ইউক্রেন যুদ্ধের নেপথ্যে থাকা হার্ড পাওয়ার
আন্তর্জাতিক রাজনীতির বাস্তব দুনিয়ায় রাশিয়ার ইউক্রেন দখলের প্রচেষ্টা মূল জাতীয় স্বার্থ রক্ষার্থে বৃহৎ শক্তিগুলির হার্ড পাওয়ার (অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা এবং সামরিক বলপ্রয়োগ) ব্যবহারের একটি রূঢ় বাস্তব। ইউক্রেনের উপরে রাশিয়ার আক্রমণ ভূ-রাজনীতির এই চিরন্তন সত্যই তুলে ধরে। আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া এবং সিরিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসন— যা এই দেশগুলিকে বিধ্বস্ত করে দিয়েছিল— মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটোর প্রশাসনিক পরিবর্তন আনার লক্ষ্য এবং অন্যান্য অভিন্ন জাতীয় স্বার্থ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে এ হেন হার্ড পাওয়ার ব্যবহারেরই দৃষ্টান্তকে দর্শায়।
ইরাক এবং সিরিয়ার ক্ষেত্রে এ ধরনের পদক্ষেপ ইসলামিক স্টেট (আই এস আই এস) বা দায়েশের জন্ম দেয় এবং তারা এই অঞ্চল ও অঞ্চল-বহির্ভূত পরিসরে অসহায় মানুষদের উপর নৃশংস অত্যাচার চালায়। এই অত্যাচার ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের বেশ কিছু অংশে এখনও বর্তমান এবং কখনও কখনও ভারতীয় উপমহাদেশের অন্য দেশগুলিতেও রক্তক্ষয়ী ঘটনার মাধ্যমে তা প্রকাশ্যে আসে। একদা সমৃদ্ধ লিবিয়া ও ইরাক এবং স্থিতিশীল সিরিয়া গৃহযুদ্ধের কারণে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। তালিবানের অধীনে আফগানিস্তান দেউলিয়া হয়েছে এবং দারিদ্র্যের অবরুদ্ধতায় তলিয়ে গিয়েছে। এই যুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ী সামরিক-বাণিজ্যিক জোট, যাদের কাছে যুদ্ধের অর্থই হল ব্যবসা এবং লাভ।
নিজেদের নিরাপত্তা স্বার্থ রক্ষা এবং প্রভাব বিস্তারের জন্য বৃহৎ শক্তিগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা প্রায়শই সামরিক সংঘাতে পরিণত হয়, যা ইতিহাসের চোখে অযৌক্তিক এবং বিপথগামী।
যখন বৃহৎ শক্তিগুলি হার্ড পাওয়ার ব্যবহারে উদ্যত হয়, তখন স্বাভাবিক ভাবেই রাষ্ট্রপুঞ্জ ছোট দেশগুলিকে রক্ষা করতে অসমর্থ হয়ে পড়ে। এবং ছোট দেশগুলি এই ভয়ের পুনরাবৃত্তিতেই বাস করে যে যদি তারা কথা মতো না চলে, তা হলে তারা বৃহৎ শক্তিগুলির হার্ড পাওয়ারের রোষে পড়বে। নিজেদের নিরাপত্তা স্বার্থ রক্ষা এবং প্রভাব বিস্তারের জন্য বৃহৎ শক্তিগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা প্রায়শই সামরিক সংঘাতে পরিণত হয়, যা ইতিহাসের চোখে অযৌক্তিক এবং বিপথগামী।
সাধারণ মানুষ এই সকল যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি বহন করে এবং সর্বাধিক দুর্ভোগের শিকার হয়। রাষ্ট্রপুঞ্জে মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবং পরে সেক্রেটারি অফ স্টেট ম্যাডেলিন অলব্রাইট টেলিভিশনে বলেছিলেন যে, পাঁচ লক্ষ ইরাকি শিশুর মৃত্যু ইরাকি যুদ্ধের প্রেক্ষিতে যথার্থ যেটি লড়ার নেপথ্যে প্রধান কারণ ছিল গণবিধ্বংসী অস্ত্রের (ওয়েপনস অব মাস ডেস্ট্রাকশন বা ডব্লিউ এম ডি) অস্তিত্ব না থাকা। তাঁর এই কুখ্যাত উক্তি ইতিহাস কখনও ভুলবে না।
ইউক্রেন যুদ্ধ পশ্চিমি গণমাধ্যমে বর্ণবিদ্বেষী শ্বেতাঙ্গ মনোভাবই তুলে ধরেছে। কারণ এ বার ইউরোপের বাইরের বাদামি ও কালো চামড়ার মানুষদের নয়, হত্যা করা হচ্ছে ‘আমাদের মতো’ সোনালি চুল এবং নীল চোখের মানুষদের। ই ইউ দেশগুলিতে গভীর সমবেদনার সঙ্গে শরণার্থীদের স্বাগত জানানো হচ্ছে। পশ্চিমি গণমাধ্যম শরণার্থী, নাগরিকদের মৃত্যু এবং পরিকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতির ছবিতে ভরে আছে। যদিও এই সব কিছুকে যুদ্ধের দুর্ভাগ্যজনক ‘সমান্তরাল’ ক্ষয়ক্ষতি (কোল্যাটেরল ড্যামেজ) হিসেবে ধরা হলেও, আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া এবং অন্যান্য বেশ কয়েকটি জায়গায় আমেরিকার হামলার ফলে হওয়া ক্ষতির পরিমাণ এর চেয়ে বহু গুণ, যা ম্যাডেলিন অলব্রাইটের মতো মানুষের মতে যুদ্ধের যথাযথ মূল্য। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার কিছু পশ্চিমি বন্ধু দেশ দ্বারা নির্ধারিত ‘পার্টি লাইন’ অনুসরণ করে রাশিয়া বর্তমানে অধিকাংশ পশ্চিমি গণমাধ্যম এবং ধারাভাষ্যকারীদের কাছে নিন্দার প্রধান লক্ষ্য।
নিরাপত্তা একটি আপেক্ষিক ধারণা। রাশিয়ার মূল নিরাপত্তা স্বার্থ ইউক্রেনের নিরাপত্তাহীনতাকেই সংজ্ঞায়িত করেছে। একটি দেশের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার প্রচেষ্টা অন্য দেশের নিরাপত্তাহীনতাকে ডেকে আনে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর অকার্যকর ওয়ারশ চুক্তির অন্তর্গত এবং দীর্ঘ দিন সোভিয়েত ইউনিয়নের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলির ন্যাটোতে যোগদানের সিদ্ধান্ত ছিল তাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য একটি পদক্ষেপ। অন্য দিকে ন্যাটোর ক্রমান্বয়ে রাশিয়ার সীমান্তবর্তী হওয়া রাশিয়ার মূল নিরাপত্তা স্বার্থের জন্য হুমকি বলেই বিবেচিত হয়।
ন্যাটো রাশিয়ার আপত্তি উপেক্ষা করে এবং ১৪টি পূর্ব ইউরোপীয় দেশকে নিজের ছত্রচ্ছায়ায় নিয়ে আসে। ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে ২৩০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এক সাধারণ সীমান্ত বর্তমান এবং ন্যাটোতে ইউক্রেনের যোগদানের প্রচেষ্টা কফিনে শেষ পেরেক পোঁতার সমতুল্য। অসংখ্য ঐতিহাসিক নথি থেকে এ কথা স্পষ্ট যে, ১৯৯০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং ফ্রান্স বারবার সোভিয়েত ইউনিয়নকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, জার্মানির দুই ভাগের মধ্যে পুনর্মিলনের পর ন্যাটো ‘এক ইঞ্চি পূর্বাভিমুখী’ সম্প্রসারণ ঘটাবে না। পরবর্তী কালে লিখিত চুক্তির অভাব দর্শিয়ে এই প্রতিশ্রুতি অস্বীকার করা হয় এবং ন্যাটো পূর্ব অভিমুখে ১৪ বার সম্প্রসারণ ঘটায়।
অসংখ্য ঐতিহাসিক নথি থেকে এ কথা স্পষ্ট যে, ১৯৯০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং ফ্রান্স বারবার সোভিয়েত ইউনিয়নকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, জার্মানির দুই ভাগের মধ্যে পুনর্মিলনের পর ন্যাটো ‘এক ইঞ্চি পূর্বাভিমুখী’ সম্প্রসারণ ঘটাবে না।
বর্তমান সি আই এ ডিরেক্টর এবং মস্কোয় প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম জে বার্নস ২০০৮ সালে একটি গোপন চিঠিতে, যা উইকিলিকসে বর্তমানে পাওয়া যায়, লিখেছিলেন যে, ইউক্রেনের ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্তি রাশিয়ার নিরাপত্তার ‘রেড লাইন’ (বিপদসীমা) অতিক্রম করবে। তিনি সুনির্দিষ্ট ভাবে বলেন, যদি এমনটা ঘটে, তা হলে তা হিংসা, গৃহযুদ্ধ ও দেশভাগের জন্ম দেবে এবং রাশিয়াকে হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য করবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার বন্ধু দেশগুলি এই সতর্কবাণী মূল্যায়নে বিশেষ পাত্তা দেয়নি এবং তারা ১৪টি পূর্ব ইউরোপীয় দেশকে ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত করতে সক্ষম হয়, যার মধ্যে বল্টিক দেশগুলি (লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া এবং এস্তোনিয়া) রয়েছে। এই দেশগুলির সঙ্গে রাশিয়ার সাধারণ সীমান্ত বিদ্যমান। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার ন্যাটো বন্ধু দেশগুলি বার বার ইউক্রেনের ন্যাটোতে জোর দেওয়ার উপরে জোর দিয়েছে।
২০০৮ সালে প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছিলেন যে, ইউক্রেন এবং জর্জিয়াকে ন্যাটোতে যোগদানের অনুমতি দেওয়া উচিত এবং এই মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের সেক্রেটারি জেনারেল এ-ও ঘোষণা করেছিলেন যে, রাশিয়ার এই দুই প্রতিবেশী দেশ পরিশেষে ন্যাটোর সদস্য হয়ে উঠবে। বার্নস এবং অন্য পেশাদার কূটনীতিকরা ব্যক্তিগত ভাবে চিন্তিত ছিলেন। কারণ বার্নস ইউক্রেনকে মস্কোর জন্য বিপদসীমার ‘উজ্জ্বলতম’ অংশ বলে অভিহিত করেছিলেন। রাশিয়া ন্যাটো সম্প্রসারণকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ হিসেবে দেখেছে এবং ন্যাটোর পূর্বাভিমুখী সম্প্রসারণের ফলস্বরূপ এই অঞ্চলে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং তার নিজের নিরাপত্তা স্বার্থ সম্পর্কে স্পষ্টতই বিরক্ত বোধ করেছে।
এ ছাড়াও ২০১৪ সালে ইউক্রেনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের ফলে অভ্যন্তরীণ হিংসা শুরু হয় এবং একটি আমেরিকা-সমর্থিত অভ্যুত্থান ঘটে যা গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত রুশপন্থী সরকারকে উৎখাত করে এবং একটি রুশ-বিরোধী ও পশ্চিমপন্থী সরকার দ্বারা প্রতিস্থাপিত করে। রাশিয়াও ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখল করে নেয়, যা প্রধানত একটি রুশপন্থী এলাকা। বিশেষত ন্যাটোয় যোগদানের বিষয়ে নতুন ইউক্রেনীয় সরকারের অভিসন্ধি সম্পর্কে রাশিয়া শঙ্কায় ছিল। ক্রিমিয়া কৃষ্ণ সাগরের সেবাস্তোপোলে রাশিয়ার বৃহত্তম নৌ ঘাঁটি স্থাপন করে।
রুশপন্থী পূর্ব ইউক্রেনীয় অঞ্চল দনবাসের অভ্যন্তরীণ গোলযোগ পিপলস রিপাবলিক অফ লুগানস্ক এবং দনেৎসকের মতো দুটি স্বায়ত্তশাসিত রাষ্ট্রের জন্ম দেয়। স্বাভাবিক ভাবেই কিভ সরকার এই সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি এবং এটিকে অবৈধ ও রাশিয়ার হাতের পুতুল বলে অভিহিত করে। তার পর থেকে এই বিচ্ছিন্ন প্রজাতন্ত্রগুলির বিরুদ্ধে কিভ সরকার একটি নৃশংস যুদ্ধ চালিয়ে গিয়েছে। রাশিয়া সম্প্রতি এই দুই প্রজাতন্ত্রকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
রাশিয়ার সামরিক শক্তিকে প্রতিহত করার জন্য ইউক্রেনকে অস্ত্রশস্ত্র জোগান দিয়ে তার প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এর ফলে ইউক্রেনের প্রতিরোধ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং রুশ সামরিক বাহিনীর অগ্রগতি মন্থর হয়েছে।
যুদ্ধ তীব্রতর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শান্তি আলোচনাও চলছে। সম্ভবত ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগদান করা থেকে বিরত থাকা এবং দনেৎস্ক এবং লুগানস্ক অঞ্চলগুলিকে স্বাধীন থাকতে দেওয়ার মতো কিছু ক্ষেত্রে নতি স্বীকার করতে হবে। রাশিয়ার লক্ষ্য হল ইউক্রেনকে নিরপেক্ষ থাকতে বাধ্য করা, ইউক্রেনের নিরস্ত্রীকরণ এবং নাৎসি নির্মূলীকরণ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ইউক্রেন ইহুদি জনগণের বিরুদ্ধে হিটলারের হত্যাকাণ্ডে যোগ দিয়েছিল, যার ফলে প্রায় এক লক্ষ ইউক্রেনীয় ইহুদিকে হত্যা করা হয়। ইউক্রেন নিরস্ত্রীকরণ এবং নাৎসি নির্মূলীকরণে সম্ভবত রাজি হবে না। রাশিয়া এ কথা বারবার স্পষ্ট করেছে যে, সে কোনও মতেই ন্যাটোকে ইউক্রেনে ঘাঁটি নির্মাণ করতে দেবে না যা রাশিয়ার জন্য প্রচলিত এবং পারমাণবিক অস্ত্র দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেবে। এই ধরনের নিরাপত্তামূলক প্রতিশ্রুতি চাওয়ার রুশ প্রচেষ্টা বারবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটো দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটোর তরফে এই একগুঁয়েমি এমন এক যুদ্ধের সৃষ্টি করেছে যা দুর্ভাগ্যজনক এবং যেটিকে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল।
এই যুদ্ধের আর একটি আশ্চর্যজনক এবং উদ্বেগজনক দিক হল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অর্থায়িত ইউক্রেনের বায়োল্যাবসের দাবি যারা প্যাথোজেন নিয়ে গবেষণা করছে। চিন ও রাশিয়া উভয়েই তা প্রকাশ্যে এনেছে। আমেরিকার রাজনীতিবিদরা এ বিষয়টি নিয়ে পারস্পরিক কটূক্তিতে জড়িয়ে পড়েছেন। চিনের উহান ভাইরোলজি ইনস্টিটিউটে ভাইরাস নিয়ে গবেষণার জন্য মার্কিন অর্থায়িত গেন অব ফাংশান-এর রিপোর্টের পরে এটিকে নিছক রাশিয়ান প্রচার বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বিশ্ব এখনও ভুলে যায়নি যে, কোভিড অতিমারির উৎস ছিল উহান। ভারতে আমেরিকান সি ডি সি-কে (সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন) নিষিদ্ধ তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। কারণ তারা কোনও সরকারি অনুমোদন ছাড়াই দুটি সংস্থায় ভাইরাস গবেষণায় গোপনে অর্থ বিনিয়োগ করছিল। সি ডি সি উহান ল্যাবেরও অর্থায়নকারী সংস্থা ছিল।
এ ধরনের আমেরিকান কার্যকলাপকে বর্তমানে ইউক্রেনের বায়োল্যাবগুলির উন্নতির সহায়ক বলে তুলে ধরা হচ্ছে। এগুলির মূল লক্ষ্য হল সোভিয়েত যুগের বায়োল্যাবগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করা যেগুলি সোভিয়েত যুদ্ধের জৈব যুদ্ধ বা বায়োওয়ারফেয়ার গবেষণার অংশ ছিল এবং যেগুলি থেকে প্রাণঘাতী প্যাথোজেনের ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা এখনও রয়েছে। বায়োওয়ারফেয়ারের অভিযোগ আসলে বায়োল্যাবগুলির এই ধরনের গোপন অর্থায়নের স্বাভাবিক ফলাফল। ইউক্রেনের একটি শক্তিশালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পরিকাঠামো রয়েছে এবং আমেরিকার লক্ষ্য রাশিয়ার বিরুদ্ধে জৈব-গবেষণার কাজে সেগুলির অর্থায়নে সহায়তা করা। রাশিয়ার তরফে এই বায়োল্যাবগুলিকে দখল করা এবং প্যাথোজেন তৈরিতে সফল হওয়া নিয়ে আমেরিকা উদ্বিগ্ন। এই সত্যকে চাপা দিতেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফে ইউক্রেনের উপরে রাশিয়ার রাসায়নিক হামলার গুজব রটানো হচ্ছে।
এই প্রচারমূলক যুদ্ধ ইউক্রেন যুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হিসেবে উঠে এসেছে। প্রচলিত গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়া… উভয় জায়গাতেই অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ ক্রমাগত ছড়িয়ে পড়ছে। একটি প্রক্সি যুদ্ধ হলেও এই যুদ্ধই বর্তমান শতাব্দীর প্রথম বৃহৎ যুদ্ধ যেখানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো এবং রাশিয়া জড়িয়ে পড়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটো দেশগুলি ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ করছে যা রাশিয়ার জন্য সর্বাধিক সরঞ্জামগত এবং মানবিক ক্ষতির কারণ হতে পারে। রাশিয়ার সামরিক শক্তিকে প্রতিহত করার জন্য ইউক্রেনকে অস্ত্রশস্ত্র জোগান দিয়ে তার প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এর ফলে ইউক্রেনের প্রতিরোধ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং রুশ সামরিক বাহিনীর অগ্রগতি মন্থর হয়েছে। ফলত, নাগরিকদের সাধারণ ঘরবাড়ির উপরে রাশিয়া নির্বিচারে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে।
সারা বিশ্ব কেবল মাত্র এই আশাই করতে পারে যে, রাশিয়া-ইউক্রেন পারস্পরিক আলোচনার গতি বৃদ্ধি পাবে; একই সঙ্গে কোভিড অতিমারির প্রভাবের সঙ্গে যুঝতে থাকা অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া ব্যর্থ হওয়া এবং এই অপ্রয়োজনীয় যুদ্ধের অর্থনৈতিক প্রভাব বিশ্বের একটি বড় অংশকে দরিদ্র করে দেওয়ার আগে যুদ্ধ থেমে যাবে।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.