Author : Harsh V. Pant

Originally Published Hindustan Times Published on Oct 03, 2022 Commentaries 5 Days ago

বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের সশক্তিকরণের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরকে ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যে সামুদ্রিক যোগসূত্র রূপে তুলে ধরা নয়াদিল্লিকে তার কৌশলগত পরিধির পুনর্বিন্যাসে সাহায্য করেছে।

ভারত, বাংলাদেশ এবং ইন্দো-প্যাসিফিক
ভারত, বাংলাদেশ এবং ইন্দো-প্যাসিফিক

সেপ্টেম্বর মাসের গোড়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে আসা দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বাস্তব সম্পর্ককে প্রতিফলিত করার পাশাপাশি এমন একটি অঞ্চলের দুই শক্তির বোঝাপড়াকেই দর্শায় যা ঐতিহাসিক ভাবে খণ্ডিত থেকেছে। হাসিনা এবং  প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একে অন্যের অবদানের প্রশংসার পাশাপাশি আগামী দিনের সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জের জন্য সতর্ক থাকা-সহ যতটা অনায়াসে নিজেদের মধ্যে আলোচনা চালান, তা এই গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্কে দুই শীর্ষ নেতার অবদানের সঙ্গে এক সুরে বাঁধা। হাসিনা এ বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী যে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় থাকাকালীন ভারত এবং বাংলাদেশ তাদের সকল বিদ্যমান সমস্যার সমাধান করতে পারবে। প্রধানমন্ত্রী মোদীও অঞ্চলটির বৃহত্তম উন্নয়ন ও বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে ভারতের বিদেশ নীতির পরিসরে বাংলাদেশের বিশেষ  গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন।

বর্তমান সময়টিকে ন্যায্যতই দিল্লি-ঢাকা সম্পর্কের সুবর্ণ যুগ বলা যেতে পারে। হাসিনার সফর চলাকালীন সংযোগ ব্যবস্থা, বাণিজ্য, ব্যবসা, নিরাপত্তা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা এবং ঋণ প্রদানের একাধিক বিষয় সংক্রান্ত সাতটি মেমোরেন্ডাম অফ আন্ডারস্ট্যান্ডিং (মউ) স্বাক্ষরিত হয়। দ্বিপাক্ষিক চুক্তিগুলি ভাল ফল করছে এবং দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কও বেশ মজবুত। কিন্তু মউ এবং চুক্তি ছাড়াও ভারতের বিবিধ ক্ষেত্রে হাসিনার জন্য শ্রদ্ধা রয়েছে, যা তাঁর বিস্তৃত কর্মকাণ্ডে প্রতিফলিত হয়েছে। তাঁর নিজের দেশের অনেকেই তাঁকে ‘ভারতের প্রক্সি’ বা ‘ভারতের প্রতিনিধি’ বলে পরিহাস করলেও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের নিরিখে তাঁর তাৎপর্যপূর্ণ এবং সফল অবদান রয়েছে। এবং প্রধানমন্ত্রী মোদীও বাংলাদেশকে তাঁর সরকারের নেবারহুড ফার্স্ট বা প্রতিবেশ প্রথম নীতির কেন্দ্রে স্থান দিয়ে হাসিনার প্রয়াসের প্রতিদান দিয়েছেন।

হাসিনার সফর চলাকালীন সংযোগ ব্যবস্থা, বাণিজ্য, ব্যবসা, নিরাপত্তা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা এবং ঋণ প্রদানের একাধিক বিষয় সংক্রান্ত সাতটি মেমোরেন্ডাম অফ আন্ডারস্ট্যান্ডিং (মউ) স্বাক্ষরিত হয়।

এক ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি রূপে বাংলাদেশের সাফল্য ভারতে উদ্‌যাপন করা হয়। শ্রীলঙ্কা, নেপাল এবং পাকিস্তান এক নেতিবাচক সময়ের মধ্য দিয়ে যাওয়ার দরুন ঢাকাকে অঞ্চলটির এক গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। হাসিনার স্থিতিশীল নেতৃত্ব ভারতকে আরও সুদৃঢ় প্রতিবেশ নীতি গ্রহণে আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে। যখন হাসিনা তিস্তা জল বণ্টন অথবা রোহিঙ্গাদের সমস্যার কথা উল্লেখ করেন, তখন তা যেন দুই বন্ধুর সম্মিলিত ভাবে তাঁদের সবচেয়ে জটিল সমস্যাগুলির সমাধানের প্রচেষ্টাকেই তুলে ধরে।

তবে দ্বিপাক্ষিকতার ঊর্ধ্বে আরও উল্লেখযোগ্য কিছু রয়েছে, যা দিল্লি-ঢাকা সম্পর্কের এই ঐতিহাসিক উত্থানকে চালিত করে। স্বাধীনতার পর থেকেই ভারত দেশভাগের উত্তরাধিকার  বহন করে চলেছে এবং ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রিজমের মাধ্যমে সারা বিশ্ব ভারতকে দেখতে শুরু করে। আদর্শগত, প্রাতিষ্ঠানিক এবং ভূ-রাজনৈতিক কারণে ভারতের প্রতি পাকিস্তানের প্রতিপক্ষসুলভ মনোভাব সুস্পষ্ট হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে নয়াদিল্লির পক্ষে দক্ষিণ এশিয়ার সীমাবদ্ধতা থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন হয়ে পড়ে। বৃহত্তর বৈশ্বিক এবং আঞ্চলিক উচ্চাকাঙ্ক্ষাবিশিষ্ট একটি দেশ হওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তানের সঙ্গে বিবাদের সমস্যা সমাধানে ভারতের ব্যর্থতা তার নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষমতার উপরে প্রশ্নচিহ্ন এঁকে দেয়। প্রশ্ন ওঠে – যদি নয়াদিল্লি তার প্রতিবেশ সামলাতে না পারে, তা হলে সারা পৃথিবী তাকে এক বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে মেনে নেবে, এমনটা সে প্রত্যাশা করে কী ভাবে? ভারতের বিদেশ নীতি এবং দক্ষিণ এশীয় রাজনীতি পাকিস্তানের বিরামহীন হিংসার আওতাধীন হয়ে পড়ে এবং ভারতীয় নীতি নির্ধারকরা পাকিস্তানকে সামলানোর চেষ্টায় আবিষ্ট হয়ে পড়েন।

এমনকি বস্তুগত সামর্থ্যের দিক থেকে ভারত পাকিস্তানকে অতিক্রম করতে শুরু করার পরেও ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। বর্তমানে যদিও পরিবর্তনের বাতাস বইতে শুরু করেছে। বিদেশ নীতিতে মোদী প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ অবদান হল ভারতের কৌশলগত পন্থার নিরিখে পাকিস্তানকে প্রান্তিক করে তোলা। প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর প্রাথমিক বছরগুলিতে পাকিস্তানের সঙ্গে সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করেছিলেন। সেই চেষ্টা ব্যর্থ হলে তিনি তাঁর মনোভাব বদলান এবং ভারতের আমলাতন্ত্রকে দেশের কৌশলগত পরিধি এমনভাবে পুনর্বিন্যাস করতে বাধ্য করেন যে পাকিস্তানকে বর্তমানে শুধু মাত্র এক অশান্তি সৃষ্টিকারী দেশ রূপেই গণ্য করা হয়।

ভারতীয় কর্মপরিকল্পনার নিরিখে পাকিস্তানের প্রান্তিকীকরণের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের কেন্দ্রিকতা বৃদ্ধি পায়। ২০০৯ সাল থেকে হাসিনার ক্ষমতায় থাকা এবং দিল্লি-ঢাকা সম্পর্ক মজবুত করার প্রতি তাঁর আগ্রহ ভারতের দক্ষিণ এশীয় নীতিতে মৌলিক পরিবর্তনের পথ প্রশস্ত করে দেয়। ভারত কোনও মতেই অঞ্চলটিকে অবজ্ঞা করতে পারে না। কারণ চিন যে ভাবে ভারত মহাসাগরের জলভাগে আগ্রাসী পদক্ষেপ করছে, তা ভারতকে চিন্তায় ফেলেছে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক মজবুত হওয়ায় তা নয়াদিল্লিকে তার প্রতিবেশ নীতির কেন্দ্রটিকে পশ্চিম থেকে বঙ্গোপসাগরস্থিত পুবের সৈকতে সরিয়ে আনতে সাহায্য করেছে। এমনটা হওয়ার ফলে বঙ্গোপসাগরকে ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যবর্তী সামুদ্রিক যোগসূত্র রূপে ব্যবহার করা ভারতকে তার কৌশলগত পরিসর পুনর্বিন্যাস করতে সাহায্য করেছে।

২০০৯ সাল থেকে হাসিনার ক্ষমতায় থাকা এবং দিল্লি-ঢাকা সম্পর্ক মজবুত করার প্রতি তাঁর আগ্রহ ভারতের দক্ষিণ এশীয় নীতিতে মৌলিক পরিবর্তনের পথ প্রশস্ত করে দেয়।

ভারত পূর্ব অভিমুখে সমন্বয় সাধনে ব্রতী হলেও নয়াদিল্লি পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে তার সংযোগের দাবি জানাতেই পারে। এটি অঞ্চলটির বাইরে থেকে আসা অঞ্চল বহির্ভূত কোনও শক্তি নয়, বরং নয়াদিল্লি অতীতের সভ্যতাগত যোগসূত্র এবং বর্তমান সময়ের বাণিজ্যিক ও কৌশলগত সম্পর্কের ভিত্তিতে এর সঙ্গে জৈব ভাবে সংযুক্ত। অতএব ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের সামগ্রিক সামুদ্রিক ভূ-বাস্তবতা নয়দিল্লির দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এক নতুন মাত্রা অর্জন করেছে।

সাউথ এশিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর রিজিওনাল কোঅপারেশন (সার্ক) থেকে বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টোরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকনমিক কোঅপারেশন-এ (বিমস্টেক) সরে আসার সিদ্ধান্তটিকেও এই প্রেক্ষিতেই দেখা উচিত। সার্কের প্রান্তিকীকরণের ফলে ভারত তার আঞ্চলিক সংযোগ সমন্বয়ের নিরিখে বিমস্টেককে প্রধান স্তম্ভ করে তোলে। বিমস্টেককে একটি সম্ভাবনাময় সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এখনও অনেক কাজ করতে হবে। তবে ইতিমধ্যেই সংস্থাটি দক্ষিণ এশীয় সমন্বয় সাধনে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী ভারত-পাকিস্তান মতবিরোধের প্রচলিত অজুহাতের নিরসন করেছে।

এবং এই সব কিছুর জন্যই বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের শক্তিশালী সম্পর্ক স্থাপন অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের দৃঢ়তা ভারতের জন্য এক প্রাণবন্ত উত্তর-পূর্বাঞ্চল গড়ে তোলার পাশাপাশি এক নির্মল ও শান্তিপূর্ণ বঙ্গোপসাগরীয় পরিধির সূচনা করবে। এবং এমনটা সম্ভব হলে তা উদীয়মান ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলগত পরিকাঠামোর প্রেক্ষিতে ভারতকে এক অন্যতম প্রধান নির্ণায়ক শক্তি করে তুলবে। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করতে ভারতের বিনিয়োগ স্বাগত পদক্ষেপ এবং ঢাকার প্রকৃত সম্ভাবনার বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনে নয়াদিল্লিকে স্বতঃপ্রণোদিত হয়েও কাজ করতে হতে পারে। তবেই ভারতের বিদেশ নীতি এবং দক্ষিণ এশিয়া তাদের নিজ নিজ লক্ষ্য অর্জনে সফল হবে।


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় হিন্দুস্থান টাইমস-এ।

মতামত লেখকের নিজস্ব।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.