Author : Harsh V. Pant

Originally Published South Asia @ LSE Published on Sep 13, 2022 Commentaries 15 Hours ago

ভারতের স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষ পূর্ণ হওয়া উপলক্ষে এল এস ই সাউথ এশিয়া সেন্টার বহুবিধ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ভারতের পর্যালোচনার জন্য ২০২৩ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত স্মারক পোস্ট প্রকাশ করবে। এই প্রতিবেদনটিতে হর্ষ ভি পন্থ ভারতীয় বিদেশনীতির উদীয়মান অগ্রাধিকারগুলি সম্পর্কে আলোচনা করেছেন এবং দর্শিয়েছেন যে, বৈশ্বিক ক্রমের পরিপ্রেক্ষিতে দেশের অভ্যন্তরীণ আর্থ-সামাজিক বাস্তবতা এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষা থেকে উদ্ভূত ‘ইন্ডিয়া ফার্স্ট’ মনোভাব ভারতকে আগামী বছরগুলিতে কোথায় নিয়ে যেতে পারে।

আন্তর্জাতিক মঞ্চে এক উচ্চাকাঙ্ক্ষী ভারত
আন্তর্জাতিক মঞ্চে এক উচ্চাকাঙ্ক্ষী ভারত

এই বছরের প্রথম দিকে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত গুরুতর হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাপ্রবাহ  সম্পর্কে ভারতের অবস্থান পশ্চিমী দেশগুলির রাজধানীতে তীব্র বিতর্কের জন্ম দেয়।  ভারতের তরফে প্রকাশ্যে আক্রমণকারী দেশ রূপে রাশিয়ার নিন্দা না-করার দরুন নয়াদিল্লির বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে সমর্থন না-করা এবং পশ্চিমী শক্তিগুলির পক্ষ অবলম্বন না করার অভিযোগ তোলা হয়। ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এই অপবাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন যে, নির্দিষ্ট কয়েকটি দেশের কাছে গ্রহণযোগ্য না হওয়ার অর্থ এই নয় যে, ভারতের বিদেশনীতি মাঝামাঝি অবস্থানে অনড় হয়ে আছে। ‘এর অর্থ হল আমরা নিজেদের জমি সম্পর্কে সচেতন।’ তিনি বলেন, ‘ইউরোপকে এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে যে ইউরোপের সমস্যা বিশ্বের সমস্যা, কিন্তু বিশ্বের সমস্যা ইউরোপের সমস্যা নয়।’ পাশাপাশি তিনি এ কথা স্পষ্ট করে দেন যে, ‘আমরা (ভারত) বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক পঞ্চমাংশ, আমরা বর্তমানে বিশ্বের পঞ্চম কি ষষ্ঠ বৃহত্তম অর্থনীতি… আমার মনে হয়, নিজের পক্ষ অবলম্বন করার অধিকার আমার রয়েছে। নিজের স্বার্থ খতিয়ে দেখা এবং নিজস্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার অধিকারও আমার রয়েছে… পৃথিবীতে এমন কোনও দেশ নেই, যে তার নিজের স্বার্থ উপেক্ষা করে।’

এটি অবশ্যই আন্তর্জাতিক সম্পর্কের নিরিখে এক মৌলিক নীতি, যেখানে জাতীয় স্বার্থ সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং ভারতও অন্যান্য দেশের মতোই বৈদেশিক এবং জাতীয় নিরাপত্তা নীতির ক্ষেত্রে তার স্বার্থ অনুসরণ করেছে। ৭৫তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করার পাশাপাশি ‘ইন্ডিয়া ফার্স্ট’ বিদেশনীতি প্রচারের নেপথ্যে যা ভারতকে আরও বেশি আত্মপ্রত্যয়ী করে তুলেছে, তা হল দেশটির ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক, সামরিক এবং কূটনৈতিক ক্ষমতার পাশাপাশি ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদ। বর্তমানে যে কোনও বৃহৎ শক্তির তুলনায় ভারতীয়রা তাঁদের ভবিষ্যৎকে উচ্চাকাঙ্ক্ষী দৃষ্টিতে দেখেন, যা তাঁদের অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক সম্পর্কের রূপরেখা নির্ধারণ করে।

পশ্চিমী বিশ্ব ইউক্রেন সঙ্কটের নিরিখে ভারতের অবস্থান নিয়ে হতাশা প্রকাশ করলেও নয়াদিল্লি এবং পাশ্চাত্যের মধ্যে সম্পর্কের গতিশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

এর পরিণতিও যথেষ্ট লক্ষ্যণীয়। পশ্চিমী বিশ্ব ইউক্রেন সঙ্কটের নিরিখে ভারতের অবস্থান নিয়ে হতাশা প্রকাশ করলেও নয়াদিল্লি এবং পাশ্চাত্যের মধ্যে সম্পর্কের গতিশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই পশ্চিমী গণমাধ্যম ভারতকে তার গণতান্ত্রিক দায়বদ্ধতা নিয়ে জ্ঞানের বাণী শোনালেও পশ্চিমী প্রশাসনগুলি ভারতের চ্যালেঞ্জগুলি সম্পর্কে তুলনামূলক ভাবে বেশি ওয়াকিবহাল। শুনতে অবাক লাগলেও এ কথা সত্যি যে, ইউক্রেন সঙ্কট নয়াদিল্লি এবং পাশ্চাত্যকে একে অন্যের কাছে আসার এবং আরও অর্থবহ ভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে।

আন্তর্জাতিক ক্রমও দ্রুত গতিতে বিবর্তিত হচ্ছে এবং চিনের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমতার ভারসাম্যের পরিবর্তনের মতো কাঠামোগত পরিবর্তন ভারত ও পাশ্চাত্যকে একবিংশ শতাব্দীর বাস্তবতার ভিত্তিতে একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে বাধ্য করছে। একই সঙ্গে নিজের কৌশলগত অগ্রাধিকারগুলির প্রতি ভারতের প্রতিক্রিয়াও উল্লেখযোগ্য ভাবে বিবর্তিত হয়েছে। আজকের ভারতের বৈশ্বিক পরিসরে এক নতুন কণ্ঠস্বর রয়েছে যেটি স্পষ্ট, অভ্যন্তরীণ বাস্তবতায় নিহিত এবং তার অত্যাবশ্যক স্বার্থের অন্বেষণে সঙ্কল্পবদ্ধ। বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর যেমন এ বছরের ‘রাইসিনা ডায়লগ’-এ (২০২২) মন্তব্য করেন যে, বিশ্বকে খুশি রাখার চেষ্টার বদলে ‘আমাদের আত্মপরিচয়’-এর ভিত্তিতে বিশ্বের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া ঢের ভাল। ভারত যদি নিজের পরিচয় এবং অগ্রাধিকার সম্পর্কে আত্মবিশ্বাসী হয়, তা হলে বিশ্ব ভারতের শর্তেই তার সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে। বিগত কয়েক বছর ধরে নয়াদিল্লি তার প্রতিপক্ষদের সামনে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতে এবং অতীতের আদর্শগত বোঝা ঝেড়ে ফেলে মিত্র দেশগুলির সঙ্গে নতুন সম্পর্ক গড়ে তুলতে পিছপা হয়নি। ২০১৪ সালে শি জিনপিংয়ের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’কে চ্যালেঞ্জ করার মতো একমাত্র বৈশ্বিক শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করা থেকে শুরু করে নিজের সামরিক ক্ষমতা দর্শিয়ে চিনের সামরিক আগ্রাসনের জবাব দেওয়া, জোটে সম্পূর্ণ ভাবে অংশগ্রহণ না করেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে পশ্চিমী বিশ্বকে নিজের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতা বৃদ্ধির কাজে ব্যবহার করা ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই ভারত মূলত বাস্তববাদী থেকেছে এবং ক্ষমতার বিদ্যমান ভারসাম্যকে নিজেদের সুবিধার জন্য ব্যবহার করার আগ্রহ দেখিয়েছে।  বর্তমানে ভারতের প্রধান লক্ষ্য হল দেশের প্রত্যেকটি সম্ভাব্য ক্ষেত্রে নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি করা যা অংশীদার দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে। পশ্চিমী দেশগুলি, যারা সাধারণত অতীতের ভারতবর্ষের ধারণায় অভ্যস্ত, তারা বর্তমানে বৈশ্বিক মঞ্চে এমন এক ভারতীয় কণ্ঠস্বর শুনতে পাচ্ছে, যা একটি দায়িত্বশীল অংশীদার দেশের ভূমিকা পালনে অগ্রণী এবং যেটির শিকড় নিজস্ব মূল্যবোধে নিহিত হলেও বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতি পরিপূরণে কুণ্ঠিত নয়।

এবং সমগ্র বিশ্ব আঞ্চলিক চ্যালেঞ্জের নিরিখে এক অধিকতর সক্রিয় ভারতীয় প্রতিক্রিয়া লক্ষ করছে। নয়াদিল্লি কোভিড-১৯ অতিমারিতে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া প্রদর্শনের কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে, প্রতিবেশী দেশগুলিকে (পরে তা বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত হয়েছে) গুরুত্বপূর্ণ ওষুধের সরবরাহ এবং পরবর্তী সময়ে ‘ভ্যাকসিন মৈত্রী’ (ভ্যাকসিন ফ্রেন্ডশিপ) উদ্যোগের অংশ হিসেবে টিকা রফতানির মাধ্যমে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। অতি সম্প্রতি নয়াদিল্লি গুরুতর অর্থনৈতিক সঙ্কটের সঙ্গে যুঝতে থাকা শ্রীলঙ্কাকে সাহায্য করেছে, বিশেষ করে যখন চিন তার ব্যাপক অর্থনৈতিক শক্তি থাকা সত্ত্বেও এই কাজে বিন্দুমাত্র আগ্রহ দেখায়নি। ‘নেবারহুড ফার্স্ট’ কথাটি স্লোগানের সীমা ছাড়িয়ে বাস্তবে রূপান্তরিত হয়েছে। এটি এমন এক কার্যকরী বাস্তবতা, যা ভারতের বিশ্বব্যাপী কর্মসূচি অর্জনের লক্ষ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নয়াদিল্লির ‘দক্ষিণ এশিয়া’ নীতির মনোযোগ পাকিস্তান থেকে সরে এসে বঙ্গোপসাগরের সামুদ্রিক ভূগোলের দিকে স্থানান্তরিত হওয়ায় তা ভারতকে দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মাঝে একটি সেতু হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে।

বর্তমানে ভারতের প্রধান লক্ষ্য হল দেশের প্রত্যেকটি সম্ভাব্য ক্ষেত্রে নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি করা যা অংশীদার দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে।

ভারতের সম্মুখে উপস্থিত চ্যালেঞ্জগুলি গুরুতর এবং নিকট ভবিষ্যতে সেগুলির সমাধান হওয়া সম্ভব নয়। চিনের উত্থান এবং ভারতীয় স্বার্থের উপর তার আক্রমণ নয়াদিল্লিকে তার পুরনো ধারণার পুনর্মূল্যায়ন করতে বাধ্য করছে। ২০২০ সালের গলওয়ান উপত্যকা সঙ্কটের পরে ভারতের এ হেন অবস্থান যে সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত চিন-ভারত সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়া সম্ভব হবে না– একটি দুঃসাহসিক ঘোষণা নিঃসন্দেহে। তবে এখান থেকে পিছিয়ে আসা সম্ভব নয়। এ ছাড়াও বিদেশ মন্ত্রকের আকার থেকে শুরু করে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য একটি সমন্বিত, যোগদানকারী সরকারি দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করার মতো প্রাতিষ্ঠানিক বিষয়গুলির প্রতি মনোযোগ দেওয়া দরকার। তবুও এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নয়াদিল্লির তৎপরতা এক চিত্তাকর্ষক দিকে আলোচনার মোড় ঘুরিয়ে দিচ্ছে।

যেহেতু ভারত তার পারস্পরিক নির্ভরতার ৭৫তম বর্ষ উদযাপন করছে, আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার নিরিখেও ভারত একটি ‘অগ্রণী শক্তি’র ভূমিকা পালন করতে চায়, যেটি অন্যদের দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে বৈশ্বিক নিয়ম এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোকেই রূপ দেবে। এই লক্ষ্য অর্জনে এটি সেই সব দেশের সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে চায়, যারা এ কাজে তার সহায়ক হবে। পুরনো বিভেদ ঝেড়ে ফেলে নয়াদিল্লি ঘোষণা করছে যে, ভারত আর জোট নিরপেক্ষ নয়, বরং অভিন্ন স্বার্থের ভিত্তিতে কাজ করতে ইচ্ছুক। কোয়াড্রিল্যাটেরাল সিকিউরিটি ডায়লগ (কোয়াড) থেকে ব্রিকস পর্যন্ত এ ধরনের কৌশলগত অংশীদারিত্বের এক দীর্ঘ তালিকায় ভারতের নাম রয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে একে এক পুরনো পন্থা বলে মনে হলেও, নিবিড় ভাবে দেখলে এ কথা স্পষ্ট হবে যে, ভারত ক্রমশ নিজের অগ্রাধিকারগুলির স্বীকৃতি এবং প্রচারের ক্ষেত্রে আগের চেয়ে অনেক বেশি তীব্র হয়ে উঠেছে।

বর্তমান ভারত গুণমানের নিরিখে এক নতুন মাপকাঠি নির্মাণে ইচ্ছুক যা তার বৈদেশিক কার্যকলাপকেও প্রভাবিত করছে। আবশ্যিক ভাবে অতীত পন্থা থেকে উল্লেখযোগ্য বিচ্যুতি হোক বা না-হোক, এটি নিঃসন্দেহে ভারতের অভ্যন্তরীণ আর্থ-সামাজিক বাস্তবতার এক প্রতিফলন। আগামী কয়েক বছর নির্ধারণ করে দেবে যে, নয়াদিল্লি কতটা সফলভাবে বৈশ্বিক ক্রমের সীমাবদ্ধতা এবং অভ্যন্তরীণ দুর্বলতাকে অতিক্রম করে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজের উচ্চাকাঙ্ক্ষা অর্জন করতে পারবে।


এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় সাউথ এশিয়া@এলএসই-তে।

মতামত লেখকের নিজস্ব।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.