কেন অগ্নিপথ আন্দোলন ভারতের জন্য জেগে ওঠার ডাক হিসেবে গণ্য হওয়া উচিত
এই প্রবন্ধটি ‘অগ্নিপথ স্কিম: র্যাডিক্যাল অর ইরর্যাশনাল’ সিরিজের অংশ
সম্প্রতি, সামরিক প্রতিষ্ঠানব্যাপী স্বল্পমেয়াদি নিয়োগের জন্য ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) সরকারের অগ্নিপথ প্রকল্পটি দেশের অনেক অংশে একের পর এক হিংসাত্মক বিক্ষোভের সাক্ষী হয়েছে। ১৬ জুন প্রথমে বিহারে যে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল, শীঘ্রই ভারতের ১৫টিরও বেশি রাজ্যে তা দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে, সরকারি সম্পত্তির ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হয়, এবং স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হয়। অবশেষে, সরকার কিছু ছাড় ঘোষণা করে এবং শক্তিশালী পুলিশি পদক্ষেপের মাধ্যমে আন্দোলন প্রশমিত করে। বিক্ষোভের ধরন এবং এর তীব্রতা দেখে কেন্দ্রীয় সরকার সম্পূর্ণরূপে বিস্মিত হয়েছিল। অগ্নিপথ প্রকল্পের বিরুদ্ধে এই বিক্ষোভগুলি কী বোঝায়? কেন এত যুবক অস্থায়ী হলেও প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের সুযোগের একটি সম্ভাব্য আকর্ষণীয় বিকল্পের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিল?
বিক্ষোভকারীরা অত্যন্ত সচেতন তাঁদের যে চাকরি দিতে চাওয়া হচ্ছে, তার সশস্ত্র বাহিনীর নিয়মিত চাকরির মতো সামাজিক মর্যাদা বা অর্থনৈতিক সুবিধা থাকবে না।
হিংসাত্মক বিক্ষোভের জন্য কথিত প্রধান কারণ হল চাকরির অস্থায়ী প্রকৃতি, যেখানে সশস্ত্র বাহিনীতে নিয়মিত চাকরির মতো অবসর–পরবর্তী কোনও সুবিধা নেই। বিক্ষোভকারীরা অত্যন্ত সচেতন তাঁদের যে চাকরি দিতে চাওয়া হচ্ছে, সেগুলিতে সশস্ত্র বাহিনীর নিয়মিত চাকরির মতো সামাজিক মর্যাদা বা অর্থনৈতিক সুবিধা থাকবে না। ঘটনা হল, অনেকেই সামরিক চাকরিতে আগ্রহী হয়ে থাকেন এর সামাজিক মর্যাদা, প্রতিপত্তি এবং তার সঙ্গে অবসর–পরবর্তী আকর্ষণীয় সুবিধার কারণে। যাই হোক, চার বছরের মেয়াদে এবং কোনও চিকিৎসা বা কোনও অবসরকালীন সুবিধা ব্যতিরেকে (এমনকি সেই ২৫ শতাংশের জন্যও, যারা পরে নিয়মিত ক্যাডার হিসেবে বাহিনীতে যোগদান করবে) এটি অত্যন্ত হতাশাজনক। এছাড়াও, যা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হল সেই চাকরিগুলির মাত্র এক–চতুর্থাংশ স্থায়ী হিসেবে ধরে রাখা হবে।
বাড়ছে চাকরির সংকট
অগ্নিপথের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকে সরকারি এবং বেসরকারি সব ক্ষেত্রব্যাপী ক্রমবর্ধমান চাকরির সংকটের প্রেক্ষাপটে দেখা উচিত। সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি (সি এম আই ই)–র এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২১ সালের ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ বেতনভোগী কর্মীরা সমস্ত নিযুক্ত ব্যক্তিদের মাত্র ১৯ শতাংশ (২০১৯–২০ সালের ২১.২ শতাংশ থেকে কমে গেছে)। পরিসংখ্যানগতভাবে বলতে গেলে, এই সময়ের মধ্যে প্রায় ৯.৫ মিলিয়ন বেতনভুক ব্যক্তি চাকরি হারিয়েছেন। উল্লেখযোগ্যভাবে, উদ্যোক্তাদের মধ্যে প্রায় ১ মিলিয়ন কাজ হারিয়েছেন। যদিও মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক চাকরি সৃষ্টি হয়েছে, তবে সেগুলির বেশিরভাগই নির্মাণ, কৃষি ও অন্যান্য নিম্ন আয়ের ক্ষেত্রগুলিতে কম বেতনের চাকরি। পুনরুদ্ধারের লক্ষণ দেখা গেলেও ভারতের সাম্প্রতিকতম শ্রম পরিসংখ্যান একটি ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছে। সি এম আই ই–র ম্যানেজিং ডিরেক্টর মহেশ ব্যাসের মতে, ভারতে কর্মসংস্থান মে মাসে ৪০৪ মিলিয়ন থেকে ১৩ মিলিয়ন কমে ৩৯০ মিলিয়নে নেমেছে। এখনও অবধি এটি একটি লকডাউন–বিহীন মাসে কর্মসংস্থানের সবচেয়ে বড় পতন। তাঁর মতে, গত ১২ মাসের মধ্যে জুন মাসে কর্মসংস্থান ছিল সর্বনিম্ন।
সমস্ত ক্ষেত্র জুড়ে নিয়োগ, বিশেষ করে নিয়মিত এবং তুলনামূলকভাবে উচ্চ বেতনের ম্যানুফ্যাকচারিং চাকরিতে নিয়োগ, এক দশকেরও বেশি সময় ধরে তীব্রভাবে হ্রাস পেয়েছে। সংখ্যার বাইরে, বেসরকারি ক্ষেত্রের চাকরিতে মূল সমস্যা হল চাকরির মান।
স্থবির বেসরকারি ক্ষেত্র
বেসরকারি ক্ষেত্র, যা ছিল ১৯৯০–এর দশকের গোড়ার দিকে অর্থনৈতিক সংস্কার শুরু হওয়ার পর গত তিন দশকে নতুন চাকরির প্রধান স্তম্ভ, এখন সঙ্কুচিত হচ্ছে। সমস্ত ক্ষেত্র জুড়ে নিয়োগ, বিশেষ করে নিয়মিত এবং তুলনামূলকভাবে উচ্চ বেতনের ম্যানুফ্যাকচারিং চাকরিতে নিয়োগ, এক দশকেরও বেশি সময় ধরে তীব্রভাবে হ্রাস পেয়েছে। সংখ্যার বাইরে, বেসরকারি ক্ষেত্রের চাকরিতে মূল সমস্যা হল চাকরির মান। বহুজাতিক সংস্থাগুলো ভাল বেতন–ভাতা দেয় এবং বাজারের বেতন কাঠামো নির্ধারণ করে বলে প্রচলিত ধারণার বিপরীতে দেখা যাচ্ছে এমন ঘটনা কর্মচারীদের একটি ছোট শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ। বেসরকারি ক্ষেত্রের কর্মশক্তির উপর আধিপত্য বিস্তার করেছে স্বল্প বেতনের শ্রমিকেরা। বেসরকারি ক্ষেত্রের কাজগুলিকে আরও বেশি অনাকর্ষণীয় করে তুলেছে সামান্য সামাজিক নিরাপত্তা–সহ চুক্তিবদ্ধকরণ। কোভিড–১৯ অতিমারির সময়ে কর্মসংস্থানের নিরাপত্তার বিষয়টি আরও সঙ্কুচিত হয়েছে। ২০২১ সালে কোভিড–১৯ অতিমারি এবং পরবর্তী লকডাউন এবং সংশ্লিষ্ট বিধিনিষেধের প্রাদুর্ভাবের পরপরই প্রায় ১১ মিলিয়ন চাকরি গিয়েছে। বিমান চলাচল, ভ্রমণ এবং আতিথেয়তার মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলি বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
বাড়ছে সরকারি চাকরির আবেদন
মেয়াদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকারী সরকারি কর্মচারীদের বেশিরভাগই অতিমারি এবং তার ফলে অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব থেকে রক্ষা পেয়েছেন। চাকরির নিরাপত্তা ছাড়াও সরকারি কর্মচারীদের যা সুরক্ষা দেয় তা হল অপেক্ষাকৃত উচ্চ বেতন। উদাহরণস্বরূপ, পিরিওডিক লেবার ফোর্স পার্টিসিপেশন (পি এল এফ পি) ডেটা (২০১৯–২০) অনুসারে, যেখানে মাসিক গড় সরকারি বেতন প্রায় ২৮,০০০ টাকা, বেসরকারি সংস্থাগুলিতে তা ১৭,০০০–এর মধ্যে৷ বিশেষজ্ঞ সোনালদে দেসাইয়ের মতে, যদি কেউ ১০–১২ পাস পুরুষদের মধ্যে তুলনা করে, তেমন সরকারি কর্মীরা প্রতি মাসে ২৫,০০০ টাকা আয় করেন, আর বেসরকারি ক্ষেত্রের কর্মীরা প্রতি মাসে প্রায় ১২,০০০ টাকা আয় করেন। তুলনামূলক উচ্চ পারিশ্রমিকের অতিরিক্ত সরকারি ক্ষেত্রের কর্মচারীরা প্রভিডেন্ট ফান্ড/পেনশন, গ্র্যাচুইটি এবং চিকিৎসা ব্যয় সহ নানা সুবিধার অধিকারী। বেসরকারি ক্ষেত্রের একটি বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠ কর্মচারী এই সুবিধাগুলি পান না। সংক্ষেপে, গড় বেতন, চাকরির নিরাপত্তা এবং সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রের চাকরির মধ্যে ব্যবধান বছরের পর বছর ধরে বেড়ে চলেছে।
সরকারি চাকরিতে শুধু আর্থিক সুবিধাই নয়, তার চেয়েও বেশি কিছু আছে। সরকারি চাকরি স্থিতি, সামাজিক প্রতিপত্তি এবং সামাজিক গতিশীলতার একটি বিশাল সুযোগ প্রদান করে। বিশ্লেষকেরা ঠিকই বলেছেন, সরকারি চাকুরিরত ব্যক্তিরা একজন ‘সরকারি কর্মকর্তার’ একটি নতুন পেশাগত পরিচয়ের অধিকারী হন, যা গভীরভাবে ক্ষমতায়ন করে। তদুপরি, আরামদায়ক শর্তাবলি, মেয়াদের নিরাপত্তা, এবং সরকারি চাকরির বেতনের নিয়মিত ঊর্ধ্বমুখী সংশোধন (পে কমিশন) এমনভাবে সমাজের মানসিকতায় ছাপ ফেলেছে, যা বাজারকে খুব কমই মূল্য দেয়।
তুলনামূলক উচ্চ পারিশ্রমিকের অতিরিক্ত সরকারি ক্ষেত্রের কর্মচারীরা প্রভিডেন্ট ফান্ড/পেনশন, গ্র্যাচুইটি এবং চিকিৎসা ব্যয় সহ নানা সুবিধার অধিকারী।
তবুও, রূঢ় বাস্তবতা হল যে গত কয়েক দশকে সরকারি ক্ষেত্রে মাত্র কিছু চাকরিই যোগ হয়েছে। নতুন নিয়োগের ভয়াবহ সংখ্যাতত্ত্বে এটি আরও স্পষ্ট। যদিও কেন্দ্রীয় সরকার ২০২০ সালে প্রায় ১১৯,০০০ জনকে স্থায়ী চাকরির জন্য নিয়োগ করেছিল, সংখ্যাটি ২০২১ সালে ব্যাপকভাবে কমে ৮৭,৪২৩ হয়ে গিয়েছিল৷ রাজ্য স্তরে পরিস্থিতি আরও অনিশ্চিত ছিল৷ যদিও রাজ্যগুলি ২০২০ সালে ৪৯৬,০৫২ জনকে নিয়োগ করেছিল, ২০২১ সালে তা ৩৮৯,০৫২–এ নেমে এসেছে৷ যদিও এর অনেকটার সঙ্গে কোভিড–১৯ অতিমারির একটি যোগসূত্র রয়েছে, অনেকগুলি প্রধান সরকারি বিভাগে নিয়োগের হার ধারাবাহিকভাবে হ্রাস পেয়েছে, যারা বড় নিয়োগকারী বলেই পরিচিত। উদাহরণস্বরূপ, সবচেয়ে বড় চাকরি প্রদানকারী ভারতীয় রেলওয়ে বিভিন্ন স্তরে ৭২,০০০টি পদ বাতিল করেছে। একইভাবে, অতিমারির কারণে গত দুই বছর ধরে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ বন্ধ ছিল। শুধু যে সরকারি দপ্তরে নিয়োগই ব্যাপকভাবে কমেছে তাই নয়, ‘অস্থায়ীকরণ’ (অস্থায়ী এবং স্বল্পমেয়াদি নিয়োগ)-এর প্রবণতাও বাড়ছে।
উপসংহার
যদিও সরকারের মূল নীতিনির্ধারকেরা অগ্নিপথের মতো একটি আকর্ষণীয় হিসেবে বিবেচিত প্রকল্পের বিরুদ্ধে হিংসাত্মক ঘটনাবহুল দেশব্যাপী বিক্ষোভ দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন, তাঁদের গত কয়েক বছরের সতর্কতামূলক সংকেতগুলি অগ্রাহ্য করা উচিত নয়। বেসরকারি ক্ষেত্রের কর্মসংস্থানে ব্যাপক হ্রাস, বিশেষ করে কাজের গুণমান এবং কমে যাওয়া মেয়াদের নিরাপত্তার কারণে যুবকরা মরিয়া হয়ে সরকারি চাকরির দিকে নজর দিচ্ছে। সম্প্রতি রেলওয়েতে কয়েক হাজার ডি–ক্যাটাগরির চাকরির জন্য যোগ্য যুবকদের (১৫ মিলিয়ন) রেকর্ড সংখ্যক আবেদন, এবং রেল ও সেনাবাহিনীতে নিয়োগে বিলম্ব নিয়ে বিহার ও উত্তরপ্রদেশে হিংসাত্মক বিক্ষোভের মধ্যে এই মনোভাবই প্রতিফলিত হয়েছে। তা সত্ত্বেও সরকার ও অন্য অংশীদারদের তরফ থেকে দৃশ্যমান কোনও উদ্যোগ নেই। সঙ্কটের কথা মাথায় রেখে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার ১৮ মাসের মধ্যে মিশন মোডে দশ লক্ষ লোক নিয়োগের কথা ঘোষণা করেছে। যদিও এটি একটি স্বাগত পদক্ষেপ, তবে বেকারত্বের পরিমাণ এবং ভারতে এখন যে জনসংখ্যাগত উত্থান হচ্ছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে এটি এখনও সমুদ্রে এক বিন্দু জলমাত্র। আজ আমাদের কাজের উপযুক্ত বয়সের জনসংখ্যা নির্ভরশীল জনসংখ্যার চেয়ে বেশি। বর্তমানে ভারতীয়দের দুই–তৃতীয়াংশই কাজের বয়সী। সংক্ষেপে, সাম্প্রতিক সময়ে যা দেখা গেছে তার চেয়েও বিপুল সংখ্যক মানুষ রাস্তায় নেমে আসার আগে সমস্ত ক্ষেত্র জুড়ে সরকারগুলিকে ক্রমবর্ধমান চাকরির সঙ্কট এবং তরুণদের ক্রমবর্ধমান হতাশাকে গুরুত্ব দিতে হবে।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.