Author : Shivam Shekhawat

Published on May 01, 2024 Updated 0 Hours ago

কাঠমান্ডু এবং নয়াদিল্লি উভয়কেই নিজেদের রাজনৈতিক সদিচ্ছাকে কাজে লাগাতে হবে এবং উভয় দেশ যাতে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থেকে লাভবান হয়, তা সুনিশ্চিত করার জন্য আন্তঃসহযোগিতার পরিসর প্রসারিত করতে হবে।

একটি ইতিবাচক সূচনা: জয়শঙ্করের নেপাল সফর

২০২৪ সালের ৪-৬ জানুয়ারি ভারতের বিদেশমন্ত্রী ডাঃ এস জয়শঙ্কর ভারত-নেপাল যৌথ কমিশনের সপ্তম সংস্করণের জন্য কাঠমান্ডু সফরে গিয়েছিলেন। এটিই ছিল এ বছরে তাঁর প্রথম সফর। ২০২৩ সালের মে মাসে নেপালের প্রধানমন্ত্রী প্রচণ্ডের নয়াদিল্লি সফরের ইতিবাচক গতিশীলতা উপর ভিত্তি করে ইএএম-এর সফরের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল জ্বালানি, বাণিজ্য, সংযোগ, জনগণের মধ্যে সম্পর্ক, সাংস্কৃতিক বিনিময়, উন্নয়নমূলক অংশীদারিত্বের মতো পারস্পরিক অভিন্নতার ক্ষেত্রগুলি এবং বিবাদপূর্ণ বিষয়গুলিকে সামগ্রিক আন্তঃসহযোগিতার উপর প্রভাব ফেলতে দেওয়া হয়নি।

 

সম্প্রসারণমূলক আন্তঃসহযোগিতা: বৈঠকের ফলাফল

নেপালে তাঁ২৬ ণ্টাব্যাপী এই সফরে ইএএম নেপালের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এবং প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পাউডেলের সঙ্গে সাক্ষা করেন এবং নেপালি বিদেশমন্ত্রী মিঃ এনকে সৌদেসঙ্গে যৌথ কমিশনের বৈঠক সারেন। তিনি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শের বাহাদুর দেউবা এবং কেপি শর্মা অলির সঙ্গেও দেখা করেছেন। যৌথ কমিশনকে সামগ্রিক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পর্যালোচনা করা এবং যদি আদৌ কোনও উদ্বেগের বিষয় থাকে, তা হলে সেই বিষয় নিয়ে আলোচনা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নয়াদিল্লি এবং কাঠমান্ডু উভয় পক্ষই এই আলোচনাকে ‘ফলপ্রসূ এবং সর্বাত্মক; বলে মনে করেছে। নেপাল থেকে ভারতে ১০০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রপ্তানির চুক্তি, পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানির বিষয়ে সহযোগিতার জন্য সমঝোতাপত্র (মউ), তিনটি ১৩২ কেভি যৌথ আন্তঃসীমান্ত ট্রান্সমিশন লাইনের ভার্চুয়াল উদ্বোধন, পঞ্চেশ্বর জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য বিস্তারিত প্রকল্প সংক্রান্ত ফলাফলের অগ্রগতির মতো সব বিষয় এই সফরে সফল ভাবে আলোচিত হবে বলে আশা করা হয়েছিল। ভারতের পোলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকেলে মুনাল স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের সুবিধার্থে নিউ স্পেস ইন্ডিয়া লিমিটেড এবং নেপাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির মধ্যে একটি চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়। বৈঠকে নতুন আন্তঃসীমান্ত ট্রান্সমিশন লাইন এবং অবকাঠামোভিত্তিক প্রকল্পগুলিআন্তঃসীমান্ত লাইনের সক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে এবং দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতাকে আরও জোরদার করা হয়েছে।

 

ভারতের পোলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকেলে মুনাল স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের সুবিধার্থে নিউ স্পেস ইন্ডিয়া লিমিটেড এবং নেপাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির মধ্যে একটি চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়।

 

নভেম্বর মাসে ৬.৪ মাত্রার ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত জাজারকোটে ভূমিকম্প-পরবর্তী পুনরুদ্ধারে সাহায্য করার জন্য ভারত উদ্ধারকৃত মানুষদের জন্য ১০ বিলিয়নসম্পন্ন এনপিআর-এর প্রস্তাব করেছিল, যার একটি উল্লেখযোগ্য অনুপাত অনুদান সহায়তার অধীনে দেওয়া হবে। কম্বল, তাঁবু, স্লিপিং ব্যাগ ইত্যাদি-সহ ত্রাণ সরবরাহের পঞ্চম কিস্তিও প্রদান করা হয়েছে এবং ইএএম ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার-সহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ৫৯টি নতুন ভূমিকম্প পরবর্তী পুনর্গঠন প্রকল্পের উদ্বোধন করেছে

গত কয়েক বছরে ভারত তার প্রতিবেশ প্রথম নীতির অধীনে প্রতিবেশের দেশগুলির উপর নতুন করে জোর দেওয়ার ফলে নেপালের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক উন্নয়ন এবং দেশে চিনের ক্রমবর্ধমান প্রবেশের কারণে কাঠমান্ডু এবং নয়াদিল্লি সর্বাধিক লাভের উদ্দেশ্যে দুই পক্ষের জন্য লাভজনক সহযোগিতার উপর বেশি মনোযোগ দিয়েছে। যে বিষয়গুলি চিরাচরিত ভাবে সম্পর্কের ইতিবাচক গতিশীলতা ম্লান করে দিয়েছে অর্থাৎ ১৯৫০ সালের চুক্তি সংশোধনের আহ্বান, সীমান্ত সমস্যা এবং একতরফা কার্টোগ্রাফিক অ্যাকশন বা মানচিত্রকরণ সংক্রান্ত সমস্যা, বিশিষ্ট ব্যক্তিসম্পন্ন গোষ্ঠীর প্রতিবেদন ইত্যাদি বিষয়গুলি এ বারের রাজনৈতিক আলোচনায় ব্যাপক ভাবে উঠে আসেনি। তবে এখনও নেপালের রাজনীতিবিদদের একাংশ ভারতের সঙ্গে এই উদ্বেগগুলি উত্থাপনের বিষয়ে নেতৃত্বের উপর চাপ বাড়িয়েছে। নেপালের প্রধানমন্ত্রী এবং ইএএম উভয়েই সম্মত হয়েছেন যে এই বিষয়গুলি যৌথ কমিশনের বৈঠকে উত্থাপন করা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও এই বিষয়গুলির নিরিখে তেমন কোনও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটেনি। পোখরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড়ান নেওয়া বিমানগুলির জন্য বিমানপথ ব্যবহারের অনুমতির বিষয়টিতে - যা ২০২৩ সালের মে মাসেও করা হয়েছিল – তেমন কোনও অগ্রগতি দেখা যায়নি এবং ভারত বিমানপথের অনুমতি দিতে নারাজ। সীমানা প্রসঙ্গে নেপালি বিদেশমন্ত্রক মতভেদ নিরসনে এগিয়ে যাওয়ার পথ হিসেবে ‘আলোচনা এবং কূটনৈতিক উদ্যোগ’কেই একমাত্র পথ বলে মনে করেছে।

 

যে বিষয়গুলি চিরাচরিত ভাবে সম্পর্কের ইতিবাচক গতিশীলতা ম্লান করে দিয়েছে অর্থাৎ ১৯৫০ সালের চুক্তি সংশোধনের আহ্বান, সীমান্ত সমস্যা এবং একতরফা কার্টোগ্রাফিক অ্যাকশন বা মানচিত্রকরণ সংক্রান্ত সমস্যা, বিশিষ্ট ব্যক্তিসম্পন্ন গোষ্ঠীর প্রতিবেদন ইত্যাদি বিষয়গুলি এ বারের রাজনৈতিক আলোচনায় ব্যাপক ভাবে উঠে আসেনি।

 

বহুমুখী উন্নয়নমূলক অংশীদারিত্ব উদ্বেগের মোকাবিলা

নেপালের সঙ্গে ভারতের সর্বাত্মক উন্নয়নমূলক অংশীদারিত্ব রয়েছে। নিজেদের অনুদান এবং ক্রেডিট লাইনের মাধ্যমে (২০২৩ সালের অগস্ট মাসের হিসাব অনুযায়ী মোট ১.৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) নয়াদিল্লি নেপালের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সংযোগ ইত্যাদির সাথে সম্পর্কিত বৃহৎ এবং মাঝারি মাপের অবকাঠামো প্রকল্পগুলির উন্নয়নে সমর্থন জুগিয়েছে। যখন ভারত নেপালের অভ্যন্তরে বেশ কয়েকটি প্রকল্পের কাজে এগিয়ে গিয়েছে, তখন সাম্প্রতিক যৌথ কমিশনের বৈঠকে নেপালি পক্ষ এক্সিম ব্যাঙ্কের মাধ্যমে ভারতের লাইন অফ ক্রেডিট-এর সাহায্যে অর্থায়িত কিছু প্রকল্পের সমাপ্তিতে বিলম্বের বিষয়টি তুলে ধরে। বর্তমানে প্রায় এক ডজন সড়ক নির্মাণ সংক্রান্ত প্রকল্পের কাজ চলছে। ঋণ চুক্তিতে নির্দিষ্ট কিছু শর্তের কারণে এই বিলম্ব হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসেও নেপালের সড়ক বিভাগ তার বার্ষিক প্রতিবেদনে ভারতকে কাজের জন্য কনটেন্ট রিকোয়ারমেন্ট অর্থাৎ কোনও প্রকল্পের নির্মাণে পণ্য ও পরিষেবা খাতে ভারতোদ্ভূত পণ্যের সর্বনিম্ন শতাংশ ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশ ধার্য করার অনুরোধ করে। কারণ আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার দরুন প্রকল্পগুলির চূড়ান্ত বাস্তবায়নে বিলম্ব ঘটেছে। বাংলাদেশে ভারতের প্রকল্পের ক্ষেত্রেও একই ধরনের দাবি উঠেছে।

ভারতের উন্নয়নমূলক অংশীদারিত্ব নেপালে তার হাই ইমপ্যাক্ট কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টস’-এও (পূর্ববর্তী ছোট উন্নয়নমূলক প্রকল্প’) প্রতিফলিত হয়েছে, যা গত বছর ২৩তম পূর্ণ করেছে। এই উদ্যোগের অধীনে নয়াদিল্লি তার তরফে গৃহীত ৫৩৫টির মধ্যে ৪৭৬টি প্রকল্প সম্পন্ন করেছে। যৌথ কমিশনের বৈঠকে দুই পক্ষই এই প্রকল্পের অধীনে প্রকল্প-প্রতি অনুদানের পরিমাণ ৫০ মিলিয়ন এনপিআর থেকে বৃদ্ধি করে ২০০ মিলিয়ন এনপিআর করার কথা আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করেছে। সম্পদের ঘাটতি মোকাবিলা করার উদ্দেশ্যে এ হেন বৃদ্ধিটি ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে আবার অনুমোদন করা হয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও চুক্তিটি সমালোচিত হয়েছিল এবং ল্যাক্স ভেটিং প্রসেস’ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল, যার কারণে অবাঞ্ছিত প্রভাবঅর্জন করে ভারত তার ইচ্ছানুযায়ী নতুন প্রকল্প শুরু করতে সক্ষম হবে। প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করে বলেছেন যে, কী ভাবে কাঠমান্ডুর চি, ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি দেশের সাথে একই পদ্ধতিতে কাজ রয়েছে। তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন, যে কোনও প্রকল্পের জন্যই স্থানীয় বা আঞ্চলিক সরকারগুলিকে অর্থ মন্ত্রকের কাছে প্রকল্পগুলিকে অনুমোদনের জন্য পাঠাতে হবে এবং সেই মন্ত্রক অব্যবহিত ভাবে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ভারত সরকারকে সেই প্রকল্পগুলির বাস্তবায়নের জন্য অনুরোধ করবে। সরকারি সংস্থা ভারতীয় দূতাবাসের সমন্বয়ে একটি পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থাও গৃহীত হবে।

 

নেপালের বিদেশমন্ত্রীর মতে, পঞ্চেশ্বর, পশ্চিম সেতি, অরুণ এবং আপার কর্নালিতে ভারত সমর্থিত প্রকল্পগুলির সময় মতো সমাপ্তি নেপালকে বিদেশগামী মানুষদের বহির্প্রবাহ সীমিত করতে সাহায্য করবে কারণ এই প্রকল্পগুলি দেশের অভ্যন্তরে আরও সুযোগ তৈরি করবে।

 

এই সব কিছু এ কথাই তুলে ধরে, যখন ভারত তার অবকাঠামো উন্নয়ন সম্পর্কিত প্রতিশ্রুতিগুলি অনুসরণ করা এবং নেপালে তার বিনিয়োগ বৃদ্ধি করার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে সহমত পোষণ করেছে, তখন ইতিমধ্যেই বিদ্যমান প্রকল্পগুলি সুযোগ প্রকৃতি সম্পর্কে কিছু উদ্বেগ দেখা গিয়েছে। নেপালের বিদেশমন্ত্রীর মতে, পঞ্চেশ্বর, পশ্চিম সেতি, অরুণ এবং আপার কর্নালিতে ভারত সমর্থিত প্রকল্পগুলির সময় মতো সমাপ্তি নেপালকে বিদেশগামী মানুষদের বহির্প্রবাহ সীমিত করতে সাহায্য করবে কারণ এই প্রকল্পগুলি দেশের অভ্যন্তরে আরও সুযোগ তৈরি করবে। ভারত এক্সিম ব্যাঙ্কের তরফে মঞ্জুরিকৃত ঋণের শর্তাবলি পর্যালোচনা করার প্রশ্নে সংবেদনশীল থাকলেও সেই সময়ে উভয় পক্ষের জন্য একসঙ্গে কোনও সমস্যার সমাধান করা গুরুত্বপূর্ণ, যা প্রকল্পের সমাপ্তিতে বিলম্ব করে এবং আস্থার ঘাটতি মেটাতে পদক্ষেপ করতে সাহায্য করে

দীর্ঘমেয়াদি বিদ্যুৎ বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর, নেপাল, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ত্রিপাক্ষিক সহযোগিতাকে ত্বরান্বিত করার সম্ভাবনা এবং ডিজিটাল সংযোগ বৃদ্ধিতে অগ্রগতি আগামী দিনগুলিতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আকার দেবে। এই বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক পরিসরে কাঠমান্ডু এবং নয়াদিল্লি উভয়ের জন্যই রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগানো এবং আন্তঃসহযোগিতা সম্প্রসারণ করা আসলে দুই পক্ষের জন্য পারস্পরিক ভাবে লাভজনক হয়ে উঠবে।

 


শিবম শেখাওয়াত অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ প্রোগ্রামের জুনিয়র ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.