-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
এস ডি জি-গুলির বাস্তবায়ন নির্ভর করবে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের কর্মসূচিতে যুব সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণের উপরে।
ইউনাইটেড নেশনস জেনারেল অ্যাসেম্বলির মতে, স্থিতিস্থাপকতার সংজ্ঞা হল ‘বিপদের সম্মুখীন একটি ব্যবস্থা, সম্প্রদায় অথবা সমাজের প্রতিরোধ, আত্তীকরণ, মানিয়ে নেওয়া, অভিযোজন, রূপান্তর এবং সময়োচিত ও দক্ষ ভাবে সঙ্কটের প্রভাবগুলি থেকে উদ্ধার পাওয়ার ক্ষমতা। এবং একই সঙ্গে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এটির অপরিহার্য মৌলিক কাঠামো ও কার্যকারিতাগুলি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ করার ক্ষমতা।’ আধুনিক পরিপ্রেক্ষিতে একটি স্থিতিস্থাপক সমাজকে অবশ্যই অন্য অনেক কিছুর সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন, নগরায়ণ, বিশ্বায়ন, প্রযুক্তিগত বিন্যাস এবং জনসংখ্যার ধরনগুলিকে বিবেচনার অধীনে আনতে হবে এবং স্থিতিশীল উন্নয়নের ক্ষেত্রে সামগ্রিক অগ্রগতির জন্য যুব সম্প্রদায়ের অপরিহার্য ভূমিকাকে স্বীকৃতি দিতে হবে।
বৈশ্বিক যুব সম্প্রদায়ের সিংহ ভাগ হয় শহরে বসবাস করে অথবা শহরে বসবাস করতে আগ্রহী হওয়ার ফলে, ২০৩০ সালের মধ্যে এস ডি জি ১১ লক্ষ্যমাত্রাগুলির বাস্তবায়নের নিরিখে শহরাঞ্চলগুলি একটি নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করতে চলেছে।
২০৩০ সালের মধ্যে সুষম উন্নয়ন অর্জনের জন্য আমাদের সমাজকে স্থিতিস্থাপক করে তোলার প্রয়োজনের কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জের স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় (এস ডি জি)। ‘নো পভার্টি’ বা ‘দারিদ্র্যহীনতা’ সংক্রান্ত এস ডি জি ১-এর অধীনে টার্গেট ১.৫-এ পরিবেশগত, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক বিপর্যয় মোকাবিলায় সাহায্য করার জন্য দরিদ্রদের স্থিতিস্থাপকতা গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। এস ডি জি ৯ যেখানে স্থিতিস্থাপক পরিকাঠামো নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্থিতিশীল শিল্পায়নকে তুলে ধরে, সেখানে এস ডি জি ১১-তে শহর এবং বসতিগুলিকে অন্তর্ভুক্তিমূলক, স্থিতিশীল এবং স্থিতিস্থাপক করে তোলার উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। নগর পরিকল্পনা ও সংগঠনের ক্ষেত্রে যুব সম্প্রদায়ের ভূমিকা এখনও অত্যন্ত সীমিত বা প্রায় নেই বললেই চলে। বৈশ্বিক যুব সম্প্রদায়ের সিংহভাগ হয় শহরে বসবাস করে অথবা শহরে বসবাস করতে আগ্রহী হওয়ার ফলে, ২০৩০ সালের মধ্যে এস ডি জি ১১ লক্ষ্যমাত্রাগুলির বাস্তবায়নের নিরিখে শহরাঞ্চলগুলি একটি নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করতে চলেছে। আবার ২০৫০ সালের মধ্যে নগর বৃদ্ধির ৬০ শতাংশ গ্লোবাল সাউথে ঘটবে, এ হেন অনুমান এটিকে মনোযোগের একটি বিশেষ ক্ষেত্র করে তোলে।
এস ডি জি-র সামগ্রিক প্রকৃতি যুব সম্প্রদায়ের উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও এই স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাগুলির বাস্তবায়নও সংশ্লিষ্ট অঞ্চলগুলিতে, বিশেষ করে শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে যুব সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণের উপর নির্ভরশীল। সব এস ডি জি-তেই যুব সম্প্রদায়কে গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং তাঁদের একটি প্রজন্মের ভিতরে এবং বিভিন্ন প্রজন্মের মধ্যে সমতাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য পরিবর্তনের দূত হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যার বয়স ৩০ বছরের কম হওয়ার পাশাপাশি কমনওয়েলথের ৫৬টি সদস্য দেশের মোট ২.৫ বিলিয়ন জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ এই একই বয়সসীমার অধীনে পড়ে। এর ফলে জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ভবিষ্যতে স্থিতিস্থাপক সম্প্রদায় গড়ে তোলার কারণ হয়ে উঠতে সক্ষম। এশিয়া এবং আফ্রিকা বিশ্বের সর্বাধিক পরিমাণ যুবক-যুবতীর আবাসস্থল হওয়ার পাশাপাশি আফ্রিকায় ১২-২৪ বছর বয়সি জনসংখ্যা ২০১২ সালে ১৮ শতাংশের তুলনায় ২০৪০ সালে বেড়ে দাঁড়াবে ২৮ শতাংশে। কিন্তু একই সময় সীমায় এশিয়ায় সংশ্লিষ্ট জনসংখ্যার পরিমাণ এক তীব্র পতনের সম্মুখীন হবে এবং তা ৬১ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়াবে ৫২ শতাংশে।
চিত্র ১: যুব সম্প্রদায়ের জনসংখ্যায় আঞ্চলিক বৈচিত্র্য
স্থিতিস্থাপক সমাজগুলিকে অতিমারি বা ইউক্রেন-রাশিয়া দ্বন্দ্বের মতো বাহ্যিক ধাক্কার প্রভাবের সঙ্গে যুঝতে সক্ষম বলে মনে করা হয়েছে। এই চিরাচরিত দৃষ্টিভঙ্গিতে স্থিতিস্থাপকতাকে একটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বদলে মোকাবিলা প্রতিক্রিয়া রূপে মনে করা হয়। ফলে সমাজের দরিদ্রতর, অরক্ষিত এবং প্রান্তিক মানুষদের উপর স্থিতিস্থাপকতা আত্তীকরণের ভার চাপিয়ে দেওয়া হয়। এর বিপরীতে স্থিতিস্থাপকতা নির্মাণকে একটি বিবিধবিদ্যা কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির আলোকেও দেখা উচিত যা মানুষ এবং সম্প্রদায়ের নিরিখে ক্ষমতা বৃদ্ধির উপর মনোনিবেশ করবে যাতে তাঁরা এই ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হন। এই ধরনের একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক কাঠামো তৈরি করার জন্য জনসংখ্যার দুর্বলতম গোষ্ঠীগুলি কী কী এবং কোন শ্রেণিগুলি আরও স্থিতিস্থাপক সমাজের দিকে রূপান্তরের জন্য সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী, তার উপর নজর দেওয়া প্রয়োজন। যুব সম্প্রদায় এমনই একটি বয়স গোষ্ঠী, যাঁরা শীঘ্রই নিম্নোক্ত উপায়ে ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং স্থিতিশীল পরিবর্তন আনতে সক্ষম।
প্রথমত, একটি জাতির জনসংখ্যাগত লভ্যাংশ সেই জাতির অর্থনৈতিক সম্ভাবনার পরিবর্তনকেই দর্শায়, যখন জনসংখ্যার বয়সের পরিকাঠামোয় পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। এ ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন তখনই ঘটতে পারে, যখন কাজের উপযুক্ত বয়সের জনসংখ্যা কাজের অনুপযুক্ত বয়সের জনসংখ্যার চেয়ে বেশি হয়। এর নেপথ্যের ভাবনাটি হল দক্ষতাবৃদ্ধি এবং অন্যান্য সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার মাধ্যমে গ্লোবাল সাউথের কর্মক্ষম জনসংখ্যায় আরও বেশি পরিমাণ যুব সম্প্রদায়কে নিযুক্ত করা এবং এ ভাবে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে উদ্দীপিত করা।
এর বিপরীতে স্থিতিস্থাপকতা নির্মাণকেও একটি বিবিধবিদ্যা কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির আলোকেও দেখা উচিত যা মানুষ এবং সম্প্রদায়ের নিরিখে ক্ষমতা বৃদ্ধির উপর মনোনিবেশ করবে যাতে তাঁরা এই ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হন।
ভারতের জনসংখ্যাগত লভ্যাংশ সংক্রান্ত রাষ্ট্রপুঞ্জের একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, উন্নয়নশীল দেশগুলিতে জনসংখ্যাগত লভ্যাংশের উন্নতির নেপথ্যে দুটি বিনিয়োগ অপরিহার্য। উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত দেশগুলিতে মানব সম্পদ বিনিয়োগ উন্নত দেশগুলির তুলনায় চিরাচরিত ভাবে কম। এ বিষয়ে বিশেষ করে শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের নিরিখে অগ্রগতি আশানুরূপ ফল প্রদান করতে পারে। রিটার্নস-টু-দ্য-ইকনমি দৃষ্টিকোণ থেকে শিক্ষা ক্ষেত্রকে বিনিয়োগের সবচেয়ে ফলপ্রসূ ক্ষেত্রগুলির মধ্যে অন্যতম বলে মনে করা হয়। এর পাশাপাশি, গ্লোবাল সাউথে স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ তুলনামূলক ভাবে কম থেকেছে। একটি সুদক্ষ জনস্বাস্থ্য পরিষেবার উপস্থিতি নিশ্চিত করা এবং সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রটিকে সকলের ব্যবহারযোগ্য করে তোলা সরকারের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য।
দ্বিতীয়ত, অতিমারি বিশ্ব জুড়ে প্রযুক্তির অনুপ্রবেশকে তীব্রতর করে তুলেছে এবং বর্তমান পরিসংখ্যান দর্শাচ্ছে যে, এই প্রবণতা ভবিষ্যতেও বৃদ্ধি পাবে। একই সঙ্গে যুব সম্প্রদায়কে এই ব্যবস্থার সঙ্গে অভিযোজিত করার অর্থ হল ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত একটি শ্রমশক্তির নির্মাণ করা। দেখা গিয়েছে যে, শিশুরা কম বয়স থেকেই প্রযুক্তি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল এবং প্রতিটি বাড়িতে এ ধরনের সরঞ্জামের উপস্থিতি শিশুদের এই অগ্রগতির পরিপূরক হিসেবে কাজ করেছে। তাই প্রযুক্তিগত সাক্ষরতায় বর্ধিত বিনিয়োগ জাতির অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎকে গড়ে তোলার বা ধ্বংস করার সম্ভাবনা রাখে।
শিশুরা কম বয়স থেকেই প্রযুক্তি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল এবং প্রতিটি বাড়িতে এ ধরনের সরঞ্জামের উপস্থিতি শিশুদের এই অগ্রগতির পরিপূরক হিসেবে কাজ করেছে।
তৃতীয়ত, এস ডি জি ১৭-র লক্ষ্য হল দেশগুলির মধ্যে এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের সঙ্গে অংশীদারিত্বের সূচনা যাতে ২০৩০ সালের লক্ষ্যমাত্রার বাস্তবায়ন সম্ভব হয়। এই ধরনের অংশীদারিত্বের সম্ভাবনাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে তাদের অংশগ্রহণের পাশাপাশি এই নির্দিষ্ট এস ডি জি-র নিরিখে যুব সম্প্রদায়ের একটি অন্তর্নিহিত ভূমিকা রয়েছে। বিদ্যমান উদ্যোগের উপর ভিত্তি নির্মাণ, বর্তমান অবদানকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, যুব সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণে বৃদ্ধি ঘটানো এবং সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাগুলির মোকাবিলা করা ইত্যাদি পরিসরে যুব সম্প্রদায়ের সক্রিয় অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং অপরিহার্য। পরিশেষে ডিজিটাল আন্তঃসহযোগিতার উন্নতি সাধন এবং যুব নেতৃত্বের প্রচার স্থিতিস্থাপক সমাজ গঠনের জন্য দু’টি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান।
একটি দেশের মানব সম্পদের ভিত্তি সুদৃঢ় করা এবং তার অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় করে তোলার জন্য উৎপাদন ক্ষমতাকে আরও উন্নত করা দরকার। এমনটা হলে তা বাহ্যিক ম্যাক্রো ইকোনমিক ধাক্কাগুলি থেকে সমগ্র ব্যবস্থাটিকে ডুবে যাওয়ার হাত থেকে সুরক্ষা প্রদান করবে। গবেষণায় দেখা দিয়েছে যে, উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলির মধ্যে আন্তঃসহযোগিতা বৃদ্ধি ও উন্নততর সমন্বয় সাধন বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং উতপাদনশীলতার ক্ষেত্রে বিনিয়োগের পরিমাণ বৃদ্ধি করবে, যা যুব সম্প্রদায় দ্বারা পরিচালিত হবে। উন্নত জনসংখ্যাগত লভ্যাংশ, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য পরিষেবা সুনিশ্চিত করার জন্য অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগের ইতিবাচক প্রণোদনা অর্থনীতিগুলিকে স্থিতিস্থাপক করে তোলার কাজে দীর্ঘমেয়াদি ভাবে সাহায্য করতে সক্ষম।
লেখক তাঁর এই প্রবন্ধে গবেষণা সংক্রান্ত সহায়তার জন্য বেঙ্গালুরুর এন এল এস আই ইউ-এর রোহন রসের কাছে কৃতজ্ঞ।
মতামত লেখকের নিজস্ব।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Soumya Bhowmick is a Fellow and Lead, World Economies and Sustainability at the Centre for New Economic Diplomacy (CNED) at Observer Research Foundation (ORF). He ...
Read More +