Author : Deepak Sinha

Originally Published The Pioneer Published on Apr 04, 2022 Commentaries 7 Days ago

আমরা এই বাস্তবতার মুখোমুখি হতে রাজি নই যে রাশিয়া চিনাদের অনুগত একটি রাষ্ট্র ছাড়া আর কিছুই নয়।

ভারতের বড় স্বপ্ন বা নেহাত বিভ্রম

Source Image: Prakash Singh — AFP via Getty

ভারতের বড় স্বপ্ন বা নেহাত বিভ্রম

এখন আমরা ইউক্রেনকে বশীভূত করার নৃশংস রুশ প্রয়াস প্রত্যক্ষ করছি, আর সেই সঙ্গে বিশ্বকে অন্তিম পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি দেওয়ার মতো ঘটনাও। স্পষ্টতই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তার ইউরোপীয় মিত্ররা, রুশ ফেডারেশন ও ইউক্রেনের নেতারা খারাপ ভাবে ভুল অঙ্ক কষেছে, এবং গোটা পৃথিবীকে মারাত্মক বিপদে ফেলেছে। সম্ভবত পুতিনের আকাশকুসুম কল্পনা ছিল দ্রুত শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে ইউক্রেনকে রাশিয়ার অংশ করার। তাঁর জেনারেলদের ইউক্রেনীয় প্রতিরোধ সম্পর্কে সম্পূর্ণ ভুল ধারণা থাকায় বিষয়টা স্পষ্টতই পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোয়নি। তিনি অবশ্য এখনও সফল হতে পারেন, কিন্তু যে কোনও নতুন শাসনব্যবস্থা সম্ভবত ততক্ষণ টিকে থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত তার পেছনে রাশিয়ার সামরিক সমর্থন থাকবে। বিষয়টি অনিশ্চিত বলে মনে হচ্ছে, কারণ রুশ সামরিক বাহিনীর অনেকদিন ধরে বশ না–মানা জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা সম্পর্কে ব্যাপক সন্দেহ আছে। তাই, পুতিনকে ডনবাস অঞ্চলের পর্যাপ্ত এলাকা দখল করেই সন্তুষ্ট থাকতে হতে পারে, যা রাশিয়াকে ক্রিমিয়ার সঙ্গে সংযোগকারী একটি স্থল করিডর দেবে।

তবে তা ইউক্রেনীয়দের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না, এবং পুতিনের বিরুদ্ধে একটি গুরুতর বিদ্রোহ হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। তেমনটা ঘটলে পুতিনের বাধ্যতামূলক যোগদানের মাধ্যমে সংগৃহীত সেনাদের পক্ষে তা নিয়ন্ত্রণ করা ক্রমশই আরও বেশি কঠিন হবে। এই অঞ্চলে অর্থনৈতিক ব্যয় ও অ–স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পাওয়ায়, এটা অনুমেয় যে সম্ভবত পুতিনের পক্ষে পুরো বিষয়টাই খারাপ ভাবে শেষ হবে, যদি ২০২৪ সালের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পর্যন্ত তিনি টিকে থাকতে পারেন।

ন্যাটোকে পূর্ব দিকে ঠেলে দেওয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমীদের ভূ-রাজনৈতিক কৌশল পুতিনকে জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে এই ধরনের কাজ করার অজুহাত দিয়েছে বলে যুক্তি দিয়ে কোনও লাভ নেই। তাঁর কাজ পূর্ব-পরিকল্পিত বলে মনে হচ্ছে, কারণ তাঁর বিনা প্ররোচনায় আক্রমণের আগের দিনগুলিতে কূটনীতি তাঁকে লাভ দিচ্ছিল এবং রাশিয়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে যথেষ্ট আকর্ষিত করেছিল। এই ভাবে কূটনৈতিক যুদ্ধে জয়ী হওয়া সত্ত্বেও পুতিন গায়ের জোরে ইউক্রেন দখল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, এবং এক বেপরোয়া আক্রমণ শুরু করেছিলেন। তার ফলে এখন মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে। এই ঘটনা সত্যিই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ক্ষুব্ধ করেছে, বিশেষ করে যে হেতু আমরা এই সবে কোভিড অতিমারি এবং তার ফলে সৃষ্ট বিশ্বব্যাপী বিপর্যয় আয়ত্তে আনতে পেরেছি।

এই অঞ্চলে অর্থনৈতিক ব্যয় ও অ–স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পাওয়ায়, এটা অনুমেয় যে সম্ভবত পুতিনের পক্ষে পুরো বিষয়টাই খারাপ ভাবে শেষ হবে, যদি ২০২৪ সালের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পর্যন্ত তিনি টিকে থাকতে পারেন।

প্রকৃতপক্ষে এখনকার বিশ্বায়িত পৃথিবীতে তাঁদের কর্মের বিশ্বব্যাপী প্রভাবের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় নেতারা কোনও কারণ দেখিয়েই তাঁদের অহঙ্কার ও ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ করার জন্য শক্তিপ্রয়োগের পথ অবলম্বন করতে পারেন না। এই অর্থহীন ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চলতে থাকার সঙ্গে সঙ্গে শুধু ইউক্রেন বা রাশিয়ার জনগণকেই যে বিশাল মূল্য দিতে হচ্ছে, তা নয়। এটি কর্ণাটকের হাভেরি জেলার চালগেরি গ্রামের মতো দূরবর্তী এক পরিবারের জীবিকা ও আশা–আকাঙ্ক্ষাকে ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস করছে। এই গ্রামেই ২১ বছর বয়সী ছাত্র নবীনের বাড়ি, যিনি খারকিভে রুশ গোলাগুলিতে নিহত হয়েছেন। রাশিয়ার আগ্রাসনের নিন্দা এবং ইউক্রেনের অবস্থানকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে ভারত সরকার যে দ্বিধা প্রদর্শন করেছে, তা বোঝা সত্যিই কঠিন। সরকারের কাজকর্মের তাৎক্ষণিক ফলাফল ছিল আমাদের ২০,০০০-এর মতো ছাত্রদের বিপদের মধ্যে রাখা এবং ইউক্রেনীয়দের ক্রোধের শিকার হতে দেওয়া।

রাশিয়ার তুলনায় জিডিপি দ্বিগুণ হওয়া সত্ত্বেও আমরা মাথা নত করে রাখি এই নিরর্থক আশায় যে তারা চিনাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে সৎ মধ্যস্থ হিসেবে কাজ করবে এবং তাদের সঙ্গে আমাদের সমস্যাগুলি সমাধান করতে সহায়তা করবে। আমরা এই বাস্তবতার মুখোমুখি হতে রাজি নই যে রাশিয়া চিনাদের অনুগত একটি রাষ্ট্র ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রেসিডেন্ট শি’‌র নির্দেশে শীতকালীন অলিম্পিকের শেষ পর্যন্ত পুতিন তাঁর আক্রমণ বিলম্বিত করেছিলেন বলে জানা গেছে। এই ঘটনাটি থেকেই বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া উচিত ছিল। উল্টোদিকে তিনি নরেন্দ্র মোদীকে কী হতে চলেছে তার কোনও ইঙ্গিত দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেননি, আর সেই কারণেই আমাদের নাগরিকদের ঠিক সময়ে বার করে আনা যায়নি। পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ‘‌কথিত প্রভাব’‌ কাজে লাগিয়ে কেনই বা আমরা একটি মানবিক করিডর তৈরির জন্য আমাদের স্পেশাল অপারেশন ফোর্সেস পাঠাইনি?‌ কেন রাশিয়ার সহায়তায় শহরগুলি অবরুদ্ধ হওয়ার আগে আমাদের নাগরিকদের বিপদের থেকে সরিয়ে নিইনি? স্পষ্টতই, আমাদের বন্ধুত্বকে অতিরঞ্জিত করা হয়েছে। রাশিয়া আমাদের স্বার্থকে মাথায় রাখে এবং চিনের সঙ্গে ভবিষ্যতের কোনও সংঘর্ষে আমাদের সমর্থন করবে বলে ভাবা বোকার স্বর্গে বাস করা।

সরকারের কাজকর্মের তাৎক্ষণিক ফলাফল ছিল আমাদের ২০,০০০-এর মতো ছাত্রদের বিপদের মধ্যে রাখা এবং ইউক্রেনীয়দের ক্রোধের শিকার হতে দেওয়া।

এক অকার্যকর ডিআরডিও, অদক্ষ অস্ত্র কারখানা এবং অবিন্যস্ত ক্রয় নীতি আমাদের রুশ অস্ত্র ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল করে তুলেছে। যাই হোক, চলতি সংঘাতে তাদের কাজকর্ম অনেকটাই অনভিপ্রেত, এবং বিশেষ করে এখন তাদের উপর যে নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়েছে তার প্রেক্ষিতে সময় এসেছে আমরা অন্য কোথাও খোঁজা শুরু করি।

অবশেষে, এই সত্য না–বলে উপায় নেই যে আমরা যদিও উচ্চাসনে বসার আকাঙ্খা রাখি, সংকটের মুহূর্তে আমাদের রুখে দাঁড়িয়ে নজর কাড়ার মতো মেরুদণ্ডের অভাব দেখা দেয়। প্রাক্তন বিদেশসচিব শ্যাম শরণ যাকে ‘‌দুঃস্বপ্নের দৃশ্য’‌ হিসেবে উল্লেখ করেছেন — যেখানে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় তাদের পাশে না–দাঁড়ানোয় আমেরিকা ভারতকে পরিত্যাগ করবে এবং এশিয়ায় চিনের আধিপত্য স্বীকার করে নেবে — সেই পরিস্থিতির মোকাবিলা আমরা এখনও করতে পারি। অবশ্যই আর একটি পথ আছে:‌ তা হল আমরা চিনাদের সামনে নতমস্তক হতে পারি এবং আশা করতে পারি যে তারা আমাদের আর উপদ্রব করবে না। আসল কথা হল দিনের শেষে শুধু আমাদের স্বার্থই গুরুত্বপূর্ণ।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.