Expert Speak Raisina Debates
Published on Mar 15, 2022 Updated 5 Days ago

রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘর্ষ বেড়ে চলার সঙ্গে সঙ্গে জার্মানি শেষ পর্যন্ত ইউক্রেনকে সমর্থন করার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার মূল্যবোধকে বাঁচিয়ে রাখার যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মূল্যবোধভিত্তিক কূটনীতির পথে চলা
মূল্যবোধভিত্তিক কূটনীতির পথে চলা

মূল্যবোধের কথা জার্মানির বিদেশনীতি নির্ধারকদের কাছে নতুন কোনও বিষয় নয়। কিন্তু ইউক্রেনের উপরে রাশিয়ার হামলার ঘটনা অবশেষে জার্মানিকে সেই পথে হাঁটতে বাধ্য করেছে। জার্মান রাজনীতিতে ফেব্রুয়ারির শেষ সাত দিন এক দিকে উত্তেজনাময় এবং অন্য দিকে ছক ভাঙার সাক্ষী থেকেছে।

২২ ফেব্রুয়ারি হামবুর্গের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট তথা জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ পূর্ব ইউক্রেনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের উস্কানিমূলক কার্যকলাপের প্রেক্ষিতে নর্ড স্ট্রিম ২-এর কাজ থামানোর আদেশ দেন। এই সিদ্ধান্ত একাধিক কারণে নাটকীয়: জ্বালানির জন্য রাশিয়ার উপরে জার্মানির নির্ভরতা স্কোলজের পূর্বসূরি অ্যাঞ্জেলা মার্কেল-সহ (এক ক্রিশ্চান ডেমোক্র্যাট) বেশ কিছু রাজনীতিককে এর আগে এই পাইপলাইন প্রকল্পের কাজ রদ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে বিরত রেখেছিল। যেখানে সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটরা রাশিয়ার প্রতি তাঁদের নরম মনোভাবের জন্য অতীতেও সমালোচিত হয়েছেন (রুশ্লান্দভেরস্তেহের), সেখানে দলীয় রাজনীতির প্রেক্ষিতে জার্মানির রাশিয়া-নীতিতে এ হেন অভিনব পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য স্কোলজ অধিক প্রশংসার দাবি রাখেন।

জার্মানির অপ্রীতিকর ইতিহাস তাকে সংঘর্ষপ্রবণ অঞ্চলগুলিতে অস্ত্র রফতানির উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে বাধ্য করেছে। এই আদর্শ মেনেই জার্মানি গত মাসে এস্তোনিয়াকে ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠাতে বারণ করে।

২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ওলাফ স্কোলজ আরও তিনটি উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এগুলির মধ্যে প্রথমটি হল, খানিক দ্বিধার পরও তিনি রাশিয়ার সঙ্গে সুইফট ট্রানজ্যাকশনের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে রাজি হয়েছেন। এই সিদ্ধান্ত কড়া হলেও তা মহার্ঘ। কারণ এর অর্থনৈতিক প্রভাব পড়বে জার্মানির উপরেও। দ্বিতীয়ত, জার্মানির অপ্রীতিকর অতীত ইতিহাস তাকে সংঘর্ষপ্রবণ অঞ্চলগুলিতে অস্ত্র রফতানির উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে বাধ্য করেছে। এই আদর্শ মেনেই জার্মানি গত মাসে এস্তোনিয়াকে ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠাতে বারণ করে। ওলাফ স্কোলজ বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে অবস্থান বদলের এক অভূতপূর্ব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ২৭ ফেব্রুয়ারি জার্মান পার্লামেন্টের এক বিশেষ অধিবেশনে আলোড়ন ফেলে দেওয়া এক বক্তৃতায় স্কোলজ বলেন, বর্তমান সংঘর্ষে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়ানোর মাধ্যমে জার্মানি ইউরোপ, গণতন্ত্র এবং ‘ইতিহাসের সঠিক পক্ষের’ পাশে দাঁড়াবে। তাঁর উল্লিখিত বাস্তব পথগুলির মধ্যে ইউক্রেনে সমরাস্ত্র পাঠানোর কাজটির উপরে তিনি সর্বাধিক গুরুত্ব দেন: ‘রুশ আক্রমণ একটি বাঁক বদলের সূচনা করেছে। পুতিনের আগ্রাসী সেনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ইউক্রেনকে সর্বতো ভাবে সাহায্য করাই আমাদের কর্তব্য।’ এখন জার্মানি ইউক্রেনকে ট্যাঙ্ক-বিধ্বংসী অস্ত্র এবং স্টিঙ্গার ক্ষেপণাস্ত্র জোগান দেবে। এবং তৃতীয়ত, ন্যাটো প্রতিরক্ষা খাতে খরচ বৃদ্ধি করার ব্যাপারে জার্মানির ঘোষণাও সমান তাৎপর্যপূর্ণ। এমনটা করার মাধ্যমে জার্মানি এক জন নিরাপত্তাপ্রদানকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ারও ইঙ্গিত দিয়েছে।

যে দেশে আলাপ-আলোচনার মধ্যে দিয়ে উঠে আসা গণতন্ত্রকে গৌরবান্বিত করা হয় (কোনও কোনও সময় তা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছয় যে কিছুই না করার বা কোনও মতে কাজ চালানোর কৌশল হয়ে দাঁড়ায়) এবং যে দেশ ইতিহাসের ভারে ভারাক্রান্ত, তার পক্ষে কার্যকর পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে বৃহৎ দায়িত্ব গ্রহণের দিকে অগ্রসর হওয়ার প্রচেষ্টা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। এই সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্কোলজের নেতৃত্ব অপরিহার্য হলেও এ ক্ষেত্রে গ্রিন পার্টিতে তাঁর সেই সব জোট সদস্যের সহযোগিতাও নিঃসন্দেহে উল্লেখযোগ্য, যাঁরা আদর্শ এবং মূল্যবোধের প্রচারের উপরে ভিত্তি করেই ক্ষমতায় এসেছিলেন। জার্মানির সক্রিয় ভূমিকা আমাদের উদ্দীপিত করেছে এবং হয়তো তা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের জন্যও এক অনুঘটকের ভূমিকা পালন করছে: ইউক্রেনের জন্য অস্ত্র ক্রয়ের ই ইউ-এর অভূতপূর্ব সিদ্ধান্ত এমনটাই দর্শায়

জার্মানির সক্রিয় ভূমিকা আমাদের উদ্দীপিত করেছে এবং হয়তো তা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের জন্যও এক অনুঘটকের ভূমিকা পালন করছে: ইউক্রেনের জন্য অস্ত্র ক্রয়ের ই ইউ-এর অভূতপূর্ব সিদ্ধান্ত এমনটাই দর্শায়।

অনেকেই অবশ্য এই সব সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন: ইউক্রেনের উপর আক্রমণ শুরু করার আগেই পুতিনের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দেওয়া উচিত ছিল এবং তেমনটা হলে এই যুদ্ধ হয়তো শুরু হওয়ার আগেই থামানো যেত। কিন্তু জার্মানি যখন অবশেষে মূল্যবোধের পথে হাঁটতে শুরু করেছে, তখন আমাদেরও উচিত পিছনে না তাকিয়ে সামনের দিকে নজর দেওয়া।

এ কথা স্পষ্ট যে, স্কোলজ এমন ভাবে হার্ড পাওয়ারের (সামরিক এবং অর্থনৈতিক উপায়ে অপর পক্ষের ব্যবহারকে প্রভাবিত করা) গুরুত্ব অনুভব করেছেন যেমনটা তাঁর পূর্বসূরিরা কখনও করেননি। এক জন প্রকৃত ইউরোপীয় হওয়ার দরুন তিনি ভালই জানেন যে, ইউক্রেনে পুতিনের আগ্রাসন সার্বিক ভাবে ইউরোপীয় নিরাপত্তার পক্ষেও আশঙ্কাজনক। যদিও প্রশ্ন থেকে যায়, তিনি কি বিশ্বমঞ্চের দিকে তাঁর দৃষ্টি প্রসারিত করতে পারবেন? এবং আন্তর্জাতিক প্রেক্ষিতে অতি প্রয়োজনীয় নেতৃত্ব প্রদানে সচেষ্ট হবেন? তাঁর প্রতিবেশে পুতিনই একমাত্র স্বৈরাচারী নন, যাঁর ব্যাপক আগ্রাসী পরিকল্পনা রয়েছে: প্রেসিডেন্ট শি-ও তাইওয়ানের প্রতি একই রকমের অভিসন্ধি দেখিয়েছেন। এখনও পর্যন্ত ইউক্রেন সঙ্কট এই দুই শক্তিকে আরও কাছাকাছি আসার সুযোগ করে দিয়েছে। স্কোলজ কি সেই চ্যান্সেলর হয়ে উঠতে পারবেন যিনি চিনকে ‘অংশীদার, প্রতিযোগী এবং প্রতিদ্বন্দ্বী’ বলে অভিহিত করার ইউরোপীয় নমনীয়তা ভেঙে তার যোগ্য প্রত্যুত্তর দিতে পারবেন, যেমনটা তিনি রাশিয়ার ক্ষেত্রে করতে পেরেছেন? হামবুর্গের মেয়র হিসেবে স্কোলজ সফল ভাবে তাঁর শহরে চিনা বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সমর্থ হয়েছিলেন। জার্মানির চ্যান্সেলর হিসেবে বর্তমানে তাঁর উপরে এমন এক প্রশাসনিক পরিকাঠামো গড়ে তোলার গুরুভার বর্তায় যা ইউরোপ মহাদেশ এবং সমমনস্ক, গণতান্ত্রিক অংশীদার দেশগুলিকে চিনের সম্প্রসারণবাদ থেকে রক্ষা করবে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.

Authors

Amrita Narlikar

Amrita Narlikar

Dr. Amrita Narlikar’s research expertise lies in the areas of international negotiation, World Trade Organization, multilateralism, and India’s foreign policy & strategic thought. Amrita is non-resident ...

Read More +
Samir Saran

Samir Saran

Samir Saran is the President of the Observer Research Foundation (ORF), India’s premier think tank, headquartered in New Delhi with affiliates in North America and ...

Read More +