Published on May 09, 2024 Updated 0 Hours ago

ন্যাটো এবং ভারত স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের অভিন্ন মূল্যবোধ এবং একটি স্থিতিশীল ও সুরক্ষিত ইন্দো-প্যাসিফিকের অভিন্ন স্বার্থ ভাগ করে নেয়।

ন্যাটো এবং ভারত: একটি শান্তিপূর্ণ, মুক্ত এবং গণতান্ত্রিক বিশ্বের অংশীদার

Source Image: ডিপোজিটফোটোস

২০২১ সালের রাইসিনা ডায়লগ-এর সময় জেনস স্টলটেনবার্গ বলেছিলেন, শুধু ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নয়, বরং ন্যাটোর অংশীদারিত্বকে শক্তিশালী করার গুরুত্ব উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে আন্তর্জাতিক স্তরেও। কারণ আমরা আরও জটিল  আন্তঃসংযুক্ত বিশ্বের সম্মুখীন হয়েছি। তার পর থেকে ন্যাটোর নিরাপত্তা পরিবেশ কেবল আরও বেশি করে প্রতিযোগিতামূলকবিপজ্জনক ও অপ্রত্যাশিত হয়ে উঠেছে।

ইউরোপে পূর্ণ মাত্রায় সংঘাতের প্রত্যাবর্তন এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা প্রমাণ করে যে, আমাদের নিরাপত্তা আর কেবল মাত্র আঞ্চলিক নয়, বরং তা বিশ্বব্যাপী। একটি সার্বভৌম দেশ ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার অবৈধ আগ্রাসন সেই সকল দেশের উপর প্রভাব ফেলেছে, যারা স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। দেশে চিনের ক্রমবর্ধমান নিপীড়নমূলক কর্মকাণ্ড  বিদেশে জবরদস্তিমূলক আচরণ গোটা বিশ্বের নিরাপত্তামূল্যবোধ  স্বার্থকে হুমকির মুখে ফেলেছে।

 

একটি সার্বভৌম দেশ ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার অবৈধ আগ্রাসন সেই সকল দেশের উপর প্রভাব ফেলেছে, যারা স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রে বিশ্বাসী।

 

বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রসম্পন্ন দেশ ভারত একটি ক্রমবর্ধনশীল অর্থনীতি এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক শক্তি। ন্যাটো মহাসচিব রাইসিনা ডায়লগ-এ ঠিকই বলেছিলেনআমাদের অভিন্ন মূল্যবোধ  নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা রক্ষার জন্য ভারতের সঙ্গে ন্যাটোর আলোচনাকে একটি নতুন স্তরে নিয়ে যাওয়ার সঠিক সময় এসে গিয়েছে

 

ইতিহাসের একটি পরিবর্তন বিন্দু

প্রায় ৭৫ বছর ধরে ন্যাটো আটলান্টিকের উভয় পাশে তার মিত্রদেশগুলির সম্মিলিত প্রতিরক্ষা  নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে এবং তার সীমানা ছাড়িয়ে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রচার করতে ইউরোপ  উত্তর আমেরিকাকে একত্র করেছে। জোটটি ১৯৪৯ সালে ১২টি প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদেশ নিয়ে গঠিত হলেও পরে তাতে আরও দেশ যোগদান করায় জোটটির সদস্যসংখ্যা দাঁড়ায় ৩১-এ এবং খুব দ্রুতই সেই সংখ্যা হবে ৩২। ন্যাটো প্রায় এক বিলিয়ন মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর বর্তমানে বিশ্ব সবচেয়ে বিপজ্জনক নিরাপত্তা সঙ্কটের সম্মুখীন। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার আগ্রাসনমূলক যুদ্ধ ইউরোপের কয়েক দশকের শান্তিকে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে। এর আন্তর্জাতিক পরিণতিও হয়েছে মারাত্মক, যা বিশ্বব্যাপী খাদ্য ও জ্বালানির সঙ্কট সৃষ্টি করেছে এবং ব্যাপক পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করেছে।

মস্কোর বোমা হামলা এবং নাগরিক  বেসামরিক অবকাঠামোর উপর নিরলস আক্রমণ মানবজীবনের প্রতি রাশিয়ার সম্পূর্ণ অবজ্ঞাকেই দর্শায়। রাশিয়ার তরফে আন্তর্জাতিক আইন ও রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদের নির্বিচার লঙ্ঘন সমগ্র বিশ্বকে হুমকির মুখে ফেলেছে। এগুলি সেই সার্বভৌমত্বআঞ্চলিক অখণ্ডতা  আত্ম-নিয়ন্ত্রণের নীতিগুলির উপর একটি মৌলিক আক্রমণ, যা আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার নেপথ্যে রয়েছে এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তাকে সুনিশ্চিত করে এসেছে।

 

ন্যাটো সংঘাতের পক্ষাবলম্বনকারী না হলেও ইউক্রেনের সীমানা ছাড়িয়ে যুদ্ধ যাতে আর না বেড়ে ওঠে, সে কথা সুনিশ্চিত করার জন্য ন্যাটো উল্লেখযোগ্য ভাবে তার নিজস্ব প্রতিরোধ ও সুরক্ষাব্যবস্থা বৃদ্ধি করছে।

 

ন্যাটো শক্তিসম্পন্ন ও ঐক্যবদ্ধ হয়ে এর সাড়া দিচ্ছে। ন্যাটো সংঘাতের পক্ষাবলম্বনকারী না হলেও ইউক্রেনের সীমানা ছাড়িয়ে যুদ্ধ যাতে আর না বেড়ে ওঠে, সে কথা সুনিশ্চিত করার জন্য ন্যাটো উল্লেখযোগ্য ভাবে তার নিজস্ব প্রতিরোধ ও সুরক্ষাব্যবস্থা বৃদ্ধি করছে। রাশিয়ার ক্রিমিয়াকে অবৈধ ভাবে সংযুক্ত করার পর থেকে এবং ২০১৪ সালে পূর্ব ডনবাসে প্রবেশ করার পর থেকে অভিযোজনের একটি নির্ণায়ক দশকের উপর ভিত্তি করে গত জুলাই মাসে ভিলনিয়াস শীর্ষ সম্মেলনে মিত্রদেশগুলি ন্যাটোর প্রতিরোধ  প্রতিরক্ষায় আরও মৌলিক পরিবর্তনের বিষয়ে সম্মত হয়েছিল। এবং এই কথার আক্ষরিক অর্থই হল উচ্চ প্রস্তুতিসম্পন্ন আরও সৈন্য বৃদ্ধি, ঠান্ডা লড়াইয়ের পর থেকে সবচেয়ে ব্যাপক  শক্তিশালী প্রতিরক্ষা পরিকল্পনাপ্রতিরক্ষায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা  বিশ্বের জন্য উৎপাদনক্ষমতা বৃদ্ধি করতে প্রতিরক্ষা শিল্পক্ষেত্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা।

একই সময়ে ন্যাটো মিত্রদেশগুলি নজিরবিহীন সামরিকআর্থিক  মানবিক সহায়তা প্রদান করে রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখে ইউক্রেনের প্রতি তাদের সমর্থন বৃদ্ধি করছে। ন্যাটোর মাধ্যমে এই দেশগুলি স্বল্পমেয়াদে ইউক্রেনকে নিজের স্বাধীনতার লড়াইকে টিকিয়ে রাখতে এবং দীর্ঘমেয়াদে তার নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করার জন্য অপরিহার্য অ-প্রাণঘাতী সাহায্য প্রদান করছে। তারা একটি নতুন ন্যাটো-ইউক্রেন কাউন্সিলের মাধ্যমে তাদের রাজনৈতিক সম্পর্কের উন্নতি ঘটিয়েছে, যেখানে তারা সঙ্কটের সময় পরামর্শ  সাধারণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সকলের সঙ্গে সমান ভাবে মিলিত হয়। ভিলনিয়াস শীর্ষ সম্মেলনে মিত্রদেশগুলি ন্যাটোর সদস্য হিসাবে ইউক্রেনের ভবিষ্যতের জন্য একটি স্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গিতে সম্মত হয়েছিল। তারা বসনিয়া ও হার্জেগোভিনাজর্জিয়া এবং মলদোভা-সহ রাশিয়ার বৈরিতাপূর্ণ হস্তক্ষেপ এবং জবরদস্তির সম্মুখীন অন্য অংশীদারদের জন্য নিজেদের সমর্থন বৃদ্ধি করতে সম্মত হয়েছে।

 

একই সময়ে ন্যাটো মিত্রদেশগুলি নজিরবিহীন সামরিকআর্থিক  মানবিক সহায়তা প্রদান করে রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখে ইউক্রেনের প্রতি তাদের সমর্থন বৃদ্ধি করছে।

 

নিরাপত্তা এ বার বিশ্বব্যাপী, আর আঞ্চলিক নয়

রাশিয়ার আগ্রাসন ও আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘনের প্রতি আমরা কী ভাবে প্রতিক্রিয়া জানাই, তা আগামী প্রজন্মের জন্য বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তাকে সংজ্ঞায়িত করবে। যদি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধে জয়লাভ করেনতবে তা বেজিং না হলেও অন্য কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থাকে এই বার্তা প্রেরণ করবে যে, তারা যা চায়, শক্তির মাধ্যমে ঠিক সেটাই পেতে পারে এবং এ হেন পরিস্থিতি বিশ্বকে আরও বিপজ্জনক অবস্থানে ঠেলে দেবে।

ন্যাটো চিনকে প্রতিপক্ষ বলে মনে করে না। যাই হোকইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল-সহ চিনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা  জবরদস্তিমূলক নীতিগুলি আমাদের স্বার্থনিরাপত্তা  মূল্যবোধকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। চি মহাকাশসাইবার  সামুদ্রিক পরিসর-সহ নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে ভেঙে দিতে চাইছে। ন্যাটো তার সহযোগী দেশগুলি-সহ নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি এবং গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো  কৌশলগত সংস্থানগুলি নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়ে চিনের প্রচেষ্টা নিয়ে উদ্বিগ্ন। বেজিং  মস্কোর মধ্যে গভীরতর কৌশলগত অংশীদারিত্ব এবং তাদের আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলাকে দুর্বল করার প্রচেষ্টা বিশ্বের অন্যান্য দেশকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে চিনের উচিত তার যথেষ্ট প্রভাব প্রয়োগ করে রাশিয়াকে ইউক্রেনের যুদ্ধ শেষ করার জন্য এবং প্রাণঘাতী সহায়তা প্রদান থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যেমন বলেছেনএটা যুদ্ধের যুগ নয়।

এই ক্রমবর্ধমান কৌশলগত প্রতিযোগিতার সঙ্গে মিলিত হয়ে আমাদের বৃহত্তর কৌশলগত পরিবেশ ক্রমাগত ভঙ্গুর হয়ে পড়ছে এবং পুনরাবৃত্তিমূলক বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। সন্ত্রাসবাদ বিশ্বের নিরাপত্তাআন্তর্জাতিক শান্তি  সমৃদ্ধির জন্য প্রত্যক্ষতম অপ্রতিসম হুমকি। এ ছাড়াও বিশ্ব অস্থিতিশীলতা ও সঙ্কটের সম্মুখীন হয়ে চলেছে, বিশেষ করে ন্যাটোর দক্ষিণাঞ্চলেযার শিকড় গভীরে প্রোথিত। এবং জলবায়ু পরিবর্তনের অস্তিত্বগত চ্যালেঞ্জভঙ্গুর প্রতিষ্ঠানস্বাস্থ্য সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা  খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা-সহ জনসংখ্যাগতঅর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক একাধিক চালিকাশক্তি বিদ্যমান। সাইবার এবং মিশ্র কৌশলের আক্রমণ থেকে শুরু করে পারমাণবিক বিস্তার, ধ্বংসাত্মক প্রযুক্তি এবং বিশ্বব্যাপী অতিমারি পর্যন্ত বিশ্বের নিরাপত্তার জন্য অন্য হুমকি  চ্যালেঞ্জগুলি ক্রমশ বেড়ে চলেছে।

 

ন্যাটো তার সহযোগী দেশগুলি-সহ নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি এবং গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো  কৌশলগত সংস্থানগুলি নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়ে চিনের প্রচেষ্টা নিয়ে উদ্বিগ্ন।

 

কোন দেশ বা মহাদেশ একা এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারে না। আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জের জন্য বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়া প্রয়োজন। আর সেই কারণেই ন্যাটো ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল-সহ নিকটবর্তী ও দূরবর্তী অংশীদারদের সঙ্গে আরও নিবিড় ভাবে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

 

ইউরো-আটলান্টিক  ইন্দো-প্যাসিফিকের নিরাপত্তা নিবিড় ভাবে জড়িত

ন্যাটো এই নতুন নিরাপত্তা বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিচ্ছেযেমনটা তারা র্বদাই করে এসেছে। ২০২২ সালে ন্যাটো নেতৃবৃন্দ একটি নতুন কৌশলগত ধারণা গ্রহণ করেছেন এবং তা হল ক্রমবর্ধমান কৌশলগত প্রতিযোগিতা  অস্থিতিশীলতার বিশ্বে সাড়া দেওয়ার একটি নীলনকশা। এই ধারণাটি ন্যাটোর মূল উদ্দেশ্য অর্থাৎ ন্যাটোর সম্মিলিত প্রতিরক্ষা সুনিশ্চিত করার বিষয়টিকে পুনর্নিশ্চিত করে। এটি ন্যাটোর তিনটি মূল কাজকে পুনর্ব্যক্ত করে: সমস্ত হুমকির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা  রক্ষা করা, সঙ্কট পরিচালনা ও প্রতিরোধ করার জন্য আমাদের ক্ষমতাকে শক্তিশালী করা এবং ইন্দো-প্যাসিফিক-সহ ন্যাটোর অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতামূলক নিরাপত্তায় বিনিয়োগ করা।

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলটি বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় ৬৫ শতাংশ এবং বিশ্বের কয়েকটি বৃহত্তম  দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির আবাসস্থল। ইউরোপ ও ইন্দো-প্যাসিফিক বিশ্ববাণিজ্যের ৭০ শতাংশের বেশি এবং বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ প্রবাহের ৬০ শতাংশের জন্য দায়বদ্ধ। অনেক ন্যাটো মিত্রদেশ  ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্যদেশের এই অঞ্চলে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক  উপস্থিতি রয়েছে। এর অর্থনীতি ও নিরাপত্তাও তাই গভীর ভাবে সম্পৃক্ত। একটি মুক্ত ও অবাধ ইন্দো-প্যাসিফিক আন্তর্জাতিক সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য।

বিশ্ববাণিজ্যের জন্য দক্ষিণ চিন সমুদ্র হল একটি প্রধান ট্রানজিট রুট বা পরিবহণ পথ। তাইওয়ান হল সেমিকন্ডাক্টর বা অর্ধপরিবাহীর নিরিখে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদক অর্ধপরিবাহীর উপর আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর করে। বল প্রয়োগের মাধ্যমে দক্ষিণ চিন সাগরে স্থিতাবস্থা পরিবর্তনের যে কোনও প্রকারের প্রচেষ্টা অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তার নিরিখে বিপর্যয়কর পরিণতি ডেকে আনবে। অঞ্চলটি অন্যান্য বড় চ্যালেঞ্জও তুলে ধরে। ন্যাটো উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কার্যকলাপ  ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি-সহ উত্তর কোরিয়ার উস্কানিমূলক আচরণ সম্পর্কে গভীর ভাবে উদ্বিগ্নযা রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের একাধিক প্রস্তাব লঙ্ঘন করে এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে।

 

ইউরোপ ও ইন্দো-প্যাসিফিক বিশ্ববাণিজ্যের ৭০ শতাংশের বেশি এবং বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ প্রবাহের ৬০ শতাংশের জন্য দায়বদ্ধ

 

একটি সমুদ্র এই দুই অঞ্চলকে আলাদা করলেও ন্যাটো ও ইন্দো-প্যাসিফিক অংশীদাররা একই চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন এবং একই মূল্যবোধ  একটি মুক্ত ও অবাধ নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার দৃষ্টিভঙ্গি ভাগ করে নেয়। এই কারণেই ন্যাটো নেতৃবৃন্দ অস্ট্রেলিয়াজাপাননিউজিল্যান্ড  দক্ষিণ কোরিয়ার মতো ইন্দো-প্যাসিফিকের অংশীদারদের প্রতিপক্ষকে স্বাগত জানিয়েছিলেন মাদ্রিদ এবং ভিলনিয়াসে হওয়া শেষ দুটি ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে ন্যাটো সাইবার প্রতিরক্ষাসামুদ্রিক নিরাপত্তা  নতুন প্রযুক্তি-সহ রাজনৈতিক ও ব্যবহারিক সহযোগিতা জোরদার করার চেষ্টায় রত

 

ন্যাটো-ভারত আলোচনাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া

বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রসম্পন্ন দেশ ভারত দ্রুত বর্ধনশীল প্রধান অর্থনীতি এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বশক্তি। এটি রাষ্ট্রপুঞ্জের পঞ্চম বৃহত্তম শান্তিরক্ষা সৈন্যের অবদানকারী এবং ভারত বিশ্বের কেন্দ্রমঞ্চে তার ভূমিকাকে গুরুত্ব সহকারে নেয়যেমনটা ২০২৩ সালে তার জি২০ সভাপতিত্বের সময় দেখা গিয়েছিল একই সঙ্গে ন্যাটো ও ভারত প্রায় ২.৪ বিলিয়ন মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে, যা কিনা বিশ্ব জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ

ন্যাটো ইউরোপ  উত্তর আমেরিকার জন্য একটি আঞ্চলিক জোট ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। তবে এটির বিশ্বব্যাপী অংশীদারদের একটি শক্তিশালী শৃঙ্খল রয়েছে এবং ভারতের মতো দেশগুলির সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে ও সম্পর্ক রয়েছে ন্যাটোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক অংশীদারিত্ব না থাকা সত্ত্বেও বছরের পর বছর ধরে জোটটি ভারতের সঙ্গে সম্পৃক্ততা অব্যাহত রেখেছে।

ন্যাটো ভারতের বিদেশনীতির অবস্থানকে সম্পূর্ণ ভাবে সম্মান করে সাধারণ মূল্যবোধ রক্ষা করতে এবং ব্যবহারিক ও দৃঢ় সহযোগিতা বৃদ্ধি করে ভারতের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যেতে আগ্রহী। ন্যাটোর জন্য ভারতের সঙ্গে গভীর আলাপ-আলোচনা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বিদ্যমান অংশীদারিত্বকে সমৃদ্ধ করবে। ন্যাটোর সঙ্গে আদান-প্রদান বাড়ানোর মাধ্যমে ভারত ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি ন্যাটো মিত্রদেশ এবং ইইউ-এর সঙ্গে গভীরতর দ্বিপাক্ষিক  বহুপাক্ষিক সম্পর্কের পরিপূরক হবে

 

ন্যাটো ইউরোপ  উত্তর আমেরিকার জন্য একটি আঞ্চলিক জোট ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। তবে এটির বিশ্বব্যাপী অংশীদারদের একটি শক্তিশালী শৃঙ্খল রয়েছে এবং ভারতের মতো দেশগুলির সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে ও সম্পর্ক রয়েছে

 

ন্যাটো  ভারতের অভিন্ন সাধারণ মূল্যবোধ রয়েছে অর্থাৎ সেগুলি হল স্বাধীনতাগণতন্ত্রসার্বভৌমত্বআঞ্চলিক অখণ্ডতামানবাধিকারআন্তর্জাতিক আইন  বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি। ন্যাটো ও ভারত একটি মুক্ত ও অবাধ ইন্দো-প্যাসিফিকের একটি সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গি ভাগ করে নেয়। নিয়মভিত্তিক ব্যবস্থা, সন্ত্রাসবাদনতুন প্রযুক্তিসামুদ্রিক নিরাপত্তাসাইবার প্রতিরক্ষা  জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য কর্তৃত্ববাদী হুমকি-সহ অভিন্ন সাধারণ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহযোগিতা জোরদার করার বিশাল সম্ভাবনা ন্যাটো ও ভারতের রয়েছে।

একসঙ্গে কাজ করার বিষয়টি ন্যাটো এবং ভারতের কল্যাণের জন্য শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে এবং তা একটি শান্তিপূর্ণমুক্ত  গণতান্ত্রিক বিশ্বে অবদান রাখতে পারে।

 


ক্রিস্তিয়ান মেৎজারস ন্যাটোর আন্তর্জাতিক সদস্য এবং পার্টনারশিপস অ্যান্ড গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স-এর ডিরেক্টর।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Author

Krisztian Meszaros

Krisztian Meszaros

Krisztian Meszaros is Director for Partnerships and Global Affairs, NATO International Staff ...

Read More +