-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
২০২৪ সালের শুরুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশনীতি একাধিক টানাপড়েনের মধ্যে একটি সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে। প্রথমত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দু’টি যুদ্ধের বাধ্যবাধকতায় ছিন্নভিন্ন, যার একটি ইউরোপে এবং অন্যটি পশ্চিম এশিয়ায় চলছে। এই বাহ্যিক বাধ্যবাধকতার অভ্যন্তরীণ প্রতিক্রিয়া বাইডেন প্রশাসনের জন্য সুদূরপ্রসারী হবে। বাহ্যিক ভাবে, ইউক্রেন ও ইজরায়েল উভয়ের জন্য একটি শক্তিশালী সমর্থন সার্বভৌমত্বের নীতি, গণতন্ত্র সংরক্ষণ এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অটল প্রতিশ্রুতিতে মিত্রদের সমর্থন জোগানোর বিষয়ে মার্কিন সংকল্পের সঙ্কেত দিয়েছে। অভ্যন্তরীণ ভাবে বাইডেন প্রশাসন আপাতদৃষ্টিতে শক্তিশালী পদক্ষেপগুলিকে রাজনৈতিক সমর্থনে রূপান্তরিত করতে সক্ষম হয়নি। এর বিপরীতে, নানাবিধ সমীক্ষা দর্শিয়েছে যে, প্রেসিডেন্ট বাইডেন দীর্ঘ সময়ের মধ্যে সবচেয়ে কম পছন্দসই মার্কিন প্রেসিডেন্টদের অন্যতম। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জন্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয় হল, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রায় সব নির্বাচনেই এগিয়ে রয়েছেন। এর ফলে সৃষ্ট রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সমীকরণ আগামী অন্তত অর্ধ দশকের জন্য মার্কিন বিদেশনীতির ভঙ্গি এবং অভিযোজনকে প্রভাবিত করবে।
বাহ্যিক ভাবে, ইউক্রেন ও ইজরায়েল উভয়ের জন্য একটি শক্তিশালী সমর্থন সার্বভৌমত্বের নীতি, গণতন্ত্র সংরক্ষণ এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অটল প্রতিশ্রুতিতে মিত্রদের সমর্থন জোগানোর বিষয়ে মার্কিন সংকল্পের সঙ্কেত দিয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত কয়েক বছর যাবৎ নিজেদের তৈরি করা নীতি পছন্দের মধ্যেই আটকা পড়েছে। ২০২৩ সালটি মার্কিন বিদেশনীতির জন্য সুযোগ এবং চ্যালেঞ্জ উভয়ই উপস্থাপন করেছে। বিশ্বের প্রধান পরাশক্তি হিসাবে ওয়াশিংটন একটি পরিবর্তনশীল ভূ-রাজনৈতিক পরিসরের মধ্যে নেতৃত্ব জাহির করতে চেয়েছিল চিপস ও বিজ্ঞান আইনের মতো আইনি উদ্যোগ এবং ২০২১ সালে অউকাস-এর সঙ্গে ইন্দো-প্যাসিফিকে একটি কৌশলগত পদক্ষেপ করার মাধ্যমে। যাই হোক, নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া এবং দক্ষিণ চিন সাগরের পাশাপাশি আকাশেও ‘গুপ্তচর বেলুন’-এর ঘটনার মাধ্যমে সীমান্ত সম্প্রসারণের চিনা প্রচেষ্টা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ক্রমশ পরীক্ষার মুখে ঠেলে দিয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি সংজ্ঞায়িত বৈদেশিক নীতির সমস্যা হয়ে উঠেছে চিন এবং চিনের ক্রমবর্ধমান সামরিক, অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত দৃঢ়তা পরিচালনা করা সম্ভবত দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বছরের শেষের দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যিনিই ক্ষমতায় আসুন না কেন, মার্কিন বিদেশনীতিতে চিনের প্রাধান্যই থাকবে। ২১ শতকের প্রধান প্রযুক্তি অর্ধপরিবাহী উৎপাদনের ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত বছর দ্বিপাক্ষিক চিপস অ্যান্ড সায়েন্স অ্যাক্ট পাস করেছে, যার লক্ষ্য ছিল এশিয়ায় অত্যাধুনিক নির্মাণ ও পরিকল্পনা উদ্ভাবনের নিরিখে জমি হারানো সত্ত্বেও দেশীয় উত্পাদন ক্ষমতা ও প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি করা। চিনের ক্রমবর্ধমান আঞ্চলিক প্রভাব মোকাবিলা করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোয়াড, অউকাস-কে শক্তিশালী করতে উদ্যোগী হয়েছে এবং ১২টি আঞ্চলিক অংশীদারের সঙ্গে ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনমিক ফ্রেমওয়ার্ক (আইপিইএফ) বাণিজ্য অংশীদারিত্ব তৈরি করেছে। এ দিকে, চিনের অর্থনৈতিক কূটনীতি গত এক বছরে রাশিয়া ও ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক গভীরতর করেছে এবং তেহরান ও মস্কোকে অর্থনৈতিক সুবিধা প্রদান করেছে। ২০১৮ সালে হওয়া জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন চুক্তি থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়া এবং ২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার এই অঞ্চলে কৌশলগত শূন্যতা তৈরি করেছে, যা আঞ্চলিক ফাটলকে প্রশস্ত করতে সাহায্য করেছে। চিন সৌদি ও ইরানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে নিজের জন্য আঞ্চলিক পরিসর তৈরি করতে উদ্যোগী হয়েছিল।
এই বছরের শেষের দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যিনিই ক্ষমতায় আসুন না কেন, মার্কিন বিদেশনীতিতে চিনের প্রাধান্যই থাকবে।
২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কোঅপারেশন (এপিইসি) শীর্ষ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট বাইডেন চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দেখা করলেও বাণিজ্য, প্রযুক্তি এবং নিরাপত্তা নিয়ে বড় ফারাক রয়েই গিয়েছে। শীর্ষ সম্মেলনে জলবায়ু, স্বাস্থ্য এবং খাদ্য নিরাপত্তায় সহযোগিতার জন্য ‘গ্লোবাল গেটওয়ে’ কর্মসূচির মতো উদ্যোগ ঘোষণা করা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এপিইসি শীর্ষ সম্মেলনে ইন্দো-প্যাসিফিকের জন্য ডিজিটাল সংযোগ অংশীদারিত্বেরও প্রস্তাব করেছে। চিনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা সত্ত্বেও ওয়াশিংটন বহুপাক্ষিকভাবে আন্তর্দেশীয় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অভিন্ন স্বার্থকে স্বীকৃতি দেয়। উচ্চ মানের ডিজিটাল নিয়ম এবং স্থিতিশীল অবকাঠামো বিনিয়োগের প্রচার প্রতিযোগিতার পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বহুপাক্ষিকতার কথাও তুলে ধরে।
২০২২ সালের গোড়ার দিকে রাশিয়ার আক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হওয়া ইউক্রেনের ভয়ঙ্কর যুদ্ধ ২০২৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এক কঠিন পরীক্ষার মুখে ফেলেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিস্তৃত ইউরোপ জুড়ে অস্থিতিশীলতা বাড়িয়ে তুলেছে এবং পোল্যান্ড ও বাল্টিক রাষ্ট্রের মতো পূর্ব প্রান্তের নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন-এর (ন্যাটো) দেশগুলির মধ্যে মার্কিন শক্তি ও প্রতিরোধের বিশ্বাসযোগ্যতার সীমাবদ্ধতাকে স্পষ্টত প্রকাশ্যে এনেছে। রাশিয়ার সামরিক যুদ্ধের মুখে ন্যাটোর পুনরুজ্জীবন এবং অভ্যন্তরীণ শক্তিশালীকরণকে অনুঘটক করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বর্ধিত ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা বাজেট এবং নতুন সহযোগিতামূলক উদ্যোগ বর্তমানে মস্কো থেকে আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরক্ষা ও প্রতিরোধের উপর কেন্দ্রীভূত এই মার্কিন-নেতৃত্বাধীন নিরাপত্তা শৃঙ্খলকে পুনরুজ্জীবিত করতে সহায়তা করে। রাষ্ট্রপুঞ্জে দক্ষ মার্কিন কূটনীতি ইউক্রেন যুদ্ধ ও সিরিয়া সংঘাত মোকাবিলার সমালোচনামূলক রেজোলিউশনের রুশ বা চিনা ভেটো এড়াতে সাহায্য করেছে এবং ইজরায়েলি উদ্বেগগুলিকেও আশ্বস্ত করেছে।
গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের বিষয়ে তালিবানের কঠোর দমন-পীড়নের মতো বিপরীতমুখী মার্কিন চাপ সত্ত্বেও আফগানিস্তানে নারী ও মেয়েরা মার্কিন গণতন্ত্রের প্রচারের সীমা প্রদর্শন করেছে।
২০২৩ সালে ওয়াশিংটন দ্বারা বর্ণিত একটি মূল বৈদেশিক নীতির লক্ষ্য ছিল ভারতের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান কৌশলগত সম্পর্ককে প্রসারিত করা। যাই হোক, রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করার বিষয়ে মার্কিন নেতৃত্ব অনুসরণ করতে ভারতের অনিচ্ছার মতো বিষয় নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা সামলানো মার্কিন কূটনীতিকদের জন্য একটি দীর্ঘস্থায়ী ভারসাম্যপূর্ণ কাজ। পশ্চিম এশিয়ায় মার্কিন কৌশলগত উদ্বেগের একটি দীর্ঘস্থায়ী অঞ্চল বিদ্যমান এবং মার্কিন নীতি রাশিয়া ও চিনের মতো অন্যান্য শক্তির জন্য সুযোগ প্রদান করেছে। কারণ ওয়াশিংটন ২০২৩ সালে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ভূ-রাজনৈতিক বিষয়ে মনোযোগ দিয়েছিল। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের বিষয়ে তালিবানের কঠোর দমন-পীড়নের মতো বিপরীতমুখী মার্কিন চাপ সত্ত্বেও আফগানিস্তানে নারী ও মেয়েরা মার্কিন গণতন্ত্রের প্রচারের সীমা প্রদর্শন করেছে। ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারির বিদ্রোহের আলোকে গণতান্ত্রিক নীতির প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব প্রতিশ্রুতি এবং রাজনৈতিক মেরুকরণ সম্পর্কে দীর্ঘায়িত প্রশ্নগুলি চিন ও রাশিয়ার মতো স্বৈরাচারী প্রতিদ্বন্দ্বীদের শোষণের জন্য সহজেই উস্কানি জুগিয়েছে।
সামগ্রিক ভাবে বাইডেন প্রশাসনের বৈদেশিক নীতির পরিসর মার্কিন রাষ্ট্রযন্ত্র এবং নেতৃত্বের জন্য একটি দ্ব্যর্থক উত্তরাধিকার প্রদান করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ভাবে সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব এবং তার কৌশলগত সুবিধার মৌলিক বিষয়গুলি অদূর ভবিষ্যতে প্রতিদ্বন্দ্বীবিহীন থাকবে বলেই মনে হয়। যাই হোক, মার্কিন স্বার্থের প্রতি চ্যালেঞ্জের বিস্তার এবং ক্রমবর্ধমান জটিলতা প্রসারিত হচ্ছে ও নানাবিধ পরিবর্তন অব্যাহতই রয়েছে, যা গত দশকের তুলনায় উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রকৃত আন্তর্জাতিক শক্তির মর্যাদায় চিনের আরোহণ-পথের অনুসন্ধান এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৃহৎ কৌশলের সম্মুখে উপস্থিত সবচেয়ে জরুরি দীর্ঘমেয়াদি কাজকেই দর্শায়। ওয়াশিংটনকে অবশ্যই সতর্কতার সঙ্গে সঙ্কুচিত অথচ পরমাণু-শক্তিক্ষম রাশিয়াকে পরিচালনা করতে হবে, উন্নয়নমূলক সহায়তা এবং জনসাধারণের বার্তাপ্রেরণের মতো চিরাচরিত কূটনৈতিক সাধনীকে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে এবং একই সঙ্গে ধ্বংসাত্মক প্রযুক্তির যুগের জন্য নতুন যৌথ নিরাপত্তা কাঠামো গড়ে তোলার লক্ষ্যে অনুঘটকের কাজ করতে হবে। অভিযোজন, নীতিগত বাস্তববাদ ও দেশে নতুন বিনিয়োগের মাধ্যমে মার্কিন বিদেশনীতি এই জটিল বিশ্বে মার্কিন নেতৃত্বকে টিকিয়ে রাখতে পারে।
এই প্রতিবেদনটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় হিন্দুস্থান টাইমস-এ।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Vivek Mishra is Deputy Director – Strategic Studies Programme at the Observer Research Foundation. His work focuses on US foreign policy, domestic politics in the US, ...
Read More +