Originally Published India Today Published on Apr 02, 2022 Commentaries 7 Days ago

একটি রাজ্যে নির্ভরযোগ্য ভোটার-ভিত্তির অনুপস্থিতি এবং দুর্বল ও প্রায় অদৃশ্য পার্টি সংগঠন থাকা সত্ত্বেও আপ-এর ঐতিহাসিক জয় একটি রূপকথার গল্পের মতোই, যেমনটা ২০১৫ সালে দিল্লি নির্বাচনে নবাগত এই দলের জয়ের সময়ে ঘটেছিল।

‘দিল্লি মডেল’ আপ-এর ঐতিহাসিক পঞ্জাব জয়ের নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে
‘দিল্লি মডেল’ আপ-এর ঐতিহাসিক পঞ্জাব জয়ের নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে

সদ্য সমাপ্ত পাঁচটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে রাজনৈতিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ উত্তরপ্রদেশে বিজেপির বর্ণাঢ্য বিজয়ের দিকে যখন অনেক বেশি মনোযোগ দেওয়া হয়েছে, তখন আসল চমক হল পঞ্জাবের ফলাফল। একটি রাজ্যে নির্ভরযোগ্য ভোটার-ভিত্তির অনুপস্থিতি এবং দুর্বল ও প্রায় অদৃশ্য পার্টি সংগঠন থাকা সত্ত্বেও আপ-এর ঐতিহাসিক জয় একটি রূপকথার গল্পের মতোই, যেমনটা ২০১৫ সালে ঘটেছিল দিল্লি নির্বাচনে নবাগত এই দলের জয়ের সময়ে। আপ-এর জয় নজিরবিহীন, কারণ তারা শুধু মাত্র ক্ষমতাসীন কংগ্রেসকে — যেখানে বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী এবং দলের সভাপতি উভয়েই পরাজিত হয়েছেন — নিশ্চিহ্নই করেনি, সবচেয়ে বড় চমকটি হল ১০০ বছরের শিরোমণি অকালি দল (এস এ ডি) মাত্র তিনটি আসন জিততে সমর্থ হয়েছে এবং দলের প্রবীণ নেতা এবং পাঁচ বারের মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ সিং বাদল পর্যন্ত লাম্বিতে নিজের আসন ধরে রাখতে পারেননি। এমনকি এস এ ডি-র সভাপতি সুখবীর বাদল এবং প্রাক্তন কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিংও নিজেদের আসন খুইয়েছেন। এক কথায় ২০২২ সালের নির্বাচনে পঞ্জাবের পুরনো এবং প্রতিষ্ঠিত দলগুলির পরাজয় ওয়াটারলু যুদ্ধের কথাই মনে করিয়ে দেয়।

পঞ্জাবে সাধারণ ভোটাররা পরিবর্তন বা বদলাও-এর পক্ষে জোরালো আওয়াজ তুলেছেন, যা রাজ্যের সব অঞ্চলে আপ-এর শক্তিশালী ফলাফলে স্পষ্ট।

২০১৭ সালের নির্বাচনী পরাজয়ের পরে শৃঙ্খলাহীনতার কারণে আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল সেই রাজ্যে তাঁর পার্টি ইউনিট ভেঙে দেওয়ার পরেও কী ভাবে মাত্র আট বছরের পুরনো একটি দল পঞ্জাবের মতো একটি রাজ্যে এই রকম চমকপ্রদ ফল করতে পারে? পঞ্জাবে আপ-এর উত্থানের নেপথ্যে একটি একক এবং সহজ কারণ রয়েছে, যা তাদের ঐতিহাসিক জয়কে বিশেষ রূপ দিয়েছে: ‘দিল্লি মডেল’। অবশ্য এতে অন্যান্য কারণের গুরুত্ব কমে যায় না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সংশ্লিষ্ট জয়ের নেপথ্যে একটি অন্যতম কারণ ছিল রাজ্যের প্রতিষ্ঠিত দলগুলির প্রতি ভোটারদের মোহভঙ্গ। ২০১৭ সালে উৎসাহব্যঞ্জক নির্বাচনী জয়ের পরেও ক্ষমতাসীন কংগ্রেস পার্টি যে ভাবে অন্তর্দ্বন্দ্ব এবং নেতৃত্ব নির্বাচনের লড়াইয়ে নিজেদের জড়িয়ে ফেলেছিল, তার মাধ্যমে এটি সবচেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। দিল্লি থেকে দলের নেতৃত্বের দ্বারা মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং-এর অনাড়ম্বর অপসারণ, সদ্য নিযুক্ত দলের সভাপতি নভজ্যোৎ সিং সিধুর সঙ্গে তাঁর চলতে থাকা বিরোধ এবং দলের পরিচিত দলিত মুখ চরণজিৎ সিং চান্নির নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে মুখ্যমন্ত্রী পদে বহাল হওয়ার ঘটনাগুলি পঞ্জাবে পার্টির ভরাডুবিতে প্রধান ভূমিকা পালন করেছিল। এ হেন ঘটনা পরম্পরা স্বাভাবিক ভাবেই প্রথাগত ভোটারদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশকে (যেমন দোয়াবা এবং মাজা অঞ্চলে পার্টির নিষ্প্রভ ফলাফলে প্রতিফলিত হয়েছে) আপ-এর দিকে ঠেলে দিয়েছে। অন্য দিকে সাধারণ ভোটাররা অকালি দলকে একটি পুরনো, ক্লান্ত এবং দুর্নীতিগ্রস্ত দল রূপে মনে করেছে, যা প্রকাশ সিং বাদল-সহ সে দলের খ্যাতনামা নেতাদের হারের মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে। পঞ্জাবে সাধারণ ভোটাররা পরিবর্তন বা বদলাও-এর পক্ষে জোরালো আওয়াজ তুলেছেন, যা রাজ্যের সব অঞ্চলে আপ-এর শক্তিশালী ফলাফলে স্পষ্ট। ভগবন্ত মান-এর মতো স্থানীয় মুখের ভূমিকাকে উপেক্ষা করা না গেলেও এই জয়ের নেপথ্যে মূল চালিকাশক্তি ছিল আপ-এর ‘দিল্লি মডেল’ এবং পঞ্জাবে তার উচ্চাকাঙ্ক্ষী আবেদন, যা পঞ্জাবের পরিবর্তনের মেজাজকে পুরোপুরি ধরতে সক্ষম হয়েছিল।

পঞ্জাবে দিল্লি মডেল’-এর অনুরণন

আগেই বলা হয়েছে, পঞ্জাবের যে কোনও সাধারণ হতাশ ভোটারই মরিয়া হয়ে পরিবর্তন চেয়েছিলেন এবং প্রশাসনের এমন এক নতুন ধারার অপেক্ষায় ছিলেন যা গভীর প্রোথিত দুর্নীতি, পৃষ্ঠপোষকতার রাজনীতি এবং অভিজাত দ্বারা নিয়ন্ত্রণের অবসান ঘটাতে পারে। মানুষের কাছে দক্ষ ভাবে জন পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার কেজরিওয়াল সরকারের ‘দিল্লি মডেল’ প্রশাসন পঞ্জাবে ভোটারদের ভাবনার সঙ্গে গভীর ভাবে অনুরণিত হয়েছে। আপ সরকার দ্বারা আগ্রাসী ভাবে প্রচারিত ‘দিল্লি মডেল’-এর জন পরিষেবা প্রদানের চারটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল — উচ্চ গুণমানসম্পন্ন স্কুল শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিষেবা, সাশ্রয়ী মূল্যে জল এবং বিদ্যুৎ পরিষেবা প্রদান।

‘এডুকেশন ফার্স্ট’ বা ‘সবার আগে শিক্ষা’র মতো স্লোগান দিয়ে আপ-এর নেতৃত্বাধীন সরকার একটি ধুঁকতে থাকা শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে, বিশেষ করে রাজধানীর সরকারি স্কুলগুলিতে এক নতুন প্রাণের সঞ্চার করে।

যাঁরা দেশের রাজধানীর শিক্ষাক্ষেত্রের খবর রাখেন, তাঁরা জানেন দিল্লিতে একদা ম্রিয়মান সরকারি স্কুলগুলিতে কী ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। ২০১৫ সালে দিল্লিতে একচেটিয়া জয়ের পর আপ সরকার শিক্ষাক্ষেত্রকে তাদের সুনাম অর্জনের জন্য পাখির চোখ করে তোলে। ‘এডুকেশন ফার্স্ট’ বা ‘সবার আগে শিক্ষা’র মতো স্লোগান দিয়ে আপ-এর নেতৃত্বাধীন সরকার একটি ধুঁকতে থাকা শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে, বিশেষ করে রাজধানীর সরকারি স্কুলগুলিতে এক নতুন প্রাণের সঞ্চার করে। শিক্ষাব্যবস্থার দায়িত্বে থাকা উপ-মুখ্যমন্ত্রী মণীশ শিশোদিয়ার নেতৃত্বে আপ সরকার শিক্ষার জন্য সর্বোচ্চ পরিমাণ তহবিল বরাদ্দ করে, শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন শিক্ষক প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করে এবং ধুঁকতে থাকা স্কুলের পরিকাঠামোর উন্নতির জন্য অর্থ বিনিয়োগ করে। একটি সমন্বিত এবং একমুখী প্রচেষ্টা দ্রুত ইতিবাচক ফল লাভে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, দিল্লির একটি সরকারি স্কুল দ্বারকার রাজকীয় প্রতিভা বিকাশ বিদ্যালয় ভারতের সমস্ত সরকারি ডে স্কুলের তালিকায় শীর্ষ স্থানে উঠে আসে। এবং এর পাশাপাশি ২০১৯ সালে দিল্লির আরও দু’টি সরকারি স্কুল দেশের সেরা দশটি স্কুলের তালিকায় জায়গা করে নেয়। তখন থেকে অন্য অনেক স্কুল শীর্ষ তালিকায় নিজেদের জায়গা করে নিয়েছে। অর্থাৎ এর ফলে বেসরকারি স্কুল থেকে আরও বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী ক্রমশ দিল্লির সরকারি স্কুলে যোগদান করছে।

স্কুলশিক্ষা ছাড়াও স্বাস্থ্য পরিষেবা পাওয়ার সুবিধে ও গুণমান বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও দৃশ্যমান পরিবর্তন ঘটেছে। দিল্লির মহল্লা ক্লিনিকগুলি গত কয়েক বছরে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। জনমানসে ‘দিল্লি মডেল’-এর বিদ্যুৎ ভর্তুকি (২০০ ইউনিট পর্যন্ত বিনামূল্যে), মহিলাদের জন্য বিনামূল্যে বাস পরিষেবা, ২৪X৭ পানীয় জল সরবরাহের মতো অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধে দেশের রাজধানীর অধিকাংশ বাসিন্দার মধ্যে দলটির ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করেছে। ২০২০ সালেও বিজেপির তরফে ব্যাপক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও আপ-এর পর পর দু’বার একচেটিয়া জয় ‘দিল্লি মডেল’-এর সাফল্যের প্রমাণ।

দলটি মহিলা ভোটারদের মাসিক ১০০০ টাকা নগদ অনুদান দেওয়ার প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে সঙ্গে তাঁদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে সমর্থ হয়েছে, যা পিতৃতন্ত্রের ঐতিহ্য দ্বারা প্রভাবিত একটি সামাজিক পরিকাঠামোর মধ্যে কোনও ভাবে মহিলাদের জন্য একটি মর্যাদাপূর্ণ জীবনের আখ্যানকেই জোরদার করে।

ফলে পঞ্জাবের মতো একটি রাজ্যে পৃষ্ঠপোষকতার রাজনীতি, দুর্নীতি কলঙ্কিত রাজনৈতিক অভিজাত সম্প্রদায় এবং উচ্চ বিদ্যুতের হার, ‘সবুজ অর্থনীতির’ গতিহীনতা নিয়ে কৃষকদের ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ ক্রমশ আপ-এর ‘দিল্লি মডেল’-এর মধ্যে উত্তরণের পথ খুঁজে পায়, যেটিতে জন পরিষেবা প্রদানের দুর্নীতিমুক্ত এবং সুদক্ষ ব্যবস্থার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। সুদক্ষ জন পরিষেবার সঙ্গে বিনামূল্যে অন্যান্য সুবিধের যৌথ সংমেলই আপ-কে বাজিমাত করতে সাহায্য করে। দলটি মহিলা ভোটারদের মাসিক ১০০০ টাকা নগদ অনুদান দেওয়ার প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে সঙ্গে তাঁদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে সমর্থ হয়েছে, যা পিতৃতন্ত্রের ঐতিহ্য দ্বারা প্রভাবিত একটি সামাজিক পরিকাঠামোর মধ্যে কোনও ভাবে মহিলাদের জন্য একটি মর্যাদাপূর্ণ জীবনের আখ্যানকেই জোরদার করে। দিল্লিতে করা প্রধান প্রতিশ্রুতিগুলি পূরণে আপ-এর ইতিবাচক পরিসংখ্যান এবং দুর্নীতিবিরোধী নেতা হিসেবে কেজরিওয়ালের নিজস্ব ভাবমূর্তি আপ-এর পক্ষে কাজ করেছে।

সম্মুখে কঠিন পথ

নির্বাচনে জয়লাভ দিল্লিতে আপ-এর কঠোর পরিশ্রমের এক যথাযোগ্য প্রতিদান হলেও পঞ্জাব শাসন করা এবং সেখানে ‘দিল্লি মডেল’-এর বাস্তবায়ন সহজ হবে না। দিল্লির মতো এক স্থিতিশীল রাজস্ব ভিত্তিযুক্ত এবং শক্তিশালী প্রশাসনের উত্তরাধিকারসম্পন্ন (মূলত প্রয়াত শীলা দীক্ষিতের ১৫ বছরের কার্যকালের পর) একটি সমৃদ্ধ শহর পরিচালনা করা আসলে একাধিক পরিকাঠামোগত সঙ্কট-সহ উত্তর ভারতের একটি পূর্ণাঙ্গ রাজ্য পরিচালনার তুলনায় সম্ভবত সহজতর। ধারাবাহিক সরকারের অনিয়ন্ত্রিত ভর্তুকি এবং জনসাধারণের অর্থের অব্যবস্থাপনার কারণে পঞ্জাব আজকে শুধু বিশাল ঋণের জালেই জর্জরিত নয়, রাজ্যটি সবুজ অর্থনীতির রূপান্তরের ফাঁদে অসহায় ভাবে জড়িয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিক কালে বছরব্যাপী কৃষকদের বিক্ষোভ সেই সঙ্কটেরই সাক্ষ্য বহন করে, যা এই গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যের বেশির ভাগ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে প্রভাবিত করছে। এখন এটাই দেখার যে, কী ভাবে আপ এই পরিকাঠামোগত সঙ্কটগুলির মোকাবিলা করে এবং কী ভাবে তারা প্রায়-ফাঁকা কোষাগার নিয়ে রাজ্যের শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং অন্য সরকারি পরিষেবাগুলির রূপান্তর ঘটায়।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Ambar Kumar Ghosh

Ambar Kumar Ghosh

Ambar Kumar Ghosh is an Associate Fellow under the Political Reforms and Governance Initiative at ORF Kolkata. His primary areas of research interest include studying ...

Read More +
Niranjan Sahoo

Niranjan Sahoo

Niranjan Sahoo, PhD, is a Senior Fellow with ORF’s Governance and Politics Initiative. With years of expertise in governance and public policy, he now anchors ...

Read More +