Author : Harsh V. Pant

Originally Published Observer Research Foundation Published on Oct 31, 2022 Commentaries 9 Days ago

ব্রেক্সিট-পরবর্তী বিদেশনীতি নিয়ে বহু আলোচনা চললেও লন্ডন প্রত্যাশামাফিক সক্রিয়তা দেখাতে পারেনি।

ব্রিটেনের টালমাটাল পরিস্থিতি এবং তার প্রতিধ্বনি
ব্রিটেনের টালমাটাল পরিস্থিতি এবং তার প্রতিধ্বনি

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে লিজ ট্রাসের ইনিংসের শুরুটা ঝঞ্ঝাবহুল, এমনটা বললে খুব কমই বলা হয় এবং ব্রিটিশরাও তা এক কথায় মেনে নেবেন। বিভিন্ন স্তরে এ এক সমূহ বিপর্যয়, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং  এমনকি কূটনৈতিক স্তরেও। দায়িত্ব নেওয়ার দু’মাসেরও কম সময়ের মধ্যে চ্যান্সেলরকে আরও স্বচ্ছ অর্থনৈতিক দর্শনবিশিষ্ট উত্তরসূরির জন্য জায়গা করে দিতে হয়েছে। আর্থিক অস্থিরতা এবং রাজনৈতিক ক্ষোভের ফলে কোয়ার্টেং প্রভাবিত হন। জেরেমি হান্ট, যিনি গত সপ্তাহে কোয়াসি কোয়ার্টেংয়ের বদলে ক্ষমতায় আসীন হন, তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে ট্রাস দায়িত্বে আছেন। কিন্তু তিনি ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর শীর্ষ আয়কর হার বাতিল করা এবং কর্পোরেশন ট্যাক্স স্থগিত করার প্রতিশ্রুতি থেকে পিছিয়ে এসেছেন। ওয়েস্টমিনস্টারের ক্ষমতার অলিন্দে জোরদার আলোচনা চলছে যে, ট্রাস কত দিন পদে টিকে থাকতে পারে্ন এবং একই সঙ্গেই টোরি এম পি-রা ট্রাসের পদত্যাগকে ত্বরান্বিত করার জন্য উদ্ভাবনী পদক্ষেপ নিচ্ছেন বলে শোনা গিয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন লিজ ট্রাসের মূল অর্থনৈতিক নীতিগুলিকে ‘একটি ভুল’ বলে অভিহিত করে বলেছেন যে, সরকারের মিনি-বাজেটের পরে যে অর্থনৈতিক অশান্তির সূচনা হয়েছিল, তা ছিল ‘অনুমানযোগ্য’।

ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ড সতর্ক করছে যে, পূর্বে প্রত্যাশিত মাত্রার তুলনায় সুদের হার বেশি বৃদ্ধি পেতে পারে। কারণ বর্তমান সময়ে মুদ্রাস্ফীতি ৪০ বছরের মধ্যে প্রায় দ্রুততম হারে লক্ষ করা গিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন লিজ ট্রাসের মূল অর্থনৈতিক নীতিগুলিকে ‘একটি ভুল’ বলে অভিহিত করে বলেছেন যে, সরকারের মিনি-বাজেটের পরে যে অর্থনৈতিক অশান্তির সূচনা হয়েছিল, তা ছিল ‘অনুমানযোগ্য’। এমনকি ব্রিটেনের সুপারমার্কেট চেন টেসকো-র  প্রধান প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন যে, রক্ষণশীলদের কোনও ‘বৃদ্ধির পরিকল্পনা ছিল না’ এবং তিনি জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয়বৃদ্ধির ফলস্বরূপ উদ্ভূত চ্যালেঞ্জগুলি সম্পর্কে সতর্ক করেছেন।

ট্রাসের কর্তৃত্ব তত দ্রুতই অন্তর্হিত হয়েছে, যত দ্রুত তাঁর বিস্তার ঘটেছিল, যখন তিনি ঋষি সুনাকের বিরুদ্ধে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়েছিলেন, যিনি ট্রাসের বেপরোয়া অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির বিপদ সম্পর্কে আগাম সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন। কিন্তু কর হ্রাস করার ব্যাপারে ট্রাসের আদর্শগত প্রত্যয় তাঁকে কনজারভেটিভ পার্টির সর্বস্তরের সমর্থন পেতে সাহায্য করেছিল। ক্ষমতায় বহাল হওয়ার পরে তিনি আরও এক ধাপ এগিয়ে এটির বাস্তবায়নের চেষ্টা করেন, যা বিদ্যমান বিপর্যয়কে ডেকে আনে। নতুন চ্যান্সেলর জেরেমি হান্টও স্বীকার করে নিয়েছেন যে, তাঁর পূর্বসূরির মিনি-বাজেট ‘খুব কম সময়ে অনেকটা পথ পেরোনোর’ চেষ্টা করেছে। ট্রাসকে রক্ষা করার জন্য কোয়ার্টেংকে বলির পাঁঠা হতে হয়েছিল। কিন্তু তাঁর সরে যাওয়া সত্ত্বেও কনজারভেটিভ পার্টিতে সর্বনাশ এবং গ্লানির অনুভূতি এ কথাই তুলে ধরে যে, ব্রিটেনের প্রশাসন এই মুহূর্তে এক গভীর পচনের মধ্য দিয়ে চলেছে।

ব্রিটেন বরাবরই একটি সুচিন্তিত নীতি গ্রহণকারী দেশ রূপে পরিচিত। এমনকি অন্ধকারতম সময়েও সঙ্কট ব্যবস্থাপনা এবং ফলাফল অর্জনে ব্রিটিশ নীতিনির্ধারকদের গৃহীত সিদ্ধান্তে এক স্থিরতা ছিল। বিশ্ব রাজনীতিতে নিজের ক্ষমতার সীমা ছাড়িয়ে উঠে প্রভাব বিস্তার করার নেপথ্যে এক অন্যতম প্রধান কারণ ছিল সে দেশের  প্রশাসন। কিন্তু বর্তমানে ব্রিটেনের অভ্যন্তরে এবং বাইরে দেশটির দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিকে নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, যিনি যত্নশীল বিবেচনার পরিবর্তে শুধু মাত্র আদর্শগত দৃষ্টিভঙ্গির নিরিখেই নীতি নির্ধারণ করেছেন। ক্ষমতায় না থাকা এক জন প্রধানমন্ত্রী, মৌলিক অর্থনীতি বুঝতে অক্ষম এক জন সরকারি চ্যান্সেলর, প্রায় ভেঙে পড়ার মুখে থাকা শাসক দল এবং তাদের গৃহীত নীতি সম্পর্কে জনগণের মনে ধোঁয়াশা জন্ম নিচ্ছে।

ক্ষমতায় না থাকা এক জন প্রধানমন্ত্রী, মৌলিক অর্থনীতি বুঝতে অক্ষম এক জন সরকারি চ্যান্সেলর, প্রায় ভেঙে পড়ার মুখে থাকা শাসক দল এবং তাদের গৃহীত নীতি সম্পর্কে জনগণের মনে ধোঁয়াশা জন্ম নিচ্ছে।

গত কয়েক বছর ধরে ব্রিটেনে একের পর এক বিপর্যয় ঘটেছে। ব্রেক্সিট একটি বড় ধাক্কা ছিল এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার দরুন হওয়া ক্ষতির প্রভাব এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি এই দেশ। রাজনৈতিক যুক্তি যা-ই হোক না কেন, অর্থনৈতিক যৌক্তিকতা বর্তমানে বেশ দুর্বল বলেই বোধ হয় এবং ব্রিটিশ নীতি নির্ধারকদের দ্বারা এই বিপুল পরিবর্তনের সঙ্গে বাস্তবসম্মত উপায়ে মানিয়ে নেওয়ার কোনও প্রচেষ্টাই দেখা যায়নি। বৃহৎ রাজনৈতিক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বরিস জনসনের যে মেয়াদ শুরু হয়েছিল তা একগুচ্ছ কেলেঙ্কারির মাধ্যমে শেষ হয় এবং দল এখনও তাঁর যোগ্য উত্তরসূরি খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়েছে। ইতিমধ্যেই কেয়ার স্টারমারের নেতৃত্বে লেবার পার্টি আক্রমণাত্মক হয়েছে ও প্রশাসনকারী দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। টোরিদের কর্মকাণ্ডের ফলে সৃষ্ট রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলাকে কাজে লাগিয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে হতে চলা আগামী সাধারণ নির্বাচনে তারা সম্ভাব্য বিজয়ী হিসেবে উঠে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।

এই অপশাসন ইতিমধ্যে ব্রিটেনের বৈশ্বিক সুনামের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। ব্রেক্সিট-পরবর্তী বিদেশ নীতি নিয়ে বহু আলোচনা চললেও লন্ডন প্রত্যাশামাফিক সক্রিয়তা দেখাতে পারেনি। দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি না করলে এবং সরকারের রাজনৈতিক সংহতির প্রমাণ দেখাতে না পারলে খুব কম লোকই ব্রিটেনের ইন্দো-প্যাসিফিক ‘আগ্রহ’কে গুরুত্ব দেবে। ভারতের মতো দেশের জন্য, যে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সক্রিয় ব্রিটিশ অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছে, বর্তমানে ঘটনাপ্রবাহ আশাব্যঞ্জক নয়।

দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি না করলে এবং সরকারের রাজনৈতিক সংহতির প্রমাণ দেখাতে না পারলে খুব কম লোকই ব্রিটেনের ইন্দো-প্যাসিফিক ‘আগ্রহ’কে গুরুত্ব দেবে।

ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের নিরিখেও ট্রাস সরকার কৌশলগত দিক থেকে বিভ্রান্ত থেকেছে। উচ্চাকাঙ্ক্ষী ভারত-ইউ কে বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করার জন্য তাঁর পূর্বসূরি বরিস জনসন আনুমানিক ভাবে দীপাবলির মধ্যে, এবং নিশ্চিত ভাবে বছর শেষের আগে সম্ভাব্য সময়সীমা নির্ধারণ করেন। লিজ ট্রাসও চুক্তি সম্পন্ন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু তাঁর স্বরাষ্ট্র সচিব সুয়েলা ব্র্যাভারম্যান এ কথা নিশ্চিত করেছেন যে, চুক্তি প্রাথমিক ভাবে যা ভাবা হয়েছিল তার চেয়েও চূড়ান্ত হতে অনেকটাই বেশি সময়  নিতে পারে। ভারতের সঙ্গে একটি উন্মুক্ত সীমান্ত অভিবাসন নীতি নিয়ে প্রকাশ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, ‘আমি মনে করি না যাঁরা ব্রেক্সিটের পক্ষে ভোট দিয়েছেন, তাঁরা এমনটা চান’ এবং ভারতীয় অভিবাসীদের ‘অতিরিক্ত সময় থেকে যাওয়া মানুষদের বৃহত্তম দল’ হিসেবে চিহ্নিত করার নেপথ্যে টোরি পার্টির মধ্যে ট্রাসের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নিজেকে তুলে ধরার কারণ থাকতে পারে। কিন্তু ভারত-ব্রিটেন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটি রাজনৈতিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়েছে। দক্ষ কর্মীদের গতিশীলতা ভারতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং এই বিষয়টিকে বাদ দিয়ে চুক্তি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নয়াদিল্লি কোনও তাড়াহুড়ো করবে না।

এ কথা আশ্চর্যের যে, টোরির হার লেবার পার্টির লাভের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।  নিজের পূর্বসূরি জেরেমি করবিনের সময় দীর্ঘ দিন অবহেলিত থাকার পর ভারত এবং প্রবাসী ভারতীয়দের মন জয় করার জন্য স্টারমার সর্বতো ভাবে চেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি  বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এবং বাণিজ্য সংযোগকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য কার্যকরী প্রচার চালিয়েছেন।

মূলত ট্রাসের নেতৃত্বের অযোগ্যতা এবং টোরিদের অন্তঃকলহের কারণে ব্রিটেন এক অভূতপূর্ব রাজনৈতিক ঝড়ঝঞ্ঝার মধ্য দিয়ে গেলেও নয়াদিল্লিকে লন্ডনের সঙ্গে তার আলোচনায় নিজেদের জয় সুনিশ্চিত করতে ধৈর্য ধরতেই হবে।

মতামত লেখকের নিজস্ব।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.