গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, গ্লোবাল ভ্যালু চেনে মহিলাদের ব্যাপক মাত্রায় অংশগ্রহণ বিশ্বের জন্য অর্থনৈতিক ভাবে উপকারী হতে পারে।
গ্লোবাল ভ্যালু চেনের লিঙ্গমাত্রা
সূচনা
গত তিন বছরে কোভিড-১৯ অতিমারি এবং ইউক্রেন সঙ্কটের মতো দু’টি বৈশ্বিক ঘটনা অর্থনীতি এবং আন্তর্জাতিক বাজারকে প্রায় ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে। ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া রুখতে গৃহীত প্রাথমিক পদক্ষেপগুলির পাশাপাশি রুশ তেল ও গ্যাসের উপরে জারি করা সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞা একজোটে সরবরাহ শৃঙ্খলকে প্রভাবিত করেছে এবং শ্রম বাজারকে দুর্বল করে তুলেছে। এর প্রথম প্রভাবটি পরিলক্ষিত হয় প্রধানত মহিলাদের দ্বারা অধিকৃত নিম্ন মজুরির অস্থিতিশীল কাজগুলির ক্ষেত্রে। বৈশ্বিক মূল্য-শৃংখল বা গ্লোবাল ভ্যালু চেন (জি ভি সি) রফতানি এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করলেও ক্ষেত্রটিতে প্রবেশাধিকার ও অংশগ্রহণের সুবিধাগুলি পুরুষ ও নারীদের জন্য সমান নয়। নারীদের প্রধানত সেই সব সাধারণ কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়, যেগুলি সঙ্কটের সময়ে সর্ব প্রথম প্রভাবিত হয়। এই বাস্তবতা জি ভি সি-গুলির লিঙ্গভিত্তিক কাঠামোকেই তুলে ধরে। তাই অতিমারি এবং ইউক্রেন সঙ্কট থেকে পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার একটি অংশ হিসেবে জি ভি সি-তে মহিলাদের অংশগ্রহণ করার বিষয়টি অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। এই প্রতিবেদনে উপরোক্ত বিষয়টি সম্পর্কে দু’টি প্রেক্ষিতে আলোচনা করা হয়েছে। প্রথমটির লক্ষ্য হল সরবরাহ শৃঙ্খলগুলিতে মহিলাদের কাজ না পাওয়ার বর্তমান প্রভাবকে দর্শানো এবং দ্বিতীয়টি হল বৃহত্তর উন্নয়নের নিরিখে মহিলাদের কর্মী হিসেবে অন্তর্ভুক্তিকরণের অর্থনৈতিক সুবিধাগুলি তুলে ধরা।
লিঙ্গভিত্তিক কাঠামো রূপে জি ভি সি-র ধারণা
চিত্র ১:জাতীয় মাথাপিছু আয়ের নিরিখে মহিলা শ্রমিকদের অংশগ্রহণের হার, ২০১৯
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রায় ৫০ শতাংশ জি ভি সি-র আওতায় পড়ে। তবুও এটিতে মহিলাদের অনুপাত পুরুষদের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। উপরোক্ত তালিকা থেকে জানা যাচ্ছে যে, শ্রমশক্তিতে মহিলাদের যোগদানের পরিমাণ কিছু খুব ধনী ও কিছু খুব দরিদ্র দেশে সর্বাধিক এবং মধ্য-আয়ের দেশগুলিতে সর্বনিম্ন। এর দু’টি কারণ হতে পারে: প্রথমত,ট্রেড ইন ভ্যালু অ্যাডেড (টিভা) ডেটাবেসঅনুসারে, মধ্য-আয়ের দেশগুলিতে মহিলাদের অংশগ্রহণের জন্য মাত্র দু’টি প্রতিযোগী ক্ষেত্র বর্তমান এবং সেগুলি হল বস্ত্র ও কৃষি শিল্প। উভয় ক্ষেত্রই অদক্ষ এবং স্বল্প মজুরির কাজের সুযোগ প্রদান করে। দ্বিতীয়ত, সামাজিক কলঙ্ক, গার্হস্থ্য বাধ্যবাধকতা এবং সম্পদ ব্যবহারের অধিকার ও নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বৈষম্য মহিলাদের জন্য আরও সুরক্ষিত জীবিকা অর্জনের পথকে কঠিনতর করে তুলেছে। আর্থ-সামাজিক বৈষম্যের সঙ্গে সঙ্গে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য মহিলাদের অসুবিধাগুলিকে আরও তীব্র করে তুলেছে, যার ফলে জি ভি সি-তে লিঙ্গভিত্তিক বাধার সৃষ্টি হচ্ছে।
ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া রুখতে গৃহীত প্রাথমিক পদক্ষেপগুলির পাশাপাশি রুশ তেল ও গ্যাসের উপরে জারি করা সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞা একজোটে সরবরাহ শৃঙ্খলকে প্রভাবিত করেছে এবং শ্রম বাজারকে দুর্বল করেছে।
অতিমারি এবং ইউক্রেন সঙ্কট থেকে পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার একটি অংশ হিসেবে জি ভি সি-তে মহিলাদের অংশগ্রহণ করার বিষয়টি অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
মহিলারা বৈশ্বিক কৃষি শ্রমশক্তির ৪৩ শতাংশ জুড়ে রয়েছেন। যদি তাঁরা পুরুষদের সমান উৎপাদন সুবিধা ব্যবহার করার অধিকার পান, তা হলে ৩৪টি উন্নয়নশীল দেশে কৃষিজ উৎপাদন আনুমানিক ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। এমনটা হলেঅপুষ্টিতে ভোগা মানুষের সংখ্যা বর্তমানের তুলনায় ১৭ শতাংশ হ্রাস পাবে এবং ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা ১৫০ মিলিয়ন কমে যাবে।অর্থাৎ মহিলাদের বর্ধিত অংশগ্রহণ একটি হিতকর জীবিকার সুযোগ-উৎপাদনশীলতা চক্রের সূচনা করতে পারে, যেটি দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা ও ব্যক্তিগত দারিদ্র্যের উন্নতি ঘটাতে সক্ষম। বিশ্ব ব্যাঙ্ক লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের উদাহরণ দর্শিয়ে এ কথাই প্রমাণ করে দিয়েছে, যেখানেদশ বছরের মধ্যে মহিলা শ্রমিকদের বাজারজাত আয় তীব্র দারিদ্রের৩০ শতাংশ হ্রাস করতে সফল হয়েছে। তাই যে সকল সমাজে সাম্যের মাত্রা অধিক, সেগুলি শুধু মাত্র আরও ভাল আর্থ-সামাজিক সুযোগই প্রদান করে না, সেগুলির বৃদ্ধিও ঘটে দ্রুততর গতিতে।
সামাজিক কলঙ্ক, গার্হস্থ্য বাধ্যবাধকতা এবং সম্পদ ব্যবহারের অধিকার ও নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বৈষম্য মহিলাদের জন্য আরও সুরক্ষিত জীবিকা অর্জনের পথকে কঠিনতর করে তুলেছে।
উপসংহার
পৃথক পৃথক দেশ এবং বৈশ্বিক সম্প্রদায় এক স্থিতিশীল ভবিষ্যতের পথ চেয়ে থাকলেও এ কথা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, অন্তর্ভুক্তি এবং সমতা ‘রিকভার স্ট্রঙ্গার’ উদ্যোগের অপরিহার্য অংশ। পুনরুদ্ধারের অংশ হিসেবে জি ভি সি-গুলির লিঙ্গভিত্তিক কাঠামো ভেঙে দেওয়া মহিলাদের দক্ষতা বৃদ্ধি, জীবিকার নিরাপত্তা এবং উচ্চ মজুরির সুযোগ করে দেবে। অন্য দিকে, পূর্বোল্লিখিত কারণগুলি থেকে এ কথা স্পষ্ট যে, জি ভি সি-তে মহিলাদের অংশগ্রহণ নতুন বাজারের দরজা খুলে দেবে এবং উদ্ভাবনের বৃদ্ধি ঘটাবে যা জি ডি পি বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। অতএব, লিঙ্গভিত্তিক নীতি নির্ধারণ শুধু মাত্র একটি সামাজিক উদ্যোগই নয়, এটি অর্থনৈতিক ভাবে লাভজনকও বটে। এবং এটি বৈশ্বিক অর্থনীতি ও বাণিজ্যের উন্নতি ঘটিয়ে উন্নয়নের এক সদর্থক চক্রের সূচনা করতে পারে।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.