Expert Speak Raisina Debates
Published on Apr 11, 2022 Updated 7 Days ago

সরবরাহ শৃঙ্খল প্রভাবিত হওয়ায় রাশিয়ার উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলি বিশ্ব অর্থনীতিকে ভারাক্রান্ত করছে।

রাশিয়ার বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা: ‘‌থাউজেন্ড কাটস’‌ কৌশলটি অনভিপ্রেত ক্ষতি করছে
রাশিয়ার বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা: ‘‌থাউজেন্ড কাটস’‌ কৌশলটি অনভিপ্রেত ক্ষতি করছে

যুদ্ধের প্রয়োজনের অনুপস্থিতির পরিবর্তে যুদ্ধের অনুপস্থিতির উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা নিষ্ক্রিয়তার ভারসাম্য যে কতটা ভঙ্গুর, তা ইউক্রেন সংকট দেখিয়ে দিয়েছে। সব দেশের আস্থা ও সম্মান পেতে পারে এমন একটি বিশ্বজনীন ন্যায়সঙ্গত ও ক্ষমতায়িত শাসন-প্রণয়ন এখনও অনেকটা দূরের পথ। তা বাস্তবে পরিণত না–হওয়া পর্যন্ত দ্রুত ভূখণ্ডগত লাভের জন্য নিরাপত্তার ফাঁকগুলি ব্যবহার করার প্রলোভন সর্বদাই থাকবে।

শান্তি বজায় আছে, এমন ভান করা বেশ লোভনীয়। ক্ষেপণাস্ত্র–ক্ষ্যাপা উত্তর কোরিয়ার জঙ্গি প্রতিবাদী চেহারাকে অভ্যন্তরমুখী ও অর্থনৈতিক ভাবে বদ্ধ এক শাসনব্যবস্থার টিকে থাকার অভিপ্রায়ে দেশের মানুষকে খুশি রাখার প্রয়াস বলে উপেক্ষা করা সুবিধাজনক। কিন্তু রাশিয়া, চিন বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো সামরিক মহাশক্তির ক্ষেত্রে সেই একই অভিপ্রায় পুরো বিশ্বের পক্ষে বিপজ্জনক, যদি না ভূ-অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক মৌলিক বিষয়গুলিকে পরিবর্তনের সুস্পষ্ট প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতির ভিত্তিতে কাজ করার ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বৈশ্বিক মধ্যস্থতা–ব্যবস্থা গড়ে ওঠে।

ক্ষমতাহীন বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলি আদর্শ স্তরের চেয়ে নিম্নমানের সমাধানকেই উৎসাহিত করে

একটি কার্যকর মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানের অনুপস্থিতিতে রাশিয়ার নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগ উপেক্ষা করে পূর্ব দিকে ন্যাটোর প্রভাবক্ষেত্র প্রসারিত করতে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমী জোটের পক্ষে সুবিধা হয়েছিল। আবার সেই ঘটনাই রাশিয়াকে সব কিছু ওলটপালট করে দিতে এবং সামরিক উদ্যোগে বিতর্কিত এলাকা দখলে উৎসাহিত করেছে। এই পরিস্থিতি আবার চিনকে কোনও পক্ষ না–নিয়ে বসে থাকার ক্ষমতা জুগিয়েছিল, এবং তার রাশিয়ার সামরিক পদক্ষেপের নিন্দা না–করার ঘটনা রাশিয়াকে উৎসাহিত করেছিল। এই পুরো বিষয়টি ন্যায়সঙ্গত, বৈশ্বিক শান্তি কার্যকর করার প্রশ্নে পশ্চিমী জোটের ক্ষমতার ক্ষয়ের ছবিটাই তুলে ধরে। একই ভাবে ভারতও সুযোগ পেয়ে গেছে তার দীর্ঘমেয়াদি সামরিক হার্ডঅয়্যার সরবরাহকারী এবং কৌশলগত অংশীদার রাশিয়ার নিন্দা করা থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে তার নিকট-মেয়াদি জাতীয় স্বার্থপূরণ করার৷

সময়ে সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক প্রযুক্তিগত ও সামরিক ক্ষমতাকে অভিবাদন জানানোর বিনিময়ে ব্যবহারিক, খরচ-সচেতন ইউরোপ তাদের প্রতিরক্ষা–বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর।

ক্রিমিয়া (২০১৪) অধিকার করার জন্য রাশিয়ার মদমত্ত সামরিক শক্তি ব্যবহারের ঘটনার থেকেও ইউরোপ চোখ ফিরিয়ে রেখেছিল। রাশিয়াকে শুধু মৃদু ভর্ৎসনা করা হয়েছিল, কারণ দায় হিসেবে ছিল সস্তা প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়ার সুযোগ ও ইউরোপের কার্বন নির্গমন রোধের লক্ষ্যগুলি। সময়ে সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক প্রযুক্তিগত ও সামরিক ক্ষমতাকে অভিবাদন জানানোর বিনিময়ে ব্যবহারিক, খরচ-সচেতন ইউরোপ তাদের প্রতিরক্ষা–বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর। উল্টোদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চায় আটলান্টিক বা প্রশান্ত মহাসাগরের দূরবর্তী ভূ-রাজনৈতিক ঘটনা–কেন্দ্রগুলির ব্যবস্থাপনা করতে, যাতে মার্কিন অর্থনীতি আরও সম্পদ তৈরি করে যেতে পারে।

ইউক্রেন যে–ধরনের বেপরোয়া কাণ্ডকারখানার মুখোমুখি হচ্ছে, সে সম্পর্কে ভারত অপরিচিত নয়। কারও তাকে গিলে খাওয়ার পক্ষে ভারত অনেক বড়, এবং অনিয়ন্ত্রিত ছেড়ে দেওয়ার জন্যও অনেক বেশি বিস্তৃত। কিন্তু সে–ও চিনের একতরফা আগ্রাসনের শিকার হচ্ছে। ইউক্রেনের মতোই ভারতও সশস্ত্র সংঘাত সত্ত্বেও চিনের সঙ্গে বিতর্কিত সীমান্তের পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

গত তিন দশকে দুই এশীয় প্রতিবেশীর আপেক্ষিক শক্তি যেমন ভিন্ন হয়ে গেছে, ভারতও এই বিষয়ে চিনা সংবেদনশীলতার প্রতি অনেক বেশি শ্রদ্ধাশীল হয়ে উঠেছে। কূটনীতি, আলোচনা ও সমঝোতা সফল ভাবে এই বিরোধকে একটি গুরুতর সামরিক সক্রিয়তার চেহারা নিতে দেয়নি। ভারত কিন্তু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে, যে কিনা আরও দুর্বল প্রতিপক্ষ, গুরুতর সংঘাতে যেতে ইচ্ছুক ছিল।

দক্ষিণ ও পূর্ব চিন সাগরে চিনের বেপরোয়াপনার বিরুদ্ধে আসিয়ান, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার পক্ষ থেকেও একই ধরনের সতর্ক প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। যথেষ্ট উত্তেজনা সত্ত্বেও ‘‌যুদ্ধের অনুপস্থিতি’‌র ডকট্রিন বজায় রাখা হয়েছে।

কূটনীতি, আলোচনা ও সমঝোতা সফল ভাবে এই বিরোধকে একটি গুরুতর সামরিক সক্রিয়তার চেহারা নিতে দেয়নি। ভারত কিন্তু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে, যে কিনা আরও দুর্বল প্রতিপক্ষ, গুরুতর সংঘাতে যেতে ইচ্ছুক ছিল।

ক্রমশ শক্তি বাড়িয়ে–চলা চিন যে তার বা বিশ্বের জন্য কোনও বিপদ নয়, এমন কাল্পনিক কথন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কাজে লাগে। সমৃদ্ধ ও স্থিতিস্থাপক চিন, যে পণ্যের জন্য ক্ষুধার্ত এবং সকলের জন্য কম খরচে উৎপাদনে পারদর্শী, নিশ্চিত ভাবেই বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সক্রিয়তা বাড়িয়েছে এবং উপভোগের মাত্রাকে উচ্চ করেছে। শুধু তা–ই নয়, সে বৈশ্বিক বৃদ্ধির হার বাড়িয়েছে, এবং গত তিন দশক ধরে বিশ্বজনীন দারিদ্র্য হ্রাস করেছে। কিন্তু তার অর্থনীতি সমৃদ্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চিনের বৈশ্বিক উচ্চাকাঙ্ক্ষাও বেড়েছে।

অমীমাংসিত স্থানীয় বিরোধের বিশ্বব্যাপী মূল্য

আগ্রাসনবাদীদের প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতাগুলি এক বিশ্রী পরিস্থিতি তৈরি করেছে, যেখানে আগ্রাসী দেশকে সামরিক ভাবে মোকাবিলা করার বিকল্প হিসেবে তার উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে তাকে অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু যে দেশটি বিশ্বব্যাপী গম, অপরিশোধিত তেল ও গ্যাস, এবং ধাতু বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত, সেই রাশিয়ার মতো একটি অর্থনীতির উপর নিষেধাজ্ঞা এবং তার পরিণতিস্বরূপ আঞ্চলিক নৌ-বাণিজ্যের কেন্দ্র কৃষ্ণ সাগর অঞ্চলে তৈরি হওয়া অনিশ্চয়তা গোটা বিশ্বে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে৷

অতিমারির পরেই আসা এই সংঘাত বিশ্বব্যাপী সরবরাহের ব্যাঘাতকে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রসারিত করেছে। যদি সংঘাত একটি অচলাবস্থায় পরিণত হয়, সময়ের সঙ্গে বিকল্প সরবরাহ পথ ও উৎসগুলি বিকশিত হতে পারে। ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা কিছুটা তুলে নেওয়া যেতে পারে, এখনকার তেলের কূপগুলিতে উৎপাদন বাড়ানো যেতে পারে, এবং ইরানের আর্থিক লেনদেনের নিষেধাজ্ঞাগুলির সমাধান বেরিয়ে আসতে পারে। কিন্তু রাশিয়ান তেলের দৈনিক ১০ মিলিয়ন ব্যারেল উৎপাদন ইরানের তিনগুণেরও বেশি, এবং ফলস্বরূপ সেই ঘাটতি পূরণ করা কঠিন।

রাশিয়ার তেলের উপর নিষেধাজ্ঞার অসম প্রভাব — বিশ্বব্যাপী সরবরাহের এক দশমাংশেরও বেশি

নিচের সারণিটি রাশিয়ার তেল বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞাগুলি বিভিন্ন অঞ্চলে কী ধরনের অসম প্রভাব ফেলতে পারে তা চিত্রিত করে। তেলের জন্য সবচেয়ে ক্ষুধার্ত অঞ্চল হল এশিয়া প্যাসিফিক। সারণিটি একটি সরল ধারণার ভিত্তিতে তৈরি যে আঞ্চলিক ভাবে উৎপাদিত তেল অভ্যন্তরীণ ভাবে ব্যবহৃত হতে পারে। কিন্তু তা উত্তর আমেরিকার বাইরে অসত্য, কারণ তেল পরিবহণ পাইপের সংযোগ নাও থাকতে পারে, এমনকি ইউরোপেও। আরও গুরুত্বপূর্ণ ভাবে, শোধনাগারগুলি এক একটি নির্দিষ্ট ধরনের অপরিশোধিত তেলের (হালকা এবং উদ্বায়ী থেকে ভারী, অ-তরল তেল পর্যন্ত মোট চার প্রকার) জন্য তৈরি করা হয়েছে। কাজেই সমস্যা এখানে যা চিত্রিত হয়েছে তার চেয়ে বড়।

লেখচিত্র

সূত্র: বিপি স্ট্যাটিসটিক্যাল রিভিউ ২০২০

মাথাপিছু আয়ের ভিত্তিতে ২৫টি নিম্ন আয়ের অর্থনীতি (সুদান ও দক্ষিণ সুদান ব্যতীত) এবং ভারত–সহ ৫৫টি নিম্ন–মধ্যম আয়ের অর্থনীতির দুই-তৃতীয়াংশের বেশি (বিশ্ব ব্যাঙ্কের তথ্য ২০২০ অনুযায়ী)‌ তেলের নেট আমদানিকারক। অন্যদিকে বিভিন্ন অঞ্চল জুড়ে প্রায় ৬০টি অর্থনীতি, যেগুলো মূলত কেন্দ্রীভূত উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ ও লাতিন আমেরিকা, মধ্য এশিয়া ও রাশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যে, তারা হল নেট তেল রফতানিকারক। বাকি বেশিরভাগ অর্থনীতি, প্রধানত ইউরোপ, এশিয়া প্যাসিফিক (অস্ট্রেলিয়া ও মালয়েশিয়া ছাড়া) ও আফ্রিকার (উত্তর ও পশ্চিম আফ্রিকার কিছু অংশ ব্যতীত), নেট আমদানিকারক।

জ্বালানির দামের বৃদ্ধি এই দুর্বল অর্থনীতিগুলিকে সবচেয়ে বেশি আঘাত করবে। দরিদ্রতম অর্থনীতিতে, যেখানে চাপ কমানোর জন্য আর্থিক সংস্থান বা তেলের স্ব-উৎপাদন থেকে পাওয়া অর্থ দিয়ে ভর্তুকি দেওয়ার সম্ভাবনা নেই, সেখানে মূল্যস্ফীতির বর্ধিত হার প্রকৃত বৃদ্ধি, আয় ও উপভোগ হ্রাস করবে, এবং বিশ্বের বাণিজ্য ও দারিদ্রের ক্ষেত্রে তার কুপ্রভাব পড়বে। ইন্টারন্যাশনাল মনিটরি ফান্ড তার ২০২২ সালের বৈশ্বিক বৃদ্ধি নিয়ে ফেব্রুয়ারি ২০২২–এর অনুমান এখন কমিয়ে ৪.২ শতাংশের নিচে নিয়ে যেতে প্রস্তুত। ভারতেও মূল্যস্ফীতির হার অর্থবর্ষ ২০২৩-এর জন্য ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ৪.৫ শতাংশের অনুমান ছাপিয়ে যেতে পারে, আর বিশ্ব বাজারে অব্যাহত অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা শক্তিশালী বৃদ্ধির পুনরুজ্জীবনের পথে প্রাথমিক বাধা হবে।

দরিদ্রতম অর্থনীতিতে, যেখানে চাপ কমানোর জন্য আর্থিক সংস্থান বা তেলের স্ব-উৎপাদন থেকে পাওয়া অর্থ দিয়ে ভর্তুকি দেওয়ার সম্ভাবনা নেই, সেখানে মূল্যস্ফীতির বর্ধিত হার প্রকৃত বৃদ্ধি, আয় ও উপভোগ হ্রাস করবে, এবং বিশ্বের বাণিজ্য ও দারিদ্রের ক্ষেত্রে তার কুপ্রভাব পড়বে।

রাশিয়াকে সেন্সর করার সময় বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি সুনির্দিষ্ট ব্যাঘাত ঘটানো স্পষ্টতই উদ্দেশ্য ছিল না। এটি অবশ্য যারা তেল বেচে লাভবান হয়েছে সেই তেল উৎপাদকদের গোষ্ঠীকে চাপ দেয় তাদের লাভকে উন্নয়ন সহায়তা হিসেবে বাঁটোয়ারা করে নিতে, বিনিয়োগ ও খরচের মাত্রা বাড়াতে, এবং এই ভাবে তা বাড়তি ‘‌পেট্রোডলার’‌ লাভজনক ভাবে বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করে।

একটি উপযুক্ত পছন্দ?

রাশিয়ার প্রতি চিনের সমর্থনের গভীরতার উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। রাশিয়া কি একটি সুবিধাজনক, ক্ষণস্থায়ী সহযোগী, না চিনের বিশ্বব্যাপী আধিপত্যের সন্ধানে একটি উপযুক্ত ভাবে নির্ভরযোগ্য অংশীদার? এই বছরের শেষ নাগাদ চিনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিসিপি) পঞ্চবার্ষিক ন্যাশনাল পার্টি কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট শি–কে পার্টির সেক্রেটারি জেনারেল, এবং সেই সুবাদে সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে আরেকটি মেয়াদ অনুমোদন করলে, তিনি মাও জে দং-এর মতো শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারেন।

প্রেসিডেন্ট পুতিন, ইউক্রেন বা বিশ্বের অনেক দেশের জন্যই একটি দীর্ঘ সংঘাত সেরা ফলাফল হতে পারে না। বিশ্বব্যাপী সরবরাহ সংযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া ‘‌দুর্গ রাশিয়া’‌ সেই দেশটির ’‌পুনরুত্থিত রাশিয়া’‌ দেখার উচ্চাশার সঙ্গে বিরোধপূর্ণ। এই কার্বন ধ্বংসের সময়ে জীবাশ্ম শক্তি সরবরাহকারী হয়ে ওঠার মধ্যে কোনও গৌরব নেই। চিনের অপরিশোধিত তেলের ব্যবহার ইতিমধ্যেই প্রতি বছর ৫.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে (২০০৯-২০১৯ সালে মাত্র ১.৫ শতাংশ বৈশ্বিক বৃদ্ধির বিপরীতে), এবং বিশ্বব্যাপী উপভোগের ক্ষেত্রে সে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৯.৪ শতাংশের পরেই আছে ১৬.৪ শতাংশে (২০২০)। প্রাকৃতিক গ্যাস কিন্তু একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ উপস্থাপন করে। বিশ্বব্যাপী প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহারের ৮.৬ শতাংশ চিনের, এবং তা এখনও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২১.৮ শতাংশের (২০২০) থেকে যথেষ্ট কম।

মার্কিন পারমাণবিক ছাতা এবং ন্যাটোর সক্রিয় বলয় ইউক্রেনের জন্য আকর্ষণীয়। কিন্তু তা অর্থনৈতিক, এবং শেষ পর্যন্ত সামরিক শক্তি, ক্রমাগত এশিয়ায় দিকে সরে আসার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

সাধারণ রুশিরা, এবং এখন এমনকি প্রেসিডেন্ট পুতিন, বুঝতে পেরেছেন আলোচনার সুযোগ সীমিত। রাশিয়ার পেশ করা চারটি দাবির মধ্যে একটি, নিরপেক্ষ ইউক্রেনের দাবি সবচেয়ে কম বিপজ্জনক। মার্কিন পারমাণবিক ছাতা এবং ন্যাটোর সক্রিয় বলয় ইউক্রেনের জন্য আকর্ষণীয়। কিন্তু তা অর্থনৈতিক, এবং শেষ পর্যন্ত সামরিক শক্তি, ক্রমাগত এশিয়ার দিকে সরে আসার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। পরিবর্তে একটি সীমান্তবর্তী রাষ্ট্রের জন্য নিরপেক্ষতা অনেক বেশি সুবিধাজনক হতে পারে, বিশেষ করে যখন তা বাস্তবসম্মত এবং ভবিষ্যতের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

ইউক্রেন এবং অন্য বল্টিক রাজ্যগুলি যদি এখনই পক্ষাবলম্বন না–করতে চায়, এবং রাশিয়ার সামরিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে সুরক্ষার আরেকটি গ্যারান্টার হিসেবে চিনকে দেখতে চায়, তা হলে তারা কার্যকর ভাবে বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রস্তাবগুলিকে পুনর্বিবেচনা করতে পারে, যা এস্তোনিয়া, লাতভিয়া ও লিথুয়ানিয়ায় ২০১৯ সাল থেকে বকেয়া পড়ে রয়েছে। তবে রাশিয়ার শক্তি প্রদর্শনের কৌশলের সহজাত ইউক্রেনীয় প্রতিক্রিয়া থেকে মনে হয় বল্টিক জাতীয়তাবাদের গোঁড়া স্বাধীন মানসিকতার সঙ্গে অনুগ্রহ পেতে কারও হাতের মুঠোয় যাওয়া মোটেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এছাড়াও কনফুসিয়ান চিন্তাধারার খুঁটিনাটি নিয়ে একটি বাধ্যতামূলক ক্র্যাশ কোর্স ভয়ঙ্কর হতে পারে, যদিও সহযোগিতার মানসিকতায় অনেক বেশি স্বাগত হতে পারে লিগ অফ লেজেন্ডস-এর খেলা (‌চিনের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাল্টি-প্লেয়ার অনলাইন ওয়ার গেম)‌।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.