Author : Samir Saran

Originally Published Hindustan Times Published on Nov 17, 2022 Commentaries 15 Days ago

জি২০-র রাশ নিজেদের হাতে তুলে নেওয়ার পর অন্তর্ভুক্তিকরণ এবং আন্তঃসহযোগিতাই ভারতের মূল লক্ষ্য হয়ে উঠেছে, যেমনটা তার নতুন লোগোর নেপথ্যে থাকা প্রতীকে সুস্পষ্ট। ২০২৩ সালটি আন্তর্জাতিক নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে ভারতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর হয়ে উঠতে চলেছে।

বিশ্ব মঞ্চে দায়িত্ব নিল ভারত
বিশ্ব মঞ্চে দায়িত্ব নিল ভারত

৮ নভেম্বর ২০২২, এক ঐতিহাসিক মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভারতের গ্রুপ অফ ২০ (জি২০) সভাপতিত্ব সংক্রান্ত লোগো, মূল ভাবনা এবং ওয়েবসাইট উন্মোচন করেছেন। ভারত এবং বিশ্বের জন্য তিনি যে ভাবনা ও উদ্দেশ্যের রূপরেখা তুলে ধরেছেন, তা ইতিমধ্যেই সভাপতিত্বের প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক প্রত্যাশার জন্ম দিয়েছে এবং একই সঙ্গে তা ভারতকে বৈশ্বিক কর্মসূচির এক রূপকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে। ভারতের জি২০ সভাপতিত্ব আন্তর্জাতিক মঞ্চে নেতৃত্বের ভূমিকা গ্রহণে প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্যের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ যা দেশকে পরিবর্তন, প্রকৌশলী স্থিতিশীলতা, উদীয়মান অর্থনীতি এবং বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সুদক্ষ করে তুলবে।

প্রধানমন্ত্রী মোদী জি২০-তে ভারতের আসন্ন কর্মসূচিগুলিকে বসুধৈব কুটুম্বকমের (বিশ্ব এক পরিবার) নীতিমালায় সূচিত করেছেন। এ কথা স্পষ্ট যে, জনহিতের উদ্দেশ্যে অন্তর্ভুক্তি এবং আন্তঃসহযোগিতার গুণাবলি প্রাধান্য পাবে। মাতা ভূম্যা পুত্রোহম পৃথিবী অর্থাৎ পৃথিবী আমাদের মা এবং আমরা তার সন্তান… এই আহ্বানের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে ভারতীয় জলবায়ু উদ্যোগগুলি সম্প্রতি গৃহীত হয়েছে। একই ভাবে অন্যান্য উদ্যোগের নাম, যেমন ওয়ান সান, ওয়ান ওয়ার্ল্ড, ওয়ান গ্রিড কর্মসূচি, যা ভারত জি২০-র অন্যান্য অংশীদারের সঙ্গে একত্রে গড়ে তুলবে, তা একতা এবং একটি অভিন্ন সাধারণ ভবিষ্যতেরই চেতনা প্রতিফলিত করে। জি২০ লোগো উন্মোচন করার সময় প্রধানমন্ত্রী ব্যাখ্যা করেন যে, পদ্মটি অভিন্ন সাধারণ জ্ঞান, সমৃদ্ধি এবং আশার প্রতীক। এই ধারণাগুলি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্য গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ভারতের ঐতিহ্য থেকে উদ্ভূত।

একই ভাবে অন্যান্য উদ্যোগের নাম, যেমন ওয়ান সান, ওয়ান ওয়ার্ল্ড, ওয়ান গ্রিড কর্মসূচি, যা ভারত জি২০-র অন্যান্য অংশীদারের সঙ্গে একত্রে গড়ে তুলবে, তা একতা এবং একটি অভিন্ন সাধারণ ভবিষ্যতেরই চেতনা প্রতিফলিত করে।

লোগোয় ভারতীয় পতাকার রংগুলি একটি নির্দিষ্ট প্রতীকী তাত্পর্য তুলে ধরে। গেরুয়া প্রথাগত ভাবে শক্তি এবং সাহসের সঙ্গে সংযুক্ত এবং এই গুণগুলি জলবায়ু কর্মসূচির উপর ভারতের বাস্তববাদী, সাহসী অবস্থানকেই তুলে ধরে। প্রধানমন্ত্রী পশ্চিমী শক্তিগুলির ফাঁপা এবং অনুপযুক্ত জলবায়ু প্রতিশ্রুতি ভেঙে ফেলার পথে হেঁটেছেন। তাঁর সদ্য চালু করা কর্মসূচি লাইফ-এর (লাইফস্টাইল ফর এনভায়রনমেন্ট) লক্ষ্য হল স্থিতিশীল এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারার প্রচার করা। নীতিনির্ধারণের ঊর্ধ্বে উঠে এবং প্রত্যেক ব্যক্তিকে জলবায়ু প্রতিক্রিয়ায় অবদান রাখতে উত্সাহিত করার মাধ্যমে এটি জলবায়ু সঙ্কট মোকাবিলা করার প্রচেষ্টাকে আরও গণতান্ত্রিক করে তুলবে। প্রধানমন্ত্রী মোদী সম্ভবত প্রথম রাজনৈতিক নেতা, যিনি উদ্যোগী হয়ে এবং সততার সঙ্গে এ কথা বলেছেন যে, জলবায়ু কর্মসূচির জন্য জীবনধারা পরিবর্তন এবং ত্যাগের প্রয়োজন। এখনও পর্যন্ত বিশ্ব জুড়ে সরকার-প্রধানে্রা, বিশেষ করে পশ্চিমীরা, জীবনধারা এবং চাহিদার ক্ষেত্রে কোনও আপস না করেই জলবায়ু সঙ্কটের বিরুদ্ধে লড়াই করার মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছিলেন। শুধু মাত্র মানসিকতার এই সাহসী পরিবর্তনের জন্য ভারতের জি২০ সভাপতিত্ব আশার সঞ্চার করে।

ভারতীয় তিরঙ্গার সবুজ রংটি ভূমির উর্বরতা এবং জীববৈচিত্র্যের সমৃদ্ধির প্রতীক। এর পাশাপাশি এটি ভারতের দূষণমুক্ত প্রতিশ্রুতিগুলির প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির সচেতনতাকেই প্রতিফলিত করেছে। ভারতের বার্ষিক মাথাপিছু কার্বন ফুটপ্রিন্ট ২ টনের নিচে, যা চিনের প্রায় এক-চতুর্থাংশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় এক-অষ্টমাংশ। তবুও দেশটি ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশনসের ক্ষেত্রে উচ্চাকাংক্ষী প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যার অধীনে ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্টের (জি ডি পি) নিঃসরণ তীব্রতার মাত্রা ২০০৫ সালের তুলনায় ৪৫ শতাংশ কমিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে এবং একই বছরে্র মধ্যে অজীবাশ্ম-জ্বালানিভিত্তিক শক্তি উৎস থেকে প্রায় ৫০ শতাংশ বৈদ্যুতিক শক্তি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে।

জলবায়ু প্রতিক্রিয়া সংক্রান্ত বৈশ্বিক আলোচনার অধিকাংশ প্রশমন প্রক্রিয়ার উপর জোর দিলেও ভারতের জি২০ সভাপতিত্ব এটিকে অভিযোজন কর্মসূচিতে রূপান্তরিত করার উপর জোর দেবে। এটি বিশেষত উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।  কারণ তারা ইতিমধ্যে শিল্পগত ভাবে উন্নত দেশগুলি দ্বারা নিঃসরণের সঙ্গে অভিযোজিত হতে যুঝছে। ভারতকে অবশ্যই উন্নত দেশগুলি দ্বারা স্বল্প উন্নত দেশগুলির উপর নিজেদের খামখেয়ালিপনার দায়ভার চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতাকে প্রতিহত করতে হবে। জলবায়ু ন্যায়বিচার এবং সমতাকে আদর্শ করে তুলতে হবে।

তিরঙ্গার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত নীল চক্রটিকে একটি নীল পৃথিবী হিসাবে কল্পনা করা যেতে পারে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম যুক্তি দিয়েছে যে, জি২০-কে অবশ্যই একটি স্থিতিশীল নীল অর্থনীতির (ব্লু ইকোনমি) প্রচার চালাতে হবে। মহাসাগর, উপকূল এবং তাদের নির্ভরযোগ্য সম্পদগুলি অর্থনৈতিক বৃদ্ধির চালিকাশক্তি হিসাবে কাজ করতে পারে। জি২০ দেশগুলি, যা বিশ্বব্যাপী উপকূলরেখার ৪৫ শতাংশ এবং তার একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলের ২১ শতাংশ জুড়ে রয়েছে, সেগুলি নীল উন্নয়নকে (ব্লু ডেভেলপমেন্ট) উত্সাহিত করার জন্য যথেষ্ট ভাল জায়গায় রয়েছে। ভারত জি২০-র সভাপতিত্ব করার কারণে নীল অর্থনীতি সম্পর্কে তার দূরদর্শিতা অনুকরণীয় হয়ে উঠতে পারে। ভারত নীল অর্থনীতির উপর ভিত্তি করে তার জাতীয় নীতি চূড়ান্ত করছে: সামুদ্রিক ক্ষেত্রগুলিকে সর্বোচ্চ সম্ভাবনার পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া এবং স্থিতিশীল ভাবে উপকূলীয় অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য একটি সামগ্রিক পরিকল্পনার নির্মাণ। এক বার প্রস্তুত হলে নীতিটি অন্য জি২০ দেশগুলির জন্য একটি মডেল হিসাবে কাজ করতে পারে।

ভারতকে অবশ্যই উন্নত দেশগুলি দ্বারা স্বল্প উন্নত দেশগুলির উপর নিজেদের খামখেয়ালিপনার দায়ভার চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতাকে প্রতিহত করতে হবে।

অবশেষে ভারতের জি২০ সভাপতিত্ব এমন এক মুহূর্তে এসে উপস্থিত, যখন অতিমারির কারণে বৃদ্ধির একাধিক প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও দেশটি ৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থনীতি হয়ে ওঠার পথে এগিয়ে চলেছে। অভূতপূর্ব মূল্য ও উদ্যোগগ্রহণকারী সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেওয়ার উদ্দেশ্যে প্রযুক্তিকে নাগরিকদের স্বার্থে ও তাদের জন্য কাজে লাগানো হচ্ছে। ফলস্বরূপ উত্থিত মডেলটি অনন্য ভাবে ভারতীয়। দেশটি কেবল মাত্র বিশ্বের প্রথম এবং বৃহত্তম আক্ষরিক ডিজিটাল গণতন্ত্র হিসাবেই আবির্ভূত হয়নি, একই সঙ্গে এটি ডিজিটাল জনপণ্যগুলির বিবর্তনেও অনুঘটকের কাজ করেছে এবং নাগরিকরা সেগুলি ব্যবহার করে মূল্য উত্পাদন করছে।

ভারতে ডিজিটাল পেমেন্ট ২০২৬ সালের মধ্যে ১০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের সীমা ছুঁতে পারে এবং শুধু মাত্র দেশের ডিজিটাল অর্থনীতি ২০৩০ সালের মধ্যে ৮০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সীমা অতিক্রম করবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল অর্থনীতিকে সশক্ত করাই জি২০-র মূল উদ্দেশ্যগুলির একটি। ভারতের সভাপতিত্বে গোষ্ঠীটি আন্তঃক্ষেত্র অভিজ্ঞতা, প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং বৃহৎ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য উদ্ভাবনগুলির সম্পদকে কাজে লাগাবে।

রাজনৈতিক সদিচ্ছা দ্বারা চালিত, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি দ্বারা অনুপ্রাণিত এবং একটি বিস্ময়কর আশাবাদ দ্বারা উজ্জীবিত ২০২৩ সাল ভারতের জন্য একটি ঘটনাবহুল বছর হতে চলেছে। প্রভাবশালী দেশগুলির সম্প্রদায়ের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য এর চেয়ে অধিকতর ফলপ্রসূ সময় আর হতেই পারে না।


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়েছিল হিন্দুস্থান টাইমস-এ।

মতামত লেখকের নিজস্ব।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.