Author : Sujan R. Chinoy

Issue BriefsPublished on Oct 04, 2024
ballistic missiles,Defense,Doctrine,North Korea,Nuclear,PLA,SLBM,Submarines
 The Taiwan Factor In The Us S Regional Posture

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিক দৃষ্টিভঙ্গিতে তাইওয়ান প্রসঙ্গ

  • Sujan R. Chinoy

    তাইওয়ান প্রসঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরেই জড়িত। এখনও পর্যন্ত এর কৌশলগত অস্পষ্টতা’র নীতি গণপ্রজাতন্ত্রী চিনকে (পিআরসি) বলপ্রয়োগ করা থেকে বিরত রেখেছে। তাইওয়ান প্রণালীতে পিআরসি-র দৃঢ় সামরিক অবস্থান মোকাবিলায় এই নীতিটি আদৌ টিকিয়ে রাখা যায় কি না তা একটি প্রধান প্রশ্নচিহ্ন  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামনে যে প্রশ্নটি উঠে এসেছে তা হল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আদৌ কোনও আক্রম প্রতিরোধ করার পাশাপাশি পিআরসি-সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া এড়াতে পারে কি না। পিআরসি পুনঃএকত্রীকরণের বিষয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং বলপ্রয়োগের আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছে না। সামরিক শক্তি প্রয়োগ করা হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই সংঘাতে জড়িয়ে পড়বে। অন্য দিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি তাইওয়ানের প্রলোভনে পা দিয়ে হস্তক্ষেপ না করে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে, তা হলে এই অঞ্চলে মার্কিন উপস্থিতি, প্রতিপত্তি এবং ক্ষমতা আর আগের মতো থাকবে না। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আদৌ তাইওয়ানকে সামরিক ভাবে সমর্থন জোগাবে কি না, সে বিষয়ে অবস্থান স্পষ্ট করা অবশ্য প্রয়োজন।

Attribution:

সুজন আর চিনয়, ‘দ্য তাইওয়ান ফ্যাক্টর ইন দ্য ইউএস’স রিজিওনাল পশ্চার’,  ইস্যু ব্রিফ নং ৬৭৯, ডিসেম্বর ২০২৩, অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন।

ভূমিকা

তাইওয়ানের প্রতি ক্রমবর্ধমান চিনা হুমকির আলোকে আসল প্রশ্নটি হল এই যে বর্তমান মার্কিন নীতি চিনের আক্রমণ প্রতিরোধ করতে এবং একই সঙ্গে তাইওয়ান প্রণালীতে যুদ্ধ এড়িয়ে যেতে সক্ষম হবে কি না। ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকালে দেখা যাবে, চিন প্রজাতন্ত্র (আরওসি) তখনও রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য ছিল, যখন ১৯৪৯ সালে জাতীয়তাবাদীরা তাইওয়ানে পালিয়ে যাওয়ার পরে আরওসি-র অংশ হিসেবে সমগ্র চিনের প্রতিনিধিত্ব দাবি করেছিল সে সময়ে চিমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক স্বীকৃতি উপভোগ করত।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তাইওয়ান নীতির ইতিহাসের দিকে তাকালে বোঝা যাবে ‘কৌশলগত অস্পষ্টতা’ একটি সর্বোত্তম উদাহরণ এবং তা এক প্রকারের সংশয়বাদের জন্ম দিতে পারে। তাইওয়ানে চিনা সামরিক আক্রমণের সঙ্গে জড়িত চরম পরিস্থিতির ক্ষেত্রে এই নীতিটি কাজ করবে কি না, তা-ই উদ্বেগ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান আন্তঃপ্রণালী পরিস্থিতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য তার কৌশলগত অস্পষ্টতা স্বীকার করা এবং তাইওয়ানের উপর চিনা অভিপ্রায় এবং শক্তি প্রক্ষেপণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মার্কিন অবস্থান যথেষ্ট কি না… তা পরীক্ষা করারও এক যথাযোগ্য মুহূর্ত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে তাইওয়ানকে হাতছাড়া করতে পারে না… এ বিষয়ে আরও সুস্পষ্ট প্রকাশ্য অবস্থান নিতে হবে। কারণ দ্বীপদেশটি সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে মার্কিন আঞ্চলিক অবস্থানের নিরিখে এক গুরুত্বপূর্ণ ভরকেন্দ্র।

তাইওয়ানে মার্কিন অবস্থানের ইতিহাস

কথা ক্ষ্যণীয় যে, হ্যারি ট্রুম্যান প্রশাসন ১৯৫০ সালের ৫ জানুয়ারি ফর্মোসা(ক) প্রসঙ্গে সম্পর্কে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে এবং তাতে তিনি স্পষ্টতই বলেছিলেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফর্মোসায় কোনও অধিগ্রহণমূলক অভিসন্ধি ছিল না বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আরও এবং পিআরসি-র বিদ্যমান গৃহযুদ্ধে হস্তক্ষেপ করতেও ইচ্ছুক নয়।(১) ১৯৫০ সালের ২৭ জুন কোরীয় যুদ্ধের সময় ট্রুম্যান প্রশাসন কোরীয় সংঘাত ছড়িয়ে পড়া রোধ করার জন্য তাইওয়ান প্রণালীতে নিরপেক্ষতার অবস্থানের পক্ষে সওয়াল করে আর কটি বিবৃতি জারি করে। প্রণালীতে সপ্তম নৌবহর মোতায়েন করার নেপথ্যে প্রধান লক্ষ্য ছিল শুধু মাত্র পিআরসি-কে কোন দুঃসাহসিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা থেকে বিরত রাখাই নয়, বরং মূল ভূখণ্ডে আক্রমণ করা থেকে আরওসি-কেও বিরত রাখা। প্রকৃতপক্ষে, ১৯৫০ সালের ২৭ জুনের বিবৃতিতে আরও বলা হয় যে, ‘ফর্মোসার ভবিষ্য মর্যাদা নির্ধারণের জন্য প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিরাপত্তা পুনঃস্থাপন, জাপানের সঙ্গে একটি শান্তি মীমাংসা বা রাষ্ট্রপুঞ্জের বিবেচনার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।(২) যাই হোক, রবর্তী কালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের নিরাপত্তার পক্ষে আরও স্পষ্ট অবস্থান গ্রহণ করার দিকে ক্রমশ ঝুঁকতে শুরু করেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং আরওসি-এর মধ্যে পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি

১৯৫৪ সালের ডিসেম্বর মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চিন প্রজাতন্ত্রের মধ্যে পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি’ সম্পন্ন হয়েছিল, যাকে ১৯৫৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল এবং ১৯৫৫ সালের মার্চ মাসে তা কার্যকর হয়েছিলচুক্তির অনুচ্ছেদ ২-এ উভয় পক্ষকে স্ব-সহায়তা এবং  পারস্পরিক সহায়তা দ্বারা পৃথক ভাবে এবং যৌথ ভাবে তাদের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার বিরুদ্ধে পরিচালিত সশস্ত্র আক্রমণ এবং কমিউনিস্ট ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপগুলিকে প্রতিরোধ করার জন্য তাদের ব্যক্তিগত সম্মিলিত ক্ষমতা বজায় রাখা এবং তা বিকাশ করার আদেশ দেওয়া হয়।’(৩) পঞ্চম অনুচ্ছেদে ‘পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে একটি সশস্ত্র আক্রমণকে যে কোন একটি পক্ষের অঞ্চলের বিরুদ্ধে নির্দেশিত তার নিজের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক বলে মনে করা হয় এবং বলা হয় যে, সে ক্ষেত্রে সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে অভিন্ন সাধারণ বিপদ মোকাবিলা করা হবে।’(৪) বিস্তারিত ভাবে চুক্তির ষষ্ঠ অনুচ্ছেদে তাইওয়ান পেসকাডোরসকে বোঝাতে প্রজাতন্ত্রী চি’-এর প্রেক্ষিতে ‘আঞ্চলিক এবং অঞ্চল শব্দটিকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে; এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেক্ষিতে পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপ অঞ্চলগুলিকে চুক্তিএক্তিয়ারে আনা হয়েছে। চুক্তিতে বলা হয়েছে যে, ‘অনুচ্ছেদ ২ এবং ৪-এর বিধানগুলি পারস্পরিক চুক্তি দ্বারা নির্ধারিত অন্যান্য অঞ্চলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।(৫)  তাত্ত্বিক ভাবে তাই এমনটা মনে করা হচ্ছে যে, প্রয়োজন হলে উভয় পক্ষই মূল ভূখণ্ড থেকে দূরে অবস্থিত জিনমেন মাতসুর মতো তাইওয়ানের দূরবর্তী দ্বীপগুলিতেও চুক্তির বিধানগুলি কার্যকর করতে পারে।

ক্ষ্যণীয় বিষয় হল, প্রথম তাইওয়ান প্রণালী সঙ্কটের সময় পিআরসি ১৯৫৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জিনমেনের উপর গোলাবর্ষণ করতে শুরু করেছিল এবং এর পরে মাতসু তাচেনেও একই রকমের গোলাবর্ষণ হয়েছিল, যার ফলে ডিসেম্বর মাসে পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তির সমাপ্তি ঘটে। ১৯৫৫ সালের জানুয়ারি মাসে পিআরসি আরওসি থেকে দূরবর্তী ইজিয়াংশান দ্বীপপুঞ্জ দখল করে, যদিও মার্কিন সপ্তম নৌবহর সে সময়ে কাছাকাছিই অবস্থান করছিল। পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তিটি ১৯৫৫ সালের মার্চ মাসে কার্যকর হলেও আইজেনহাওয়ার প্রশাসন ১৯৫৫ সালের জানুয়ারি মাসে ফর্মোসার রেজোলিউশনের উপর জোর দেওয়ার মাধ্যমে যে কোনও কমিউনিস্ট হামলা থেকে ফর্মোসা ও পেসকাডোরসকে সুরক্ষিত রাখার জন্য মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীকে অনুমতি দেয়। উল্লেখযোগ্য ভাবে, এই ধরনের আশ্বাসগুলি পিআরসিকে বোমাবর্ষণ করা থেকে বিরত রাখেনি এবং এই ধরনের গোলাবর্ষণ ১৯৫৫ সালের মে পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। উল্লেখযোগ্য ভাবে, ফর্মোসা রেজোলিউশনের ফলে মার্কিন সশস্ত্র বাহিনী তাচেন দ্বীপপুঞ্জকে খালি করার জন্য জাতীয়তাবাদী বাহিনীকে সহায়তা করেছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও সংক্ষিপ্ত ভাবে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করার কথা বিবেচনা করলেও সোভিয়েত ইউনিয়ন একটি বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনার দিকে ইঙ্গিত করায় এবং পিআরসি-র পক্ষে হস্তক্ষেপ করার হুমকি দিলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সীমিত হস্তক্ষেপের চিরাচরিত ঐতিহ্য মেনে নিজেকে সংযত করে নেয়।

দ্বিতীয় তাইওয়ান প্রণালী সঙ্কট ১৯৫৮ সালের অগস্ট মাসে ডংডিং দ্বীপের কাছে একটি নৌ সংঘর্ষের মাধ্যমে শুরু হয়, যখন পিআরসি সেখানে একটি নৌ অবতরণের চেষ্টা করেছিল। আকাশপথেও যুদ্ধ শুরু হয় এবং আরওসি এফ-৮৬ স্টারফাইটারগুলি পিআরসি-এর মিগ-গুলিকে হারাতে সক্ষম হত। দূরবর্তী দ্বীপপুঞ্জের হুমকিগুলি তাইওয়ানের উপর প্রত্যক্ষ প্রভাব না ফেললে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সেই বছরের শেষের দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সঙ্কটের অবসান ঘটাতে আরও কঠোর অবস্থান নিয়েছিল।  তাইওয়ানের নেতা চিয়াং কাই-শেককে এ কথা বলতে বাধ্য করা হয়েছিল যে, মূল ভূখণ্ডে [চিনা] জনগণের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করার উদ্দেশ্যে সংঘটিত ‘পবিত্র মিশন’-এর সফল বাস্তবায়নের প্রধান উপায় শক্তি প্রয়োগ নয়, বরং ‘ডঃ সান ইয়াত-সেনের থ্রি পিপলস প্রিন্সিপলস (জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র এবং সামাজিক কল্যাণ)’।(৬)

প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে তাইওয়ানকে পর্যাপ্ত পরিমাণে অস্ত্র সরবরাহ করা সত্ত্বেও কোরীয় যুদ্ধের সময় চিনের সঙ্গে সংঘর্ষে তাইওয়ানকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি দাবার ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করেনি। এ ভাবে পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি সত্ত্বেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পিআরসি-কে স্বাচ্ছন্দ্য প্রদান করার জন্য নিজের কৌশলগত অস্পষ্টতা’র নীতি ব্যবহার করেছে। পিআরসি-সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ঠিক এক বছর পরে চুক্তিটি ১৯৮০ সালের ১ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের মেয়াদে বাতিল করা হয়।

 

১৯৭৯ সালের তাইওয়ান রিলেশনস অ্যাক্ট

১৯৭৯ সালের তাইওয়ান রিলেশনস অ্যাক্ট (টিআরএ) - যা পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তিকে প্রতিস্থাপন করেছিল - মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অস্পষ্টতাকে আরও বেশি পরিসর প্রদান করেছে। টিআরএ-র কিছু প্রধান বিধানের অন্যতম হল অনুচ্ছেদ ২(খ), যার অধীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি বয়কট বা নিষেধাজ্ঞা-সহ শান্তিপূর্ণ উপায় ব্যতীত অন্য কোন উপায়ে তাইওয়ানের ভবিষ্য নির্ধারণের যে কোন প্রচেষ্টাকে বিবেচনা করতে পারে। এটি পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়’।(৭) এতে ‘তাইওয়ানকে একটি প্রতিরক্ষামূলক কাজের জন্য অস্ত্র সরবরাহ করা(৮) এবং ‘তাইওয়ানের জনগণের নিরাপত্তা বা সামাজিক বা অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে হুমকির মুখে ফেলে… এ হেন যে কোনও বলপ্রয়োগ প্রতিহত করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা বজায় রাখা’র বিষয়ে বিধান দেওয়া হয়(৯) মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে তাইওয়ানের পুনঃএকত্রীকরণের প্রেক্ষিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরপেক্ষতা টিআরএ-র বয়ানেই সুস্পষ্ট। শুধু মাত্র আক্ষরিক অর্থে পুনর্মিলন নয়, এতে শান্তিপূর্ণ পথে পুনর্মিলন অর্জনের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। টিআরএ-র  শর্তগুলি বোঝায় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের পক্ষ থেকে কোনও সামরিক আক্রমণের সম্মুখীন হবে না। তার পরের দশকগুলিতে, বিশেষ করে চেন শুই-বিয়ানের রাষ্ট্রপতিত্বের (২০০০-২০০৮) সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্ট করে দেয় যে, টিআরএ-র অধীনে তার প্রতিশ্রুতিগুলি তখনই মেনে চলা হবে, যদি তাইওয়ান ইচ্ছাকৃত একপাক্ষিক উস্কানিতে অবিচল থাকে।

বিল ক্লিনটনের তিন প্রত্যাখ্যান

তৃতীয় তাইওয়ান প্রণালী সঙ্কটের (১৯৯৫-১৯৯৬) পরে চিনের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টায় তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ১৯৯৮ সালের জুন মাসে সাংহাইতে তাইওয়ানের বিষয়ে মার্কিন নীতি সম্পর্কে কথা বলার সময় ‘থ্রি নো পলিসি’ বা ‘তিনটি না’-এর নীতি ঘোষণা করেন সেগুলি হল - তাইওয়ানের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি না দেওয়া, ‘ওয়ান চায়না ওয়ান তাইওয়ান’কে স্বীকৃতি না দেওয়া এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলিতে – যেখানে রাষ্ট্রের মর্যাদা একটি পূর্বশর্ত - তাইওয়ানের প্রতিনিধিত্বকে স্বীকৃতি না দেওয়া। এটি ইতিহাসের এই ত্যকেই দর্শায়, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্বীকার করে নিয়েছে যে, তাইওয়ান প্রণালীর উভয় পাশে সমস্ত চিনা শুধু মাত্র অখণ্ড চিনের তত্ত্বে বিশ্বাসী এবং তাঁরা মনে করেন যে, তাইওয়ান চিনে অংশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার সেই অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ করে না।(১০) এক কথায় বললে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি চিনের একতরফা বলপ্রয়োগ বা তাইওয়ানের উস্কানিকে সমর্থন না করার দ্বৈত উদ্দেশ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ

‘কৌশলগত অস্পষ্টতা’ থেকে ‘কৌশলগত স্বচ্ছতা’র অভিমুখে এগোনোর প্রয়োজনীয়তা

২০১৬ সালে ডেমোক্র্যাটিক প্রোগ্রেসিভ পার্টি-র (ডিপিপি) সাই ইং-ওয়েন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তাইওয়ান প্রণালীতে পিআরসি-র বর্ধিত শক্তি প্রদর্শনের কারণে মার্কিন নীতি কৌশলগত অস্পষ্টতা চাপের মুখে পড়েছে।  তৎকালীন ইউএস হাউস অ রিপ্রেজেন্টেটিভস-এর স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির ২০২২ সালের অগস্ট মাসের তাইওয়ান সফর উত্তেজনাকে উস্কে দেয়, যার ফলে ১৯৯৫-৯৬ সালের তাইওয়ান প্রণালী সঙ্কটের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয় এবং তাইওয়ানের সম্ভাব্য অবরোধের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়। কেউ যুক্তি দিতেপারে যে, ডিপিপি-এক চিন নীতিবা ‘১৯৯২ সালের ঐকমত্য’(খ) মেনে না নেওয়া নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও গুরুতর করে দিয়েছে। অতীতের বিপরীতে হেঁটে তাইওয়ানের নতুন প্রজন্ম আন্তঃপ্রণালী সম্পর্কের বিষয়ে ডিপিপি-র অবস্থানকে আরও বেশি সমর্থন করে। রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নির্বিশেষে যে কোন ভবিষ্য নেতৃত্বের জন্য এই সত্যটি বদলে দেওয়া কঠিন। এটি মার্কিন নেতৃত্বকে আরও স্পষ্ট অবস্থান গ্রহণের জন্য চাপ প্রদান করেছে। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে একটি টেলিভিশন সাক্ষাত্কারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্পষ্টতই বলেছিলেন যে, যে কোনও অভূতপূর্ব আক্রমণের ঘটনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানকে রক্ষা করবেযদিও হোয়াইট হাউস পরে এই বিবৃতিটি নাকচ করে দেয়।(১১) যদি পিআরসি-কে তাইওয়ানের বলপূর্বক দখলের চেষ্টা থেকে বিরত রাখতে হয়, তা হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে শক্তির মাধ্যমে পুনঃএকত্রীকরণের বিরুদ্ধে কঠোর রাজনৈতিক ও সামরিক অবস্থান বজায় রাখতে হবে এবং আলাপ-আলোচনা ও কথোপকথনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধান অর্জন করার পথই একমাত্র বিকল্প। ছাড়া অন্য যে কোনও বিকল্পই চিনের আগ্রাসী পদক্ষেপ থেকে নজর ফিরিয়ে নেওয়ার সমান এবং তথাকথিত কৌশলগত অস্পষ্টতার নীতির সীমাবদ্ধতার সমতুল্য।

ঝুঁকির মুখে পড়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাসযোগ্যতা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ক্ষমতার ভারসাম্য ও স্থিতিশীলতা সুনিশ্চিত করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এটি কোরীয় উপদ্বীপ এবং ভিয়েতনামে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। এই পদক্ষেপের লক্ষ্য ছিল উদারপন্থী ব্যবস্থা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের বিরোধী রাষ্ট্র মতাদর্শ দ্বারা ক্ষমতার ভারসাম্যের আকস্মিক একতরফা পরিবর্তন রোধ করা। কোরিয়ায় মিশ্র সাফল্য এবং ভিয়েতনামে অভূতপূর্ব নিন্দার সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও ওয়াশিংটনের অভিপ্রায় বার্তা ছিল শক্তিশালী এবং আশ্বস্তকারী। স্পষ্টতই, এই ধরনের অবস্থান আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় অবদান রেখেছে। তাই তাইওয়ানের প্রেক্ষাপটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি স্থির কঠোর শৃঙ্খলা বজায় রাখা আশু প্রয়োজন।

ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য তাইওয়ানের গুরুত্ব

এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি ঘাঁটি রয়েছে এবং জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ফিলিপিন্সের সঙ্গে এই অঞ্চলে অগণিত চুক্তি এবং জোটমূলক অংশীদারিত্ব রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া এবং তাইল্যান্ডকেও অন্তর্ভুক্ত করেছে। সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমান এবং সমগ্র অঞ্চল জুড়ে বাণিজ্যের পরিপ্রেক্ষিতে তা প্রায় দ্বিগুণ, যা রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এবং এগুলির ভবিষ্যৎকে নিরাপত্তার বেষ্টনী থেকে পৃথক করা সম্ভব নয়।

যদি তাইওয়ান পিআরসি-এর কাছে হেরে যায়, তা হলে তা শুধু মাত্র পিআরসি-কে আধুনিক প্রযুক্তি (যেমন সেমিকন্ডাক্টর বা অর্ধপরিবাহী) ব্যবহার করার অনুমতিই প্রদান করবে না, বরং একই সঙ্গে প্রযুক্তিগত মানব সম্পদের একটি প্রতিভাময় অভিজ্ঞ ভাণ্ডারের সুযোগ উন্মোচিত করবে। তাইওয়ানকে নিজের আওতায় আনার ফলে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে উচ্চতর অর্থনৈতিক উচ্চ প্রযুক্তির আন্তঃক্ষেত্রীয়তা বৃদ্ধি পাবে, যা পশ্চিমের বিকল্পগুলিকে সীমাবদ্ধ করবে এবং একটি নতুন ধরনেবৃহৎ শক্তি সম্পর্ক স্থাপনের দিকে পিআরসির উদ্দেশ্যমূলক এবং একক মনোভাবাপন্ন অগ্রগতিকে চালিত করবে। তাইপেই যদি বেজিংয়ের আওতায় আসে, তা হলে পিআরসি এমন একটি নতুন কেন্দ্র হয়ে উঠবে, যা চিনের অর্থনৈতিক উত্থানকে ত্বরান্বিত করতে পারে। পিআরসি-র অর্থনৈতিক শক্তির সামনে পড়ে তাইওয়ানের ক্ষমতা স্বাভাবিক ভাবেই হ্রাস পাবে। কিন্তু সংযুক্ত হলে তাইওয়ান চিনের অর্থনীতিতে প্রত্যক্ষ ভাবে প্রায় ৮০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যোগ করবে, যা গুণগত পরিমাণগত ভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পিআরসি-র ব্যবধানকে আরও কমিয়ে আনতে সাহায্য করবে। অবশ্যই, যুক্তি দেওয়া যেতে পারে যে, অর্ধপরিবাহী এবং অন্যান্য উচ্চ প্রযুক্তিতে তাইওয়ানের দক্ষতা বিশ্বাস নির্ভরযোগ্যতার উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে এবং তাইওয়ানকে বলপূর্বক সংযুক্ত করা হলে এ হেন সরবরাহ শৃঙ্খলগুলি সম্ভবত ভেঙে পড়বে। তাইওয়ানের একাধিক প্রকৌশলী এবং বিশেষজ্ঞ পিআরসি-এর নিয়মের অধীনে না থেকে দ্বীপদেশ ছেড়ে চলে যেতে পারেন।

পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে ক্ষমতার কৌশলগত ভারসাম্যের দৃষ্টিকোণ থেকে তাইওয়ানের পতন হবে ফার্স্ট আইল্যান্ড চেন-এ একটি সুবিশাল লঙ্ঘন এবং এটি ভূপৃষ্ঠ ও উপ-পৃষ্ঠ উভয় ক্ষেত্রেই প্রশান্ত মহাসাগরে চিনা নৌশক্তির সম্প্রসারণ ও অভিক্ষেপের পথ প্রশস্ত করবে। এর ফলে গুয়াম, সমগ্র পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর জুড়ে মার্কিন নৌবাহিনীর উপস্থিতি এবং মাইক্রোনেশিয়া, পলিনেশিয়া মেলানেশিয়াতে পাপুয়া নিউ গিনি অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল ও যোগাযোগের অন্য সামুদ্রিক পথগুলি হুমকির মুখে পড়তে পারে।

তাইওয়ানের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষ্ক্রিয়তায় জাপান সবচেয়ে বেশি আঘাত পেতে পারে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে জাপান সম্ভবত পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের জন্য উঠে পড়ে লাগবে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন নিরাপত্তা উপস্থিতি এবং নিরাপত্তা বলয়ের স্বল্প মূল্য সম্পর্কে অবগত হবে। জাপান পিআরসি-সঙ্গে একটি মোডাস ভিভেন্ডিতে পৌঁছনোর জন্য নিজস্ব পারমাণবিক প্রতিরোধের দ্বারা সমর্থিত শান্তি ক্রয়ের বিষয়ে প্রলুব্ধ হতে পারে এবং সম্ভবত এই অঞ্চলে দ্বিতীয় শ্রেণিশক্তিতে পতিত হওয়ার ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। এই ধরনের পরিস্থিতির জন্য অর্থনৈতিক পারস্পরিক নির্ভরতা ইতিমধ্যেই দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান। জাপান যদি পারমাণবিক শক্তি অর্জন করে, তা হলে দীর্ঘমেয়াদে উত্তর কোরিয়া, পিআরসি এবং জাপানের স্বাধীন হুমকির বিরুদ্ধে মাথা চাড়া দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া তার নিজস্ব পারমাণবিক শক্তি অর্জনে পিছিয়ে থাকবে না। একই ভাবে মার্কিন নিষ্ক্রিয়তার পাশাপাশি তাইওয়ানের পতন দক্ষিণ কোরিয়াকে তার নতুন ইন্দো-প্যাসিফিক দৃষ্টিভঙ্গি ত্যাগ করতে এবং কোরীয় উপদ্বীপ ও চিনকে কেন্দ্র করে অতীতের নীতিগুলিতে ফিরে যেতে বাধ্য করবে। অস্ট্রেলিয়া নিজের সমৃদ্ধির জন্য পিআরসি-র বাজারের উপর ব্যাপক ভাবে নির্ভরশীল আর কটি দেশ এবং পরিস্থিতির মুখে পড়ে অস্ট্রেলিয়াও দল বদল করতে পারে।

জাপান, তাইওয়ান, ফিলিপিন্স ইন্দোনেশিয়া জুড়ে বিদ্যমান প্রশান্ত মহাসাগর সংক্রান্ত মার্কিন দৃষ্টিভঙ্গি একটি শক্তিশালী ফার্স্ট আইল্যান্ড চেন-এর পূর্বাভাস দেয়। কমপ্যাক্ট অ ফ্রি অ্যাসোসিয়েশন (সিওএফএ) ব্যবস্থার অংশ হিসাবে মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ প্রজাতন্ত্রের গুয়াম এবং কোয়াজালিন-সহ মাত্র চারটি ঘাঁটিতেও ই দৃষ্টিভঙ্গি ছড়িয়ে পড়েছে। অন্য সিওএফএ ব্যবস্থাগুলি ফেডারেটেড স্টেটস অ মাইক্রোনেশিয়া এবং পালাউ-এর সঙ্গে সম্পর্কিত। পিআরসি এক বার তাইওয়ানের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পেলে তাইওয়ানের দক্ষিণে বাশি প্রণালী বা দ্বীপ অঞ্চলের উত্তরে মিয়াকো প্রণালী দিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরে প্রবেশের বিষয়ে চিনকে আর চিন্তা করতে হবে না। চিনের তরফে বিমান ও কেরিয়ারভিত্তিক টাস্ক  ফোর্স প্রেরণ এবং প্রশান্ত মহাসাগরের বিস্তৃত অংশে গুয়াম তার পূর্বে গভীর মারিয়ানা খাতে শব্দ তরঙ্গ প্রেরণ করার বিষয়েও আর কোনও বাধা থাকবে না। চিন এসওএসইউএস (সাউন্ড সার্ভিল্যান্স সিস্টেম) ব্যবহার করে  মার্কিন ডুবোজাহাজ নিরীক্ষণ করার ক্ষমতা উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়াতে পারে। এই সব ক্ষমতার ভারসাম্যের জন্য একটি সুবিশাল পার্থক্য ঘটাবে এবং সংঘাতের পরিস্থিতিতে বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলপথে সম্ভাব্য প্রতিকূল প্রভাব ছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ন্যান্য দেশের নৌ উপস্থিতি হুমকির মুখে পড়বে। সলোমন দ্বীপপুঞ্জে (যা কিরিবাতির সঙ্গে সঙ্গে সম্প্রতি তাইওয়ান থেকে পিআরসি-তে নিজের কূটনৈতিক স্বীকৃতির অবস্থান বদল করেছে) সাম্প্রতিক চিনা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পিআরসি-র তাইওয়ানের দখলের বিষয়টি প্রশান্ত মহাসাগর এবং তার বাইরেও গভীর প্রভাব ফেলবে।

তবে সত্যি বলতে এই অঞ্চলে মার্কিন মিত্ররা মোটেও নিষ্ক্রিয় নয়। বিশেষ করে জাপান ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্ট্র্যাটেজি, ন্যাশনাল ডিফেন্স প্রোগ্রাম গাইডলাইন এবং ডিফেন্স বিল্ডআপ প্রোগ্রামের সর্বশেষ সংস্করণের মাধ্যমে তার শান্তিবাদী প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা নীতি সক্রিয়ভাবে পর্যালোচনা করছে। ডিফেন্স বিল্ডআপ প্রোগ্রামে ২০২৭ সালের মধ্যে জাপানের প্রতিরক্ষা ব্যয়কে জিডিপি-র শতাংশে ধীরে ধীরে বৃদ্ধির পরিকল্পনা করা হয়েছে।(১২) উল্লেখযোগ্য ভাবে, ২০২৩ সালে জাপানের প্রতিরক্ষা মন্ত্র সম্পূরক বাজেটে একটি অভূতপূর্ব ট্রিলিয়ন জাপানি ইয়েন পরিমাণ অর্থের অনুরোধ জানিয়েছিল।

জাপান একটি প্রতিরক্ষামূলক প্রকৃতির সরঞ্জাম সরবরাহ তার সরকারি উন্নয়নমূলক সহায়তা কর্মসূচির প্রাপকদের স্থানীয় সক্ষমতা তৈরি করার উপায় হিসাবে সরকারি সুরক্ষা সহায়তা স্থাপন করে নিজের সীমাবদ্ধ প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি স্থানান্তর নীতিতে পরিবর্তন এনেছে। এর পাশাপাশি জাপান প্রাণঘাতী ত্রাণ অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম প্রযুক্তি স্থানান্তরের সংক্রান্ত তার দীর্ঘস্থায়ী তিনটি নীতির পরিবর্তন নিয়ে সওয়াল তুলেছে।(১৩)

বাস্তবতা হল, প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার দফতর দ্বারা পরিচালিত এই যুগান্তকারী সংস্কারগুলি জাপানি নিরাপত্তার উপর তাইওয়ানের হামলার নেতিবাচক ফলাফল মূল্যায়নকারী শিনজো আবে যুগ থেকে চলে আসা ধারাবাহিকতাকে দর্শিয়েছে। তাইওয়ানের ডি ফ্যাক্টো মিশনে স্ব-প্রতিরক্ষা বাহিনীর একজন সার্ভিং অফিসারের পোস্টিংও তাইওয়ানের বিষয়ে জাপানের অবস্থানে ধীরে ধীরে পরিবর্তনকে ইঙ্গিত দেয়।

উপসংহার

টিআরএ-র প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারা, বিশেষ করে তাইওয়ানের বলপূর্বক দখল ঠেকাতে না পারা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিপত্তি এবং বিশ্বাসযোগ্যতার জন্য একটি বড় আঘাত হবে। তাইওয়ানকে রক্ষা করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফে কোনও আনুষ্ঠানিক চুক্তি নেই বলে এই প্রসঙ্গে মার্কিন প্রবণতা আসলে জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে ভুল বার্তা প্রেরণ করবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার বিশ্বাস ক্রমশ কমবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষ্ক্রিয়তার দরুন জাপান দক্ষিণ কোরিয়াকে তাদের নিজস্ব পারমাণবিক শক্তি অর্জনে বাধ্য করবে এবং উত্তর-পূর্ব এশিয়ায় চিনা প্রভাবের বলয়ে নিজেদের পরিসর খুঁজে নেওয়ার সুযোগ করে দেবে। পিআরসি দ্বারা তাইওয়ানের সামরিক অধিগ্রহণ জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া অন্যান্য দেশকে এই অঞ্চলে মার্কিন ঘাঁটি বাহিনীকে জায়গা প্রদানের সঙ্গে জড়িত ঝুঁকিগুলি পর্যালোচনা করতে বাধ্য করবে। কৌশলগত অস্পষ্টতার মার্কিন নীতি তাইওয়ান প্রণালীতে পিআরসি দ্বারা সম্ভাব্য শক্তির ব্যবহার রোধ করার বিষয়ে ফলপ্রসূ হবে না। বিশেষ করে চিনকে নিরস্ত করতে বা তাইওয়ানকে রক্ষা করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সামরিক হস্তক্ষেপ করবে কি না, সে বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তার অবস্থান স্পষ্ট করে দিতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি তার মিত্রদের অবস্থানকে সমন্বিত করে পিআরসি-কে আটকাতে কোনও শক্তিশালী বার্তা পাঠাতে সক্ষম হয়… তা হলে অবশ্য পরিস্থিতি বদলাতে পারে

চিন ও তাইওয়ানের মধ্যে শান্তিপূর্ণ পুনর্মিলন একটি বিতর্কিত প্রশ্ন হয়ে উঠেছে। যাই হোক, তাইওয়ানের জনগণ যদি কোনভাবে এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে যায় যে, চিন কর্তৃক সামরিক দখলের ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের প্রতিরক্ষায় সাহায্য করবে না, তা হলে তা তাইওয়ানের জনগণের সম্ভাব্য ব্যর্থতাকে আরও উস্কে দেবে। এটি তাদের একটি স্বল্পমেয়াদের জন্য হলেও পুনর্মিলনের ধারণাকে মেনে নিতে বাধ্য করবে। সর্বোপরি, তাইওয়ান প্রণালীর উভয় দিকে যোগাযোগ আদান-প্রদান সম্প্রতি বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং জীবনযাত্রার মান এখন আরও বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি তাইওয়ানের প্রলোভনে পা দিয়ে হস্তক্ষেপ না করে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে, তা হলে এই অঞ্চলে মার্কিন উপস্থিতি, প্রতিপত্তি এবং ক্ষমতা আর আগের মতো থাকবে না।

পাদটীকা

[ক] তাইওয়ান দ্বীপটি আগে ফর্মোসা নামে পরিচিত ছিল।

[খ] ‘১৯৯২ সম্মতিহল দুই পক্ষের মধ্যে হওয়া একটি বৈঠকের কথিত ফলাফল, যা এক চিনীতির প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন ভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে; পিআরসি জোর দিয়ে বলে যে, এটি তাইওয়ান-সহ সমস্ত চিনের একমাত্র বৈধ প্রতিনিধি, যেখানে আরওসি-র ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটিক প্রোগ্রেসিভ পার্টি পিআরসি-র ব্যাখ্যায় একেবারেই সম্মত হয়নি।

 

১) হ্যারি এস ট্রুম্যান, ‘দ্য প্রেসিডেন্ট’স নিউজ কনফারেন্স’, (বক্তৃতা, ওয়াশিংটন ডিসি, জানুয়ারি ৫, ১৯৫০), হ্যারি এস ট্রুম্যান লাইব্রেরি

২) ট্রুম্যান, ‘প্রেসিডেন্ট’স নিউস কনফারেন্স’

৩) ইয়েল ল স্কুল, লিলিয়ান গোল্ডম্যান ল লাইব্রেরি, ‘মিউচুয়াল ডিফেন্স ট্রিটি বিটুইন দি ইউনাইটেড স্টেটস অ্যান্ড দ্য রিপাবলিক অব চায়না’

৪) ইয়েল ল স্কুল, ‘মিউচুয়াল ডিফেন্স ট্রিটি’

৫) ইয়েল ল স্কুল, ‘মিউচুয়াল ডিফেন্স ট্রিটি’

৬) অফিস অব দ্য হিস্টোরিয়ান, ‘২০৯ জয়েন্ট কমিউনিক, তাইপেই, অক্টোবর ২৩, ১৯৫৮’

৭) ইউএস কংগ্রেস, ‘তাইওয়ান রিলেশনস অ্যাক্ট অব ১৯৭৯- পাবলিক ল ৯৬-৮, ৯৬তম কংগ্রেস’

৮) ইউএস কংগ্রেস, ‘তাইওয়ান রিলেশনস অ্যাক্ট’

৯) ইউএস কংগ্রেস, ‘তাইওয়ান রিলেশনস অ্যাক্ট’

১০) অফিস অব দ্য হিস্টোরিয়ান, ‘২০৩ জয়েন্ট স্টেটমেন্ট ফলোয়িং ডিসকাশনস উইথ লিডারস অব দ্য পিপল’স রিপাবলিক অব চায়না’, সাংহাই, ফেব্রুয়ারি ২৭, ১৯৭২

১১) ‘বাইডেন টেলস ৬০ মিনিটস ইউএস ট্রুপস উড ডিফেন্ড তাইওয়ান, বাট হোয়াইট হাউস সেজ দিস ইজ নট অফিশিয়াল ইউএস পলিসি’, সিবিএস নিউজ, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২২

১২) ‘জাপান সেট টু ইনক্রিজ ডিফেন্স বাজেট টু ২% অব জিডিপি ইন ২০২৭’, নিক্কেই এশিয়া, নভেম্বর ২৮, ২০২২

১৩) ‘জাপান’স গভর্নিং পার্টিজ অ্যাড্রেস ডিফেন্স ইক্যুইপমেন্ট ট্রান্সফার রুলস’, এনএইচকে, জুলাই ৫, ২০২৪

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Author

Sujan R. Chinoy

Sujan R. Chinoy

Amb Sujan R. Chinoy is the Director General of the Manohar Parrikar Institute for Defence Studies and Analyses (MP-IDSA), New Delhi since 2019. A career ...

Read More +