Author : Shivam Shekhawat

Expert Speak Raisina Debates
Published on Nov 23, 2022 Updated 17 Days ago

আফগানিস্তান দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পাকিস্তানের জন্য একটি ‘সমবেত বিন্দু’র ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর পরিবর্তিত বাস্তবতায় এ কথা আর সত্য নয়।

তিনে গোলমাল: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং আফগানিস্তান-পাকিস্তান সম্পর্ক
তিনে গোলমাল: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং আফগানিস্তান-পাকিস্তান সম্পর্ক

একটি সাম্প্রতিক সাক্ষাত্কারে আফগানিস্তানের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ প্রতিনিধি টমাস ওয়েস্ট অন্তর্বর্তী তালিবান প্রশাসন এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে আলোচনা সহজতর করে তোলার জন্য পাকিস্তানের সহযোগিতার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। মার্কিন  যুক্তরাষ্ট্র আফগান জনগণের অধিকার সুরক্ষিত করতে তালিবানের সঙ্গে বাস্তবসম্মত ভাবে আলাপ-আলোচনা চালাচ্ছে… এ কথা পুনর্ব্যক্ত করার মাধ্যমে তিনি আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে অভিযান চালানোর জন্য পাকিস্তানের বায়ুক্ষেত্র ব্যবহারের প্রয়োজনের প্রশ্নটি এড়িয়ে যান। বরং তার পরিবর্তে তিনি এই অঞ্চলে ‘নিজেদের সক্ষমতা পুনর্গঠনের’ উপরেই জোর দিয়েছিলেন। পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য পাকিস্তানি সহযোগিতার যেকোনও রকম প্রয়োজনীয়তা সরাসরি খারিজ করা ২০২১ সালের আগস্ট মাসের পরবর্তী সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং আফগানিস্তানের সঙ্গে ইসলামাবাদের সম্পর্কের অসঙ্গতিকে নির্দেশ করে।

নিরাপত্তা ও সামরিক ঘাঁটিগুলি তাদের আশপাশ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্থান এবং একটি বন্ধুত্বপূর্ণ তালিবান প্রশাসনের দ্বারা তার প্রতিস্থাপনের সাক্ষী হয়ে যারপরনাই আহ্লাদিত হয়েছিল।

কাবুলের পতনের অব্যবহিত পরেই পাকিস্তানে জয়ের আবহ সৃষ্টি হয়। নিরাপত্তা ও সামরিক ঘাঁটিগুলি তাদের আশপাশ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্থান এবং একটি বন্ধুত্বপূর্ণ তালিবান প্রশাসনের দ্বারা তার প্রতিস্থাপনের সাক্ষী হয়ে যারপরনাই আহ্লাদিত হয়েছিল। কিন্তু গত বছর পাকিস্তানিদের আফগানিস্তানে পুনরুত্থিত তালিবান সরকারের বিরূপ প্রভাবের সম্মুখীন হতে দেখা গিয়েছে। ইমরান খানের অস্থিরতার কারণে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার ফলে সংঘটিত একটি অস্তিত্বগত অর্থনৈতিক বিপর্যয় কাবুলের সঙ্গে অনিশ্চিত সম্পর্ক এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্কের মতো বহুবিধ সঙ্কট ইসলামাবাদের জন্য পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের প্রকাশ্য টানাপড়েন ইমরান খানের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে সম্পর্কের অচলায়তন থেকে সম্পূর্ণ পুনর্বিন্যাসের মাঝে দোলাচলে থেকেছে। আফগানিস্তানের বাস্তবতা উভয় দেশের মধ্যে আন্তঃসহযোগিতার আপৎকালীন প্রয়োজনীয়তাকেই দর্শিয়েছে।

একটি তিক্ত-মধুর জয়

পাকিস্তান ইনস্টিটিউট ফর পিস স্টাডিজের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাবুলের পতনের পর থেকে পাকিস্তানের ভূখণ্ডে সন্ত্রাসী হামলা ৫১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছরের একই সময়কাল থেকে এই উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতিকেই ইঙ্গিত করে। একটি অপ্রীতিকর বাস্তব সামনে উঠে এসেছে যে, তালিবানের বিজয়ের জন্য ‘অযৌক্তিক উল্লাস’ দেশটির দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জন্য কোনও নতুন সূচনা করেনি বা প্রতিবেশীর নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি সাধনে কোনও নতুন গতিশীলতার সঞ্চার করেনি। আফগানিস্তানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের পরবর্তী বাস্তবতার সুফল ভোগ করার পাকিস্তানের আকাঙ্ক্ষা সমূলে ব্যর্থ হয়েছে।

সারণি ১: তালিবান ক্ষমতায় আসার পরে এক বছরে পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদী হামলা

অঞ্চল ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ২০২২ সালের ১৪ আগস্ট পর্যন্ত ২০২০ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ২০২১ সালের ১৪ আগস্ট পর্যন্ত শতাংশ পরিবর্তন (৩৩)
হামলার সংখ্যা মৃত হামলার সংখ্যা মৃত হামলার সংখ্যা মৃত
কে পি ১৫৬ ২৮৬ ৮৭ ১৫১ ৭৯% ৮৯%
বালুচিস্তান ৭৯ ১২৭ ৬০ ১১৩ ৩২% ১২%
পঞ্জাব ও ইসলামাবাদ ০৬ ১২ ১৫ ১৪% ২০%
সিন্ধ ০৯ (৩৪) ০৮ ১১ (৩৫) ১৫ ১৮% ৪৭%
জি বি এবং এ জে কে
মোট ২৫০ ৪৩৩ ১৬৫ ২৯৪ ৫১% ৪৭%

প্রতিবেশীদের মধ্যে বিবাদের দু’টি প্রধান উত্স যা গত বছর তীব্র আকার ধারণ করে, তা হল  তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানের (টি টি পি) পুনরুজ্জীবন এবং ডুরান্ড লাইনকে আন্তর্জাতিক সীমানা হিসাবে স্বীকৃতি দিতে তালিবানের অস্বীকার। এই দু’টি বিষয়ই আস্থার অবনতি ঘটিয়েছে এবং উভয় পক্ষের মধ্যে একটি গভীরতর বিচ্ছিন্নতার বীজ বপন করেছে। টি টি পি তার উন্নত রাজনৈতিক অবস্থার সুযোগ নিয়ে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে আক্রমণ চালানো অব্যাহত রেখেছে। পাকিস্তানি নেতৃবৃন্দ দলটিকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে  তালিবানের সমর্থন পাওয়ার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী হলেও তাদের কার্যকলাপ খর্ব করার সুযোগকে কাজে লাগাতে তালিবান ব্যর্থ হয়েছে। চিনা শ্রমিক এবং পরিকাঠামোগত প্রকল্পগুলির উপর ক্রমবর্ধমান হামলার মাধ্যমে এই গোষ্ঠীটি তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, নিরাপত্তা বাহিনী এবং দেশে চিনা স্বার্থকে খর্ব করার চেষ্টা চালাচ্ছে। সীমান্তে বেড়া দেওয়া এবং সামরিক চৌকি স্থাপনের পাকিস্তানি প্রচেষ্টা আফগানিস্তানের দ্বারা প্রতিহত করা হচ্ছে এবং তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা হচ্ছে। তালিবানের জন্য ডুরান্ড লাইন সমস্যা আইনি বৈধতা প্রাপ্তি এবং তার স্বপক্ষে জনমত গঠনের প্রয়োজনীয় হাতিয়ার। টি টি পি পাকিস্তানের উপর তাদের প্রভাবের একটি অন্যতম উৎস এবং এটি উভয়ের মধ্যে একটি সালিশি হিসাবে নিজেকে উপস্থাপন করার উপায়। পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী হামলার পাশাপাশি এই সংঘর্ষগুলি আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্ত অঞ্চলে নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়েছে। ক্রমবর্ধমান হামলার কারণে পাকিস্তান যে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে, তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও।

জঙ্গিদের হুমকি প্রশমিত করার লক্ষ্যে পাকিস্তান এপ্রিল মাসে আফগান প্রদেশ খোস্ত ও কুনারে বিমান হামলা চালায়। আনুষ্ঠানিক ভাবে তা স্বীকার না করলেও হামলার উদ্দেশ্য ছিল তালিবানের কাছে বার্তা পৌঁছে দেওয়া এবং টি টি পি-কে সমর্থনের ব্যয় বৃদ্ধি করা। তারা টি টি পি-কে আটকাতে ব্যর্থ হলেও এই আক্রমণের ফলে ৪৫ জন নাগরিকের মৃত্যু – যার মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি ছিল শিশু – জনরোষের জন্ম দেয়। উভয় পক্ষই এ নিয়ে সুর চড়িয়েছে, পাকিস্তান তার ভূখণ্ড থেকে আক্রমণ করার অনুমতি দেওয়ার জন্য আফগানিস্তানকে তিরস্কার করেছে এবং আফগানিস্তান তার সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের জন্য ইসলামাবাদের কাছে একটি স্মারক জমা দিয়েছে।

চিনা শ্রমিক এবং পরিকাঠামোগত প্রকল্পগুলির উপর ক্রমবর্ধমান হামলার মাধ্যমে এই গোষ্ঠীটি তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, নিরাপত্তা বাহিনী এবং দেশে চিনা স্বার্থকে খর্ব করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

৩১ জুলাই কাবুলে মার্কিন ড্রোন হামলায় আইমান আল-জাওয়াহিরির হত্যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আবারও এক প্রবল ধাক্কা দেয়। সিরাজুদ্দিন হাক্কানির মালিকানাধীন একটি বাড়িতে আল-কায়েদা নেতার উপস্থিতি দোহা চুক্তি লঙ্ঘনের বিষয়ে উদ্বেগের সৃষ্টি করে, যা তালিবানকে তার সন্ত্রাসবাদের সমর্থন বন্ধ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করেছিল। আমেরিকাকে নিজেদের আকাশসীমা ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়ার জন্য তালিবান নেতৃবৃন্দ পাকিস্তানের প্রকাশ্য সমালোচনা করেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শের মোহাম্মদ আব্বাস স্তানেকজাই তাদের অর্থনৈতিক অবস্থাকে কাজে লাগানোর জন্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযান চালানোর সম্মতি দেওয়ার বিনিময়ে অর্থ নেওয়ার জন্য পাকিস্তানকে দোষারোপ করেছেন। পাকিস্তানের তরফে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা অন্যান্য দেশকে তার আকাশসীমা ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়নি… এ হেন দাবি করা হলেও আক্রমণের ঘটনাটি বায়ুপথেই ঘটেছে।

তালিবান আসার পর ওয়াশিংটনের ভূমিকা

চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তানের সম্পর্কের অবস্থা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। আফগানিস্তানের পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেখার বোঝা ঘাড় থেকে নামিয়ে তিনি তাঁদের সহযোগিতা সম্প্রসারণের বিষয়ে আশা প্রকাশ করেন, বিশেষ করে ভূ-অর্থনীতিতে, যা এখন ইসলামাবাদের বিদেশনীতির বৃত্তের প্রধান চাবিকাঠি। কিন্তু ওয়াশিংটনের জন্য ডিহাইফেনেশন প্রক্রিয়াটি এখনও অসম্পূর্ণ। ২০২১ সালের আগস্ট মাসের পরবর্তী সময়ে মার্কিন কর্মকর্তারা পাকিস্তানের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্কের পুনর্মূল্যায়ন করেন এবং তালিবানের উত্থানে তাদের ভূমিকার কথা বলেন। এই বিবৃতিগুলি ইসলামাবাদের মনে যারপরনাই বিরক্তির সঞ্চার ঘটিয়েছে যারা শান্তি প্রক্রিয়ায় তাদের অবদান এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তাদের বলিদানের স্বীকৃতি দাবি করেছিল। ক্ষমতার জন্য লড়াইয়ে ইমরান খানের মার্কিন-বিরোধী বক্তব্যের কারণে সম্পর্কটি আরও তিক্ত হয়ে পড়ে। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ইমরান খান তালিবানের আগমনে আনন্দিত হয়েছিলেন, সেটিকে প্রতিবেশী দেশের ‘দাসত্বের শৃঙ্খল’ থেকে মুক্ত হওয়া এবং স্বাধীনতার একটি নতুন ভোরে প্রবেশ করার বিশেষ মুহূর্ত রূপে উল্লেখ করেছিলেন। এর পরে তাঁর সমর্থনের অভিব্যক্তিগুলি তালিবানের কঠোর নীতিগুলিকে কম গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা চালায় এবং এটিকে বেনিফিট অব ডাউট দেওয়ার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও এমনটা করতে উৎসাহিত করার জন্য তীব্র প্রচেষ্টা চালায়। তিনি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্যর্থতার জন্য এবং তাঁকে তাঁর পদ থেকে অপসারণের পরিকল্পনা করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র নিন্দা করেন।

আফগানিস্তানের পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেখার বোঝা ঘাড় থেকে নামিয়ে তিনি তাঁদের সহযোগিতা সম্প্রসারণের বিষয়ে আশা প্রকাশ করেন, বিশেষ করে ভূ-অর্থনীতিতে, যা এখন ইসলামাবাদের বিদেশনীতির বৃত্তের প্রধান চাবিকাঠি।

ইমরানের এই মার্কিন-বিরোধী বক্তব্যের ফলে হওয়া ক্ষতির প্রশমনে শরিফ সরকার আমেরিকার কাছে ফের দরবার জানিয়েছে। এফ-১৬-এর জন্য ৪৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের রক্ষণাবেক্ষণ প্যাকেজের অনুমোদন একটি মৈত্রীর সঙ্কেত দিলেও পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিপজ্জনক প্রকৃতি সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের মন্তব্য এবং কাবুলের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ইসলামাবাদের ভূমিকাকে স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে মার্কিন দূতের অনিচ্ছা অন্য কথাই দর্শায়। এই উদ্বেগগুলি সত্ত্বেও উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক মধ্য মেয়াদে তালিবানের উত্থানের বাস্তবতা দ্বারা এবং তালিবান-সহ অন্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলির হুমকি দ্বারা সংজ্ঞায়িত হবে, যার জন্য ওয়াশিংটনের পাকিস্তানের সমর্থন প্রয়োজন হবে।

সম্পর্কে একটি সম্ভাব্য ফাটল?

শরিফ প্রশাসন তালিবানকে স্বীকৃতি প্রদানের বিষয়ে সরাসরি আহ্বান না-জানালেও তাদের অধিকতর রাজনৈতিক পরিসর ও সময় দেওয়ার বিষয়টিকে সমর্থন করেছে এবং তালিবান আদৌ সংস্কার করতে ইচ্ছুক কি না, সে বিষয়ে মনোভাব ব্যক্ত করার আগে তালিবানদের দক্ষতা বৃদ্ধির উপর জোর দিয়েছে। নেতৃবৃন্দ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আফগান আর্থিক সংস্থাগুলির সম্মুখে উপস্থিত নিরাপত্তা পরিস্থিতি সংক্রান্ত উদ্বেগগুলিকে এড়িয়ে না যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। এমনকি টি টি পি-র হিংসাত্মক কার্যকলাপ এবং তালিবানের মধ্যস্থতায় শুরু হওয়া আলাপ-আলোচনার ব্যর্থতার নিরিখে সম্পর্কের মধ্যে একটি বৃহৎ ফাটলের কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করা হয়নি।

তালিবানের মুখপাত্র সম্প্রতি পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষকে আশ্বস্ত করেছেন যে, আফগান ভূখণ্ডকে পাকিস্তানের উপরে আক্রমণ চালানোর কাজে ব্যবহার করা হবে না এবং কেউ এমনটা করলে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হবে। তিনি সীমান্ত বরাবর অঞ্চলগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে তাঁদের অক্ষমতার কথাও পুনর্ব্যক্ত করেছেন, যেখানে তাঁদের প্রবেশাধিকার কম বা একেবারেই না-থাকার কারণে কিছু গোষ্ঠী তাঁদের অনুপস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর উপস্থিতির কথা তুলে ধরলে তিনি তালিবানের তরফে কঠোর প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হয়েছিলেন। পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রক স্পষ্টতই জানিয়েছে যে, প্রশাসনের উপর আরোপিত কোনও সমালোচনাকেই তারা শত্রুতার চিহ্ন রূপে দেখবে না। ক্ষোভ প্রশমিত করার জন্য পাকিস্তান আফগান নাগরিকদের ভিসা প্রদানের কাজটিকে ত্বরান্বিত করতে এবং তাদের বৃত্তি প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

নেতৃবৃন্দ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আফগান আর্থিক সংস্থাগুলির সম্মুখে উপস্থিত নিরাপত্তা পরিস্থিতি সংক্রান্ত উদ্বেগগুলিকে এড়িয়ে না যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।

অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের জন্য ক্রমাগত দোষারোপ করা বা অপরকে নিজের সমস্যার জন্য দায়ী করা নিকট ভবিষ্যতেও থামবে না। তবে উভয় দেশের একে অপরের কাছ থেকে সমর্থনের অপরিহার্যতার কথা অস্বীকার করা সম্ভব নয়। পাকিস্তানের জন্য তার ‘ভূ-কৌশলগত’ থেকে ‘ভূ-অর্থনৈতিক’ উদ্বেগে আপাত পরিবর্তনে আফগানিস্তানের ভূমিকা এবং মধ্য এশিয়ার সঙ্গে তার সংযোগ প্রকল্পগুলির বাস্তবায়নের জন্য আফগানিস্তানের সম্পৃক্ততা অপরিহার্য। ভিশন সেন্ট্রাল এশিয়ার অধীনে একটি নতুন আন্তঃমহাদেশীয় বাণিজ্যিক শৃঙ্খল তৈরি করার উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা কাবুলের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্কের উপর নির্ভরশীল। ইউক্রেন সঙ্কটের পর আফগান কয়লা ও তুলোর চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানে আমদানির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু তালিবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে কাবুলের মধ্য দিয়ে মধ্য এশিয়ার দেশগুলিতে পাকিস্তানের রফতানির পরিমাণও কয়েক গুণ বেড়েছে।

উপসংহার

বিগত বছরের ঘটনাগুলি আফগানিস্তানে পাকিস্তানের হস্তক্ষেপবাদী নীতির উপর চাপ সৃষ্টি  করেছে। এর অর্থ এই নয় যে, তালিবানের উপর তাদের চাপ দেওয়ার ক্ষমতা কমেছে। তবে দেশটিতে তার ‘কৌশলগত গভীরতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা’ নতুন ইসলামিক আমিরাতি বৃত্তের  প্রায় পরিধিতে স্থানান্তরিত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার সম্পর্কও ভারসাম্যহীন এবং উভয় পক্ষের একে অপরের কাছ থেকে যে প্রত্যাশা রয়েছে, তাতেও অসমতা বিদ্যমান। আফগানিস্তান দীর্ঘকাল ধরে দুই দেশের জন্য একটি ‘সমবেত বিন্দু’র ভূমিকা পালন করলেও পরিবর্তিত বাস্তবতায় এমনটা আর সত্যি নয়। ওয়াশিংটনের সঙ্গে তার মতপার্থক্য সামলানো এবং আফগানিস্তানের সঙ্গে তার সীমান্ত বরাবর শান্তি নিশ্চিত করা পাকিস্তানের পক্ষে দেশে ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাসবাদকে আটকানোর জন্য এবং ভূ-অর্থনীতিতে তার মূল কেন্দ্রকে বাস্তবায়িত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা এখন পাকিস্তানের বিদেশনীতির অন্যতম ভিত্তি হয়ে উঠেছে।

মতামত লেখকের নিজস্ব।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.