Author : Kabir Taneja

Originally Published The Print Published on Nov 17, 2022 Commentaries 15 Days ago

টুইটারে প্রসার চূড়ান্ত করার পরে তালিবান এখন নিজেদের বক্তব্য ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ইউটিউবারদের সাহায্য নিচ্ছে। এমনকি ভারতীয় ইউটিউবাররাও সেই সূত্র ধরে হাজির হয়ে যাচ্ছেন কাবুল বিমানবন্দরে।

ইউটিউবারদের দৌলতে তালিবান এখন আপনার বৈঠকখানায়
ইউটিউবারদের দৌলতে তালিবান এখন আপনার বৈঠকখানায়

তালিবানের হাতে ক্ষমতা অর্পণ করে বিশৃঙ্খল ভাবে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার এবং রাতারাতি আশরাফ গনি সরকারের পতনের এক বছর পর ভারত-সহ বিভিন্ন দেশ থেকে ইউটিউব কনটেন্ট নির্মাতারা আফগানিস্তানের জমিতে পা রাখতে শুরু করেছেন। ইউটিউবারদের দ্বারা তোলা ভিডিও – যা লক্ষ লক্ষ মানুষ দেখছেন – তালিবানকে অস্বচ্ছ আলোয় দেখিয়েছে, যারা ১৯৯০-এর দশকের পর ফের ক্ষমতায় এসে বর্তমানে ৪ কোটি মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করছে৷ সোশ্যাল মিডিয়া এবং হাইপার-ইনফরমেশনের (অতি তথ্য) বর্তমান যুগে অ-রাষ্ট্রীয় জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির জন্য বিশ্বব্যাপী মানুষের বৈঠকখানায় পৌঁছে যাওয়ার কাজ এবং তাদের নিজস্ব কর্মসূচি সংক্রান্ত তথ্যের এই গণতন্ত্রীকরণ অনেক বেশি সুলভ ও সহজ হয়েছে। আর এ কাজে এখনও পর্যন্ত তারা দারুণ সাফল্য পেয়েছে।

তালিবানের এই কর্মসূচির নেপথ্যে মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রধানত বিশ্বব্যাপী মানুষের কাছে এই বার্তার প্রচার চালানো যে, ক্ষমতায় আসীন পশতুন নেতৃত্বাধীন তালিবান বর্তমানে সকল সম্প্রদায়কে নিয়ে একটি ‘সংযুক্ত’ আফগানিস্তান নির্মাণের চেষ্টা করছে।

গণমাধ্যম সব সময়ই জঙ্গি গোষ্ঠীর প্রচারের অবিচ্ছেদ্য অংশ থেকেছে। ১৯৯০-এর দশক থেকে গ্রামীণ আফগানিস্তানের গুহার পটভূমিতে পশ্চিমী সংবাদমাধ্যম দ্বারা ওসামা বিন লাদেনের সাক্ষাত্কার গ্রহণের দৃশ্য আজও বার বার দেখানো হয়। তা ছিল কেব্‌ল নিউজের যুগ, যখন শুধুমাত্র পশ্চিমে নয়, সমগ্র বিশ্বে নিজেদের বার্তা পাঠানোর একটি নিশ্চিত উপায়। অন্যদের মতো তালিবান তাদের মতামত প্রচারের জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ‘নাইট লেটারস’ বা শবনম, যেখানে শেষ রাতে কাগজে-কলমে দেওয়া নির্দেশ ব্যক্তিগত ভাবে বিভিন্ন ব্যক্তি বা গ্রামগুলিতে পৌঁছে দেওয়া হত; ২০০০-এর দশকে তাদের আলেমারা শীর্ষক ওয়েবসাইট চালানো; এবং অবশেষে ২০১০-এর দশকে সোশ্যাল মিডিয়ায় অংশগ্রহণ করা।

টুইটার এবং তালিবান

এ বছর অক্টোবর মাসে তালিবান টুইটারে #ইউনাইটেডআফগানিস্তান নামে একটি হ্যাশট্যাগ প্রচার চালিয়েছে। এরই একটি পর্যায়ে টুইটার দেখিয়েছে যে, সেই মঞ্চে ১,২৫,০০০টিরও বেশি টুইট হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করেছে এবং বহু তালিবানপন্থী সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট এই প্রচারে অংশগ্রহণ করে অনলাইনে এই বার্তা প্রসারে সাহায্য করেছে। খুব সম্ভবত হ্যাশট্যাগটিকে বট ব্যবহার করার মাধ্যমে আরও প্রসারিত করা হয়েছে। তালিবানের এই কর্মসূচির নেপথ্যে মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রধানত বিশ্বব্যাপী মানুষের কাছে এই বার্তার প্রচার চালানো যে, ক্ষমতায় আসীন পশতুন নেতৃত্বাধীন তালিবান বর্তমানে সকল সম্প্রদায়কে নিয়ে একটি ‘সংযুক্ত’ আফগানিস্তান নির্মাণের চেষ্টা করছে। এ ক্ষেত্রে তালিবান নেতাদের দেশের অন্যান্য সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে একত্রে দেখা গিয়েছে। এবং কান্দাহারি ও হাক্কানিদের মধ্যে বিদ্যমান ক্ষমতার লড়াইয়ের প্রেক্ষিতে অভ্যন্তরীণ ক্ষোভ সংক্রান্ত গুজব দূর করার জন্য তালিবান প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের ছেলে ও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোল্লা ইয়াকুব এবং আপাতত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদে বহাল কুখ্যাত হাক্কানি নেটওয়ার্কের সিরাজুদ্দিন হাক্কানির ছবি জনসমক্ষে তুলে ধরে। উন্নত ধারণাসম্পন্ন, সুদক্ষ ভাবে পরিকল্পিত এবং গণমাধ্যমের কৌশলসম্পন্ন টুইটার বর্তমানে তালিবানের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। তালিবান জানে, পাশ্চাত্য কী ধরনের বক্তব্য শুনতে চায় এবং তা মাথায় রেখেই বিদেশি গণমাধ্যমের সঙ্গে তারা মিথস্ক্রিয়া চালায়।

২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে সিরিয়া ও ইরাকে তথাকথিত ইসলামিক স্টেটের (আই এস আই এস অথবা আরবি ভাষায় ‘দায়েশ’) উত্থান অ-রাষ্ট্রীয় শক্তিগুলি দ্বারা সুচিন্তিত ভাবে এবং কর্মসূচির কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া এবং ইন্টারনেটের ব্যবহারে এক বিপ্লব এনেছে। সম্পাদকের তরফে যাচাই-বাছাই সত্ত্বেও এই প্রচার সংবাদপত্র এবং টেলিভিশনের সংবাদ অনুষ্ঠানগুলিকে প্রভাবিত করতেও ব্যবহার করা যেতে পারে।

বিশেষত ইউরোপ থেকে নবীন ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ কর্মীদের নিয়োগ দ্বারা গতিপ্রাপ্ত আই এস আই এস বাস্তুতন্ত্র শক্তিশালী তথ্য নির্মাণ এবং বিতরণ করার বাস্তুতন্ত্র তৈরি করেছে, যা আজও বিদ্যমান এবং অনুকরণ করা হয়। এই সময়েই ভারতে আই এস আই এস-পন্থী একাধিক ঘটনাও আই এস আই এস এবং তাদের সহযোগীদের দ্বারা প্রকাশিত অনলাইন বিষয়বস্তু এবং প্রচারের দ্বারা মৌলবাদের সঞ্চার ঘটিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে উচ্চ গুণমানসম্পন্ন এবং সুনির্মিত হলিউডি কায়দার অ্যাকশন মুভি, ইনফোগ্রাফিক্স, ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন-সহ অনলাইন পত্রিকা এবং পডকাস্ট। এই বিষয়বস্তুগুলি ভৌগোলিক দিক থেকে ব্রিটেনের থেকেও বৃহদায়তন অঞ্চলে রাজত্বকারী ইসলামপন্থী গোষ্ঠীর রাজত্বের শীর্ষ পর্বে প্রকাশিত হয় এবং খলিফাপন্থার আঞ্চলিক পরাজয় সত্ত্বেও এর প্রকাশ অব্যাহত থাকে। ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তানের তালিবান, মলদ্বীপ এবং সাধারণ ভাবে দক্ষিণ এশিয়াকে নিশানাকারী ইসলামিক স্টেট খোরাসান প্রভিন্সের (আই এস কে পি) বর্তমানে নিজস্ব প্রচারের পন্থা রয়েছে। এখানে মনে রাখা আবশ্যক যে, ইসলামিক স্টেটের নামের সঙ্গে যুক্ত সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক হামলার মধ্যে দু’টি ২০১৬ সালে দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশে এবং ২০১৯ সালে শ্রীলঙ্কায় ঘটেছিল।

কাবুলের পতন হওয়া পর্যন্ত তালিবান, যারা তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় ব্যস্ত ছিল, অনলাইনে নিজেদের প্রসার বাড়ানোর জন্য টুইটারকে সর্বতোভাবে ব্যবহার করে, যা ক্ষমতার একাধিক অলিন্দে তাদের তুলনামূলক সংবেদনশীল ভাবমূর্তি নির্মাণে সাহায্য করে।

ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পটভূমিতে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আই এস-পন্থী সত আল হিন্দ (বা ইংরেজিতে ‘ভয়েস অফ হিন্দ’) পত্রিকাটি প্রথম প্রকাশিত হয়। পত্রিকার মূল লক্ষ্য ছিল, হিন্দু-জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) ক্ষমতাধীন ভারত সরকারের শাসনে বিদ্যমান সামাজিক চাপানউতোরকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের আদর্শগত বার্তা দেশের মুসলিম জনসংখ্যার কাছে পৌঁছে দেওয়া। যদিও গত তিন মাস ধরে সত আল হিন্দ হঠাৎই তাদের প্রকাশনা বন্ধ করে দিয়েছে, যা এই গোষ্ঠীগুলির দক্ষিণ এশিয়ায় তাদের কার্যকলাপের উপর আই এস-এর কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব, আই এস কে পি এবং তালিবানের ফিরে আসার প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে। তাদের প্রচারের কৌশলগুলি বর্তমানে অত্যধিক ভাবে ডিজিটাল বাস্তুতন্ত্রের উপর নির্ভরশীল এবং তারা স্মার্টফোনের মাধ্যমে এই অঞ্চল জুড়ে একশো কোটিরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছে।

বিষয়ের মূল্য

সোশ্যাল মিডিয়া মঞ্চগুলি এবং অনলাইন পরিষেবাগুলিতে একই ভাবে মিশ্র ফলাফলের সঙ্গে আই এস আই এস সম্পর্কিত বিষয়বস্তু অনুসরণ করার ফলে তালিবান মূলত টুইটারের মতো পরিষেবাগুলিতে তার উপস্থিতি বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। কাবুলের পতন হওয়া পর্যন্ত তালিবান, যারা তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় ব্যস্ত ছিল, অনলাইনে নিজেদের প্রসার বাড়ানোর জন্য টুইটারকে সর্বতোভাবে ব্যবহার করে, যা ক্ষমতার একাধিক অলিন্দে তাদের তুলনামূলক সংবেদনশীল ভাবমূর্তি নির্মাণে সাহায্য করে। এমনকি কূটনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও তাদের সঙ্গে কয়েক মাস আলাপ-আলোচনার পরে কিছু পশ্চিমী কূটনীতিবিদ তালিবানের অবস্থান এবং ‘অভিযোগ’-এর সপক্ষে কথা বলতে শুরু করেন। জনসাধারণের চোখে নিজের ভাবমূর্তি গড়ে তোলার জন্য এটিই একমাত্র পন্থা না হলেও অন্য রাষ্ট্রগুলির পথে হেঁটে গোষ্ঠীটি দ্বারা নাটকীয় ভাবে অনলাইন কার্যকলাপ বৃদ্ধি করার প্রক্রিয়াটি পরিকল্পনামাফিক হয়েছে। তালিবানের প্রধান মুখপাত্র, যিনি ২০২১ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত পরিচয় গোপন রেখেছিলেন, সেই জাবিহুল্লাহ মুজাহিদের সেই সময়ে টুইটারে প্রায় ৩ লক্ষ অনুগামী ছিল। বর্তমানে সেই সংখ্যা ৭ লক্ষ ছাড়িয়েছে।

প্রযুক্তিগত মঞ্চগুলির নির্দিষ্ট কিছু গোষ্ঠীর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা উচিত কিনা সে  সংক্রান্ত প্রশ্ন কয়েক বছর ধরে প্রাধান্য পেয়েছে। টুইটার এবং টেলিগ্রাম-সহ একাধিক মঞ্চ তালিবান এবং আই এস-র মতো গোষ্ঠীগুলিকে প্রচারে সাহায্য করার জন্য জননিন্দার সম্মুখীন হয়েছে। এই গোষ্ঠীগুলি সীমিত সংস্থান-সহ ক্ষুদ্রতর মঞ্চগুলিকে কাজে লাগিয়েছে যখন বৃহত্তর মঞ্চগুলি তাদের প্রচারের বিষয়বস্তুর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ফেসবুক দ্বারা নিষিদ্ধ ঘোষিত হওয়ার পর তালিবান টুইটার থেকে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। গত বছর আগস্ট মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের সন্ত্রাসবাদের তালিকায় থাকা একাধিক সদস্য-সহ গোষ্ঠীটি আফগানিস্তানের তৎকালীন সরকারের আনুষ্ঠানিক সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলগুলির দখল নেয়। এটি প্রযুক্তি সংস্থাগুলির জন্য আর এক সমস্যা তৈরি করে। তালিবানকে কি চরমপন্থী গোষ্ঠী হিসেবে দেখা হচ্ছে না কি তার ভাবমূর্তি ডি-ফ্যাক্টো রাষ্ট্র হিসেবে যারা এখন সরকারি সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলি পরিচালনা করছে? আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বা রাষ্ট্রপুঞ্জ এ প্রসঙ্গে কোনও আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি।

আফগানিস্তানে শান্তি বহাল আছে… এই বক্তব্য প্রচারের কাজে তালিবান ইউটিউব ভ্লগগুলিকে ব্যবহার করছে। ডিজিটাল নির্মাতারা বার্তা সংক্রান্ত সাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করলেও তাঁদের এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে যে, তালিবানের মতো গোষ্ঠীগুলি বরাবরই নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে উত্তরাধিকার এবং প্রথাগত গণমাধ্যমগুলিকে ব্যবহার করেছে। ইউটিউবাররাও এ ক্ষেত্রে পৃথক নন এবং তাঁরাও একই ভূমিকা পালন করতে বাধ্য হতে পারেন। তালিবানি বিষয়বস্তুর জন্য ‘ক্লিক, কমেন্ট এবং সাবস্ক্রাইব করা’র বিষয়টি চমকের সৃষ্টি করেছে, যা হয়তো এ হেন নির্মাতা অর্থনীতির এক মাত্র লক্ষ্য, কিন্তু তার জন্য প্রায়শই বিপজ্জনক মূল্য চোকাতে হয়।


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় দ্য প্রিন্ট-এ।

মতামত লেখকের নিজস্ব।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.