Author : Kabir Taneja

Published on Apr 29, 2024 Updated 1 Hours ago

পশ্চিম এশিয়ায় আঞ্চলিক নিরাপত্তা এক অনিশ্চিত সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে।

লোহিত সাগর সঙ্কটে তেহরানের সঙ্গে কাজ করা

লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজগুলিকে লক্ষ্য করে ইয়েমেনভিত্তিক হুতি জঙ্গিগোষ্ঠীর সামরিক পদক্ষেপ - যা আনুষ্ঠানিক ভাবে আনসরাল্লাহ নামে পরিচিত - গাজায় বিদ্যমান ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধের মধ্যে একটি নতুন মঞ্চ উন্মুক্ত করে দিয়েছে। ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে সৌদি আরব থেকে ভারতের মধ্যে যাত্রা করা একটি তেলের ট্যাঙ্কার এমভি কেম প্লুটোর উপর প্রজেক্টাইল দ্বারা আক্রমণ চালানো হয়। ভারতীয় উপকূল থেকে মাত্র ২০০ নটিক্যাল মাইল দূরে জাহাজটির উপর আঘাত হানার ঘটনা আসলে এই বিপদসঙ্কেতই দেখিয়েছিল যে, পশ্চিম এশিয়ার সংঘাত আরব সাগরেও ছড়িয়ে পড়ছে।

বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের ইরান সফর এই অস্থির নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করেই ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে। এই সফরটি সম্প্রতি পরিকল্পনা করা হয়েছিল কি না সে কথা স্পষ্ট না হলেও, ইরানের পৃষ্ঠপোষণাপুষ্ট হুতিদের দ্বারা লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজগুলিতে ক্রমবর্ধমান আক্রমণের কারণে এই সফর বাস্তবায়িত হওয়ার সম্ভাবনা অনুকূল বলে মনে করা হচ্ছে। তবে হুতিরা ঠিক কী পরিকল্পনা করছে এবং তা কি নয়াদিল্লির জন্য সুরক্ষা সংক্রান্ত সমস্যার পরিমাণ বৃদ্ধি করবে?

 

হুতিরা প্যালেস্তাইনিদের সমর্থন করে এবং গাজা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইজরায়েলের উপর আক্রমণ করে নিজেদের জন্য অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক সমর্থন কুড়োনোর চেষ্টা চালায়।

প্রায় এক দশক ধরে ইয়েমেনি যুদ্ধে হুতিরা একটি কেন্দ্রীয় শক্তি ২০১৫ সালে ইয়েমেনে যুদ্ধাবস্থা গুরুতর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারত সফল ভাবে সৌদি আরব ও ইরানের সঙ্গে তার নাগরিকদের আকাশপথে সরিয়ে নেওয়ার জন্য দেশটির রাজধানী সানায় যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের জন্য তার কূটনীতিকে সচল করে। যাই হোক, তখন হুতিরা আর্থিক এবং বৈষয়িক উভয় ভাবেই সীমিত ক্ষমতাসম্পন্ন ছিল। বর্তমানে সমগ্র অঞ্চল জুড়ে ইরানের প্রতিরোধ’-এর একটি আধা-সরকারি অংশ হিসাবে গোষ্ঠীটি নিজেদের বিস্তৃত ক্ষমতা নিয়ে গর্বিত, যার মধ্যে অ্যান্টি-শিপ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের ক্ষমতাও অন্তর্ভুক্ত তাদের অন্যান্য অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে জাহাজ-বিধ্বংসী ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (যার মাত্রা ৪৫০ কিলোমিটারের বেশি), সশস্ত্র স্পিড বোট, টর্পেডো, ড্রোন, রাডারএর পাশাপাশি সমান গুরুত্বপূর্ণ হল প্রধান সামাজিক গণমাধ্যম মঞ্চগুলিতে একটি ক্রমবর্ধমান বিস্তৃত অনলাইন প্রচারের বাস্তুতন্ত্র হুতিরা প্যালেস্তাইনিদের সমর্থন করে এবং গাজা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইজরায়েলের উপর আক্রমণ করে নিজেদের জন্য অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক সমর্থন কুড়োনোর চেষ্টা চালায়।

জয়শঙ্কর তেহরানে একটি বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমরা ভারতের আশেপাশে কিছু হামলা ঘটতে দেখেছি। স্পষ্টতই, এটি ভারতের শক্তি এবং অর্থনৈতিক স্বার্থের উপরও সরাসরি প্রভাব ফেলে। এই জটিল পরিস্থিতি কোনও পক্ষের জন্যই সুবিধাজনক নয় এবং এটিকে অবশ্যই স্পষ্ট ভাবে স্বীকার করে নিতে হবেএর অপর দিকে ইরানের পক্ষ থেকে বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, তারা আন্তর্জাতিক জলসীমায় নিরাপত্তার গুরুত্বের উপর জোর দেয়। তার সঙ্গে  তারা ইহুদিবাদীদের যুদ্ধাপরাধের জন্য হোয়াইট হাউসের সমর্থন যে ‘সারা অঞ্চল জুড়ে অস্থিতিশীলতা ছড়িয়ে দেওয়ার পথ প্রশস্ত করে’, সে কথাও পুনর্ব্যক্ত করেছেএগুলি সম্পূর্ণ পরস্পরবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি এবং ব্যাখ্যাকেই দর্শায়।

পুরো অঞ্চল জুড়ে ইরানি প্রক্সিদের জাল ছড়িয়ে রয়েছে। যার মধ্যে হুতিরা কয়েক মাস ধরে পশ্চিমে, বিশেষ করে ইরাক এবং সিরিয়ায় মার্কিন স্থাপনাগুলির উপর হামলা চালাচ্ছে। আফগান শিয়া দ্বারা পরিচালিত ফাতেমিয়ুন ব্রিগেড এবং পাকিস্তানি শিয়া দ্বারা পরিচালিত জয়নাবিয়ুন ব্রিগেডের মতো এই প্রক্সিগুলিতে দক্ষিণ এশীয় উপাদানও রয়েছে। উভয় ক্ষেত্রেই যোদ্ধারা সরাসরি দুটি দেশ থেকে এলেও প্রধানত তারা ইরানের জাতিগত জনগোষ্ঠী থেকে উদ্ভূতকঠোর প্রতিক্রিয়া দেওয়ার জন্য বাইডেন প্রশাসনের উপর চাপ ক্রমশ বাড়ছে। যাই হোক, নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে হোয়াইট হাউস আর নতুন করে কোনও সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে চায় না।

 

পুরো অঞ্চল জুড়ে ইরানি প্রক্সিদের জাল ছড়িয়ে রয়েছে। যার মধ্যে হুতিরা কয়েক মাস ধরে পশ্চিমে, বিশেষ করে ইরাক এবং সিরিয়ায় মার্কিন স্থাপনাগুলির উপর হামলা চালাচ্ছে।

 

এই মুহূর্তে ইরানের উপর ভারতের প্রভাব সামান্যই। ২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা ও চাপের কারণে ভারত সরকার ইরান থেকে তেল কেনা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর থেকে ভারত-ইরান সম্পর্ক একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে। তদুপরি, আরব শক্তিগুলির সঙ্গে, বিশেষ করে সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং সৌদি আরবের সঙ্গে ভারতের দ্রুত ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্পর্ক ক্রমশ তেহরানকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে।

পশ্চিম এশিয়ায় আঞ্চলিক নিরাপত্তাও এক অনিশ্চিত সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। তেহরান যখন গাজার যুদ্ধকে তার কর্মসূচি হিসেবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যবহার করছে, তখন অন্য দিকে রিয়াধ প্রযুক্তিগত ভাবে ২০১৫ সাল থেকে হুতিদের সঙ্গে যুদ্ধে রত ছিল এবং চিনের মধ্যস্থতায় গত বছর ইরানের সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে। ক্রমবর্ধমান অবিশ্বস্ত মার্কিন নিরাপত্তা বলয়ের কারণে সৌদিরা আংশিক ভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি সম্ভবত ১৯৪৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের পর থেকে কৌশলগত অবস্থানের নিরিখে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ছিল, যখন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট এবং সৌদি রাজা আবদুল আজিজ ইবন সৌদ একটি নিরাপত্তার জন্য তেলচুক্তিকে সুনিশ্চিত করার জন্য সুয়েজ খালে যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস কুইন্সিতে সাক্ষাৎ করেছিলেন।

এই সঙ্কটময় সামুদ্রিক পথকে কেন্দ্র করে একটি দুর্বল নিরাপত্তা পরিস্থিতি ভারতের জন্য কৌশলগত সমস্যারই পুনরাবৃত্তি ঘটিয়েছেঅ-রাষ্ট্রীয় জঙ্গি শক্তিগুলির সাম্প্রতিক সাফল্য অর্থাৎ আফগানিস্তানে তালিবান থেকে ইয়েমেনের হুতিদের - কৌশলগত প্রভাব, স্বার্থ ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সুসজ্জিত জঙ্গিগোষ্ঠী পরিচালিত চরমপন্থী রাষ্ট্রগুলির একটি বিপজ্জনক প্রবণতাই প্রকাশ্যে এসেছে। নয়াদিল্লির নিরাপত্তামূলক চ্যালেঞ্জের পরিসরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.