ভূমিকা
ভারত এবং কোরিয়া প্রজাতন্ত্রের মধ্যে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী (এর পর থেকে দক্ষিণ কোরিয়া হিসেবে উল্লিখিত) দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক যাত্রায় একটি অনন্য এবং উল্লেখযোগ্য মুহূর্তকেই চিহ্নিত করে। এই মাইলফলকটি ভূ-রাজনৈতিক চালিকাশক্তির পাশাপাশি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার সম্ভাবনার স্বীকৃতির মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সমন্বিতকরণ এবং সুসংহতকরণের প্রেক্ষিতে উত্থিত হয়েছে। নানাবিধ উপায়ে ভারত-দক্ষিণ কোরিয়া অংশীদারিত্ব একটি স্বাভাবিক সমন্বয়বিন্দুতে এসে পৌঁছেছে এবং উভয় দেশই স্বতন্ত্র সামুদ্রিক পরিসর, তাদের নিজস্ব শক্তিশালী ভূ-রাজনৈতিক ক্ষমতা এবং বিশিষ্ট বিদেশনীতি অভিমুখের মাধ্যমে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান বজায় রেখেছে।
ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বহু শতাব্দী ধরেই বিদ্যমান, যার মূলে রয়েছে প্রাচীন বাণিজ্য এবং সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক বিনিময়। ১৯৭৩ সালে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর থেকেই কূটনৈতিক সম্পর্কের পরিধি এবং গভীরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বিবর্তনটি প্রাথমিক ভাবে অভিন্ন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, অভিন্ন অর্থনৈতিক স্বার্থ এবং বিশেষ করে উত্তর কোরিয়া ও চিনের প্রেক্ষিতে আঞ্চলিক নিরাপত্তা গতিশীলতা সম্পর্কে পারস্পরিক উদ্বেগের জন্য দায়বদ্ধ।
২০০৪ সালে দুই দেশই তাদের ‘লং-টার্ম কোঅপারেটিভ পার্টনারশিপ ফর পিস অ্যান্ড প্রসপারিটি’ বা ‘শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য দীর্ঘমেয়াদি সমবায়মূলক অংশীদারিত্ব’ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই তাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের সূচনা করে(১), যা বর্তমান বিস্তৃত অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপন করে। ২০১০ সালে তৎকালীন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি মিউং-বাকের ভারত সফরের সময় অংশীদারিত্বটি একটি ‘স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ’ বা ‘কৌশলগত অংশীদারিত্ব'(২) এবং পরে ২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাষ্ট্রীয় সফরের সময় একটি ‘স্পেশ্যাল স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ’ বা ‘বিশেষ কৌশলগত অংশীদারিত্ব’(৩)-এ উন্নীত হয়। এই ধরনের অগ্রগতি এই অঞ্চলে প্রধান অংশীদার হিসাবে উভয় দেশের একে অপরের সঙ্গে সহমত হওয়ার গুরুত্বকেও নির্দেশ করে। আর একটি উল্লেখযোগ্য সন্ধিক্ষণ ছিল ২০০৯ সালে হওয়া কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট বা সর্বাত্মক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তিতে (সিইপিএ)(৪) স্বাক্ষর, যা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। এই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলি প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা এবং সংস্কৃতির মতো পরিসরে দুই দেশের মধ্যে আদান-প্রদান বৃদ্ধি করার পাশাপাশি পারস্পরিক সম্পর্ককে একটি বৃদ্ধিমূলক গতিশীলতা প্রদান করে।
২০২২ সালে সিওলের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের প্রবর্তন এই অঞ্চলের সঙ্গে সক্রিয় ভাবে সম্পৃক্ত এবং অর্থপূর্ণ ভাবে অবদান রাখার একটি স্পষ্ট অভিপ্রায়কেই ইঙ্গিত করে।(৫) ভারত ইতিমধ্যেই ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে একটি নির্ভরযোগ্য এবং আগ্রহী অংশীদার হিসাবে স্বীকৃত হওয়ার দরুন এই দ্বিপাক্ষিক সম্পৃক্ততাকে আরও সম্প্রসারিত করার একটি দারুন সুযোগের সন্ধান পেয়েছে। নয়াদিল্লির অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি (এইপি) এবং সিওলের নিউ সাদার্ন পলিসির (এনএসপি) মধ্যে দুই দেশ অভিন্ন সাধারণ পরিসর(৬) খুঁজে পাওয়ায় উভয়ের মধ্যে ‘বিশেষ কৌশলগত অংশীদারিত্ব’ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। উভয় দেশের ইন্দো-প্যাসিফিক নীতিগুলি বৃহত্তর এবং আরও তাৎপর্যপূর্ণ সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য আদর্শ সুযোগ উপস্থাপন করে।
যেহেতু ভারত এবং দক্ষিণ কোরিয়া ক্রমবর্ধমান ভাবে ইন্দো-প্যাসিফিকের কৌশলগত তাৎপর্যকে স্বীকৃতি প্রদান করে, তাই উভয় দেশই সক্রিয় ভাবে এই অঞ্চলের জন্য তাদের নিজ নিজ কৌশল প্রণয়ন করছে, যা স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং সামুদ্রিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত যৌথ উদ্বেগ দ্বারা চালিত। দুই দেশের মধ্যে ভৌগোলিক দূরত্ব সত্ত্বেও ভারত এবং দক্ষিণ কোরিয়া এই পরিকাঠামোর মধ্যে বেশ কয়েকটি মূল নীতি এবং স্বার্থে নিজেদেরকে একত্রিত করতে সমর্থ হয়েছে।
ভারতের ইন্দো-প্যাসিফিক দৃষ্টিভঙ্গি
‘ইন্দো-প্যাসিফিক’ শব্দটি ২০০০-এর দশকে ভূ-কৌশলগত অধ্যয়নের অভিধানে প্রথম আবির্ভূত হয়, যা অনিয়মিত বিরতি সত্ত্বেও ২০১০ সাল থেকে কূটনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা লাভ করে।(৭) ২০১৮ সালের শাংরি-লা সংলাপে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণটি এই অঞ্চলের প্রতি ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরার একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত উত্থাপন করেছিল।(৮) আলোচনাটি বেশ কয়েকটি মূল বিষয়ের উপর জোর দিয়েছিল: একটি ‘অবাধ, উন্মুক্ত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক' অঞ্চল; একটি ‘অবাধ এবং উন্মুক্ত' সামুদ্রিক ব্যবস্থা; কৌশলগত ভারসাম্য; চলাচলের স্বাধীনতা; একটি নিয়মভিত্তিক বিশ্বব্যবস্থা; এবং আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলা। উল্লেখযোগ্য ভাবে এটি এ কথাই তুলে ধরে যে, ভারতের বিদ্যমান এবং সম্ভাব্য অংশীদারিত্বকে ‘নিয়ন্ত্রণমূলক' জোট হিসেবে দর্শানো হয়নি।(৯)
ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি একটি উন্মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং নিয়মভিত্তিক ব্যবস্থার আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সমাপতিত হয়, যা কেবলমাত্র সব দেশের সার্বভৌমত্বকেই সম্মান করে না, বরং তাদের আকার নির্বিশেষে, বাণিজ্যের অবাধ প্রবাহকে সুনিশ্চিত করে। এবং এই দৃষ্টিভঙ্গির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে সংযোগের গুরুত্ব, যা আন্তর্জাতিক আইন ও নিয়মের প্রতি শ্রদ্ধামূলক মনোভাবের মধ্যেই নিহিত।
এই অঞ্চলের প্রতি ভারতের অবস্থানের একটি বিশিষ্ট মনোভাব হল ‘অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি'। এই নীতি আগেকার ‘লুক ইস্ট পলিসি'র একটি বিকশিত সংস্করণ এবং অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ-ইস্ট এশিয়ান অর্গানাইজেশন (আসিয়ান) ও তার সদস্য দেশগুলির পাশাপাশি বৃহত্তর পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য শক্তির সঙ্গে তার সম্পর্ককে সশক্ত করার জন্য ভারতের সক্রিয় প্রচেষ্টাকেই তুলে ধরে। এটি অর্থনৈতিক সহযোগিতা প্রসারিত করার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক বন্ধন বৃদ্ধি এবং কৌশলগত সহযোগিতার বিকাশে আগ্রহী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (ইউএস), জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং ভারত নিয়ে গঠিত চতুর্পাক্ষিক নিরাপত্তামূলক সংলাপ বা কোয়াড্রিল্যাটেরাল সিকিউরিটি ডায়লগ (কোয়াড) একটি নিরাপদ ও সমৃদ্ধ ইন্দো-প্যাসিফিকের প্রতি ভারতের প্রতিশ্রুতিকে দর্শায়। অনানুষ্ঠানিক থাকা সত্ত্বেও জোটটির কৌশলগত গুরুত্ব রয়েছে এবং ভারতের প্রয়াস মঞ্চটিকে পুনরুজ্জীবিত করার ক্ষেত্রে একটি সুবিশাল অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। প্রকৃত পক্ষে, বিশেষত কোভিড-১৯ অতিমারির পর থেকে, কোয়াড সাম্প্রতিক বছরগুলিতে টিকা সংক্রান্ত সহযোগিতা ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা জোরদার করার মতো কার্যকলাপে সবচেয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছে এবং সফল বহুমুখী ভূমিকা পালন করেছে। আঞ্চলিক সরবরাহ শৃঙ্খল বৈচিত্র্যকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্যও এই গোষ্ঠীটি গুরুত্বপূর্ণ এবং সে ক্ষেত্রে সিওল একটি কোয়াড প্লাস সদস্য(১০) হিসেবে অঞ্চলটিতে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদানের জন্য প্রস্তুত।
ভারতের ইন্দো-প্যাসিফিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রধান দিকনির্দেশক নীতিগুলির মধ্যে অন্যতম হল বিশেষ করে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নিরিখে এই অঞ্চলে সমুদ্রপথগুলির গুরুত্বের প্রেক্ষিতে চলাচলের স্বাধীনতা। ভারত দাবি করে যে, দেশটি সামুদ্রিক পরিসরে কৃত্রিম প্রতিবন্ধকতা থেকে মুক্ত মনোভাব বজায় রাখে এবং সমুদ্রের আইন সম্পর্কিত রাষ্ট্রপুঞ্জের কনভেনশন বা ইউনাইটেড নেশনস কনভেনশন অন দ্য ল অব দ্য সি-র (আনক্লজ) সম্মান করে। মুক্ত সংযোগ এ হেন কাঠামোর উন্নয়নে মূল চালিকাশক্তি হয়ে ওঠে, যা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত গুণমান মেনে চলে এবং দেশগুলির উপর অপরিশোধযোগ্য ঋণের বোঝা চাপিয়ে দেয় না। অবশেষে, আইনের প্রশাসনের প্রতি শ্রদ্ধা ভারতের দৃষ্টিভঙ্গির উপর ভিত্তি করে সব দেশের সার্বভৌম অধিকার, অনাগ্রাসন এবং শান্তিপূর্ণ বিরোধ নিষ্পত্তির উপর জোর দেয়।
নয়াদিল্লির ইন্দো-প্যাসিফিক দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্বের অন্যতম গতিশীল ও সঙ্কটময় অঞ্চলে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, অভিন্ন সমৃদ্ধি এবং যৌথ নিরাপত্তামূলক মনোভাবকে উৎসাহিত করতে চায় এবং ২০২৩ সালে ভারতের জি২০ সভাপতিত্বের সময়েও তা প্রদর্শিত হয়েছে৷ নয়াদিল্লি পুনর্ব্যক্ত করে যে, তার স্বীকৃত মূল্যবোধ লঙ্ঘন করার ফলে সমালোচক দেশগুলির তীব্র সমালোচনা করলেও তার নীতি কোনও নির্দিষ্ট শক্তি বা দেশের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠেনি। তাই ভারত আঞ্চলিক গোষ্ঠীগুলিকে একচেটিয়া জোট হিসাবে দেখতে দ্বিধাগ্রস্ত হলেও সমগ্র পরিসর বা বিস্তৃতি জুড়ে গঠনমূলক অংশীদারিত্বকে উৎসাহিত করার বিষয়ে আগ্রহ প্রদর্শন করেছে। সংক্ষিপ্ত নিবন্ধটিতে এই বিশ্বাসের উপরেই আলোকপাত করা হয়েছে যে, বেজিং সম্পর্কে উদ্বেগগুলি এই অঞ্চলে সমবায়মূলক শৃঙ্খলগুলির সম্প্রসারণকে চালিত করছে এবং এই শৃঙ্খলগুলিকে স্থিতিশীল করে তোলার জন্য তাড়াহুড়ো করার বদলে সহযোগিতামূলক কর্মসূচিকে অবশ্যই ইতিবাচক হয়ে উঠতে হবে।(১১)
দক্ষিণ কোরিয়ার নিউ সাদার্ন পলিসি (এনএসপি) এবং ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল
দক্ষিণ কোরিয়ার নিউ সাদার্ন পলিসি (এনএসপি) নানা দিক থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রকাশিত তার ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের একটি স্বাভাবিক পূর্বসূরির ভূমিকা পালন করেছে। এনএসপি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ভারতের প্রতি তার কৌশলগত ভরকেন্দ্রের প্রতীক এবং গভীর সম্পর্ক, সহযোগিতা ও সম্পৃক্ততার উপর জোর দেয়। প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইনের (২০১৭-২০২২) মেয়াদকালে প্রবর্তিত এনএসপি দক্ষিণ কোরিয়ার কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততাকে বৈচিত্র্যময় করে তোলার এবং প্রধান শক্তিগুলির উপর তার অত্যধিক নির্ভরতা কমানোর উচ্চাকাঙ্ক্ষার একটি প্রমাণ স্বরূপ। এনএসপি তিনটি স্তম্ভের উপর নির্মিত: জনগণ, শান্তি এবং সমৃদ্ধি। প্রতিটি স্তম্ভ দক্ষিণ কোরিয়ার বৃহত্তর ভূ-রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক আকাঙ্ক্ষার একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য পূরণ করে (দ্রষ্টব্য সারণি ১)।
সারণি ১: আরওকে-র নতুন দক্ষিণী নীতির স্তম্ভ
জনগণ
|
শান্তি
|
সমৃদ্ধি
|
এই স্তম্ভের লক্ষ্য হল আন্তঃব্যক্তি সংযোগ এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়কে তীব্রতর করা। শুধুমাত্র মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক বৃদ্ধির উপরেই নয়, বরং পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সাংস্কৃতিক উপলব্ধি লালন করার উপরও মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া পারস্পরিক পর্যটন পরিদর্শন বৃদ্ধি, ভিসা প্রক্রিয়ার সহজকরণ এবং গভীর সাংস্কৃতিক পরিচিতি ও সখ্য বৃদ্ধির জন্য শিক্ষাগত আদান-প্রদানের কথাও চিন্তাভাবনা করছে।
|
ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের জটিল নিরাপত্তামূলক
গতিশীলতার পরিপ্রেক্ষিতে ‘শান্তি' স্তম্ভের উপর দক্ষিণ কোরিয়ার জোর দেওয়া আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার নিরিখে
একটি স্পষ্ট অঙ্গীকার। এতে প্রতিরক্ষা, সন্ত্রাসবাদ, জলদস্যুতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং নৌচলাচলের স্বাধীনতা সুনিশ্চিত করা-সহ সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টা জড়িত। শান্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়া একটি দায়িত্বশীল আঞ্চলিক অংশীদার হিসাবে তার ভূমিকার পুনরাবৃত্তি করার পাশাপাশি অনাগ্রাসন এবং শান্তিপূর্ণ সংঘাত সমাধানের নীতিগুলির সমর্থন করে।
|
অর্থনৈতিক সহযোগিতা সমৃদ্ধির স্তম্ভের মূলে জায়গা করে নিয়েছে। প্রযুক্তি স্থানান্তর, সহযোগিতামূলক গবেষণা ও উন্নয়ন, অবকাঠামোমূলক
প্রকল্প এবং ডিজিটাল অর্থনীতিকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য এটি চিরাচরিত বাণিজ্যের ঊর্ধ্বে প্রসারিত হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া পারস্পরিক অর্থনৈতিক সুবিধা সুনিশ্চিত করার পাশাপাশি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং ভারতের ক্রমবর্ধমান বাজারগুলিতে প্রবেশ করার জন্য তার প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং শিল্প শক্তিকে কাজে লাগাতে আগ্রহী।
|
সূত্র: লেখকের নিজস্ব
এই সারমর্মে এনএসপি দক্ষিণ কোরিয়ার কৌশলগত পুনর্নির্মাণকে প্রতিফলিত করার পাশাপাশি তার দক্ষিণের প্রতিবেশীদের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসাবে অগ্রাধিকার প্রদান করে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের ভূ-রাজনীতি দ্রুত বিবর্তিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এনএসপি একটি ভারসাম্যপূর্ণ, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং ছন্দোময় আঞ্চলিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার নীলনকশা হিসাবে কাজ করে, যেখানে প্রতিযোগিতার ঊর্ধ্বে উঠে সহযোগিতাই হল পথপ্রদর্শক মন্ত্র।
ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলটি এনএসপি-র একটি প্রাকৃতিক সম্প্রসারণ হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। পূর্ব এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসাবে দক্ষিণ কোরিয়া ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যে ক্রমবর্ধমান আন্তঃসংযোগকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই সংযোগ অর্থনৈতিক কার্যকলাপ, সামুদ্রিক নিরাপত্তা এবং ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এটি তার বিকশিত বৈদেশিক নীতি এবং আঞ্চলিক সমীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের উচ্চাকাঙ্ক্ষার প্রমাণ স্বরূপ। এর মূলে কৌশলটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চিনের মতো বিশ্বশক্তি দ্বারা চিহ্নিত জটিল ভূ-রাজনৈতিক পরিসরে পথ করে নেওয়ার জন্য সিওলের একটি প্রয়াসসম, যা ইন্দো-প্যাসিফিকের প্রতি প্রতিযোগীমূলক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখে।
কৌশল নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, প্রথমত, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে স্বাধীনতা, শান্তি এবং সমৃদ্ধি বিশ্বের কল্যাণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই লক্ষ্যগুলি অর্জনের জন্য নিয়মভিত্তিক শৃঙ্খলা এবং ইন্দো-প্যাসিফিকের বিভিন্ন দেশের মধ্যে ছন্দোময় সহাবস্থান ও সমৃদ্ধির মাধ্যমে এই অঞ্চলের অভ্যন্তরে ও বাইরের দেশগুলির মধ্যে বর্ধিত সহযোগিতা প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, নথিতে স্পষ্টতই বলা হয়েছে যে, আরওকে একটি ‘আন্তর্জাতিক প্রধান রাষ্ট্র' হয়ে উঠতে আগ্রহী এবং এই অঞ্চলে আরও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এটির লক্ষ্য হল ৭.৩ মিলিয়ন কোরীয় প্রবাসীর সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো, যাঁরা এই অঞ্চলের উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণে অবদান রাখতে পারেন। তৃতীয়ত, নথিটিতে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, আরওকে বিভিন্ন দেশের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলগুলিতে বর্ণিত অভিন্ন উদ্দেশ্য ও নীতিগুলির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সব দেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
চতুর্থত, এই ভাবনাকেই এগিয়ে নিয়ে যেতে আরওকে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকগুলি ন’টি অগ্রাধিকারের উপর মনোনিবেশ করে এই ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নির্মাণ করবে। এর পাশাপাশি, কোরিয়া-আসিয়ান সলিডারিটি ইনিশিয়েটিভের মতো স্বতন্ত্র সুনির্দিষ্ট নীতি উদ্যোগগুলি উপ-অঞ্চলে সতর্কতার সঙ্গে প্রণয়ন করা হবে। এই প্রচেষ্টাগুলির লক্ষ্য হল আরওকে-র বিদেশনীতির সুসংহততা ও পূর্বাভাসযোগ্যতা বৃদ্ধি করা এবং এর অংশীদারিত্বের পরিধিকে প্রসারিত করা।
দক্ষিণ কোরিয়ার কৌশল আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও সহযোগিতার প্রচারে তার প্রতিশ্রুতিকেও তুলে ধরে। সর্বোপরি, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলটি মালাক্কা প্রণালীর মতো গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক চোকপয়েন্টের আবাসস্থল, যা বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য অপরিহার্য। এই অঞ্চলে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়ার লক্ষ্য হল সামুদ্রিক নিরাপত্তায় অবদান রাখা এবং বাণিজ্যের অবাধ প্রবাহকে সুনিশ্চিত করা, যার উপর তার রফতানিভিত্তিক অর্থনীতি ব্যাপক ভাবে নির্ভর করে। এর পাশাপাশি, কৌশলটি দক্ষিণ কোরিয়াকে আসিয়ানের দেশগুলি এবং ভারতের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলার সুযোগ করে দেয়, যারা আঞ্চলিক শক্তির ভারসাম্যের ক্ষেত্রে প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়া শুধু মাত্র তার অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক অংশীদারিত্বকেই বৈচিত্র্যময় করতে আগ্রহী নয়, বরং বিশ্ব শক্তির সঙ্গে সেতুবন্ধন করতে ইচ্ছুক এবং এ ভাবে আঞ্চলিক কূটনীতিতে নিজের ভূমিকাকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে চায়।
সর্বোপরি, উত্তর কোরিয়ার প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ কোরিয়ার ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের তাৎপর্যও বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে অংশীদারিত্বকে জোরদার করার মাধ্যমে সিওল সম্ভাব্য ভাবেই উত্তর কোরিয়া প্রসঙ্গটি মোকাবিলা করার প্রচেষ্টায় আরও সমর্থন ও সহযোগিতা অর্জন করতে পারে এবং তা এ কথাই সুনিশ্চিত করে যে, এটি আঞ্চলিক কর্মসূচির অগ্রাধিকারেই স্থান করে নিয়েছে।
সমন্বয়ের প্রধান ক্ষেত্র
সিওলের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার প্রতি সিওলের সম্পৃক্ততার জন্য নয়াদিল্লি সর্বোত্তম পছন্দ। শুধুমাত্র ডিজিটাল অর্থনীতি ও উন্নয়নে তার অগ্রগতির কারণেই নয়, বরং শক্তিশালী অর্থনৈতিক ক্ষমতা ও দৃঢ় রাজনৈতিক সদিচ্ছাসম্পন্ন একটি গণতান্ত্রিক দেশ হওয়ার দরুন ভারত দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য স্বাভাবিক পছন্দ হয়ে উঠেছে। কৌশলগত নথিটিতে(১২) ভারতকে অভিন্ন মূল্যবোধের সঙ্গে একটি নেতৃস্থানীয় আঞ্চলিক অংশীদার হিসাবে স্বীকার করা হয়েছে এবং ভারতের সঙ্গে কৌশলগত মৈত্রীকে উন্নীত করার জন্য একটি কর্মপন্থা নির্ধারণ করা হয়েছে। নথিটিতে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে যে, ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনসংখ্যা নিয়ে গর্বিত এবং তথ্যপ্রযুক্তি ও মহাকাশ প্রযুক্তির অগ্রভাগে দাঁড়িয়ে উন্নয়নের নিরিখে দেশটি অপার সম্ভাবনাময়ও বটে। দক্ষিণ কোরিয়া তাই আরওকে-ভারত ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তির (সিইপিএ) সম্প্রসারণ করে বর্ধিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের ভিত্তিকে শক্তিশালী করে তোলার পাশাপাশি উচ্চতর কূটনৈতিক এবং প্রতিরক্ষা স্তরের মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে কৌশলগত সংলাপ ও সহযোগিতাকে জোরদার করার লক্ষ্যে ব্রতী।
২০০৪ সালেও এমনটা ঘটেছিল - যে বছর কৌশলগত সম্পর্কের ভিত্তি রচিত হয়েছিল - যে ভারতীয় সামুদ্রিক মতবাদটি বা ইন্ডিয়ান মেরিটাইম ডকট্রিনে আটলান্টিক-প্রশান্ত মহাসাগর থেকে প্রশান্ত মহাসাগরীয়-ভারতীয় অঞ্চলে স্থানান্তরিত হওয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক অগ্রাধিকারগুলিতে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের ইঙ্গিত প্রদান করে। এর ফল স্বরূপ, ভারত মহাসাগরের সীমানা ছাড়িয়ে এর প্রসার ঘটে এবং পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর দীর্ঘকাল ধরে ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা স্বার্থের পরিসর হিসাবে স্বীকৃত হয়েছে।(১৩) জানুয়ারি মাসে জি২০-র ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্সিয়াল আর্কিটেকচার ওয়ার্কিং গ্রুপের উদ্বোধনী বৈঠকে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিনিধি দল জোর দিয়েছিল যে, ভারত শুধু মাত্র তার উল্লেখযোগ্য অর্থনীতি এবং জনসংখ্যা দ্বারা সমর্থিত এক সামরিক শক্তিই নয়, বরং কূটনৈতিক ক্ষমতাসম্পন্নও বটে।(১৪)
সারণি ২: সমন্বয়ের মূল আলোচ্যক্ষেত্র
ভূ-রাজনৈতিক বিন্যাস
|
ভারত এবং দক্ষিণ কোরিয়া উভয়ই ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে একটি নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তারা আঞ্চলিক বিরোধ, নৌচলাচলের স্বাধীনতা এবং কোনও একটি আধিপত্যবাদী শক্তিকে এই অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করতে বাধা দেওয়ার মতো চ্যালেঞ্জের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে।
|
নিরাপত্তামূলক সহযোগিতা
|
উভয় দেশই ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে শক্তিশালী নিরাপত্তামূলক অংশীদারিত্বের গুরুত্ব স্বীকার করে নেয়। এর মধ্যে রয়েছে যৌথ সামরিক মহড়া, তথ্য আদান-প্রদান এবং জলদস্যুতা ও সন্ত্রাসবাদের মতো আন্তর্জাতিক হুমকি মোকাবিলায় সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টা।
|
অর্থনৈতিক স্বার্থ
|
ভারত এবং দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্ব অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য শক্তি এবং উভয় দেশেরই ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে অর্থনৈতিক সমন্বয় এবং সংযোগ ব্যবস্থার প্রচারে দৃঢ় আগ্রহ রয়েছে। দুই দেশই এই অঞ্চলে উন্নয়ন, বাণিজ্য এবং বিনিয়োগকে সমর্থন করার জন্য তাদের অর্থনৈতিক শক্তিকে কাজে লাগাতে আগ্রহী।
|
অবকাঠামো উন্নয়ন
|
ভারতের ‘অ্যাক্ট ইস্ট' নীতি এবং দক্ষিণ কোরিয়ার ‘নিউ সাদার্ন পলিসি’ দুই-ই ইন্দো-প্যাসিফিকের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর উন্নয়নের উপর জোর দেয়। এর মধ্যে রয়েছে বন্দর, রাস্তা এবং অন্যান্য সংযোগ প্রকল্প, যার লক্ষ্য হল আঞ্চলিক সমন্বিতকরণ এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধিকে সুনিশ্চিত করা।
|
সাংস্কৃতিক এবং শিক্ষাগত বিনিময়
|
ভারত এবং দক্ষিণ কোরিয়া সাংস্কৃতিক বিনিময় ও শিক্ষাগত সহযোগিতার জন্য প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে। এটি দুই দেশের মধ্যে গভীর বোঝাপড়াকে উৎসাহিত করার পাশাপাশি জনগণের মধ্যে সম্পর্ককে শক্তিশালী করে।
|
পরিবেশগত দায়িত্ব
|
ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়া উভয়ই ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে স্থিতিশীল উন্নয়ন এবং পরিবেশ সংরক্ষণের গুরুত্ব স্বীকার করে নিয়েছে। দুই দেশই দূষণহীন জ্বালানি, জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন এবং সামুদ্রিক সম্পদের সুরক্ষা সম্পর্কিত উদ্যোগে একসঙ্গে কাজ করার লক্ষ্যে ব্রতী।
|
বহুপাক্ষিক এবং আঞ্চলিক মঞ্চ
|
ভারত এবং দক্ষিণ কোরিয়া ইন্দো-প্যাসিফিক সম্পর্কিত বিভিন্ন আঞ্চলিক মঞ্চ এবং বহুপাক্ষিক সংস্থাগুলিতে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে রয়েছে আসিয়ান-নেতৃত্বাধীন ব্যবস্থা, কোয়াড এবং পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলন। দুই দেশই নিজেদের অভিন্ন উদ্দেশ্যগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এই মঞ্চগুলি ব্যবহার করতে আগ্রহী।
|
প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবন
|
উভয় দেশেরই উন্নত প্রযুক্তি ক্ষেত্র রয়েছে এবং দুই দেশই ইন্দো-প্যাসিফিককে প্রযুক্তিগত সহযোগিতার পরিসর হিসেবে মনে করে। এর মধ্যে রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সাইবার নিরাপত্তা এবং উদীয়মান প্রযুক্তির মতো ক্ষেত্র, যেখানে দুই দেশই একে অপরের শক্তির পরিপূরক হয়ে উঠতে পারে।
|
প্রধান শক্তিগুলির সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখা
|
ভারত এবং দক্ষিণ কোরিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চিনের মতো প্রধান ইন্দো-প্যাসিফিকের শক্তিগুলির সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখে। তারা নিজস্ব কৌশলগত স্বার্থ রক্ষা করার পাশাপাশি সব অংশীদারের সঙ্গে গঠনমূলক ভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার লক্ষ্যে আসীন।
|
সূত্র: লেখকের নিজস্ব
· ভূ-রাজনৈতিক বিন্যাস
ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়া ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিয়মভিত্তিক ব্যবস্থা বজায় রাখার প্রতিশ্রুতিতে অভিন্ন ভিত্তি খুঁজে পেয়েছে। এই অভিন্ন উদ্দেশ্য অঞ্চলটির সমৃদ্ধির জন্য স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার গুরুত্ব সম্পর্কে তাদের পারস্পরিক স্বীকৃতি থেকে উদ্ভূত। উভয় দেশই আঞ্চলিক বিরোধ, আগ্রাসী সামুদ্রিক দাবি এবং নৌ চলাচলের স্বাধীনতা সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জের মতো আন্তর্জাতিক আচরণের প্রতিষ্ঠিত নিয়মের সম্ভাব্য ব্যাঘাত সম্পর্কে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন। উভয় দেশই সামুদ্রিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য একটি মৌলিক কাঠামো হিসাবে আনক্লজ-সহ আন্তর্জাতিক আইনের নীতিগুলির উপর জোর দেয়। দুই দেশই শান্তিপূর্ণ, কূটনৈতিক সমাধানের পক্ষে এবং আঞ্চলিক দাবি নিষ্পত্তির জন্য বলপ্রয়োগ করার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছে।
আঞ্চলিক মঞ্চ এবং বহুপাক্ষিক সংস্থাগুলিতে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই ভূ-রাজনৈতিক নীতিগুলির ক্ষেত্রে ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়ার অভিন্নতাও স্পষ্ট। দুই দেশই আঞ্চলিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার লক্ষ্যে আলোচনা ও উদ্যোগে সম্পৃক্ত। যেমন আসিয়ান-এর নেতৃত্বাধীন মঞ্চগুলি, যা ইন্দো-প্যাসিফিক দেশগুলির মধ্যে আলাপ-আলোচনা এবং সহযোগিতার পথ প্রশস্ত করে দেয়।
তাদের ভূ-রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির সহাবস্থানের দরুন ভারত এবং দক্ষিণ কোরিয়া ইন্দো-প্যাসিফিকের একটি স্থিতিশীল পরিবেশে অবদান রাখার লক্ষ্যে আসীন। এটি কেবল মাত্র তাদের নিজস্ব জাতীয় স্বার্থকেই চরিতার্থ করে না বরং অর্থনৈতিক বৃদ্ধি, উন্নয়ন ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও উপকৃত করে। তারা একসঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যাতে ইন্দো-প্যাসিফিক এমন একটি অঞ্চল হিসেবে উত্থিত হয়, যা আন্তর্জাতিক নিয়ম এবং আইনের প্রশাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
· অবকাঠামোমূলক উন্নয়ন
ভারত এবং দক্ষিণ কোরিয়া উভয়ই তাদের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলগুলির ভিত্তি হিসাবে অবকাঠামোমূলক উন্নয়নের উপর জোর দেয়। অর্থনৈতিক বৃদ্ধি এবং আঞ্চলিক সমন্বিতকরণে সংযোগ যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তা স্বীকার করে নিয়ে দুই দেশ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে অবকাঠামোর নির্মাণ ও সংস্কার সংক্রান্ত উদ্যোগে সক্রিয় ভাবে জড়িত।
বন্দর এই অবকাঠামোমূলক কর্মসূচির একটি মূল উপাদান। ভারত এবং দক্ষিণ কোরিয়া বন্দরগুলিকে সামুদ্রিক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কার্যকলাপের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার পাশাপাশি সেগুলির সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণে বিনিয়োগ করছে। বিশ্ব-মানের বন্দর সুবিধাগুলি বিকাশের মাধ্যমে দুই দেশই এই অঞ্চলে ও তার বাইরে পণ্যের মসৃণ ও আরও সুদক্ষ চলাচলের লক্ষ্য স্থির করেছে। এর পাশাপাশি দুই দেশ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যৌথ অবকাঠামো প্রকল্পের সম্ভাবনার অন্বেষণ করছে। বন্দর, রাস্তা এবং অন্যান্য সংযোগ-সম্পর্কিত উদ্যোগ নির্মাণে সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টা কেবল অর্থনৈতিক সম্পর্ককেই শক্তিশালী করে না, বরং ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্বকেও গভীরতর করে তোলে।
প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের অধীনে বর্তমান প্রশাসনিক কৌশলের মধ্যে রয়েছে প্রয়োজনীয় ডিজিটাল অবকাঠামো, স্বয়ংক্রিয় বন্দর এবং পরিবেশবান্ধব স্বায়ত্তশাসিত জাহাজ দ্বারা সমর্থিত দেশের রফতানি ও আমদানির সুবিধার্থে একটি শক্তিশালী সরবরাহ শৃঙ্খল নির্মাণ করার প্রয়াস। একটি নির্ভরযোগ্য বণ্টনমূলক শৃঙ্খল গড়ে তোলা এই প্রচেষ্টাগুলির পরিপূরক হয়ে উঠবে, যা দক্ষিণ কোরিয়ার জাহাজগুলির পরিবহণ ক্ষমতাকে সম্প্রসারিত করে এবং বন্দর ও বিতরণ কেন্দ্রগুলির মতো বিদেশি বণ্টন কেন্দ্রগুলিকে সুরক্ষা জোগায়।(১৫)
এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সরকার সামুদ্রিক অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত। এই পরিসরে দক্ষিণ কোরিয়ার উন্নত প্রযুক্তিগত দক্ষতার পরিপ্রেক্ষিতে জাহাজ নির্মাণে সহযোগিতার জন্য চুক্তিগুলি ইতিমধ্যেই কার্যকর রয়েছে। প্রতিরক্ষামূলক এবং বাণিজ্যিক বাস্তবায়ন… উভয় ক্ষেত্রেই এই অঞ্চলটিকে প্রায়শই ভারতীয় সামুদ্রিক ক্ষেত্রে একটি সুযোগ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।(১৬) হিন্দুস্থান শিপইয়ার্ড লিমিটেড এবং কোরিয়া শিপইয়ার্ডের সহযোগিতায় নৌ জাহাজ নির্মাণের আধুনিকীকরণের উদ্দেশ্যে বিদ্যমান প্রকল্পগুলির পাশাপাশি কোরিয়ার এসটিএক্স অফশোর অ্যান্ড শিপবিল্ডিং কোম্পানি ও গেইল ইন্ডিয়া লিমিটেডের মধ্যে এলএনজি জাহাজ নির্মাণ প্রযুক্তির(১৭) বিনিময় এ হেন সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টার উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। কার্যকর সহযোগিতা এবং সক্ষমতা নির্মাণ ছাড়াও সামুদ্রিক সহযোগিতা জোরদার করার জন্য আরও নানাবিধ প্রতিশ্রুত উপায় রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান, সামুদ্রিক পরিসরে সচেতনতা, সামুদ্রিক দূষণের বিরুদ্ধে লড়াই, মানবিক সহায়তা ও দুর্যোগে ত্রাণ প্রদান, সন্ত্রাসবাদ ও পাচার বিরোধী কার্যকলাপ, সামুদ্রিক দূষণ প্রতিরোধ এবং জলদস্যুতা বিরোধী কার্যক্রম।(১৮)
এ ছাড়াও, অবকাঠামোর উপর গুরুত্ব প্রদান সংযোগ বৃদ্ধি করতে বৃহত্তর আঞ্চলিক প্রচেষ্টার সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ। এশিয়া-আফ্রিকা গ্রোথ করিডোর (এএজিসি) এবং মাস্টার প্ল্যান অন আসিয়ান কানেক্টিভিটির (এমপিএসি) মতো উদ্যোগগুলি আঞ্চলিক সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা বৃদ্ধির জন্য যৌথ স্বার্থের দেশগুলিকে একত্রিত করার পাশাপাশি সমবায়মূলক অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য পরিকাঠামো প্রদান করে।
· বহুপাক্ষিক এবং আঞ্চলিক মঞ্চ
সিওল এবং নয়াদিল্লি উভয়েরই আসিয়ান, ইন্ডিয়ান ওশন রিম অ্যাসোসিয়েশন এবং কোয়াডের মতো আঞ্চলিক সহযোগিতামূলক কাঠামোর মধ্যে বিষয়ভিত্তিক মিথস্ক্রিয়া স্থাপনের জন্য গভীর আগ্রহ আছে এবং তারা ভাল অবস্থানে আসীন। কার্যকারিতাভিত্তিক এবং ক্ষেত্রনির্দিষ্ট ক্ষুদ্র ও আংশিক সহযোগিতার আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক উভয় ধরনের বিন্যাসেরই সম্ভাবনা রয়েছে। আরওকে বিশেষ করে অতিমারি চলাকালীন কোয়াডের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার আগ্রহ প্রদর্শন করেছে এবং কোয়াড-প্লাস ব্যবস্থায় সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করার সম্ভাবনা রয়েছে, যা সম্ভাব্য ভাবেই গোষ্ঠীটিতে দক্ষিণ কোরিয়াকে পূর্ণ সদস্যতার দিকে চালিত করবে। ইন্দো-প্যাসিফিক প্রেক্ষাপটে সহযোগিতামূলক পরিসরগুলির মধ্যে রয়েছে স্থিতিস্থাপক সরবরাহ শৃঙ্খল, জলবায়ু কর্মসূচি, উদীয়মান ও গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি, আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য, স্থিতিশীল অবকাঠামো এবং সংযোগ। এই পরিসরগুলি মৌলিক ভাবে সামুদ্রিক নিরাপত্তা সহযোগিতার অগ্রগতি দ্বারা সমর্থিত হয়।(১৯)
ভারত এবং দক্ষিণ কোরিয়া তাদের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলগুলির অপরিহার্য উপাদান হিসাবে আঞ্চলিক মঞ্চে বহুপাক্ষিকতার মূল্য এবং সক্রিয় অংশগ্রহণকে স্বীকৃতি প্রদান করে। উভয় দেশই এ কথা বুঝতে সক্ষম যে, এই অঞ্চলে জটিল প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলায় সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং গঠনমূলক আলাপ-আলোচনা চালানোর জন্য একটি মঞ্চের প্রয়োজন। যে গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চের সঙ্গে ভারত এবং দক্ষিণ কোরিয়া উভয়েই সম্পৃক্ত রয়েছে, তা হল আসিয়ান, যা ইন্দো-প্যাসিফিকের ভূ-রাজনৈতিক পরিসরের কেন্দ্রবিন্দু। ভারত এবং দক্ষিণ কোরিয়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন, নিরাপত্তা ও সাংস্কৃতিক বিনিময়-সহ বিস্তৃত বিষয়ে আসিয়ান-নেতৃত্বাধীন উদ্যোগে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করে।
ভারত এবং দক্ষিণ কোরিয়া উভয়ই পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনের (ইএএস) সদস্য। এই মঞ্চটি এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের নেতাদের বিভিন্ন কৌশলগত, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ে উন্মুক্ত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক আলোচনায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেয়। ইএএস-এর মাধ্যমে ভারত এবং দক্ষিণ কোরিয়া আঞ্চলিক প্রতিবন্ধকতাগুলির বিষয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি-সহ অবদান রাখতে সক্ষম এবং যৌথ সমাধানের উদ্দেশ্যে কাজ করতে পারে।
· প্রধান শক্তিগুলির সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখা
ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চিনের মতো ইন্দো-প্যাসিফিকের অন্যান্য শক্তির সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ক পরিচালনার জন্য একটি সংক্ষিপ্ত পদ্ধতির অনুসরণ করছে৷ উভয় দেশই তাদের নিজস্ব কৌশলগত স্বার্থ এবং স্বায়ত্তশাসন রক্ষা করার সময় এই প্রভাবশালী শক্তিগুলির সঙ্গে গঠনমূলক ভাবে সম্পৃক্ত থাকার গুরুত্ব স্বীকার করে নেয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার প্রসঙ্গে ভারত এবং দক্ষিণ কোরিয়া একটি মুক্ত ও অবাধ ইন্দো-প্যাসিফিকের প্রচারের প্রতিশ্রুতি ভাগ করে নেয়। আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বৃদ্ধি করতে দুই দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের কৌশলগত অংশীদারিত্বের মূল্যায়ন করে। বিশেষ করে ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার প্রতিরক্ষা সহযোগিতাকে গভীরতর করে তোলার পাশাপাশি যৌথ সামরিক মহড়ায় অংশগ্রহণ, গোয়েন্দা তথ্য ভাগ করে নেওয়া এবং প্রতিরক্ষামূলক প্রযুক্তিতে সহযোগিতা চালিয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখার পাশাপাশি প্রতিরক্ষামূলক পরামর্শ এবং যৌথ মহড়া-সহ তার নিরাপত্তামূলক সম্পর্ককে উন্নত করতে আগ্রহী।
ইউনের নেতৃত্বে দক্ষিণ কোরিয়া এই অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তামূলক মিত্র হিসাবে তার অব্যাহত অবস্থানকে সুনিশ্চিত করতে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। দেশটি ইন্দো-প্যাসিফিকের গণতান্ত্রিক ও কৌশলগত ভাবে সমন্বিত দেশগুলির সঙ্গে কাজ করতে চায় এবং আঞ্চলিক উদ্বেগ ও দাবিগুলিকে কার্যকর ভাবে মোকাবিলা করার জন্য তার শক্তিগুলিকে কাজে লাগাতে আগ্রহী৷(২০) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চিনের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে উদ্ভূত অনিশ্চয়তার কারণে সিওলের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, রাশিয়া এবং চিনের সঙ্গে তাৎক্ষণিক সহযোগিতার ঊর্ধ্বে উঠে তার আঞ্চলিক অংশীদারিত্বকে বৈচিত্র্যময় করে তোলা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। এর পাশাপাশি ইউএস টার্মিনাল হাই অল্টিটিউড এরিয়া ডিফেন্স ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা স্থাপনের চুক্তির পর চিনের প্রতিশোধমূলক অর্থনৈতিক পদক্ষেপ(২১) নিয়ে সিওলের তিক্ত অভিজ্ঞতা অংশীদারদের আরও বহুমুখী শৃঙ্খল গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়।
সর্বোপরি, ভারত এবং দক্ষিণ কোরিয়া আঞ্চলিক বিষয়গুলি পরিচালনার জন্য বহুপাক্ষিক পদ্ধতির প্রবক্তা হিসেবে উত্থিত হয়েছে। দুই দেশই কোয়াড, আসিয়ান-নেতৃত্বাধীন ব্যবস্থা এবং আঞ্চলিক ফোরামের মতো মঞ্চের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক আলাপ-আলোচনা এবং সহযোগিতাকে সমর্থন করে। নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং পরিবেশগত স্থায়িত্বের মতো অভিন্ন স্বার্থের বিষয়ে আন্তর্জাতিক শক্তি এবং অন্যান্য আঞ্চলিক অংশীদারের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনার পথ হিসেবে কাজ করে।
ভারত-দক্ষিণ কোরিয়া ইন্দো-প্যাসিফিক অংশীদারিত্বের ভিত্তির বিবেচ্য বিষয়
ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ভারত এবং দক্ষিণ কোরিয়ার একত্র হওয়ার প্রতিশ্রুতি থাকলেও পথটি যথেষ্ট প্রতিবন্ধকতাময়।
প্রথমত, সিওল বর্তমান প্রশাসনের অধীনে ওয়াশিংটন ও তার তাৎক্ষণিক কিন্তু চিরাচরিত ভাবে বিচ্ছিন্ন প্রতিবেশী টোকিয়ো উভয়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহ প্রদর্শন করেছে। প্রকৃতপক্ষে, বছরের পর বছর ধরে উত্তর-পূর্ব এশিয়ায় চিনের কৌশলগত প্রভাব জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে বিরোধের প্রধান কারণ ছিল। পরিস্থিতি ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হচ্ছে।(২২) অগস্ট মাসে ক্যাম্প ডেভিডে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ত্রিপাক্ষিক সমাবেশ(২৩) এই সমীকরণের একটি মৌলিক পরিবর্তনের প্রতিনিধিত্ব করে, যা পূর্ববর্তী সমীকরণ থেকে সরে এসে সম্ভাব্য কৌশলগত সাযুজ্যের জন্য টোকিয়ো এবং সিওলের সন্দেহের নিরসন করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বারা প্রদত্ত বর্ধিত প্রতিরোধ ও নিরাপত্তা জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া উভয় দেশের জন্য পারস্পরিক সুবিধা উপস্থাপন করে এবং দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর থেকে সুদূর প্রাচ্য পর্যন্ত প্রশান্ত মহাসাগরীয় মঞ্চে একটি বিস্তৃত পরিধিকে অন্তর্ভুক্ত করে।(২৪)
তবে সিওলের জন্য এক দিকে চিনের সঙ্গে এবং অন্য দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে চলা একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। চিনের সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে, যা সিওলের জন্য দেশটির সঙ্গে সহযোগিতার ক্ষেত্রে একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্য বজায় রাখার কাজটিকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। ভারতের সঙ্গে চিনের জটিল সম্পর্কের নেপথ্যে সীমান্ত বিরোধ ও অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার মতো বিষয় থাকলেও ভারত বেজিংয়ের সীমান্ত লঙ্ঘনের বিষয় সরব হয়েছে। চিনের প্রসঙ্গ তাই ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে তাদের নিজ নিজ ঘটনাপ্রবাহের পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উপরেও প্রভাব ফেলবে।
দ্বিতীয়ত, উত্তর কোরিয়ার বিষয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার অবস্থান ও সম্পৃক্ততাও একটি অনিবার্য ও গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়। ভারত আন্তঃ-প্রণালী সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখলেও এই অঞ্চলে যে কোনও যৌথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা পিয়ংইয়ংয়ের সঙ্গে কূটনীতি এবং পুনর্মিলনের ক্ষেত্রে সিওলের প্রচেষ্টাকে জটিল করে তুলতে পারে। তৃতীয়ত, ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনৈতিক সম্পর্কের সম্ভাবনা থাকলেও কিছু সুনির্দিষ্ট প্রতিবন্ধকতা নিরবচ্ছিন্ন বাণিজ্যে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। নিয়ন্ত্রক গুণমান, শুল্ক এবং আমলাতান্ত্রিক পদ্ধতির পার্থক্য অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধির সম্ভাবনাকে ব্যাহত করতে পারে। এগুলি মোকাবিলা করার জন্য স্থিতিশীল আলোচনার পাশাপাশি সম্ভবত অভ্যন্তরীণ নীতির পুনর্নির্মাণও প্রয়োজন ।
এ কথা উল্লেখ করা জরুরি যে, ইন্দো-প্যাসিফিকের ভূ-রাজনীতির প্রেক্ষাপটে নয়াদিল্লি-সিওল অংশীদারিত্ব এখনও একটি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তা সত্ত্বেও উভয় দেশই দ্বিপাক্ষিক ভাবে তাদের অংশীদারিত্বের পাশাপাশি বিভিন্ন বহুপাক্ষিক জোটে অংশগ্রহণের মাধ্যমে ইন্দো-প্যাসিফিকের প্রেক্ষিতে কী অর্জন করতে পারে, সেই গুরুত্ব সম্পর্কে অবগত। তাই উভয় দেশেরই উচিৎ তাদের কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্প্রসারণ, অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতাকে আরও গভীর করে তোলা এবং সহায়ক অভ্যন্তরীণ নির্বাচনী পরিসর গড়ে তোলার জন্য নিজেদের শক্তিকে সমন্বিত করা।
ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ভারত এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে নীতিগত সমন্বয়গুলি এই অঞ্চলের জটিলতার মধ্যে পথ খুঁজে নিতে আগ্রহী সমমনস্ক দেশগুলির জন্য একটি বাধ্যতামূলক মডেল হিসাবে উঠে এসেছে। ভারতের কৌশলগত অবস্থান হোক বা দক্ষিণ কোরিয়ার প্রযুক্তিগত দক্ষতা… দুই দেশের অনন্য শক্তিকে কাজে লাগাতে তাদের ক্ষমতা, অভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহযোগিতামূলক কূটনীতির শক্তির ওপর জোর দেয়। যেহেতু ইন্দো-প্যাসিফিক ক্রমাগত বিবর্তিত হচ্ছে, তাই এই কৌশলগত অংশীদারিত্ব শুধু মাত্র আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাই নয়, বরং একটি নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য বিস্তৃত আন্তর্জাতিক আলাপ-আলোচনাতেও অবদান রাখছে।
পাদটীকা
১) গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া, মিনিস্ট্রি অফ এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স, জয়েন্ট স্টেটমেন্ট, স্টেট ভিজিট টু ইন্ডিয়া অফ এইচ ই মিস্টার রো মু-হুউন, প্রেসিডেন্ট অব দ্য রিপাবলিক অব কোরিয়া (আরওকে), অক্টোবর ২০০৪, https://mea.gov.in/bilateral-documents.htm?dtl/7467/Joint+Statement
২) গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া, মিনিস্ট্রি অফ এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স, ইন্ডিয়া-রিপাবলিক অব কোরিয়া জয়েন্ট স্টেটমেন্ট- টুওয়ার্ডস আ স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ, জানুয়ারি ২৫, ২০১০, https://mea.gov.in/bilateral-documents.htm?dtl/3301/IndiaRepublic
৩) গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া, মিনিস্ট্রি অফ এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স, ইন্ডিয়া-রিপাবলিক অব কোরিয়া জয়েন্ট স্টেটমেন্ট ফর স্পেশ্যাল স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ, মে ১৮, ২০১৫, https://www.mea.gov.in/bilateral-documents.htm?dtl/25261/India__Republic_of_Korea_Joint_Statement_for_Special_Strategic_Partnership_May_18_2015
৪) গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া, মিনিস্ট্রি অফ এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স, ইন্ডিয়া-কোরিয়া সিইপিএ, ২০০৯, https://commerce.gov.in/wp-content/uploads/2023/05/INDIA-KOREA-CEPA-2009.pdf
৫) রিপাবলিক অব কোরিয়া, মিনিস্ট্রি অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স, স্ট্র্যাটেজি ফর আ ফ্রি, পিসফুল অ্যান্ড প্রস্পারাস ইন্দো-প্যাসিফিক রিজিয়ন, ডিসেম্বর ২৮, ২০২২, https://www.mofa.go.kr/eng/brd/m_5676/view.do?seq=322133
৬) গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া, মিনিস্ট্রি অফ এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স, ইন্ডিয়া-রিপাবলিক অব কোরিয়া বাইল্যাটেরাল রিলেশনস, জানুয়ারি ২০২০, https://mea.gov.in/Portal/ForeignRelation/Bilateral_Brief_Jan_2020.pdf
৭) বিজয় সাখুজা, ‘ইন্ডিয়া অ্যান্ড দি ইন্দো-প্যাসিফিক’, এসডব্লিউপি ওয়ার্কিং পেপার, জার্মান ইনস্টিটিউট ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স, অক্টোবর ২০১৮, https://www.swp-berlin.org/fileadmin/contents/products/projekt_papiere/Sakhuja_BCAS_2018_Indo-Pacific_5.pdf
৮) গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া, মিনিস্ট্রি অফ এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স, প্রাইম মিনিস্টার’স কিনোট অ্যাড্রেস অ্যাট শাংরি লা ডায়লগ, জুন ১, ২০১৮, https://www.mea.gov.in/Speeches-Statements.htm?dtl/29943/Prime+Ministers+Keynote+Address+at+Shangri+La+Dialogue+June+01+2018
৯) প্রত্নশ্রী বসু, ‘মেরিটাইম ইন্ডিয়া-দ্য কোয়েস্ট ফর আ স্টেডফাস্ট আইডেন্টিটি’, ওআরএফ অকেশনাল পেপার নং ৩৩৯, নভেম্বর ২৯, ২০২১, https://www.orfonline.org/research/maritime-india-the-quest-for-a-steadfast-identity/
১০) ইরিশিকা পঙ্কজ, ‘কোয়াড প্লাস- ইম্পর্ট্যান্স অব সাপ্লাই চেন ডাইভার্সিফিকেশন অ্যান্ড কোরিয়া ইঙ্ক’ ইন পিভোটাল স্টেটস, গ্লোবাল সাউথ অ্যান্ড ইন্ডিয়া-সাউথ কোরিয়া রিলেশলস, সম্পাদনা চুং ইয়ং আহন এবং জগন্নাথ পান্ডা, ইনস্টিটিউট ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পলিসি, অগস্ট ২০২৩, https://isdp.eu/content/uploads/2023/08/ISDP-Special-Paper-Korea_Aug-2023-v.3.pdf
১১) প্রত্নশ্রী বসু, ‘মেরিটাইম ইন্ডিয়া-দ্য কোয়েস্ট ফর আ স্টেডফাস্ট আইডেন্টিটি’
১২) মিনিস্ট্রি অফ এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স, রিপাবলিক অব কোরিয়া, ডিসেম্বর ২৮, ২০২২, https://www.mofa.go.kr/eng/brd/m_5676/view.do?seq=322133
১৩) রুক্মণী গুপ্ত, উত্তর ‘হোয়াট ইজ ইন্ডিয়া’জ অ্যাপ্রোচ টুওয়ার্ডস দি ইন্দো-প্যাসিফিক রিজিয়ন?’, মনোহর পারিকর আইডিএসএ, https://idsa.in/askanexpert/IndiasapproachtowardstheIndoPacificregion
১৪) হিনা রোহতাকি, ‘সাউথ কোরিয়ান ডেলিগেশন অ্যাট জি২০- ‘ইন্ডিয়া ইজ আনডিনায়েবলি আ গ্লোবাল পাওয়ারহাউস’,’ দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, জানুয়ারি ৩১, ২০২৩, https://indianexpress.com/article/cities/chandigarh/south-korean-delegation-g20-india-undeniably-global-powerhouse-8414105/
১৫) লি হায়ে-য়া, ‘ইয়ুন প্লেজেস টু টার্ন সাউথ কোরিয়া ইনটু ‘নিউ মেরিটাইম পাওয়ার’,’ ইওনহাপ নিউজ এজেন্সি, মে ৩১, ২০২২,
https://en.yna.co.kr/view/AEN20220531004900315
১৬) লি হায়ে-য়া, ‘ইয়ুন প্লেজেস টু টার্ন সাউথ কোরিয়া ইনটু ‘নিউ মেরিটাইম পাওয়ার’,
১৭) পি মনোজ, ‘সাউথ কোরিয়া’জ এসটিএক্স অফারস ইন্ডিয়া এনএলজি শিপবিলডিং টেকনোলজি’, মিন্ট, নভেম্বর ১৩, ২০১৪, https://www.livemint.com/Industry/Xy0S2IzXatte32U7aRMTzM/South-Koreas-STX-offers-India-LNG-shipbuilding-technology.html
১৮) অভিজিৎ সিং, ‘রিভাইটালাইজেশন অব স্ট্র্যাটেজিক টাইজ বিটুইন ইন্ডিয়া অ্যান্ড কোরিয়া- অ্যাসেসিং দ্য পসিবিলিটিজ অব মেরিটাইম পার্টনারশিপস’, অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন, জুলাই ৮, ২০২২, https://www.orfonline.org/research/revitalization-of-strategic-ties-between-india-and-korea/
১৯) প্রত্নশ্রী বসু, ‘হোয়াই সিওল অ্যান্ড নিউ দিল্লি শুড লিভারেজ দ্য জি২০ মোমেন্টাম ফর অ্যাডভান্সিং কোল্যাবরেশন ইন দি ইন্দো-প্যাসিফিক’, ওআরএফ এক্সপার্ট স্পিক, মার্চ ৯, ২০২৩, https://www.orfonline.org/expert-speak/why-seoul-and-new-delhi-should-leverage-the-g20/
২০) প্রত্নশ্রী বসু, ‘হোয়াই সিওল অ্যান্ড নিউ দিল্লি শুড লিভারেজ দ্য জি২০ মোমেন্টাম ফর অ্যাডভান্সিং কোল্যাবরেশন ইন দি ইন্দো-প্যাসিফিক’
২১) হুউন হি শিন, ‘সাউথ কোরিয়া, চায়না ক্ল্যাশ ওভার ইউ এস মিসাইল শিল্ড, কমপ্লিকেটিং কনসিলেশন’, রয়টার্স, অগস্ট ১২, ২০২২, https://www.reuters.com/world/asia-pacific/skorea-says-thaad-missile-system-is-means-self-defence-news1-2022-08-11/
২২) প্রত্নশ্রী বসু, ‘স্টেপিং স্টোনস- ইজ আ সিওল-টোকিয়ো র্যাপ্রোচমেন্ট ইন দ্য মেকিং?’ ওআরএফ এক্সপার্ট স্পিক, মে ২৬, ২০২৩, https://www.orfonline.org/expert-speak/stepping-stones/
২৩) ইউ এস এ, দ্য হোয়াইট হাউস, রিমার্কস বাই প্রেসিডেন্ট বাইডেন, প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইওল অব দ্য রিপাবলিক অব কোরিয়া, অ্যান্ড প্রাইম মিনিস্টার ফুমিও কিশিদা অব জাপান ইন জয়েন্ট প্রেস কনফারেন্স, ক্যাম্প ডেভিড, অগস্ট ১৮, ২০২৩, https://www.whitehouse.gov/briefing-room/speeches-remarks/2023/08/18/remarks-by-president-biden-president-yoon-suk-yeol-of-the-republic-of-korea-and-prime-minister-kishida-fumio-of-japan-in-joint-press-conference-camp-david-md/
২৪) বিবেক মিশ্র ও প্রত্নশ্রী বসু, ‘ক্যাম্প ডেভিড রিডাক্স- রিইনফোর্সিং আমেরিকা’জ ইন্দো-প্যাসিফিক রিজলভ’, ওআরএফ এক্সপার্ট স্পিক, অগস্ট ৩১, ২০২৩, https://www.orfonline.org/expert-speak/camp-david-redux/
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.