Originally Published Observer Research Foundation Published on Oct 24, 2022 Commentaries 9 Days ago

বৈশ্বিক বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানগুলির কাঠামোগত সংস্কারের জন্য নয়াদিল্লির আহ্বানের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক দায়বদ্ধতা ও উন্নয়নশীল দেশগুলির ব্যাপক প্রতিনিধিত্ব অন্তর্ভুক্ত

ভারতের সংস্কারকৃত বহুপাক্ষিকতার জন্য একটি বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা
ভারতের সংস্কারকৃত বহুপাক্ষিকতার জন্য একটি বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা

ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর (সেপ্টেম্বর ১৮–২৮) ভারতের দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক কূটনীতির একটি বিস্তৃত পরিসরের মঞ্চ তৈরি করেছে৷ এটি ছিল এক অনন্য সফর, কারণ ১৩ সেপ্টেম্বর শুরু হয়েছিল রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে, যার হাই লেভেল উইক–এ ভারতীয় প্রতিনিধি দল অংশ নিয়েছিল একটি বিশাল অভীষ্ট তালিকা নিয়ে।

সম্ভবত মন্ত্রীর বর্তমান ১১ দিনের ঘূর্ণিঝড়–কূটনীতির একমাত্র পূর্ববর্তী নজির হল সাধারণ পরিষদে তাঁর ২০১৯ সালের সফর এবং তারপরে ওয়াশিংটন ডিসি–তে সাত দিনে সাতটি থিঙ্ক ট্যাঙ্কের সামনে নীতিসংক্রান্ত বিষয়ের ব্যাখ্যা। তবুও, এই বছরের কূটনৈতিক অ্যাজেন্ডা ও আন্তর্জাতিক অবস্থান এটিকে আগের বছরগুলির থেকে বেশ কয়েকটি দিক দিয়ে আলাদা করেছে। যেখানে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন সেই সমরকন্দের সম্প্রতি সমাপ্ত সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এস সি ও) বৈঠকের পরেই ভারতের বিভিন্ন বহুপাক্ষিক ব্যস্ততা দেশের পুনর্নবীকৃত বহুপাক্ষিক কূটনীতির একটি রোড ম্যাপ প্রদর্শন করে।

নিরাপত্তা পরিষদ ঢেলে সাজা

৭৭তম সাধারণ পরিষদে ভারতের অংশগ্রহণের কেন্দ্রবিন্দু হল একটি ‘‌সংস্কারকৃত বহুপাক্ষিকতা’‌র আহ্বান, যার অর্থ রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদকে সংস্কার করে আজকের সমসাময়িক বাস্তবতার প্রতিনিধিত্বকারী আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক সংস্থায় পরিণত করা। বৈশ্বিক বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানগুলির কাঠামোগত সংস্কারের জন্য নয়াদিল্লির এই আহ্বানের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক দায়বদ্ধতা ও উন্নয়নশীল দেশগুলির ব্যাপক প্রতিনিধিত্বও অন্তর্ভুক্ত।

ভারত সহ বৈশ্বিক দক্ষিণ বা গ্লোবাল সাউথ–এর দেশগুলি, যারা ত্রাণ প্রচেষ্টা, ওষুধ বিতরণ ও ভ্যাকসিন তৈরির মাধ্যমে এগিয়ে এসেছিল, তারা বিশেষ করে নিরাপত্তা পরিষদের  সংস্কারের মাধ্যমে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্রপুঞ্জ তৈরির জন্য জায়গা তৈরি করেছে।

রাষ্ট্রপুঞ্জের মতো একটি বৈশ্বিক সংস্থায় নিরাপত্তা পরিষদে উন্নয়নশীল দেশগুলির ক্রমবর্ধমান অংশীদারি সারা বিশ্বে আস্থা অর্জন ও নেতৃত্বদানে উৎসাহিত করতে পারে। ৭৭তম সাধারণ পরিষদের থিম—‘‌আ ওয়াটারশেড মোমেন্ট: ট্রান্সফরমেটিভ সলিউশনস টু ইন্টারলকিং চ্যালেঞ্জেস’‌—ভারতকে রাষ্ট্রপুঞ্জের একটি শক্তিশালী অংশীদার হিসাবে ঠিক কেন্দ্রস্থলে রাখে।

রাষ্ট্রপুঞ্জের সংস্কারের জন্য ভারতের প্রয়াসের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হয়ে উঠেছে রাষ্ট্রপুঞ্জের কার্যকরী মূল্যায়নের মধ্যে প্রতিফলিত অন্তত তিনটি সাম্প্রতিক বৈশ্বিক ঘটনা। কোভিড–১৯ অতিমারিটি রাষ্ট্রপুঞ্জের বহুপাক্ষিকতার জন্য একটি দুর্বল মুহূর্ত ছিল। এটি রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতাগুলিকে তুলে ধরেছিল, কারণ দেশগুলি তাদের সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছিল, সরবরাহ শৃঙ্খল বাধাগ্রস্ত হয়েছিল এবং প্রায় প্রতিটি দেশেরই ভ্যাকসিনের প্রয়োজন ছিল। ভারত সহ বৈশ্বিক দক্ষিণ বা গ্লোবাল সাউথ–এর দেশগুলি, যারা ত্রাণ প্রচেষ্টা, ওষুধ বিতরণ ও ভ্যাকসিন তৈরির মাধ্যমে এগিয়ে এসেছিল, তারা বিশেষ করে নিরাপত্তা পরিষদের  সংস্কারের মাধ্যমে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্রপুঞ্জ তৈরির জন্য জায়গা তৈরি করেছে।

রাষ্ট্রপুঞ্জের চ্যুতিরেখা

দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্রপুঞ্জের নেতৃত্বাধীন বহুপাক্ষিকতা যুদ্ধ প্রতিরোধে শক্তিশালী ব্যবস্থা প্রদান করতে অক্ষম হয়েছে। চলতি রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের ছায়া এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবগুলিকে বেশ কয়েকবার অচলাবস্থার মধ্যে ফেলেছে। পশ্চিমীরা রাশিয়াকে বয়কট করার সঙ্গে সঙ্গেই নিরাপত্তা পরিষদের ভিটো বিধান অতীতের তুলনায় আরও বেশি অপ্রয়োজনীয় পর্যায়ে পৌঁছবে বলে আশা করা হচ্ছে। সাধারণভাবে, বৃহত্তর প্রতিনিধিত্ব সহ একটি সংস্কারকৃত বহুপাক্ষিকতা যুদ্ধ প্রতিরোধের জন্য গভীর আঞ্চলিক স্বার্থ তৈরি করতে পারে।

তারপর আছে চিনের উত্থান, লড়াইক্ষ্যাপা মনোভাব ও আগ্রাসন, যা দক্ষিণ চিন সাগর, ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চল হয়ে এখন ক্রমবর্ধমান বিশ্বব্যাপী ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে প্রদর্শিত হচ্ছে। এই বিষয়টিও রাষ্ট্রপুঞ্জের ঘরানার বহুপাক্ষিকতাবাদের সীমাবদ্ধতাকে বিশেষভাবে তুলে ধরেছে। চিনের ক্রমবর্ধমান আধিপত্য দেশটিকে অর্থনৈতিক ও কৌশলগতভাবে পশ্চিমকে পাশ কাটিয়ে নিজস্ব বহুপাক্ষিক ম্যাট্রিক্স তৈরি করার দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। রাশিয়া ও ইরানের আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতার পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তাইওয়ান সম্পর্কিত ব্যবস্থাগ্রহণ বাড়তে থাকলে প্রত্যাশার তুলনায় আরও দ্রুত এই পরিবর্তনগুলি শুরু করতে পারে।

রাষ্ট্রপুঞ্জ–সহ বহুপাক্ষিক সংস্থাগুলির উপর চিনের নিয়ন্ত্রণ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং সম্প্রতি তা দেখা গিয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কাউন্সিলের চিনের উইঘুরদের নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ বন্ধ করার জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জের তৎকালীন মানবাধিকার প্রধান মিশেল ব্যাচেলেটের উপর চিনের অনানুষ্ঠানিক চাপের মধ্যে। তাছাড়া, রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের বিরুদ্ধে চিনের ভিটো ক্ষমতার অবাধ ব্যবহার অব্যাহত রয়েছে।

সাম্প্রতিক ক্ষেত্রে, ২০০৮ সালের মুম্বই হামলার পরিচালনায় জড়িত লস্কর–এ–তৈবার (এল ই টি) একজন শীর্ষ অপারেটর সাজিদ মিরকে ‘‌বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদী’‌ হিসাবে তালিকাভুক্ত করার জন্য একটি যৌথ ভারত–মার্কিন প্রস্তাব চিন আটকে দিয়েছে।

তারপর আছে চিনের উত্থান, লড়াইক্ষ্যাপা মনোভাব ও আগ্রাসন, যা দক্ষিণ চিন সাগর, ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চল হয়ে এখন ক্রমবর্ধমান বিশ্বব্যাপী ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে প্রদর্শিত হচ্ছে। এই বিষয়টিও রাষ্ট্রপুঞ্জের ঘরানার বহুপাক্ষিকতাবাদের সীমাবদ্ধতাকে বিশেষভাবে তুলে ধরেছে।

পরিবর্তিত সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গত কয়েক বছরে নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কারের জন্য ভারতের চাপ বেড়েছে। এই ক্ষেত্রে ডাঃ জয়শঙ্করের জি৪ (ব্রাজিল, ভারত, জার্মানি ও জাপান) মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের আয়োজন বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। এল.৬৯ গোষ্ঠীর সঙ্গে ‘‌বহুপাক্ষিকতাকে পুনরুজ্জীবিত করা ও রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের ব্যাপক সংস্কার অর্জন’‌ নিয়ে ভারতীয় প্রতিনিধিদলের আরেকটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক পরবর্তী পদক্ষেপের পরিকল্পনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হবে। এল.৬৯  গোষ্ঠীর বিশাল সদস্যপদ এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা, ক্যারিবিয়ান ও ক্ষুদ্র উন্নয়নশীল দ্বীপরাষ্ট্রগুলি জুড়ে বিস্তৃত, এবং তা নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কারের ইস্যুতে একটি ব্যাপক বৈশ্বিক ঐকমত্য তৈরি করতে পারে।

দৃষ্টির কেন্দ্রবিন্দুতে

পুনরুজ্জীবিত বহুপাক্ষিকতার উপর ভারতের জোর দেওয়া রাষ্ট্রপুঞ্জের নেতৃত্বাধীন বহুপাক্ষিকতার একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। আঞ্চলিক দেশগুলির মধ্যে বহুপাক্ষিকতার বিকাশের জন্য বোঝা–ভাগাভাগি যখন অবিচ্ছেদ্য হয়ে উঠেছে, সেই সময় রাষ্ট্রপুঞ্জও তার প্রাতিষ্ঠানিক পরিধির মধ্যে এই জাতীয় অনুশীলনগুলিকে গ্রহণ করতে পারে। বিগত কয়েক বছরে বিশ্বব্যাপী ও আঞ্চলিক উভয় ধরনের ঘটনাতেই যেমন রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রতিক্রিয়া নেতৃত্ব ও প্রতিনিধিত্বের জন্য একটি সুস্পষ্ট স্থান তুলে ধরেছে, তেমনই তার নিজে থেকে বিশ্বব্যাপী নেতৃত্ব দেওয়ার প্রাতিষ্ঠানিক অক্ষমতাকেও চিত্রিত করেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে দেশগুলির মধ্যে তীব্র বিভাজন এবং দীর্ঘস্থায়ী অতিমারি-প্ররোচিত বিধিনিষেধের সঙ্গে রাষ্ট্রপুঞ্জের সংস্কারের প্রয়োজনও আগের চেয়ে আরও স্পষ্টভাবে অনুভূত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

রাষ্ট্রপুঞ্জের বাইরে ভারতের বিদেশমন্ত্রীর কোয়াড (অস্ট্রেলিয়া, ভারত, জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র), আই বি এস এ (ভারত, ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকা), ব্রিকস (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চিন ও দক্ষিণ আফ্রিকা), প্রেসিডেন্সি প্রো টেম্পোর সেল্যাক (কমিউনিটি অফ ল্যাটিন আমেরিকান এবং ক্যারিবিয়ান স্টেটস), ইন্ডিয়া–ক্যারিকম (ক্যারিবিয়ান কমিউনিটি) এবং আরও কিছু ত্রিপাক্ষিক গোষ্ঠীর (‌যেমন ভারত–ফ্রান্স–অস্ট্রেলিয়া, ভারত–ফ্রান্স–সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ও ভারত–ইন্দোনেশিয়া–অস্ট্রেলিয়া)‌ সঙ্গে বৈঠকে যোগদান বর্তমান সময়ে বহুপাক্ষিক ব্যবস্থা নিয়ে ক্রমবর্ধমান হতাশার মধ্যে ভারতের বিশ্ব শাসনের নতুন কাঠামোর সন্ধানকেই চিহ্নিত করে। মিঃ জয়শঙ্কর যেমন রাষ্ট্রপুঞ্জে তাঁর বক্তব্যে যথাযথভাবে এই বিষয়টির উপর আলোকপাত করেছেন যে বিশ্ব ব্যবস্থার জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং সময়ে নয়াদিল্লি ‘‌কূটনীতি এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার’‌ প্রতি তার দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করে চলেছে।


এই ভাষ্যটি প্রথমে দ্য হিন্দুতে প্রকাশিত হয়েছিল।

মতামত লেখকের নিজস্ব।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Harsh V. Pant

Harsh V. Pant

Professor Harsh V. Pant is Vice President – Studies and Foreign Policy at Observer Research Foundation, New Delhi. He is a Professor of International Relations ...

Read More +
Vivek Mishra

Vivek Mishra

Vivek Mishra is Deputy Director – Strategic Studies Programme at the Observer Research Foundation. His work focuses on US foreign policy, domestic politics in the US, ...

Read More +