Author : Rakesh Sood

Originally Published HINDUSTAN TIMES Published on Apr 23, 2022 Commentaries 16 Days ago

সংঘাত যে ভাবেই শেষ হোক না কেন, একটি ফলাফল স্পষ্ট: পরমাণু অস্ত্র এখন থাকবে, এবং পরমাণু অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ বা পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের সম্ভাবনা আরও হ্রাস পেয়েছে।

অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের সম্ভাবনা কমার সঙ্গে সঙ্গেই পারমাণবিক ঝুঁকি বাড়ছে
অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের সম্ভাবনা কমার সঙ্গে সঙ্গেই পারমাণবিক ঝুঁকি বাড়ছে

ইউক্রেন যুদ্ধের ফলাফল ঘিরে নতুন অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন কি সামরিক চাপ আরও বাড়াবেন, না ইউক্রেনের নিরপেক্ষতা সম্পর্কিত আশ্বাস মেনে নেবেন? তিনি কি ক্রিমিয়ান উপদ্বীপে একটি করিডর পেলেই সন্তুষ্ট হবেন, না কিভের পতনের উপরেই জোর দেবেন?

সংঘাত যে ভাবেই শেষ হোক না কেন, একটি ফলাফল স্পষ্ট: পরমাণু অস্ত্র এখন থাকবে, এবং পরমাণু অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ বা পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের সম্ভাবনা আরও হ্রাস পেয়েছে।

১৯৯১ সালে, যখন পূর্ববর্তী সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৫টি স্বাধীন সার্বভৌম প্রজাতন্ত্রে বিভক্ত হয়, তখন সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতান্ত্রিক ইউনিয়নের (ইউএসএসআর)  উত্তরসূরি রাষ্ট্র হয়ে ওঠে রাশিয়া। সে সময় একটি মূল সমস্যা ছিল যে রাশিয়া ছাড়াও তিনটি প্রজাতন্ত্রে—বেলারুশ, কাজাখস্তান ও ইউক্রেনে—সোভিয়েত পারমাণবিক অস্ত্র ছিল। এর মধ্যে ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা এবং নৌবাহিনীর শিপইয়ার্ড–সহ সবচেয়ে বড় পারমাণবিক পরিকাঠামো ছিল, এবং তার হাতে ছিল প্রায় ৫,০০০ অয়্যারহেড।

পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষাস্থল সেমিপালাটিনস্ক ছিল কাজাখস্তানে। লঞ্চ কোডগুলি ছিল রুশ নেতৃত্বের কাছে, কিন্তু স্থানীয় জনগণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পারমাণবিক দক্ষতা উপলব্ধ ছিল।

তিনটি নতুন রাষ্ট্রের তাদের হাতে থাকা পারমাণবিক অস্ত্রাগারের মালিকানা দাবি করা এবং তাদের কাছে প্রচুর পরিমাণে ফিসাইল পদার্থ মজুত থাকার সম্ভাবনা প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলতসিন উভয়ের কাছেই একটি দুঃস্বপ্নের দৃশ্য ছিল। পরমাণু অস্ত্র প্রসাররোধ চুক্তি (এনপিটি), যা ১৯৬০-এর দশকের শেষের দিকে সম্পাদিত হয়েছিল, তাতে মূলত চুক্তির জীবনকাল ছিল ২৫ বছরের, এবং ১৯৯৫ সালে এর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ছিল।

এর মধ্যে বলা ছিল যে এনপিটি শুধুমাত্র সেই দেশগুলিকে পারমাণবিক–অস্ত্র রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে যারা ১ জানুয়ারি, ১৯৬৭–র আগে পরমাণু পরীক্ষা চালিয়েছিল। এই সংজ্ঞা পাঁচটি দেশকে এই স্বীকৃতির অধিকারী করেছিল—মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইউএসএসআর-এর উত্তরসূরি হিসেবে রাশিয়া ও চিন। এরাই আবার ছিল রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য এবং ভিটো দেওয়ার ক্ষমতার অধিকারী। এই পাঁচটি দেশের মধ্যে কেউই নতুন কোনও দেশকে অনুমতি দিতে রাজি ছিল না, এবং রাশিয়া বা চিন নতুন পারমাণবিক প্রতিবেশী একেবারেই চায়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে এবং রুশ ও ইউরোপীয়দের সহায়তায় এক বিশাল রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রয়াস চালানো হয় যাতে এই তিন নতুন রাষ্ট্রই স্বেচ্ছায় পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা পরিত্যাগ করে, রাশিয়াকে অস্ত্র ফেরত দেয়, এবং অ-পারমাণবিক-অস্ত্র রাষ্ট্র হিসেবে এনপিটিতে যোগ দেয়। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি (আইএইএ) পারমাণবিক কেন্দ্র ও স্থাপনাগুলির মূল্যায়ন করে, কিছু বন্ধ করে দেয় এবং অন্য কয়েকটিকে স্থায়ী পরিদর্শনের আওতায় নিয়ে আসে, এবং এভাবে তাদের নিরস্ত্রীকরণের বিষয়টি প্রত্যয়িত হয়। বেলারুশ ও কাজাখস্তান গোড়াতেই অন্যদের বক্তব্য মেনে নিয়েছিল। কিন্তু ইউক্রেনে সমস্যাটি একটি অভ্যন্তরীণ বিতর্ক উস্কে দেয়, কারণ তারা এসএস-২৪ তৈরি করত, যা কিনা ১০টি অয়্যারহেড এবং ১০,০০০ কিলোমিটার পাল্লার একটি তিন-পর্যায়ের সলিড ফুয়েল মিরভেড আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র।

সাম, দাম, দণ্ড, ভেদ (যে উপায়ে সম্ভব)–এর সংমিশ্রণ শেষ পর্যন্ত কাজ করে। ১৯৯৪ সালের ডিসেম্বরে বুদাপেস্টে একটি সম্মেলনে বেলারুশ, কাজাখস্তান ও ইউক্রেনের এনপিটি-তে যোগদানের পর নিরাপত্তা আশ্বাস সংক্রান্ত তিনটি অভিন্ন স্মারকলিপি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। বিনিময়ে এনপিটি–র তিনটি নিশ্চয়তাদানকারী রাষ্ট্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও রাশিয়া তাদের নিরাপত্তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল। অনুরূপ আশ্বাস ফ্রান্স ও চিনও পৃথক ভাবে দিয়েছিল। এর মধ্যে ছিল স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান প্রদর্শন, অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বা বলপ্রয়োগের কোনও হুমকি দেওয়া থেকে বিরত থাকা, এবং তিনটি দেশের মধ্যে যে কেউ আগ্রাসনের শিকার হলে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে প্রতিকার চাওয়া।

১৯৯৫ সালের মে মাসে এনপিটি অনির্দিষ্টকালের জন্য এবং নিঃশর্ত ভাবে বাড়ানো হয়েছিল। ২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রিমিয়াকে সংযুক্ত করার পরে বুদাপেস্ট মেমোরেন্ডাম লঙ্ঘনের প্রশ্ন উঠেছিল। রাশিয়া দাবি করে যে ক্রিমিয়ায় যা ঘটেছে তা ছিল ‘‌বিপ্লব’‌; ক্রিমিয়ায় গণভোটে স্বাধীনতার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা এবং রাশিয়ায় যোগদানের পক্ষে ভোট পড়েছিল।

রাশিয়া জানায় ক্রিমিয়ার জনগণকে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ইউক্রেনে থাকতে বাধ্য করতে রাশিয়া দায়বদ্ধ ছিল না, এবং তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করে ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে ইউরোমাইডান বিক্ষোভকে প্ররোচিত করার জন্য, যার ফলে সরকারের পতন ঘটেছিল। মার্কিন আইন বিশেষজ্ঞরা বলেন যে হেতু বুদাপেস্টের সমঝোতাটি একটি মেমোরেন্ডাম ছিল, এবং একটি চুক্তি নয়, তাই বাধ্যবাধকতাগুলি চরিত্রগত ভাবে ছিল ঘোষণানির্ভর।

ফলত খুব আশ্চর্যজনক নয় যে গত মাসে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে ভাষণ দেওয়ার সময় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বিলাপ করেছিলেন যে তাঁর দেশ এমন নিরাপত্তা আশ্বাসের বিনিময়ে পরমাণু অস্ত্র ছেড়ে দিয়েছিল যা কখনও বাস্তবায়িতই হয়নি। তিনি প্রকাশ্যে বলেন যে ইউক্রেনের বুদাপেস্ট মেমোরেন্ডাম থেকে বেরিয়ে আসা উচিৎ  কিনা তা ভেবে দেখা দরকার।।

নর্থ অ্যাটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন (ন্যাটো)–কে ইউক্রেন সংঘাত থেকে দূরে থাকার জন্য সতর্ক করে পুতিন ‘‌কখনও পৃথিবী যে পরিণতির সম্মুখীন হয়নি’‌ তার হুমকি দেন, এবং কয়েকদিন পরে ২৭ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা করেন যে ‘‌প্রতিরোধ বাহিনীকে যুদ্ধ পরিষেবার একটি বিশেষ মোডে রাখা হয়েছে’‌। তাঁর মুখপাত্র ব্যাখ্যা করেছেন যে এটি ছিল ন্যাটো এবং রুশ সৈন্যদের মধ্যে সম্ভাব্য সংঘর্ষ রোধ করার জন্য একটি প্রতিক্রিয়া। পুতিনের পারমাণবিক অত্যুক্তি ইউরোপে ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিন্দিত ও ‘‌মেনে নেওয়া যায় না এমন ভাবে উত্তেজনা বাড়ানোর’‌ প্রয়াস বলে অভিহিত হয়েছিল।

এমন নাটকীয়তা তৈরির প্রয়াস পুতিনই প্রথম করলেন, তা নয়। ২০১৭ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উত্তর কোরিয়াকে ‘‌বিশ্ব কখনও দেখেনি এমন আগুন ও ক্রোধের’‌ মুখে ফেলার হুমকি দিয়েছিলেন, যার প্রত্যুত্তরে উত্তর কোরিয়া ট্রাম্পকে ‘‌এক উদভ্রান্ত বৃদ্ধ’‌ বলে অভিহিত করে গুয়ামে আঘাত করার এবং ‘‌জায়গাটিকে আগুনে ঢেকে ফেলার’‌ হুমকি দেয়। পরে ট্রাম্প কিম জং-উনকে ‘‌নিজের এবং নিজের শাসনকালের জন্য আত্মঘাতী মিশনে যাওয়া রকেট ম্যান’‌ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন;‌ আর প্রতিক্রিয়ায় উত্তর কোরিয়া ‘মানসিক ভাবে বিকারগ্রস্ত মার্কিন বৃদ্ধকে আগুন পুড়িয়ে দমন করতে অঙ্গীকার’‌ করার কথা বলেছিল‌।

চিত্তাকর্ষক ঘটনা হল ২৭শে ফেব্রুয়ারি জাপানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে জাপানে মার্কিন পারমাণবিক অস্ত্র রাখার ধারণাটি প্রকাশ্যে এনেছিলেন, যা অতীতে জাপানে নিষিদ্ধ ছিল পরমাণু অস্ত্র সংক্রান্ত তিনটি ‘‌না’‌-এর পরিপ্রেক্ষিতে: পরমাণু অস্ত্র তৈরি করা হবে না, মজুত করা হবে না, এবং তার ভূখণ্ডের মধ্যে কোথাও তা থাকবে না। শিনজো আবের বক্তব্যের কারণ ছিল তাইওয়ান নিয়ে চিনের সঙ্গে সম্ভাব্য বিরোধ। প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা ওই ধারণাটি প্রত্যাখ্যান করলেও চিন তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে জাপানি সামরিকবাদকে দোষারোপ করে এবং এই ধরনের ধারণার নিন্দা করে।

পরমাণু শক্তিধর দেশগুলি এখন ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক বাগাড়ম্বর ও তার সঙ্গে পরমাণু অস্ত্রের নতুন ভূমিকা সংজ্ঞায়িত করার মতো নতুন নতুন পারমাণবিক ডকট্রিনের অন্বেষণ করছে। যাই হোক, অন্য প্রযুক্তিগত ভাবে সক্ষম দেশগুলি এই ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছে এবং তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত তারা নেবে। সব মিলিয়ে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের সম্ভাবনা হ্রাসের সঙ্গেসঙ্গে ২১ শতকে পারমাণবিক ঝুঁকি অনিবার্য ভাবে বাড়ছে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.