Author : Girish Luthra

Expert Speak Raisina Debates
Published on Aug 23, 2022 Updated 27 Days ago

রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ ও সংশ্লিষ্ট অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার নেতিবাচক প্রভাব বিশ্বের বিভিন্ন অংশে দেখা গেছে, এবং তা একগুচ্ছ নতুন চ্যালেঞ্জ সামনে নিয়ে এসেছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা এবং প্রতিকূল বৈশ্বিক হাওয়া
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা এবং প্রতিকূল বৈশ্বিক হাওয়া

এই নিবন্ধটি ‘‌দ্য ইউক্রেন ক্রাইসিস: কজ অ্যান্ড কোর্স অফ দ্য কনফ্লিক্ট’‌ সিরিজের অংশ।

সাম্প্রতিক সময়ে বৈশ্বিক প্রতিকূল হাওয়া—যে হাওয়া উঠল মহাশক্তি–প্রতিদ্বন্দ্বিতা নতুন করে শুরু হওয়ার কারণে, জোর পেল অতিমারির সময়,  এবং প্রবল হয়ে দেখা দিল রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে—বিশ্বের বিভিন্ন অংশের ক্ষতি করতে শুরু করেছে। নানা অর্থনৈতিক, সামাজিক, এবং পরিবেশগত চাপ তো ছিলই, এখন অন্য চ্যালেঞ্জগুলির উপর ভূ–রাজনীতির আধিপত্যের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। সামনের দিকে তাকালে কিছু বড় অনিশ্চয়তা রয়েছে, যার মধ্যে আছে চলতি রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের স্থায়িত্বকাল, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার ধারাবাহিকতা, ব্লক রাজনীতির পুনরুত্থান, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং বাণিজ্যের ধরন ও সরবরাহ শৃঙ্খলে পরিবর্তন।

সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা ও পরিচালনার জন্য ইউক্রেনকে সমর্থন ও সাহায্যের পশ্চিমী কৌশল, অন্যান্য সীমান্ত রাষ্ট্রে নর্থ অ্যাটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন–এর দৃঢ় অবস্থান, এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যাপক, বহুপাক্ষিক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা উভয় পক্ষের অবস্থানকে আরও কঠোর করার পথে নিয়ে গিয়েছে।

রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ যখন ষষ্ঠ মাসে পদার্পণ করছে, তখনও আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসা তো বহু দূরের কথা, একটি সম্মতিসাপেক্ষ যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনাও ক্ষীণ। যুদ্ধের সময় রাশিয়ার উদ্দেশ্য ও কৌশলের পরিবর্তন, প্রায় সম্পূর্ণরূপে পূর্ব ও দক্ষিণ ইউক্রেনের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা, এবং আগে পরিলক্ষিত কিছু বড় ত্রুটি সমাধান করার মধ্যে দিয়ে যুদ্ধের একটি নতুন পর্ব শুরু হয়েছে। এটি রাশিয়াকে এই দ্বিতীয় পর্বে কিছু উল্লেখযোগ্য লাভ দিয়েছে। সমান্তরালভাবে সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা ও পরিচালনার জন্য ইউক্রেনকে সমর্থন ও সাহায্যের পশ্চিমী কৌশল, অন্যান্য সীমান্ত রাষ্ট্রে নর্থ অ্যাটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন–এর দৃঢ় অবস্থান, এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যাপক, বহুপাক্ষিক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা উভয় পক্ষের অবস্থানকে আরও কঠোর করার পথে নিয়ে গিয়েছে। যুদ্ধ, সামরিক সহায়তা এবং বিস্তৃত নিষেধাজ্ঞার এই সংমিশ্রণ বিভিন্ন যে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে তা পূর্ব ইউরোপের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং সেগুলির বৈশ্বিক প্রভাব রয়েছে। নতুন চ্যালেঞ্জগুলির মধ্যে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার বৈশ্বিক প্রভাব বেশি দৃশ্যমান এবং স্পষ্ট।

রাশিয়ার বিরুদ্ধে ২০২২ সালের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা

অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার ধারণাটি পুরনো এবং এর নকশা ও কাঠামো শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে অনেক পরিবর্তিত হয়েছে। রাজনৈতিক ফলাফল অর্জনে নিষেধাজ্ঞার কার্যকারিতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক রয়েছে, যে কারণে বিশেষজ্ঞদের মধ্যেও মতামতের বিভাজন হয়েছে। তা সত্ত্বেও ঠান্ডাযুদ্ধ শেষের পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি নীতিগত হাতিয়ার হিসেবে এর ব্যবহার বহুগুণ বেড়েছে, যা মূলত একমেরুত্ব ও বিশ্বায়নের সহাবস্থানের দ্বারা চালিত হয়েছে। একতরফাভাবে বা অন্য অংশীদারদের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রতিরোধমূলক ও তার পাশাপাশি শাস্তিমূলক নিষেধাজ্ঞা ব্যবহার করা হয়েছে। রাষ্ট্রপুঞ্জও তার সনদের অনুচ্ছেদ ৪১–এর বিধান অনুসারে নিষেধাজ্ঞার ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছে।

রাশিয়াও অর্থনৈতিক যন্ত্রণা কমানোর জন্য একগুচ্ছ পদক্ষেপ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে মূলধন নিয়ন্ত্রণ, রাশিয়ানদের হার্ড কারেন্সি বিদেশে স্থানান্তর করা থেকে বিরত রাখা, কিছু পণ্য, কাঁচামাল ও সরঞ্জামের রপ্তানি নিষিদ্ধ করা, রুবলে গ্যাস পেমেন্ট বাধ্যতামূলক করা, বিকল্প পেমেন্ট সিস্টেমে চলে যাওয়া, এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বহুমুখীকরণ।

রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের প্রেক্ষাপটে ২০১৪ থেকে ২০২১ সালে রাশিয়ার বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন একগুচ্ছ নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করেছিল, এবং তাতে যোগ দিয়েছিল আরও কয়েকটি অংশীদার দেশ। নিষেধাজ্ঞাগুলি আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে উচ্চস্তরের অভিযোজন–সক্ষম করেছিল। অতি সম্প্রতি, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাগুলি আরও তীব্র, শক্তিশালী, ও বিস্তৃততর হয়েছে আগামী দীর্ঘ সময়ের জন্য রুশ অর্থনীতিকে পঙ্গু করার উদ্দেশ্যে। এর মধ্যে রয়েছে ব্যক্তি ও সংস্থা, ব্যাঙ্কিং ও আর্থিক পরিষেবা, রপ্তানি ও আমদানি, পরিষেবা, প্রযুক্তি, শক্তি (তেল, গ্যাস এবং কয়লা, তবে বিশেষ করে অরক্ষিত ই ইউ দেশগুলির জন্য সুরক্ষা এবং ছাড়ের ব্যবস্থা সহ), ইস্পাত, খনি, এবং কৃষিসম্পর্কিত ক্ষেত্রের উপর নিষেধাজ্ঞা। রাশিয়াও অর্থনৈতিক যন্ত্রণা কমানোর জন্য একগুচ্ছ পদক্ষেপ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে মূলধন নিয়ন্ত্রণ, রাশিয়ানদের হার্ড কারেন্সি বিদেশে স্থানান্তর করা থেকে বিরত রাখা, কিছু পণ্য, কাঁচামাল ও সরঞ্জামের রপ্তানি নিষিদ্ধ করা, রুবলে গ্যাস পেমেন্ট বাধ্যতামূলক করা, বিকল্প পেমেন্ট সিস্টেমে চলে যাওয়া, এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বহুমুখীকরণ। দেশটি কিছু পাল্টা নিষেধাজ্ঞাও প্রয়োগ করেছে এবং কিছু ইউরোপীয় দেশে গ্যাস সরবরাহ হ্রাস করেছে। বিস্তৃত নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার জটিল ক্রিয়া–প্রতিক্রিয়া বিশ্বব্যাপী বৃদ্ধির উপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে এবং পণ্য, খাদ্যসামগ্রী, শক্তি ও সারের উচ্চ মূল্যস্ফীতি ঘটিয়েছে। অনেকগুলি ক্ষেত্রজুড়ে সরবরাহ শৃংখল বিঘ্নিত হয়েছে। কারেন্সি মার্কেটে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, জাতীয় ঋণের মাত্রা বাড়ছে, এবং অনেক অর্থনীতির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। সরকার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলি কঠোর মুদ্রাসংক্রান্ত ও আর্থিক পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে। যুদ্ধ ও অব্যাহত নিষেধাজ্ঞার প্রভাবে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি বর্তমানে নিরাশাচ্ছন্ন। শ্রীলঙ্কায় সঙ্কটের উদাহরণ তুলে ধরে আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভান্ডার (আই এম এফ)–এর  প্রধান সম্প্রতি বলেছেন, “বৈশ্বিক অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি উল্লেখযোগ্যভাবে অন্ধকার হয়ে গেছে, এবং অনিশ্চয়তা ব্যতিক্রমীভাবে বেশি। নিম্নগামিতার যে সব বিপদ সম্পর্কে আই এম এফ আগেই সতর্ক করেছিল তা এখন বাস্তবায়িত হয়েছে।”

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞাগুলি জি৭–এর পূর্ণ সমর্থন পেয়েছে, এবং অনেক পশ্চিমী জোট ও অংশীদার দেশ রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞায় যোগ দিয়েছে। চিন, আর্জেন্টিনা, দক্ষিণ আফ্রিকা, মেক্সিকো, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক ও সার্বিয়া সহ বেশ কয়েকটি দেশ প্রকাশ্য বিবৃতি জারি করে ইঙ্গিত দিয়েছে যে এই ধরনের নিষেধাজ্ঞাগুলি কোনও উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারে বলে তারা বিশ্বাস করে না, এবং তারা এতে অংশও নেবে না। আরও বেশ কয়েকটি দেশ কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি ছাড়াই একটি নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করেছে এবং নিষেধাজ্ঞাগুলিতে যোগ দেয়নি।

‘‌প্রেরক’‌ দেশগুলির অর্থনৈতিক ক্ষতি এবং উন্নয়নশীল দেশগুলির উপর প্রভাব সীমিত করার জন্য সমন্বয়ের অভাব প্রতিক্রিয়া–প্রক্রিয়া সম্পর্কে সংশয় তৈরি করেছে।

নিষেধাজ্ঞার পরিণতি দ্বারা চালিত প্রবণতা

রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার সামগ্রিক প্রভাব এখনও স্পষ্ট হয়নি। কিন্তু, এই পর্যায়ে তিনটি প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

• একটি নিয়মভিত্তিক ব্যবস্থা সংক্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার সারিবদ্ধকরণ সম্ভবত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে। পশ্চিমী দেশগুলি এবং তাদের অংশীদারদের একটি নিয়মভিত্তিক ব্যবস্থার দৃষ্টিভঙ্গি গত পাঁচ বছরে বিকশিত হয়েছে, এবং তা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নিয়ম ও ব্যবস্থার গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছে। এর লক্ষ্য চিনের মতো দেশগুলির জবরদস্তিমূলক ও আক্রমণাত্মক পন্থাকে সীমাবদ্ধ করা। যাই হোক, দুর্বল আন্তর্জাতিক ও বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠানের কারণে এর প্রকৃত বাস্তবায়ন অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছে। রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের ক্ষেত্রে রাশিয়া স্পষ্টভাবে নিয়মভিত্তিক ব্যবস্থা লঙ্ঘন করেছে, এবং ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে বাধ্য করেছে। তবুও, সমালোচকদের মতে, এই নিষেধাজ্ঞাগুলি নির্বাচিত কিছু পক্ষের ভূ–রাজনৈতিক স্বার্থ পূরণ করছে বলে দেখা গেছে। ‘‌প্রেরক’‌ দেশগুলির অর্থনৈতিক ক্ষতি এবং উন্নয়নশীল দেশগুলির উপর প্রভাব সীমিত করার জন্য সমন্বয়ের অভাব প্রতিক্রিয়া–প্রক্রিয়া সম্পর্কে সংশয় তৈরি করেছে। বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের সংবেদনশীলতা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার জন্য কোনও সাধারণভাবে গৃহীত কাঠামো নেই, এবং উন্নত বিশ্ব দ্বারা তাদের ব্যাপক ব্যবহার নিয়মভিত্তিক ব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হওয়ার প্রচেষ্টাকে দুর্বল করে দিতে পারে।

• চিন নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে তার স্থিতিস্থাপকতা উন্নত করতে আরও মনোযোগ দেবে। চিনের জন্য, এই চলতি যুদ্ধ থেকে সামরিক শিক্ষা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার পাঠ অন্তর্ভুক্ত না–করলে। যুদ্ধের আচার–আচরণ, অগ্রগতি এবং লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যক্ষ প্রভাব দেখার পাশাপাশি এর বিরুদ্ধে স্থিতিস্থাপকতা জোরদার করা একটি মূল মনোযোগের ক্ষেত্র হবে। চিন হল বৃহত্তম বাণিজ্য দেশ এবং তার অর্থনীতি আরও বহুমুখী।  ২০২১ সালে এর জিডিপি রাশিয়ার দশ গুণ ছিল, রুশ ব্যাঙ্কের তুলনায় চিনা ব্যাঙ্কের সম্পদ ৩০ গুণ বেশি। এমনকি রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের আগেও চিন নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে তার স্থিতিস্থাপকতা উন্নত করার জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছিল। এর মধ্যে ছিল স্বনির্ভরতার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা, দেশীয় অর্থনীতি ও ‘‌অভ্যন্তরীণ সঞ্চালন’‌ শক্তিশালী করা, বাণিজ্য লেনদেন ও বন্ডহোল্ডারদের জন্য রেনমিনবি ব্যবহারের প্রচার, বাণিজ্য বৈচিত্র্যকরণ এবং চিনের আন্তঃসীমান্ত আন্তঃব্যাঙ্ক পেমেন্ট সিস্টেম ব্যবহারের প্রচার। এই ব্যবস্থাগুলি তার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সম্ভার বৈচিত্র্যময় করতে সীমিত সাফল্য পেয়েছে, যা ২০২২ সালের প্রথম দিকে রাশিয়ার ৬৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের  তুলনায় দাঁড়িয়েছিল ৩.৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে ৷ চিন এই প্রচেষ্টাগুলিকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তুলবে, এবং ‘‌এর সঙ্গে অংশীদারি বিকাশের চেষ্টা করবে নিষেধাজ্ঞা স্থিতিস্থাপকতা’‌র সাধারণ প্রতিক্রিয়া হিসেবে। ২০২২ সালের জুনে ব্রিকস সম্মেলনে বক্তৃতা দেওয়ার সময় প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বর্তমান বৈশ্বিক সংকটে ব্রিকস দেশগুলির স্থিতিস্থাপকতার প্রশংসা করেছিলেন, এবং তাদের একতরফা নিষেধাজ্ঞার অপব্যবহার এবং ‘‌ঠান্ডা যুদ্ধের মানসিকতার’‌ বিরোধিতা করার জন্য একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

• ডলার–ভিত্তিক রিজার্ভের শেয়ার এবং আন্তঃসীমান্ত পেমেন্ট চাপের সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক মুদ্রা হিসেবে মার্কিন ডলারের পরিচয় অব্যাহত রয়েছে, এবং তাকে সহায়তা করেছে ২০২২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিনিময় হারের তারতম্য এবং ক্রমবর্ধমান সুদের হার। সাম্প্রতিক বছরগুলিতেও বৈশ্বিক মুদ্রার রিজার্ভে এটির অংশ উচ্চমাত্রায় রয়েছে, যদিও তা প্রায় ৭০ শতাংশ থেকে নেমে গত বিশ বছরে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫৯ শতাংশ। অনেক দেশ গত এক দশকে তাদের মুদ্রার ভান্ডারে বৈচিত্র্য আনতে শুরু করেছে। চলতি রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ এবং সেই কারণে প্রযুক্ত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাগুলি বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থার ভারসাম্যহীনতাকে উন্মোচিত করায় সময়ের সঙ্গে এই প্রবণতা জোরদার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও এই উদ্বেগ রয়েছে যে রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে মার্কিন ডলারের আধিপত্য মার্কিন দেশকে আক্রমণাত্মক নিষেধাজ্ঞার সুবিধা দেয়, এবং বেশিরভাগ দেশের জন্য মুদ্রার অবমূল্যায়নের সম্ভাব্য সুবিধাগুলি নেওয়ার পথ রুদ্ধ করে। এই মতামতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিশ্বের বিভিন্ন অংশে দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক বাণিজ্যে বিকল্প মুদ্রার ব্যবহার বৃদ্ধি পেতে পারে। উপরন্তু, রাশিয়া ও চিন ব্রিকস রিজার্ভ মুদ্রা বিকাশের জন্য একযোগে কাজ করছে। এটি শুধু সদস্য দেশগুলির জন্যই নয়, ব্রিকস দেশগুলির সঙ্গে বাণিজ্য করে এমন দেশগুলির জন্যও প্রয়োজনীয় বলে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। মার্কিন ডলারকে সমর্থন করে এমন বেশ কয়েকটি ফ্যাক্টর রয়েছে, তবে এই ধরনের উদ্যোগগুলি ডলার–প্রধান বাণিজ্য এবং আর্থিক ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করতে পারে। স্থানীয় মুদ্রায় বন্দোবস্ত এবং সেন্ট্রাল ব্যাংক ডিজিটাল কারেন্সি (সি বি ডি সি) ধীরে ধীরে বাস্তবায়নের ফলে ডলার–নির্দেশিত আন্তঃসীমান্ত পেমেন্ট হ্রাস পেতে পারে। সি বি ডি সি উন্নয়নের একটি সাম্প্রতিক রিপোর্টে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে এর আবির্ভাব রিজার্ভ মুদ্রার অবয়বে পরিবর্তন আনতে পারে। সম্ভবত সি বি ডি সি ডিজাইন করা, সামঞ্জস্য তৈরি করা, এর নিয়ন্ত্রক দিক এবং এর আন্তঃসীমান্ত ব্যবহারের প্রশ্নে কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়ার প্রশ্নে নতুন উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে।

উপসংহার

রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার নেতিবাচক প্রভাব বিশ্বের বিভিন্ন অংশে দেখা গেছে, এবং তা একগুচ্ছ নতুন চ্যালেঞ্জ সামনে নিয়ে এসেছে। আধুনিক নিষেধাজ্ঞার ধারণা ও বাস্তবায়ন নিয়ে বিশ্ব জনমত বিভক্ত। নিষেধাজ্ঞার অনিচ্ছাকৃত পরিণতি, বিশেষ করে বৈশ্বিক দক্ষিণ (‌গ্লোবাল সাউথ)‌ ও উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য, একটি কূটনৈতিক সমাধানের, এবং নিষেধাজ্ঞাগুলি প্রত্যাহার করতে সহায়তা করে এমন একটি পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ বাড়িয়েছে৷ যদিও বেশ কিছু ভূ–রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা থেকে গিয়েছে, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার প্রতিকূল পরিণতি কিন্তু এমন কিছু প্রবণতা নির্দেশ করে যা ভূ–অর্থনৈতিক দৃশ্যপটকে নতুন আকার দিতে পারে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.