-
CENTRES
Progammes & Centres
Location
ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার মরিয়া প্রচেষ্টা সত্ত্বেও দেশ তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করতে এবং পুনঃগণতন্ত্রীকরণের দিকে নতুন পদক্ষেপ করতে সক্ষম হয়েছে।
শ্রীলঙ্কার সংকট: স্বৈরাচারী শাসনের অবসান
এই নিবন্ধটি ‘দ্য আনফোল্ডিং ক্রাইসিস ইন শ্রীলঙ্কা’ শীর্ষক সিরিজের অংশ
৯ জুলাই ছিল শ্রীলঙ্কার রাজনীতির ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। সেদিন বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের অফিস এবং বাসভবনে ঢুকে পড়ে এবং তাঁকে পদত্যাগের কথা ঘোষণা করতে বাধ্য করে।
গত কয়েক মাস ধরে অর্থনৈতিক সঙ্কটের অবনতি হওয়া সত্ত্বেও শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট সঙ্কটের মূল কারণগুলির সমাধান করার পরিবর্তে বিক্ষোভকারীদের দমন করতে সামরিক বাহিনী ব্যবহার করে প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর অবস্থান সুরক্ষিত করতে চেয়েছিলেন। এই প্রয়াসে বিপদ ছিল, এবং এটি স্পষ্টতই ব্যর্থ হয়েছিল, কারণ বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্টের বাসভবন ও কার্যালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় দখল করে নেয়। একজন উদার গণতন্ত্রী বিক্রমসিংহে–কে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করে প্রেসিডেন্ট চটজলদি সমাধানের আশা করেছিলেন। গোতাবায়া রাজাপক্ষে মালদ্বীপে আশ্রয় নেওয়ার পরে শ্রীলঙ্কার বর্তমান প্রেসিডেন্ট এখন বিক্রমসিংহে।
অর্থনৈতিক সঙ্কট একাধিক সামাজিক উদ্বেগের কারণ হয়েছে এবং হিংসার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।
দেশ জ্বালানি ও খাদ্য সংকটের মুখোমুখি হওয়ায় স্থবির হয়ে পড়েছিল; সরকারি অফিস ও স্কুল দুই সপ্তাহের জন্য বন্ধ করা হয়। অর্থনৈতিক সঙ্কট একাধিক সামাজিক উদ্বেগের কারণ হয়েছে এবং হিংসার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। কয়েক সপ্তাহ আগে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ায় শ্রীলঙ্কার একটি জ্বালানি স্টেশনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে সেনারা শূন্যে গুলি চালায়। অন্য একটি জ্বালানি স্টেশনে ছয় পুলিশ আহত হন। জুন মাসে বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্ট সদস্যদের ৪০টিরও বেশি বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। যখন বিক্ষোভ আরও খারাপ দিকে মোড় নিচ্ছিল, নবনিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী তখন খাদ্য সংকট ও অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতির মোকাবিলার পরিবর্তে পার্লামেন্ট সদস্যদের জন্য ঘর পুনর্নির্মাণের বিষয়ে বেশি মনোযোগী ছিলেন। রাজাপক্ষের রাজনৈতিক কৌশলবিদ ও প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী বাসিল রাজাপক্ষে রাজনৈতিক অফিস থেকে পদত্যাগ করে ক্যাসিনো মালিক দাম্মিকা পেরেরাকে তাঁর পার্লামেন্টের আসন নেওয়ার পথ তৈরি করেছেন। এভাবে প্রতিবাদ সত্ত্বেও রাজনৈতিক আনুকূল্যবাদ অব্যাহত থাকার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে। উইমাল উইরাওয়ানসা একটি কঠোর সতর্কবার্তাও দিয়েছিলেন যে যদি প্রতিবাদীদের দাবিগুলিকে গুরুত্ব সহকারে না–নেওয়া হয়, তবে পরবর্তী আক্রমণটি দেশের ধনী শ্রেণিকে লক্ষ্যবস্তু করবে: “তারা বিলাসবহুল যানবাহন ব্যবহারকারী এবং বিলাসবহুল বাড়িতে বসবাসকারী সবাইকে আক্রমণ করবে। সরকার যদি সঙ্কট নিয়ে খেলা চালিয়ে যায়, তবে এটিই অনিবার্য ভবিষ্যৎ।’’ এটি ভয়াবহ মানবিক সংকটের কারণে একটি সম্ভাব্য পূর্ণবিকশিত বিদ্রোহের দিকে নির্দেশিত একটি সতর্কতা। সামনের সারিতে সামরিক বাহিনীকে রাখা, বিক্ষোভকারীদের বহু জনকে গ্রেপ্তার করা, এবং প্রধান বিরোধী দলগুলির পার্লামেন্ট বর্জন করা, সব মিলিয়ে শ্রীলঙ্কার সংকট ক্রমাগত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া প্রধানমন্ত্রীকে হাউসকিপার হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন স্বৈরাচারী ঘরটি পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন করে গণতন্ত্র দিয়ে সাজাতে। রাজাপক্ষের আধুনিক কর্তৃত্ববাদী শাসন ইয়েলের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক স্টিভেন কোটকিন বর্ণিত কর্তৃত্ববাদী শাসনের পাঁচটি মাত্রার সঙ্গে ভালভাবে খাপ খায়। প্রথমত, দেশের ১৫টিরও বেশি ক্ষেত্রব্যাপী ভারী সামরিকীকরণ সহ একটি জবরদস্তিমূলক ব্যবস্থা প্রয়োগ করা হয়েছিল, এবং একাধিক গ্রেপ্তারের জন্য সন্ত্রাস প্রতিরোধ আইন (পিটিএ) ব্যবহার করে বলপ্রয়োগ ও নৃশংসতার গোপন অভিযান চালানো হয়েছিল। দ্বিতীয়ত, আকস্মিকভাবে জৈব চাষে পরিবর্তনের মতো নীতিগুলির কারণে সরকার ও জনসাধারণের মধ্যে সামাজিক চুক্তি টিকিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় রাজস্বপ্রবাহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। শাসনব্যবস্থা বুঝতে পেরেছিল যে তারা সামাজিক চুক্তি ভঙ্গ করেছে ,কিন্তু সরকারের পতন না–হওয়া পর্যন্ত নীতিগত ভুল স্বীকার করেনি। তৃতীয়ত, রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত জীবনের বিভিন্ন দিক দেখা গিয়েছিল বলপূর্বক সংখ্যালঘুদের জমি দখল করা, দাহ করতে বাধ্য করা, এক্তিয়ারবহির্ভূত গ্রেপ্তার ও আইনশৃঙ্খলায় হস্তক্ষেপ করার মধ্যে। রাষ্ট্র জনগণের জীবনে অন্ধকার ছায়া ফেলেছে; শাসনের কোনও বিরোধিতা বা সমালোচনা ভালভাবে গ্রহণ করা হয়নি, এবং যাঁরা ভিন্নমত প্রদর্শন করতে গিয়েছিলেন তাঁদের জীবনে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। চতুর্থত, শাসনের রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য জাতীয়তাবাদকে অস্ত্রে পরিণত করা হয়েছিল গল্প এবং আখ্যানের মাধ্যমে, যা অভ্যন্তরীণ/বহিরাগত হস্তক্ষেপকে অভিযুক্ত করেছিল এবং সেগুলিকে জাতীয় নিরাপত্তার পক্ষে বিপদ হিসেবে চিত্রিত করেছিল। আখ্যানটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছিল যাতে দেখানো যায় যে জাতীয় মহত্ত্ব বিপদের মধ্যে ছিল, এবং রাজাপক্ষে তা রক্ষা করছিলেন। এই গল্পগুলির শক্তি ছিল, এবং তা কার্যকরভাবে রাজাপক্ষেপন্থী বেসরকারি মিডিয়া আউটলেটগুলি ব্যবহার করে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। পঞ্চমত, শ্রীলঙ্কা রাষ্ট্রের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে ক্রমাগত প্রশ্ন তোলার জন্য পশ্চিমীদের শয়তান হিসেবে বর্ণনার মাধ্যমে শাসকেরা তাদের চিনের প্রতি ঝোঁককে ন্যায্যতা দিয়েছিল। নতুন নেতৃত্বের পক্ষে পররাষ্ট্র নীতির ভারসাম্য বজায় রাখা এবং পাঁচটি মাত্রার সাধিত ক্ষতি প্রশমন করে দেশের পুনঃগণতন্ত্রীকরণ একটি কঠিন কাজ হবে।
রাষ্ট্র জনগণের জীবনে অন্ধকার ছায়া ফেলেছে; শাসনের কোনও বিরোধিতা বা সমালোচনা ভালভাবে গ্রহণ করা হয়নি, এবং যাঁরা ভিন্নমত প্রদর্শন করতে গিয়েছিলেন তাঁদের জীবনে বিরূপ প্রভাব পড়েছে।
প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে টিকে থাকার জন্য ত্রিমুখী রাজনৈতিক চুক্তি করেছিলেন। তিনি রনিল বিক্রমসিংহকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেন। দ্বিতীয়ত, তিনি নতুন প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন করার জন্য রাজাপক্ষেদের রাজনৈতিক দল এস এল পি পি–কে নিয়ে এসেছিলেন। এবং এর বিনিময়ে তিনি রাজনৈতিকভাবে টিকে থাকার জন্য রনিল বিক্রমসিংহেকে পাশে পেয়েছিলেন। বিক্রমসিংহে, একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ যাঁর অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক গতিশীলতা সম্পর্কে গভীর ধারণা রয়েছে, তিনি অবিলম্বে তাঁর নিজের রাজনৈতিক অস্তিত্বের জন্য পার্লামেন্ট এবং জনগণের আস্থা অর্জন করতে প্রচার শুরু করে দিয়েছিলেন। গোতাবায়ার মতো একজনকে প্রেসিডেন্ট নিয়োগের জন্য নতুন প্রধানমন্ত্রী প্রথমে মিডিয়াকে দায়ী করেন; তারপরে তিনি একটি নৈতিক দ্বিধাকে সামনে রেখে স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে প্রতিবাদকারীরা যদি তাঁকে এবং নতুন সরকারকে উত্যক্ত করে তবে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। নৈতিক দ্বিধা ছিল একটি সাবধানে তৈরি করা কৌশল, যা আগাম সতর্কতা জারি করেছে যে, সব রাজনৈতিক দল ও জনসাধারণ তাঁকে সমর্থন না–করলে খাদ্য নিরাপত্তা সংকট এড়ানো যাবে না।
প্রধানমন্ত্রী অবিলম্বে সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব করেছিলেন। ২০তম সংশোধনী, যার মাধ্যমে গোতাবায়া রাজাপক্ষে ২০২০ সালে এগজিকিউটিভ প্রেসিডেন্সি তৈরি করেছিলেন, বিক্রমসিংহে তা পরিবর্তন করে ২১তম সংশোধনীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর হাতে যথেষ্ট ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চেয়েছেন। তবে একজন সুশীলসমাজ–কর্মী ও শিক্ষাবিদ ডঃ জেহান পেরেরার মতে, ‘‘২১তম সংশোধনীটি প্রত্যাশিত পদ্ধতিতে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করে না।’’
বিক্রমসিংহে রাজাপক্ষে ভাইদের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ চুক্তি লঙ্ঘনের অসুবিধা স্পষ্টভাবে বুঝতে পেরে রাজাপক্ষের সঙ্গে থেকে গিয়ে রাজনৈতিক জীবনে বড় ঝুঁকি নিয়েছেন।
পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার একটি উপায় হল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে কাঠামোগত সংস্কার। উদ্বেগের বিষয় হল, রাজাপক্ষে ও বিক্রমসিংহের অভ্যন্তরীণ বোঝাপড়া রাজনীতির বর্তমান সংকটের কোনও সমাধান দেয়নি। প্রাথমিক অবস্থা অপরিবর্তিত থেকে যায়, বিক্ষোভ চলতে থাকে, এবং ‘গোতাগোহোম’ স্লোগান ওঠে। বিক্রমসিংহে রাজাপক্ষে ভাইদের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ চুক্তি লঙ্ঘনের অসুবিধা স্পষ্টভাবে বুঝতে পেরে রাজাপক্ষের সঙ্গে থেকে গিয়ে রাজনৈতিক জীবনে বড় ঝুঁকি নিয়েছেন। রাজাপক্ষেদের একটি বিশাল বোঝা ছিল—দুর্নীতি কেলেঙ্কারি, মানবাধিকার লঙ্ঘন ইত্যাদি—যার সবই বিক্রমসিংহকে বহন করতে হয়েছে। পার্লামেন্টে রাজনৈতিক সমর্থন পাওয়ার জন্য বিক্রমসিংহে নির্ভর করতেন রাজাপক্ষেদের সমর্থক পার্লামেন্ট সদস্যদের উপর । বিক্রমসিংহে ক্ষুরধার রাজনৈতিক পথে হাঁটছেন। অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে এবং একইসঙ্গে দেশের পুনঃগণতন্ত্রীকরণ করতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভান্ডার (আই এম এফ) থেকে তাঁর দ্রুত সহায়তার প্রয়োজন। কিন্তু, আই এম এফ এখনও কর্মিস্তরের কথাবার্তার স্তরে রয়েছে, এবং তহবিল নিয়ে চুক্তির আগে অনেক কিছু করা বাকি আছে। আই এম এফ ত্রাণ তহবিলে আরও বিলম্ব আরও প্রাণহানি ঘটাবে এবং জনগণের আরও ক্ষোভের কারণ হবে।
সংবিধান পরিবর্তনের অছিলায় কাঠামোগত সংস্কারের মাধ্যমে উন্নত শাসনের বিভ্রম তৈরি করার প্রচেষ্টা চলছে। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য অবিলম্বে যা প্রয়োজন তা হল রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, এবং জনগণ ও নীতি–নির্ধারকদের মধ্যে আস্থার ঘাটতি পূরণ করতে বিক্ষোভকারীদের দাবি মেনে নেওয়ার ইচ্ছা। বিরোধী নেতা সজিথ প্রেমদাস এবং অন্যান্য বিরোধী দলের নেতারা ঘোষণা করেছেন যে তাঁরা একটি অন্তর্বর্তী সর্বদলীয় শাসনের নেতৃত্ব দিতে ইচ্ছুক। এটিই হতে পারে পুনঃগণতন্ত্রীকরণের পথে প্রথম পদক্ষেপ।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.
Asanga Abeyagoonasekera is an international security and geopolitics analyst and strategic advisor from Sri Lanka. He has led two government think tanks providing strategic advocacy. ...
Read More +