বিশ্বব্যাপী কৃষিতে ভারতের প্রভাবশালী অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে, কৃষকদের কল্যাণ এবং কৃষি উৎপাদনশীলতার উপর অবিচলিত দৃষ্টিপাত অপরিহার্য। দেশটি গম ও চাল সংগ্রহের বৃদ্ধি দেখেছে, যার কারণ এই পণ্যগুলিতে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা হতে পারে। যাই হোক, এটি এখনও সংগ্রহের সুবিধা ও পরিকাঠামোর সম্প্রসারণ বোঝায়, যা কৃষকদের আরও বেশি সুরক্ষা দেয়। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কৃষি ও আনুষঙ্গিক ক্রিয়াকলাপের জন্য ব্যয়বরাদ্দ বৃদ্ধি ৬০ বিলিয়ন ভারতীয় রুপির বেশি হবে বলে হিসাব করা হয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের সরাসরি সহায়তার পাশাপাশি, জাতীয় কৃষি বাজার (ই–ন্যাম) একটি কেন্দ্রীভূত কৃষি বাজার তৈরি করে, যা কৃষকদের স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তুলবে এবং মূল্য শৃঙ্খলে মধ্যস্থতাকারীদের উপর তাদের নির্ভরতা হ্রাস করবে।


চিত্র ১: গম ‌ও চাল সংগ্রহ

সূত্র:
বাজেট হাইলাইটস

যদিও গত এক দশকে উচ্চশিক্ষায় মেয়েদের ভর্তির হার প্রায়
২৮ শতাংশ বেড়েছে, তবুও উন্নতির জন্য উল্লেখযোগ্য অবকাশ রয়েছে। নারী শ্রমশক্তি অংশগ্রহণের হার (এলএফপিআর) বৃদ্ধি পেয়েছে, তবুও এখনও পুরুষদের এলএফপিআর থেকে তা উল্লেখযোগ্যভাবে কম। যাই হোক, স্ব–সহায়তা গোষ্ঠীগুলি (এসএইচজি) মহিলা উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে একটি রূপান্তরমূলক ভূমিকা পালন করেছে, এবং প্রায় ১০০,০০০ মহিলাকে ‘‌লাখপতি দিদি’‌ (পরিবারপ্রতি প্রতি বছরে ১ লাখ আয়) হতে সহায়তা করেছে। সরকার লক্ষপতি দিদির লক্ষ্যসংখ্যা ২০ মিলিয়ন থেকে সংশোধন করে ৩০ মিলিয়ন করেছে। সরকারের মহিলাদের মঙ্গল বৃদ্ধির প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি লক্ষণীয়। শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগের সুযোগের আকারে সহায়তা নারীদের একটি মর্যাদাপূর্ণ ও আত্মনির্ভরশীল জীবনধারার সুযোগ করে দেয়, যা আবার অবাধে উর্ধ্বমুখী গতিশীলতার পরিবেশ গড়ে তোলে।

চিত্র ২: মহিলা শ্রমবাহিনী অংশগ্রহণের হার

সূত্র:
বাজেট হাইলাইটস

 

স্থিতিশীলতার দৃষ্টিকোণ

সরকার এমন কৌশলগুলি বাস্তবায়নে প্রয়াসী হয়েছে যা ‘‌সংস্কার, সম্পাদন ও রূপান্তর’‌ নীতির উপর ভিত্তি করে বৃদ্ধিকে জোরদার করবে এবং স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে। উপরে আলোচিত অগ্রগতি ও পরিকল্পনাগুলি বিভিন্ন স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি), বিশেষ করে এসডিজি ১ (দারিদ্র্যমুক্তি), ২ (ক্ষুধামুক্তি), ৩ (সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ), ৪ (মানসম্মত শিক্ষা), ৫ (লিঙ্গসমতা) ও ৮ (শালীন কাজ ও অর্থনৈতিক বৃদ্ধি) অনুসারী। যদিও এগুলি দরিদ্র, যুব, মহিলা ও কৃষকভিত্তিক নীতিগুলির সরাসরি লক্ষ্যক্ষেত্র, অন্যান্য এসডিজি–গুলিকেও অমৃত কালের লক্ষ্যগুলিতে যুক্ত করা হয়েছে। যেমন জ্বালানি খাতে ছাদের সোলারাইজেশন ও বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ এসডিজি ৭ (সাশ্রয়ী ও পরিচ্ছন্ন শক্তি) ও ১৩ (জলবায়ু সক্রিয়তা) এগিয়ে নিয়ে যাবে। পরিকাঠামো ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী শহরগুলিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির সঙ্গে গত চার বছরে মূলধনী ব্যয়ের তিনগুণ বৃদ্ধি এসডিজি ৯ (শিল্প, উদ্ভাবন ও পরিকাঠামো) ও ১১ (স্থিতিশীল শহর ও জনসম্প্রদায়) শক্তিশালী করেছে। জলবায়ু সহনশীল ক্রিয়াকলাপ উন্নত করার জন্য পুনরুদ্ধার ও অভিযোজন ব্যবস্থাগুলি পরিকল্পনা করা হচ্ছে, যা এসডিজি–১৩–র পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের কর্মক্ষমতাকে সরাসরি বাড়িয়ে তুলবে৷


সরকার এমন কৌশলগুলি বাস্তবায়নে প্রয়াসী হয়েছে যা ‘‌সংস্কার, সম্পাদন ও রূপান্তর’‌ নীতির উপর ভিত্তি করে বৃদ্ধিকে জোরদার করবে এবং স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে। 



অন্তর্বর্তিকালীন বাজেট একটি অস্থায়ী পরিকল্পনা হলেও সরকারের অগ্রাধিকার এবং দেশের প্রয়োজনীয়তা অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের দিকেই ঝুঁকে আছে। যদিও ফাইনান্স বিলে কোনও কর সংশোধন করা হয়নি, বাজেটে বৈষম্য কমানোর জন্য প্রচুর ব্যবস্থা রয়েছে। অবশেষে, বিনামূল্যে সুযোগ–সুবিধা প্রদানের প্রাচীন অভ্যাসের সঙ্গে তুলনা করলে, উদ্যোক্তাদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য সরকারের স্বভাব লক্ষণীয়। দেশ ও এর জনগণ উভয়কেই ‘আত্মনির্ভর’ করার জন্য উৎপাদনশীলতা এবং উদ্যোগের প্রসারের পরিকল্পনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।



আর্য রায় বর্ধন অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের একজন গবেষণা সহকারী

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.