Author : Samir Saran

Originally Published The Economic Times Published on Apr 09, 2022 Commentaries 7 Days ago

এ ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় উঠে এসেছে — প্রযুক্তি সম্পর্কিত ঝুঁকির প্রকৃতির ধারণা, প্রশাসনের কাজে চ্যালেঞ্জগুলির মূল্যায়ন এবং নিয়ন্ত্রণের নতুন পদ্ধতি গ্রহণের ক্ষেত্রে সৃষ্টিশীল হওয়া।

ভারতে প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনটি ভাল, কোনটি খারাপ এবং কোনটি কুৎসিত, তার পুনর্মূল্যায়নের সময় উপস্থিত
ভারতে প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনটি ভাল, কোনটি খারাপ এবং কোনটি কুৎসিত, তার পুনর্মূল্যায়নের সময় উপস্থিত

নতুন নতুন প্রযুক্তি এসে বাজার থেকে শুরু করে সমাজ ও রাষ্ট্র সব কিছুকেই ডিজিটালাইজ করে ফেলেছে। প্রযুক্তির এই প্রসারকে এক সময় জোরের জায়গা বলে ধরা হত, এখন তা বিপদেরও কারণ। অনুমোদন দেওয়া, মানের দিকে নজর রাখা, শুল্ক বসানোর মতো নিয়ন্ত্রণের প্রচলিত পদ্ধতিগুলির তুলনায় প্রযুক্তি-প্রশাসন এখন আরও বেশি রাজনৈতিক ও সামাজিক হয়ে উঠেছে।

সর্বাধিক প্রযুক্তি-নিপুণ দেশগুলির মধ্যে ভারত অন্যতম এবং তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য ও পরিষেবা-সহ বিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার সুবিধে এ দেশের জনগণের স্বাচ্ছন্দ্যের অন্যতম কারণ৷ যদিও বর্তমানে তাকে আইন ও নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত প্রয়োজনগুলির একটি বিবর্তিত ক্ষেত্রের সঙ্গে সংযুক্ত হতে হবে। জনসংখ্যাভিত্তিক সুযোগকে ত্বরান্বিত করতে এবং বিস্তৃত ঝুঁকি মোকাবিলা করার জন্য এটি প্রয়োজনীয়।

এ ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় উঠে এসেছে — প্রযুক্তি সম্পর্কিত ঝুঁকির প্রকৃতির ধারণা, প্রশাসনের কাজে চ্যালেঞ্জগুলির মূল্যায়ন এবং নিয়ন্ত্রণের নতুন পদ্ধতি গ্রহণের ক্ষেত্রে সৃষ্টিশীল হওয়া।

প্রথমত ঝুঁকিগুলি নিজেরাই পরিবর্ধিত গণতান্ত্রিক সুযোগ-সুবিধার ফলে সৃষ্ট। প্রায় দুই দশকে ভারতে মোবাইল ফোন গ্রাহকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ১০০ কোটিরও বেশি, যার ৫০% বর্তমানে স্মার্ট ফোন ব্যবহার করছেন। এই ঘটনা রূপান্তরমূলক এবং নজিরবিহীন।

এই উন্নত প্রযুক্তি হাতে পাওয়ার পরিবর্ধিত সুযোগ সম্ভব করেছে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় দক্ষতা, স্থানীয় ই-কমার্স তথা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে উৎসাহ দান। যদিও ব্যবহারকারীদের বিপুল সংখ্যা (ইউজার বেস) দ্বিমুখী তরবারির মতো। এর ফলস্বরূপ সংশোধনমূলক হস্তক্ষেপগুলি আকর্ষক, ডিজিটাল গতিসম্পন্ন এবং জনসংখ্যাভিত্তিক হওয়া জরুরি। প্রথাগত নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারটি এ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ অকার্যকর।

এটা সব থেকে ভাল বোঝা যায় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলির সমস্যার দিকে তাকালে। ২০২১ সালের একটি রিপোর্টে দেখা গিয়েছে যে, ভারতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুল তথ্য বা গুজবের মাত্রা অত্যন্ত বেশি। এটি আংশিক ভাবে স্মার্টফোন ব্যবহারের জন্য দেশে ইন্টারনেট প্রসারের উচ্চতর হারের কারণে ঘটে থাকতে পারে। শুধু মাত্র ২০২১ সালের জুন-জুলাই মাসেই ফেসবুক ভারতে ১৫০৪ জন ব্যবহারকারীর (ইউজার) অভিযোগ পেয়েছে, যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ গুন্ডামি, হয়রানি বা অনুপযুক্ত যৌন বিষয়বস্তু সম্পর্কিত। অনলাইন জুয়া খেলা এবং ক্রিপ্টো অ্যাসেটের মতো অন্যান্য ডিজিটাল বাস্তুতন্ত্র জুড়েও এ ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ পাচ্ছে। মোবাইল ফোন যোগাযোগের কাজে ব্যবহৃত যন্ত্র, অপরাধস্থল এবং অসুরক্ষিত ব্যক্তিগত পরিসর।

একাধিক রাজ্যস্তরীয় আইনে বাজি ধরা এবং জুয়া খেলাকে নিয়ন্ত্রণ বা সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যদিও গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, অনলাইন জুয়া থেকে উপার্জনের সম্ভাবনার ক্ষেত্রে ভারত শীর্ষ পাঁচটি দেশের মধ্যে রয়েছে এবং প্রতি বছর অভ্যন্তরীণ অনলাইন ক্যাসিনো বাজার (ডোমেস্টিক অনলাইন ক্যাসিনো মার্কেট) ২২% পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। মহারাষ্ট্র, তেলেঙ্গানা এবং কর্ণাটকের অনলাইন জুয়া খেলার ওয়েবসাইটগুলি ব্যবহারকারীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ভারতে অবৈধ বাজি ধরা এবং জুয়ার বাজার অত্যন্ত লাভজনক, যার আনুমানিক মূল্য ১৫ হাজার কোটি মার্কিন ডলার।

অফশোর জুয়া খেলার ওয়েবসাইটগুলি (অন্য দেশের ওয়েবসাইট) প্রায়ই কালো টাকা চালান করা, অবৈধ লেনদেন এবং আর্থিক দালালদের মাধ্যমে সম্পত্তি পাচারের সঙ্গে যুক্ত। এর অপারেটররা প্রধানত ভারতের বাইরে অবস্থিত, যার ফলে রাষ্ট্রের পক্ষে নিয়ম বলবৎ করা কঠিন হয়ে ওঠে। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের মতো সংস্থার সাম্প্রতিক তদন্তে দেখা গিয়েছে যে, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা ও একাধিক অনলাইন ওয়ালেটের মাধ্যমে লেনদেন করার জন্য স্থানীয়দের নিয়োগ করা হচ্ছে, যা যথাযথ নিয়ন্ত্রণের ফাঁকগুলিকেই তুলে ধরে।

ডিজিটাল অর্থনীতির বিকাশের জন্য প্রক্রিয়াগত এবং কাঠামোগত ঝুঁকিগুলি সমাধানে সহায়তা করে এমন পদ্ধতির বিবর্তন ঘটা জরুরি। এই নতুন ডিজিটাল দুনিয়ায় কোনটা ভাল, কোনটা খারাপ আর কোনটা কুৎসিত সেটা পুনর্মূল্যায়ন করার সময় এসেছে। অনলাইন গেমিং এবং অনলাইন জুয়াকে এক করে দেখা উচিত নয়। একই ভাবে ব্লকচেন এবং সংবেদনশীল বিকেন্দ্রীভূত অর্থায়নকে লোভাতুর ক্রিপ্টো গেমিংয়ের আওতাভুক্ত করা উচিত নয়। আমরা যদি আগ্রাসী প্রযুক্তির বাজারকে যুক্তিযুক্ত নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে গ্রহণ করতে না পারি, তা হলে অন্যরা সেই সুযোগ নেবে। এই সুযোগকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হলে ভারত অর্থনৈতিক বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগের মূল স্রোত থেকে সরে যাবে। ভারতের ঝুঁকির পরিবেশ তখন বাহ্যিক এক্তিয়ার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে, যা আখেরে দেশের জন্য ক্ষতিকর।

আজকের দিনে আমাদের প্রয়োজন নতুন উদ্ভাবনী শক্তি এবং ডিজিটাল বিশ্বের একটি নতুন রূপ পরিকল্পনা যা শুধু মাত্র বাস্তবের ভার্চুয়াল এক্সটেনশন (ভার্চুয়াল বিস্তার) নয়, বরং একটি সম্পূর্ণ পৃথক উদাহরণ।

উদাহরণ স্বরূপ, ভারতে প্রায় দেড় কোটি ক্রিপ্টো-অ্যাসেট বিনিয়োগকারী আছেন, যাঁদের মোট সম্পদ ৪০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ও নীতিগত অনিশ্চয়তা ক্রিপ্টো-অ্যাসেট উদ্যোগপতি ও এক্সচেঞ্জগুলিকে বাধ্য করছে আরও সুবিধাজনক বাজারে সরে যেতে। ক্রিপ্টোকার্ট, কয়নেক্স, এবং জেবপে-র মতো এক্সচেঞ্জ ভারতীয় বাজার থেকে বেরিয়ে গেছে। জেবপে-র হেডকোয়ার্টার এখন সিঙ্গাপুর। ২০২১-এর শেষ দিকে ভারতের ক্রিপ্টো-অ্যাসেট প্রতিষ্ঠাতাদের অনেকেই সংযুক্ত আরব আমিরশাহি বা সিঙ্গাপুরে ব্যবসা সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছিলেন।

ক্রিপ্টোকারেন্সিকে সম্পূর্ণ রূপে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার মাধ্যমে চিনের মতো দেশগুলি ইতিমধ্যেই সুযোগ হারিয়েছে। ভারতকে অবশ্যই বিশ্বের তৃতীয় দ্রুত ক্রমবর্ধমান প্রযুক্তি কেন্দ্র হিসেবে তার অবস্থানকে কাজে লাগাতে হবে এবং উদ্ভাবনের পরিপন্থী বেজিংয়ের আদেশ ও নিয়ন্ত্রণ নীতির ফলে সৃষ্ট সুযোগটিকে কাজে লাগাতে হবে। প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বৈশ্বিক মান গড়ে দেওয়ার ক্ষমতা ভারতের আছে,তার সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করা উচিত।

জনসংখ্যার স্তরে প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণ একটি ডিজিটাল রাষ্ট্রের জন্য এক নতুন সংবিধান রচনার অনুরূপ। আজকের দিনে আমাদের প্রয়োজন নতুন উদ্ভাবনী শক্তি এবং ডিজিটাল বিশ্বের একটি নতুন রূপ পরিকল্পনা যা শুধু মাত্র বাস্তবের ভার্চুয়াল এক্সটেনশন (ভার্চুয়াল বিস্তার) নয়, বরং একটি সম্পূর্ণ পৃথক উদাহরণ। কোনটা আইনি, কোনটা বেআইনি এবং কোনটা বেআইনি হতে পারে… সে বিষয়ে একটা স্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার। এবং একই সঙ্গে জরুরি ব্যবহারকারী এবং নাগরিকদের পরিষেবা ও সুরক্ষার জন্য নতুন নিয়ন্ত্রণ।

বাস্তব জগৎ থেকে একটা উপমা ব্যবহার করা যেতে পারে। ১৯৯০-এর দশক থেকে ভারত সহ অনেক দেশই দেহব্যবসাকে আইনি স্বীকৃতি না দিলেও নিয়মিত ভাবে যৌনকর্মীদের মধ্যে কন্ডোম বিতরণ এবং নিরাপত্তামূলক প্রচার চালিয়েছে। তেমনই মাদক ব্যবহারকারীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে নিরাপদ সিরিঞ্জ, যদিও মাদক ব্যবহারকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। সরকার এবং নিয়ন্ত্রকদের জন্য ভূমিকাটা আর দ্বাররক্ষীর স্তরে সীমাবদ্ধ নেই, যার হাতে শুধু অনলাইন কাজকর্ম অনুমোদন করা বা ঠেকানোর ক্ষমতা থাকে। এখন সেই ভূমিকা দাঁড়িয়েছে বাস্তুতন্ত্র গড়ে তোলার, আর জনসাধারণের জন্য যা ক্ষতিকর তাকে কমিয়ে আনার।

ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পদকে করের আওতায় এনে কিন্তু সেগুলিকে লিগ্যাল টেন্ডার হিসেবে স্বীকৃতি না দিয়ে ভারত কিছু অভিপ্রেত নমনীয়তা দেখিয়েছে। এই নমনীয়তা বজায় রাখা এবং ভবিষ্যতের অপেক্ষাকৃত নিরাপদ প্রযুক্তি মঞ্চ, পরিষেবা এবং পণ্যগুলির সহ-তত্ত্বাবধায়ক হয়ে ওঠা ভারতের জন্য সদর্থক হবে, যা পুরস্কার-সহ ঝুঁকি উৎপাদনের কারণগুলিকে বিদেশে না পাঠিয়ে ভারতীয় আইন ব্যবস্থার আওতায় থাকবে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Author

Samir Saran

Samir Saran

Samir Saran is the President of the Observer Research Foundation (ORF), India’s premier think tank, headquartered in New Delhi with affiliates in North America and ...

Read More +