Author : Navdeep Suri

Originally Published The Tribune Published on Dec 06, 2022 Commentaries 20 Days ago

কার্বন ডাই অক্সাইড ও অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাসের বৈশ্বিক মজুতে সিংহভাগ অবদান রেখেছে পশ্চিমের শিল্পোন্নত দেশগুলির পাশাপাশি ভারতও, এবং তাদের তৈরি করা এই সমস্যা সমাধান করার দায়িত্বও তাদেরই নেওয়া উচিত। উন্নয়নশীল দেশগুলির শক্তিসংক্রান্ত বিকল্পগুলি অস্বীকার করে তা ঠিক করা যাবে না।

কপ ২৭, পঞ্জাব এবং জলবায়ু–নরকের মহাসড়ক
কপ ২৭, পঞ্জাব এবং জলবায়ু–নরকের মহাসড়ক

আমরা যখন ৬ নভেম্বর গুরুগ্রাম থেকে অমৃতসরের উদ্দেশে যাত্রা করি, তখন ঘন ধোঁয়াশা আমাদের ৫০০ কিলোমিটারেরও বেশি সময় ধরে সঙ্গ দেয়। তা ছিল হরিয়ানা ও পঞ্জাবের কৃষিজমি জুড়ে ধানের খড় পোড়ানোর অনাকাঙ্খিত অভ্যাসের কারণে পরিবেশগত বিপর্যয় ও স্বাস্থ্যের ঝুঁকির এক ভয়াবহ অনুস্মারক।

আমরা জনাকীর্ণ জাতীয় মহাসড়ক–৪৪ বা জিটি রোড এড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, এবং রোহতক, জিন্দ, নারনৌল, সাংরুর, বারনালা, মোগা, হরিকে ও তরন তারন হয়ে যাওয়া বিকল্প পথ নিয়েছিলাম। হরিয়ানার মধ্য দিয়ে ড্রাইভ করার সময় আমরা খামার–আগুনের বিক্ষিপ্ত প্রমাণ দেখেছি। কিন্তু পঞ্জাবে প্রবেশ করার পর ছবিটা রীতিমতো ভয়ঙ্কর ছিল। পোড়া মাঠ ও ধোঁয়ার ঘন চাদর মাইলের পর মাইল ধরে প্রত্যক্ষ করা যায়, বিশেষ করে জাতীয় মহাসড়ক–৫২ ধরে সাংরুর থেকে মোগা পর্যন্ত।

৭ নভেম্বর শার্ম এল–শেখ–এ কপ ২৭ বিশ্ব নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছিলেন, ‘‌‘‌আমরা জলবায়ু–নরকে যাওয়ার একটি মহাসড়কে রয়েছি এবং এখনও এক পা দিয়ে রেখেছি অ্যাক্সিলেরেটরে…ঘড়ির কাঁটা টিকটিক করছে…এবং আমরা সংকটমুহূর্তের কাছে পৌঁছে যাচ্ছি।’‌’‌ তাঁর এই কথাগুলো পরে আমার কানে বাজছিল যখন আমি সেই মহাসড়কের দুই পাশের ভয়াবহ দৃশ্যের কথা স্মরণ করছিলাম।

কিছু দিন আগে, নাইরোবিতে রাষ্ট্রপুঞ্জের পরিবেশ কর্মসূচি তার সমানভাবে হতাশাজনক ‘‌অ্যাডাপটেশন গ্যাপ রিপোর্ট–২০২২’‌ প্রকাশ করেছে, এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য বিশ্বের প্রচেষ্টাকে ‘‌খুব কম, খুব ধীরগতির’‌ বলে বর্ণনা করেছে।

২০১৫ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত কপ ২১ চুক্তিটি প্রাক–শিল্পায়ন স্তরের উপরে বৈশ্বিক উষ্ণতাকে সর্বোচ্চ ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ করার একটি উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য নির্ধারণে সম্মত হয়েছিল।

ইতিমধ্যে বিশ্ব উষ্ণায়নের পথে অসহনীয় অগ্রগমনের প্রমাণ এতটাই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে তাকে উপেক্ষা করা অসম্ভব। জলবায়ু–সম্পর্কিত বড় বড় বিপর্যয়ের ঘটনা প্রায় দ্বিগুণ হওয়ার মধ্যে আমরা তা দেখতে পাচ্ছি—পাকিস্তান ও নাইজেরিয়ায় ভয়াবহ বন্যা, কেনিয়ায় টানা চার বছরের খরা, ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকা জুড়ে রেকর্ড তাপমাত্রা, মেরু বরফের শীর্ষভাগ দ্রুত গলে যাওয়া… প্রমাণ আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে আছে।

২০১৫ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত কপ ২১ চুক্তিটি প্রাক–শিল্পায়ন স্তরের উপরে বৈশ্বিক উষ্ণতাকে সর্বোচ্চ ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ করার একটি উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য নির্ধারণে সম্মত হয়েছিল। বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ স্বীকার করেছেন সেই লক্ষ্যে পৌঁছনো সম্ভবত অসম্ভব, এবং আমরা ভাগ্যবান হব যদি ২০৫০ সালের মধ্যে প্রধান অর্থনীতিগুলির জন্য নেট–জিরো লক্ষ্যমাত্রা রেখে আমরা উষ্ণতা বৃদ্ধিকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ করতে পারি। বিষয়গুলিকে পরিপ্রেক্ষিতে রাখার জন্য বলা প্রয়োজন যে ভারত তার অনেক আগে তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে গেলেও সে ২০৭০ সালের মধ্যে নেট–জিরো লক্ষ্য ঘোষণা করেছে!

কারণ ভারত, অন্য অনেক উন্নয়নশীল দেশের মতো, জলবায়ু ন্যায়বিচারের জন্য আবেগপূর্ণ যুক্তি দেয়। কিন্তু কার্বন ডাই অক্সাইড ও অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাসের বৈশ্বিক মজুতে সিংহভাগ অবদান রেখেছে পশ্চিমের শিল্পোন্নত দেশগুলির পাশাপাশি ভারতও, এবং তাদের তৈরি করা এই সমস্যা সমাধান করার দায়িত্বও তাদেরই নেওয়া উচিত। উন্নয়নশীল দেশগুলির শক্তিসংক্রান্ত বিকল্পগুলি অস্বীকার করে এবং সবুজ অতিক্রমণের গুণাবলি সম্পর্কে তাদের চাপ দিয়ে তা ঠিক করা যাবে না।

ধনী দেশগুলির আর্থিক সংস্থান ও প্রযুক্তি রয়েছে, এবং দরিদ্র দেশগুলির উন্নয়নের পথকে আরও সবুজ ও পরিবেশের জন্য কম–ধ্বংসাত্মক করার ক্ষেত্রে সহায়তা করতে তাদের এগিয়ে আসতে হবে। অন্তত, অনুমানমূলকভাবে। কারণ, বাস্তবতা হল ২০০৯ সালে কোপেনহেগেনে কপ১৫–র সময় জলবায়ু অর্থায়নের জন্য মাত্র ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও তার ২০২০–র সময়সীমা পূরণ করতে পারেনি, এবং এখন তা ২০২৫ সালের মধ্যে ঘটতে পারে।

এবং তাই কপ২৭ ‘‌লোকসান ও ক্ষয়ক্ষতি’‌–র সমস্যা মোকাবিলার সম্ভাব্য উপায় নিয়ে অনেক বিতর্ক শুনেছে, এমনকি অভিযোজন ও প্রশমনের পুরনো সমস্যাগুলি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এছাড়াও এই স্বীকৃতি রয়েছে যে চরম জলবায়ু ঘটনাগুলি ক্রমশ বেড়ে চলার কারণে প্রাথমিক সতর্কতা ব্যবস্থা এবং দুর্যোগ–প্রতিরোধী পরিকাঠামো নির্মাণের প্রয়োজন।

এ ছাড়া বৈজ্ঞানিক কম্পিউটার মডেলের ভিত্তিতে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্তঃসরকারি প্যানেল দ্বারা একত্রিত বৈশ্বিক জলবায়ু বাজেটের গুরুতর বিষয়টিও আছে। এই বাজেট অনুসারে মোট ২,৮৯০ বিলিয়ন টন কার্বন ডাই–অক্সাইডের মজুদ বিশ্বের ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস চৌকাঠ এড়াতে পারার শুধু ৫০ শতাংশ সুযোগ দেয়। কিন্তু, ২০১৯ সাল নাগাদ বিশ্ব ইতিমধ্যেই ২,৩৯০ বিলিয়ন টন কার্বন ডাই–অক্সাইড বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে দিয়েছে, আর অবশিষ্ট আছে কার্বন বাজেটের মাত্র ৫০০ বিলিয়ন টন। এর পরের গণিত মোটামুটি সহজ। যদি আমরা যেমন–চলছে–চলুক ভিত্তিতে বছরে ৪০ বিলিয়ন টন নির্গত করতে থাকি, তাহলে কার্বন বাজেট ১২ বছরে শেষ হয়ে যাবে, এবং সেই সঙ্গেই ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস লক্ষ্যমাত্রা নাগালের বাইরে চলে যাবে। এর অর্থ হল মালদ্বীপ থেকে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ রাষ্ট্রগুলি পর্যন্ত জলের নিচে চলে যাবে, এবং বিশ্বের উপকূলীয় শহরগুলি বিপদের মুখে পড়বে। এবং তাই প্রতিটি দায়িত্বশীল দেশকে তার কার্বন নিঃসরণ কমাতে হবে, এবং নেট–জিরো লক্ষ্যের দিকে আরও দ্রুত এগিয়ে যেতে হবে।

এই বাজেট অনুসারে মোট ২,৮৯০ বিলিয়ন টন কার্বন ডাই–অক্সাইডের মজুদ বিশ্বের ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস চৌকাঠ এড়াতে পারার শুধু ৫০ শতাংশ সুযোগ দেয়।

এবার দেখা যাক এসব কীভাবে পঞ্জাবের সঙ্গে সম্পর্কিত। সম্পর্কিত, কারণ খড় পোড়ানোর ফলে বায়ুমণ্ডলে বার্ষিক ৯১ মিলিয়ন টন কার্বন ডাই–অক্সাইড যোগ হয়, যার সঙ্গে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কার্বন মনোক্সাইড, মিথেন ও নাইট্রাস অক্সাইড যোগ হয়। এই সংখ্যাগুলিকে একটি বৈশ্বিক পরিবারের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখুন, যাদের একটি কড়া বাজেট রয়েছে এবং প্রত্যেককে মিতব্যয়ী হতে ও প্রতিটি পয়সা সঞ্চয় করতে বলছে। অথচ সেখানে একটি বেপরোয়া বাচ্চা রয়েছে, যে অপ্রয়োজনীয়ভাবে বাজেটের একটি অংশ ব্যয় করছে।

একটি দেশের জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট স্পষ্ট ‌বর্তমান বিপদ মোকাবিলার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছার গুরুত্ব বা তার অভাব ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এবং জাইর বলসোনারোর অধীনে ব্রাজিলের অভিজ্ঞতা স্পষ্ট করেছে। এখানে, পঞ্জাবে একের পর এক সরকার এসেছে এবং গিয়েছে, কিন্তু ধান চাষ, ভূগর্ভস্থ জল হ্রাস ও খড় পোড়ানোর ধ্বংসাত্মক চক্র বছরের পর বছর অব্যাহত রয়েছে। পাকিস্তান গোত্রের বন্যার জন্য আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা, স্থিতিস্থাপক পরিকাঠামো নির্মাণ এবং প্রশমন ব্যবস্থার উপর কাজ করার পরিবর্তে আমরা আক্ষরিক অর্থে একটি অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থায় নিযুক্ত রয়েছি।

বর্তমান সরকার কি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার, রাজ্যটি ও তার জনগণের ভবিষ্যৎ রক্ষা করার, এবং ‘‌জলবায়ু–নরকের মহাসড়ক’ ধরে এগিয়ে চলা থেকে বিরত করার রাজনৈতিক ইচ্ছার পরিচয় দিতে পারবে?


এই ভাষ্যটি প্রথম ’দ্য ট্রিবিউন’-এ প্রকাশিত হয়েছিল।

মতামত লেখকের নিজস্ব।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.