Author : Sameer Patil

Originally Published Observer Research Foundation Published on Sep 29, 2022 Commentaries 5 Days ago
জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদ–প্রতিরোধ পরিস্থিতি
জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদ–প্রতিরোধ পরিস্থিতি

৫ আগস্ট ২০২২–এ পূর্ববর্তী জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করা এবং জম্মু ও কাশ্মীর আর লাদাখকে দুটি নতুন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করার তিন বছর পূর্ণ হয়েছে।[১] এই সাংবিধানিক পরিবর্তনটি এই অঞ্চলের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত ছিল, যা অতীতের থেকে একটি বিচ্ছেদ চিহ্নিত করে এবং এই কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে একটি নতুন প্রশাসনিক ও নিরাপত্তা পদ্ধতির সূচনা করে। তারপর থেকে জম্মু ও কাশ্মীর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রশাসন ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলির বাস্তবায়িত বেশ কয়েকটি উদ্যোগ প্রমাণ করে যে বাস্তবের মাটিতে এমন একটি পরিবর্তন সংঘটিত হয়েছে যা একটি ভাল ভবিষ্যতের আশা জাগায়।

ভারতের সবচেয়ে মনোরম অঞ্চলগুলির মধ্যে একটি হল জম্মু ও কাশ্মীর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল, যা গত তিন দশক ধরে আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদী হিংসা এবং সশস্ত্র জঙ্গিবাদের সমস্যায় ভুগছে। যাই হোক, ১৯৯০–এর দশকের গোড়ার দিকের চূড়ান্ত সন্ত্রাসবাদী হিংস্রতার সময়ের থেকে এখন এই সন্ত্রাসবাদের চরিত্র আমূল রূপান্তরিত হয়েছে। পাকিস্তানের ইন্টার–সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আই এস আই)-এর চালিকাশক্তি, কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী রাজনীতির বিবর্তন, প্যান–ইসলামিক সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর প্রভাব, এবং সোশ্যাল মিডিয়ার উত্থানের মতো বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক গতিশীলতা একে প্রভাবিত করেছে। ফলস্বরূপ, জম্মু ও কাশ্মীরে জঙ্গিবাদ এখন ১৯৮৯ সালের, যখন অনেক কাশ্মীরি যুবক পাকিস্তান অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরে প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য নিয়ন্ত্রণ রেখা (এল ও সি) অতিক্রম করেছিল এবং সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল, তুলনায় নিরাপত্তা সংস্থাগুলির কাছে একটি গুণগতভাবে ভিন্ন চ্যালেঞ্জের প্রতিনিধিত্ব করে।

পাকিস্তানের ইন্টার–সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আই এস আই), কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী রাজনীতির বিবর্তন, প্যান-ইসলামিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর প্রভাব, এবং সোশ্যাল মিডিয়ার উত্থানের মতো বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক গতিশীলতা একে প্রভাবিত করেছে।

বেছে বেছে ধর্মীয় সংখ্যালঘু, অভিবাসী, নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মী এবং বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার মতো সাম্প্রতিক ঘটনাগুলি জম্মু ও কাশ্মীরে ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা পরিস্থিতির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এই ঘটনাগুলি হিংসা ও অ–স্থিতিশীলতার মধ্যে থাকা একটি অঞ্চলের ছবি তৈরি করে। বাস্তবতা অবশ্য ভিন্ন।

আজ, ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থা দৃঢ়ভাবে জম্মু ও কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা গতিশীল অপারেশনের মাধ্যমে জঙ্গিদের উপর চাপ বজায় রেখেছে, এবং তাদের বাস্তুতন্ত্র থেকে সমর্থন পাওয়ার পথ বন্ধ করেছে। এই সাফল্য অর্জন করা গিয়েছে সন্ত্রাসবাদীদের প্রতি সহানুভূতিশীল ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে, মানবিক কৌশলের অনুশীলন করে, এবং সক্রিয়ভাবে ভারতবিরোধী প্রচারের মোকাবিলা করে। এই কর্মকাণ্ড সন্ত্রাসবাদীদের কৌশলের জায়গাটিকে যথেষ্ট সঙ্কুচিত করেছে। যদিও সন্ত্রাসবাদ–প্রতিরোধের (কাউন্টার–টেররিজম)‌ দৃষ্টিকোণ থেকে কিছু নতুন করে উঠে আসা বা তৈরি হওয়া চ্যালেঞ্জ রয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনী কার্যকরভাবে তাদের মোকাবিলায় আত্মবিশ্বাসী।

অঞ্চলটির জন্য বর্তমান সন্ত্রাসবাদ–প্রতিরোধ দৃষ্টিভঙ্গি

কাশ্মীর উপত্যকায় উন্নত নিরাপত্তা পরিস্থিতির একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক হল এই অঞ্চলে সক্রিয় সন্ত্রাসবাদীদের অবশিষ্ট শক্তি। ১৯৯০–এর দশকের শুরুতে জঙ্গিবাদের শীর্ষে এই সংখ্যা বেশ কয়েক হাজার হয়ে গিয়েছিল। আজ পরিস্থিতি বদলেছে। কাশ্মীরে বর্তমান সন্ত্রাসবাদীদের সংখ্যা মোটের উপর ১৬৩, যা কয়েক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন (সারণী ১ দেখুন)।

সারণী ১: কাশ্মীর উপত্যকায় সন্ত্রাসবাদীদের শক্তি

অঞ্চল   পাকিস্তানি সন্ত্রাসবাদী স্থানীয় সন্ত্রাসবাদী মোট
উত্তর কাশ্মীর  ৬০ ১৭ ৭৭
দক্ষিণ কাশ্মীর ১৮ ৬৮ ৮৬
মোট  ৭৮  ৮৫ ১৬৩ 

সূত্র:‌ ভারতীয় সেনা

এই সন্ত্রাসবাদীরা প্রাথমিকভাবে তিনটি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর:‌ লস্কর–এ–তৈবা (এল ই টি), জইশ–এ–মহাম্মদ (জে এম), এবং হিজবুল মুজাহিদিন (এইচ এম)। কিছু আছে যারা আল–কায়েদার আনসার গাজওয়াতুল হিন্দ এবং ইসলামিক স্টেট জম্মু ও কাশ্মীর–এর মতো প্যান–ইসলামিক গোষ্ঠীর স্থানীয় সহযোগীদের অংশ। তবে তাদের সংখ্যা নগণ্য। নিরাপত্তা বাহিনী লক্ষ্য করেছে যে পাকিস্তানি সন্ত্রাসবাদীদের কাজ এখন পূর্ববর্তী সময়ের থেকে কমে গিয়ে স্থানীয় সন্ত্রাসবাদীদের নির্দেশ দেওয়া বা অনুপ্রাণিত করার মধ্যে সীমিত রয়েছে, এবং স্থানীয়রাই এই অঞ্চলে জঙ্গিবাদের দায়িত্ব নিয়েছে।

দক্ষিণ কাশ্মীর এখনও জঙ্গিবাদের কেন্দ্রস্থল, এই অঞ্চলে প্রায় ৮৬ জন সন্ত্রাসবাদী কাজ করছে। বিশেষ করে এল ই টি এবং এইচ এম–এর এখানে আরও ভাল পৌঁছ, নেটওয়ার্ক ও সংগঠন থাকায় এই অঞ্চলটি তাদের কার্যকলাপের কেন্দ্রস্থল। যদিও উত্তর কাশ্মীর, যা ঐতিহ্যগতভাবে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে পাকিস্তানি জঙ্গিদের প্রবেশের স্থান ছিল, তা এখন তুলনামূলকভাবে শান্তিপূর্ণ রয়েছে।

আন্তঃসীমান্ত জঙ্গি অনুপ্রবেশের মোকাবিলা

পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলি কাশ্মীর উপত্যকায় ঢুকে পড়ার জন্য উত্তর কাশ্মীরের পার্বত্য অঞ্চল ব্যবহার করে। পাকিস্তানি নিরাপত্তা সংস্থা সক্রিয়ভাবে অনুপ্রবেশকারী সন্ত্রাসবাদীদের সেনার গাড়িতে করে নিয়ন্ত্রণরেখা পর্যন্ত নিয়ে আসে, অনুপ্রবেশের পথ পর্যবেক্ষণ করে, সন্ত্রাসবাদীদের অনুপ্রবেশের সময় কভারিং ফায়ার করে এবং অত্যাধুনিক যোগাযোগ সরঞ্জাম সরবরাহ করে। জঙ্গিরা পিরপাঞ্জাল রেঞ্জের (জম্মু–সাম্বা–কাঠুয়া সমভূমি এবং পাহাড়ি রাজৌরি–পুঞ্চ এলাকা) দক্ষিণ থেকেও কখনও কখনও সুড়ঙ্গ দিয়ে প্রবেশ করে, যেমনটি ২০১২ সালে সাম্বা জেলায় আবিষ্কৃত হয়েছিল, যার দৈর্ঘ্য ছিল ৪০০ মিটার।[২]

এই অনুপ্রবেশ মোকাবিলায় নিরাপত্তা বাহিনী গত দেড় দশকে একটি অত্যন্ত কার্যকর ত্রিস্তরযুক্ত অনুপ্রবেশ প্রতিরোধক গ্রিড তৈরি করেছে। এতে ভারতীয় সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণরেখায় প্রথম স্তর তৈরি করে, তারপরে সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সি আর পি এফ) এবং জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ (জে কে পি)–এর মতো বাহিনী দ্বিতীয় স্তর তৈরি করে। এছাড়াও, নিরাপত্তা বাহিনী অ্যান্টি ইনফিল্ট্রেশন অবস্ট্যাকল সিস্টেম (এ আই ও এস) বেড়া মোতায়েন করেছে, এবং রিকনাইসান্স ড্রোন, নাইট–ভিশন ইকুইপমেন্ট ও হাতে ধরা থারমাল ইমেজিং ডিভাইসের মাধ্যমে নজরদারি জোরদার করেছে।[৩]

সারণী ২: জম্মু ও কাশ্মীরে আন্তঃসীমান্ত অনুপ্রবেশ

বছর  Year ২০১২ ২০১৩ ২০১৪ ২০১৫ ২০১৬ ২০১৭  ২০১৮ ২০১৯ ২০২০ ২০২১ ২০২২ #
অনুপ্রবেশ প্রয়াস ২২২ ২২৯  ১৮৩ ৯৩ ৩৪৯  ৩২৩ ৩৩৯ ১৭১ ৬২ ৫৮
অনুপ্রবেশে সাফল্য ১২১ ৯৭ ৬৫ ৩৩ ১১২ ১২০ ১৪৩ ১৩০ ৩৬ ৩৬  ৩

সূত্র: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও ভারতীয় সেনা
# জানুয়ারি–জুন, ২০২২–এর সময় কালের হিসাব

এই প্রচেষ্টাগুলি সম্মিলিতভাবে অনুপ্রবেশের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাসে অবদান রেখেছে, কারণ সারণী ২ থেকে বিশেষ করে সফল অনুপ্রবেশের ঘটনাগুলির হিসাব পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ, ২০২০ ও ২০২১ সালে অনুপ্রবেশের প্রচেষ্টার সংখ্যা দুই অঙ্কে নেমে এসেছে — যথাক্রমে ৬২ এবং ৫৮, এবং শুধু ৭২ জন সেই দুই বছরে সফলভাবে অনুপ্রবেশ করতে পেরেছে। ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত পাঁচটি অনুপ্রবেশের চেষ্টা হয়েছিল, যার মধ্যে তিনজন সন্ত্রাসবাদী অনুপ্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছিল। পরে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে এনকাউন্টারে ওই সন্ত্রাসবাদীদের মৃত্যু হয়।

সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী ও তাদের বাস্তুতন্ত্রের বিরুদ্ধে দমন অভিযান

ইতিমধ্যে নিরাপত্তা বাহিনী বেশ কয়েকটি কাউন্টার–ইনসারজেন্সি (সি আই) অপারেশনের মাধ্যমে রাজ্যের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলির উপর চাপ বজায় রেখেছে। এগুলি শীর্ষ জঙ্গি নেতৃত্বকে নির্মূল করেছে এবং তাদের নাশকতামূলক পরিকল্পনা ভেস্তে দেওয়ার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য পেয়েছে। ফেব্রুয়ারি ২০১৯ সালে পুলওয়ামা জেলার লেথপোরায় সি আর পি এফ কনভয়ে আত্মঘাতী হামলার ঘটনাটি বাদে জঙ্গিরা এখন শুধুই অরক্ষিত মানুষকে লক্ষ্যবস্তু করে তাদের হত্যা করছে। এই এলোমেলো হিংস্রতা তাদের হতাশাজনিত বেপরোয়া মনোভাব এবং কাশ্মীরের পরিবর্তিত নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে প্রাসঙ্গিক থাকার প্রয়াসকেই নির্দেশ করে। সেনা কর্মকর্তারা আরও উল্লেখ করেছেন যে ধারাবাহিক কাউন্টার–ইনসারজেন্সি অপারেশন একসময়কার বিবদমান সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলিকে হাত মেলাতে এবং একসাথে কাজ করতে বাধ্য করেছে। এই সহযোগিতা দ্ব্যর্থহীনভাবে পাকিস্তান আইএসআই–এর পরামর্শে।

নিরাপত্তা বাহিনী টার্গেট করেছে প্রকাশ্য কর্মীদের, যারা সন্ত্রাসবাদীদের একাধিক পরিষেবা দেয়—যেমন মোবাইল ফোন রিচার্জ করা, আশ্রয় দেওয়া এবং নিরাপত্তা বাহিনীর গতিবিধি সম্পর্কে অবহিত করা।

নিরাপত্তা বাহিনীর দমন অভিযানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল সন্ত্রাসবাদীদের সমর্থনকারী বাস্তুতন্ত্রের ধ্বংসাত্মক উপাদানগুলির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। এতে শুধু প্রকাশ্য কর্মীরা (‌ওভার গ্রাউন্ড ওয়ার্কার্স)‌ এবং সন্ত্রাসবাদীদের প্রতি সহানুভূতিশীলদের নেটওয়ার্কই নয়, সেই সঙ্গে জামাত–এ–ইসলামির (জে ই আই) ক্যাডাররাও অন্তর্ভুক্ত। এইচএম–সংশ্লিষ্ট এই ধর্মীয় সংগঠনটি দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপে লিপ্ত ছিল। ফেব্রুয়ারি ২০১৯–এ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জে ই আই–কে ‘‌আনলফুল অ্যাসোসিয়েশন’‌ বলে ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করেছিল ।[৪] একই সঙ্গে বিচ্ছিন্নতাবাদী ও জঙ্গি তৎপরতায় প্ররোচনাদানকারী কর্মীদের সরকার অপসারণ করতে শুরু করে।

এছাড়াও, নিরাপত্তা বাহিনী টার্গেট করেছে প্রকাশ্য কর্মীদের, যারা সন্ত্রাসবাদীদের একাধিক পরিষেবা দেয়—যেমন মোবাইল ফোন রিচার্জ করা, আশ্রয় দেওয়া এবং নিরাপত্তা বাহিনীর গতিবিধি সম্পর্কে অবহিত করা। ২০১৯ সাল থেকে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ জননিরাপত্তা আইন এবং বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইনে ৯০০ জনেরও বেশি প্রকাশ্য কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে।

সারণী ৩: প্রকাশ্য কর্মীদের গ্রেপ্তারের বাৎসরিক হিসাব

বছর ২০১৯ ২০২০ ২০২১  ২০২২#
গ্রেপ্তার ৩৭২ ২৭৭ ১৮৪ ৯০

সূত্র: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও ভারতীয় সেনা
# জানুয়ারি–জুন, ২০২২–এর সময় কালের হিসাব

সন্ত্রাসবাদী অর্থের মোকাবিলা করা নিরাপত্তা সংস্থার কাজকর্মের আরেকটি কেন্দ্রবিন্দু। এই উদ্দেশ্যে জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এন আই এ) সন্ত্রাসবাদী অর্থায়নের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি তদন্ত শুরু করেছে।[৫] এছাড়াও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সতর্কভাবে সন্ত্রাসবাদী অর্থায়নের বিষয়টি পর্যবেক্ষণের জন্য নিরাপত্তার প্রতিনিধিদের (এন আই এ, সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন, ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো, এবং জে কে পি) এবং আর্থিক সংস্থাগুলির (সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডায়রেক্ট ট্যাক্সেস এবং সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ইনডায়রেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস) সমন্বয়ে একটি টেরর মনিটরিং গ্রুপ গঠন করেছে।[৬] এই পদক্ষেপগুলি বিচ্ছিন্নতাবাদী মনোভাব ও জঙ্গি হিংস্রতাকে উস্কে দেওয়ার জন্য আই এস আই, পাকিস্তান এবং পাক–অধিকৃত কাশ্মীরের সন্ত্রাসবাদীদের মাস্টারমাইন্ড এবং কাশ্মীরে তাদের সহযোগীদের মধ্যে যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছে। এই ক্র্যাকডাউন নাটকীয়ভাবে পাথর নিক্ষেপের ঘটনাগুলিকে হ্রাস করেছে, যা একসময় কাশ্মীর উপত্যকায় অশান্তির লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠেছিল। পাকিস্তান নিয়মিত এই পাথর নিক্ষেপের ঘটনাগুলিকে ভারতবিরোধিতা ও কাশ্মীরিদের স্বাধীনতার স্বপক্ষে ভাবাবেগের প্রকাশ হিসাবে প্রদর্শন করেছিল।

তাৎপর্যপূর্ণভাবে, শুধু কঠোর পদক্ষেপই যে নিরাপত্তা বাহিনীর সন্ত্রাস–প্রতিরোধ  প্রতিক্রিয়াকে চিহ্নিত করেছে, তা নয়। তারা বেশ কিছু নরম পদক্ষেপও বাস্তবায়ন করেছে যা স্থানীয়দের প্রশংসা পেয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সর্বাধিক সংযম অনুশীলন, পেলেট বন্দুক এড়ানো, এবং কাউন্টার ইনসারজেন্সি অপারেশন বা প্রতিবাদ বিক্ষোভের সময় সমান্তরাল ক্ষতি হ্রাস করা। ফলস্বরূপ, আগস্ট ২০১৯ থেকে প্রতিবাদ বিক্ষোভে বা এনকাউন্টারে পেলেট বন্দুকের আঘাতে কোনও বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এছাড়াও শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তারা সক্রিয় জঙ্গিদের পরিবারের কাছে তাদের সন্তানদের আত্মসমর্পণ করানোর অনুরোধ জানানোর জন্য পৌঁছে গিয়েছেন। এই ধরনের একটি প্রচারে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে সিনিয়র সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তারা দক্ষিণ কাশ্মীরের শোপিয়ানে সক্রিয় জঙ্গিদের ৮০টি পরিবারের কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন, এবং তাদের ছেলেদের হিংসার পথ পরিহার করার জন্য অনুরোধ জানানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন।[৭] এই উদ্যোগগুলি আই এস আই এবং সন্ত্রাসবাদী মাস্টারমাইন্ডদের উল্লেখযোগ্যভাবে প্রচার সামগ্রী থেকে বঞ্চিত করেছে।

নিরাপত্তা সংস্থাগুলির দ্বারা বাস্তবায়িত এই পদক্ষেপগুলির একটি প্রত্যক্ষ প্রভাব হল উপত্যকার নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি৷ এটি স্থানীয় পর্যটন ক্ষেত্রকে উৎসাহিত করেছে, এবং পর্যটকদের আগমন একটি নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে: ২০২২ সালের প্রথমার্ধে, ১০ মিলিয়নেরও বেশি পর্যটক এই অঞ্চলটি পরিদর্শন করেছেন, যা এটিকে কাশ্মীরের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল পর্যটন মরসুমে পরিণত করেছে।[৮]

বিকশিত এবং উদীয়মান সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ চ্যালেঞ্জ

একই সময়ে এই অঞ্চলটি নতুন কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে, কারণ পাকিস্তান–সমর্থিত উপাদানগুলি উত্তেজনা জারি রাখার জন্য তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

১। র‌্যাডিক্যালাইজেশন এবং সন্ত্রাসবাদী নিয়োগ: যদিও নিরাপত্তা বাহিনী ব্যাপকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে, তবুও তাদের একটি প্রধান উদ্বেগের বিষয় হল স্থানীয় সন্ত্রাসবাদী নিয়োগের বৃদ্ধি, প্রাথমিকভাবে দক্ষিণ কাশ্মীরের চারটি পুলিশ জেলা পুলওয়ামা, শোপিয়ান, কুলগাম ও অবন্তিপোরা থেকে।

সারণি ২: স্থানীয় সন্ত্রাসবাদী নিয়োগ

বছর ২০১২ ২০১৩ ২০১৪ ২০১৫ ২০১৬ ২০১৭  ২০১৮ ২০১৯ ২০২০ ২০২১ ২০২২ #
নিয়োগ  ১৯ ৩১ ৬৩ ৮৩     ৮৬ ১২৮ ২১০   ১১৭ ১৭৮  ১৪২ ৭৪

সূত্র: ভারতীয় সেনা

# জানুয়ারি–জুন, ২০২২–এর সময় কালের হিসাব

চিত্র ১:‌‌ কাশ্মীর উপত্যকা:‌ ২০২২–এ পুলিশ জেলাভিত্তিক সন্ত্রাসবাদী নিয়োগ

সূত্র: ভারতীয় সেনা

এই স্থানীয় নিয়োগের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হল স্থানীয় যুবকদের উগ্রপন্থায় দীক্ষিত করা (র‌্যাডিকালাইজেশন)‌, যা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। সালাফি ও ওয়াহাবি প্রচার দ্বারা উগ্রকরণ, সঙ্গীদের চাপ, অত্যাচারিতের অনুভূতি সহ বেশ কয়েকটি কারণ উগ্রবাদীতে পরিণত করার প্রক্রিয়াকে সহায়তা করে। এটা কোনও আশ্চর্যের বিষয় নয় যে কাশ্মীর উপত্যকায় গত কয়েক বছরে ধর্মীয় মাদ্রাসার সংখ্যা কার্যত দ্বিগুণ হয়েছে। তার উপর ডার্ক ওয়েব ও  সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম সহ সাইবারস্পেস এই ধর্মীয় প্রচারকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে এবং উগ্রকরণকে ত্বরান্বিত করছে।

এই র‌্যাডিক্যালাইজেশন প্রক্রিয়া মোকাবিলা করার একটি প্রয়াস চলছে, এবং নিরাপত্তা বাহিনী এই প্রবণতার অভিমুখ পরিবর্তনের জন্য একাধিক উদ্যোগ শুরু করেছে। যেমন ভারতীয় সেনাবাহিনীর ‘‌সহি রাস্তা উদ্যোগ’‌-এর লক্ষ্য জাতীয় সংহতি সফর, ক্রীড়া প্রশিক্ষণ কর্মসূচি এবং উৎসব ও দক্ষতা উন্নয়ন কর্মশালার মাধ্যমে যুবকদের সঠিক পথে নিয়ে আসা। জম্মু কাশ্মীর পুলিশও একই ধরনের উদ্যোগের বাস্তবায়ন করে।[৯]

২। হাইব্রিড সন্ত্রাসবাদী এবং ভার্চুয়াল সন্ত্রাসবাদী সংগঠন: কাউন্টার ইনসারজেন্সি অপারেশন বৃদ্ধি এবং অনেক সক্রিয় জঙ্গিদের অকেজো করে দেওয়ার পর সন্ত্রাসবাদের মাস্টারমাইন্ডরা এখন তাদের কার্যকলাপকে অস্পষ্ট করার জন্য নিজেদের কৌশল বদলে ফেলেছে। হিংসাত্মক ঘটনা ঘটানোর জন্য তারা এখন সন্ত্রাসবাদীদের প্রতি সহানুভূতিশীল ব্যক্তিদের ব্যবহার করছে। তাদের বেশির ভাগেরই কোনও অপরাধমূলক রেকর্ড নেই, এবং তাই তারা পুলিশি তদন্তের জাল এড়াতে পারে। এই ‘‌হাইব্রিড সন্ত্রাসবাদীরা’ই মূলত শ্রীনগর এবং তার আশেপাশের হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী। এছাড়াও নিরাপত্তা বাহিনী জম্মু কাশ্মীর গজনভি ফোর্স এবং দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট–এর মতো ভার্চুয়াল সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলির বিস্তার লক্ষ্য করেছে, যেগুলি এল ই টি এবং অন্যান্য সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বা সংগঠনগুলির সামনের সারির সংগঠন ছাড়া কিছুই নয়। প্রতিক্রিয়া হিসাবে জম্মু কাশ্মীর পুলিস তার মানবিক এবং প্রযুক্তিগত বুদ্ধিমত্তার ক্ষমতাকে শক্তিশালী করছে। এটি এই হাইব্রিড সন্ত্রাসীদের ধরতে সহায়ক প্রমাণিত হচ্ছে।

৩। পাকিস্তানের তথ্য যুদ্ধ: আগস্ট ২০১৯ থেকে আই এস আই অপতথ্য প্রচারের যন্ত্র সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ভারতবিরোধী প্রচারের ব্যাপক প্রয়াস শুরু করেছে। এল ই টি এবং জে ই এম–এর মতো ভারতবিরোধী সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলিকে পাকিস্তানের বস্তুগত ও আর্থিক সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি গোটা বিশ্বের নজরে পড়ে যাওয়ার পর আই এস আই কাশ্মীরের জঙ্গিবাদকে ‘‌দেশীয় প্রতিরোধ’‌ হিসাবে উপস্থাপন করতে চেয়েছে। উপরন্তু তারা ভারতকে একটি বড় মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী হিসাবে চিহ্নিত করতে চেয়েছে। এই প্রচারের লক্ষ্য কাশ্মীরের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা এবং আন্তর্জাতিক সহানুভূতি অর্জন করা।

পাকিস্তানের এই তথ্য যুদ্ধ অভিযানটি একটি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ, কারণ তা ভারত এবং তার নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে মিথ্যার কথন তৈরি করতে যে কোনও ছোট ঘটনাকে কাজে লাগায়। এর ২০১৯ সালের আগস্ট–পরবর্তী লাভগুলিকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷ এই কথনগুলির মোকাবিলা করার জন্য ভারতের গণতান্ত্রিক প্রমাণপত্রে দৃ্ঢ় থাকা এবং পাকিস্তানের মিথ্যাচার ধরে দেওয়ার জন্য একটি ব্যাপক জাতীয় প্রচেষ্টার প্রয়োজন হবে৷ সেনাবাহিনীর শ্রীনগরভিত্তিক চিনার কোর একটি পাল্টা প্রতিক্রিয়া বাস্তবায়ন করছে, তবে তার প্রচেষ্টার জাতীয় পরিবর্ধন প্রয়োজন।

এই বিষয়টি স্পষ্ট যে আঞ্চলিক নিরাপত্তার অশান্ত পরিবেশ এবং পাকিস্তানের সমস্যা সৃষ্টির প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কাশ্মীরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে শান্ত এবং স্থিতিশীল রয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী পাকিস্তানের স্পনসর করা আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদ এবং তার প্রক্সিদের বিরুদ্ধে জোরালোভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এই সুবিধা বজায় রাখার জন্য অন্য সরকারি সংস্থাগুলিকে আরও ভাল শাসন দিতে হবে এবং সার্বভৌমত্বের রিট প্রতিষ্ঠার জন্য এগিয়ে যেতে হবে।


রেফারেন্স (লিঙ্কের জন্য:‌https://www.orfonline.org/research/counter-terrorism-scenario-in-jk/)

[*] লেখক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন থিঙ্ক ট্যাঙ্কের একজন সিনিয়র ফেলো। তিনি এর আগে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ সচিবালয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। ইমেল: [email protected]
[১] সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্কর, “চেঞ্জিং দ্য স্টেটাস অফ জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর উইল বেনিফিট অল অফ ইন্ডিয়া,” ফিনানশিয়াল টাইমস, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯।
[২] “টানেল ফ্রম পাকিস্তান ফাউন্ড ইন সাম্বা ডিস্ট্রিক্ট অফ জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর,” দ্য ইকনমিক টাইমস, ৩ আগস্ট ২০১২।
[৩] প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো, ভারত সরকার, “স্টেপস টু রিডিউস বর্ডার ইনফিলট্রেশন,” ১০ মার্চ ২০২১।
[৪] স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ তারিখের বিজ্ঞপ্তি।
[৫] স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, “কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও সহযোগিতা মন্ত্রী শ্রী অমিত শাহ আজ নয়া দিল্লিতে জাতীয় তদন্ত সংস্থার (এন আই এ) ১৩তম এন আই এ দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে যোগদান করেন,” পি আই বি দিল্লি, ২১ এপ্রিল ২০২২।
[৬] রাহুল ত্রিপাঠী, “এম এইচ এ সেটস আপ টেরর মনিটরিং গ্রুপ টু চেক ফ্লো অফ ইললিগাল ফান্ডস ইন কাশ্মীর,” দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ৩০ মার্চ ২০১৯।
[৭] বাশারাত মাসুদ, “টপ আর্মি, পুলিস অফিসারস মিট ফ্যামিলিজ অফ অ্যাকটিভ কাশ্মীর মিলিট্যান্টস,” দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ১ সেপ্টেম্বর ২০২১।
[৮] জাইদ বিন শাবির, “1.05 ক্রোর টুরিস্টস ভিজিটেড কাশ্মীর ইন ফার্স্ট 6 মান্থস দিস ইয়ার: জিওআই ,” কাশ্মীর অবজারভার, ১৮ জুলাই ২০২২।
[৯] চিনার কোর – ভারতীয় সেনা, “দ্য ‘সহি রাস্তা’ ইনিশিয়েটিভ,” ফেসবুক পোস্ট, ১০ এপ্রিল ২০২২।

মতামত লেখকের নিজস্ব।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.