Author : Manoj Joshi

Originally Published Hindustan Times Published on Mar 26, 2022 Commentaries 6 Days ago

ভারত গত দুই দশকে অন্যান্য দেশ থেকে অস্ত্র কেনা বাড়িয়েছে। কিন্তু রাশিয়ার উপর নির্ভরশীলতার অবসান ঘটাতে বেশ কিছু বছর সময় লাগবে, তাও যদি ভারতের দেশীয় শিল্প প্রকৃত অর্থে বিকশিত হয়।

প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ভাঙা কঠিন

Source Image: MEAphotogallery — Flickr

প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ভাঙা কঠিন

ইউক্রেনে বিধ্বংসী রুশ আক্রমণের অনাকাঙ্খিত ক্ষতির শিকার হতে পারে ভারত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইউএস-ইইউ)–এর নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে বিঘ্নিত করতে পারে। এখনও অবধি ভারত নিরপেক্ষ রয়েছে এবং রাষ্ট্রপুঞ্জে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে। কিন্তু শীঘ্রই আর দ্বিধাগ্রস্ত অবস্থানের জায়গা থাকবে না এবং আবহাওয়া রুক্ষ, এমনকি ঝোড়ো হয়ে উঠতে পারে। তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর কাউন্টারিং আমেরিকান অ্যাডভারসারিজ থ্রু স্যাঙ্কশনস অ্যাক্ট (ক্যাটসা)-এর মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য চাপ বাড়তে পারে। চিনকে আটকানোর লক্ষ্যে ক্রমবর্ধমান ভারত-মার্কিন জোটবদ্ধতার উপর এই ধরনের পদক্ষেপের নিজস্ব ভূ-রাজনৈতিক কুপ্রভাব পড়তে পারে।

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিষয়ে ভারতের অবস্থানের দুটি কারণ আছে। প্রথমটি হল সম্পর্কের ইতিহাস;‌ আর দ্বিতীয়টি হল ক্ষেপণাস্ত্র ও পারমাণবিক সাবমেরিনের মতো কৌশলগত অস্ত্রসহ সামরিক সরঞ্জাম, খুচরা যন্ত্রাংশ ও আনুষঙ্গিকগুলির জন্য রাশিয়ার উপর আমাদের উল্লেখযোগ্য নির্ভরতা। স্টিমসন সেন্টার–এর বিশেষজ্ঞদের ২০২১ সালের একটি সমীক্ষায় বলা হয়েছে আমাদের সামরিক বাহিনীতে গুরুত্বপূর্ণ রুশ সিস্টেম আশ্চর্যজনক ভাবে বেশি, ৮৫%। ২০০০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ভারতের অস্ত্র আমদানির ৬৬.৫% ছিল রাশিয়া থেকে।

ভারতের এখনকার কেনাকাটার মধ্যে রয়েছে আরও চারটি উচ্চ কার্যক্ষমতাসম্পন্ন এস-৪০০ সারফেস-টু-এয়ার (স্যাম) সিস্টেম, চারটি গ্রিগোরোভিচ ফ্রিগেট (দুটি ভারতে নির্মিত হবে), ২১টি মিগ-২৯ ফাইটার। এ ছাড়াও একটি আকুলা পারমাণবিক শক্তিচালিত অ্যাটাক সাবমেরিন লিজে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও কালাশনিকভ ২০৩ অ্যাসল্ট রাইফেলের জন্য বরাত দেওয়া আছে, যার ২০,০০০ কেনা হবে তৈরি অবস্থায় এবং ৫০০,০০০টিরও বেশি লাইসেন্স নিয়ে ভারতে তৈরি হবে৷ পরিকল্পনা চলছে কিছু ক্ষেপণাস্ত্র নেওয়ার, যার মধ্যে ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য হাতে–ধরা বিমানবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রও রয়েছে৷

বেশ কিছু চলতি প্রকল্প রয়েছে — লাইসেন্স নিয়ে আরও টি–৯০এস ট্যাঙ্ক ও সুখোই ৩০ এমকেআই ফাইটার তৈরি করা, এবং ব্রহ্মস মিসাইলকে হাইপারসনিক সংস্করণে উন্নীত করা। উল্লেখ্য যে রাশিয়া থেকে নিয়মিত ভাবে আমদানি করা আনুষঙ্গিক এবং উপাদানগুলি চলতি সরঞ্জাম ও লাইসেন্সপ্রাপ্ত উৎপাদন বজায় রাখার জন্য অপরিহার্য। তবে পারমাণবিক সাবমেরিন সংক্রান্ত ইন্দো-রুশ প্রকল্পগুলি সম্ভবত নিষেধাজ্ঞা থেকে সুরক্ষিত।

ভারতের এখনকার কেনাকাটার মধ্যে রয়েছে আরও চারটি উচ্চ কার্যক্ষমতাসম্পন্ন এস-৪০০ সারফেস-টু-এয়ার (স্যাম) সিস্টেম, চারটি গ্রিগোরোভিচ ফ্রিগেট (দুটি ভারতে নির্মিত হবে), ২১টি মিগ-২৯ ফাইটার। এ ছাড়াও একটি আকুলা পারমাণবিক শক্তিচালিত অ্যাটাক সাবমেরিন লিজে নেওয়া হয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চিন ও রাশিয়া জোট ও পছন্দগুলির পরিবর্তন ঘটালেও, তার বিপরীতে ইউরেশিয়ায় ভারতের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান উল্লেখযোগ্য ভাবে স্থিতিশীল ছিল। আমরা ১৯৫০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখেছি এবং ১৯৫৬ সালে হাঙ্গেরি, ১৯৮০ সালে আফগানিস্তান, এবং এখন ইউক্রেন আক্রমণ করার সময় রাশিয়ার–দিকে–ঝোঁকা নিরপেক্ষতা বজায় রেখেছি।

তার দিক থেকে প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং এখনকার রাশিয়াও কোনও রাখঢাক না–রেখে ভারতের দক্ষিণ এশিয়া নীতিকে সমর্থন করেছে। দেশটি ১৯৬১ সালে গোয়াকে মুক্ত করা সমর্থন করেছিল, ১৯৬২ সালের চিন-ভারত যুদ্ধে একটি নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রেখেছিল, এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ যুদ্ধে ভারতকে বিজয়ী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। সর্বোপরি, তারা কাশ্মীর নিয়ে ভারতকে ক্রমাগত সমর্থন করেছে, এমনকি ২০১৯ সালে সংবিধানের ৩৭০ ধারা কার্যক্ষেত্রে বাতিলের মধ্য দিয়ে রাজ্যটিকে বিভক্ত করা ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের পর্যায়ে নামিয়ে আনার সময়েও।

সোভিয়েতরা ১৯৫০ এবং ১৯৬০–এর দশকে মিগ-২১ যুদ্ধবিমান এবং ফক্সট্রট সাবমেরিনের মতো সরঞ্জাম দিয়েছিল, যার সমতুল্য কিছু দিতে আমাদের আগেকার পরামর্শদাতা ব্রিটেন অস্বীকার করেছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের বাজার মূল্য সম্পর্কে কোনও ধারণা ছিল না, এবং তাই প্রযুক্তি হস্তান্তরের সময় রুপি-রুবল বিনিময় ব্যবস্থায় এসবই অপ্রত্যাশিত কম দামে আমাদের হাতে এসেছিল। ১৯৮০–র দশক থেকে আমাদের সামরিক বাহিনীর যে আয়তন ছিল, তা আমরা কখনই পশ্চিমী সরঞ্জাম নিয়ে বজায় রাখতে পারতাম না। একজন সমালোচক তাই ক্ষুব্ধ হয়ে বলেছিলেন সোভিয়েত ব্যবস্থা এমন এক মাদকাসক্তি যা ভারত ভাঙতে পারেনি।

নয়াদিল্লি পশ্চিম থেকে কেনাকাটার মাধ্যমে ১৯৮০-র দশকে এই আসক্তি কাটিয়ে উঠতে চেয়েছিল, এবং নিজস্ব সিস্টেম তৈরি করার চেষ্টা করেছিল। আমদানি প্রায়শই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ছিল, এবং তেজস যুদ্ধবিমান ও অর্জুন ট্যাঙ্কের মতো দেশীয় কর্মসূচি হতাশ করেছিল। ভারত কোনও ধরনের কার্যকর এরিয়াল ড্রোন তৈরি করতেও সক্ষম হয়নি, যদিও আমরা ১৯৯০–এর দশক থেকে এই বিষয়ে কাজ করে আসছি।

সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে রাশিয়া তৈরি হওয়ার পর ডলারে অস্ত্র কেনা শুরু হয়েছিল। তবে এখনও রাশিয়ার থেকে ভাল ডিল পাওয়া যায়, যেমন শক্তিশালী সুখোই-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমান ও টি-৯০এস ট্যাঙ্কগুলির লাইসেন্সপ্রাপ্ত উৎপাদন ভারতকে আজ পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)–র বিরুদ্ধে অনেকটা সুবিধা দিয়েছে।

আমরা কি রাশিয়ার থেকে সরে আসতে পারি? ভারত গত দুই দশকে ফ্রান্স, ইজরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশ থেকে অস্ত্র কেনার পরিমাণ বাড়িয়েছে। এমনকি যদি ভারত আজ রাশিয়ার থেকে সমস্ত কেনাকাটা বন্ধ করে দেয়, তবে তার পরিণতি বুঝতে কয়েক দশক সময় লাগবে। কারণ ট্যাঙ্ক, যুদ্ধবিমান, জাহাজ ও আর্টিলারির মতো সিস্টেমগুলি নিয়মিত আপগ্রেড করা হয়, এবং প্রায়শই কয়েক দশক ধরে সেগুলি পরিষেবা দিয়ে থাকে।

গত দুই দশকে ভারত ফ্রান্স, ইজরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশ থেকে অস্ত্র কেনার পরিমাণ বাড়িয়েছে। এমনকি যদি ভারত আজ রাশিয়ার থেকে সমস্ত কেনাকাটা বন্ধ করে দেয়, তবে তার পরিণতি বুঝতে কয়েক দশক সময় লাগবে।

রুশ অস্ত্র শিল্প এখন মার্কিন লক্ষ্য হয়ে উঠেছে, এবং নয়াদিল্লি ও মস্কোকে সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য সৃজনশীল সমাধান নিয়ে আসতে হবে। একটি সুস্পষ্ট পদক্ষেপ হবে পুরনো রুপি-রুবল বাণিজ্যে ফিরে যাওয়া।

ভারতের একটি বড় সমস্যা হল দেশীয় প্রতিরক্ষা শিল্পকে ধারণ করার মতো পর্যাপ্ত সাধারণ শিল্প ক্ষমতার অভাব। ভারতীয় প্রতিরক্ষা উৎপাদন হয়তো এখন সবে টেক অফের পর্যায়ে পৌঁছেছে;‌ তবে এখনই উড়তে পারবে কিনা তা দেখতে হবে। আমার সহকর্মী কার্তিক বোমাকান্তি বলেছেন প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়নে (আরঅ্যান্ডডি) সরকারি বিনিয়োগ ‘‌শুধু উদ্বেগজনক নয়, হাস্যকর ভাবে কম’‌। কার্যকর নীতি ও বিনিয়োগের মাধ্যমে কী অর্জন করা সম্ভব তা দক্ষিণ কোরিয়ায় দেখা গেছে। তারা ১৯৯০–এর দশক থেকে নিজস্ব ট্যাঙ্ক ও সাবমেরিন তৈরি করেছে, এবং পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান নিয়ে কাজ করছে। তারা এখন বিশ্বের বৃহত্তম অস্ত্র রফতানিকারক দেশগুলির মধ্যে একটি। ভারতকে কিন্তু এখনও বহু দূর যেতে হবে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.