Author : Harsh V. Pant

Originally Published Financial Express Published on Mar 16, 2022 Commentaries 5 Days ago

ইউক্রেনের বিরুদ্ধে পুতিনের যুদ্ধের সঙ্গে তাঁর ঘরোয়া রাজনীতির সম্পর্কই বেশি, তবে এটি ইতিমধ্যেই এমন একটি নতুন বৈশ্বিক ব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপন করেছে যা তাঁর পছন্দ হওয়ার সম্ভাবনা কম।

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ: ভ্লাদিমির পুতিনের বড়সড় জুয়া

Source Image: Antonio Marín Segovia — Flickr/CC BY-NC-ND 2.0

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ: ভ্লাদিমির পুতিনের বড়সড় জুয়া

এই নিবন্ধটি একটি সিরিজের অংশ যার নাম ‘‌ইউক্রেন সঙ্কট:‌ সংঘাতের কারণ ও গতিপথ’‌।


ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রুশ অভিযান যত দীর্ঘায়িত হচ্ছে, ততই একটি স্পষ্ট ধারণা তৈরি হচ্ছে যে বিশ্ব আরও বিপজ্জনক পর্যায়ে প্রবেশ করছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শুধু ইউক্রেনেই সহিংস নৈরাজ্য তৈরি করেননি, ইউরোপীয় নিরাপত্তার মানচিত্রকেও বদলে দিয়েছেন, যার প্রভাব বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। পুতিনের কূটনৈতিক চালের একটি চটকদার খেলা হিসেবে যা শুরু হয়েছিল, তা শহর অবরুদ্ধ করে রাখায় পরিণত হয়েছে। এখন সেখানকার যুদ্ধক্ষেত্রে রুশ নেতা কিছু অর্জন করতে পারুন বা না–পারুন, পরিণতিতে দীর্ঘমেয়াদে তাঁকে তাৎপর্যপূর্ণ ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। কৌশলগত, বা এমনকি কার্যকরী সাফল্যও রাশিয়ার জন্য সম্ভবত কৌশলগত ভাবে সামান্যই লাভজনক হবে। তার কারণ বিশ্বজুড়ে কয়েক দশকের মধ্যে নিরাপত্তার সবচেয়ে ব্যাপক পরিবর্তনগুলির একটি এখন ঘটছে, এবং বহু দেশ এর কী প্রভাব পড়বে তার মূল্যায়নে ব্যস্ত আছে।

প্রথম কয়েক দিন ধীরে এগনোর পর রাশিয়া ইউক্রেনের তীব্র প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছে, এবং এরপর তারা সম্ভবত ইউক্রেনকে ধ্বংস করার সর্বাত্মক চেষ্টা করবে। তারা দেশটিকে এমন ভাবে ধ্বংস করতে চায় যাতে দেশটি পশ্চিমী শিবিরে যোগ দেওয়ার কথা আর ভাবতেও না–পারে, এবং শেষ পর্যন্ত কিভে রাশিয়াপন্থী সরকার তৈরি হয়। রাশিয়ার কাছে এই কাজটি করার জন্য সামরিক বাহিনী আছে, এবং পুতিনের উদ্দেশ্য হল ‘‌ডিমিলিটারাইজেশন’‌ এবং ‘ডি-নাতসিফিকেশন’‌–এর নামে এই লক্ষ্য অর্জন করা। অনেকেই যেমন ভেবেছিলেন রুশ সামরিক বাহিনী প্রাথমিক দিনগুলিতে সে ভাবে এগোতে পারেনি;‌ তার ফলে এই সম্ভাবনা আরও জোরদার হয়েছে যে পুতিন চাইবেন রুশ সামরিক বাহিনী পরিপূর্ণ ভাবে তার শক্তি প্রদর্শন করুক।

এই কারণেই পুতিন সংঘাত বাড়তে থাকার প্রাথমিক পর্যায়েই পারমাণবিক হুমকি দেওয়ার মতো উন্মাদনার পথ অবলম্বন করেছিলেন। প্রথমত, তিনি সতর্ক করেছিলেন:‌ ‘‌‘‌যারা আমাদের পথ রোধ করার চেষ্টা করবে, বা আমাদের দেশ এবং আমাদের জনগণের জন্য আরও বিপদ ডেকে আনবে, তারা যে–ই হোক না কেন তাদের অবশ্যই জানতে হবে যে রাশিয়া অবিলম্বে পাল্টা আঘাত হানবে, যার পরিণতি এমন হবে যা ইতিহাসে আগে কখনও কেউ দেখেনি।’‌’‌ এবং আক্রমণের কথা জানিয়ে দেওয়ার ২৪ ঘণ্টা পরে তিনি ঘোষণা করেছিলেন যে রাশিয়ার পারমাণবিক বাহিনীকে উচ্চ–সতর্কতায় রাখা হয়েছে।

পুতিনের সমস্ত পেশি আস্ফালনের পরেও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিই কিন্তু সবার হৃদয় ও মন জয় করেছেন। ইউক্রেনীয়দের জন্য জাতীয় সঙ্কটের সময়ে তিনি শুধু একজন ক্যারিসম্যাটিক নেতা হিসেবেই আবির্ভূত হননি, তিনি তাঁর সমর্থনে বিশ্বের একটি বড় অংশকে একজোট করেছেন। রাশিয়াকে চ্যালেঞ্জ করে তাঁর বক্তৃতা এবং সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টগুলির মাধ্যমে তিনি ইউক্রেনীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবাদের একটি নতুন বোধ জাগিয়ে তুলেছেন। এর ফলে রাশিয়ার গায়ের জোরে কিভ দখল বা সেখানে একটি অনুগত সরকার বসানোর চেষ্টা আরও কঠিন হবে। জেলেনস্কি ইউরোপীয় পার্লামেন্টে তার ভাষণে বলেছিলেন যে তাঁর দেশ এখন রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে ‘‌বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করছে’‌ এবং ‘‌ইউরোপের সমান সদস্য’‌ হিসেবেই যেন তাদের এই লড়াই স্বীকৃতি পায়। রাশিয়ার আগ্রাসন এবং ইউক্রেনের প্রতিরোধ ইউরোপকে পুতিনের বিরুদ্ধে এমন ভাবে জোটবদ্ধ করেছে যা আগে কখনও হয়নি। সেই সঙ্গেই সেই সমস্ত কণ্ঠস্বর এখন চাপা পড়ে গিয়েছে যাঁরা কয়েক দিন আগে পর্যন্ত রাশিয়ার বৈধ নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলেছিলেন।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট আনুষ্ঠানিক ভাবে ব্রাসেলসে একটি আবেদন পাঠানোর পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন ঔদ্ধত্য দেখিয়েছে ইউক্রেনের সঙ্গে সদস্যপদ নিয়ে আলোচনার প্রশ্নে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে। এবং ইউরোপ এখন তার বৈদেশিক ও নিরাপত্তা নীতি সংক্রান্ত অবস্থানে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য এক পরিবর্তন করার পথে এগিয়ে চলেছে, যা মাত্র কয়েক দিন আগে কল্পনাও করা যেত না। রাশিয়া নির্ভর করছিল ইউরোপীয় অনৈক্য এবং সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে অনিচ্ছার উপর। কিন্তু ঠান্ডা যুদ্ধের সমাপ্তির পরবর্তিকালের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জগুলির মধ্যে একটির মুখোমুখি হয়ে ইইউ শুধু রাশিয়ার আর্থিক ক্ষেত্রকে লক্ষ্য করে শক্তিশালী নিষেধাজ্ঞাই আরোপ করেনি, তার পাশাপাশি রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মিডিয়াকে নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে এবং ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এমনকি সব সময়ের নিরপেক্ষ রাষ্ট্র সুইজারল্যান্ডও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন, প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিশুস্তিন ও বিদেশমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের পাশাপাশি প্রভাব ও সম্পদশালী রুশ নেতাদের সম্পদ ফ্রিজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তবে সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর ঘটনা জার্মানিতে ঘটেছে। ইউরোপের অর্থনৈতিক শক্তিকেন্দ্র এখন তার প্রতিরক্ষা ব্যয় উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যার অর্থ তারা বুঝে গেছে যে তাদের অর্থনৈতিক শক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া নিরাপত্তা–নিশ্চয়তার উপর নির্ভরশীল হলে তা মোটেই সুস্থিত হবে না। জার্মানি এখন তার সামরিক ব্যয় জিডিপি–র ২ শতাংশের উপরে নিয়ে যাবে, এবং তার সশস্ত্র বাহিনীর জন্য ১০০ বিলিয়ন ইউরোর একটি তহবিল গড়বে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী নীতি থেকে বড়সড় পরিবর্তন ঘটিয়ে তারা জার্মানি-নির্মিত অস্ত্রসম্ভার সংঘাত–অঞ্চলে পাঠানোর উপর কিছু বিধিনিষেধ সরিয়ে দিয়েছে, যার ফলে আরও তৃতীয় পক্ষের দেশ ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠাতে সক্ষম হবে৷ রুশ গ্যাসের উপর জার্মানির অত্যধিক নির্ভরতা সত্ত্বেও এই ঘটনা ঘটছে, এবং এই বার্তাটি স্পষ্ট হয়েছে যে ইতিহাস সত্যিই ইউরোপে ফিরে এসেছে।

ট্রান্স-আটলান্টিক সম্পর্কও আবার শক্তিশালী হয়েছে। পুতিন হুমকি দিয়ে যে ভাবে ঘটনাপ্রবাহ প্রভাবিত করতে চেয়েছিলেন, তার বিপরীত পথে হেঁটে ফিনল্যান্ড ও সুইডেন এখন নেটোতে যোগদানের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে। তাঁর স্টেট অফ দ্য ইউনিয়ন ভাষণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ঘোষণা করেছেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার বিমানের জন্য তার আকাশসীমা বন্ধ করার প্রশ্নে ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছে। ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার আনুমানিক লাভ সত্ত্বেও ভবিষ্যতে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীকে দুর্বল করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে বাইডেন বলেছেন যে পশ্চিমী দুনিয়া ‘‌রাশিয়ার প্রযুক্তি পাওয়ার পথ বন্ধ করে দিচ্ছে, যা তার অর্থনৈতিক শক্তিকে হ্রাস করবে এবং আগামী বছরগুলিতে তার সামরিক বাহিনীকে দুর্বল করবে’‌। রাশিয়ার উপর আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাগুলি গুরুতর, এবং অ্যাপল, গুগল, ফোর্ড ও এক্সন মবিল–এর মতো বড় সংস্থাগুলি রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। ফলে রাশিয়ার মুদ্রা রুবল–এর দাম ভয়ঙ্কর ভাবে পড়ে গেছে, এখন তার দাম এক পেনিরও নিচে। রুশ সম্পদশালী নেতারা অনেক নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্যবস্তু হয়েছেন, এবং এই ভাগ্য বিপর্যয়ের ফলে পুতিনের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক খারাপ হতে পারে।

পুতিনের ক্ষেত্রে এই সংকট তার অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অবস্থানের সঙ্গে বেশি সম্পৃক্ত । চেচেন বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে তাঁর দৃঢ় অবস্থান তাঁকে একজন জাতীয় তারকা করে তুলে থাকলে, ২০১৪ সালের ক্রিমিয়া অভিযান তাঁর জনপ্রিয়তার রেটিং বাড়িয়ে দিয়ে থাকলে, তিনি আশা করতেই পারেন যে ইউক্রেন অভিযান তাঁকে আরও এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে। নেটোর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রেও তিনি তাঁর অভ্যন্তরীণ সমর্থনভিত্তি শক্তপোক্ত করছেন। সর্বোপরি, রাশিয়ার চৌহদ্দিতে নেটো ও ইইউ-এর ক্রমাগত বিস্তার পুতিনের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য বিপদস্বরূপ। তিনি যুক্তি দিয়ে এটিকে রাশিয়ার জন্য বিপদ হিসেবে তুলে ধরেছেন এই ভাবে যে নেটো আসল সমস্যা নয়;‌ কিন্তু “রাশিয়া সংলগ্ন অঞ্চলগুলি, যা আমাকে বর্ণনা করতেই হবে আমাদের ঐতিহাসিক ভূমি হিসেবে, একটি ‘রাশিয়া-বিরোধী’ শত্রুর রূপ নিচ্ছে’‌’‌, এবং ‘‌‘‌আজকের ইউক্রেনের ভূখণ্ড থেকে আসা স্থায়ী হুমকির মুখোমুখি হয়ে রাশিয়া নিজেকে নিরাপদ মনে করতে, নিজের বিকাশ ঘটাতে এবং অস্তিত্ব বজায় রাখতে পারে না।”

তাই ইউক্রেন আক্রমণের মাধ্যমে পুতিন বিশ্বকে, এবং সেই সঙ্গে তাঁর নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকেও, কাঁপিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু ১৯৯০ সালে শীতল যুদ্ধ শেষ না হয়ে থাকলে, এই যুদ্ধটিও ইউক্রেনের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে শেষ হবে না। এটি ইতিমধ্যে একটি নতুন বৈশ্বিক ব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপন করেছে, যা পুতিনের পছন্দ হওয়ার সম্ভাবনা কম। সর্বোপরি, রণনীতি ব্যতিরেকে রণকৌশল তো নেহাতই পরাজয়ের আগে সোরগোল। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো ভারতেরও তাৎক্ষণিক যুদ্ধক্ষেত্রের বাস্তবতা দ্বারা প্রভাবিত হওয়া উচিত নয়; বরং এই সংকটের কারণে দীর্ঘমেয়াদি ব্যয় এবং সুযোগগুলিকে সতর্কতার সঙ্গে মূল্যায়ন করা উচিত।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.