Author : Arya Roy Bardhan

Published on Apr 29, 2024 Updated 0 Hours ago

২০২৪ সালে জৈব, দায়িত্বশীল বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে ভারতকে এমন একটি নীতি কাঠামোর বাস্তবায়ন করতে হবে যা বর্তমান ভূ–রাজনৈতিক পরিবেশে একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য অনন্য।

ভারতীয় অর্থনীতি: ২০২৩-এর সার্বিক চিত্র

২০২৩ সালে ভারতীয় অর্থনীতি একটি দুর্দান্ত বছর প্রত্যক্ষ করেছে:‌ বছরের জিডিপি ৩.৭৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার, মাথাপিছু জিডিপি ২,৬১০ মার্কিন ডলার, এবং জিডিপি বৃদ্ধির হারের বিশ্বব্যাপী গড় ২.৯ শতাংশের বিপরীতে ভারতের অনুমিত হার ৬.৩ শতাংশ। যেহেতু ভারত ২০২৭ সালের মধ্যে ৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হতে প্রস্তুত, তাই অন্য গুরুত্বপূর্ণ পরামিতিগুলির সঙ্গে বৃদ্ধির চালিকাশক্তিগুলির অনুসন্ধান করা প্রয়োজন৷ এর মধ্যে কয়েকটি পরামিতি হল:‌ মূল্যস্ফীতি, বেকারত্ব, বিনিয়োগ, সেক্টরাল পারফরম্যান্স, এবং বিশেষ করে, স্থিতিশীলতার পরিপ্রেক্ষিতে কর্মক্ষমতা। এই সূচকগুলির পর্যালোচনা করা হয়েছে অর্থনীতির শক্তির জায়গাগুলি চিহ্নিত করতে, এবং ২০২৪ সালে অনুসরণীয় প্রচেষ্টাগুলিকে বিশেষভাবে তুলে ধরার জন্য।

চিত্র ১: ভারতের মাথাপিছু জিডিপি (মার্কিন ডলারে)

সূত্র:
আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভান্ডার

গুরুত্বপূর্ণ পরামিতি

যদিও বিশ্বব্যাপী বৃদ্ধি মন্থর হচ্ছে, মূল্যস্ফীতি তুলনামূলকভাবে অনড় রয়েছে। সস্তা জ্বালানি এবং দ্রব্যমূল্যের সংশোধনের ফলে অক্টোবর ২০২৩ সাল থেকে হেডলাইন কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স (সিপিআই) মূল্যস্ফীতি প্রায়
২ শতাংশ কমেছে। মূলগত মূল্যস্ফীতি—খাদ্য ও জ্বালানি ব্যতীত সিপিআই মূল্যস্ফীতি—স্থিতিশীল রয়েছে, যা নির্দেশ করে যে এটি প্রাথমিকভাবে খাদ্যমূল্যের ধাক্কা যা হেডলাইন মুদ্রাস্ফীতিকে ৪ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রা থেকে বিচ্যুত করছে। শস্য, ডাল ও মশলার দুই অঙ্কের মূল্যস্ফীতি খাদ্য মূল্যস্ফীতির গতিকে উচ্চতর রেখেছে, এবং সরকার অভ্যন্তরীণ মূল্য স্থিতিশীল করার জন্য রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে তার মোকাবিলা করছে। যদিও বিশ্বব্যাপী চাহিদা স্থিতিশীল, তবে ভূ–রাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে ২০২৪ সালে সরবরাহ শৃঙ্খলে বিঘ্ন অব্যাহত থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে, এবং সেই কারণে নিয়মিত আর্থিক ও মুদ্রানীতিগত হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হবে।

চিত্র ২: CPI মুদ্রাস্ফীতির ত্রৈমাসিক প্রক্ষেপণ (বছরের–সঙ্গে–বছর)

সূত্র:
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া

ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের (আরবিআই) নিরপেক্ষ আর্থিক নীতির অবস্থান আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভান্ডার (আইএমএফ) দ্বারা প্রশংসিত হয়েছে তার ডেটানির্ভর পদ্ধতির জন্য, এবং এই নীতি দামকে ধীরে ধীরে স্থিতিশীল করতে পারে। ভারতীয় রুপি/মার্কিন ডলার বিনিময় হার
৮২–৮৪ পরিধিতে ওঠানামা করবে বলে আশা করা হচ্ছে, আর মুদ্রাটি ধীরে ধীরে নিম্ন সীমানায় স্থিতিশীল হবে। যাই হোক, একটি সামান্য দুর্বল মুদ্রার খুব বেশি উদ্বেগ থাকা উচিত নয়, কারণ এটি ভারতীয় রপ্তানিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলবে। যেমন, নভেম্বর ২০২২ এর তুলনায় ২০২৩ সালের নভেম্বরে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি প্রায় অর্ধেক। যদিও জানুয়ারি–অক্টোবর সময়ের জন্য রপ্তানি বছর–থেকে–বছর ভিত্তিতে ৫.৪৩ শতাংশ কমেছে, একই সময়ে আমদানিও ৭.৩১ শতাংশ কমেছে, ফলে উন্নতি হয়েছে বাণিজ্য ভারসাম্যের। অভ্যন্তরীণ মূল্যস্ফীতি স্থিতিশীল করতে চাল ও অন্যান্য খাদ্যপণ্যের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার কারণে রপ্তানি হ্রাস প্রত্যাশিত ছিল।


ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের (আরবিআই) নিরপেক্ষ আর্থিক নীতির অবস্থান আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভান্ডার (আইএমএফ) দ্বারা প্রশংসিত হয়েছে তার ডেটানির্ভর পদ্ধতির জন্য, এবং এই নীতি দামকে ধীরে ধীরে স্থিতিশীল করতে পারে। 



পেট্রোলিয়াম পণ্য ও মূল্যবান পাথরের
রপ্তানি হ্রাস পেয়েছিল, আর টেলিকম যন্ত্র, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ও ওষুধের ফর্মুলেশনের রপ্তানিতে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখা গিয়েছিল। এগুলি অর্থনীতির জন্য সম্ভাব্য মূল ক্ষেত্রগুলিকে হাইলাইট করে৷ অধিকন্তু, বহিরাগত ক্ষেত্রের পর্যায়ে, আইএমএফ অনুমান অনুসারে, বিদেশী প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) ও বিদেশী পোর্টফোলিও বিনিয়োগ (এফপিআই) উভয়ই ২০২৩ সালে বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং ২০২৪ সালে যথাক্রমে ৪৪.৪ ও ৩৩.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হবে বলে অনুমান করা হয়েছে। বিদেশী বিনিয়োগের বৃদ্ধি এই সত্যের প্রমাণ যে ভারতকে গ্লোবাল সাউথের এমন একটি উদীয়মান শক্তি হিসাবে বিবেচনা করা হয় যা একটি নগণ্য ঝুঁকি প্রিমিয়াম–সহ বিনিয়োগে স্থিতিশীল রিটার্ন তৈরি করার সম্ভাবনা রাখে। এই উন্নয়নটি উদীয়মান ক্ষেত্রগুলির আলোকে অধ্যয়ন করা প্রয়োজন, যা ভারতকে ঊর্ধ্বমুখী বৃদ্ধির প্রক্ষেপণে রেখেছে।


ক্ষেত্রগত তারকা

২০২৩ ক্যালেন্ডার বছরের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে ম্যানুফ্যাকচারিং ক্ষেত্র ১৩.৯ শতাংশ 
13.9 percent বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং তা সমর্থিত হয়েছে ইস্পাত, সিমেন্ট ও অটোমোবাইল উৎপাদন ক্ষেত্রে দুই অঙ্কের বৃদ্ধি দ্বারা। পরিকাঠামো ও রিয়েল এস্টেট ক্ষেত্রগুলি ভাল পারফর্ম করেছে, আর নির্মাণ ক্ষেত্র ১৩.৩ শতাংশের একটি শক্তিশালী ত্রৈমাসিক বৃদ্ধির হার রেকর্ড করেছে। যাই হোক, গত ত্রৈমাসিকে মন্থরতা পরিলক্ষিত হয়েছে কৃষি ক্ষেত্র ও পরিষেবাগুলিতে — আর্থিক ও আতিথেয়তা পরিষেবাগুলিতে। যদিও কৃষি মন্দার কারণ প্রতিকূল আবহাওয়া এবং খরিফ ফসলের কম উৎপাদন, আর্থিক পরিষেবাগুলিতে আপেক্ষিক সংকোচনকে ক্রমবর্ধমান ভিত্তির প্রভাব হিসাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে, যেখানে আগের বছরে শক্তিশালী বৃদ্ধি ভিত্তিটিকে (‌বেস)‌ উচ্চতর করে দিয়েছে।

চিত্র ৩: প্রধান খাতে ত্রৈমাসিক প্রকৃত মোট মূল্য সংযোজন

সূত্র:
ইওয়াই পালস

ম্যানুফ্যাকচারিং ক্ষেত্রের ২০২৫–২৬ সালের মধ্যে
১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের শিল্পে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই ক্ষেত্রটি সরকারের ‘‌মেক ইন ইন্ডিয়া’‌ উদ্যোগের দ্বারা চালিত হয়েছে, যাতে আরও সহায়তা করেছে প্রোডাকশন–লিঙ্কড ইনসেনটিভ (পিএলআই)–এর মতো একাধিক শিল্প–উন্নয়নমূলক প্রকল্প। পিএলআই প্রকল্পের লক্ষ্য হল ১৪টি মূল ক্ষেত্রে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা, যাতে সেগুলি আয়তনজনিত দক্ষতা অর্জনে সক্ষম হয় এবং ভারতীয় শিল্পগুলিকে বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতামূলক করে তোলে। তবে এর জন্য বড় রকম ভর্তুকি দিতে হয়, যা সরকারি কোষাগারের উপর একটি বিশাল বোঝা চাপায়। অটোমোবাইল, টেক্সটাইল ও ইলেকট্রনিক্স ক্ষেত্রের নেতৃত্বে ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্প গার্হস্থ্য ভোক্তাদের প্রত্যাশিত বৃদ্ধির সঙ্গেসঙ্গে ক্রমবর্ধমান, এবং তা একটি কম–কর্মনিয়োজিত (‌আন্ডারএমপ্লয়েড)‌ অর্থনীতিতে সামগ্রিক চাহিদার গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করছে। এটি অর্থনীতিকে উদ্দীপিত করতে ভোক্তা আয়ের ভূমিকা এবং ফলস্বরূপ কর্মসংস্থানের ভূমিকাকে তুলে ধরে।


উন্নতির জন্য ‌জায়গা

পর্যায়ক্রমিক শ্রম বাহিনী সমীক্ষা অনুসারে, শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণের হার (এলএফপিআর)
২০২২ সালের জুনে ৪১.৩ শতাংশ থেকে ২০২৩ সালের জুনে  ৪২.৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে৷ মহিলা এলএফপিআর এখনও ৩০.৫ শতাংশে রয়েছে, যা যথেষ্ট কম৷ যুব বেকারত্ব ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের জন্য এখনও একটি ভয়ঙ্কর সমস্যা। শিল্পের বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের বিযুক্তিকরণকে নিয়োগযোগ্যতার ব্যবধান বলে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে, যার অর্থ গড় কর্মী কর্মশক্তিতে প্রবেশের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতার অধিকারী নয়। কর্মীদের প্রশিক্ষণের প্রসারে বিভিন্ন সরকারি উদ্যোগ থাকলেও উপলব্ধ উপায়গুলি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং রূপান্তর প্রক্রিয়াকে সহজ করার জন্য নীতিগুলিকে খতিয়ে দেখা উচিত৷ যদিও বেকারত্বের হার হ্রাস পাচ্ছে, তবে জনসংখ্যাগত লভ্যাংশের পুরো সুবিধা তোলা নিশ্চিত করতে হলে কর্মহীনতা হ্রাস করা প্রয়োজন।


শিল্পের বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের বিযুক্তিকরণকে নিয়োগযোগ্যতার ব্যবধান বলে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে, যার অর্থ গড় কর্মী কর্মশক্তিতে প্রবেশের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতার অধিকারী নয়।



এটি ভারতের বেছে নেওয়া কাঠামোগত পথ সম্পর্কে বিতর্ককে উস্কে দেয়, এবং পরিষেবা–নেতৃত্বাধীন বৃদ্ধির পথই ৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থনীতিতে যাত্রার প্রকৃত অনুঘটন করবে কি না সেই প্রশ্ন সামনে নিয়ে আসে। আরবিআই–এর প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন তাঁর সাম্প্রতিক বইতে যুক্তি দিয়েছেন যে, যতদিন ভারতীয় পণ্যগুলিকে প্রতিযোগিতামূলক করার জন্য প্রণোদনা দেওয়া হবে, ততদিনই ম্যানুফ্যাকচারিং বৃদ্ধির গতি টিকে থাকবে। যদিও এটি শিশু শিল্পের যুক্তির বিরোধিতা, তবে পরিষেবা ক্ষেত্রকে উপেক্ষা করা উচিত নয়। শিল্পকে প্রতিযোগিতামূলক করতে ইনপুট খরচ কমাতে হবে, যার মধ্যে শ্রমও রয়েছে, তবে তা আবার অন্তর্ভুক্তিমূলক বৃদ্ধি রোধ করে দেশের স্থিতিশীল উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করবে। যাই হোক, গবেষণা ও উন্নয়নে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ এই ভর্তুকি প্রকল্পগুলির প্রয়োজনীয়তাকে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে পারে, এবং ভারতীয় অর্থনীতির ভবিষ্যৎ গঠনের জন্য একটি জৈব গোত্রের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির সুযোগ করে দিতে পারে।


স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা

স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) স্কোরের পরিপ্রেক্ষিতে
১৬৬টি দেশের মধ্যে ভারত ১১২তম স্থানে রয়েছে। এটির একটি খুব উচ্চ স্পিলওভার স্কোরও রয়েছে, অর্থাৎ, এর অন্যান্য দেশের স্থায়িত্বকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করার সম্ভাবনা রয়েছে। যাই হোক, ম্যানুফ্যাকচারিং–নেতৃত্বাধীন বৃদ্ধির উপর ফোকাস পরিবেশগত মানের উপর গুরুতর প্রভাব ফেলবে, এবং বৃদ্ধি ও সুস্থতার মধ্যে একটিকে বেছে নিতে হবে। এই বিষয়টি সামাজিক মূল্য দিতে হবে না এমন বৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য বহু–বিষয়ক গবেষণা এবং নীতি সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। ভারত তার জি২০ প্রেসিডেন্সির সময় ২০৩০ অ্যাজেন্ডাকে উন্নত করার জন্য বেশ কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, এবং তার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্থায়িত্বের প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কাঠামো অন্তর্ভুক্ত করছে। যাই হোক, ২০২৪ সালে জৈব ও দায়িত্বশীল বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে দেশটিকে একটি অভূতপূর্ব নীতি কাঠামো তৈরি ও বাস্তবায়িত করতে হবে, যা বর্তমান ভূ–রাজনৈতিক পরিবেশে একটি বৃহৎ, উন্নয়নশীল জাতির জন্য অনন্য।



আর্য রায় বর্ধন অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সেন্টার ফর নিউ ইকনমিক ডিপ্লোম্যাসির একজন গবেষণা সহকারী।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.