-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
কোভিড-১৯ প্রতিরোধ প্রচেষ্টা আমাদের আন্তর্জাতিক সংস্থা ও তাদের দায়বদ্ধতার বিষয় পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করেছে।
আমাদের ভঙ্গুর বিশ্ব: দ্বন্দ্ব, অতিমারি এবং টিকা বৈষম্য
অতিমারির প্রকোপ এখনও অব্যাহত। প্রায় ২৯০ কোটি মানুষ এখনও তাঁদের কোভিড-১৯ টিকার প্রথম ডোজের অপেক্ষায় রয়েছেন। ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক আগ্রাসনের ফলে সৃষ্ট সঙ্কট উক্ত সমস্যা থেকে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি ঘুরিয়ে দিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি এবং বিশ্বব্যাপী আন্তঃসংযোগের উপরে প্রভাব ফেলেছে। বিদ্যমান ইউক্রেন সঙ্কটের ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে অতি প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং টিকা সমবণ্টনের দুর্বল ও অকার্যকর আন্তর্জাতিক প্রয়াস জটিলতর হয়ে ওঠার সম্ভাবনা প্রবল। জনস্বাস্থ্য পরিষেবা এবং ওষুধের সহজলভ্যতা সংক্রান্ত বিতর্ক উল্লেখযোগ্য রকমের আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করলেও বিশ্বব্যাপী গণস্বাস্থ্য এবং অতিমারি সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলায় যে গতিশীলতা লক্ষ করা যাচ্ছিল, তার অনেকটাই চাপা পড়বে ইউক্রেনে ক্ষমতার সাম্য বজায় রাখার দ্বন্দ্বে।
রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘর্ষের প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার দুর্বলতর বাস্তবতা সেই সব বহুপাক্ষিক সংস্থার কার্যক্রমকে অস্থিতিশীল করে তুলবে যারা কোভিড-১৯ অতিমারি সংক্রান্ত সমস্যাগুলির সমাধান এবং ব্যবস্থাপনার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির সঙ্গে সক্রিয় ভাবে জড়িত। এগুলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল অতিমারি চলাকালীন কোভিড-১৯ টিকার উপর থেকে ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটস (আই টি আর) প্রত্যাহার করার জন্য ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকার দেওয়া প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে গৃহীত সিদ্ধান্ত। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউ টি ও) সদস্যরা ২০২০ সালের অক্টোবর মাস থেকেই প্রস্তাবটি নিয়ে আলাপ-আলোচনা চালাচ্ছেন এবং একটি সম্ভাব্য শিথিলতর সমাধান হয়তো খুব শীঘ্রই গৃহীত হতে চলেছে। বিশ্বব্যাপী টিকাকরণের লক্ষ্যে অভিপ্রেত এক দ্রুততর এবং সুলভ পন্থার দীর্ঘ অনুপস্থিতির দরুন আর্থিক ভাবে ক্ষমতাশালী ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি কোভিড-১৯ টিকা (নির্মাণ প্রক্রিয়া) থেকে ব্যাপক মাত্রায় লাভ করছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘর্ষের প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার দুর্বলতর বাস্তবতা সেই সব বহুপাক্ষিক সংস্থার কার্যক্রমকে অস্থিতিশীল করে তুলবে যারা কোভিড-১৯ অতিমারি সংক্রান্ত সমস্যাগুলির সমাধান এবং ব্যবস্থাপনার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির সঙ্গে সক্রিয় ভাবে জড়িত।
এক দিকে যেমন কোভিড-১৯ অতিমারি জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত আপৎকালীন পরিস্থিতির মোকাবিলায় বিশ্বব্যাপী প্রস্তুতিহীনতাকে তুলে ধরেছে, ঠিক তেমনই ইউক্রেন সঙ্কট বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বিশ্বব্যবস্থা ও শান্তির ভঙ্গুর বাস্তবতাকেই দর্শিয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে অরক্ষিত মানুষদের টিকাকরণের জন্য কোভ্যাক্স এবং অন্য পদক্ষেপগুলি ব্যর্থ হলেও কোভিড-১৯ অতিমারি নির্মূল করার জন্য টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে মানুষের বৈষম্যের দিকটিতে নজর দেওয়া এবং একটি ন্যায্য ও মুক্ত ট্রিপস স্বত্ব ত্যাগের জন্য আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তার কথা এই নিবন্ধটিতে তুলে ধরা হয়েছে। উন্নয়নশীল দেশগুলিতে গণ টিকাকরণের ব্যবস্থা সুনিশ্চিত না করেই অতিমারির সমাপ্তি ঘোষণা করার যে কোনও আখ্যানই নীতিগত ও মানবিক দিক থেকে অন্যায়। উন্নয়নশীল দেশগুলিতে বসবাসকারী অরক্ষিত সম্প্রদায়গুলিকে অতিমারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা প্রদান করতে ব্যর্থতা আর একটি গভীর মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউ এইচ ও) তার বিশ্বজনীন কোভিড-১৯ টিকাকরণ কর্মসূচির আওতায় ২০২২ সালের জুন মাসের মধ্যে কোভ্যাক্স এবং অন্যান্য সহযোগী টিকার সাহায্যে নিম্ন এবং নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলির সত্তর শতাংশ মানুষের টিকাকরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। ডব্লিউ টি ও ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ডের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ট্রেড ট্র্যাকার তথ্য দর্শিয়েছে যে, ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত উচ্চ উপার্জনকারী দেশগুলির জনসংখ্যার ৭১.৪% এবং উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশগুলির জনসংখ্যার ৬৮.৭% মানুষ সম্পূর্ণ রূপে টিকা পেয়েছেন। অন্য দিকে নিম্ন আয়ের দেশগুলির মাত্র ৬% মানুষ এবং নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলির মাত্র ৩৯.৯% মানুষই সম্পূর্ণ রূপে টিকা পেয়েছেন। (দ্রষ্টব্য চিত্র ১)
চিত্র ১: কোভিড-১৯ টিকাকরণ তথ্য
দ্য কোভ্যাক্স ফেসিলিটি – কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশন দ্বারা গৃহীত এক উদ্যোগ, গাভি: দ্য ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউ এইচ ও) নিজেদের টিকা বণ্টনের এক বিশ্বজনীন কেন্দ্র রূপে প্রতিষ্ঠিত করেছে। যদিও টিকাপ্রদানকারী দেশগুলির রাজনৈতিক স্বার্থ এবং কূটনৈতিক লড়াই কোভ্যাক্সের বহুপাক্ষিক টিকাবণ্টন পদ্ধতির কার্যকারিতাকে খর্ব করেছে। ফলে টিকাপ্রদান সংক্রান্ত অধিকাংশ প্রতিশ্রুতিগুলি তাঁরা রাখতে পারেননি। বর্তমানে কোভ্যাক্স এবং অন্যান্য মাধ্যমের সাহায্যে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে টিকাকরণ প্রক্রিয়াকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলির যৌথ উদাসীনতা কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে গণটিকাকরণকে ২০২৪ সালের শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে দিয়েছে। যেমনটা মানবাধিকার এবং আন্তর্জাতিক সংহতি সংক্রান্ত রাষ্ট্রপুঞ্জের স্বাধীন বিশেষজ্ঞ ওবিয়োরা সি কাফোর বলেছেন, ‘এই অতিমারি কারও জন্যই শেষ হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত এটি সকলের জন্য শেষ না হচ্ছে।’
দ্য কোভ্যাক্স ফেসিলিটি — কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশন দ্বারা গৃহীত এক উদ্যোগ, গাভি: দ্য ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউ এইচ ও) নিজেদের টিকা বণ্টনের এক বিশ্বজনীন কেন্দ্র রূপে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
উন্নয়নশীল দেশগুলিতে টিকাকরণের মন্থর হারের নেপথ্যে প্রধান কারণটি হল টিকার সীমিত উৎপাদন। এর জন্য দায়ী পেটেন্ট রাইট বা বিশেষ স্বত্ব দর্শিয়ে ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির টিকা উৎপাদনের ক্ষেত্রে একচেটিয়া অধিকার ফলানো। যদিও সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দ দ্ব্যর্থহীন ভাবে কোভিড-১৯ এবং আই পি আর-গুলির বিতর্কের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত মালিকানার তুলনায় জনস্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দিতেন, তা হলে ডব্লিউ এইচ ও ২০২২ সালের জুন মাসের মধ্যে কোভ্যাক্সের মাধ্যমে তার লক্ষ্য পূরণে সফল হতে পারত।
গত দু’বছরে ডব্লিউ টি ও এবং মানবাধিকার আইনের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার নেপথ্যে ছিল আই পি আর পরিস্থিতি, বিশেষত ট্রেড রিলেটেড অ্যাসপেক্টস অফ ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটস (ট্রিপস) চুক্তির অধীনে স্বত্বের অধিকার এবং ওষুধের লভ্যতার মতো বিষয়গুলি। অতিমারির শুরু থেকে আই পি আর মালিকেরা কঠোর ভাবে তাদের প্রযুক্তি এবং উন্নয়নশীল দেশগুলির বিপুল সংখ্যক প্রস্তুতকারকদের থেকে টেস্টিং কিট, ভেন্টিলেটর এবং প্রয়োজনীয় ওষুধের উত্পাদন নিয়ন্ত্রণ করেছিল। ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা সংস্থাগুলিও কোভিড-১৯ থেরাপিউটিকস এবং টিকার ক্ষেত্রে রেকর্ড সংখ্যক স্বত্বের অধিকারী এবং তারাও স্বত্বের একচেটিয়া অধিকার থেকে সুবিধা লাভ করছে। চিত্র ২ দর্শাচ্ছে কোভিড-১৯ অতিমারির প্রাথমিক পর্যায়ে একাধিক সংস্থা দ্বারা নথিবদ্ধ স্বত্বসংখ্যা।
চিত্র ২: ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্বত্ব আবেদনকারীর প্রোফাইল
কোভিড-১৯ টিকা | কোভিড-১৯ প্রতিষেধ | |||
স্বত্ব আবেদনকারীর প্রোফাইল | স্বত্বভোগী পরিবারের সংখ্যা | স্বত্বযুক্ত টিকার অবদানের পরিসংখ্যান | স্বত্বভোগী পরিবারের সংখ্যা | স্বত্বযুক্ত প্রতিষেধের অবদানের পরিসংখ্যান |
সংস্থা | ২২২ | ৪৯% | ৭০৮ | ৪৪% |
বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা সংস্থা | ২০১ | ৪৪% | ৬৬৫ | ৪১% |
ব্যক্তিগত আবিষ্কর্তা | ৩৪ | ৭% | ২৩৭ | ১৫% |
সূত্র: উইপো, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সি এ এস কন্টেন্টস কালেকশনে স্বত্ব তথ্যের ভিত্তিতে। নোট: ২০২০-২১ সালে স্বত্বের আবেদন জনসমক্ষে আসার ফলে তথ্যের পরিবর্তন হতে পারে (স্বত্বের আবেদন এবং প্রকাশিত হওয়ার মধ্যে গড়ে ১৮ মাস সময়ের ব্যবধান থাকে)। সূত্র: ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশন।
সাশ্রয়ী মূল্যের কোভিড-১৯ টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলি বর্তমানে যে অসুবিধার মুখোমুখি হয়েছে তা আদতে দেশগুলির এইচ আই ভি / এডস অতিমারির সময়কার উন্নত দেশগুলির একচেটিয়া স্বত্বের ঐতিহাসিক অবিচারের অনুরূপ। ওষুধের লভ্যতা সহজ করার জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জের সেক্রেটারি জেনারেলের হাই লেভেল প্যানেল অন অ্যাকসেস টু মেডিসিন ২০১৬ সালের একটি প্রতিবেদন ভারসাম্যহীন এবং অকার্যকর আই পি আর ব্যবস্থাগুলির প্রেক্ষিতে কিছু সুপারিশ প্রদান করেছে। যদিও এই সুপারিশগুলি জীবনদায়ী / অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের স্থানীয় উৎপাদনের প্রেক্ষিতে ৭৪তম ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেম্বলিতে (ডব্লিউ এইচ এ) বিবেচনা করা হয়নি। ২০২০ সালের মে মাসে ডব্লিউ এইচ এ রেজোলিউশন একটি বিশ্বব্যাপী টিকা কর্মসূচির প্রতিশ্রুতি দিলেও তা আই পি আর-এর সীমাবদ্ধতার প্রেক্ষিতে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে স্থিতিশীল ভাবে টিকা সরবরাহ অর্জনের একটি প্রক্রিয়া চালাতে ব্যর্থ হয়েছে।
বিরোধী পক্ষ সওয়াল তুলেছেন যে, ট্রিপস সংক্রান্ত ডব্লিউ টি ও চুক্তি বাধ্যতামূলক লাইসেন্স প্রদান করে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলি জেনেরিক টিকা তৈরি করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারে।
ডব্লিউ এইচ এ রেজোলিউশনের পরে ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে ডব্লিউ টি ও প্রতিষ্ঠাকারী মারাকেশ চুক্তির ধারা ৯ অনুসারে মূল ট্রিপস চুক্তির নিয়মগুলি সাময়িক ভাবে স্থগিত করার জন্য ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকা ডব্লিউ টি ও-তে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে। ডব্লিউ টি ও-তে সকল সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতি ক্রমে নেওয়া হয় এবং এমনকি এ ক্ষেত্রে গুটি কয়েক দেশের আপত্তিও সংখ্যাগরিষ্ঠ বা বৃহৎ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতকে খারিজ করে দিতে পারে। বর্তমানে টিকা স্বত্ব তুলে নেওয়ার প্রস্তাবটি ৫৮টি দেশের সরকারের আর্থিক সহায়তা পেয়েছে এবং ১০০টিরও বেশি দেশের সমর্থন লাভ করেছে। যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অল্প সংখ্যক দেশ এখনও এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে চলেছে। প্রস্তাবের পক্ষে বক্তব্য, স্বত্ব মকুব হলে উন্নয়নশীল দেশগুলিও সুলভ মূল্যে কোভিড-১৯ টিকার জেনেরিক সংস্করণ তৈরি করতে পারবে। অন্য দিকে, বিরোধী পক্ষ সওয়াল তুলেছেন যে, ট্রিপস সংক্রান্ত ডব্লিউ টি ও চুক্তি বাধ্যতামূলক লাইসেন্স প্রদান করে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলি জেনেরিক টিকা তৈরি করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারে। যদিও এ কথা উল্লেখ করা প্রয়োজনীয় যে, বাধ্যতামূলক লাইসেন্সের আওতায় আবিষ্কারকের তরফে প্রযুক্তিগত বা বাণিজ্যিক গোপন তথ্য অন্য উৎপাদকদের কাছে হস্তান্তর করা বাধ্যতামূলক নয়। বাণিজ্যিক গোপন তথ্য সংক্রান্ত জটিলতার সমাধান করতে পারে এমন কোনও বাধ্যতামূলক প্রক্রিয়া গড়ে তোলা দীর্ঘ সময় সাপেক্ষ। অর্থাৎ কোভিড-১৯ টিকার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী ভাবে স্বত্ব খারিজ করার একটি নতুন চুক্তি এই অচলাবস্থা কাটাতে জরুরি। নিচের মানচিত্রটি (চিত্র ৩) ট্রিপস মকুবের ক্ষেত্রে দেশগুলির বর্তমান অবস্থানের চিত্র তুলে ধরে।
চিত্র ৩: ট্রিপস স্বত্ব মকুবের প্রেক্ষিতে দেশগুলির অবস্থান
পলিটিকো একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে যে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নাকি ট্রিপস স্বত্ব মকুবের একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্তে পৌঁছচ্ছে৷ এ কথা ব্যাপক ভাবে শোনা যাচ্ছে যে, ট্রিপস স্বত্ব মকুবের সিদ্ধান্তগুলি শুধু মাত্র কোভিড-১৯ টিকার ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ। বিবেচনাধীন খসড়া সিদ্ধান্তের আওতায় বাণিজ্য সংক্রান্ত গোপনীয়তা, অপ্রকাশিত ক্লিনিকাল ট্রায়াল তথ্য, কোভিড-১৯ ওষুধ এবং রোগ নির্ণায়ক সরঞ্জামের বিষয়গুলি পড়ছে না। খসড়া চুক্তি, যা বর্তমানে চারটি সংশ্লিষ্ট দেশের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষণের অধীনে রয়েছে, সেটির সব ডব্লিউ টি ও সদস্যের সর্ব সম্মত অনুমোদনের প্রয়োজন হবে। ডব্লিউ টি ও ২০২২ সালের জুন মাসে ১২তম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন আয়োজন করতে চলেছে৷ সম্ভবত সদস্য রাষ্ট্রগুলির বাণিজ্য মন্ত্রীরা কোভিড-১৯ টিকা সংক্রান্ত ট্রিপস স্বত্ব মকুবের খসড়াটিকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাইবেন। বিবেচনাধীন খসড়া সিদ্ধান্তের বর্তমান সংস্করণটিতে অনেক ত্রুটি এবং শঙ্কার জায়গা থাকলেও যদি তা স্বীকৃত হয়, তা হলে কোভিড-১৯ টিকার উপর থেকে ট্রিপস স্বত্ব খারিজ একটি অভূতপূর্ব ঘটনা হবে এবং ওষুধ ও প্রাণদায়ী ওষুধের ক্ষেত্রে সহজলভ্যতার সাম্য অর্জনে এক তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ হবে।
এ যাবৎ চিনে প্রায় তিন কোটি মানুষকে লকডাউনের অধীনে থাকতে বাধ্য করা হয়েছে এবং কোভিড-১৯ টিকাকরণের ট্রিপস স্বত্ব মকুবের সম্ভাবনা রয়েছে। ইদানীং উন্নত দেশগুলি যারা তাদের দেশের নাগরিকদের টিকা দিতে সক্ষম হয়েছে, তারা এই প্রচার চালাচ্ছে যে বিশ্বব্যাপী অতিমারির দিন শেষ। ফলে আপৎকালীন প্রতিক্রিয়া বা পদক্ষেপ গ্রহণের কোনও প্রয়োজন নেই। বিপরীতে, টিকার অসম বণ্টন এবং ইউক্রেনের সঙ্কট অতিমারিকে দীর্ঘায়িত করছে। ফলে ভাইরাস মিউটেশনের ঝুঁকি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অতিমারি নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে।
কোভিড-১৯ অতিমারি কোনও মতেই শেষ হয়ে যায়নি। স্বল্প সময়ের মধ্যে একাধিক কোভিড-১৯ টিকা নির্মাণে চিকিৎসা ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করা সত্ত্বেও উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলির মধ্যে টিকার লভ্যতা এবং বণ্টনের ক্ষেত্রে যে বৈষম্য দেখা গিয়েছে, তা বিশ্বজনীন অসাম্যকেই তুলে ধরে। উন্নত দেশগুলির অবিলম্বে উচিত ব্যাপক হারে টিকা জমিয়ে রাখা বন্ধ করা, কোভিড-১৯ টিকার উপর ন্যায্য ট্রিপস স্বত্ব মকুবের পন্থায় অভিযোজিত হয়ে ডব্লিউ টি ও-র অচলাবস্থা দূরীকরণে সক্রিয় হওয়া। কোভিড-১৯ যেন শুধু মাত্র উন্নয়নশীল দেশের রোগে পরিণত না হয়। মানবতা আরও সহানুভূতিশীলতার দাবি রাখে এবং বিশ্বের উচিত সে দাবি পূরণ করা।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Nishant Sirohi is an advocate and a legal researcher specialising in the intersection of human rights and development - particularly issues of health, climate change, ...
Read More +