Expert Speak India Matters
Published on Mar 16, 2022 Updated 5 Days ago

প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে গবেষণা ও উন্নয়নে বাজেট বরাদ্দের দিক থেকে ভারত চিনের চেয়ে অনেক পিছিয়ে।

প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়নে কম বিনিয়োগ: ভারতের প্রতিরক্ষা স্বদেশিকরণে দুর্বলতার মূল কারণ

Image Source: Prabuddha Jain — Flickr/CC BY-ND 2.0

প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়নে কম বিনিয়োগ: ভারতের প্রতিরক্ষা স্বদেশিকরণে দুর্বলতার মূল কারণ

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির গোড়ায় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন তাঁর পেশ করা বাজেটে ২০২২-২৩ সালে প্রতিরক্ষা খাতে মোট ৭০২৩ কোটি মার্কিন ডলার বরাদ্দ করেছিলেন, যা জাতীয় বাজেটের প্রায় ১৩.৩ শতাংশ। সাম্প্রতিক বাজেটে গবেষণা ও উন্নয়ন (আরঅ্যান্ডডি) খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে মাত্র ১২৪ কোটি মার্কিন ডলার, যা মোট প্রতিরক্ষা বাজেটের ১.৭ শতাংশ। বেসরকারি ক্ষেত্রের শিল্প, স্টার্ট আপ ও অ্যাকাডেমিক প্রতিষ্ঠানের জন্য আরঅ্যান্ডডি বাজেটের ২৫ শতাংশ বা ৩১ কোটি বরাদ্দ শুধু উদ্বেগজনক নয়, হাস্যকর ভাবে কম। কিন্তু এই সংখ্যাকে এবং পুরো আরঅ্যান্ডডি বাজেটকে একটি উল্লেখযোগ্য বরাদ্দ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী সীতারামনের বাজেট বক্তৃতার পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের বিবৃতি বিবেচনা করুন: “প্রতিরক্ষা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ বরাদ্দ করা হয়েছে। আরঅ্যান্ডডি বাজেটের ২৫ শতাংশ স্টার্টআপ ও বেসরকারি সংস্থাগুলির জন্য সংরক্ষিত রাখার প্রস্তাব একটি চমৎকার পদক্ষেপ।’‌’‌ ভারত সরকার বেসরকারি শিল্পের ভয় দূর করার চেষ্টা করতে এই বলে আশ্বস্ত করেছে যে এর মধ্যে গ্যারান্টিযুক্ত অর্ডার ও সরঞ্জাম সংগ্রহ থাকবে। সরকারের কেনাকাটা থেকে যে বেসরকারি শিল্প উদ্যোগগুলি লাভ করতে পারে তার মধ্যে থাকবে টাটা গ্রুপ, মাহিন্দ্রা ডিফেন্স, কল্যাণী গ্রুপ, লারসেন অ্যান্ড টুব্রো, আদানি অ্যারোস্পেস অ্যান্ড ডিফেন্স, ভিইএম টেকনোলজিস, তারা সিস্টেমস অ্যান্ড টেকনোলজিস, এসইসি ইন্ডাস্ট্রিজ, সাইয়েন্ট, আলফা ডিজাইন, অ্যাস্ট্রা মাইক্রোওয়েভ প্রোডাক্টস, সিগমা ইলেকট্রো সিস্টেমস, ইকনমিক এক্সপ্লোসিভ্‌স, এমকেইউ, এসএসএস ডিফেন্স ও ইন্ডো-এমআইএম।

বেসরকারি ক্ষেত্রের শিল্প, স্টার্ট আপ ও অ্যাকাডেমিক প্রতিষ্ঠানের জন্য আরঅ্যান্ডডি বাজেটের ২৫ শতাংশ বা ৩১ কোটি বরাদ্দ শুধু উদ্বেগজনক নয়, হাস্যকর ভাবে কম। কিন্তু এই সংখ্যাকে এবং পুরো আরঅ্যান্ডডি বাজেটকে একটি উল্লেখযোগ্য বরাদ্দ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

এটা অবশ্য ঠিক যে ১২৪ কোটি সংখ্যাটির মধ্যে পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সম্পর্কিত গবেষণা ও উন্নয়নের মতো কৌশলগত খাতের ব্যয় ধরা নেই। তা সত্ত্বেও এই আরঅ্যান্ডডি বাজেট বিশ্বের প্রধান সামরিক শক্তিদের ব্যয়ের তুলনায় যে কোনও মানদণ্ডে খুবই কম। এর থেকে বোঝা যায় কেন ভারত একটি নির্ভরযোগ্য ও সক্ষম দেশীয় প্রতিরক্ষা শিল্প তৈরিতে পিছিয়ে আছে। ভারতের জন্য সব থেকে বড় পরীক্ষা হল তার গবেষণা ও উন্নয়ন ব্যয় চিনের তুলনায় কী রকম। সারণি ১-এ পিপলস রিপাবলিক অফ চায়না (পিআরসি)–র প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন ব্যয়ের উপর এক ঝলক নজর দিলেই পাঠক আভাস পাবেন যে কেন ভারত বিশ্বের অন্যতম প্রধান সামরিক শক্তির, যে কি না তার প্রতিবেশী এবং যার সঙ্গে ভারত গুরুতর সামরিক প্রতিযোগিতার মুখোমুখি, তার সঙ্গে কার্যকর ভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হিমসিম খাচ্ছে। ওই সারণিতে যেমন দেখানো হয়েছে, ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে চিনারা তাদের প্রতিরক্ষা বাজেটের প্রায় ৯ থেকে ১০ শতাংশ ব্যয় করেছে প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়নে। নিচে দেওয়া তথ্য ২০১৭-১৯ এই তিন বছরের জন্য স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (‌এসআইপিআরআই)‌–এর ২০২০-২১ সালের রিপোর্ট থেকে নেওয়া। সারণি ১-এর সমস্ত তথ্য লেখক পূর্ণ সংখ্যায় রূপান্তরিত করেছেন, আর তা ন্যান তিয়ান ও ফেই সু রচিত এসআইপিআরআই-এর ‘‌‘‌আ নিউ এস্টিমেট অফ চায়না’‌স মিলিটারি এক্সপেনডিচার’‌’–এ দেওয়া ‌তথ্য থেকে সামান্য তারতম্যের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে। ২০২০ থেকে ২০২১ সালের তথ্য লেখক পাননি। এই সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও পাঠকদের মনে রাখা উচিত যে চিনের ২০২০ ও ২০২১ সালের আরঅ্যান্ডডি–র জন্য ব্যয় করা অর্থের পরিমাণ সারণি ১-এ দেখানো তথ্য থেকে খুব বেশি পৃথক হওয়ার সম্ভাবনা নেই।


এমনকি যদি সারণি ১–এর এসআইপিআরআই তথ্যকে খুব রক্ষণশীল হিসেব বলে বিবেচনা করা হয়, তবুও আরঅ্যান্ডডি খাতে প্রতিরক্ষা ব্যয়ের ক্ষেত্রে ভারত এখনও চিনের তুলনায় খুবই দুর্বল জায়গায় রয়েছে;‌ আর যদি ভারতীয় তথ্যের ভিত্তিতে দেখা হয়, তবে এসআইপিআরআই চিনের প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য বাজেট নিয়ে যা বলেছে তার তুলনায় আরও খারাপ জায়গায় আছে ভারত। ২০১৯-২০২০ সালে লোকসভার প্রতিরক্ষা বিষয়ক স্থায়ী কমিটির প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী চিনের আরঅ্যান্ডডি খাতে ব্যয় চিনা প্রতিরক্ষা বাজেটের ২০ শতাংশ। এই সংখ্যাটি সারণি ১-এ দেখানো এসআইপিআরআই অনুমানের দ্বিগুণ। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ২০১৯-২০২০ সালে জমা দেওয়া রিপোর্টে বলেছে যে ভারতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা ডিআরডিও–কে ধারাবাহিক ভাবে প্রতিরক্ষা বাজেটের ৫-৬ শতাংশ বরাদ্দ করা হয়েছে। খুব সম্ভবত প্রতিরক্ষা বাজেটে যাকে ‘কৌশলগত পরিকল্পনা’‌ বা কৌশলগত খাত বলে, তা বাদ দিয়ে এই হিসেব দেওয়া হয়েছে। এই সংখ্যাটি এখনও এসআইপিআরআই-এর অনুমানের চেয়ে প্রায় দু’‌গুণ কম, এবং প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য চিনের বরাদ্দের বিষয়ে লোকসভার স্থায়ী কমিটির অনুমানের চেয়ে চারগুণ কম। যাই হোক, ২০২২-২৩ সালের বর্তমান প্রতিরক্ষা বাজেটে আরঅ্যান্ডডি বরাদ্দ মোট প্রতিরক্ষা বাজেটের ২ শতাংশেরও কম, যা আরও বড় পার্থক্য প্রকাশ করে। প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য বৃহত্তর বাজেট সহায়তা না–থাকায় সরকার ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রক অন্যান্য উপায়ের সন্ধান করেছে। লোকসভার স্থায়ী কমিটির রিপোর্ট ২০২০-২১ অনুযায়ী প্রতিরক্ষা মন্ত্রক আরও প্রযুক্তি সন্ধানের বিষয়টি উল্লেখ করতে গিয়ে বলেছে, মোদী সরকার ২০২০ সালে স্বয়ংক্রিয় রুটের মাধ্যমে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) ৭৪ শতাংশ বৃদ্ধির কথা ঘোষণা করেছিল, এবং তা প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য বাজেট–সহায়তার সীমাবদ্ধতা সামাল দেওয়ার ব্যবস্থা করবে বা ক্ষতিপূরণ করবে। এর লক্ষ্য হবে ‘‌…অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি’‌ আকর্ষণ করা। তবে এই ধরনের লাভ পাওয়ার কোনও প্রমাণ এখনও অস্পষ্ট, এবং এফডিআই ৪৯ শতাংশ থেকে ৭৪ শতাংশে বাড়ানোর সিদ্ধান্তটির ফল পেতে আরও সময় লাগবে। তা ছাড়া এটি প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের দাবিমতো বিদেশি বিক্রেতাদের কাছে উচ্চ-মানের প্রযুক্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে আকর্ষণীয় হবে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন আছে।

২০২২-২৩ সালের বর্তমান প্রতিরক্ষা বাজেটে আরঅ্যান্ডডি বরাদ্দ মোট প্রতিরক্ষা বাজেটের ২ শতাংশেরও কম, যা আরও বড় পার্থক্য প্রকাশ করে। প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য বৃহত্তর বাজেট সহায়তা না–থাকায় সরকার ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রক অন্যান্য উপায়ের সন্ধান করেছে।

ভারত সরকার তার পরিচালিত প্রতিরক্ষা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়নে ততটা ব্যয় যদি না করে, তা হলে ভারতীয় বেসরকারি ক্ষেত্রের সংস্থাগুলি কি সরকারি বিনিয়োগের অভাব পূরণ করতে পারছে? এখানে তথ্য আরও কম বা অস্পষ্ট। ভারতের বেসরকারি ক্ষেত্রের সংস্থাগুলি অভ্যন্তরীণ প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়নে কতটা বিনিয়োগ করে, তার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া কঠিন। যেমন ভারতের বৃহত্তম বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থা, এবং প্রতিরক্ষা হার্ডঅয়্যার ডেভেলপমেন্ট ও ম্যানুফ্যাকচারিং–এ অগ্রণী লারসেন অ্যান্ড টুব্রো (এলঅ্যান্ডটি) তার আয়ের ভিত্তিতে অভ্যন্তরীণ আরঅ্যান্ডডি–তে বিনিয়োগ করে, কিন্তু তার সঠিক পরিমাণ অজানা। তা ছাড়া যদি প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদে স্বদেশিকরণ সংহত করতে হয়, এবং প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য সরকারি অর্থায়নের অভাব বেসরকারি উদ্যোগকে তার অভ্যন্তরীণ গবেষণা দিয়ে পূরণ করতে হয়, তবে তার জন্য উৎসাহ প্রয়োজন। একজন সিনিয়র এলঅ্যান্ডটি কর্মকর্তা যেমন বলেছেন, এই উৎসাহ দিতে হবে অবশ্যই কর কমিয়ে, এবং সেই সঙ্গে বেসরকারি সংস্থা যাতে সরকারি অর্থে পরিচালিত প্রতিরক্ষা আরঅ্যান্ডডি কর্মসূচির মতোই সুযোগ–সুবিধা পায় তার ব্যবস্থা করে। এটা হতেই পারে যে এলঅ্যান্ডটি ও অন্যান্য ভারতীয় ব্যক্তিগত উদ্যোগ যারা প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের উন্নয়ন ও উৎপাদনে জড়িত তারা ব্যবসায়িক গোপনীয়তার স্বার্থে তাদের অভ্যন্তরীণ আরঅ্যান্ডডি বিনিয়োগ সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করতে চায় না। ফলে, যতক্ষণ না প্রকাশ্যে আরও তথ্য পাওয়া যায়, প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়নের প্রশ্নে বেসরকারি ক্ষেত্রের অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগের সুযোগ, প্রকৃতি এবং প্রকরণ সম্পর্কে ধারণা অনুমানমূলক ও অনির্ধারিত থেকে যাবে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.