Expert Speak Young Voices
Published on Oct 08, 2022 Updated 6 Days ago

তালিবান শাসনের এক বছর পেরিয়ে আফগান নারী ও মেয়েরা মৌলিক মানবাধিকারের জন্য ‌লড়াই করছেন।

তালিবান জমানা:‌ আফগান মেয়ে ও মহিলাদের ভবিতব্য
তালিবান জমানা:‌ আফগান মেয়ে ও মহিলাদের ভবিতব্য

১৫ আগস্ট ২০২১–এ ইসলামপন্থী গোষ্ঠীটি পুনরায় আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর এক বছর কেটে গেছে, এবং নারী জনসংখ্যা বিরূপভাবে প্রভাবিত হয়েছে। মৌলিক মানবাধিকার খর্ব করা থেকে শুরু করে দ্ব্যর্থহীনভাবে গণজীবন এবং রাজনৈতিক, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক/পেশাগত ক্ষেত্র থেকে বাদ দেওয়ার মাধ্যমে তাঁদের বাড়িতে থাকতে বাধ্য করা হয়েছে। যদিও গত বছর আফগানিস্তানের দখল নেওয়ার সময় তালিবানরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে তারা ‘শরিয়া আইনের আওতায় নিজেদের অধিকার প্রয়োগ করতে’‌ মহিলাদের অনুমতি দেবে, কার্যক্ষেত্রে কিন্তু তা ফাঁপা প্রতিশ্রুতিতে পরিণত হয়েছে। কারণ নারীরা এখন আর ঠিকভাবে শিক্ষা ও কাজ, স্বাস্থ্যসেবা, এবং মানবিক সহায়তা পাচ্ছেন না, যা তাঁদের জীবনযাত্রার মানকে আরও খারাপ করেছে।

এমনই একটি নারী আশ্রয়স্থল ছিল কাবুলের ‘উইমেন ফর আফগান উইমেন (ডবলিউ এ ডবলিউ)’, একটি আমেরিকা–ভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা যা তালিবান পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর কাজ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

অরক্ষিত মেয়ে এবং মহিলাদের জীবন

এমনকি তালিবান কাবুলের উপর নিয়ন্ত্রণ দখল করার আগেও পরিবার-পরিত্যক্ত বা বাড়ি থেকে পালিয়ে আসা একটি বড় ‘‌অরক্ষিত’‌ মহিলা জনসংখ্যা ছিল। এঁরা লিঙ্গভিত্তিক হিংসার শিকার হয়েছিলেন। কিন্তু তখন এঁরা মহিলাদের আশ্রয়কেন্দ্র এবং প্রতিষ্ঠানগুলিতে আশ্রয় নিতে সক্ষম হয়েছিলেন, যেগুলি তাঁদের নিরাপদ আশ্রয় দিয়েছিল এবং বিভিন্নভাবে তাঁদের সহায়তা করেছিল। এমনই একটি নারী আশ্রয়স্থল ছিল কাবুলের ‘উইমেন ফর আফগান উইমেন’ (ডবলিউ এ ডবলিউ), একটি আমেরিকা–ভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা যা তালিবান পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর কাজ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। বাকিদের অন্তত নিজেদের পরিবারের ভাবাবেগগত সমর্থন ও স্বাচ্ছন্দ্য ছিল, কিন্তু তেমন অন্যান্য নারী ও মেয়েদের থেকে ভিন্ন হাজার হাজার নারী এই ধরনের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছিলেন, এবং তালিবান দেশের দখল নেওয়ার পর তারা আটকা পড়েছিলেন। ফলে বেশ কিছু মহিলা, যাঁরা আগে ডবলিউ এ ডবলিউ–এর আশ্রিত ছিলেন, তাঁরা গৃহহীন ও কর্মহীন হয়ে গেলেন। এঁদের কেউ কেউ নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন বা এমনকি মারা গিয়েছেন, আর বাকিরা শোচনীয় অর্থনৈতিক অবস্থার মধ্যে কোনওক্রমে জীবনযাপন করছেন। ইউ এন উইমেন –এর একটি রিপোর্ট অনুসারে, আফগানিস্তানের প্রায় ৭৭ শতাংশ মহিলা ও সুশীল সমাজ সংস্থাগুলি ২০২২ সালে কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে৷ হিংসার শিকার হাজার হাজার মেয়ে ও মহিলাদের সমর্থন এবং সহায়তা করার জন্য পেশাগতভাবে প্রশিক্ষিত বেশ কিছু মহিলা সমর্থন গোষ্ঠী, প্রতিষ্ঠান ও সুশীল সমাজ গোষ্ঠী ভেঙে দেওয়া হয়েছে। নারীর অধিকারের সীমাবদ্ধতার কারণে লিঙ্গভিত্তিক হিংসার ঘটনা বেড়েছে, এবং অর্থনৈতিক দুর্দশার কারণে বেকারত্ব বৃদ্ধি পাওয়ায় অরক্ষিত মেয়ে ও নারীরা আরও অসহায় হয়ে পড়েছেন।

বেশ কিছু মহিলা যাঁরা আগে ডবলিউ এ ডবলিউ–এর আশ্রিত ছিলেন, তারা গৃহহীন এবং কর্মহীন হয়ে গেলেন। কেউ কেউ নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন বা এমনকি মারা গিয়েছেন, আর অন্যরা শোচনীয় অর্থনৈতিক অবস্থার মধ্যে কোনওক্রমে জীবনযাপন করছেন।

বিশেষ করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ, আন্তর্জাতিক সাহায্য স্থগিত করা এবং বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ে প্রবেশাধিকার না–থাকার কারণে আফগানিস্তানে যে অর্থনৈতিক অস্থিরতা আঘাত হেনেছে, তা আফগানদের জীবনযাত্রার মানকে আরও খারাপ করেছে। এর মধ্যে প্রাথমিকভাবে অন্তর্ভুক্ত হল নারীদের দুর্বল অংশ, যাঁদের অনেকেই শেষ অবলম্বন হিসেবে আত্মহত্যা করেছেন। অধিকন্তু, তালিবানের নতুন ডিক্রির কারণে বিধবারা, যাঁরা তাঁদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন, তাঁদের এখন কাজ করার অনুমতি নেই। যদিও তালিবান গম ও রান্নার তেলের রেশন দিয়েছে, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা পুরো পরিবারের জন্য যথেষ্ট নয়। জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় এবং সীমিত সংস্থান এই ধরনের দুর্বল গোষ্ঠীর বেঁচে থাকা কঠিন করে তুলেছে। ২০২২ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে ১ কোটিরও বেশি আফগান নারী ও মেয়েদের মানবিক সহায়তার প্রয়োজন, কিন্তু যথাযথ নথিপত্র ও সরকারি কাগজপত্র এবং ঘোরাফেরায় লিঙ্গভিত্তিক সীমাবদ্ধতার মতো সমস্যাগুলির কারণে সাহায্য পাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁরা অসুবিধার মধ্যে রয়েছেন

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব

বিশ্বের উচিত ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপদের মধ্যে থাকা জনগোষ্ঠীগুলির দিকে দৃষ্টি দেওয়া এবং তালিবানের সঙ্গে যোগাযোগ করা, যাতে পরিবারের সঙ্গে থাকতে পারেন না এমন মেয়ে ও মহিলাদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য সহায়তা গোষ্ঠী এবং সুরক্ষা কেন্দ্রগুলি প্রতিষ্ঠা করা যায়। উপরন্তু রাষ্ট্রপুঞ্জ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং দেশ, যারা কূটনৈতিকভাবে তালিবানের সঙ্গে জড়িত হতে পারে, তাদের উচিত ইসলামিক গোষ্ঠীটিকে মেয়ে ও মহিলাদের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও সমুন্নত রাখার জন্য আহ্বান জানানো। তা ছাড়াও আফগানিস্তানকে সাহায্য ও সহায়তা প্রদানকারী দেশগুলিকে সুরক্ষা পরিষেবা, পরিকাঠামো ও সামাজিক কর্মসূচির অনুমতি দেওয়া উচিত, যাতে লিঙ্গভিত্তিক হিংসার শিকার মেয়ে ও মহিলাদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সামাজিক, মানসিক এবং মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা দেওয়া যায়। এভাবে তাদের মানসিক আতঙ্ক থেকে মুক্ত করে স্বাধীন নারী হতে প্রশিক্ষিত করা যাবে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল শুধু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও রাষ্ট্রপুঞ্জকে এই বিষয়টি দেখার জন্য অনুরোধই করেনি, বরং তালিবানকে নারীদের প্রতি তাদের ভয়ঙ্কর কঠোর নীতিগুলি সংশোধন করার এবং আন্দোলন, শিক্ষা ও কাজের স্বাধীনতা সহ তাদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

বিশ্বের উচিত ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপদের মধ্যে থাকা গোষ্ঠীগুলির দিকে দৃষ্টি দেওয়া এবং তালিবানের সঙ্গে যোগাযোগ করা, যাতে পরিবারের সঙ্গে থাকতে পারেন না এমন মেয়ে ও মহিলাদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য সহায়তা গোষ্ঠী এবং সুরক্ষা কেন্দ্রগুলি প্রতিষ্ঠা করা যায়।

আফগানিস্তানে সে দেশের জনগণকে ত্রাণ ও সহায়তা প্রদানকারী রাষ্ট্রপুঞ্জের সহায়তা মিশন (ইউ এন এ এম এ) ও অন্যান্য বেসরকারি সংস্থার উচিত মেয়ে, নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলির তদন্ত করা ও সেগুলি নথিভুক্ত করা। রাষ্ট্রপুঞ্জ, শক্তিশালী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কীভাবে এই সব সম্প্রদায়ের অধিকার পুনরুদ্ধার করতে এবং মানবিক সংকট সমাধানে তালিবানের সঙ্গে মধ্যস্থতা করতে পারে তা–ও তাদের দেখা উচিত। তালিবানের দৃষ্টিগোচরে এই বিষয়টি আনা উচিত যে জনজীবনে এবং অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষ উভয়ের অংশগ্রহণ/সম্পৃক্ততা আফগানিস্তানের পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে সাহায্য করবে।

মতামত লেখকের নিজস্ব।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.