Author : Harsh V. Pant

Originally Published The Hindu Published on Mar 03, 2022 Commentaries 1 Days ago

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ব্রিটেনকে অর্থনৈতিক ভাবে যুক্ত করতে ভারতের সঙ্গে একটি 'আধুনিক' মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বাণিজ্যের কথা মাথায় রেখেই আহ্বান জানাচ্ছে ভারত

Source Image: Roger Harris — UK Parliament/Flickr

বাণিজ্যের কথা মাথায় রেখেই আহ্বান জানাচ্ছে ভারত

এই বছরের শুরুতে জানুয়ারি মাসে ভারত-ব্রিটেন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফ টি এ) জন্য আলোচনার আনুষ্ঠানিক সূচনা হয় যখন ভারতের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গয়াল নয়াদিল্লি সফররত ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যান-মারি ট্রেভেলিয়ানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এই আলোচনার লক্ষ্য ছিল একটি ‘ন্যায্য ও ভারসাম্যযুক্ত’ এফ টি এ অর্জন করা এবং শুল্ক তালিকার ৯০% এরও বেশি পণ্যকে চুক্তির আওতায় আনা যাতে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের লক্ষ্যে পৌঁছনো যায়। এমনটা বলা হচ্ছে যে, এই চুক্তি একটি ‘আধুনিক এফ টি এ’ হয়ে উঠবে শুধু মাত্র পণ্য, পরিষেবা এবং বিনিয়োগ নিয়েই নয়, তার পাশাপাশি অন্তর্ভুক্ত হবে ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটস, ভৌগোলিক সূচক, স্থিতিশীলতা, ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং দুর্নীতি প্রতিরোধকারী বিষয়গুলিও।

কিছু সম্ভাব্য প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও, ভারত- ব্রিটেন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে ইদানীং কালে একটি নতুন গতিশীলতা লক্ষ করা গেছে যে ক্ষেত্রে উভয় পক্ষই আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে দ্রুত এগিয়ে যেতে ইচ্ছুক। গয়াল উচ্ছ্বসিত ভাবে জানান যে, ‘কোনও কিছুই এই চুক্তির পরিপন্থী নয়’ এবং তিনি আরও বলেন যে, কারওই ‘কোনও দেশের জন্য সংবেদনশীল বিষয়গুলি নিয়ে দুশ্চিন্তা করা উচিত নয়। কারণ উভয় পক্ষই সম্মত হয়েছে যে সংবেদনশীল বিষয়গুলি আমাদের অগ্রাধিকার নয়।’ ট্রেভেলিয়ান এই চুক্তিকে ‘ভারতীয় অর্থনীতির দ্রুত বৃদ্ধির সঙ্গে তাল রেখে ব্রিটেনের শিল্পগুলিকে সামনের সারিতে এগিয়ে দেওয়ার একটি সুবর্ণ সুযোগ’ হিসেবে দেখেছেন, যা ‘এই বিস্তৃত নতুন বাজারকে খাদ্য এবং পানীয় থেকে শুরু করে পরিষেবা এবং স্বয়ংক্রিয়তার ক্ষেত্রে বিবিধ শিল্পের ব্রিটিশ উৎপাদক এবং নির্মাতাদের জন্য উন্মুক্ত করে দেবে।’

নয়াদিল্লি প্রায় এক দশক পরে এই বছর সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সঙ্গে তার প্রথম এফ টি এ সম্পন্ন করার আশা করছে৷ এবং অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে আর একটি এফ টি এ-র সম্ভাবনাও রয়েছে।

এমনটা দেখা গেছে যে, উভয় দেশের তরফেই সব সংবেদনশীল বিষয়কে একযোগে সামলানোর পরিবর্তে একটি অন্তর্বর্তী চুক্তি সম্পন্ন হতে পারে যেখানে ‘সহজলভ্য লক্ষ্যমাত্রা’গুলির উপরে জোর দেওয়া হবে যা এক বছরের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ এফ টি এ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে। এই ধরনের একটি সাময়িক ফলদায়ক চুক্তি প্রায়শই একটি সর্বাঙ্গীন এফ টি এ-র সম্ভাবনার জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। তবে এফ টি এ সম্পাদনে ভারতের সুখ্যাতির অভাবের কথা মাথায় রাখলে মধ্যস্থতাকারীদের এই প্রক্রিয়ার সংশ্লিষ্ট কথোপকথনগুলি চালিয়ে যাওয়া খুব একটা খারাপ কৌশল না-ও হতে পারে। 

একটি নতুন বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি

যে হেতু বিশ্বব্যাপী অর্থনীতি কোভিড-১৯-এর পরে একটি মৌলিক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং সরবরাহ শৃঙ্খলগুলি পুনর্বিন্যস্ত হচ্ছে, তাই ভারতের পক্ষে নিজের ঘর গুছিয়ে নেওয়ার কাজে আর সময় নষ্ট করা সম্ভব নয়। নয়াদিল্লি প্রায় এক দশক পরে প্রথম এই বছর সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সঙ্গে একটি এফ টি এ সম্পন্ন করার আশা করছে৷ এবং অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে আর একটি এফ টি এ-র সম্ভাবনাও রয়েছে। যদি তেমনটা হয়, ভারত-ব্রিটেন এফ টি এ অদূর ভবিষ্যতেই সম্পন্ন হতে পারে এমন এক সময়ে দাঁড়িয়ে যখন নয়াদিল্লি কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মতো বিভিন্ন ধরনের দেশের সঙ্গে একাধিক বাণিজ্য চুক্তি সুদৃঢ়করণ এবং ১৬টি নতুন চুক্তির প্রস্তাবনা বিষয়ে সদিচ্ছা ও আগ্রহ দেখিয়েছে।

বাস্তবে ব্রিটেনের সঙ্গে এফ টি এ নিয়ে আলোচনা শুরুর ঠিক আগে, ভারত এবং দক্ষিণ কোরিয়া উভয়েই বিদ্যমান এফ টি এ-র সংস্করণের পদ্ধতি ত্বরান্বিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, যেটি আনুষ্ঠানিক ভাবে কম্প্রিহেনসিভ ইকনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট নামে পরিচিত। নরেন্দ্র মোদী সরকার বাণিজ্যে তার অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক বহাল রাখার ক্ষেত্রে এক নতুন নমনীয়তা দেখিয়েছে। কারণ তার লক্ষ হল বাণিজ্যিক চুক্তিতে ভারসাম্য বজায় রাখা এমন এক সময়ে দাঁড়িয়ে যখন ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে রিজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকনমিক পার্টনারশিপ (আর সি ই পি) এবং দ্য কম্প্রিহেনসিভ অ্যান্ড প্রোগ্রেসিভ এগ্রিমেন্ট ফর ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ-এর (সি পি টি পি পি) মতো নতুন বাণিজ্য গোষ্ঠীগুলি জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। এক দিকে যখন চিনের অর্থনৈতিক বিস্তার প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে, তখন ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শক্তিশালী অর্থনৈতিক বিষয়বস্তু ছাড়া কৌশলগত অংশীদারিত্ব অর্থহীন।

কার

ব্রেক্সিট-পরবর্তী অগ্রাধিকারগুলির মধ্যে ভারতের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করার উপর ব্রিটেন বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে যে হেতু সে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে আরও বড় ভূমিকা পালন করতে চায়৷ ব্রিটেনের ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে আগ্রহী হয়ে ওঠার কেন্দ্রে রয়েছে ভারত, যা বিশ্ব জুড়ে যথেষ্ট আগ্রহের সঞ্চার করেছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ঠান্ডা লড়াইয়ের অবসানের পর থেকে গভীরতম এবং বিস্তৃততম বৈদেশিক, নিরাপত্তা, উন্নয়ন এবং প্রতিরক্ষা পর্যালোচনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন। এবং ২০২১ সালের মার্চ মাসে প্রকাশিত ইন্টিগ্রেটেড রিভিউতে (ব্রিটেনের জাতীয় নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক নীতি সংক্রান্ত একটি সামগ্রিক প্রতিবেদন) স্পষ্ট ভাবে বলা হয় যে, ‘আগামী দশকে ব্রিটেন ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে অংশীদারিত্বকে আরও গভীর করে তুলবে এবং অন্যান্য যে কোনও ইউরোপীয় দেশের তুলনায় সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে এক বৃহত্তর এবং স্থায়ী উপস্থিতি তুলে ধরবে।’ এক দিকে যখন ব্রিটেন এই বছর কানাডা, মেক্সিকো এবং উপসাগরীয় অঞ্চলের সঙ্গে বাণিজ্যিক আলাপ আলোচনার সূচনার মাধ্যমে ‘গ্লোবাল ব্রিটেন’ তকমাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে সচেষ্ট, তখন অন্য দিকে ভারতের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি এবং সি পি টি পি পি-তে সদস্যপদ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ব্রিটেনকে অর্থনৈতিক ভাবে জায়গা করে দিতে গুরুত্বপূর্ণ। 

একাধিক সক্রিয় কারণ

ব্রিটেনের পক্ষে আরও শক্তিশালী ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল অবলম্বন করার ক্ষেত্রে একগুচ্ছ কারণ একত্র হয়ে একটি গতিময়তার রূপ দিয়েছে: ব্রেক্সিটের ব্যবসায়িক তাৎপর্য; চিনের প্রতি তার পরিবর্তনশীল দৃষ্টিভঙ্গি — চিনের অন্যতম প্রধান প্রবক্তা থেকে সম্ভবত ইউরোপের সবচেয়ে কঠোর সমালোচক হয়ে ওঠা; এবং ব্রিটেনের নিকটতম বন্ধু দেশ ও নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতিদাতা আমেরিকার ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করার ঘটনা ইত্যাদি। এই অঞ্চলে নিজের মিত্র দেশগুলির মতোই ব্রিটেন বিশ্বব্যাপী স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধির জন্য একটি মুক্ত এবং অবাধ উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের গুরুত্বের কথা বুঝতে পেরেছে এবং এই লক্ষ্যে কৌশলগত পুঁজি বিনিয়োগের জন্য তাদের মনোভাবের কথা স্পষ্ট করেছে। আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিকাঠামোর মধ্যে প্রবেশের মাধ্যমে লন্ডন তার প্রচেষ্টাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে চাইছে। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ঘোষিত অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় নিরাপত্তা চুক্তি (অউকাস) — যা অস্ট্রেলিয়াকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের সহায়তায় পারমাণবিক শক্তিচালিত ডুবোজাহাজ অর্জনে সাহায্য করবে — এই অঞ্চলে লন্ডনের স্বরকে জোরালো করে তুলেছে।

এক দিকে যখন চিনের অর্থনৈতিক বিস্তার প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে, তখন ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শক্তিশালী অর্থনৈতিক বিষয়বস্তু ছাড়া কৌশলগত অংশীদারিত্ব অর্থহীন।

বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ ব্রিটেনের এই ঝোঁকের একটি অনন্য মাত্রা হতে চলেছে। ব্রেক্সিটের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন-বহির্ভূত বাজারে ব্যাপক প্রবেশাধিকারের প্রয়োজনীয়তা এবং চিনের সঙ্গে ব্রিটেনের পরিবর্তনশীল সম্পর্কের জন্য বাণিজ্য অংশীদারদের বৈচিত্র্যকরণ প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। লক্ষ্যমাত্রায় এই পরিবর্তনের নেপথ্যে বিশ্ব অর্থনৈতিক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের একটি প্রধান শক্তি হয়ে ওঠার ঘটনাটিও অনস্বীকার্য। ব্রিটেন তার ঐতিহাসিক সম্পর্ক, উন্নয়নশীল কাজ এবং জলবায়ু পরিবর্তন (বিশেষত সমুদ্রে জলস্তরের বৃদ্ধির ফলে প্রভাবিত সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে স্বল্প উচ্চতায় অবস্থিত দেশগুলির ক্ষেত্রে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ) নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে তার বিশ্বাসযোগ্যতাকে কাজে লাগাতে চাইছে যাতে সেই অঞ্চলটিতে নিজেকে একটি মুখ্য শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার কাজটি সম্পন্ন হয়। যদিও এই অঞ্চলে ব্রিটেনের একটি স্থায়ী ক্ষমতা হয়ে ওঠার ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে আগ্রহী হওয়ার মাধ্যমে ব্রিটেন অবশেষে তার ব্রেক্সিট পরবর্তী বৈদেশিক নীতিকে একটি দিশা দেখাতে পেরেছে এবং তার উদ্দেশ্যও স্থির করতে সক্ষম হয়েছে। এবং এই অগ্রাধিকার দেওয়ার ঘটনাই নয়াদিল্লি এবং লন্ডনের মধ্যে তাদের এফ টি এ দ্রুত চূড়ান্ত করার জন্য এক নতুন সুযোগের জানালা খুলে দিয়েছে। এটি একটি অনন্য ‘এখন অথবা কখনই নয়’ মুহূর্ত এবং উভয় পক্ষই প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও এই সুযোগকে সম্পূর্ণ ভাবে কাজে লাগাতে ইচ্ছুক।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.