Published on Apr 29, 2024 Updated 0 Hours ago
রুফটপ সোলার জনপ্রিয় করার জন্য ভারতের নীতিতে এমএসএমই-‌কে  অগ্রাধিকার


ছাদে সৌরশক্তি (‌রুফটপ সোলার)‌-‌র ধীর বৃদ্ধি ভারতের নবায়নযোগ্য শক্তিতে পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও কেন্দ্রীয় সরকার ২০২২ সালের মধ্যে ৪০জিডব্লিউ-‌তে পৌঁছনোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল, বর্তমান ইনস্টল করা রুফটপ ক্ষমতা
১৫জিড্বলিউ-র কম, যা মোট স্থাপিত সৌর ক্ষমতার ২০ শতাংশের কম। ঘটনাটি জার্মানি,  অস্ট্রেলিয়া , মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো অন্য সৌরায়িত দেশগুলির সম্পূর্ণ বিপরীত, কারণ সেখানে রুফটপ ইনস্টলেশনগুলি তাদের ইউটিলিটি ক্ষেত্রের বিস্তৃতির সঙ্গে প্রায় মিলে যায়।

প্রাথমিকভাবে বড় সংস্থাগুলি দ্বারা চালিত বাণিজ্যিক ও শিল্প (সিঅ্যান্ডআই) বিদ্যুৎ গ্রাহকেরা বর্তমানে প্রায়
৮০ শতাংশ রুফটপ ইনস্টলেশন করেছে৷ অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (এমএসএমই), যারা ভারতের মোট মূল্য সংযোজনের প্রায় ৩০ শতাংশ কৃতিত্বের অধিকারী, এ ক্ষেত্রে খুব সীমিত ভূমিকা নিয়েছে। ভারতে প্রায় ৬৩ মিলিয়ন এমএসএমই রয়েছে, যা শিল্প শক্তির চাহিদায় ৩০ শতাংশ অবদান রাখে। কেন্দ্রীয় নীতির লক্ষ্য হিসাবে এই ক্ষেত্রটিতে রুফটপ সোলার গ্রহণকে দ্রুত অগ্রাধিকার দেওয়া অপরিহার্য।


প্রাথমিকভাবে বড় সংস্থাগুলি দ্বারা চালিত বাণিজ্যিক ও শিল্প (সিঅ্যান্ডআই) বিদ্যুৎ গ্রাহকেরা বর্তমানে প্রায় ৮০ শতাংশ রুফটপ ইনস্টলেশন করেছে৷



এমএসএমই-‌র বিদ্যুৎ উপভোগের ধরণগুলি ছাদে গ্রহণের জন্য উপযুক্ত হতে পারে। তাছাড়া, তারা এই প্রযুক্তিগুলিকে গ্রহণ করে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক লাভ উপলব্ধি করতে পারে। অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন (ওআরএফ) দ্বারা পরিচালিত প্রায় ৬,৫০০ শিল্প বিদ্যুৎ গ্রাহকদের সাম্প্রতিক
সমীক্ষায়   এই অন্তর্দৃষ্টিগুলি তুলে ধরা হয়েছে। প্রথমত, মোট পরিচালন ব্যয়ের মধ্যে বিদ্যুতের খরচের অংশ (৫-২০ শতাংশের মধ্যে) বিভিন্ন শিল্প বিভাগ জুড়ে বৃহত্তর সংস্থাগুলির তুলনায় এমএসএমই-‌র জন্য বেশি। সুতরাং, গ্রিড বিদ্যুতের ব্যয় কমিয়ে এবং ইউটিলিটিগুলিতে অতিরিক্ত ইউনিট বিক্রি করে উৎপাদন খরচ কমানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হতে পারে রুফটপ সোলারে স্থানান্তর।

দ্বিতীয়ত, উৎপাদন খাতে এমএসএমই প্রধানত দিনের আলো থাকার সময় বিদ্যুৎ ব্যবহার করে, যখন পর্যাপ্ত সূর্যালোক থাকে। ওআরএফ
সমীক্ষা অনুসারে, প্রায় ৭৫ শতাংশ এমএসএমই-‌গুলি বিদ্যুৎ উপভোগ সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৪ টার মধ্যে হয়ে থাকে। রুফটপ সোলার, তাই, কার্যকরীভাবে তাদের বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে পারে কাজকর্মের ধরনে খুব বেশি পরিবর্তন না করেই, এবং ব্যয়বহুল ব্যাটারি স্টোরেজ সিস্টেমে যথেষ্ট বিনিয়োগের প্রয়োজনও হয় না।

অবশেষে, বিদ্যুতের ঘাটতি এমএসএমই-‌র ক্রিয়াকলাপকে বাধাগ্রস্ত করে চলেছে, এবং এই ধরনের অনেক উদ্যোগকে ব্যাকআপ পাওয়ারের জন্য ডিজেল জেনারেটর (‌ডিজি)‌ ব্যবহার করতে বাধ্য করছে। এই নির্ভরতা শুধুমাত্র বায়ু দূষণে অবদান রাখে না, এর ফলে পরিচালন ব্যয়ও বৃদ্ধি পায়। দিনের আলোর সময় পাওয়ার কাটের যে সর্বোচ্চ ব্যাপকতা রিপোর্ট করা হয় তা বিবেচনা করে বলা যায়, রুফটপ সোলার এভাবে ডিজি সেটের উপর নির্ভরতা হ্রাস করার দুর্দান্ত সম্ভাবনা রাখে। এটি বিদ্যুতের নির্ভরযোগ্যতা ও ক্রয়ক্ষমতা উভয়ই বৃদ্ধি করে এমএসএমইগুলিকে উপকৃত করবে।


রুফটপ সোলার, তাই, কার্যকরীভাবে তাদের বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে পারে কাজকর্মের ধরনে খুব বেশি পরিবর্তন না করেই, এবং ব্যয়বহুল ব্যাটারি স্টোরেজ সিস্টেমে যথেষ্ট বিনিয়োগের প্রয়োজনও হয় না।



এমএসএমই-‌গুলির জন্য রুফটপ গ্রহণের পক্ষে যুক্তিটি কার্যত বাধ্যতামূলক হলেও বাস্তবে নবায়নযোগ্য শক্তিতে স্থানান্তর এই সংস্থাগুলির জন্য একটি কম অগ্রাধিকার রয়ে গিয়েছে। রুফটপ সোলার দিয়ে গ্রিড বিদ্যুৎ প্রতিস্থাপনের প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক উভয় সম্ভাব্যতা মূল্যায়ন করার জন্য এমএসএমই-‌গুলির ক্ষমতা ও সংস্থান সীমিত। ফলস্বরূপ, একটি সাধারণ ধারণা রয়েছে যে উচ্চ প্রাথমিক বিনিয়োগের কারণে রুফটপ সোলার সাশ্রয়ী নয়। কিন্তু যথেষ্ট প্রমাণ আছে যা পরামর্শ দেয় যে দীর্ঘমেয়াদে গ্রিড বিদ্যুতের তুলনায় রুফটপ সোলার বেশি লাভজনক পছন্দ হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে, কারণ একবার প্রাথমিক খরচগুলি করা হয়ে গেলে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারের প্রান্তিক খরচ নগণ্য। রুফটপ সোলার ও নেট মিটারিংয়ের ক্ষেত্রে নিয়ামক প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতার অভাবের কারণে এমএসএমই-‌গুলির আগ্রহের অভাব আরও বেড়েছে।

এমএসএমই-‌গুলির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল অর্থায়নের অসুবিধা অব্যাহত রয়েছে। এই সংস্থাগুলির মধ্যে অনেকগুলি আনুষ্ঠানিক অর্থনীতির অংশ নয়, তাদের ঋণ-‌প্রাপ্তিযোগ্যতা দুর্বল, এবং তাদের গড়মানের চেয়ে বেশি ঋণ রয়েছে। ফলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের ঋণ দিতে নারাজ থাকে বা শুধুমাত্র উচ্চ সুদের হারে ঋণ দিতে চায়। ডেভলপাররাও এই সংস্থাগুলিতে কার্যকালীন খরচ-ভিত্তিক (ওপেক্স) গ্রহণ মডেলগুলি প্রসারিত করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকে, যদিও এই সংস্থাগুলি ভোক্তাদের মধ্যে রুফটপ সোলারের উচ্চ প্রাথমিক খরচগুলিকে পুরো জীবনকালের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ দেয়। এমএসএমই-এর জন্য লক্ষ্যযুক্ত আর্থিক উপকরণগুলি সনাক্ত করা এই বিভাগে বৃহত্তর গ্রহণের জন্য মূল সহায়ক হবে।


রুফটপ সোলার ও নেট মিটারিংয়ের ক্ষেত্রে নিয়ামক প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতার অভাবের কারণে এমএসএমই-‌গুলির আগ্রহের অভাব আরও বেড়েছে।


এই সমস্যাগুলির সমাধান আপনা থেকে বা শুধুমাত্র সময়ের সঙ্গেসঙ্গে হবে না। এমএসএমই-‌গুলির রুফটপ সোলার গ্রহণের জন্য সঠিক পরিস্থিতি তৈরি করতে লক্ষ্যযুক্ত সহায়তার প্রয়োজন হবে। বর্তমানে রুফটপ সোলারের জন্য ভর্তুকি শুধুমাত্র আবাসিক গ্রাহকদের দেওয়া হয়। যদিও সমস্ত সিএন্ডআই গ্রাহকদের জন্য ভর্তুকি প্রসারিত করা সম্ভব নাও হতে পারে, রুফটপ সোলার গ্রহণ করার জন্য এমএসএমই-‌গুলিকে কিছু ধরনের অর্থনৈতিক প্রণোদনা দেওয়ার জরুরি প্রয়োজন আছে। উদাহরণস্বরূপ, ন্যাশনাল সোলার রুফটপ প্রকল্পের অধীনে ভর্তুকি শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট স্তর পর্যন্ত সংযুক্ত লোডসহ সিঅ্যান্ডআই গ্রাহকদের কাছে প্রসারিত করা যেতে পারে। এটি নিশ্চিত করতে পারে যে ভর্তুকি পেয়েছে ছোট সংস্থাগুলি, যাদের রুফটপ সোলার গ্রহণের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়।

এমএসএমই রুফটপ সোলার গ্রহণের সফল উদাহরণ তৈরি করারও প্রয়োজন রয়েছে, যা এই উদ্যোগগুলি কীভাবে প্রযুক্তিগত ও আর্থিক উভয় বাধা অতিক্রম করতে পারে তা ব্যাখ্যা করতে পারে। একটি ক্লাস্টার-ভিত্তিক পদ্ধতি এই ক্ষেত্রে কার্যকর প্রমাণিত হতে পারে। ভারতে প্রায় ৪০০টি শিল্প এমএসএমই ক্লাস্টার রয়েছে যা একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রের মধ্যে কাজ করা সংস্থাগুলিকে একক স্থানে একত্রিত করে। একটি জাতীয় ক্লাস্টার-ভিত্তিক এমএসএমই রুফটপ সোলার প্রোগ্রাম এমন ১০-২০টি ক্লাস্টারে প্রয়োগ করা যেতে পারে যেগুলি রুফটপ গ্রহণের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত হতে পারে। শক্তি দক্ষতা উন্নত করার জন্য ব্যুরো অফ এনার্জি এফিসিয়েন্সি (বিইই) দ্বারা অনুরূপ একটি
কর্মসূচি ইতিমধ্যেই যথেষ্ট সাফল্যের সঙ্গে বাস্তবায়িত হয়েছে।

ক্লাস্টার-ভিত্তিক প্রোগ্রামটি বিশেষভাবে তিনটি ক্ষেত্রে ফোকাস করতে পারে: ১) পাইলটিং প্রকল্প ও সক্ষমতা-নির্মাণের উদ্যোগ যা এমএসএমই-‌গুলিকে সঠিক রুফটপ সোলার প্রযুক্তি সনাক্ত করতে এবং তাদের কর্মক্ষম নিদর্শনগুলির উপর ভিত্তি করে আর্থিক প্রভাবগুলি নির্ধারণ করতে সহায়তা করতে পারে; ২) সোলার ডেভেলপারদের সামগ্রিক চাহিদা এবং ডিসকম বা রাজ্য সরকারের মাধ্যমে এই সংস্থাগুলিতে ওপেক্স-ভিত্তিক ব্যবসায়িক মডেলগুলি প্রসারিত করার জন্য আর্থিক নিশ্চয়তা প্রদান করা; এবং ৩) এমএসএমই-‌গুলির ঋণ-‌প্রাপ্তিযোগ্যতা তৈরিতে সাহায্য করা এবং শিল্প ইউনিটগুলিকে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও জাতীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্কগুলির সঙ্গে সংযুক্ত করা, যারা বিশেষত রুফটপ সোলারের জন্য কম সুদে ঋণ প্রদান করতে পারে।


একটি জাতীয় ক্লাস্টার-ভিত্তিক এমএসএমই রুফটপ সোলার প্রোগ্রাম এমন ১০-২০টি ক্লাস্টারে প্রয়োগ করা যেতে পারে যেগুলি রুফটপ গ্রহণের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত হতে পারে।



প্রধানমন্ত্রী সূর্যোদয় যোজনায় (পিএসওয়াই) ১০ মিলিয়ন পরিবারে ছাদে সোলার ইনস্টল করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সাম্প্রতিক ঘোষণা আবাসিক সৌর গ্রহণের জন্য বিভিন্ন সংস্থা, গ্রাহক ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উৎসাহ তৈরি করেছে৷ ভারতীয় অর্থনীতির মেরুদণ্ডটিও যাতে রুফটপ সোলার গ্রহণ করে এবং সৌরশক্তির সুবিধাগুলিকে কাজে লাগাতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য এমএসএমইগুলিকে উদ্দীপিত করতে এখন অনুরূপ পরিকল্পনার প্রয়োজন।




প্রমিত মুখার্জি অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের একজন সহযোগী ফেলো

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.