Author : Harsh V. Pant

Originally Published Hindustan Times Published on Apr 22, 2022 Commentaries 16 Days ago

কৌশলগত স্বচ্ছতা প্রায়শই যুদ্ধের ফলে উদ্ভূত হয়। যখন দেশগুলি যুদ্ধে হতাহতের সংখ্যা নির্ধারণ করে, তারা একই সঙ্গে তাদের প্রকৃত বন্ধুদের চিনতে পারে এবং সেই সব প্রতিপক্ষের সঙ্গে স্বাধীন ভাবে সম্পর্ক পরিচালনার ব্যাপারেও সতর্ক হয়, যারা ক্ষমতা এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষার অন্বেষণে হিংসাকেই বৈধ উপায় মনে করে।

ইউক্রেনের মাধ্যমে কৌশলগত স্বচ্ছতা
ইউক্রেনের মাধ্যমে কৌশলগত স্বচ্ছতা

যুদ্ধ মানবতাকে এক বিরল সঙ্কটের মুখে ফেলে। যুদ্ধ ধ্বংস করে, মনোবল নষ্ট করে এবং ভীষণ ভাবে অমানবিক। তবুও যুদ্ধের একটি মহান দিকও আছে। কারণ তার ফলেই কিছু মানুষের জন্য অমরত্বের দ্বার খুলে যায়। যুদ্ধ চিনতে শেখায় যে আমাদের কাছে কোনটি প্রকৃত মূল্যবান এবং কীসের জন্য আমাদের লড়াই করা উচিত। যুদ্ধ নিজের মধ্যে এক নতুন ব্যবস্থার বীজ ধারণ করে, যেগুলির মধ্যে কয়েকটি অন্যদের তুলনায় দীর্ঘস্থায়ী হলেও, সব ক’টিই বৃহত্তর প্রেক্ষিতে সমান গুরুত্বপূর্ণ।

তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল যুদ্ধ দেশগুলির কৌশলগত অগ্রাধিকারগুলিকে নির্ণয় করে। যখন হিংসা ছড়িয়ে পড়ে এবং মানব জীবনের উপরে সঙ্কট নেমে আসে, তখন সব রকম প্রতিরক্ষা, প্রতারণা, ভারসাম্য রক্ষা এবং এবং কূটনৈতিক পদক্ষেপ শেষ পর্যন্ত কিছু নির্দিষ্ট পথের সন্ধান দেয়। কৌশলগত স্বচ্ছতা প্রায়শই যুদ্ধের ফলে উদ্ভূত হয়। যখন দেশগুলি যুদ্ধে হতাহতের সংখ্যা নির্ধারণ করে, তারা একই সঙ্গে তাদের প্রকৃত বন্ধুদের চিনতে পারে এবং সেই সব প্রতিপক্ষের সঙ্গে স্বাধীন ভাবে সম্পর্ক পরিচালনার ব্যাপারেও সতর্ক হয়, যারা ক্ষমতা এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষার অন্বেষণে হিংসাকেই বৈধ উপায় মনে করে।

কৌশলগত স্বচ্ছতা প্রায়শই যুদ্ধের ফলে উদ্ভূত হয়। যখন দেশগুলি যুদ্ধে হতাহতের সংখ্যা নির্ধারণ করে, তারা একই সঙ্গে তাদের প্রকৃত বন্ধুদের চিনতে পারে এবং সেই সব প্রতিপক্ষের সঙ্গে স্বাধীন ভাবে সম্পর্ক পরিচালনার ব্যাপারেও সতর্ক হয়, যারা ক্ষমতা এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষার অন্বেষণে হিংসাকেই বৈধ উপায় মনে করে।

ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার এই যুদ্ধও বৈশ্বিক পরিবেশকে গভীর ভাবে প্রভাবিত করেছে। ইউক্রেনে চলা ধ্বংসলীলা এমন এক ট্র্যাজেডির জন্ম দিয়েছে, যার প্রতিধ্বনি পূর্ব ইউরোপের সীমার বাইরেও ছড়িয়ে পড়বে। এই যুদ্ধ ইতিমধ্যেই পশ্চিম ইউরোপে ‘উদারপন্থী শান্তি’র ভিত্তিকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। এটি এমন একটি ভৌগোলিক অঞ্চল যা শেষ পর্যন্ত মেনে নিয়েছে যে সেখানে কোনও দেশ যুদ্ধে আগ্রহী না হলেও তাকে যোগ দিতেই হবে।

প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির অনুপ্রেরণাদায়ী নেতৃত্বে ইউক্রেনীয়রা কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। কিন্তু তারা নিশ্চয়ই এ কথাও ভাবছে যে, পশ্চিমের প্রলোভন আসলে মরীচিকা, তার একটি বাস্তবমুখী মূল্যায়নের প্রয়োজন ছিল। ইউক্রেনের পালটা লড়াই নিয়ে যাঁরা প্রশ্ন তুলছেন, তাঁদের এ কথা মনে রাখা উচিত ইউরোপে জাতীয়তাবাদ দু’-দু’টি বিশ্বযুদ্ধের ক্ষতের পরেও সমান ভাবে তীব্র এবং রুশ আক্রমণের পরে এই তীব্রতা আরও বেশি প্রকট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমান সঙ্কটে যখন নতুন ইউরোপ জড়িয়ে পড়ছে, তখন উত্থান ঘটছে পূর্বতন ইউরোপের। আগে সোভিয়েত প্রভাবের আওতায় থাকা অন্য দেশগুলি আরও বেশি করে তাদের রুশ বিরোধী মনোভাব স্পষ্ট করেছে এবং রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আরও বদ্ধপরিকর হয়েছে। ইউক্রেন দেখিয়ে দিয়েছে যে, উচ্চ মূল্য চোকানোর বিনিময়ে হলেও রুশ সামরিক শক্তিকে প্রতিহত করা সম্ভব।

রাশিয়ার সমর ক্ষমতার অন্তঃসারশূন্যতা প্রকাশ্যে উঠে এসেছে।  রুশ সামরিক বাহিনীর আধুনিকীকরণ সংক্রান্ত এত আলোচনা সত্ত্বেও তারা যে প্রত্যাশামাফিক কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে, তা স্পষ্ট। দিনের পর দিন রুশ আক্রমণকে প্রতিহত করার মাধ্যমেই ইউক্রেনীয় সেনা দর্শিয়েছে যে, কী ভাবে একটি দুর্বল দেশ একটি বৃহৎ শক্তিকেও রুখে দিতে সক্ষম। সামরিক ইতিহাসবিদরা যখনই এই যুদ্ধের দিকে ফিরে তাকাবেন, তাঁরা দেখবেন কী ভাবে রাশিয়া কৌশলগত, প্রক্রিয়াগত এবং পন্থাগত সব স্তরে ব্যর্থ হয়েছিল। ভয়ঙ্কর আগ্রাসী শক্তি প্রয়োগ করা ছাড়া মস্কোর কাছে আর বিশেষ কোনও বিকল্প নেই। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, যাঁকে এক সময়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিমান কৌশলীদের একজন বলে মনে করা হচ্ছিল এবং যিনি তুলনামূলক ভাবে দুর্বল দিককে কার্যকর ভাবে কাজে লাগাতে সক্ষম  ছিলেন, এই একক আগ্রাসী পদক্ষেপের ফলে বিশ্ব জুড়ে তাঁর অবস্থান খর্ব হয়েছে। একজন হাস্যকৌতুক শিল্পী থেকে রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠা তাঁর ইউক্রেনীয় প্রতিপক্ষ পুতিনকে প্রতিদিন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছেন, রাশিয়ার অর্থনৈতিক পতন দ্রুততর হচ্ছে এবং বর্তমানে তাঁকে চিনের কাছে সামরিক ও অর্থনৈতিক সাহায্যের জন্য হাত পাততে হয়েছে। পুতিনের পক্ষে শি জিনপিংয়ের সমকক্ষ হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না আর। বরং এটি এমন এক সম্পর্ক, যেখানে পুতিন আনুষ্ঠানিক ভাবে শি-এর অধস্তন অংশীদার।

একজন হাস্যকৌতুক শিল্পী থেকে রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠা তাঁর ইউক্রেনীয় প্রতিপক্ষ পুতিনকে প্রতিদিন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছেন, রাশিয়ার অর্থনৈতিক পতন দ্রুততর হচ্ছে এবং বর্তমানে তাঁকে চিনের কাছে সামরিক ও অর্থনৈতিক সাহায্যের জন্য হাত পাততে হয়েছে।

ইউরোপের জন্য এটি একটি স্বীকৃতি দানের মুহূর্ত এবং একই সঙ্গে এ কথাও মনে করিয়ে দেয় যে, বৃহত্তর রাজনৈতিক সংহতি এবং শক্তিশালী সামরিক দক্ষতার কোনও বিকল্প নেই। গত কয়েক দশক ধরে সমস্ত আলোচনার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ই ইউ) দ্রুততা এবং ক্ষিপ্ততার সঙ্গে তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। বার্লিন যদি এই বার্তা পেয়ে থাকে যে অর্থ উপার্জনই একটি দেশের কৌশলগত স্বার্থের ক্ষেত্রে শেষ কথা নয়, তা হলে তা ব্রাসেলসকে শক্তিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে। নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন (ন্যাটো) এবং ই ইউ-এর মধ্যে ক্ষমতার প্রতিলিপিকরণ নিয়ে পুরনো বিতর্কগুলি ইউরোপের সামনে এক নতুন উপলব্ধির পথ খুলে দিয়েছে যে, আঞ্চলিক নিরাপত্তার পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের (ইউ এস) সঙ্গে ট্রান্স আটলান্টিক অংশীদারিত্ব মজবুত করার ক্ষেত্রে উভয়কেই বৃহত্তর প্রতিশ্রুতিবদ্ধতা দেখাতে হবে। ইউরোপের কৌশলগত অবস্থানের ক্ষেত্রে হার্ড পাওয়ারের ব্যবহার প্রান্তিক হয়ে পড়লেও বর্তমানে জার্মানি ফ্রান্সের সঙ্গে একত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৃহত্তর কৌশলগত দক্ষতা অর্জনের জন্য হার্ড পাওয়ার ব্যবহারের উপরে জোর দিয়েছে। চিন যদি ইউরোপকে তার ভূ-রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার অভাব  সম্পর্কে সতর্ক করে থাকে, একই সঙ্গে নিজের ভৌগোলিক সীমানার বৃত্ত বরাবর রাশিয়ার তরফে হার্ড পাওয়ারের অত্যধিক ব্যবহার সমসাময়িক ইউরোপীয় রাজনীতিতে সেনার ভূমিকা নিয়ে বিতর্ককে প্রকৃত পক্ষে অপ্রয়োজনীয় করে তুলেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর সব কিছুর উপরেই দূর থেকে নজর রাখছে, যেমনটা সে প্রায়ই করে থাকে। কিন্তু উদীয়মান (বি)শৃঙ্খলার কেন্দ্রে তার অবস্থান নিয়ে কোনও সংশয় নেই। এই যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে এ কথাও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে মৌখিক প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পাশাপাশি সক্রিয় ভাবে কাজে অংশগ্রহণও করতে হবে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চিনের উত্থান আমেরিকার জন্য প্রকৃত কৌশলগত চ্যালেঞ্জ হলেও তারা ইউরেশিয়াকে অগ্রাহ্য করতে পারে না। রাশিয়া-চিন ঐক্য ভাঙতে ব্যর্থ হওয়ার পরে বৃহৎ শক্তিগুলির সঙ্গে আমেরিকার ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। কৌশলগত পশ্চাদপসরণ তাদের জন্য আর কোনও কার্যকর বিকল্প নয়।

ইউরোপের কৌশলগত অবস্থানের ক্ষেত্রে হার্ড পাওয়ারের ব্যবহার প্রান্তিক হয়ে পড়লেও বর্তমানে জার্মানি ফ্রান্সের সঙ্গে একত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৃহত্তর কৌশলগত দক্ষতা অর্জনের জন্য হার্ড পাওয়ার ব্যবহারের উপরে জোর দিয়েছে।

এই সকল সংঘাতের প্রেক্ষিতে কোনও পক্ষকে দায়ী করার জন্য নয়াদিল্লির হাতে বিকল্প খুবই কম।  কৌশলগত ভাবে ভারত লক্ষ্যভ্রষ্ট হতে পারে না, কারণ তার মূল লক্ষ্য চিন। তবে এই যুদ্ধ শুধু মাত্র  ভারতীয় বিদেশনীতির অন্তর্নিহিত সেই ধারাগুলিকে আরও শক্তিশালী করেছে— রাশিয়ার উপর ভারতীয় প্রতিরক্ষা নির্ভরতা অস্থিতিশীল; ভারত-রাশিয়া সম্পর্কে প্রসারতার অভাব; রাশিয়া-চিন সম্পর্ক ক্রমশ শক্তিশালী হওয়ার সম্ভাবনা; এবং পশ্চিমী দেশগুলির সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়া। এমনকি উভয় পক্ষের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার নীতি অবলম্বন করলেও ভারতকে সম্পর্কের দিক থেকে রাশিয়ার সঙ্গে একটি চূড়ান্ত সংঘাতের জন্য প্রস্তুত হতে হবে যা ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের মহৎ উদ্দেশ্য এবং ভর্তুকি যুক্ত তেলের প্রলোভন সত্ত্বেও আসন্ন হয়ে পড়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধ যদি দিল্লির জন্য এই স্পষ্টতা আনতে পারে, তা হলে তা উদীয়মান বিশ্ব ব্যবস্থার মোকাবিলা করার জন্য ভারতকে আরও উপযুক্ত জায়গা করে দেবে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.