Author : B. Rahul Kamath

Expert Speak Raisina Debates
Published on Mar 01, 2022 Updated 12 Hours ago

মতানৈক্যে জর্জরিত ইউরোপ কী ভাবে তাদেরই প্রতিবেশে রাশিয়া-ইউক্রেন সঙ্কট থেকে উদ্ভূত বিপদের মোকাবিলা করবে?

রাশিয়াকে কেন্দ্র করে ইউরোপে ক্রমবর্ধমান বিভাজন
রাশিয়াকে কেন্দ্র করে ইউরোপে ক্রমবর্ধমান বিভাজন

ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রেক্ষিতে ইউরোপ এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অন্দরে বিভাজন নজিরবিহীন। তথাপি, রবিবারের ই ইউ-এর মিটিং ব্লকের ইতিহাসে এক অভাবনীয় ঘটনা। ই ইউ-এর চুক্তি অনুযায়ী তার সাধারণ বাজেট কে সামরিক বা প্রতিরক্ষা জনিত ক্রিয়াকলাপের জন্য ব্যবহার করা যায় না। কিন্তু রবিবার ইইউ একটি অফ-বাজেট “ইউরোপিয়ান পিস ফ্যাসিলিটি” অর্থায়নের ঘোষণা করেছে যার সর্বোচ্চ € 5 বিলিয়ন ইউক্রেনেকে সামরিক সহায়তা প্রদানের জন্য ব্যবহার করা হবে। রবিবারের মিটিং এ ই ইউ ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে  — প্রাণঘাতী অস্ত্র, প্রাণঘাতী সহায়তা বাবত €450 মিলিয়ন সাপোর্ট প্যাকেজ  এবং অ-প্রাণঘাতী সরবরাহের জন্য আরও €50 মিলিয়ন (যেমন] জ্বালানি এবং প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জাম) সামরিক সহায়তা প্রদানে সম্মত হয়েছে।

তবে একথা ঠিকই যে বিদ্যমান সংঘাতে ইউরোপ দীর্ঘ সময় ধরে দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে এবং তার প্রধান কারণগুলি হল অনৈক্য, অক্ষমতা এবং ইউরোপের নিরাপত্তার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর ঐতিহাসিক নির্ভরতা। রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত ইউরোপের জন্য এমন এক সন্ধিক্ষণে চরম আকার ধারণ করেছে যখন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী অভ্যন্তরীণ কেলেংকারিতে জর্জরিত, ফ্রান্স আগামী এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত, জার্মানির নব নির্বাচিত জোট সরকার রাশিয়ার বিরুদ্ধে ঐকমত্য গড়ে তুলতে পারেনি এবং ইউরো-জোন জ্বালানির উচ্চ মূল্যের জন্য মুদ্রাস্ফীতির বর্ধিত হারের সম্মুখীন। পাশাপাশি ইউরোপ গত কয়েক মাস ধরে জ্বালানি সঙ্কটের সঙ্গে যুঝছে এবং এর ফলে জ্বালানির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ক্রমাগত। ইউরোপের এই বিতর্কিত পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা এবং কূটনৈতিক প্রচেষ্টার সব দায় দ্ব্যর্থহীন ভাবে ওয়াশিংটনের উপর বর্তায়। ট্রান্স-আটলান্টিক সম্পর্ক প্রধানত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের ফলেই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জটিল এবং অপ্রতিসম হয়ে উঠেছে।

সমন্বিত ভাবে সামরিক নিরাপত্তা খাতে খরচের পরিমাণ ২০১৭ সালের ৫৫০ কোটি ইউরো থেকে ২০২০ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ৪১০ কোটি ইউরোতে। ফলে নিজেদের অস্ত্র কেনার বাজেটের ৩৫% অন্য সদস্য দেশগুলির সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার ২০১৭ সালের প্রতিশ্রুতি পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে ই ইউ-এর সদস্য দেশগুলি।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ২০১৭ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই একটি সম্মিলিত ইউরোপীয় সেনা বাহিনী গড়ে তোলার এবং ইউরোপের দেশগুলির সামরিক খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য ক্রমাগত আবেদন জানিয়েছেন। যদিও তাঁর আবেদনে সংশ্লিষ্ট দেশগুলি বিশেষ কর্ণপাত করেনি এবং সদস্য দেশগুলির অধিকাংশই ইউরোপীয় সেনা গড়ে তোলার পরিবর্তে নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে ওয়াশিংটনের উপরেই নির্ভর করা শ্রেয় বলে মনে করেছে। এ ছাড়াও সমন্বিত ভাবে সামরিক নিরাপত্তা খাতে খরচের পরিমাণ ২০১৭ সালের ৫৫০ কোটি ইউরো থেকে ২০২০ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ৪১০ কোটি ইউরোতে। ফলে নিজেদের অস্ত্র কেনার বাজেটের ৩৫% অন্য সদস্য দেশগুলির সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার ২০১৭ সালের প্রতিশ্রুতি পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে ই ইউ-এর সদস্য দেশগুলি। একই রকম ভাবে ইউরোপের সামরিক খাতে খরচের পরিমাণ ২০০৮ সালের ৩০৩০০ কোটি মার্কিন ডলার থেকে ২০২০ সালে ২৯২০০ কোটি মার্কিন ডলারে নেমে এসেছে। সামরিক গবেষণা এবং প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগের ঘাটতি নিয়ে ই ইউ সদস্য দেশগুলিকে ইউরোপিয়ান ডিফেন্স এজেন্সি (ই ডি এ) সাবধান করলেও পার্মানেন্ট স্ট্রাকচারড কো-অপারেশন (পেসকো), ইউরোপিয়ান ডিফেন্স অ্যাকশন প্ল্যান এবং ই ইউ-এর সামরিক দক্ষতার গবেষণা ও প্রযুক্তি খাতে অর্থ বিনিয়োগের জন্য নতুন প্রতিরক্ষা পুঁজি গড়ে তোলার মতো উচ্চাকাঙ্ক্ষী উদ্যোগগুলির বিশেষ অগ্রগতি হয়নি। ই ইউ এবং ব্রিটেনের মধ্যে অনৈক্য রাশিয়ার বিরুদ্ধে একটি সংঘবদ্ধ ইউরোপীয় প্রত্যুত্তরের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে এবং বিগত বছরগুলিতে এই ক্রমবর্ধমান মতপার্থক্যের মধ্যে সেতু বন্ধনের কাজে ব্রাসেলসের ব্যর্থতা— ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসী পদক্ষেপের প্রেক্ষিতে— এই বিভাজনকে স্পষ্ট করে তুলেছে।

চিত্র ১: ২০১৯ সালে ই ইউ সদস্য দেশগুলির প্রতিরক্ষা খাতে মোট সরকারি বিনিয়োগ— জি ডি পি-র শতাংশ

সূত্র: ইউরোস্ট্যাট

২০২১ সালে তালিবানরা আফগানিস্তানের দখল নেওয়ার পর থেকে ইউরোপীয় নীতি নির্ধারকেরা ওয়াশিংটনের উপরে নির্ভরতা কমাতে ইউরোপীয় কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনে বিনিয়োগের পক্ষে সক্রিয় হয়েছেন এবং স্বায়ত্তশাসনের সিদ্ধান্ত নিজেরাই নেওয়ার জন্য ব্রাসেলসের অভ্যন্তরে ঐকমত্য গড়ে তোলার জন্য আবেদন জানিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ দ্বারা ইউরোপীয় সার্বভৌমত্বের ধারণাটিকে জনপ্রিয় করে তোলার আকাঙ্ক্ষা— যা ফ্রান্সের ই ইউ প্রেসিডেন্সির আওতায় প্রধান পরিকল্পনাগুলির একটি বলে বিবেচিত— এখনও জায়মান অবস্থায় রয়েছে। এই ধারণার বাস্তবায়নের জন্য অধিকাংশ সদস্য দেশগুলি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন। ব্রেক্সিটের পরে ফ্রান্স এবং জার্মানি ই ইউ-এর প্রশাসন এবং নীতি নির্ধারণের দু’টি প্রতীকী মুখ হয়ে উঠেছে। ফলে প্যারিস এবং বার্লিন উভয়কেই অন্যান্য সদস্য দেশের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে রাশিয়ার উদ্দেশ্যে এক ঐক্যবদ্ধ প্রত্যুত্তর দেওয়ার প্রবল চাপের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। যদিও এই বাধাকে অতিক্রম করতে পারা একটি পর্বতপ্রমাণ চ্যালেঞ্জের সমান। কারণ ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে রাশিয়ার প্রতি মনোভাব আলাদা আলাদা এবং তা ক্রেমলিন সংক্রান্ত পশ্চিমি প্রচার দ্বারা প্রভাবিত নয়। তাঁর সাম্প্রতিকতম ক্রেমলিন সফরে ম্যাক্রোঁ যুদ্ধ এড়িয়ে যাওয়া এবং ইউরোপ ও রাশিয়ার মধ্যে মতপার্থক্যের অবসান ঘটাতে কূটনৈতিক দৌত্য এবং ভরসা বৃদ্ধির পথ অবলম্বনের ইচ্ছা পুনর্ব্যক্ত করেন। এই সাক্ষাতের জন্য ক্রেমলিনের আধিকারিকরা একটি ছ’মিটার দীর্ঘ টেবিলের বন্দোবস্ত করেন যার দুই বিপরীত প্রান্তে পুতিন ও ম্যাক্রোঁ বসেছিলেন। এই আয়োজনকে রাশিয়া এবং ইউরোপের সম্পর্কের বিচ্ছিন্নতা এবং আশঙ্কার রূপক বলে মনে করা যেতে পারে। জার্মানির নতুন চ্যান্সেলর ওলাফ স্কলজ সম্প্রতি মস্কো সফরে যান এবং পুতিনের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনা চালানোর শেষ চেষ্টা করে দেখেন। মস্কো সফরের পূর্বে স্কলজ ওয়াশিংটন সফরে যান যেখানে একাধিক বিষয় আলোচিত হয়। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল কিয়েভকে অস্ত্র সরবরাহ করতে জার্মানির আপত্তি, পূর্ব ইউরোপে জার্মান সেনার উপস্থিতি বৃদ্ধিতে দ্বিধা এবং নর্ড স্ট্রিম টু পাইপলাইনের ভবিষ্যৎ। রাশিয়া থেকে জার্মানিতে বাল্টিক সাগরের মধ্য দিয়ে গ্যাস সরবরাহকারী এই পাইপলাইনটি প্রথম দিন থেকেই ওয়াশিংটনের কাছে একটি আপত্তিজনক প্রকল্প হয়ে উঠেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শুরু থেকেই এই পাইপলাইনের কার্যকারিতা সম্পর্কে তার অবস্থান স্পষ্ট করে থাকলেও রাশিয়া-ইউক্রেন সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে ওয়াশিংটন জানিয়েছে যে, তারা এই প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দেবে।

ব্রেক্সিটের পরে ফ্রান্স এবং জার্মানি ই ইউ-এর প্রশাসন এবং নীতি নির্ধারণের দু’টি প্রতীকী মুখ হয়ে উঠেছে। ফলে প্যারিস এবং বার্লিন উভয়কেই অন্যান্য সদস্য দেশের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে রাশিয়ার উদ্দেশ্যে এক ঐক্যবদ্ধ প্রত্যুত্তর দেওয়ার প্রবল চাপের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

ন্যাটোর সদস্য দেশগুলির প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা মিলিত হয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে তাঁদের কূটনৈতিক কৌশলকে সুদৃঢ় করার চেষ্টা চালিয়েছেন। কারণ ঠান্ডা লড়াইয়ের পরবর্তী সময় থেকেই রাশিয়া ইউরোপের নিরাপত্তার জন্য একটি প্রধান উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। পূর্ব ইউরোপের দেশগুলিতে অশান্তির আশঙ্কা করেই পোল্যান্ড এবং বাল্টিক দেশগুলিতে সম্ভাব্য যে কোনও ধরনের রুশ আগ্রাসন রুখতে ন্যাটো সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়াও যে হেতু ফ্রান্স রোমানিয়ায় যুদ্ধবাহিনীকে নেতৃত্ব দিতে রাজি হয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপে ন্যাটো চারটি নতুন সমর-প্রস্তুত বাহিনী বহাল করছে। ইউক্রেন আক্রমণ করায় ইউরোপ এবং পশ্চিমি দেশগুলির তরফে রাশিয়ার উপরে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারির হুমকি দেওয়ার ফলে সমগ্র ইউরোপ এক ভয়ঙ্কর শক্তি সুরক্ষা প্রহেলিকার সম্মুখীন। ই ইউ তার মোট গ্যাস ও পেট্রোলিয়াম তেলের যথাক্রমে ৩৯% এবং ৩০% রাশিয়া থেকে আমদানি করে। সি ই ই দেশগুলি গ্যাসের জন্য রাশিয়ার জন্য ১০০% নির্ভরশীল। ই ইউ রুশ আমদানির বিকল্প হিসেবে কাতার এবং জাপানকে এল এন জি রফতানি করতে অনুরোধ জানিয়েছে। এটি যদিও দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার একটি সাময়িক সমাধান মাত্র। বর্তমানে ই ইউ নরওয়ের দিকে তাকিয়ে তার হাইড্রোকার্বন আমদানির  উৎসগুলির বৈচিত্র্যকরণে আগ্রহী হয়েছে এবং দক্ষিণ ইউরোপ ট্রান্স-আনাতোলিয়ান ন্যাচরাল গ্যাস পাইপলাইন (টি এ এন এ পি) এবং ট্রান্স অ্যাড্রিয়াটিক পাইপলাইনের মাধ্যমে তার আমদানির পরিমাণ বৃদ্ধি করতে পারে। ই ইউ পারমাণবিক শক্তিকেও তার শক্তি পরিকাঠামোর অন্তর্ভুক্ত করতে চাইছে। কিন্তু ফেজ আউটের ফলে পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলিতে পারমাণবিক শক্তির লভ্যতা ক্রমহ্রাসমান এবং অন্যান্য দেশও পারমাণবিক শক্তির অন্তর্ভুক্তি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে। ফলে ই ইউ বর্তমানে জ্বালানি আমদানির জন্য আফ্রিকার দিকে তাকিয়ে রয়েছে এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি নিয়ে যৌথ ই ইউ – এ ইউ গবেষণার কাজে বিনিয়োগেও তারা আগ্রহী। এই কারণেই ই ইউ তার হাইড্রোজেন আমদানির প্রেক্ষিতে আফ্রিকার ভূমিকাকে শক্তিশালী করে তুলতে চায়।

চিত্র ২: রাশিয়া থেকে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহের পরিমাণ (২০২০), দেশভিত্তিক বিশ্লেষণ

সূত্র: শক্তি নিয়ন্ত্রকগুলির আন্তঃসমন্বয়ের জন্য ইউরোস্ট্যাট এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এজেন্সি থেকে প্রাপ্ত তথ্য: লেখচিত্র সৌজন্যে প্রতিবেদক

ইউরোপের বর্তমান পরিস্থিতি জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির উপর প্রভাব বিস্তারকারী আঞ্চলিক নিরাপত্তা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এটি শুধু মাত্র কার্বন নিরপেক্ষতা উচ্চাকাঙ্ক্ষার জন্যই ক্ষতিকর নয়, মহাদেশব্যাপী জীবিকা বা কর্মসংস্থানের উপরেও স্বল্পমেয়াদি ভাবে এই ধ্বংসাত্মক প্রভাব বর্তমান। একটি যুদ্ধের পটভূমিতে ইউরোপের নিরাপত্তা সঙ্কট চরমে পৌঁছেছে যেমনটা ঠান্ডা লড়াই পরবর্তী সময়ে আর কখনও ঘটেনি। অধিকাংশ ইউরোপীয়ই ইউক্রেনের ঘটনাটিকে এমন একটি ইউরোপীয় সঙ্কট বলে মনে করছেন যার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে ইউরোপীয় প্রশাসনের উপরে। রাশিয়ার আক্রমণের ঘটনায় পোল্যান্ডও যারপরনাই চিন্তিত। কারণ এই দুই দেশের মধ্যে একটি সাধারণ সীমান্ত বর্তমান এবং যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ইউক্রেন থেকে পোল্যান্ডে উদ্বাস্তু স্রোত শুরু হয়েছে। সাম্প্রতিক মাসগুলিতে আইনের শাসনের প্রাধান্য এবং গণতান্ত্রিক কার্যকারিতার পথে বাধাদানকারী অন্যান্য বিষয় নিয়ে পোল্যান্ড এবং ব্রাসেলসের মধ্যে তীব্র মতানৈক্যের সৃষ্টি হয়েছে। সর্বোপরি, পোল্যান্ড ও বেলারুশ সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশের সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার পরে উদ্বাস্তু সঙ্কট পোল্যান্ড এবং ই ইউ উভয়ের জন্যই একটি প্রধান উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাশিয়া জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দিলে অঞ্চলটিতে যে অর্থনৈতিক দুর্দশার সৃষ্টি হবে তার ভয়ে বাল্টিক দেশগুলি চুপ করে থাকাই শ্রেয় বলে মনে করেছে। ফ্রান্সও আগামী এপ্রিল মাসে হতে চলা প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনের প্রেক্ষিতে সাইবার আক্রমণ এবং নির্বাচনী পদ্ধতিতে ক্রেমলিনের হস্তক্ষেপ করা নিয়েও উদ্বিগ্ন।

অধিকাংশ ইউরোপীয়ই ইউক্রেনের ঘটনাটিকে এমন একটি ইউরোপীয় সঙ্কট বলে মনে করছেন যার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে ইউরোপীয় প্রশাসনের উপরে।

ইউরোপিয়ান কমিশন ইউক্রেনের জন্য ১২০ কোটি ইউরোর একটি নতুন আপৎকালীন ম্যাক্রো ফিন্যান্সিয়াল অ্যাসিস্ট্যান্স (এম এফ এ) কর্মসূচির প্রস্তাব দিয়েছে যার মধ্যে ৬০ কোটি ইউরো ইউক্রেনের ম্যাক্রো ইকোনমিক সাসটেনেবিলিটি বজায় রাখার কাজে অবিলম্বে প্রেরিত হবে। যদিও এই আর্থিক প্যাকেজটি এখনও পর্যন্ত প্রতিটি সদস্য দেশ দ্বারা স্বীকৃত হয়নি। কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন দের লেয়েন তাঁর বক্তব্যে ইউক্রেনের প্রতি ব্রাসেলসের প্রতিশ্রুতি পুনর্নিশ্চিত করেছেন এবং ক্রেমলিনের হুমকির সামনে মাথা নত করেননি। মাত্র সাত মাস সময়ের মধ্যে ব্রাসেলস আফগানিস্তান সঙ্কট, প্রাকৃতিক গ্যাস সঙ্কট, পোল্যান্ড-বেলারুশ সীমান্তে উদ্বাস্তুদের প্রবাহ এবং ইউক্রেনে রুশ হামলার মতো একাধিক ভূ-রাজনৈতিক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে। পূর্বোল্লিখিত প্রতিবন্ধকতাগুলি বর্তমানে ব্রাসেলসকে ইউরোপীয় কৌশলগত সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার বিষয়টি গভীর ভাবে খতিয়ে দেখতে বাধ্য করছে যা জোটবদ্ধ দেশগুলিকে চরম বিপদের সময়ে ভূ-রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সামনের সারিতে থাকতে সাহায্য করবে। ভবিষ্যতের সমাধানসূত্র খোঁজার কাজে ব্রাসেলসে হয়তো গেসটাল্ড মনস্তত্ত্বের পথে হাঁটবে যেটির প্রবাদ বাক্যে বলা হয়েছে যে, ‘কোনও কিছুর পূর্ণ মান তার অংশগুলির যোগফলের চেয়ে বেশি।’ একই রকম ভাবে একটি একত্রিত, সমন্বিত এবং সুসংহত ই ইউ বহিরাগত হামলার বিরুদ্ধে সর্বোত্তম ফলাফল অর্জনে সক্ষম হবে। বিভাজনে জর্জরিত ই ইউ শুধু মাত্র ইউরোপের জন্যই উদ্বেগজনক, তা নয়। এটির ভূ-রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়াও হবে তাৎপর্যপূর্ণ।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.