Author : Manoj Joshi

Originally Published The Tribune Published on Apr 15, 2022 Commentaries 10 Days ago

পাকিস্তানের ঘাড়ে পাহাড়প্রমাণ বোঝা ভারতকেও দাবিয়ে দেয়।

মাঝামাঝি পথ ধরে চলা
মাঝামাঝি পথ ধরে চলা

গত ফেব্রুয়ারি মাসে একজন বিশিষ্ট পাকিস্তানি ব্যবসায়ী এই দাবি করে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন যে যদি ফের–শুরু–হওয়া ব্যাকচ্যানেল প্রক্রিয়া সফল হয়, তা হলে প্রধানমন্ত্রী মোদী মার্চ মাসে একবার আন্তঃসীমান্ত সফর করতে পারেন। স্বাভাবিক যে পাকিস্তানের এনএসএ মোইদ ইউসুফ দু’‌দেশের সম্পর্কের এখনকার অচলাবস্থার জন্য বিজেপি সরকারের ‘‌বর্তমান মতাদর্শ’‌কে আক্রমণ করেছিলেন, এবং ঘোষণা করেছিলেন যে ভারতকে প্রথমে উপযোগী পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

বিজেপি–র উত্তরপ্রদেশে চমকপ্রদ ফল করার জন্য ‘‌সন্ত্রাস’‌, ‘‌পাকিস্তান’‌ বা ‘আমাদের জওয়ানদের সাহসিকতার’‌ মতো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক লক্ষ্যভিত্তিক প্রচারের প্রয়োজন ছিল না।

সাম্প্রতিক রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনগুলির একটি আকর্ষণীয় দিক ছিল যে বিজেপি–র উত্তরপ্রদেশে চমকপ্রদ ফল করার জন্য ‘‌সন্ত্রাস’‌, ‘‌পাকিস্তান’‌ বা ‘‌আমাদের জওয়ানদের সাহসিকতার’‌ মতো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক লক্ষ্যভিত্তিক প্রচারের প্রয়োজন ছিল না। বিজেপি–র সমর্থকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ ওবিসি ও দলিত, যাঁরা শুধু হিন্দুত্ব মতাদর্শের ভিত্তিতে তাঁদের পাশে জড়ো হননি, সেই সঙ্গেই তাঁরা এসেছিলেন দারিদ্র্য, অর্থনৈতিক স্থবিরতা ও অতিমারির বিপর্যয়ের সময়ে জনগণের দুর্দশা ঘোচাতে দলটির কল্যাণমূলক পদক্ষেপের কারণেও। তা ছাড়া জনমোহিনী রাজনীতির ওস্তাদ বিজেপি নিজের ত্রুটির জন্য অন্য সকলকে—নেহরু, বিরোধী দল, মুসলমান, শহুরে নকশাল, বিদেশী শক্তি, অভিজাত শ্রেণি ইত্যাদি—দোষারোপ করে দায় ঝেড়ে ফেলাটাও শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে।

২০১৭ সাল স্মরণ করুন। তখন তথাকথিত ‘‌সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’‌ উত্তরপ্রদেশে ভোটারদের জন্য বিজেপি–র প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল, এবং পুলওয়ামার ‘‌শহিদ’‌ ও বালাকোট বিমান হামলা ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে ‘‌জাতীয়তাবাদী’‌ প্রচারের অংশ হয়ে উঠেছিল।

কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাটি ইঙ্গিত দেয় যে মোদী পাকিস্তানের সঙ্গে শান্তি স্থাপনের প্রয়াস ফের শুরু করার কথা বিবেচনা করতে পারেন। মোদীর প্রথম দিকের পদ্ধতির কথা মনে করুন, যা তাঁকে ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৫-এ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাতে লাহোরে নিয়ে গিয়েছিল। সেই প্রয়াসটি পাকিস্তানের সামরিক কর্তৃত্ব দ্রুত লাইনচ্যুত করেছিল এক সপ্তাহ পরে পাঠানকোট বিমানঘাঁটিতে সন্ত্রাসবাদী হামলা চালিয়ে।

১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬-র উরি হামলা, যেখানে ১৮ জন সেনা নিহত হয়েছিলেন, একটি বড় পরিবর্তন এনেছিল। এগারো দিন পরে ভারতীয় সেনাবাহিনী এলওসি–জুড়ে একযোগে প্রতিশোধমূলক অভিযান চালায়। এগুলিকে প্রচারমূলক ভাবে ‘‌সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’‌ বলে বর্ণনা করা হয়েছিল। এগুলি এমন একটি কথনের অংশ হয়ে উঠেছিল যা উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে গুরুত্ব পেয়েছিল। ২০১৭ সালের প্রথম দিকের সেই নির্বাচনে বিজেপি বিপুল জয় পেয়েছিল।

সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানকে কোণঠাসা করার কাজ করতে করতে ভারতীয় কূটনীতিও কঠিন মোড় নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বারবার সন্ত্রাসবাদের নিন্দা করতে এবং ‘‌সন্ত্রাসের সমর্থক দেশগুলি’‌কে বিচ্ছিন্ন করার আহ্বান জানাতে জি২০, আসিয়ান, ব্রিকস ও বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেছিলেন। একই সঙ্গে তিনি রাষ্ট্রপুঞ্জ যাতে কমপ্রিহেনসিভ কনভেনশন অন ইন্টারন্যাশনাল টেররিজম (সিসিআইটি) গ্রহণ করে তার জন্য চাপ দেন।

অনেকেই অবাক হয়েছিলেন কেন ভারত এত জোর দিয়ে সন্ত্রাসবাদের বিষয়টি তুলছে। তথ্য দেখাচ্ছিল যে কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিংসা ও ইসলামি সন্ত্রাসবাদ আসলে বেশ কিছুদিন ধরেই কমছিল। কাজেই উত্তরটি ছিল সন্ত্রাসবাদকে বিজেপি–র ঘরোয়া রাজনৈতিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে ব্যবহার করার মধ্যে। দলের বক্তৃতায় পাকিস্তান ভারতীয় মুসলমানদের জন্য একটি প্রক্সি হয়ে উঠেছিল, এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আক্রমণ ছিল ভারতীয় মুসলমানদের প্রান্তিক করার একটি হাতিয়ার।

২০০৮ সালের মুম্বই হামলার পর পাকিস্তান কৌশল পরিবর্তন করে তার জিহাদি প্রক্সিদের দিয়ে আক্রমণের লক্ষ্য করে তোলে ভারতীয় সেনা ও পুলিশকে, কারণ এই আক্রমণের ঘটনাগুলিতে বেসামরিক বা অ-যোদ্ধাদের উপর আক্রমণের ঘটনার মতো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মানসিক বা রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া হয় না।

পাকিস্তান ভারতীয় মুসলমানদের জন্য একটি প্রক্সি হয়ে উঠেছিল, এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আক্রমণ ভারতীয় মুসলমানদের প্রান্তিক করার একটি হাতিয়ার ছিল।

ঘটনাচক্রে, ২০১৮ সালে যখন পাকিস্তান ট্রাম্প প্রশাসনের কড়া নজরে পড়ে, তখন এটিকে এফ এ টি এফ (ফাইনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স)–এর ধূসর তালিকায় রাখা হয়েছিল, এবং টাকা পাচার ও সন্ত্রাসবাদে অর্থায়নের ক্ষেত্রে তার রেকর্ড সাফ করতে বলা হয়েছিল। এই সিদ্ধান্ত এমন একটি আঘাত হেনেছে যা ইসলামাবাদ উপেক্ষা করতে পারেনি।

ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই এখন বুঝতে পারছে যে বর্তমান অচলাবস্থা তাদের স্বার্থ পূরণ করছে না। গত দুই বছরে ব্যাকচ্যানেল আলোচনা ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে এলওসি বরাবর যুদ্ধবিরতি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করেছিল। এই ঘটনা পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার ভারতের সঙ্গে তাঁর দেশের সম্পর্কে ‘‌দৃষ্টান্তমূলক পরিবর্তন’‌‌ করার আহ্বানের জমি তৈরি করে। কিন্তু সেই চিরাচরিত বাধা থেকেই গেছে:‌ কাশ্মীর।

পাকিস্তানও কিন্তু বুঝতে পেরেছে যে নয়াদিল্লির কঠোর দমনমূলক পদক্ষেপ রাজ্যটিতে হিংসা নিয়ন্ত্রণ করেছে। সম্প্রতি দ্য ট্রিবিউন–এর জন্য প্রতিবেদনে মুকেশ রঞ্জন ভারতীয় গোয়েন্দাদের মূল্যায়ন উদ্ধৃত করে লিখেছিলেন যে এলওসি বরাবর জিহাদি যোদ্ধাদের সংখ্যা ‘‌অর্ধেকে নেমে এসেছে’‌। গত বছর যেখানে ১১৫-১২০ জন যোদ্ধা ছিল, এই বছর সেখানে সংখ্যাটা ছিল ৭০–এর কাছাকাছি। এটি সম্ভবত ‘‌ডিপ স্টেট’‌ ওরফে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কিছু সিদ্ধান্তের ফলাফল।

পাকিস্তানের কাছে ভারতের প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করার উপযুক্ত কারণ আছে। প্রথম এবং সর্বাগ্রে, তার অর্থনীতি খারাপ অবস্থায় আছে। কিন্তু কাবুলে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সরকার থাকার সময়ে দেশটি এখন নয়াদিল্লির সঙ্গে আরও স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ অবস্থান নিতে পারে, কারণ শেষ পর্যন্ত ভারতও এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে তার প্রাথমিক নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ আছে উত্তর দিকে। একই ভাবে, ‘‌ডিপ স্টেট’‌টি মনে হয় বুঝতে পেরেছে যে ইমরান খানের মতো সামরিক-বান্ধব সরকার খুব বেশি কাজে লাগে না। এবং ইসলামাবাদ চিনের সঙ্গে ব্যাপক ঘনিষ্ঠতা বজায় রাখতে পারে, কিন্তু মোদীও তাঁর প্রধান উপসাগরীয় সহায়তাকারী সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সঙ্গে নয়াদিল্লির সম্পর্কের ব্যাপক উন্নতি ঘটিয়েছেন।

ইসলামাবাদের প্রতি ভারতের নতুন দৃষ্টিভঙ্গির পিছনে ততটা বাধ্যতামূলক কারণ নাও থাকতে পারে, কিন্তু সেগুলোও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। দুই ফ্রন্টের যুদ্ধ লড়ার সমস্ত সাহসী কথাবার্তা সত্ত্বেও ভারতকে তার নিরাপত্তা পরিস্থিতি সম্পর্কে বাস্তববাদী হতে হবে। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ভারতের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মধ্যে আছে একটি সমন্বিত দক্ষিণ এশীয় অর্থনৈতিক অঞ্চলের ধারণা, যেখানে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানও অন্তর্ভুক্ত, এবং যা মধ্য এশিয়া ও তারও বাইরে পৌঁছনোর একটি পথ। তবে সব কিছুর পরেও নয়াদিল্লির প্রয়োজন পাকিস্তানের তরফে স্পষ্ট ভাবে বোঝানো যে তারা প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে প্রক্সি যোদ্ধা ব্যবহারের থেকে কৌশলগত ভাবে সরে এসেছে।

এটা বোঝার সময় এসেছে যে পাকিস্তানের ঘাড়ে পাহাড়প্রমাণ বোঝা চাপলে তা শুধু পাকিস্তানকেই দাবিয়ে দেবে না, ভারতকেও দেবে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.