Originally Published The Diplomat Published on Mar 25, 2022 Commentaries 6 Days ago

ভারত এবং কোয়াডের বাকি সদস্যদের মধ্যে স্পষ্ট মতপার্থক্য রয়েছে, তবে এই বিষয়টিও স্পষ্ট যে তারা সেই পার্থক্যগুলি মেটাতে এক সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।

রাশিয়ার ইউক্রেন অভিযানের মধ্যে কোয়াড বৈঠক
রাশিয়ার ইউক্রেন অভিযানের মধ্যে কোয়াড বৈঠক

সম্প্রতি কোয়াড দেশগুলির নেতারা একটি আকস্মিক অনলাইন বৈঠক করেছিলেন। স্পষ্টতই ইউক্রেনে চলতি রুশ আগ্রাসন ভারত এবং অন্য কোয়াড সদস্যদের মধ্যে মতপার্থক্য তৈরি করেছে। নেতাদের বৈঠক সেই মতপার্থক্য মেটানোর একটি প্রয়াস বলে মনে করা হচ্ছে।

রুশ আক্রমণের শুরু থেকেই রাশিয়ার কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক স্তরে নিন্দিত হয়েছে। সমস্ত ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও জাপান ও অস্ট্রেলিয়া সহ অন্য অনেক দেশ সরাসরি মস্কোর নিন্দা করেছে, এবং একাধিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ভারত কিন্তু এই ধরনের কাজের জন্য রাশিয়ার নিন্দা করেনি। বরং ২৫ ফেব্রুয়ারি রুশ আগ্রাসন নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের ভোটে চিন ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সঙ্গে ভারতও ভোটদানে বিরত ছিল।

রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত গৌরী তিরুমূর্তি ভারতের ভোটদানে বিরত থাকার ব্যাখ্যা দেওয়ার সময় রুশ আক্রমণের সমালোচনা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন ‘সমসাময়িক বৈশ্বিক শৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদ, আন্তর্জাতিক আইন ও রাষ্ট্রগুলির সার্বভৌমত্ব এবং ভূখণ্ডগত সংহতির প্রতি শ্রদ্ধার উপর,’‌ এবং ‘‌সদস্য রাষ্ট্রগুলিকে একটি গঠনমূলক পথ খুঁজে বার করার জন্য এই নীতিগুলিকে সম্মান করতে হবে।’‌ স্পষ্টতই তাঁর এই কথাগুলোর লক্ষ্য ছিল রাশিয়া। ভারত এ নিয়েও আক্ষেপ করেছিল যে ‘‌কূটনীতির পথ ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’‌

একই রকম ব্যাখ্যার পুনরাবৃত্তি করে তিরুমূর্তি বলেছিলেন যে ‘এটা দুঃখজনক যে ইউক্রেনের পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে’‌। সেই সঙ্গেই ভারতীয় নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন এঁদের মধ্যে ‘‌বিপুল সংখ্যক ভারতীয় পড়ুয়া রয়েছে, যারা এখনও ইউক্রেনে আটকে আছে’‌

ইউক্রেন ইস্যুটিকে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ পরিষদের জরুরি অধিবেশনে পাঠানোর জন্য নিরাপত্তা পরিষদের একটি প্রস্তাবে দ্বিতীয় বার ভোটাভুটির সময়ও ভারত ভোটদানে বিরত থাকে, এবং আবার তার অবস্থানের ব্যাখ্যা দেয়। একই রকম ব্যাখ্যার পুনরাবৃত্তি করে তিরুমূর্তি বলেছিলেন যে ‘এটা দুঃখজনক যে ইউক্রেনের পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।’‌ সেই সঙ্গেই ভারতীয় নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এঁদের মধ্যে ‘‌বিপুল সংখ্যক ভারতীয় পড়ুয়া রয়েছে, যারা এখনও ইউক্রেনে আটকে আছে।’‌

রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ পরিষদে ইউক্রেনের উপর একটি প্রস্তাব গ্রহণের সময় ভারত তৃতীয় বারের মতো ভোটদান থেকে বিরত থাকে। তবে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত তাঁর ব্যাখ্যায় ‘‌ইউক্রেনের পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি এবং পরবর্তী মানবিক সংকট’‌ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ভারত আরও উল্লেখ করে যে তারা ইউক্রেনে ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামসহ মানবিক সহায়তা পাঠিয়েছে। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘‌আমরা আমাদের দৃঢ় বিশ্বাসে অটল রয়েছি যে পার্থক্যগুলি শুধু আলোচনা ও কূটনীতির মাধ্যমেই সমাধান করা যেতে পারে।’ সেই সঙ্গেই ভারত সমস্ত সদস্য রাষ্ট্রকে ‘‌রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদের নীতিসমূহ ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি তাদের অঙ্গীকার প্রদর্শনের জন্য এবং সব রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডগত অখণ্ডতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করার’‌ আহ্বান জানিয়েছিল।

আরও সম্প্রতি রাষ্ট্রপুঞ্জের হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিষয়ে তদন্তের জন্য একটি স্বাধীন আন্তর্জাতিক কমিশন গঠনের প্রস্তাবের উপর চিন ও পাকিস্তান সহ ১২টি দেশের সঙ্গে ভারতও ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিল।

যৌথ বিবৃতি এবং তার পাশাপাশি কোয়াডের অন্য তিন সদস্যের পৃথক বিবৃতি থেকে বোঝা যায় যে সাম্প্রতিক বৈঠকের কেন্দ্রবিন্দু ছিল ইউক্রেন, এবং পৃথক বিবৃতিগুলি রাশিয়ার আক্রমণকে কঠোর ভাষায় নিন্দা করেছে।

রাষ্ট্রপুঞ্জে ভোটদানের ক্ষেত্রে ভারতের অবস্থান নয়াদিল্লিকে তার সমস্ত কোয়াড–অংশীদারদের থেকে ভিন্ন করেছে, কারণ বাকিদের স্পষ্টতই অন্য দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। ভারতের সব কোয়াড–অংশীদারেরা রাশিয়ার আগ্রাসনের শুধু নিন্দাই করেনি, বরং রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক রুশ সংস্থাকে লক্ষ্যবস্তু করেছে।

কোয়াড শীর্ষ সম্মেলনের পরে দেওয়া ভিন্ন ভিন্ন বিবৃতি থেকে বোঝা যায় যে ভারত এবং তার তিন কোয়াড অংশীদারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মতবিরোধ রয়েছে। যৌথ বিবৃতি এবং কোয়াডের অন্য তিন সদস্যের পৃথক বিবৃতি থেকে বোঝা যায় যে সাম্প্রতিক বৈঠকের কেন্দ্রবিন্দু ছিল ইউক্রেন। পৃথক বিবৃতিগুলি রুশ আগ্রাসনের কঠোর ভাষায় নিন্দা করেছে। অন্য দিকে, ভারতীয় বিবৃতি অন্যান্য বিষয়ের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেছে এবং একবার শুধু ইউক্রেনের কথা উল্লেখ করে বলেছে যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘‌সংলাপ ও কূটনীতির পথে ফিরে আসার প্রয়োজনের উপর’ জোর দিয়েছেন। বিবৃতির ভিন্নতা দুর্ভাগ্যজনক হতে পারে, তবে বৈঠকের উদ্দেশ্য কিন্তু ততটা এই ভিন্নতার মোকাবিলা করা না–ও হতে পারে যতটা এই বিষয়টি তুলে ধরা যে ইউরোপের উপর এখনকার ফোকাস সত্ত্বেও আমেরিকা ইন্দো-প্যাসিফিকের প্রতি আগের মতোই অঙ্গীকারবদ্ধ।

ভারতীয় জনকথনে রাশিয়ার প্রতি সমর্থন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি এক ধরনের সংশয়ের ছবি ফুটে ওঠে, যা ভারতীয় কৌশলগত সম্প্রদায়ের উল্লেখযোগ্য অংশকে চালিত করে।

এই ভিন্নতা আংশিক ভাবে ইউক্রেনে আটকে–থাকা ভারতীয় নাগরিকদের তাৎক্ষণিক সমস্যার এবং অস্ত্রের জন্য রাশিয়ার উপর ভারতের নির্ভরতার প্রতিফলন। ভারতীয় জনকথনে রাশিয়ার প্রতি সমর্থন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি এক ধরনের সংশয়ের ছবি ফুটে ওঠে, যা ভারতীয় কৌশলগত সম্প্রদায়ের উল্লেখযোগ্য অংশকে চালিত করে। তা ছাড়া প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর সম্ভাব্য চিনা দুষ্কর্ম নিয়ে ভারতে কিছুটা উদ্বেগও আছে। ইতিবাচক দিক এইটাই যে বর্তমান ইউক্রেন সংকটের বিষয়ে ভারতের অসুবিধাগুলি সম্পর্কে কিছুটা বোঝাপড়া তৈরি হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যায় যে ইন্ডিয়ানা-র সেনেটর টড ইয়ং সেনেটের একটি শুনানির সময় বলেন, ‘‌‘‌ইউক্রেনে যা ঘটছে তার জন্য ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খারাপ করা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে বোকামি এবং গভীর অদূরদর্শিতা হবে।’‌’‌

একই ভাবে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অফ স্টেট ডোনাল্ড লু ভারতের সঙ্গে মার্কিন সম্পর্কের উপর শুনানিতে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে বলেন যে ইউক্রেন সঙ্কট সম্পর্কে ভারতীয় অবস্থান ‘‌ক্রমশ বিকশিত হচ্ছে।’‌ লু বলেন ‘‌অন্যান্য রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডগত সংহতিকে সম্মান করতে রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদ মেনে চলার জন্য ভারতের আহ্বান’‌ আদতে নাম উল্লেখ না–করে রাশিয়ার প্রতি স্পষ্ট কটাক্ষ। ইউক্রেনের বিষয়ে ভারতের অবস্থান সম্পর্কে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিজেই বলেছেন, ‘‌‘‌আমরা ভারতের সঙ্গে আলোচনা করছি। এর পুরোপুরি সমাধান এখনও হয়নি।”

স্পষ্টতই পার্থক্য ও মতভেদ আছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও এটা অনস্বীকার্য যে ভারত ও কোয়াড–অংশীদারেরা এই পার্থক্যগুলো মেটাতে এক সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.