তালিবানের সাম্প্রতিক আফগানিস্তান দখল ও ইউক্রেন সংকটের ফলে পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় মধ্য এশিয়ায় মাদক পাচারের বিরুদ্ধে দমন অভিযান জরুরি বলে মনে হচ্ছে।
মধ্য এশিয়ায় ক্রমবর্ধমান মাদক পাচার
২০২১ সালে তাজিক ড্রাগ কন্ট্রোল এজেন্সির প্রধানকে উদ্ধৃত করে তাস নিউজ বলেছিল যে সে দেশে আটক করা হেরোইন এবং হাশিশের পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ—২০২০ সালের ২.৩ টন থেকে বেড়ে ২০২১ সালে ৪ টন—হয়েছে। এই মাদকদ্রব্যের চাষ, উৎপাদন, এবং তা পাচার করা হয় প্রাথমিকভাবে আফগানিস্তান থেকে। রাষ্ট্রপুঞ্জের মাদকদ্রব্য ও অপরাধ সংক্রান্ত কার্যালয় (ইউ এন ও ডি সি)–এর আনুমানিক হিসাব হল,বিশ্বের আফিম এবং হেরোইন সরবরাহের ৮০ শতাংশ আফগানিস্তান থেকেতিনটি প্রাথমিক রুট ধরে বৃহত্তর এশিয়া এবং ইউরোপে পাচার করা হয়, এবং এই পাচারের বিষয়টি এই সব অঞ্চলের নাগরিকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক বিপদস্বরূপ হয়ে উঠেছে। আফগানিস্তান ও ইউক্রেনের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলি আফগানিস্তানে উদ্ভূত অবৈধ মাদকদ্রব্যের প্রবাহ আটকানোর কাজকে জটিল করে তুলেছে, এবং এখন উদ্ভূত বিপদ ও তার সম্ভাব্য সমাধান সম্পর্কে বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের মধ্যে আরও আলোচনা প্রয়োজন।
তাজিকিস্তানে আটক করা আফিমজাত মাদক
ঐতিহাসিক পটভূমি
ঐতিহাসিকভাবে আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও পূর্ব ইরান তৈরি করেছিল ‘গোল্ডেন ক্রেসেন্ট’, যা এশিয়ার অবৈধ আফিম উৎপাদনের দুটি প্রধান ক্ষেত্রের অন্যতম (অন্যটি হল গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল)। বিখ্যাত সিল্ক রোড ধরে আফগানিস্তান থেকে অবৈধ আফিম এবং অন্যান্য মাদক পাচারের জন্য পাচারকারীদের কাছে সর্বদা একাধিক পথ খোলা ছিল। শত শত বছর এভাবেই চলে আসছে এবং আজও তাই। এই প্রধান রুটগুলির মধ্যে একটি মধ্য এশিয়ার দেশগুলির মধ্য দিয়ে রাশিয়া ও বেলারুস হয়ে বিস্তৃত ইউরোপীয় বাজারে মাদক পৌঁছে দেয়। ২০২১ সালে কাবুলে ধর্মনিরপেক্ষ সরকারের পতন দুই দশকের মার্কিন ও ন্যাটো উপস্থিতির ব্যর্থতার ইঙ্গিত দেয়। ব্রাউন ইউনিভার্সিটির ওয়াটসন ইনস্টিটিউট পরিচালিত কস্টস অফ ওয়ার প্রকল্প আনুমানিক হিসাব করেছিল যে আফগানিস্তানের যুদ্ধেমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২.৩ ট্রিলিয়ন ডলার খরচহয়েছে। সিগার–এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু আফগান পপি নির্মূল করার চেষ্টায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র২০১২ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরবেশি খরচ করেছে। তাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য তারা বিশ্বাস করেছিল যে তালিবানের টাকা আসার পথ বন্ধ করতে হবে, যার বেশিরভাগই আসত অবৈধ আফিম সংগ্রহ ও পাচার থেকে।
২০২১ সালে কাবুলে ধর্মনিরপেক্ষ সরকারের পতন দুই দশকের মার্কিন ও ন্যাটো উপস্থিতির ব্যর্থতার ইঙ্গিত দেয়।
১৯৯৯ সালের শেষের দিকে তালিবান পপি (পোস্ত) চাষের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে, যার ফলে কোনও এক বছরে একটি দেশে আফিমের জন্য পপি চাষ সবচেয়ে বেশি হ্রাস পায়। চাষাবাদের ক্ষেত্র ২০০০ সালের আনুমানিক৮২,১৭২ হেক্টর থেকে কমে ২০০১ সালে ৮,০০০ হেক্টরের নিচেনেমে আসে। তবে এর জন্য তালিবানকে রাজনৈতিক মূল্য দিতে হয়েছিল যথেষ্ট। এই নিষেধাজ্ঞা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি, এবং তালিবান সেপ্টেম্বর ২০০১–এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে এই যুক্তি দিয়ে যে তাদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য আর্থিক সংস্থান প্রয়োজন। আফগানিস্তানে ২০০০–এর দশকের শেষের দিক ও ২০১০–এর দশকের শুরুর দিকে জোটসমর্থিত সরকারের স্থিতিশীলতার পর কাবুলের সরকার ব্যাপক পপি চাষ সহ আরও অনেক বিষয়ের দিকে নজর দিতে সক্ষম হয়েছিল। কিছু চাষের জমি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং বড় আকারে মাদক বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল, কিন্তু তবুও মাদক পাচারের একাধিক রুট সক্রিয় ছিল। যদিও মার্কিন ও ন্যাটোসমর্থিত বাহিনী অবৈধ মাদকদ্রব্যের পরিকাঠামো ধ্বংস করার জন্য অভিযান চালিয়ে যাচ্ছিল, তবে তারা কখনই আফগান ক্ষেত থেকে পপি পুরোপুরি নির্মূল করতে পারেনি। এখন যেহেতু তালিবান ক্ষমতায় ফিরে এসেছে, তারা পপির চাষ ও অন্যান্য মাদকদ্রব্যের উৎপাদন, ব্যবহার ও পরিবহণের উপরনিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করেছে। তারা কতটা সফল হবে তা আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি না; আর আমরা নিশ্চিতভাবে একথাও বলতে পারি না যে তারা কতটা সফল হতে চায়, বিশেষ করে যদি আমরা মাথায় রাখি কাবুল থেকে মার্কিন নিষ্ক্রমণ না–হওয়া পর্যন্ত তালিবানের কেউ কেউ কীভাবে তাদের বিদ্রোহকে অর্থায়নের জন্য আফিমকে ব্যবহার করছে।
‘হাইওয়েগুলি’র চিহ্নিতকরণ: অবৈধ মাদক পাচারের রুট
আফগানিস্তান থেকে মধ্য এশিয়া হয়ে রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপে চলে যাওয়া তথাকথিত ‘নর্দার্ন রুট’ ঐতিহাসিকভাবে মাদক পাচারের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে (যদিও ইতিহাসে পদার্থের বৈধতা বিতর্কিত), এবং আফগান হেরোইন ইউরোপে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন পক্ষের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ রুট হয়ে উঠেছে। ইউ এন ও ডি সি অনুসারে, ২০১০ সালে সমস্তআফিমগোত্রীয় মাদকের প্রায় ১৫ শতাংশ এবং আফগানিস্তান থেকে সমস্ত হেরোইনের ২০ শতাংশতাজিকিস্তানের মধ্যে দিয়ে পাচার হয়েছিল। সত্যি কথাটা হল, কেউ জানেই না কতটা আফগান হেরোইন তাজিকিস্তান ও অন্যান্য মধ্য এশিয়ার প্রজাতন্ত্রের মধ্য দিয়ে যায়; কারণ এই ধরনের আনুমানিক হিসাব তৈরি করার জন্য কোনও শক্তিশালী পদ্ধতি নেই। যাই হোক, মধ্য এশিয়ার দেশগুলির অংশীদার হয়ে বিভিন্ন সরকার এবং ইউ এন ও ডি সি–র সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ২০০৩ সালেপ্যারিস প্যাক্ট ইনিশিয়েটিভেরসূচনার পর মধ্য এশিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়ার পথটি নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। তবে মধ্য এশিয়ার অনেক দেশের জন্য সাফল্য এবং ব্যর্থতা বিভিন্ন মাত্রার, এবং এটিকে ছাপিয়ে গিয়েছে প্রাথমিক ‘বলকান রুট’ সহ অন্যান্য রুট। তুর্কমেনিস্তান অনন্যভাবে বলকান রুট দিয়ে ইউরোপে পাচারের জন্য আফগান আফিমের একটি গন্তব্য দেশ। তাই একথা বলা সঙ্গত যে এখানেও মধ্য এশিয়ার ভূমিকাকে উপেক্ষা করা উচিত নয়।
সংশ্লিষ্ট ঝুঁকি
নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও এই অঞ্চলের বেশির ভাগ জায়গার পরিস্থিতি বিপজ্জনক। ২০১০ সালে ইউ এন ও ডি সি–র নির্বাহী পরিচালক ইউরি ফেডোটভ বলেছিলেন যে তাজিকিস্তান হলআফগানিস্তান থেকে মাদকের প্রবাহ রোধে প্রতিরক্ষার প্রথম লাইন। আফগানিস্তানের সীমান্তে টহল দেওয়ার দায়িত্বে থাকা তাজিক সীমান্তরক্ষী বাহিনীরএই মাদক পাচারের সিংহভাগ কার্যকরভাবে আটকানোর জন্য মানবিক ও প্রযুক্তিগত উপায়ের অভাব রয়েছে। তাছাড়া তাদের স্বল্প বেতন দুর্নীতির প্রশ্নে আপসহীন হওয়ার পথে বাধা তৈরি করে, এবং তাদের অপ্রতুল উপকরণের কারণে শক্তিশালী মাদক পাচারকারীদের হুমকির মুখে তাদের কাছে খুব কম বিকল্প থাকে, কারণ পাচারকারীরা কাজ হাসিল করতে হিংসার আশ্রয় নিতে দ্বিধা করে না। কর্তৃত্ববাদী এবং দুর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্রগুলি মধ্য এশিয়া অঞ্চলে মাদক পাচার শিল্পের জন্ম দিয়েছে। ২০১১ সালে তাজিকিস্তানের মধ্য দিয়ে পাচার হওয়া মাদকদ্রব্যের মূল্য আনুমানিক ২.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিল, যা দেশের বৈধ সম্পদের যে কোনও উৎসের চেয়ে অনেক বেশি। সরকার ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে উল্লেখযোগ্য পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এ জাতীয় মূল্যবান শিল্প গড়ে উঠতে পারে না। ২০০৪ সালে সাবেক বিরোধী কমান্ডার আখমাদ সাফারভকে মাদক ব্যবসার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছিল, এবংপুলিশ অভিযানের পর তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। ২০০৮ সালে গুরুত্বপূর্ণ পপুলার ফ্রন্ট কমান্ডারদের আত্মীয় নুরমহমাদ সাফারভ এবং সুহরব লাগারিভকেদক্ষিণের শহর কুলোবেতে একটি বড় মাদকবিরোধী অভিযানের পর গ্রেফতার করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও এখানে দোষমুক্ত নয়। তাজিকিস্তানে পাচারের সিংহভাগ দেশটির কয়েকটি ভাল রাস্তা এবং সেতু দিয়ে যায় বলে মনে করা হয়, যার মধ্যে একটি ২০০৯ সালেমার্কিন কেন্দ্রীয় কমান্ডের তহবিলের ৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারদিয়ে নির্মিত হয়েছিল।
মাদক–বিরোধী ব্যবস্থাগুলি এড়িয়ে যাওয়ার জন্য রাশিয়া, কাজাখস্তান ও বেলারুশের মধ্যে ইউরেশিয়ান ইকনমিক ইউনিয়ন চুক্তিটির অপব্যবহার হতে পারে; তাই সদস্য রাষ্ট্রগুলিকে অবশ্যই এমন ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে যা পণ্যের প্রবাহকে বাধা না–দিয়েও নিরাপত্তা জোরদার করে।
২০২২ সালের জানুয়ারিতে কাজাখস্তানে অস্থিরতারকারণে সমগ্র অঞ্চল জুড়ে ভিন্নমত দমন করা হয়েছে। ২০১২ সালে এই অঞ্চলের জন্য ইউ এন ও ডি সি–র ঝুঁকি মূল্যায়ন নথি দাবি করেছিল যে একই পরিস্থিতিতে এক দশক আগে মাদক পাচার প্রতিরোধে ব্যবহার করা যেতে পারত এমন সংস্থানগুলি জনগণকে দমন করার জন্য সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। মধ্য এশিয়ায় মাদক পাচারের বিপদের পূর্ণাঙ্গ সংকটে পরিণত হওয়া ঠেকাতে ইউ এন ও ডি সি যথেষ্ট সময় ও সংস্থান ব্যয় করেছে সেন্ট্রাল এশিয়ান রিজিওনাল ইনফরমেশন অ্যান্ড কোঅর্ডিনেশন সেন্টার ফর কমব্যাটিং ইললিসিট ট্রাফিকিং অফ নারকোটিক ড্রাগস, সাইকোট্রপিক সাবস্ট্যান্সেস অ্যান্ড দেয়ার প্রিকারসরস (সি এ আর আই সি সি)–এর মতো বিভিন্ন চুক্তি এবং উদ্যোগের উন্নয়নে। তা সত্ত্বেও মনে হচ্ছে আগামী দিনে এই অঞ্চলে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আরও মনোযোগ এবং সমর্থনের প্রয়োজন হবে। যাতে কার্যকরভাবে এই বিপদটি আরও বেড়ে যাওয়ার আগে তার মোকাবিলা করা যায়, সেজন্য মধ্য এশিয়ার দেশগুলি ও রাশিয়ার উচিত নতুন আঞ্চলিক ও জাতীয় মাদক নীতিগুলির পুনর্বিবেচনা শুরু করা ৷ মাদক–বিরোধী ব্যবস্থাগুলি এড়িয়ে যাওয়ার জন্য রাশিয়া, কাজাখস্তান ও বেলারুশের মধ্যে ইউরেশিয়ান ইকনমিক ইউনিয়ন চুক্তিটির অপব্যবহার হতে পারে; তাই সদস্য রাষ্ট্রগুলিকে অবশ্যই এমন ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে যা পণ্যের প্রবাহকে বাধা না–দিয়েও নিরাপত্তা জোরদার করে। দেশগুলিকে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে নিষেধাজ্ঞামূলক ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়। মাদক পাচারের পাশাপাশি মাদকের ব্যবহার প্রতিরোধে তাদের অবশ্যই জাতীয় দক্ষতা গড়ে তুলতে হবে। তাদের মাদকাসক্তদের পুনর্বাসনের জন্য আরও ভাল কর্মসূচিতে বিনিয়োগ করা উচিত। তাছাড়া ইতিমধ্যে এইঅঞ্চলে যা বিপজ্জনক এইচ আই ভি মহামা্রি ডেকে এনেছে. সেই সিরিঞ্জের সূচের পুনর্ব্যবহার রোধ করতে পাইলট প্রোগ্রাম চালু করে প্রয়াসী হওয়া উচিত। মাদক পাচারের জন্য সীমান্তগুলি কঠোরভাবে পরীক্ষা করা উচিত, এবং অপরাধী গোষ্ঠী ও সেলগুলিকে পা রাখার জায়গা দেওয়া উচিত নয়, বিশেষ করে দূরবর্তী সীমান্ত অঞ্চলে। অনেক ইউরোপীয় দেশ এই অঞ্চলে সক্ষমতা বৃদ্ধিতে জড়িত, তবে এই সম্ভাবনাও প্রবল যে এই অঞ্চলের রাশিয়ার সঙ্গে নৈকট্য ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে জার্মানির মতো দেশগুলি ‘সেন্ট্রাল এশিয়া ড্রাগ অ্যাকশন প্রোগ্রাম’ (ক্যাড্যাপ ৬)-এর মতো কর্মসূচিগুলি থেকে অর্থ সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে, এবং সেই অর্থ বিনিয়োগের জন্য অন্য কোনও অঞ্চলকে বেছে নিতে পারে।
কাজাখস্তানে ড্রাগ বাজেয়াপ্ত করার খতিয়ান
রাশিয়া
ইতিমধ্যেই এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ইউক্রেন সংকটের কারণে আরও প্রভাবিত হয়েছে। এই সংকট বৃহৎ ব্যাঙ্ক, অলিগার্ক এবং পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের বিরুদ্ধে প্রচুর পশ্চিমী নিষেধাজ্ঞা জারির পথ তৈরি করেছে। এর অর্থ হল প্রযুক্তি, ফ্যাশন, অর্থ এবং এমনকি শিপিংয়ের মতো বিভিন্ন শিল্পের বিপুল সংখ্যক পশ্চিমী সংস্থা এই নিষেধাজ্ঞাগুলিকে কার্যকর করার জন্য পদক্ষেপ করেছে, এবং হয় রাশিয়া জুড়েবড় কাজকর্মগুলি বন্ধ করে দিয়েছে বা থামিয়ে দিচ্ছে। এর ফলে হাজার হাজার কর্মসংস্থান হারানো ছাড়াও রাশিয়া বিশ্বের জলদস্যুতার রাজধানী হিসাবে ফিরে আসতে পারে, এবং রাশিয়ায় পশ্চিমী পণ্যের কালোবাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য বৃহৎ পরিসরে সংগঠিত অপরাধের প্রত্যাবর্তন ঘটাতে পারে। সামরিক খাতে অত্যধিক সরকারি ব্যয়ের ফলে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি থেকে তহবিল সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, যেমন মাদক পাচার প্রতিরোধ। মাদক নীতির দৃষ্টিকোণ থেকে এই ধরনের অর্থনৈতিক পতনের মানবিক মূল্য অধ্যয়নের ভিত্তিতে এটি অনুমান করা যেতে পারে যে পরিস্থিতির অবনতি অব্যাহত থাকলে কিছু ব্যক্তি নিজেদের আর্থিকভাবে সমর্থন করার জন্য অপরাধের জীবন বেছে নিতে পারে, এবং অন্যরা বেদনাদায়ক বাস্তবতা থেকে পালানোর জন্য মাদকসেবী হয়ে উঠতে পারে। রাশিয়া ঐতিহাসিকভাবে অ্যালকোহল অপব্যবহারের সর্বোচ্চ হারের শিকার, এবং তা হেরোইন মহামা্রির সঙ্গে যুক্ত হলে সামাজিক বিপর্যয় তৈরি হতে পারে। অতিমারিটি ইতিমধ্যে রাশিয়ায় নথিভুক্ত মৃত্যুর ব্যাপক বৃদ্ধির দিকে চালিত করেছে ড্রাগ সংক্রান্ত কারণে। রুশ সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালে রাশিয়ায় প্রতি বছর ৪,৪০০ থেকে ৪,৮০০ মানুষ মাদকের কারণে মারা গেছেন; কিন্তু ২০২০ সালে ৭,৩১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে মাদকের অতিরিক্ত মাত্রার কারণে। অতিমারির সময়ে মানসিক ও অর্থনৈতিক কষ্টের ফলে মাদকের কারণে নথিভুক্ত মৃত্যু প্রায় ৬০ শতাংশ বেড়েছে। পুরো জাতির স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রুশ সরকারকে অবশ্যই এই বিষয়টিকে অগ্রাধিকার হিসাবে বিবেচনা করতে হবে।
এর ফলে হাজার হাজার কর্মসংস্থান হারানো ছাড়াও রাশিয়া বিশ্বের জলদস্যুতার রাজধানী হিসাবে ফিরে আসতে পারে, এবং রাশিয়ায় পশ্চিমী পণ্যের কালোবাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য বৃহৎ পরিসরে সংগঠিত অপরাধের প্রত্যাবর্তন ঘটাতে পারে।
উপসংহার
ইউ এন ও ডি সি বলছে গত চার বছরের মধ্যে তিনটি বছর আফগানিস্তানে সর্বোচ্চ মাত্রার আফিম উৎপাদন হয়েছে। কোভিড–১৯ অতিমারি ছড়িয়ে পড়ার পরেও২০২০ সালে পপি চাষ ৩৭ শতাংশ বেড়েছে। ইউ এন ও ডি সি–র স্পষ্ট বার্তা সত্ত্বেও ইউরোপ ও এশিয়া জুড়ে মাদক পাচারের কেন্দ্র হিসাবে এর গুরুত্ব বিবেচনা করে মধ্য এশিয়ায় মাদক পাচার প্রতিরোধের পরিকাঠামোতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যথেষ্ট পরিমাণে বিনিয়োগ করেনি। এই বিষয়টি অনুধাবন করে মধ্য এশিয়ার মধ্যে দিয়ে অবৈধ মাদক পাচার প্রতিরোধে সরকারগুলিকে নতুন করে মনোনিবেশ করতে হবে।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.