Expert Speak Raisina Debates
Published on Mar 29, 2022 Updated 7 Days ago

বৈশ্বিক ব্যবস্থাকে বিপদে ফেলার জন্য ভারতের কি ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের নিন্দা করা উচিত, নাকি নিজের মূল স্বার্থের কথা ভেবে এগনো উচিত?

রাশিয়াকে দূরে ঠেলার উপায় নেই: কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন ও স্বার্থ সমার্থক

Source Image: Firdaus Omar — Flickr/CC BY-NC-ND 2.0

রাশিয়াকে দূরে ঠেলার উপায় নেই: কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন ও স্বার্থ সমার্থক

একাধিক ভারতীয় বিশেষজ্ঞ ও ভাষ্যকার বলেছেন যে প্রেসিডেন্ট পুতিনের ইউক্রেন আক্রমণের সিদ্ধান্তের পরে ভারতের উচিৎ মস্কো থেকে নিজেকে দূরে রাখা। তাঁরা যুক্তি দিচ্ছেন, নয়াদিল্লির রাশিয়ার নিন্দা করা ও দেশটির সঙ্গে সম্পর্কের পুনর্মূল্যায়ন করা প্রয়োজন, কারণ রাশিয়া তার সাম্রাজ্যবাদী আচরণের মধ্যে দিয়ে বৈশ্বিক ব্যবস্থার ভিত্তি মৌলিক ভাবে চ্যালেঞ্জ করেছে। আরও দাবি করা হচ্ছে যে ইউক্রেনে রুশ আক্রমণের বিষয়ে ভারতের সামনে দুটি বিকল্প আছে:‌ কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন অথবা নিজের মূল স্বার্থ রক্ষা। নয়াদিল্লির জন্য কিন্তু কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের অনুশীলন এবং নিজস্ব স্বার্থের অনুসরণ ঐতিহাসিক ভাবে এবং সমসাময়িক কালে সমার্থক থেকে গেছে। যাই হোক, মস্কোর সঙ্গে নয়াদিল্লির সুসম্পর্ক বজায় রাখার পক্ষে যথেষ্ট জোরাল যুক্তি রয়েছে। আবেগ কোনও ভাবেই কৌশল বা নীতির বিকল্প নয়। ইউক্রেনে আগ্রাসনের জন্য রাশিয়ার নিন্দা না–করার পক্ষে প্রথম যুক্তি হল, অতীতে ভারত আনুষ্ঠানিক ভাবে একই ধরনের সীমালঙ্ঘনের ঘটনায় বেশ কয়েকটি দেশের নিন্দা করেনি, যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভারতের এই নীরবতার প্রধান সুবিধাভোগী ছিল রাশিয়া ও তার পূর্বসূরি সোভিয়েত ইউনিয়ন। দ্বিতীয়ত, রাশিয়ার প্রেক্ষিতে ভারতের মূল স্বার্থ নিহিত আছে প্রতিরক্ষা বাণিজ্যে, এবং এ ক্ষেত্রে কোনও প্রতিবন্ধকতা তার প্রধান শত্রু চিন ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষমতা ক্ষুণ্ণ করবে।

ইউক্রেনে আগ্রাসনের জন্য রাশিয়ার নিন্দা না–করার পক্ষে প্রথম যুক্তি হল, অতীতে ভারত আনুষ্ঠানিক ভাবে একই ধরনের সীমালঙ্ঘনের ঘটনায় বেশ কয়েকটি দেশের নিন্দা করেনি, যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভারতের এই নীরবতার প্রধান সুবিধাভোগী ছিল রাশিয়া ও তার পূর্বসূরি সোভিয়েত ইউনিয়ন।

যখনই একটি প্রধান শক্তি বড় ধরনের কোনও সামরিক পদক্ষেপ করেছে, তার ফলে ভারতের স্বার্থ কী ভাবে ঝুঁকির মধ্যে পড়েছিল তা নীচে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এগুলো ভারতের জন্য “‘কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন অথবা মূল স্বার্থের’‌ মধ্যে বেছে নেওয়ার মতো সহজ বিষয় ছিল না। নেহরু ১৯৫৬ সালে হাঙ্গেরীয় বিক্ষুব্ধদের বিরুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের নৃশংস দমন-পীড়নের নিন্দা করেননি, এবং এমনকি সেই ঘটনাটিকে ‘‌অস্পষ্ট’‌ বলে অভিহিত করার পর্যায়েও গিয়েছিলেন। আর তা তিনি করেছিলেন প্রকাশ্যে, কিন্তু ব্যক্তিগত পর্যায়ে নয়। জনসমক্ষে, ইউএসএসআরকে নিন্দা না–করার জন্য তাঁর যথেষ্ট কৌশলগত কারণ ছিল, যার মধ্যে ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ভারতের ভৌগোলিক নৈকট্য, কাশ্মীর ও গোয়াতে ভারতের প্রতি সোভিয়েত সমর্থন (‌বিশেষ করে ১৯৫৫ থেকে)‌, এবং সোভিয়েতদের সঙ্গে প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার জন্য নেহরুর প্রচেষ্টা। এই কারণগুলিই হাঙ্গেরিতে বিদ্রোহ দমনে সোভিয়েত কাজকর্মের বিষয়ে নয়াদিল্লির সরকারি অবস্থান নরম করে দিয়েছিল। পরবর্তী দশকে নয়াদিল্লি ১৯৬৮ সালে চেকোস্লোভাকিয়ায় সোভিয়েত আক্রমণের নিন্দা করেনি। তখনও একই ধরনের কারণ ছিল, যেমন কাশ্মীর প্রশ্নে ভারতের প্রতি মস্কোর সমর্থন, এবং আরও উল্লেখযোগ্য ভাবে, সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান প্রতিরক্ষা সম্পর্ক। ১৯৬২ সালে ভারতকে চিনের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়, এবং ১৯৬০–এর দশকের শেষের দিকে চিন-সোভিয়েত সম্পর্কও আরও বেশি বৈরী হয়ে ওঠে। ফলে ভারত সোভিয়েতের সঙ্গে সম্পর্ক ক্ষুণ্ণ না–করার জন্য আরও ব্যগ্র হয়ে ওঠে। ১৯৭৯ সালে আফগানিস্তানে সোভিয়েত আক্রমণের পরেও নয়াদিল্লি প্রকাশ্যে সোভিয়েতের নিন্দা করেনি, যদিও ভারত অপ্রকাশ্য কূটনৈতিক পর্যায়ে গভীর বিরোধিতা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল। সোভিয়েত কৌশলগত পৃষ্ঠপোষকতার উপর নির্ভরতাই ভারতকে সে সময় নীরব থাকতে বাধ্য করেছিল। তার পূর্বসূরির মতো রাশিয়াও রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে ভিটো দেওয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন সদস্য, যার ফলে রাশিয়াও ভারতের জন্য কাশ্মীরের মতো গভীর স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলিতে রাজনৈতিক সমর্থনের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। সেই কারণেই প্রশ্ন ওঠে, কেন ভারত রাশিয়াকে দূরে ঠেলে দেবে। বিশেষ করে যখন, আজ দূরবর্তী সম্ভাবনার বিষয় হলেও, যদি কোনও দিন কাশ্মীর প্রসঙ্গ কোনও ভাবে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে ভোটে আসে, পশ্চিমী সদস্যদের কাছ থেকে সমর্থনের কোনও নিশ্চিত আশ্বাস নেই। তা ছাড়া মস্কোর ইউক্রেন আক্রমণের নিন্দা করে নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবে ভারতের ভোটদানে বিরত থাকার আরও একটি যুক্তি হল পাকিস্তানের সঙ্গে রাশিয়ার বর্তমান নৈকট্য।

আজ দূরবর্তী সম্ভাবনার বিষয় হলেও, যদি কোনও দিন কাশ্মীর প্রসঙ্গ কোনও ভাবে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে ভোটে আসে, পশ্চিমী সদস্যদের কাছ থেকে সমর্থনের কোনও নিশ্চিত আশ্বাস নেই।

রাশিয়া বা তার পূর্বসূরি সোভিয়েত ইউনিয়নের বাইরে, কুয়েতে প্রচুর প্রবাসী ভারতীয় বসবাস করা সত্ত্বেও ১৯৯০ সালে কুয়েতে ইরাকের আক্রমণের নিন্দা ভারত করেনি। কারণ, সাদ্দাম হোসেনের ইরাক কাশ্মীর প্রশ্নে ভারতকে সমর্থন করেছিল, যা ছিল মুসলিম দেশগুলির মধ্যে একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা। উল্টোদিকে ভারত ইরাকি সামরিক অফিসারদের ও আমলাতন্ত্রকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিল। তা ছাড়া অন্যায় সামরিক পদক্ষেপের নিন্দা করতে ভারতের অস্বীকার করার ঘটনা থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররাও সুবিধা পেয়েছিল, যেমন ২০০৩ সালে ইরাকে ইঙ্গো–মার্কিন আক্রমণের সময়। ২০১১ সালে নিরাপত্তা পরিষদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের লিবিয়ার বিরুদ্ধে শক্তিপ্রয়োগের অযৌক্তিক অনুমোদনের প্রস্তাবের সময়েও ভারত ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিল তা সোমালিয়ার মতো একটি অকেজো বা ব্যর্থ রাষ্ট্র তৈরি করবে বলে। এই দুই ক্ষেত্রেই, ২০০৩ সালে অটলবিহারী বাজপেয়ীর সময় বা ২০১১ সালে মনমোহন সিংয়ের সময়, ভারত সরকার নীরব থেকেছিল। প্রথমটির ক্ষেত্রে ভারত মার্কিন-ব্রিটিশ দখলদারিকে, যা ছিল এক বিপর্যয়কর সামরিক অভিযান, সমর্থন করার জন্য মার্কিন অনুরোধে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি পদাতিক ডিভিশন মোতায়েন করার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল। জনসাধারণের তীব্র চাপ এবং ঐকমত্যের অভাবের কারণে বাজপেয়ী সরকার শেষ পর্যন্ত ইরাকে ভারতীয় সৈন্য পাঠাতে অস্বীকার করে। ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক ইতিবাচক সম্পর্ক এবং উভয়ের কৌশলগত অংশীদারিত্বকে আরও গভীর করার ইচ্ছার কারণে এই বিষয়টি নির্বিঘ্নে করা সম্ভব হয়েছিল। এই নৈকট্য ক্লিনটন প্রশাসনের সময় শুরু হয়েছিল, এবং তারপর প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের শাসনকালের শেষ দিকে মার্কিন-ভারত পারমাণবিক চুক্তি হয়। আনুষ্ঠানিক ভাবে বাজপেয়ী ও মনমোহন সিংয়ের সময় ভারত আমেরিকার, এবং আরও সাধারণ ভাবে বললে ইরাক ও লিবিয়ায় পশ্চিমী দেশগুলির, কাজের নিন্দা করেনি। তা হলেও সরকার তা নিয়ে সংসদে ভোটের অনুমতি দিয়েছিল, যার ফলে নিন্দামূলক প্রস্তাব পাস হয়েছিল। মোদী সরকারও একই কাজ করতে পারে। তবে ভারতের প্রধান বিরোধী দল হওয়া সত্ত্বেও ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস অবশ্য নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের ভোটদান থেকে বিরত থাকার প্রশ্নে মোদী সরকারের সিদ্ধান্ত সমর্থন করেছে। মস্কোর আচরণে গভীর অসন্তোষ এবং আতঙ্ক থাকলেও দলনির্বিশেষে রাশিয়ার নিন্দা করার বিরুদ্ধে ঐকমত্য রয়েছে বলেই মনে হয়। মিডিয়া ও ভারতীয় বিদেশনীতি প্রতিষ্ঠানগুলি ব্যতীত সোচ্চার ভাবে রুশ-বিরোধী অবস্থানের খুব কম দাবিদার আছে। প্রকৃতপক্ষে, যদি রাশিয়ার নিন্দা করার একটি প্রস্তাব সংসদে ভোটে দেওয়া হয়, তবে তা কতটা সমর্থন পাবে তা নিয়ে সংশয় আছে। তা সত্ত্বেও সরকার এখনও রাশিয়ার নিন্দা করে একটি প্রস্তাব এনে তার উপর বিবেক ভোট নেওয়ার জন্য একটি বিশেষ সংসদীয় অধিবেশন আহ্বান করতে পারে।

মিডিয়া ও ভারতীয় বিদেশ নীতি প্রতিষ্ঠানগুলি ব্যতীত সোচ্চার ভাবে রুশ-বিরোধী অবস্থানের খুব কম দাবিদার আছে।

সব মিলিয়ে, যতই চাপ তৈরি হোক, পূর্বোক্ত ঘটনাগুলি দেখায় যে কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের প্রতি ভারতের দায়বদ্ধতা এবং তার স্বার্থ দুটি স্বতন্ত্র বিষয় নয়, বরং পারস্পরিক ভাবে সম্পর্কিত। উপরে পর্যালোচিত সমস্ত ক্ষেত্রে নয়াদিল্লি তার কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন ব্যবহার করেছে, এবং তার মূল স্বার্থও অনুসরণ করেছে। ইউক্রেনে আটকে–পড়া সমস্ত ভারতীয় নাগরিকদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া নিশ্চিত করার পাশাপাশি মোদী সরকারকে এই আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমীদের আরোপিত নিষেধাজ্ঞার ফলে ভারতের যে ক্ষতি হতে পারে তা বিবেচনায় রাখতেই হচ্ছে। সরকারকে নিষেধাজ্ঞাগুলি ভারতের উপর যে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে তা কাটিয়ে কাজ করার একটি উপায় বার করতে হবে, এবং রাশিয়ার অস্ত্রের উপর ভারতের অত্যধিক নির্ভরতা কমানোর জন্য কাজ করতে হবে। সর্বোপরি, যে হেতু নয়াদিল্লি কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনকে মূল্য দেয় এবং তা অনুসরণ করা তার মূল স্বার্থের উপর নির্ভরশীল, তাই তাকে অবশ্যই আরও শক্তিশালী দেশীয় প্রতিরক্ষা শিল্প গড়ে তুলতে হবে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.