Author : Premesha Saha

Originally Published First Post Published on Mar 07, 2022 Commentaries 1 Days ago

৩৭ কোটি ৫০ লক্ষ মার্কিন ডলারের ব্রহ্মস চুক্তি ভারত-চিন, ভারত-আসিয়ান সহ ফিলিপিনস-চিন সম্পর্কেও প্রভাব ফেলবে।

ভারতের ব্রহ্মস চুক্তি শুধু ফিলিপিনস কেন্দ্রিকই নয়, তা সমগ্র অঞ্চলটির জন্যও একটি জোরালো বার্তা

Source Image: Public.Resource.Org — Flickr/CC BY 2.0

ভারতের ব্রহ্মস চুক্তি শুধু ফিলিপিনস কেন্দ্রিকই নয়, তা সমগ্র অঞ্চলটির জন্যও একটি জোরালো বার্তা

ফিলিপিনসকে ব্রহ্মস সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল রফতানির জন্য ভারত ৩৭ কোটি ৫০ লক্ষ মার্কিন ডলারের এক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে যা তার প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রফতানি কর্মসূচির জন্য যথেষ্ট উদ্দীপনার কারণ। ফিলিপিনসের ডিফেন্স সেক্রেটারি ডেলফিন লোরেনজানা জানিয়েছেন যে, তাঁরা ব্রহ্মস এরোস্পেস প্রাইভেট লিমিটেডকে লিখিত ভাবে ‘৩৭ কোটি ৫০ লক্ষ মার্কিন ডলার মূল্যের সুপারসনিক মিসাইল সিস্টেমের তিনটি ব্যাটারি কেনার প্রস্তাব মঞ্জুর করার’ অনুরোধ জানিয়েছেন। প্রত্যেকটি ব্যাটারিতে দু’টি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপক, একটি রেডার এবং একটি কম্যান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার থাকে এবং এটি ১০ সেকেন্ডের মধ্যে দু’টি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করতে সক্ষম। এটিই ভারতের সর্বপ্রথম উল্লেখযোগ্য সমরাস্ত্র রফতানি। এই সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রটি ভারত-রাশিয়া যৌথ উদ্যোগের ফসল যেটিকে ডুবোজাহাজ, জাহাজ, বিমান এবং ভূখণ্ডে অবস্থিত কোনও মঞ্চ থেকে নিক্ষেপ করা যেতে পারে।

স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট-এর (এস আই পি আর আই) ২০২১ সালের মার্চ মাসের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারত বিশ্বের প্রথম পাঁচটি অস্ত্র আমদানিকারী দেশের অন্যতম। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে ভারত সরকার অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধি করে অস্ত্র আমদানির পরিমাণ কমাতে চাইছে। নয়াদিল্লি তার প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম নির্মাণ এবং উৎপাদনকে শক্তিশালী করে তুলতে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রফতানি বাড়াতে চাইছে। বর্তমানে ভারত বিশ্বের সর্বোচ্চ অস্ত্র রফতানিকারীদের তালিকায় ২৪তম স্থানে রয়েছে। কিন্তু ভারতের লক্ষ্য হল ‘প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক ক্ষেত্রটির প্রসার ঘটানো এবং ২০২৫ সালের মধ্যে ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার আয় করার মতো এক বৃহৎ অস্ত্র রফতানিকারী দেশে পরিণত হওয়া।’ প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহকে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা এবং মিত্র দেশগুলিতে সফরকালীন ‘বিভিন্ন প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম বিক্রির প্রস্তাব’ সম্পর্কে কথা বলতে শোনা গেছে। এই ধরনের রফতানির কাজকে সহজতর করে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবর্তনও করা হচ্ছে। যেমন — বিদেশে ভারতীয় দূতাবাসগুলিকে স্বদেশি অস্ত্রের প্রচারের জন্য আর্থিক অনুমোদন দেওয়া

প্রত্যেকটি ব্যাটারিতে দু’টি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপক, একটি রেডার এবং একটি কম্যান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার থাকে এবং এটি ১০ সেকেন্ডের মধ্যে দু’টি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করতে সক্ষম। এটিই ভারতের সর্বপ্রথম উল্লেখযোগ্য সমরাস্ত্র রফতানি।

ফিলিপিনসের সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল ক্রয়ের নেপথ্যে প্রধান উদ্দেশ্য হল তার উপকূল অঞ্চলের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতি করা। এবং এটি ফিলিপিন মেরিনস-এর কোস্টাল ডিফেন্স রেজিমেন্ট দ্বারা পরিচালিত হবে। অপারেটরের জন্য প্রশিক্ষণ এবং লজিস্টিকস সহায়তার দিকগুলিও এই চুক্তির অন্তর্ভুক্ত। ফিলিপিনো সরকারের এই পদক্ষেপের নেপথ্যে প্রধান যুক্তিটি হল বিতর্কিত দক্ষিণ চিন সাগর বা পশ্চিম ফিলিপিন সমুদ্রে (ফিলিপিনসের মতে) দ্বীপদেশটির দাবিগুলিকে রক্ষা করা। এই অস্ত্র কেনার পরিকল্পনা সেই ২০১৭ সালে শুরু হয়েছিল এবং অবশেষে ২০২০ সালে ফিলিপিনসের সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকীকরণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রেসিডেন্টের অফিস থেকে এটিকে মঞ্জুর করা হয়। বিদ্যমান অতিমারির ফলে ফিলিপিনসের অর্থনীতি প্রবল ধাক্কা খেয়েছে। এর ফলে প্রক্রিয়াটি স্তব্ধ হয়ে যায় এবং ফিলিপিনো সরকারের তরফে ক্রয়ের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে দেরি হয়ে যায়।

১৯৯০-এর দশকের শুরু থেকেই ফিলিপিনস দক্ষিণ চিন সমুদ্রে চিনের সঙ্গে অধিকারের সীমা সংক্রান্ত একটি বিতর্কে জড়িত রয়েছে। ১৯৯২ সালে চিনের মিসচিফ রিফ দখল করা থেকে শুরু করে ২০১২ সালে স্কারবরো শোল কেন্দ্রিক সংঘর্ষ ছাড়াও সাম্প্রতিক বছরগুলিতে চিনা নৌবাহিনী ও উপকূলরক্ষীদের সঙ্গে ফিলিপিনো নৌবাহিনীর ঘনঘন মতানৈক্য ও খণ্ডযুদ্ধ আবহাওয়াকে উত্তপ্ত করে তুলেছে। চিনের সামুদ্রিক সেনা ক্রমাগত সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দাবিদার দেশগুলিকে — কখনও কখনও তাদের এক্সক্লুসিভ ইকনমিক জোন (ই ই জেড) বা একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভিতরে প্রবেশ করে — হয়রান করছে। এর ফলে ফিলিপিনস আইনি অস্ত্র ব্যবহারের পথে হাঁটে। ২০১৬ সালে পার্মানেন্ট কোর্ট অফ আর্বিট্রেশন চিনের নাইন-ড্যাশড লাইন সংক্রান্ত দাবিগুলি খারিজ করে দিলেও তা চিনকে এই বিতর্কিত দ্বীপগুলিতে কৃত্রিম দ্বীপ পুনরুদ্ধার কার্যকলাপ চালানো এবং একপেশে ভাবে নিজের সামুদ্রিক দাবিদাওয়া জোর করে চাপিয়ে দেওয়া থেকে নিরস্ত করতে পারেনি। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর অধীনে চিনের জাতীয়তাবাদী উচ্ছ্বাসের জেরে সামরিক কৌশল ব্যবহার করে নিজের দাবি অন্যের উপর চাপিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে এবং এর ফলে পূর্ব চিন সাগরে জাপান, দক্ষিণ চিন সাগরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এল এ সি) বরাবর ভারত এবং অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গেও (অর্থনৈতিক চাপ) চিনের চাপানউতোর বৃদ্ধি পেয়েছে। সংশ্লিষ্ট দেশগুলি শক্তিশালী চিন-বিরোধী নীতি গ্রহণে আর পিছপা হচ্ছে না এবং আগ্রাসী ও সম্প্রসারণবাদী বেজিংয়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ‘সমমনস্ক অংশীদারিত্বের’ পথে হেঁটে অন্যান্য দেশের সঙ্গে জোট বাঁধছে। আলোচ্য পদক্ষেপটি ছাড়া কোয়াড, অউকাস ইত্যাদি সব ক’টি জোটই এই ঘটনা পরম্পরার নির্দেশক।

চিন অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে তার প্রতিরক্ষা এবং সামরিক ক্ষমতার বৃদ্ধি ঘটিয়েছে যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দাবিদার দেশগুলিকে তীব্র বিপদের মুখে ফেলেছে। এর ফলে দেশগুলি ভারতের মতো সমমনস্ক দেশের কাছে সাহায্যপ্রার্থী হতে এবং বিশেষ করে প্রতিরক্ষার নিরিখে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সশক্তিকরণে বাধ্য হয়েছে। এমনকি ফিলিপিনস তার প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারীদের মধ্যে বৈচিত্র আনতে চাইছে এবং সেই কারণেই তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ কোরিয়ার পাশাপাশি অন্যান্য অস্ত্র রফতানিকারী দেশের সন্ধান চালাচ্ছে।

প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর অধীনে চিনের জাতীয়তাবাদী উচ্ছ্বাসের ফলে সামরিক কৌশল ব্যবহার করে নিজের দাবি অন্যের উপর চাপিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে এবং এর ফলে পূর্ব চিন সাগরে জাপান, দক্ষিণ চিন সাগরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এল এ সি) বরাবর ভারত এবং অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গেও (অর্থনৈতিক চাপ) চিনের চাপানউতোর বৃদ্ধি পেয়েছে।

ভারত থেকে ম্যানিলাতে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রফতানির চুক্তিটি ২০২১ সালের প্রথম দিকেই স্বাক্ষরিত হয়েছিল। ম্যানিলাকে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত ঋণ (লাইন অফ ক্রেডিট) খাতে ভারতের ১০ কোটি মার্কিন ডলার সাহায্যের ঘোষণার পর থেকে ভারত এবং ফিলিপিনসের প্রতিরক্ষা সম্পর্কটিরও উন্নতি ঘটেছে। ২০১৯ সাল পর্যন্ত ফিলিপিনস নৌবাহিনীর সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ড পদে কর্মরত রিয়ার অ্যাডমিরাল (অবসরপ্রাপ্ত) রোমেল অং বলেছেন, ‘ক্ষেপণাস্ত্র ক্রয়ের একটি কারণ চিনের মোকাবিলা করা, যারা দক্ষিণ চিন সাগরে ফিলিপিনসের ভূখণ্ড এবং মাছ ধরার অঞ্চলের দাবির প্রতিদ্বন্দ্বী। দক্ষিণ চিন সাগরের দিকে উন্মুক্ত পশ্চিম উপকূলকে রক্ষা করতে ফিলিপিন দ্বীপপুঞ্জের উত্তর থেকে দক্ষিণে জাহাজ ধ্বংসকারী ক্ষেপণাস্ত্রগুলিকে বণ্টন করা হবে।’ সর্বোপরি সামরিক ভাবে অধিক উন্নত এবং প্রগতিশীল চিনা নৌবাহিনীর মোকাবিলা করার সময়ে এটি ফিলিপিনসের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে। ফিলিপিনসের পলিটেকনিক ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক রিচার্ড হেইডারিয়ান বলেন, ‘তুলনামূলক বিচার করে অত্যাধুনিক এবং অপ্রতিসম ক্ষমতার অধিকারী হওয়ার মাধ্যমে ছোট দেশগুলি এই সামগ্রিক ন্যূনতম প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম।’

এই অস্ত্র বিক্রি ভারতকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলির কাছে একটি নির্ভরযোগ্য প্রতিরক্ষা অংশীদার হিসেবে তার জায়গা সুনিশ্চিত করতে সাহায্য করেছে। তা ভারতকে ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশে ব্রহ্মস ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র রফতানি করার জন্য প্রয়োজনীয় পথ খুলে দেবে যারা ইতিমধ্যেই একাধিক বার এই ক্ষেপণাস্ত্র কেনার জন্য আবেদন জানিয়েছে। নিজেদের চিরাচরিত ‘লুক ইস্ট’ নীতিকে গতিশীল করে তুলতে ভারত সরকার ২০১৪ সালে এটির নতুন নামকরণ করে ‘অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি’। তবে অনেকেই ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, ভারতকে তার সংশ্লিষ্ট প্রতিবেশে শক্তিশালী এবং অর্থবহ উপস্থিতির প্রমাণ দিতে এখনও দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে হবে।

২০২০ সালের জুন মাসে গলওয়ান উপত্যকায় সংঘর্ষের পর থেকে ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলির পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া এবং বর্তমানে ফিলিপিনসের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করেছে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চিনের নৌ-আক্রমণ এবং ভারতের সঙ্গে বিতর্কিত ভূ-সীমান্তে চিনের আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়া হিসেবে ভারত স্বপ্রণোদিত প্রতিরক্ষা কূটনীতির পথে হেঁটেছে। এই চুক্তি নিঃসন্দেহে ভারত-চিন, ভারত-আসিয়ান তথা ফিলিপিনস-চিন সম্পর্কের উপর প্রভাব ফেলবে। এর ফলে একটি শক্তিশালী প্রতিরক্ষা সংযোগসূত্র এবং আসিয়ান দেশগুলির সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার সঙ্গে তার ইন্দো-প্যাসিফিক দৃষ্টিভঙ্গিতে ‘আসিয়ান কেন্দ্রিকতা’র নিরবচ্ছিন্ন উচ্চারণ জোর পাবে।

আসিয়ানের অন্তর্ভুক্ত ফিলিপিনসের মতো দেশগুলি চিনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে শুরু করেছে। এই প্রেক্ষিতে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেনের মতো প্রধান শক্তিগুলিকেও এগিয়ে আসতে হবে এবং আরও এক বার প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার প্রেক্ষিতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সমমনস্ক দেশগুলির কাছে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতার প্রমাণ দিতে হবে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.