কোভিড-১৯-এর বিপজ্জনক রূপ এড়াতে বসে দিন কাটানোর ঘটনা প্রশমিত করা একটি গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য কৌশল হতে পারে বলে বেশ অকাট্য প্রমাণ রয়েছে।
অ–পরিশ্রমী আচরণ ও কোভিড–১৯ সংক্রান্ত ঝুঁকি
ভারতের দ্বিতীয় কোভিড-১৯ তরঙ্গটির বৈশিষ্ট ছিল দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যাবৃদ্ধি এবং মারাত্মক আকারের নভেল করোনাভাইরাসের বিরাট ভাবে ছড়িয়ে পড়া। ভারতীয় জনসংখ্যার উপর কোভিড-১৯ বিষয়ক অধ্যয়নগুলি সেরোপ্রিভ্যালেন্স, সংক্রমণের সর্বোচ্চ সংখ্যার অনুমান এবং ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার মতো দিকগুলির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে। যাই হোক, অন্যান্য জীবনশৈলীগত কারণ (লাইফস্টাইল ফ্যাক্টর), যেমন কাজকর্মের মাত্রাও তাৎপর্যপূর্ণ, এবং তা কোভিড-১৯ সম্পর্কে আমাদের অনুধাবন প্রসারিত করতে পারে। বিশ্বজুড়ে অতিমারি–জীবনে কোয়ারেন্টাইন এবং বাড়িতে থেকে কাজ করার ফলে বসে দিন কাটানো বা অ–পরিশ্রমী জীবনযাত্রার ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। কোভিড-১৯-এর বিপজ্জনক রূপ এড়াতে বসে দিন কাটানোর ঘটনা প্রশমিত করা একটি গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য কৌশল হতে পারে বলে বেশ অকাট্য প্রমাণ রয়েছে। এই নিবন্ধে এই ধরনের প্রমাণ এবং গোটা পৃথিবীতে ও ভারতে মানুষের এই অ–পরিশ্রমী আচরণ (সেডেন্টারি বিহেভিয়ার বা শুয়ে–বসে দিন কাটানো) ও কাজকর্মের স্তর পর্যালোচনা করা হয়েছে।
নভেল করোনাভাইরাস অতিমারি বিশ্বজুড়ে চিকিৎসা ও জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার পরীক্ষা নিচ্ছে। ২০২০ সালে কোভিড–১৯–এর প্রথম তরঙ্গ বিশ্বের অন্যান্য অংশে অনিয়ন্ত্রিত ভাবে ছড়িয়ে পড়লেও ভারতে তা তুলনামূলক ভাবে কম তীব্র ছিল। তবে ভারতের জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা দ্বিতীয় তরঙ্গের ভয়াবহতা পূর্বানুমান করতে পারেনি। সেই সময় সংক্রমণের রেকর্ড বৃদ্ধি ও রোগের বিপজ্জনক দিকটির উচ্চ প্রকোপ দেখা গিয়েছিল। এপ্রিল এবং মে ২০২১-এর মধ্যে ভারতে অভূতপূর্ব ভাবে দৈনিক সংক্রমণ ৪০০,০০০ হয়ে গিয়েছিল, আর দৈনিক মৃত্যু প্রায় ৫,০০০-এ পৌঁছেছিল। প্রকাশ্যে আসা এই সংখ্যাগুলোর থেকে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। পজিটিভিটি রেট রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছে যায়, এবং কর্ণাটকের বেঙ্গালুরুতে তা ৫০ শতাংশ ছুঁয়েছিল।
অতিমারি নিয়ন্ত্রণের প্রাথমিক কৌশল ছিল সংক্রমণের শৃঙ্খল ভেঙে ফেলা। যাই হোক, অতিমারি চলতে থাকলে রোগের তীব্রতা কমানোর দিকে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া হয়। জনস্বাস্থ্য সংস্থাগুলি উপসর্গের সময়মতো পরীক্ষা করার প্রয়োজনের জন্য চাপ দিতে থাকে, যাতে সংক্রমণের বাড়াবাড়ি রোধ করা যায় এবং হাসপাতালে ভর্তি কমানো যায়।
অতিমারি দীর্ঘায়িত হতে থাকলে অন্যান্য কিছু পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। যখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) প্রথম কোভিড-১৯–কে অতিমারি হিসেবে ঘোষণা করে, তখন কোভিড–১৯ থেকে গুরুতর বিপদের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল বয়স (৬০ বা ৬৫ বছরের বেশি) এবং অন্তর্নিহিত অ–সংক্রামক রোগগুলিকে।[১]
তারপর থেকে অন্য যে সব বিপদের কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে একটি হল সেডেন্টারিনেস (শুয়েবসে দিন কাটানো) বা অপরিশ্রমী জীবনশৈলী। রবার্ট স্যালিস ও তাঁর সহকর্মীদের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কায়সার পার্মানেন্ট মেডিক্যাল সেন্টার ও পোমোনা কলেজে চালানো অতিমারি সংক্রান্ত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে অ–পরিশ্রমী জীবনধারা কোভিড–১৯ সংক্রমিতদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার, ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে ভর্তি হওয়ার, এবং মৃত্যুর ক্ষেত্রে একটি কারণ ছিল। কোভিড–১৯ রোগ কী ভাবে বাড়ে তার ক্লিনিকাল ভবিষ্যদ্বাণীর ক্ষেত্রে এই বিশ্লেষণটি কাজকর্মের স্তরকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হিসেবে তুলে ধরেছে। অ–পরিশ্রমী আচরণ এখন জনস্বাস্থ্য গবেষণায় আচরণগত বা জীবনশৈলীর ঝুঁকির কারণের অতিরিক্ত কিছু হিসেবে দেখা দিচ্ছে। বোঝা যাচ্ছে এর ক্লিনিকাল ফলাফলও রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, কার্ডিও-ভাসকুলার রোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধিতে এর ভূমিকা ইতিমধ্যেই সুপরিচিত।[২],[৩],[৪],[৫],[৬],[৭],[৮],[৯]
অ–পরিশ্রমী আচরণ বনাম শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা
যদিও ‘অ–পরিশ্রমী আচরণ’ (সেডেন্টারিনেস বা সেডেন্টারি বিহেভিয়ার) শব্দটি প্রায়ই ‘শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা’ ( ফিজিকাল ইনঅ্যাক্টিভিটি)-র সঙ্গে সমার্থক হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তবে দুটি কিন্তু ভিন্ন।[১০],[১১]‘শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা’ হল যথেষ্ট শারীরিক কাজকর্মের অভাব; আর ‘অ–পরিশ্রমী আচরণ’–এর সংজ্ঞা হল জাগ্রত অবস্থায় এমন কাজকর্ম করা যার শক্তি ব্যয়ের পরিমাপ হল বিশ্রামরত অবস্থার চেয়ে ১–এর বেশি কিন্তু ১.৫ গুণের কম অক্সিজেন গ্রহণ করা।[১২]এটি সাধারণত একটি বিপাকীয় সমতুল্য কাজ (মেটাবলিক ইকুইভ্যালেন্ট টাস্ক বা এমইটি)–এর মান আকারে উপস্থাপিত হয়।[১৩]
অ–পরিশ্রমী আচরণ প্রতি দিন বা প্রতি সপ্তাহের মিনিট বা ঘণ্টার সময়কালের পরিপ্রেক্ষিতে পরিমাপ করা হয়। অ–পরিশ্রমী আচরণের কোনও পরিমাপ কাজকর্মের তীব্রতা বিবেচনা করে না। অন্যদিকে শারীরিক সক্রিয়তা হল ১.৫ এমইটি-র বেশি শক্তি ব্যয় দ্বারা চিহ্নিত যে কোনও কাজকর্ম, এবং তার তীব্রতার উপর ভিত্তি করে এর আরও শ্রেণিবিন্যাস করা হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ধীর গতিতে হাঁটা, যেমন একজনের অফিসে চলাফেরা (২.০ এমইটি), হালকা-তীব্র শারীরিক সক্রিয়তা হিসেবে গণ্য হয়; খেলাধুলা, যেমন ঘণ্টায় ৫.৫ মাইল গতিতে সাইকেল চালানো (৩.৫ এমইটি), মাঝারি-তীব্র শারীরিক সক্রিয়তা হিসেবে গণ্য হয়; এবং ঘণ্টায় ৫.৫ মাইল গতিতে দৌড় (৮.৩ এমইটি) উচ্চ-তীব্রতার বা জোরালো শারীরিক সক্রিয়তা হিসেবে গণ্য হয়।[১৪]
সারণি ১: অ–পরিশ্রমী কাজকর্ম এবং সেগুলির এমইটি মান
সমীক্ষা-ভিত্তিক জনস্বাস্থ্য গবেষণার জন্য শারীরিক কাজকর্মের সংকলন (কমপেন্ডিয়ম অফ ফিজিকাল অ্যাক্টিভিটিজ) মূলত কাজকর্ম শ্রেণিবদ্ধ করার জন্য এবং এমইটি মান সহ তাদের তালিকাভুক্ত করার একটি ব্যবস্থা।[১৬]এই সংকলনটি একটি সংস্থান হিসেবে কাজ করে যা কাজকর্ম চিহ্নিত করে শক্তি ব্যয়ের ভিত্তিতে। অ–পরিশ্রমী কাজকর্ম বেশিরভাগই হেলান দিয়ে, শুয়ে থাকা বা বসে থাকা অবস্থায় সঞ্চালিত হয়, যেমন লেখা, টেলিভিশন দেখা, বা একটি বোর্ড গেম খেলা।[১৭],[১৮]জনস্বাস্থ্য সমীক্ষাগুলিতে প্রায়শই টেলিভিশন দেখা বা কম্পিউটারে কাজ করাকে স্ক্রিন-ভিউয়িং কাজ হিসেবে গণ্য করা হয়। (এই অধ্যয়নগুলির বেশিরভাগই উচ্চ-আয়ের দেশগুলির উপর ভিত্তি করে এবং শিশুদের স্ক্রিন-ভিউয়িং সময়ের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে করা হয়েছে৷)
দ্য কানাডিয়ান সোসাইটি অফ এক্সারসাইজ অ্যান্ড ফিজিওলজি (সিএসইপি)–র ও অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় নির্দেশিকা ছিল অ–পরিশ্রমী আচরণের জন্য প্রথম উপলব্ধ নির্দেশিকা। সেই সময়ে প্রকাশিত প্রমাণগুলি (সিস্টেম্যাটিক রিভিউগুলি সহ) পর্যালোচনা করার পরে তৈরি করা এই নির্দেশিকাগুলিই ২০২০–র নভেম্বর মাসে হু-র কাজকর্ম নির্দেশিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল৷ হু–র নির্দেশিকাগুলি শুধু মোট অ–পরিশ্রমী আচরণের বিষয়টি উল্লেখ করেছে এবং দীর্ঘায়িত বসে থাকা হ্রাস করার নির্দেশ দিয়েছে।[১৯],[২০],[২১]
সারণি ২: অ–পরিশ্রমী আচরণ নির্দেশিকা
@সিএসইপি গাইডলাইনস অন ফিজিকাল অ্যাকটিভিটি।[২৩]নির্দিষ্ট বয়সের সঙ্গে সম্পর্কিত সমস্ত সুস্থ ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য। যাঁরা গর্ভবতী, প্রতিবন্ধী বা যাঁদের কোনও অসুস্থতা আছে তাঁদের চিকিৎসকের অনুমোদন পেলে তবেই এটি মেনে চলা উচিত। এটি লিঙ্গ, গোষ্ঠী, জাতি বা আর্থ-সামাজিক অবস্থার পার্থক্যসাপেক্ষ নয়।
$সিএসইপি গাইডলাইনস অন সেডেন্টারি বিহেভিয়ার।[২৪]সুস্বাস্থ্যের অধিকারী সব শিশু ও যুবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, লিঙ্গ, গোষ্ঠী, জাতি বা আর্থ-সামাজিক অবস্থার পার্থক্য সাপেক্ষ নয়।
#অস্ট্রেলিয়া’জ গাইডলাইনস অন ফিজিকাল অ্যাক্টিভিটি অ্যান্ড সেডেন্টারি বিহেভিয়ার[২৫]। নোট: বয়স ১ থেকে ৫, আলাদা ভাবে গ্রুপ করা হয়েছে। নির্দেশিকায় ২ বছর বয়সীদের জন্য কোনও স্ক্রিন টাইম দেওয়া হয়নি৷
নির্দেশিকায় শারীরিক কাজকর্মের মাত্রা এবং তীব্রতা সম্পর্কে যে সব সুপারিশ করা হয়েছে তা কোনও ব্যক্তির সর্বোত্তম স্বাস্থ্য সুবিধা পাওয়া এবং বর্তমান স্বাস্থ্য বজায় রাখতে মেনে চলা উচিত। অ–পরিশ্রমী আচরণ কমানোর জন্য নির্দেশিকাগুলির তুলনায় বেশি ভাল ভাবে তুলে ধরা হয়েছে শারীরিক কাজকর্মের বিষয়টি। এর থেকে ‘শারীরিক কাজকর্ম’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ ক্রিয়াকলাপের শ্রেণিবিন্যাসের ভিত্তিও পাওয়া যায়। অ–পরিশ্রমী আচরণের জন্য তালিকাভুক্ত ক্রিয়াকলাপের সংখ্যা মুষ্টিমেয়, তবে একজনের দিনের একটি বড় সময়ের জন্য তা ব্যবহার করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, বসে থাকা একটি অ–পরিশ্রমী কাজ, এবং তা সহজেই প্রতিদিন ছয় থেকে আট ঘণ্টা চলতে পারে। অ–পরিশ্রমী আচরণের নির্দেশিকা থেকে প্রধান গ্রহণযোগ্য বিষয় হল ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে বসে থাকা কমানো উচিত।
অ–পরিশ্রমীআচরণওকোভিড–১৯তীব্রতা
রবার্ট স্যালিস এবং অন্য গবেষকদের একটি যুগান্তকারী সমীক্ষা[২৬]২০২১ সালে ব্রিটিশ জার্নাল অফ স্পোর্টস অ্যান্ড মেডিসিন-এ প্রকাশিত হয়েছিল। এতে অ–পরিশ্রমী আচরণ এবং কোভিড-১৯ রোগের তীব্রতার মধ্যে একটি ইতিবাচক কার্যকারণ সম্পর্ক দেখানো হয়েছে। স্যালিস এবং তার সহকর্মীরা ১ জানুয়ারি ২০২০ থেকে ২১ অক্টোবর ২০২০-র মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রামিত ৪৮,৪০০ প্রাপ্তবয়স্কের (বয়স>=১৮ বছর) বিপদের কারণগুলি অনুসন্ধান করেছেন। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের নিয়োগ করা হয়েছিল কাইজার পার্মানেন্টে সাদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া (কেপিএসসি) থেকে, যেটি রাজ্যের দক্ষিণাঞ্চলের ১৫টি চিকিৎসা কেন্দ্রে ৪৭ লক্ষ মানুষকে সেবা দেয়। গোল্ড-স্ট্যান্ডার্ড আরটি–পিসিআর পরীক্ষার উপর ভিত্তি করে কোভিড–১৯ নির্ণয় করা হয়েছিল। এটি এমন একটি বিশ্লেষণ ছিল যার জন্য গবেষকরা ক্যালিফোর্নিয়ায় কোভিড-১৯ লকডাউনের ঠিক আগে ২০১৮–র ১৯ মার্চ থেকে ২০২০–র ১৮ মার্চের মধ্যে ন্যূনতম তিনবার এক–একজন আউটপেশেন্টের কাজকর্মের পরিমাপ রেকর্ড করেন। এই কেপিএসসি স্বাস্থ্য-পরিকল্পনাভুক্ত সদস্যদের শেষ দুই মাসে তাঁদের কাজকর্মের মাত্রা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল দুটি সহজ প্রশ্ন: ১) ‘গড়ে আপনি প্রতি সপ্তাহে কত দিন মাঝারি থেকে কঠোর ব্যায়াম করেন (যেমন দ্রুত হাঁটা)?’ এবং ২) ‘গড়ে আপনি এই স্তরে কত মিনিট ব্যায়াম করে থাকেন?’
প্রতিক্রিয়াগুলির উপর ভিত্তি করে তিনটি স্তর তৈরি করা হয়েছিল: ধারাবাহিক ভাবে নিষ্ক্রিয় (প্রতি সপ্তাহে ০-১০ মিনিট মাঝারি থেকে কঠোর কাজকর্ম করা); কিছু কাজকর্ম করা (প্রতি সপ্তাহে ১১-৪৯ মিনিট মাঝারি থেকে কঠোর পরিশ্রম করা); এবং ধারাবাহিক ভাবে শারীরিক কাজকর্মের নির্দেশিকা পূরণ করা (প্রতি সপ্তাহে ১৫০ বা তার বেশি মিনিট মাঝারি থেকে কঠোর কাজকর্ম করা)।
লজিস্টিক রিগ্রেশন বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে নিয়মিত ভাবে নিষ্ক্রিয় ব্যক্তিদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সম্ভাবনা সেই সব সংক্রামিত ব্যক্তিদের তুলনায় ২.২৬ গুণ বেশি ছিল যাঁরা শারীরিক কাজকর্মের নির্দেশিকা মেনে চলেছিলেন। ধারাবাহিক ভাবে সক্রিয় ব্যক্তিদের তুলনায় এই ধরনের ক্রমাগত নিষ্ক্রিয় ব্যক্তিদের আইসিইউতে ভর্তি হওয়ার এবং মৃত্যুর সম্ভাবনা যথাক্রমে ১.৭৩ এবং ২.৪৯ গুণ বেশি ছিল। যাঁরা শারীরিক কাজকর্মের নির্দেশিকা পূরণ করেন, তাঁদের তুলনায় যারা অসামঞ্জস্যপূর্ণ ভাবে সক্রিয় ছিলেন (প্রতি সপ্তাহে ১১-৪৯ মিনিট মাঝারি থেকে কঠোর কাজকর্ম করেন) তাঁদেরও হাসপাতালে ভর্তি হওয়া, আইসিইউতে যাওয়া এবং মৃত্যুর সম্ভাবনা বেশি ছিল।
এই ফলাফলগুলি ধূমপান, অন্তর্নিহিত অবস্থা এবং অন্যান্য সহ-অসুস্থতা বা কোমর্বিডিটির জন্য নিয়ন্ত্রিত, যার অর্থ হল পরিবর্তনশীল রাশিগুলির (ভেরিয়েবলস) কারণে নিষ্ক্রিয় ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে বিশ্লেষণে প্রতিকূলতার হার যা রিপোর্ট করা হয়েছে তার চেয়ে বেশি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। ডায়াবেটিস, কার্ডিওভাসকুলার রোগ ও অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী রোগের মতো পরিবর্তনশীল রাশিগুলি এমনিতেই কোভিড–১৯–এর তীব্রতার বিপদের কারণ হিসেবে চিহ্নিত। অ–পরিশ্রমী আচরণ এই দীর্ঘস্থায়ী অসুখগুলিকে আরও বাড়িয়ে তোলে। বিশ্লেষণে এর জন্য জায়গা রাখতে গিয়ে নিষ্ক্রিয়তা কোভিড–১৯–এর উপর যতটা প্রভাব ফেলে তা পুরোপুরি ধরা পড়েনি। আমরা নিচে নির্দেশিত অ্যাসাইক্লিক গ্রাফ থেকে বিষয়টি বুঝতে পারি।
অ–পরিশ্রমী আচরণ (চিত্রে ‘এসবি’ লেবেলযুক্ত) স্থূলতা ও রক্তচাপ, রক্তের গ্লুকোজ, কোলেস্টেরল (বিশেষ করে কম ঘনত্বের লাইপো-প্রোটিন) এবং ইনসুলিনের মতো বায়োমলিকুলার মার্কারগুলির প্রতিকূল মাত্রার কারণ হতে পারে।[৩৬]এই আণবিক পরিমাপগুলি কার্ডিওভাসকুলার রোগ এবং ডায়াবেটিসের মতো বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী অবস্থার সুপ্রতিষ্ঠিত বায়োমার্কার।
প্রাপ্ত প্রমাণ দেখায় যে দীর্ঘস্থায়ী অ–পরিশ্রমী আচরণ ভেঙে হালকা বা মাঝারি-তীব্র কাজকর্ম বিপাকীয় বায়োমার্কারের জন্য উপকারী। সিস্টোলিক রক্তচাপের মাত্রা, রক্তের ইনসুলিন এবং উচ্চ-ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিন স্তরের জন্য কম অ–পরিশ্রমী আচরণ উপকারী;[৩৭]দাঁড়িয়ে অফিসে কাজ করা গ্লুকোজের মাত্রা ভাল করে;[৩৮],[৩৯]সাইক্লিং ও হাঁটা লিপিড ও ইনসুলিনের[৪০]ক্ষেত্রে কার্যকরী এবং গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।[৪১]
অ–পরিশ্রমী আচরণ: বিশ্বব্যাপী ধরন
বিশ্বব্যাপী অ–পরিশ্রমী আচরণের স্তরের গবেষণায় দেখা গেছে যে গড়ে প্রাপ্তবয়স্কদের ৪২ শতাংশ প্রতিদিন ন্যূনতম চার ঘণ্টা বসে থাকেন।[৪২]নির্দিষ্ট করে, এই অনুপাত আফ্রিকার দেশগুলির জন্য প্রায় ৩৭ শতাংশ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৫৫ শতাংশ, ইউরোপে ৬৪ শতাংশ,[৪৩]এবং সিঙ্গাপুরে ৩৭ শতাংশ।[৪৪]এই প্রবণতা শহরে অনন্য কিছু নয়. গ্রামীণ সুইডেনের প্রাপ্তবয়স্কদের প্রায় ৮০ শতাংশ উচ্চ অ–পরিশ্রমী আচরণ করেন।[৪৫]৩৪টি দেশের তথ্য ব্যবহার করে করা হিসেব দেখায় যে স্ক্রিন-ভিউয়িং–এর জন্য ব্যয় করা গড় সময় প্রতিদিন তিন ঘণ্টা।[৪৬]
বিশ্বব্যাপী, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তার প্রবণতাও বেশি; ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী ব্যক্তিদের প্রায় ২৭.৫ শতাংশ শারীরিক ভাবে নিষ্ক্রিয়। এই তথ্য পাওয়া গিয়েছে ১৬৮টি দেশের ১৯ লক্ষ অংশগ্রহণকারীর থেকে।[৪৭]শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (৪৩ শতাংশ), ইউরোপ (৩৮ শতাংশ), আফ্রিকা (২৭ শতাংশ), এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় (১৭ শতাংশ) বেশি পাওয়া গেছে।[৪৮]
কোভিড-১৯ অতিমারি জনসংখ্যাকে স্ব-নিভৃতবাসে এবং কোয়ারেন্টাইনে জীবনযাপনের শিকার করেছে। এই ধরনের একটি কঠোর ও আকস্মিক পরিবর্তন বিশ্বব্যাপী শারীরিক কাজকর্ম ও অ–পরিশ্রমী আচরণের মাত্রাকে প্রভাবিত করেছে। মানুষ আরও অ–পরিশ্রমী এবং শারীরিক ভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে উঠেছে।[৪৯],[৫০],[৫১]শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে তা আরও বাড়ছে।[৫২],[৫৩],[৫৪]
২০১৩ সালে হু বিশ্বব্যাপী শারীরিক নিষ্ক্রিয়তার ক্রমবর্ধমান মাত্রার কথা স্বীকার করে, এবং বলে সরাসরি স্বাস্থ্যসেবাতে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী শারীরিক নিষ্ক্রিয়তার কারণে ৫,৪০০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় হচ্ছে।[৫৫]শারীরিক নিষ্ক্রিয়তার কারণে জাতীয় স্বাস্থ্যসেবার বোঝা প্রায় এক থেকে তিন শতাংশ বলে ধরা হয়। শারীরিক ক্রিয়াকলাপের মাত্রা বাড়ানোর লক্ষ্যে একটি নীতি–কাঠামো গড়ে তোলার আহ্বানে সাড়া দিয়ে হু ২০১৩ সালে শারীরিক ক্রিয়াকলাপের উপর গ্লোবাল অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করে, যার লক্ষ্য ছিল ২০৩০ সালের মধ্যে শারীরিক নিষ্ক্রিয়তার ১০ শতাংশ আপেক্ষিক হ্রাস। পরে ২০১৭ সালে এই লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে করা হয়েছিল ১৩ শতাংশ, এবং অ–সংক্রামক রোগ (এনসিডি) ও শারীরিক নিষ্ক্রিয়তার স্তরের ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বর্তমান অগ্রগতির ভিত্তিতে ২০২০ সালে তা বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। অ্যাকশন প্ল্যান সক্রিয় সমাজ, পরিবেশ, মানুষ এবং সিস্টেম তৈরি করে তার লক্ষ্য অর্জনের জন্য একটি নির্দিষ্ট ব্যবহারিক পন্থা অবলম্বনের প্রয়োজনের উপর জোর দেয়।[৫৬]
অ–পরিশ্রমী আচরণ নিয়ে ভারতীয় সমীক্ষা এবং কোভিড-১৯
কোভিড-১৯ নিয়ে ভারতে বেশিরভাগ গবেষণা করেছে অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস এবং ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ।[৫৭]তারা মূলত রোগের ভাইরোলজি, নির্ণয়, সংক্রমণ, সেরোপ্রিভ্যালেন্স, চিকিৎসা ও মৃত্যুর হারের উপর দৃষ্টি রেখে কাজ করেছে।[৫৮],[৫৯]
ভারতীয়দের মধ্যে কোভিড-১৯-এর ক্ষেত্রে জীবনধারাজনিত ঝুঁকির কারণ সম্পর্কে এখনও কিছু জানা যায়নি।[৬০]প্রাক-কোভিড ভারতীয় জনসংখ্যার উপর অ–পরিশ্রমী আচরণের অধ্যয়ন সীমিত ছিল। এই সীমিত গবেষণাগুলি ভারতে উচ্চ স্তরের অ–পরিশ্রমী আচরণের কথাই তুলে ধরে।[৬১],[৬২],[৬৩],[৬৪]শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে গবেষণাতেও একই ছবি উঠে এসেছে।[৬৫],[৬৬], [৬৭], এই ধরনের অনুসন্ধানগুলি প্রাথমিক ভাবে শহুরে শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের উপর ভিত্তি করে করা। গ্রামীণ পরিস্থিতিতে প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে যে তাঁদের মধ্যেও সমান ভাবে উচ্চ ৪০ শতাংশ অ–পরিশ্রমী আচরণের প্রবণতা আছে।[৬৮]
আলোচনা
স্যালিস এবং তার সহকর্মীদের বিশ্লেষণের কিছু বিষয় বিবেচনা করা প্রয়োজন। প্রথমত, অধ্যয়নের নকশা এবং নমুনার আকারই বুঝিয়ে দেয় বিশ্লেষণ কতটা শক্তিশালী। তথ্য পূর্বেই সংগৃহীত হলেও বিশ্লেষণটি সময়োপযোগী, কারণ ফলাফলের (অর্থাৎ কোভিড–১৯ রোগের তীব্রতা) আগে এক্সপোজার বা ক্রিয়াকলাপ স্তরের মূল্যায়ন করা হয়েছিল। এই ভাবে, কেউ নিরাপদে কার্যকারণ অনুমান করতে পারেন, অতিমারি সংক্রান্ত গবেষণায় যে কোনও রোগের ঝুঁকির কারণ চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে যা চূড়ান্ত লক্ষ্য। এখানে প্রমাণের ভিত্তি ৪০,৩৪৪ জন ব্যক্তির কাছ থেকে সংগৃহীত তথ্য, যা কাজকর্মের মাত্রা পরিমাপের জন্য করা জনস্বাস্থ্য গবেষণার ক্ষেত্রে একটি বড় আকারের নমুনা।
বিবেচনাযোগ্য আরেকটি বিষয় হল স্যালিসের গবেষণায় এমন দুই-প্রশ্নের তালিকা ব্যবহার করা হয়েছে যা পূর্বে যাচাইকৃত ও ব্যবহৃত।[৬৯],[৭০]অ–পরিশ্রমী আচরণ আলাদা ভাবে (বিস্তারিত) পরিমাপ করার জন্য দীর্ঘ প্রশ্নাবলির প্রয়োজন, যার ব্যবহার সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল। তা ছাড়া এই ধরনের প্রশ্নাবলি দ্বারা সংগৃহীত ডেটা মূলত স্ব-প্রতিবেদিত, বিষয়গত পরিমাপ। স্ব-প্রতিবেদিত ব্যবস্থায় শারীরিক কাজকর্ম বেশি করে দেখানোর এবং অ–পরিশ্রমী আচরণ কম করে দেখানোর ঝোঁক থাকে।[৭১]এই সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করতে পরিধানযোগ্য ডিভাইস ব্যবহার করতে হয়, কারণ তা বস্তুনিষ্ঠ পরিমাপ দেবে। তবে সেই ব্যবস্থারও নিজস্ব কিছু চ্যালেঞ্জ আছে, যার মধ্যে একটি হল নির্দেশ ঠিকমতো মান্য করা। সামগ্রিক ভাবে, অন্যান্য পরিমাপের মতোই কাজকর্মের মাত্রা পরিমাপও নানা পক্ষপাতের শিকার হতে পারে। তবে যতক্ষণ পর্যন্ত একটি জনস্বাস্থ্য অধ্যয়ন পক্ষপাতগুলি সনাক্ত করতে পারে এবং বুঝতে পারে যে সেগুলি কী ভাবে ফলাফলগুলিকে প্রভাবিত করতে পারে, ততক্ষণ প্রাপ্ত ফলাফলগুলিকে ভবিষ্যতের অধ্যয়নের জন্য পরিকল্পনার সুযোগ হিসেবে বিবেচনা এবং ব্যবহার করা যেতে পারে।
একটি তৃতীয় দিক মেনে নিতে হবে যে গবেষকেরা সরাসরি অ–পরিশ্রমী কার্যকলাপ (বসা, টেলিভিশন দেখা, বা শুয়ে থাকা) পরিমাপের বিপরীতে শারীরিক নিষ্ক্রিয়তারও পরিমাপ করেছেন, এবং সেই সম্পর্কিত গবেষণা চালিয়েছেন। উচ্চমাত্রায় শারীরিক ভাবে নিষ্ক্রিয় ব্যক্তিদের উচ্চ অপরিশ্রমী আচরণের প্রবণতা রয়েছে। ক্রমবর্ধমান শারীরিক কার্যকলাপের তুলনায় অ–পরিশ্রমী আচরণ এবং শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা দুইয়েরই পরিবর্তন করা তুলনামূলক ভাবে সহজ। প্রমাণ দেখায় যে অ–পরিশ্রমী আচরণের পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বয়স, লিঙ্গ, পেশা বা আর্থ-সামাজিক অবস্থার পার্থক্য বিবেচনাযোগ্য নয়।[৭২],[৭৩]যেমন একজন অবসরপ্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ শুয়ে থাকা বা টেলিভিশন দেখার সময় কমাতে পারেন। বেশিরভাগ সময়ে বসে কাজ করতে হয় এমন পেশায় থাকা একজন তরুণ পেশাদার মাঝেমধ্যে দাঁড়ানো বা অফিসের মেঝেতে অল্প হাঁটাহাঁটি করার মধ্যে দিয়ে একটানা বসার ধরন ভেঙে দিতে পারে। শারীরিক কার্যকলাপ বাড়ানো, যেমন আরও খেলাধুলা করা, হাঁটার তীব্রতা বা অন্য যে কোনও শারীরিক কার্যকলাপের তীব্রতা বাড়ানোর তুলনায় অ–পরিশ্রমী আচরণ কমানো একটি সাধারণ আচরণগত হস্তক্ষেপ। কোভিড-১৯ সামলানোর ক্ষেত্রে অ–পরিশ্রমী আচরণের বা একটু কম অ–পরিশ্রমী আচরণের ভূমিকা একটি প্রত্যক্ষ এবং অধিক সঠিক আনুষ্ঠানিক প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে।
উপসংহার
ভারতীয়দের জন্য জীবনশৈলীর বিষয়গুলির উপর অধ্যয়ন এখনও সীমিত। এগুলির লক্ষ্য ছিল অতিমারি চলাকালীন কাজকর্মের স্তরগুলি বর্ণনা করা, কোভিড–১৯–এর ঝুঁকির কারণ হিসেবে কার্যকলাপের স্তরগুলিকে দেখা নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, এই গবেষণাগুলি অল্প সময়ের মধ্যে করা হয়েছিল, তিন দিন থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে,[৭৪],[৭৫] [৭৬],[৭৭],[৭৮], যে সময়টা প্রকৃত বা প্রকৃতের কাছাকাছি স্তর অনুধাবনের জন্য যথেষ্ট নয়। জীবনশৈলী থেকে তৈরি ঝুঁকির কারণ বিশ্লেষণ করা, যেমন কাজকর্মের মাত্রা, ভারতে কোভিড–১৯ ব্যবস্থাপনায় সহায়তা করতে পারে। অ–পরিশ্রমী আচরণ দীর্ঘস্থায়ী রোগগুলির জন্য আলাদা ভাবেও একটি ঝুঁকির কারণ।[৭৯],[৮০]শারীরিক সক্রিয়তার মাত্রানির্বিশেষে উঁচুমাত্রার অ–পরিশ্রমী আচরণ বিভিন্ন আণবিক স্তরের বায়োমার্কার হিসেবে ক্ষতিকর।[৮১]এই ধরনের দীর্ঘস্থায়ী অসুখ কোভিড–১৯ রোগজনিত সমস্যা আরও খারাপ করার জন্য দায়ী বলে পরিচিত।
ভারতে তীব্র দ্বিতীয় তরঙ্গ প্রথম তরঙ্গের এক বছরেরও বেশি সময় পরে এসেছিল। মানুষ তখন অতিমারি–জীবনের মধ্যে দিন কাটাচ্ছিলেন। বিশ্বের অন্যান্য অংশ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, অতিমারি–জীবন সম্ভবত জীবনশৈলীকে আরও বেশি স্থাণু করে তুলেছে। দেশে গুরুতর কোভিড–১৯ ঘটনার অধিক সংখ্যার পেছনে এর অবদান থাকতে পারে। যাই হোক, অতিমারি সংক্রান্ত সঠিক গবেষণার নকশা ছাড়া এই ধরনের পারস্পরিক সম্পর্কের মাত্রা বা তার শক্তি অনুমান করা কঠিন। অধিকন্তু, ভারতীয় জনসংখ্যার উপর সীমিত অধ্যয়নগুলি শারীরিক কাজকর্মের স্তরগুলিকে চিহ্নিত করেছে, অ–পরিশ্রমী আচরণ নয়।
স্যালিস এবং সহকর্মীদের গবেষণার ফলাফল দীর্ঘস্থায়ী সহ-অসুস্থতা বা কোমর্বিডিটির সঙ্গে মানানসই করে নেওয়া হয়েছিল। সহ-অসুস্থতাবিহীন ব্যক্তিদের মধ্যে কোভিড-১৯-এর সময় অপরিশ্রমী আচরণের প্রভাব আরও বেশি প্রকট হতে পারে। এর থেকে বোঝা যায় যে সহ-অসুস্থতা থাকুক বা না থাকুক, কম–অপরিশ্রমী আচরণও কোভিড-১৯ রোগের গুরুতর রূপ প্রতিরোধ করতে পারে। স্যালিস এবং সহকর্মীদের গবেষণার প্রামাণিকতা শক্তিশালী, এবং তা এই পরামর্শ দেয় যে কোভিড-১৯ রোগের তীব্রতা হ্রাসের জন্য, এবং বাড়ি থেকে কাজ–করা বা কোয়ারেন্টাইনে অতিমারি–জীবনের ব্যবস্থাপনার জন্য, অ–পরিশ্রমী আচরণ হ্রাস করা একটি গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য কৌশল হতে পারে। ভারতীয় জনসংখ্যার কাজকর্মের মাত্রা পর্যালোচনা করে এমন আরও অধ্যয়ন খুবই প্রয়োজনীয়। এই অধ্যয়নগুলিতে বিশেষত যাঁরা কোভিড-১৯ পজিটিভ তাঁদের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে হবে, এবং অবশ্যই কোভিড-১৯ এবং কাজকর্মের স্তরের মধ্যে সম্পর্ক খুঁজতে হবে।
একতা জৈন একজন এপিডেমিয়োলজিস্ট। তাঁর পিএইচডি ডিজার্টেশনে শারীরিক সক্রিয়তা ও অপরিশ্রমী আচরণের, এবং এনসিডি ও শহরের প্রান্ত অঞ্চলগুলিতে নগরায়ণের সঙ্গে, সম্পর্ক অনুসন্ধান করা হয়েছিল।
[২]কার্ল জে লাভি ও অন্যরা, ‘সেডেন্টারি বিহেভিয়ার, এক্সারসাইজ, অ্যান্ড কার্ডিওভাসকুলার হেল্থ,’ সারকুলেশন রিসার্চ ১২৪ (২০১৯): ৯৯–৮১৫।
[৩]আলপা ভি পটেল ও অন্যরা, ‘লিজার টাইম স্পেন্ট সিটিং ইন রিলেশন টু টোটাল মর্টালিটি ইন আ প্রসপেক্টিভ কোহর্ট অফ ইউএস অ্যাডাল্টস,” অ্যাম জে এপিডেমিঅল ১৭২, সংখ্যা ৪ (২০২০): ৪১২–৪২৯ (২০২০)।
[৪]চার্লস ই ম্যাথুস ও অন্যরা, ‘অ্যামাউন্ট অফ টাইম স্পেন্ট ইন সেডেন্টারি বিহেভিয়ারস অ্যান্ড কজ-স্পেসিফিক মর্টালিটি ইন ইউএসএ অ্যাডাল্টস,’ অ্যাম জে ক্লিন ন্যুচর ৯৫, নম্বর ২ (২০১২) ৪৩৭–৪৩৫।
[৫]মার্ক টি হ্যামিলটন ও অন্যরা, ‘ দ্য রোল অফ লো এনারজি এক্সপেন্ডিচার অ্যান্ড সিটিং অন ওবেসিটি, মেটাবলিক সিনড্রো্ টাইপ টু ডায়াবেটিস, অ্যান্ড কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ’, ডায়াবেটিস ৫৬ (২০০৭) ২৬৫৫–২৬৬৭।
[৬]ডেভিড এম উইলিয়ামস ও অন্যরা, ‘ আ রিভিউ অফ টিভি ভিউয়িং অ্যান্ড ইটস অ্যাসোসিয়েশন উইথ হেলথ আউটকামস ইন অ্যাডাল্টস,’ আমেরিকান জার্নাল অফ লাইফ স্টাইল মেডিসিন ২(২০০৮) ২৫০–২৫৯।
[৭]কারিন আই প্রপার ও অন্যরা, ‘সেডেন্টারি বিহেভিয়ারস অ্যান্ড হেলথ আউটকামস এমং অ্যাডাল্টস: আ সিস্টেম্যাটিক রিভিউ অফ প্রস্পেক্টিভ স্টাডিজ,’ অ্যাম জে প্রেভ মেড ৪০ (২০১১) ১৭৪–১৮২।
[৮]জেসন লাকম্বে ও অন্যরা, ‘দ্য ইম্প্যাক্ট অফ ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটি অ্যান্ড অ্যান অ্যাডিশনাল বিহেভিয়ারাল রিস্ক ফ্যাক্টর অন কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ, ক্যান্সার অ্যান্ড অল কজ মর্টালিটি, আ সিস্টেম্যাটিক রিভিউ’, বিএমসি পাবলিক হেলথ ১৯, নম্বর ৯০০ (২০১৯)।
[৯]ই জি উইলমট ও অন্যরা, ‘সেডেন্টারি টাইম ইন অ্যাডাল্টস অ্যান্ড দ্য অ্যাসোসিয়েশন উইথ ডায়াবেটিস, কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ অ্যান্ড ডেথ: সিস্টেম্যাটিক রিভিউ অ্যান্ড মেটা-অ্যানালাইসিস,’ ডায়াবেটোলজিয়া (২০১২): ২৮৯৫ থেকে ২৯০৫।
[১০]শিরিন পানাহি ও অ্যাঞ্জেলো ট্রেম্বলে, ‘সেডেন্টারিনেস অ্যান্ড হেলথ: ইজ সেডেন্টারি বিহেভিয়ার মোর দ্যান জাস্ট ফিজিক্যাল ইন্যাক্টিভিটি?’ ফ্রন্ট পাবলিক হেলথ ৬, নম্বর ৮ (২০১৮)।
[১২]মার্ক এস ট্রেম্বলে ও অন্যরা, ‘কানাডিয়ান সেডেন্টারি বিহেভিয়ার গাইডলাইনস ফর চিলড্রেন অ্যান্ড ইউথ,’ অ্যাপ্ল ফিজিয়ল ন্যচর মেটাব ৩৬ (২০১১) ৬৫–৭১।
[১৩]এম জেট ও অন্যরা, ‘মেটাবলিক ইকুইভ্যালেন্স (এমইটিএস) ইন এক্সারসাইজ টেস্য়া, এক্সারসাইজ প্রেসক্রিপশন অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন অফ ফাংশনাল ক্যাপাসিটি,’ ক্লিনিক্যাল কার্ডিওলজি ১৩, নম্বর ৮ (১৯৯০): ৫৫–৫৬৫।
[১৪]বারবারা আইনসওয়র্থ ও অন্যরা, ‘কম্পেন্ডিয়াম অফ ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটিজ: আ সেকেন্ড আপডেট অফ কোডস অ্যান্ড এমইটি ভ্যালুজ’, মেডিসিন অ্যান্ড সায়েন্স ইন স্পোর্টস অ্যান্ড এক্সারসাইজ ৪৩, নম্বর ৮ (২০১১) ১৫৭৫ থেকে ১৫৮১।
[১৫]বারবারা আইনসওয়র্থ ও অন্যরা, ‘কম্পেন্ডিয়াম অফ ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটিজ: আ সেকেন্ড আপডেট অফ কোডস অ্যান্ড এমইটি ভ্যালুজ’।
[১৬]বারবারা আইনসওয়র্থ ও অন্যরা, ‘কম্পেন্ডিয়াম অফ ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটিজ: আ সেকেন্ড আপডেট অফ কোডস অ্যান্ড এমইটি ভ্যালুজ’।
[১৭]মার্ক এস ট্রেম্বলে ও অন্যরা, ‘কানাডিয়ান সেডেন্টারি বিহেভিয়ার গাইডলাইনস ফর চিলড্রেন অ্যান্ড ইউথ’।
[১৮]পানাহি ও ট্রেম্বলে, ‘সেডেন্টারিনেস অ্যান্ড হেলথ: ইজ সেডেন্টারি বিহেভিয়ার মোর দ্যান জাস্ট ফিজিক্যাল ইন্যাক্টিভিটি?’
[১৯]মার্ক এস ট্রেম্বলে ও অন্যরা, ‘নিউ কানাডিয়ান ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটি গাইডলাইনস,’ অ্যাপ্লায়েড ফিজিওলজি, নিউট্রিশন অ্যান্ড মেটাবলিজম ৩৬ (২০১১): ৪৭–৫৮।
[২০]লেইলা পি ডেল ও অন্যরা, ‘কানাডিয়ান ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটি গাইডলাইনস ফর অ্যাডাল্টস: আর কানাডিয়ানস এওয়ার?,’ অ্যাপ্লায়েড ফিজিওলজি নিউট্রিশন অ্যান্ড মেটাবলিজম ৪১ (২০১৬) ১০০৮-১০১১।
[২১]ওয়র্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (হু), ‘হু গাইডলাইনস অন ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটি অ্যান্ড সেকেন্ডারি বিহেভিয়ার,’ ২৫ নভেম্বর ২০২০।
[২২]ই জৈন, ‘ইনভেস্টিগেটিং প্যাটার্নস অ্যান্ড ডিটারমিন্যান্টস অফ ফিজিকাল অ্যাক্টিভিটি অ্যান্ড সেডেন্টারি বিহেভিয়ার, দেয়ার এফেক্টস অন বায়োমারকার্স অফ রিস্ক অফ কারডিওভাসকুলার ডিজিজেস অ্যান্ড ডায়াবেটিস অ্যান্ড দেয়ার অ্যাসোসিয়েশন উইথ আরবানিসিটি ইন আ পেরি-আরবান ইন্ডিয়ান পপুলেশন,’ (পিএইচডি ডিস., স সুই হক স্কুল অফ পাবলিক হেলথ, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সিঙ্গাপুর, ২০২০)।
[২৩]মার্ক এস ট্রেম্বলে ও অন্যরা, ‘নিউ কানাডিয়ান ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটি গাইডলাইনস’।
[২৪]মার্ক এস ট্রেম্বলে ও অন্যরা, ‘নিউ কানাডিয়ান ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটি গাইডলাইনস’।
[২৫]ডিপার্টমেন্ট অফ হেল্থ, গভর্নমেন্ট অফ অস্ট্রেলিয়া, ‘অস্ট্রেলিয়া’জ ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটি অ্যান্ড সেডেন্টারি বিহেভিয়ার গাইডলাইনস,’ (২০১৪)।
[৫২]জেকব মেয়ার ও অন্যরা, ‘চেঞ্জেস ইন ফিজিকাল অ্যাক্টিভিটি অ্যান্ড সেডেন্টারি বিহেভিয়র ডিউ টু দ্য কোভিড–১৯ আউটব্রেক অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েশনস উইথ মেন্টাল হেল্থ ইন ৩,০৫২ ইউএস অ্যাডাল্টস,’ কেমব্রিজ ওপ্ন এনগেজ (২০২০)।
[৫৩]সারা এ মুর ও অন্যরা, ‘ইমপ্যাক্ট অফ দ্য কোভিড–১৯ ভাইরাস আউটব্রেক অন মুভমেন্ট অ্যান্ড প্লে বিহেভিয়রস অফ কানাডিয়ান চিলড়েন অ্যান্ড ইয়ুথ: আ ন্যাশনাল সার্ভে,’ ইন্ট জে বিহ্যাভ নচ্র ফিজ অ্যাক্ট ২০২০।
[৫৪]জেনি এ পিটারসেন ও অন্যরা, ‘ইমপ্যাক্ট অফ দ্য কোভিড–১৯ প্যানডেমিক অন ফিজিকাল অ্যাক্টিভিটি অ্যান্ড সেডেন্টারি বিহেভিয়র: আ কোয়ালিটেটিভ স্টাডি ইন আ কানাডিয়ান সিটি’, ইন্ট জে এনভায়রন রেস পাবলিক হেল্থ ১৮, নং ৯ (২০২১): ৪৪৪১।
[৭৪]দিব্যা আর নায়ার ও অন্যরা, ‘ইমপ্যাক্ট অফ কোভিড–১৯ লকডাউন অন লাইফস্টাইল অ্যান্ড সাইকোসোশ্যাল স্ট্রেস – অ্যান অনলাইন সার্ভে’, কেরালা জারনাল অফ সাইকায়াট্রি ৩৩, নং ১ (২০২০): ৫–১৫।
[৭৫]প্রশান্ত শঙ্কর ও অন্যরা, ‘এফেক্টস অফ কোভিড-১৯ লকডাউন অন টাইপ টু ডায়াবেটিস, লাইফস্টাইল অ্যান্ড সাইকোসোশ্যাল হেল্থ: আ হসপিটাল–বেসড ক্রস–সেকশনাল সার্ভে ফ্রম সাউথ ইন্ডিয়া’, ডায়াবেটিস অ্যান্ড মেটাবলিক সিনড্রোম: ক্লিন. রেস. রেভ. ১৪, নং ৬ (২০২০): ১৮১৫–১৮১৯।
[৭৬]সাক্ষী চোপড়া ও অন্যরা, ‘ইমপ্যাক্ট অফ কোভিড–১৯ অন লাইফস্টাইল–রিলেটেড বিহেভিয়রস– আ ক্রস–সেকশনাল অডিট অফ রেসপন্সেস ফ্রম নাইন হান্ড্রেড অ্যান্ড নাইন্টি–ফাইভ পার্টিসিপেন্টস ফ্রম ইন্ডিয়া’, ডায়াবেটিস অ্যান্ড মেটাবলিক সিনড্রোম: ক্লিন. রেস. রেভ. ১৪, নং ৬ (২০২০): ২০২১–২০৩০।
[৭৭]অমর্ত্য ঘোষ ও অন্যরা, ‘এফেক্টস অফ নেশনওআইড লকডাউন ডিউরিং কোভিড–১৯ এপিডেমিক অন লাইফস্টাইল অ্যান্ড আদার মেডিক্যাল ইস্যুজ অফ পেশেন্টস উইথ টাইপ টু ডায়াবেটিস ইন নর্থ ইন্ডিয়া,’ ডায়াবেটিস অ্যান্ড মেটাবলিক সিনড্রোম: ক্লিন. রেস. রেভ. ১৪, নং ৫ (২০২০): ৯১৭–৯২০।
[৭৮]মহেন্দ্র কুমার ও শচিন দ্বিবেদী, ‘ইমপ্যাক্টস অফ করোনাভাইরাস ইমপোজড লকডাউন অন ইন্ডিয়ান পপুলেশন অ্যান্ড দেয়ার হ্যাবিটস’, ইন্ট. জে. সাই. হেল্থকেয়ার রেস. ৫, নং ২ (২০২০): ৮৮–৯৭।
[৭৯]জেনেভিয়েভ এন হিলি ও অন্যরা, ‘টেলিভিশন টাইম অ্যান্ড কন্টিনিউয়াস মেটাবলিক রিস্ক ইন ফিজিকালি অ্যাক্টিভ অ্যাডাল্টস’, মেড সাই স্পোর্টস এক্সার, ৪০, নং ৪ (২০০৮): ৬৩৯–৬৪৫।
[৮০]মার্ক টি হ্যামিলটন ও অন্যরা, ‘টু লিটল এক্সারসাইজ অ্যান্ড টু মাচ সিটিং: ইনঅ্যাক্টিভিটি ফিজিওলজি অ্যান্ড দ্য নিড ফর নিউ রেকমেনডেশনস অন সেডেন্টারি বিহেভিয়ার’, কার কার্ডিওভ্যাস্ক রিস্ক রিপ ৪ (২০০৮): ২৯২–২৯৮।
[৮১]জেনেভিয়েভ এন হিলি ও অন্যরা, “টেলিভিশন টাইম অ্যান্ড কনটিনিউয়াস মেটাবলিক রিস্ক ইন ফিজিক্যালি অ্যাক্টিভ অ্যাডাল্টস’।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Dr. Ekta Jain has more than 13 years of experience in bioinformatics epidemiology data analytics databases andcomputer programming. She was a recipient of the National ...