Author : Shairee Malhotra

Published on Apr 06, 2024 Updated 0 Hours ago

ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডি ফ্যাক্টো রাজধানী হিসাবে পরিচিত ব্রাসেলসের সঙ্গে ইইউ প্রতিষ্ঠানগুলির উপস্থাপক দেশ হিসাবে বেলজিয়াম ইইউ-এর বিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ থেকেছে এবং ইউরোপীয় প্রকল্পে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছে।

‘বেলজিয়ামের তরফে সমঝোতা’র সারমর্ম

২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি বেলজিয়াম স্পেনের কাছ থেকে কাউন্সিল অফ ইউরোপীয় ইউনিয়ন-এর (ইইউ) পর্যায়ক্রমিক সভাপতিত্ব গ্রহণ করে। ২০১০ সালে শেষ বারের মতো এই দায়িত্ব গ্রহণ করার পর এ বার বেলজিয়ামের ১৩তম সভাপতিত্ব এমন এক অশান্ত সময়ে ঘটেছে যখন ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিদ্যমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্যে ভয়াবহ অস্থিতিশীলতা, জ্বালানি নিরাপত্তা এবং চিনের তরফে চ্যালেঞ্জ-সহ একাধিক সঙ্কটে জর্জরিত।

কর্মসূচির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে, বিভিন্ন ইইউ আইনে অগ্রগতি আনতে এবং সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে সহযোগিতা ঐকমত্য তৈরি করার লক্ষ্যে কাউন্সিলের ছমাসের পর্যায়ক্রমিক সভাপতিত্বগুলি ইইউ স্তরে বর্তমান দেশের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি এবং অগ্রাধিকারগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি ১৮ মাসের ত্রয়ী বিন্যাসে কাজ করে। স্পেন, বেলজিয়াম হাঙ্গেরি-কে নিয়ে গঠিত বর্তমান ত্রয়ীর মধ্যে বেলজিয়াম জুন মাসের শেষ পর্যন্ত সভাপতিত্ব করবে, তার পরে জুলাই মাসে হাঙ্গেরির কাছে এই সভাপতিত্বের দায়িত্ব এবং বেলজিয়ামের নিজস্ব ইউরোসেপ্টিক বা ইউরোপীয় ইউনিয়নে অবিশ্বাসী নেতৃত্ব হস্তান্তর করবে, যা ইইউ সিদ্ধান্ত গ্রহণে জল ঢেলে দেওয়ার জন্য কুখ্যাত।

একটি নতুন ইউরোপীয় পার্লামেন্ট এবং কমিশন গঠনের লক্ষ্যে আগামী জুন মাসে হতে চলা নির্বাচনের জন্য ইইউ ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ নাগাদ প্রচার পর্যায়ে প্রবেশ করেছে এটি বেলজিয়ামকে মুলতুবি রাখা কাজগুলি শেষ করতে বা নতুনগুলির দায়িত্ব সামলানোর জন্য এবং ইইউ-এর ৪৫০ মিলিয়ন নাগরিকদের জন্য সেবা প্রদানের জন্য নিয়মিত সভাপতিত্বের তুলনায় অনেক কম সময় দিয়েছে।

 

স্পেন, বেলজিয়াম হাঙ্গেরি-কে নিয়ে গঠিত বর্তমান ত্রয়ীর মধ্যে বেলজিয়াম জুন মাসের শেষ পর্যন্ত সভাপতিত্ব করবে, তার পরে জুলাই মাসে হাঙ্গেরির কাছে এই সভাপতিত্বের দায়িত্ব এবং বেলজিয়ামের নিজস্ব ইউরোসেপ্টিক বা ইউরোপীয় ইউনিয়নে অবিশ্বাসী নেতৃত্ব হস্তান্তর করবে, যা ইইউ সিদ্ধান্ত গ্রহণে জল ঢেলে দেওয়ার জন্য কুখ্যাত।

 

২০২৪ সালের জুন মাসে আসন্ন বেলজিয়ামের জাতীয় আঞ্চলিক নির্বাচন দেশটির খণ্ডিত রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতিবন্ধকতার কারণে সভাপতিত্বের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। কোনও সরকার ছাড়া সর্বোচ্চ সময়ের জন্য দেশ চালানোর প্রেক্ষিতে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড ধারণ করেছে বেলজিয়াম। বেলজিয়ামের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী চার্লস মিশেলের সরকারের পতনের পর – যিনি কিনা ২০১৯ সাল থেকে ইউরোপীয় কাউন্সিলের বর্তমান সভাপতিও বটে ২০১৮ সালে বর্তমান সাত-দলীয় জোট গঠন করতে বেলজিয়ামের প্রায় ৬০০ দিন সময় লেগেছিল। এমনটা করার মাধ্যমে বেলজিয়াম ২০১০ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সময়ের সরকার ব্যতীত ৫৪১ দিনব্যাপী দেশ চালানোর নিজেরই আগেকার রেকর্ড ভেঙে ফেলে।

তা সত্ত্বেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ডি ফ্যাক্টো রাজধানী হিসাবে পরিচিত ব্রাসেলসের সঙ্গে ইইউ প্রতিষ্ঠানগুলির উপস্থাপক দেশ হিসাবে বেলজিয়াম ইইউ-এর বিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ থেকেছে এবং ইউরোপীয় প্রকল্পে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছে। ১৯৫৮ সালে বেলজিয়াম ছিল ইউরোপীয় ইকোনমিক কমিউনিটিকে (ইইসি) নেতৃত্বদানকারী প্রথম দেশ, যা ছিল ইইউ-এর ছয় সদস্যবিশিষ্ট পূর্বসূরি। যেমনটা প্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার ডি ক্রো পুনর্ব্যক্ত করেছেন,আমাদের অর্থাৎ বেলজিয়ানদের ডিএনএ-তে ইইউ আছেএবং বিদেশমন্ত্রী হাদজা লাহবিব ‘কম্প্রোমিস আ লা বেলজে’ অর্থাৎ একটি ছোট বহুভাষিক বহুজাতিক দেশ হিসাবে বেলজিয়ানদের আপস করার ক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছেন

 

বেলজিয়ামের সভাপতিত্বের জন্য অগ্রাধিকার

রক্ষা করা, সশক্ত করা, প্রস্তুত থাকা’র নীতির সঙ্গে মিল রেখে বেলজিয়াম তার সভাপতিত্বের জন্য ছটি অগ্রাধিকার ক্ষেত্র চিহ্নিত করেছে।

প্রথমটির মধ্যে রয়েছে আইনের প্রশাসন, গণতন্ত্র ঐক্য রক্ষা করা এবং তার সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিবর্ধন প্রার্থী দেশগুলির সমর্থনের উপর মনোযোগ দিয়ে ভবিষ্যতে যোগদানের জন্য ইউনিয়নকে প্রস্তুত করা। সাম্প্রতিক ইইউ শীর্ষ সম্মেলনে ইউক্রেন ও মলডোভার যোগদানের আলোচনা বিষয়ে সিদ্ধান্ত এবং বেলজিয়ান সভাপতিত্বের সঙ্গে ইইউ-এর ব্যাপক পূর্বমুখী বৃদ্ধির ২০তম বার্ষিকীর প্রেক্ষাপটে এটি আরও বেশি গুরুত্ব পেয়েছে।

 

এই চুক্তির লক্ষ্য হল ইইউ মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আশ্রয় ব্যবস্থা সংস্কার এবং কার্যকর অভিবাসন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অভিবাসন সংক্রান্ত দীর্ঘস্থায়ী জ্বলন্ত সমস্যাগুলি মোকাবিলা করা।

 

দ্বিতীয় অগ্রাধিকারটি হল ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ বাজার বৃদ্ধি করে, নিয়ন্ত্রক কাঠামোকে সরল করে তুলে, গুরুত্বপূর্ণ নির্ভরতা হ্রাস ঘটিয়ে এবং একটি স্থিতিস্থাপক ডিজিটাল বাস্তুতন্ত্র নির্মাণ করার মাধ্যমে ইউরোপীয় প্রতিযোগিতা, শিল্প নীতি এবং মহাদেশের অর্থনৈতিক নিরাপত্তাকে জোরদার করা।

তৃতীয় অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে ইইউ-এর দূষণহীন চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একটি দূষণহীন ন্যায্য শক্তি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের অনুসরণ করার লক্ষ্য। এর মধ্যে ইইউ-এর বৃত্তাকার অর্থনীতিকে বৃদ্ধি করা, জনসংখ্যার কাছে সাশ্রয়ী জ্বালানি সরবরাহ করা, পুনর্নবীকরণযোগ্য কম-কার্বন শক্তির উত্সগুলি অগ্রসর ঘটানো এবং বাস ট্রাক থেকে কার্বন নির্গমনের বিষয়ে একমত পোষণ করার বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত

বেলজিয়ামের চতুর্থ অগ্রাধিকার হল আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ন্যায্য ইউরোপীয় সমাজের সুবিধার্থে ইউরোপের সামাজিক কর্মসূচির প্রচার করা এবং তার পাশাপাশি সঙ্কট প্রস্তুতির উন্নতি গুণমানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবাতে ন্যায়সঙ্গত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে ইউনিয়নের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কর্মসূচিগুলিকে শক্তিশালী করা।

আর কটি শীর্ষ অগ্রাধিকার হল ডিসেম্বর মাসে সম্মত হওয়া অভিবাসন আশ্রয় সম্পর্কিত ইইউ-এর নতুন চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মানুষ এবং সীমান্ত রক্ষা করা। এই চুক্তির লক্ষ্য হল ইইউ মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আশ্রয় ব্যবস্থা সংস্কার এবং কার্যকর অভিবাসন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অভিবাসন সংক্রান্ত দীর্ঘস্থায়ী জ্বলন্ত সমস্যাগুলি মোকাবিলা করা। বেলজিয়াম সংগঠিত অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই এবং সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থা মোকাবিলাকেও অগ্রাধিকার দেবে।

আরও উচ্চাকাঙ্ক্ষী বাণিজ্য নীতি এবং নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা উন্নয়ন ক্ষমতার বৃহত্তর গতিশীলতার মাধ্যমে ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে ইউনিয়নের স্বায়ত্তশাসন স্থিতিস্থাপকতাকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি একটি বিশ্বব্যাপী ইউরোপের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা হল বেলজিয়ামের আর একটি অগ্রাধিকার

 

এই সভাপতিত্বে বিশ্বের এ ধরনের প্রথম প্রচেষ্টায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নিয়ন্ত্রণের জন্য ইইউ-এর যুগান্তকারী চুক্তিকে আকার দেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে।

 

এগুলি ছাড়াও ইতিমধ্যেই একটি বিশেষ শীর্ষ সম্মেলন নির্ধারিত হয়েছে, যেখানে ইউক্রেনের জন্য ৫০ বিলিয়ন ইউরোর ত্রাণ প্যাকেজ প্রদান পাস করার কথা রয়েছে, যেটির উপর ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে কাউন্সিল সম্মেলনের সময় হাঙ্গেরি ভেটো প্রদান করেছিল। ইইউ-এর মাল্টি-অ্যানুয়াল ফিন্যানশিয়াল ফ্রেমওয়ার্ক (এমএফএফ) অর্থাৎ ইউনিয়নের দীর্ঘমেয়াদি বাজেটও পর্যালোচনার অধীনে থাকবে। এই সভাপতিত্বে বিশ্বের এ ধরনের প্রথম প্রচেষ্টায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নিয়ন্ত্রণের জন্য ইইউ-এর যুগান্তকারী চুক্তিকে আকার দেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে।

উচ্চাভিলাষী সভাপতিত্বের কর্মসূচি, স্বল্প সময়কাল এবং আসন্ন একাধিক নির্বাচন সত্ত্বেও আগামী কয়েক মাস বেলজিয়ামের জন্য রোমাঞ্চকর হতে চলেছে।

 


শায়রী মলহোত্র অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের অ্যাসোসিয়েট ফেলো।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.