Author : Deepak Sinha

Originally Published The Pioneer Published on Feb 26, 2022 Commentaries 12 Hours ago

ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের নিরাপদে বের করে আনা এবং তেলের দামের সম্ভাব্য বৃদ্ধির উপর নজর রাখার পাশাপাশি এই বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্যে ভারতকে ভেবেচিন্তে পদক্ষেপ করতে হবে।

ইউক্রেন সঙ্কট: ভারতের উপর তার প্রভাব

Source Image: Denis Bondariev — Flickr/CC BY-SA 2.0

ইউক্রেন সঙ্কট: ভারতের উপর তার প্রভাব

রাশিয়া শেষপর্যন্ত ইউক্রেন আক্রমণ করেছে। ইউক্রেনকে কেন্দ্র করে রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার ন্যাটো সহযোগী দেশগুলির মধ্যে সংঘাতের ঘটনাটি বেশ কিছু সময় যাবৎ সংবাদের শিরোনামে ছিল। কিন্তু অতি সাম্প্রতিক সময়ে দুই পক্ষের মধ্যে চাপানউতোর তীব্র আকার ধারণ করে এবং বোঝা যায় যে কোনও দিনই রাশিয়া আক্রমণ করতে পারে। রাশিয়ার আক্রমণের সম্ভাবনা যতটা স্পষ্ট ছিল, ঠিক ততটাই বাস্তব এবং উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে আক্রমণ পরবর্তী সময়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়া।

যদিও ইউক্রেন একটি উন্নয়নশীল দেশ এবং সেটি ইউরোপের মধ্যে দরিদ্রতম… তবুও তাকে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ কাজ নয়। আয়তনের সাপেক্ষে রাশিয়ার পরেই এটি দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ এবং ৪ কোটি ২০ লক্ষ অধিবাসী নিয়ে তা জনসংখ্যার নিরিখে অষ্টম বৃহত্তম। অষ্টাদশ শতক থেকে দেশটি রুশ সাম্রাজ্য এবং পরে সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ হয়ে থাকলেও ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে ইউক্রেন স্বাধীন দেশ হিসেবেই পরিচিত। ইরাক এবং আফগানিস্তানে আমেরিকার বিপর্যয়কর হস্তক্ষেপ থেকে পুতিন এবং রুশ সেনা যে শিক্ষাটি গ্রহণ করতে পারত, সেটি হল — সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে কোনও দেশে আক্রমণ চালানো অপেক্ষাকৃত সহজ, কিন্তু অশান্ত এবং বিক্ষুব্ধ জনসাধারণকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যাপার।

বর্তমান বিশৃঙ্খলার উৎপত্তি ঘটে ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে রুশপন্থী প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচের বিরুদ্ধে পাশ্চাত্য দ্বারা সমর্থিত ‘ইউরোমেডেন’ বিক্ষোভের মাধ্যমে, যার ফলস্বরূপ ইয়ানুকোভিচ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

সে যাই হোক, পুতিন এবং তাঁর উপদেষ্টাদের স্পষ্ট ভাবে মনে থাকা উচিত আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়নের হস্তক্ষেপের ঘটনা, শেষ পর্যন্ত যার পরিণতি হয়েছিল সোভিয়েতের পতন। নিশ্চিত ভাবেই এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করার ঝুঁকি নেওয়া উচিত ছিল না। কিন্তু পুতিন এ ক্ষেত্রে ‘অপারেশন পরাক্রম’-এ আমরা যা করতে পেরেছিলাম, ইতিমধ্যেই তার তুলনায় অনেক বেশি সফল হয়েছেন। বর্তমান বিশৃঙ্খলার উৎপত্তি ঘটে ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে রুশপন্থী প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচের বিরুদ্ধে পাশ্চাত্য দ্বারা সমর্থিত ‘ইউরোমেডেন’ বিক্ষোভের মাধ্যমে, যার ফলস্বরূপ ইয়ানুকোভিচ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। পূর্ব ইউক্রেনে বসবাসকারী রুশভাষী মানুষজন এবং ক্রিমিয়ায় ক্ষমতায় থাকা রুশপন্থী রাজনীতিকরা এই বিক্ষোভের তীব্র বিরোধিতা করেন। একই সঙ্গে সেবাস্তপোলের বন্দর শহরটি একটি গণভোটের আয়োজন করে এবং ভোটের ফলাফলের ভিত্তিতে অঞ্চলটি আলাদা হয়ে গিয়ে রুশ সেনার সাহায্যে রাশিয়ান ফেডারেশনের সঙ্গে ট্রিটি অফ অ্যাকসেশন স্বাক্ষর করে। এ ছাড়াও পূর্ব দিকের দনেটস্ক এবং লুহান্সক যার অন্তর্গত, সেই দোনবাস অঞ্চলটি রাশিয়া সমর্থিত সেনাবাহিনী এবং ইউক্রেনীয় সেনার মধ্যে এক বিচ্ছিন্নতাবাদী সংঘর্ষের কেন্দ্র হয়ে ওঠে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে মিনস্ক প্রোটোকল স্বাক্ষরের সঙ্গে সঙ্গেই যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে সব পক্ষ সহমত প্রকাশ করলেও সেই সংঘর্ষ বন্ধ হয়নি।

এ কথা স্পষ্ট যে রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘গ্রেট গেম ২.০’-তে ইউক্রেনীয় এবং ইউরোপীয়রা উপলক্ষ মাত্র। রাশিয়ার উদ্দেশ্য ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগদান করা থেকে বিরত রাখা, যাতে তারা নিজেদের জন্য সুরক্ষিত পরিসর (বাফার) সুনিশ্চিত করতে পারে। এক শক্তিশালী জাতীয়তাবাদী নেতা হিসেবে নিজের খ্যাতি সুদৃঢ় করার জন্য পুতিন সেই কর্তৃত্বের কিছুটা অন্তত পুনরুদ্ধার করতে চান, যা সোভিয়েত ইউনিয়নের শান্তির দিনগুলিতে রাশিয়া উপভোগ করেছিল। অন্য দিকে গভীর ভাবে আহত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার ন্যাটো বন্ধু দেশগুলির উপর নিজের আধিপত্য জোরদার করতে আগ্রহী যেগুলির উপরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শাসনকালে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল।

সর্বোপরি সরকারকে এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে হচ্ছে যাতে বিবদমান দুই পক্ষের কারও সঙ্গেই তার সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, কারণ উভয়ের সঙ্গেই ভারতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান।

কয়েক জন বিশ্লেষক এমন ইঙ্গিতও দিচ্ছেন যে, রাশিয়াকে ইউক্রেন আক্রমণে আগ্রহী করে তুলতে এবং তাকে একটি অজেয় সংঘাতের জালে আটকে ফেলার জন্য আমেরিকাও যথেষ্ট উৎসাহী ছিল। পাশাপাশি তারা শক্তি সহযোগিতার ক্ষেত্রে রাশিয়া এবং জার্মানির মধ্যে ক্রমবর্ধমান সহযোগিতাকেও বিরূপ ভাবে প্রভাবিত করতে চায়। প্রেসিডেন্ট বাইডেন, আমেরিকার এক তৃতীয়াংশেরও বেশি মানুষই যাঁর পদে আসীন থাকাকে অবৈধ বলে মনে করেন, ক্ষয়িষ্ণু আমেরিকার শক্তি ফিরিয়ে আনা এবং নিজের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করে তুলতে এই মরিয়া প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।

উভয় পক্ষের উদ্দেশ্য যা-ই হোক না কেন, ইউক্রেনের উত্তেজনা আমাদের সমস্যাকে বাড়িয়ে দিয়েছে। ভারত সরকার শুধু মাত্র সেখানকার ২০ হাজারেরও বেশি ভারতীয় ছাত্রছাত্রীকে নিরাপদে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন নয়, পাশাপাশি তেলের দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা এবং আমাদের অর্থনীতির উপরে তার প্রভাবের বিষয়টিরও সম্মুখীন হতে হবে এই সরকারকে। সর্বোপরি সরকারকে এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে হচ্ছে যাতে বিবদমান দুই পক্ষের কারও সঙ্গেই তার সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, কারণ উভয়ের সঙ্গেই ভারতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। এ ছাড়াও ইউক্রেনে কোনও রকম অস্থিরতা সৃষ্টি হলে ক্ষমতার ভরকেন্দ্র পরিবর্তিত হবে এবং চিনকে তা সুযোগ করে দেবে ভারত-সহ তাইওয়ান এবং কোয়াডের বিরুদ্ধে আরও বেশি আগ্রাসী আচরণ করার; ঠিক যে ভাবে ১৯৬২ সালে চিন ভারতকে আক্রমণ করেও পার পেয়ে গিয়েছিল কারণ সেই সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন কিউবান মিসাইল ক্রাইসিসে (কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সংকটে) জড়িয়ে ছিল।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন, আমেরিকার এক তৃতীয়াংশেরও বেশি মানুষই যাঁর পদে আসীন থাকাকে অবৈধ বলে মনে করেন, ক্ষয়িষ্ণু আমেরিকার শক্তি ফিরিয়ে আনা এবং নিজের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করে তুলতে এই মরিয়া প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।

এই সঙ্কট আমাদের সরকারকে নিজস্ব জাতীয় স্বার্থর দিকে মনোনিবেশ করার সুযোগ করে দিয়েছে। ধোঁয়াটে নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ না করে আমাদের উচিত এই সংঘাতে সেই পক্ষের সমর্থনে সম্পূর্ণ ভাবে দায়বদ্ধ হওয়া, যারা আগামী দিনে চিনের আগ্রাসী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে আমাদের সাহায্য করতে পারবে। অন্যথায় অতীতের মতোই আমরা আরও এক বার সংঘাতের সামনে দাঁড়িয়ে একলা হয়ে পড়ব এবং যথেষ্ট সহযোগিতা লাভে বঞ্চিত হব। নির্মম সত্য হল এই যে, নৈতিকতা এবং আদর্শের মূল্য যৎসামান্য এবং জাতীয় স্বার্থই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। যেমন ইকবাল চাঁদ মলহোত্র তাঁর সাম্প্রতিক বই, ‘ডার্ক সিক্রেটস: পলিটিক্স অ্যান্ড প্রক্সি ওয়ারস ইন কাশ্মীর’-এ উল্লেখ করেছেন, আমাদের মিত্র দেশ সোভিয়েত ইউনিয়নই মাও জে দংকে অবৈধ ভাবে আকসাই চিন দখল করতে এবং সেখানে একটি হাইওয়ে নির্মাণ করতে প্ররোচিত করেছিল, যাতে সেই অঞ্চলের ইউরেনিয়াম খনিগুলিতে তার প্রবেশাধিকার সুনিশ্চিত হয়। এই বিষয়ে ব্রিটিশদের বিশ্বাসঘাতকতামূলক কর্মকাণ্ড শুধু মাত্র দেশভাগ নিশ্চিত করার জন্য নয়, বরং স্কারদুতে বিদ্রোহ-সহ জম্মু ও কাশ্মীরের বিভাজন সংগঠিত করার নেপথ্যেও ছিল। এমনটা করার কারণ ছিল, পাকিস্তানে একটি উপযুক্ত ঘাঁটি গড়ে তোলা যেখান থেকে তারা সোভিয়েত ইউনিয়নের কাজকর্মে নজর রাখার পাশাপাশি পারস্য উপসাগরের মাধ্যমে তেলের প্রাপ্যতার উপর নিয়ন্ত্রণ এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় অন্যান্য স্বার্থ রক্ষা করতে সক্ষম হয়।


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় দ্য পাইওনিয়র-এ।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.