-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
ভারতের ফিনটেক শিল্পে দক্ষতার দৃশ্যপটে যে ঘাটতি প্রত্যক্ষ করা যায় তা পূরণের জন্য একটি সামগ্রিক নীতি ও গবেষণা প্রয়োজন।
কোভিড–১৯ অতিমারি একাধিক উপায়ে ভারতে দক্ষতার দৃশ্যপটকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে। অতিমারি–প্ররোচিত লকডাউনগুলি চাকরি, টাকা আদান–প্রদান, শিক্ষা ও ব্যবসার মতো বেশিরভাগ কার্যক্রম অনলাইনে স্থানান্তরিত করেছে, এবং সারা দেশে ডিজিটালাইজেশনের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করেছে। অনলাইন বাস্তুতন্ত্রে এই ব্যাপক পরিবর্তনের কারণে ডিজিটাল দক্ষতার চাহিদা সর্বকালের মধ্যে সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। যাই হোক, ডিজিটালভাবে দক্ষ কর্মীদের সরবরাহ এখনও কম, এবং রিপোর্টে বলা হয়েছে যে ভারতের মাত্র ১২ শতাংশ কর্মী ডিজিটালভাবে দক্ষ। ভারতের কাছে সুযোগ রয়েছে দেশের যুবকদের দক্ষ করে ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লব (৪ আই আর)’-এর তরঙ্গে ভর করে বিশ্বের প্রযুক্তি প্রতিভার সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী হয়ে ওঠার।
ডিজিটাল দক্ষতার ব্যবধান এবং ডিজিটালি দক্ষ কর্মীদের অভাব ফিনটেক ক্ষেত্র সহ অনেক প্রযুক্তিনিবিড় শিল্পের বৃদ্ধির পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে।
ডিজিটাল দক্ষতার ক্ষেত্রে অসমতা এবং ডিজিটালি দক্ষ কর্মীদের অভাব ফিনটেক ক্ষেত্র সহ অনেক প্রযুক্তিনিবিড় শিল্পের বৃদ্ধির পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে। এই আলোকে এই নিবন্ধটি ফিনটেক সম্পর্কিত ভারতে বিদ্যমান ডিজিটাল দক্ষতার অসমতার মূল্যায়ন করেছে এবং তা কীভাবে কমানো যেতে পারে তার জন্য সুপারিশ করেছে।
ভারত বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বেড়ে–চলা ফিনটেক বাজারগুলির একটি। ভারতে ফিনটেক ব্যবহারের হার দাঁড়িয়েছে ৮৭ শতাংশ, যা বিশ্বব্যাপী গড় ৬৪ শতাংশের থেকে প্রায় ২৩ শতাংশ এগিয়ে৷ ২০২০ সালে ভারতে একটি বিশাল ২৫.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রিয়েল–টাইম অনলাইন লেনদেন হয়েছে, যা ফিনটেক অ্যাপ্লিকেশনের ব্যবহার বৃদ্ধির দ্বারা চালিত। এইভাবে এমন বিশাল জনসংখ্যাকে যুক্ত করা গিয়েছে যাঁদের আগে ব্যাঙ্কের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল না। অতিমারি চলাকালীন অন্যান্য ক্ষেত্র পতনের সম্মুখীন হলেও ফিনটেক শিল্পের উন্নতি হয়েছে, এবং বৈশ্বিক বিনিয়োগ ও ক্রমাগত বেড়ে উঠতে–থাকা ফিনটেক উদ্যোগের কারণে এটি ২০২৩ সালের মধ্যে ১৫০ বিলিয়ন ডলারের শিল্পে পরিণত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিষয়টি সংক্রান্ত চর্চায় ফিনটেক বৃদ্ধির সক্ষমতা প্রদানকারী হিসেবে চিহ্নিত প্রধান উপাদানগুলির মধ্যে একটি হল দক্ষতার বিকাশ। তবে, ভারতের ক্রমবর্ধমান ফিনটেক ক্ষেত্রের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার উপযোগী দক্ষ যুবক–যুবতীর অত্যন্ত অভাব রয়েছে। ভারতীয় ফিনটেক উদ্যোগগুলির ৬০ শতাংশেরও বেশি ডিজিটালভাবে দক্ষ কর্মী বাহিনী নেই বলে রিপোর্ট করেছে।
অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসেস ইনকরপোরেটেড–এর একটি রিপোর্ট অনুসারে, ২০২৫ সালের মধ্যে ভারতে গড়ে একজন কর্মীর সাত ধরনের নতুন ডিজিটাল দক্ষতার প্রয়োজন হবে। কারণ অদক্ষ কর্মশক্তি বর্তমান হারে নয় গুণ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ অ্যাকসেঞ্চার–এর একটি রিপোর্ট ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে বর্তমান ডিজিটাল দক্ষতার ঘাটতি দূর করা না–হলে জি২০ দেশগুলির ২০২৮ সালের মধ্যে মোট আভ্যন্তর উৎপাদন বা জিডিপি বৃদ্ধি ১১.৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্রমাণুক্রমিক ক্ষতির মুখে পড়বে৷ দেখা যাচ্ছে ভারতের ডিজিটাল দক্ষতার অসমতা সবচেয়ে বড় জিডিপি বৃদ্ধির ঝুঁকি (প্রতি বছর গড়ে ২.৩ শতাংশ পয়েন্ট) বহন করছে। তারপরে জি ২০ দেশগুলির মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা ও মেক্সিকো। বিশেষ করে ফিনটেক দক্ষতার ক্ষেত্রে, গ্লোবাল স্কিল রিপোর্ট ২০২২ ভারতের ফিনটেক দক্ষতায় একটি উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়, যদিও ভারতের র্যাঙ্ক সামগ্রিকভাবে ৬৪ থেকে ৬৮–তে নেমে এসেছে।
২০২০ সালে ভারতে একটি বিশাল ২৫.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রিয়েল–টাইম অনলাইন লেনদেন হয়েছে, যা ফিনটেক অ্যাপ্লিকেশনের ব্যবহার বৃদ্ধির দ্বারা চালিত। এইভাবে এমন বিশাল জনসংখ্যাকে যুক্ত করা গিয়েছে যাঁদের আগে ব্যাঙ্কের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল না।
ডিজিটাল দক্ষতায় অসম প্রবেশাধিকার এবং অপ্রতুল ডিজিটাল পরিকাঠামো ডিজিটাল প্রযুক্তির ন্যায্য ব্যবহারের পথে বাধা সৃষ্টি করে, এবং দেশ ও শিল্পকে সম্ভাব্য পূর্ণ বৃদ্ধির জায়গায় পৌঁছতে বাধা দেয়। ডিজিটাল দক্ষতার প্রসারমান বিভাজনে অবদান রাখে এমন অনেকগুলি বিষয় রয়েছে।
প্রচলিত বোধগম্যতা শুধু বাধা হিসেবে যা প্রথম স্তরের বিভাজন সেই ডিজিটাল পরিকাঠামোর অনুপস্থিতি নিয়েই মাথা ঘামায় না, ডিজিটাল দক্ষতা বা সাক্ষরতার অভাবকেও বিবেচনায় রাখে, যা দ্বিতীয় স্তরের বিভাজন। সম্প্রতি এই সংক্রান্ত ধারণাটি রূপান্তরিত হয়ে প্রযুক্তি ও ইন্টারনেট পরিষেবার পূর্ণ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে ‘ডিজিটাল দক্ষতা’ অন্তর্ভুক্ত করেছে।
যদি আমরা গভীরভাবে অনুসন্ধান করি তাহলে বুঝতে পারব ডিজিটাল বৈষম্য সামাজিক বৈষম্যকে শক্তিশালী করে এবং কর্মীদের প্রবেশাধিকার ও স্থিতিস্থাপকতা সঙ্কুচিত করে। পরিণতিতে অটোমেশন বাড়ার বিপদ তৈরি হয়। শুধু অতিমারি চলাকালীন যে বাধাগুলি এসেছিল তা বিভিন্ন ধরনের কর্মীদের জন্য বিভিন্নভাবে প্রকাশিত হয়েছিল। যে কর্মীরা বাড়ি থেকে কাজ করতে পারেন এবং যাঁদের শারীরিকভাবে উপস্থিত থাকতে হবে, তাঁদের মধ্যে একটি স্পষ্ট পার্থক্য দেখা গেছে। একইভাবে, যখন শিক্ষা অনলাইনে চলে আসে তখন তার সুযোগ নেওয়ার ক্ষমতা একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ডিজিটাল অসমতা প্রসারিত হচ্ছে এবং ইন্টারনেট ও প্রযুক্তির প্রবেশের সঙ্গে আরও জটিল হয়ে উঠছে বলে মনে হচ্ছে। অতিমারির পরে ডিজিটাল অসমতা পরিকাঠামোগত এবং দক্ষতাভিত্তিক, উভয় ধরনের হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ডিজিটাল বৈষম্য সামাজিক বৈষম্যকে শক্তিশালী করে এবং কর্মীদের প্রবেশাধিকার ও স্থিতিস্থাপকতা সঙ্কুচিত করে। পরিণতিতে অটোমেশন বাড়ার বিপদ তৈরি হয়।
ডিজিটাল দক্ষতায় লিঙ্গগত অসমতা ইউনেস্কোর একটি রিপোর্টেও বেশ স্পষ্ট প্রমাণিত, যেখানে বলা হয়েছে যে, মৌলিক উদ্দেশ্যগুলির জন্য ডিজিটাল প্রযুক্তি কীভাবে ব্যবহার করা যায় তা জানার সম্ভাবনা পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের ২৫ শতাংশ কম। অতএব, যে নীতিগত প্রতিক্রিয়াগুলি দ্বিতীয় স্তরের বিভাজনগুলি মেরামত করার উপর ফোকাস করে, তা উদীয়মান অর্থনীতি হিসেবে ভারতের অবস্থানের সঙ্গে অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক।
ডিজিটাল রূপান্তরের ‘অন্তর্ভুক্তি’র দিকটি নিয়ে বেশ হৈচৈ হয়েছে। অতিমারিটি কাজের ভবিষ্যতের প্রকৌশল নতুন করে তৈরি করা, দক্ষতার ব্যবধান পুনর্মূল্যায়ন করা এবং অতিমারি–পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক পুনর্নির্মাণের জন্য পরিবর্তন–বিন্দু হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। ডিজিটাল ও শারীরিক সংস্পর্শহীন হওয়ার প্রয়োজনের কারণে ডিজিটালাইজেশনে দ্রুত রূপান্তর অ্যাকাডেমিক শিক্ষা ও শিল্পের ভবিষ্যৎ তৈরি করার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতার মধ্যে ভারসাম্যহীনতা সামনে নিয়ে এসেছে। একটি বিশাল বৈষম্য বিদ্যমান, এই সত্যটি তরুণদের জন্য দক্ষতায়ন ও পুনর্দক্ষতায়ন উদ্যোগকে আমাদের নজরের কেন্দ্রে নিয়ে আসে, যা এই প্রক্রিয়াটিকে আরও বৈচিত্র্যময় এবং স্থিতিস্থাপক করে তুলতে সহায়তা করতে পারে।
তরুণদের প্রয়োজনীয় ডিজিটাল দক্ষতায় সজ্জিত করার মাধ্যমে ডিজিটাল রূপান্তর, এবং ডিজিটাল দক্ষতার ব্যবধান ঘোচানোর প্রচেষ্টা সমাজের প্রান্তিক অংশগুলির জন্য আরও সুযোগ তৈরি করতে পারে।
ডিজিটাল দক্ষতার অসমতা একটি জটিল গতিশীল ঘটনা, যা অনেক বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে অতিমারি চলাকালীন দ্রুত ডিজিটালাইজেশন, এবং এটি যে বিদ্যমান আর্থ–সামাজিক বৈষম্যগুলিকে বাড়াতে সাহায্য করে সেই বিষয়গুলির কারণে।
ফিনটেকের দক্ষতার ব্যবধান পূরণ করার জন্য নিচে কয়েকটি সুপারিশ রয়েছে:
১. ফিনটেক শিল্পের নিরন্তর পরিবর্তনশীল প্রকৃতির কারণে নিয়মিত সংস্থা–সমর্থিত উচ্চতর দক্ষতায়ন এবং কর্মীবাহিনীর পুনর্দক্ষতায়নকে উৎসাহিত করা। এটি বিদ্যমান প্রযুক্তিতে পারদর্শী অভিজ্ঞ কর্মীদের ধরে রাখতে সাহায্য করবে।
২. স্নাতক স্তরে ফিনটেকের জন্য নির্দিষ্ট পথ তৈরি করা: অংশীদারদের মধ্যে সহযোগিতামূলক নেটওয়ার্কের সুবিধার জন্য শ্রেষ্ঠত্বের কেন্দ্রগুলি তৈরি করা হলে ফিনটেক শিল্প উপকৃত হতে পারে।
৩. প্ল্যাটফর্মগুলি ব্যবহার করা হলে তা প্রথাগত ডিগ্রির মতো প্রচলিত পদ্ধতির পরিবর্তে দক্ষতা মূল্যায়নের ভিত্তিতে কর্মীদের নিয়োগকে উত্সাহিত করে নিয়োগ প্রক্রিয়ার মধ্যে অসঙ্গতি প্রশমিত করতে সহায়তা করবে৷
৪. অ্যাকাডেমিয়া ও শিল্পের মধ্যে অসঙ্গতি একটি অভিন্ন কাঠামো বাস্তবায়নের মাধ্যমে নিরসন করা যেতে পারে, যা কর্মচারীদের একে অপরের সঙ্গে এবং সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য দক্ষতাভিত্তিক সাধারণ ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।
৫. সমান্তরাল শিক্ষানবিশ কর্মসূচির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুলে ফিনটেক ও স্টেম বিষয়ের প্রচার।
৬. প্রান্তিক গোষ্ঠীগুলিতে ডিজিটাল দক্ষতা বিকাশে সহায়তা করার জন্য সংগঠনগুলি অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল প্রোগ্রামের উদ্যোগ নিতে পারে। এটি প্রবেশাধিকার ও পরিকাঠামোর প্রথম স্তরের কিছু বিভাজন কাটিয়ে উঠতে এবং একটি স্থিতিস্থাপক কর্মীবাহিনী গড়ে তুলতে সুযোগ তৈরি করে দেবে।
৭. বিভিন্ন অংশীদারদের (অ্যাকাডেমিক প্রতিষ্ঠান ও প্রযুক্তি সংস্থা) মধ্যে গতিশীল অংশীদারি তৈরি করা জটিল চাহিদা পূরণে এবং সরবরাহ দিকের বাধাগুলির সমাধানের একটি বাস্তুতন্ত্র তৈরিতেও সাহায্য করতে পারে।
এইভাবে, এই জটিল এবং ব্যাপ্ত উদ্বেগগুলির মোকাবিলা করার জন্য একটি সক্রিয় কেন্দ্রীভূত নীতি ও গবেষণাগত প্রতিক্রিয়া প্রয়োজন, যার সঙ্গে ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয় অংশীদারেরা সমানভাবে জড়িত থাকবে। নীতিগত দৃষ্টিভঙ্গিগুলি অবশ্যই বহুমাত্রিক হতে হবে, এবং ফিনটেক শিল্পে প্রত্যক্ষ করা দক্ষতার ব্যবধান পূরণ করতে শিক্ষাগত, প্রযুক্তিগত, সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রতিকারের ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Avni Arora was a Research Assistant with the Center for New Economic Diplomacy at ORF. Her key areas of research are Gender Development Policy and ...
Read More +