এই সামুদ্রিক অংশীদারি এখনও গড়ে ওঠার পর্যায়ে
আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহে চেন্নাইয়ের একটি ভারতীয় সুবিধাকেন্দ্রে মেরামতির জন্য মার্কিন নৌবাহিনীর একটি ড্রাই কার্গো জাহাজ ইউ এস এন এস চার্লস ড্রিউ–এর নোঙর ফেলা ভারত–মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সামরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রথম ঘটনা। যদিও গত এক দশকে দ্বিপাক্ষিক কৌশলগত সম্পর্ক যথেষ্ট অগ্রসর হয়েছে, সামরিক জাহাজের পারস্পরিক মেরামতি এতদিন এমন একটি মাইলফলক ছিল যা অতিক্রম করা যায়নি। কাট্টুপল্লি ডকইয়ার্ডে লারসেন অ্যান্ড টুব্রো (এল অ্যান্ড টি)–র সুবিধাকেন্দ্রে চার্লস ড্রিউ–এর আগমনের সঙ্গে সঙ্গে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি স্বআরোপিত বিধিনিষেধ অতিক্রম করেছে বলে মনে হচ্ছে।
একটি বিস্তৃত অংশীদারির লক্ষণ
কেউ কেউ মনে করছেন আশাবাদের একটি নতুন অনুভূতি এখন ভারত–মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ককে চালিত করছে। এই বছরের এপ্রিলে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক ২+২ সংলাপের সময় দুই দেশ মার্কিন মিলিটারি সিলিফ্ট কমান্ড (এম এস সি)–এর জাহাজ মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ভারতীয় শিপইয়ার্ড ব্যবহারের সম্ভাবনা অন্বেষণ করতে সম্মত হয়েছিল। সেই বৈঠকের পরের সপ্তাহগুলিতে এম এস সি ভারতীয় ইয়ার্ডগুলির একটি বিস্তৃত নিরীক্ষা চালায়, এবং মার্কিন সামরিক জাহাজ মেরামতির জন্য কাট্টুপল্লি সুবিধাকেন্দ্রটিকে ছাড়পত্র দেয়।
ভারত–মার্কিন চুক্তির অধীনে সহযোগিতা মূলত যৌথ মহড়া এবং ত্রাণ তৎপরতার সময় জ্বালানি ও রসদ বিনিময়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।
একটি ভারতীয় স্থাপনায় মার্কিন সামরিক জাহাজের নোঙর করার কার্যকরী এবং ভূ–রাজনৈতিক, দুই ধরনের গুরুত্ব রয়েছে। কার্যকরীভাবে, এটি ভারতের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ২০১৭ সালে স্বাক্ষরিত সামরিক রসদ সংক্রান্ত চুক্তি লজিস্টিকস এক্সচেঞ্জ মেমোরেন্ডাম অফ এগ্রিমেন্ট (লেমোয়া) –এর আরও দক্ষ ব্যবহারের ইঙ্গিত দেয়। এ যাবৎ এই চুক্তির অধীনে ভারত–মার্কিন সহযোগিতা মূলত যৌথ মহড়া এবং ত্রাণ তৎপরতার সময় জ্বালানি ও রসদ বিনিময়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। ভারতীয় ডকইয়ার্ডে একটি মার্কিন সামরিক জাহাজের আগমনের ফলে রসদ সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রসারিত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এখন একটি ভাল সম্ভাবনা রয়েছে যে ভারত এশিয়া এবং তার বাইরে মার্কিন ঘাঁটিগুলির মেরামতি সুবিধাকেন্দ্রে অনুরূপ প্রবেশাধিকার চাইবে।
ইতিমধ্যে ভারতে অনেকেই মার্কিন জাহাজের নোঙর করাকে ভারতীয় জাহাজ নির্মাণ ও জাহাজ মেরামতির ক্ষমতার বৈশ্বিক অনুমোদন হিসাবে দেখছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে নয়াদিল্লি দেশের বেসরকারি শিপইয়ার্ডগুলি প্রদর্শনের চেষ্টা করেছে, বিশেষ করে এল অ্যান্ড টি ইয়ার্ডগুলিকে, যেগুলি হাজিরা (গুজরাট) ও কাট্টুপল্লিতে জাহাজের নকশা তৈরি ও নির্মাণের উল্লেখযোগ্য ক্ষমতা অর্জন করেছে৷ ইতিমধ্যে ভারতীয় নৌবাহিনী আই এন এস বিক্রান্তের ডেলিভারি গ্রহণ করেছে, যা দেশের প্রথম দেশীয়ভাবে নির্মিত বিমানবাহী রণতরী। ফলে ভারতীয় জাহাজ নির্মাতাদের মনোবল ইতিমধ্যেই ঊর্ধ্বমুখী। ভারতীয় পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ভারতীয় ডকইয়ার্ডে ইউ এস এন এস চার্লস ড্রিউ–এর উপস্থিতি ‘আত্মনির্ভর ভারত’ ও ‘মেক-ইন-ইন্ডিয়া’–র জন্য উৎসাহব্যঞ্জক হবে।
রাজনৈতিক সংকেত
রাজনৈতিকভাবেও ঘটনাটি লক্ষণীয়, কারণ এটি ভারত–মার্কিন অংশীদারি এবং কোয়াড্রিল্যাটেরাল (ভারত, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) সিকিউরিটি ডায়ালগ বা কোয়াডকে শক্তিশালী করার ইঙ্গিতবাহী। কোয়াড সদস্যদের মধ্যে রসদ বিনিময় জোরদার করার অভিপ্রায় সত্ত্বেও নয়াদিল্লি বিদেশি যুদ্ধজাহাজকে ভারতীয় সুযোগকেন্দ্রগুলিতে প্রবেশাধিকার দেওয়া থেকে বিরত থেকেছিল। ভারতীয় স্থাপনাগুলিতে বিদেশি যুদ্ধজাহাজ ও বিমানের জ্বালানি ভরার কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা সত্ত্বেও ভারতের সামরিক স্থাপনা এমন কোনও পদক্ষেপ করার বিষয়ে সতর্ক ছিল যার মধ্যে চিনবিরোধী জোট তৈরির ছাপ আছে। তবুও, ভারতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীরা স্পষ্টতই ভারত–মার্কিন কৌশলগত সম্পর্কের ক্ষেত্রে আরও উচ্চাকাঙ্ক্ষী হতে ইচ্ছুক। মার্কিন সামরিক বাহিনীর জন্য মেরামতি সুবিধাকেন্দ্র খুলে দেওয়ার নয়াদিল্লির সিদ্ধান্ত কোয়াড অংশীদারদের সামুদ্রিক স্বার্থকে স্থান করে দেওয়ার জন্য ভারতের ক্রমবর্ধমান আগ্রহের ইঙ্গিত দেয়।
ভারতীয় স্থাপনাগুলিতে বিদেশি যুদ্ধজাহাজ ও বিমানের জ্বালানি ভরার কিছু ঘটনা সত্ত্বেও ভারতের সামরিক স্থাপনা এমন কোনও পদক্ষেপ করার বিষয়ে সতর্ক ছিল যার মধ্যে চিনবিরোধী জোট তৈরির ছাপ আছে।
ওয়াশিংটনের জন্যও ভারতে মার্কিন সামরিক জাহাজের নোঙর করার কৌশলগত গুরুত্ব কিছু কম স্পষ্ট নয়। এই ঘটনাটি পূর্ব ভারত মহাসাগরে তার সামরিক উপস্থিতি জোরদার করার ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান প্রয়াসের অংশ। ভারত মহাসাগরে গড়ে ওঠা নতুন নিরাপত্তা চিত্রের সাম্প্রতিক মূল্যায়ন এশিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলে চিনের সামরিক সম্প্রসারণের সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়, যার ফলে মার্কিন ও ইউরোপীয় সম্পদ বিপদের মুখে পড়ছে। বলা হচ্ছে, নর্থ অ্যাটলান্টিক ট্রিটি অরগানাইজেশন (ন্যাটো) এই অঞ্চলে আরও সক্রিয় নিরাপত্তা ভূমিকা পালনের জন্য প্রস্তুত হয়েছে। মার্কিন সামরিক জাহাজের জন্য নয়াদিল্লির মেরামত পরিষেবার প্রস্তাব এমন একটি প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে যার ফলে ভারত বন্ধুত্বপূর্ণ দেশগুলির যুদ্ধজাহাজের জন্য তার নৌঘাঁটিগুলি খুলে দেবে। যে সময়ে নয়াদিল্লি রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধে মার্কিন অবস্থানকে সমর্থন করা থেকে দূরে সরে থেকেছে, ঠিক তখনই ভারত মহাসাগরের উপকূলীয় অঞ্চলে বৃহত্তর ভারত–মার্কিন সমন্বয় ঘনিষ্ঠ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সমর্থকদের আরও উজ্জীবিত করতে পারে। এভাবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কটি ভারত মহাসাগরে একটি সংজ্ঞায়িত অংশীদারিকে এবং ভারত মহাসাগরে চিনকে মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে ভারতের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনাকে ফের সামনে নিয়ে আসবে। ভারতে প্রথম দুটি মার্কিন এম এইচ–৬০আর (মাল্টি রোল হেলিকপ্টার)–এর সরবরাহ পৌঁছনোর কাছাকাছি সময়ে (অবিলম্বে তৃতীয়টিও আসবে) ইউ এস এন এস চার্লস ড্রিউ–এর সফর ভারতীয় ও মার্কিন পর্যবেক্ষকদের আশাবাদী হওয়ার অনেক উপাদান দিয়েছে।
সি এম এফ সহযোগিতা
ইতিমধ্যে ভারতীয় নৌবাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে বাহরাইন–ভিত্তিক বহুপাক্ষিক অংশীদারি কম্বাইন্ড মেরিটাইম ফোর্সেস (সি এম এফ)–এর সঙ্গে এক ‘সহযোগী সদস্য’ হিসাবে তার সহযোগিতা শুরু করেছে। ভারত তার আঞ্চলিক নিরাপত্তা লক্ষ্যগুলিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য এই গোষ্ঠীতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছার কথা ঘোষণা করার কিছু মাস পরে এটি ঘটেছে। ভারতের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্ব এটিকে অভিন্ন সাধারণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সম্মিলিত দায়িত্বের ক্ষেত্রে ভারতীয় দায়বদ্ধতার প্রদর্শন হিসাবে দেখছে।
অবশ্য ভারতীয় বিশ্লেষকদের ঘটনাগুলির অতিরিক্ত অর্থ খোঁজা উচিত নয়, কারণ অনুভূত প্রবণতা থেকে অনুমান প্রায়শই বিভ্রান্তিকর হতে পারে। বাস্তবতা হল ভারত–মার্কিন সম্পর্ক এখনও নির্ণায়ক চৌকাঠটি পেরোয়নি। সি এম এফ–এ ভারতের সদস্যপদকে ঘিরে মিডিয়ায় যতই প্রচার হোক, সংযোগের পদ্ধতিগুলি এখনও তৈরি করা হচ্ছে। পাকিস্তান নৌবাহিনী এর এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হওয়ায় ভারতীয় নৌবাহিনী, মনে হচ্ছে, আনুষ্ঠানিকভাবে এই দলে যোগদান করবে না। সি এম এফ ওয়েবসাইট অনুসারে, ‘‘সহযোগী সদস্যরা সেই সহায়তা প্রদান করে যা নিজেদের জাতীয় কার্য সম্পাদন করার পর তাদের সময় এবং ক্ষমতা অনুযায়ী তাদের পক্ষে করা সম্ভব।’’ এটি ভারতের পূর্বের সহযোগিতার মডেলের মতোই, যেখানে ভারতীয় নৌবাহিনী পশ্চিম ভারত মহাসাগরে সি এম এফ এবং অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে প্রয়োজনের ভিত্তিতে কাজ করেছে, সবই স্বাধীনভাবে এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের বৃহত্তর ব্যানারের অধীনে। মার্কিন নৌবাহিনীর সঙ্গে বর্ধিত সম্পৃক্ততা সত্ত্বেও মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ড (সেন্টকম)–এ মার্কিন নৌবাহিনীর কম্পোনেন্ট (নাভসেন্ট, বা ইউ এস নেভাল ফোর্সেস সেন্ট্রাল কমান্ড)–এ ভারতের লিয়াজোঁ অফিসার এখনও বাহরাইনের ভারতীয় দূতাবাসে সামরিক অ্যাটাশে।
ভারতের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্ব এটিকে অভিন্ন সাধারণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সম্মিলিত দায়িত্বের ক্ষেত্রে ভারতীয় দায়বদ্ধতার প্রদর্শন হিসেবে দেখছে।
সম্ভাবনা এখনও সীমিত
এমনকি কাট্টুপল্লিতে মার্কিন জাহাজের নোঙরের পরেও ভারতীয় বিশ্লেষকদের মনে রাখা উচিত যে মার্কিন সামরিক সিলিফ্ট কমান্ডের কোনও যুদ্ধজাহাজ নেই। এম এস সি মার্কিন ঘাঁটিগুলিতে সরবরাহ নিয়ে যাওয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং শুধু মার্কিন নৌবাহিনীর পরিবহণ জাহাজগুলির সঙ্গে লেনদেন করে। মার্কিন সামরিক জাহাজ মেরামতের জন্য ভারতের সঙ্গে চুক্তিটি পণ্যবাহী জাহাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ। মার্কিন নৌবাহিনীর সঙ্গে কৌশলগত সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে নয়াদিল্লি মনোভাব স্পষ্ট না–করা পর্যন্ত মার্কিন সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের অদূর ভবিষ্যতে মার্কিন ডেস্ট্রয়ার বা ফ্রিগেটগুলির মেরামত বা পুনঃপূরণের জন্য ভারতীয় সুবিধাকেন্দ্র খোঁজার সম্ভাবনা কম।
নানা হিসাবে, অতঃপর, ভারত–মার্কিন সামুদ্রিক সম্পর্কের অগ্রগতি এখনও ‘ওয়র্ক ইন প্রোগ্রেস’ পর্যায়ে রয়েছে। নিঃসন্দেহে কিছু অগ্রগতি হয়েছে, তবে ভারত মহাসাগরের উপকূলে নৌবাহিনীর সঙ্গে নৌবাহিনীর সম্পর্ক একটি সর্বাত্মক ও ব্যাপক অংশীদারির দিকে এগোচ্ছে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
এই ভাষ্যটি প্রথমে ‘দ্য হিন্দু’তে প্রকাশিত হয়েছিল।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.