Author : Anushka Saxena

Expert Speak Young Voices
Published on Apr 08, 2022 Updated 7 Days ago

ভারতীয় নৌবাহিনীতে তৃতীয় এয়ারক্রাফ্ট ক্যারিয়ারের অন্তর্ভুক্তি ভারতের ব্লু ওয়াটার নেভি হয়ে ওঠার লক্ষ্য পূরণের পথে একটি পদক্ষেপ।

ভারতের জন্য তৃতীয় এয়ারক্রাফ্ট ক্যারিয়ার নিয়ে প্রযুক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি
ভারতের জন্য তৃতীয় এয়ারক্রাফ্ট ক্যারিয়ার নিয়ে প্রযুক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি

আঞ্চলিক মানবিক সহায়তা ও দুর্যোগ ত্রাণ (এইচএডিআর) থেকে শুরু করে এডেন উপসাগরে জলদস্যু–বিরোধী অভিযানে যুক্ত হওয়া, এমন বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারতের নৌবাহিনীর পারদর্শিতা সুবিদিত। এই পরিপ্রেক্ষিতে এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে সামুদ্রিক বিশেষজ্ঞরা ভারতীয় নৌবাহিনীকে একটি উদীয়মান শক্তিশালী নীল বাহিনী হিসেবে উল্লেখ করছেন। নিঃসন্দেহে ভারতের নীল জলের নৌবাহিনী (‌ব্লু ওয়াটার নেভি, অর্থাৎ যারা দেশের জলসীমা পার হয়ে উন্মুক্ত সমুদ্রে কাজ করে)‌ হয়ে ওঠার লক্ষ্য পূরণের প্রথম ধাপ হবে গুরুত্বপূর্ণ নতুন প্রযুক্তি — যা বিভিন্ন নৌ–অভিযানকে শক্তিশালী করতে এবং কর্মক্ষমতার প্রশ্নে অধিকতর দক্ষ করে তুলতে পারে — তা জোগাড় করা ও বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা। ডেস্ট্রয়ার, ফ্রিগেট, সাবমেরিন ও এয়ারক্রাফ্ট ক্যারিয়ারের (‌এমন যুদ্ধজাহাজ যা যুদ্ধবিমান বা হেলিকপ্টারের মতো বায়ুযান বহন করে)‌ মতো প্রচলিত শক্তির উন্নয়ন, এবং সেই সঙ্গে মনুষ্যবিহীন সামুদ্রিক ব্যবস্থা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) মতো তুলনামূলক ভাবে অভিনব উন্নয়ন, এই উভয় ক্ষেত্রেই এই প্রযুক্তিগুলি অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে।

নিঃসন্দেহে ভারতের নীল জলের নৌবাহিনী হয়ে ওঠার লক্ষ্য পূরণের প্রথম ধাপ হবে গুরুত্বপূর্ণ নতুন প্রযুক্তি — যা বিভিন্ন নৌ–অভিযানকে শক্তসমর্থ করতে এবং কর্মক্ষমতার প্রশ্নে অধিকতর দক্ষ করে তুলতে পারে — তা জোগাড় করা ও বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা।

ভারতীয় নৌবাহিনীতে তৃতীয় এয়ারক্রাফ্ট ক্যারিয়ার বা ‌বিমানবাহী জাহাজ‌ অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে আলোচনার মধ্যেও ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক এয়ার লিফ্ট সিস্টেম (ইএমএএলএস)–এর মতো প্রযুক্তির সংযোজনের উপর বিশেষ ভাবে জোর দেওয়া হচ্ছে, যা মার্কিন প্রতিরক্ষা সংস্থা জেনারেল অ্যাটমিক্স ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক সিস্টেমস ইনকর্পোরেটেড ভারতে পৌঁছে দিয়েছিল ২০১৭ সালে। সেই সঙ্গেই এসেছিল ক্যাটাপল্ট অ্যাসিস্টেড টেক-অফ বাট অ্যারেস্টেড রিকভারি (ক্যাটোবার) সিস্টেম, যা ব্যবহৃত হয় অ্যারেস্টর অয়্যার–এর সাহায্যে উন্নত ধরনের বিমানবাহী জাহাজ থেকে বিমানকে (বিশেষত ভারী-ওজন ফাইটার) উপরে পাঠাতে এবং তাদের ল্যান্ডিং–এ সহায়তা করতে। কোচিন শিপইয়ার্ড লিমিটেড–এ দেশীয় ভাবে তৈরি আইএনএস বিক্রান্ত (এটি দেশীয় এয়ারক্রাফ্ট ক্যারিয়ার বা আইএসি-১ নামেও পরিচিত) জানুয়ারিতে তৃতীয় সমুদ্র পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। এটি স্টোবার (শর্ট টেক-অফ বাই অ্যারেস্টেড রিকভারি) সিস্টেম ব্যবহার করে। এর তিনটি অ্যারেস্টর কেব্‌ল একই সময়ে শুধু একটি বিমানের অবতরণ সুরক্ষিত করতে সক্ষম। এটি তুলনামূলক ভাবে কম ওজনের যুদ্ধবিমানের (যেমন মিগ–২৯কে) জন্য উপযুক্ত, যেমন বিমান আইএসি–‌১–এ রাখা হয়। কিন্তু ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাপী জাহাজ নির্মাতাদের কাছে পাঠানো অনুরোধের চিঠিতে ভারতীয় নৌবাহিনীর দ্বারা নির্ধারিত শিল্পগত প্রয়োজনীয়তার প্রসঙ্গে আইএসি–২-এর ডিসপ্লেসমেন্ট প্রস্তাবিত হয়েছিল ৩০০ মিটার (আইএসি-১-এর ২৬২ মিটারের চেয়ে ৩৮ মিটার দীর্ঘ)। সেই সঙ্গেই এর ওজন ৬৫,০০০ টন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল (আইএসি-১-এর ওজন ৪৫,০০০ টন), এবং প্রস্তাবিত উদ্দিষ্ট গতি ছিল ৩০ নট বা ঘণ্টায় ৫৬ কিমি (আইএসি-১-এর সর্বোচ্চ গতি ২৮ নট বা ৫২ কিমি/ঘণ্টা)। অর্থাৎ আইএসি–২-এর উন্নয়নে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত স্তর এবং বিনিয়োগ স্বাভাবিক ভাবেই দেশীয় সক্ষমতার বর্তমান পর্যায়ের থেকে একাধিক ধাপ উপরে থাকবে।

ভারতের কি তৃতীয় এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার দরকার?

ভারতের এয়ারক্রাফ্ট ক্যারিয়ারগুলি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সামরিক পেশী আস্ফালনের একটি হাতিয়ারের চেয়েও বেশি কিছু, কারণ সেগুলি একদিকে যেমন বিদেশে সামরিক ঘাঁটি তৈরি করার শস্তা বিকল্প হিসেবে কাজ করে, তেমনই সংঘাতের পরিস্থিতিতে এই বিষয়টি নিশ্চিত করে যে যুদ্ধবিমান ও দূরপাল্লার নজরদারি উপলব্ধ থাকবে। এ ভাবে বিমানবাহী জাহাজ সময়মত আঘাত হানার প্রয়োজন পূরণ করে, যা উপকূল-ভিত্তিক নৌসম্পদ করতে পারে না। ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রাক্তন প্রধান অ্যাডমিরাল করমবীর সিংয়ের ভাষায়, ভারতের জন্য ‘‌সমুদ্রে বিমানশক্তি এখনই বিশেষ ভাবে প্রয়োজন’‌। ২০১৫ সালে ভারতীয় নৌবাহিনীর তৈরি করা ভারতীয় সামুদ্রিক নিরাপত্তা ডকট্রিন অনুসারে বিমানবাহী জাহাজের নেতৃত্বে নৌবহরগুলিকে ক্যারিয়ার ব্যাটল গ্রুপ (সিবিজি’‌স) হিসেবে সাজানো হলে তা দেশের বৃহত্তর যুদ্ধ-প্রস্তুতির ও কৌশলগত সামুদ্রিক ডকট্রিনের অংশ হয়ে উঠবে, এবং সেই সঙ্গেই শত্রু বাহিনীর কমান্ড কন্ট্রোল ও পাল্টা আঘাত হানার ক্ষমতাকে এলোমেলো করে দিতে সক্ষম হবে। এই ভাবে এয়ারক্রাফ্ট ক্যারিয়ারকে কেন্দ্র করে সিবিজি’স ভারতীয় নৌবাহিনীর ‘‌সমুদ্র নিয়ন্ত্রণ’‌ ডকট্রিনকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, এবং সমুদ্রে মোবাইল এয়ারফিল্ড তৈরি করতে কম্পোজিট টাস্ক ফোর্স কাজে লাগাতে পারবে।

ভারতীয় ক্যারিয়ারগুলি ব্রহ্মস সুপারসনিক অ্যান্টি-শিপ মিসাইল (২৯২-কিমি রেঞ্জ) দিয়ে সজ্জিত, যা তাদের সমুদ্র–থেকে–ভূমিতে অত্যাধুনিক ও নির্ভুল আক্রমণ চালানোর ক্ষমতাসম্পন্ন করে তুলেছে।

যদিও নেতিবাদীরা যুক্তি দেন যে এয়ারক্রাফ্ট ক্যারিয়ার দীর্ঘ-পাল্লার অ্যান্টি-শিপ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য সহজ লক্ষ্যবস্তু, এই কথা মাথায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে ক্যারিয়ারগুলির নিজস্ব গতিশীলতা, সেই সঙ্গে এসকর্ট জাহাজগুলির (ফ্রিগেট, কর্ভেট, ডেস্ট্রয়ার, এবং এমনকি সরবরাহ জাহাজগুলি) তৈরি করা সুরক্ষা বলয় তাদের খুব নিরাপদ যুদ্ধকালীন বিনিয়োগে পরিণত করে। ভারতীয় ক্যারিয়ারগুলি ব্রহ্মস সুপারসনিক অ্যান্টি-শিপ মিসাইল (২৯২-কিমি রেঞ্জ) দিয়ে সজ্জিত, যা তাদের অত্যাধুনিক সমুদ্র–থেকে–ভূমিতে নির্ভুল আক্রমণ চালানোর ক্ষমতাসম্পন্ন করে তুলেছে। পাশাপাশি শান্তির সময়ে তারা মানবিক সহায়তা ও দুর্যোগের ত্রাণ প্রদানকারী হিসেবে কাজ করে, এবং এই ভাবে সেগুলি উভচর সহ অন্যান্য আকাশ ও সামুদ্রিক উদ্ধারকারী ভূমিকার পরিপূরণ করে। ভূমিকম্প, সুপার টাইফুন ও সুনামির মতো ঘটনাগুলির সময় জাপান, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপিন্সে দুর্যোগ ত্রাণ প্রদানের জন্য ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে মার্কিন নিমিৎজ শ্রেণির এয়ারক্রাফ্ট ক্যারিয়ার ব্যবহার এই ঘটনার প্রমাণ।

পারমাণবিক শক্তি দ্বারা চালিত এবং ডেকের ক্রুদের চাহিদামতো লজিস্টিক্যাল এসকর্ট ভেসেলগুলির সহায়তাপ্রাপ্ত এই এয়ারক্রাফ্ট ক্যারিয়ারগুলি একটি পুনর্নবীকরণযোগ্য, দীর্ঘস্থায়ী ও স্বীয় ক্ষমতায় স্থিতিশীল শক্তির উৎস তৈরি করে, যা তাদের ১০–২০ বছর কার্যকরী রাখে। এগুলি মোট ৫০ বছর আয়ুসম্পন্ন। এগুলি একটি নীল জলের নৌবাহিনী প্রতিষ্ঠার আখ্যানকে সত্যিকার অর্থে বাস্তবে রূপান্তরিত করতে পারে। এই বিষয়টি মাথায় রাখলে একটি অত্যাধুনিক পারমাণবিক এয়ারক্রাফ্ট ক্যারিয়ার (যেমন মার্কিন নিমিৎজ-শ্রেণির এয়ারক্রাফ্ট ক্যারিয়ার) শান্তির সময়ে কোনও পুনঃপূরণ ছাড়াই এবং নতুন করে জ্বালানি না–ভরেই সক্রিয় থাকতে পারে। যুদ্ধের সময় সক্রিয়তার সময়কাল এক থেকে তিন মাসে দাঁড়াতে পারে, যা তেল-চালিত বিমানবাহী জাহাজের জ্বালানি ভরা ও পুনঃপূরণের এক থেকে দুই সপ্তাহের সময়সীমার থেকে উল্লেখযোগ্য ভাবে বেশি। একটি পারমাণবিক শক্তিচালিত এয়ারক্রাফ্ট ক্যারিয়ারকে উপকূলে আসতে হতে পারে শুধু তার ফ্রিজগুলি ভরে নেওয়ার জন্য, কিন্তু জ্বালানি এবং জটিল সারাইয়ের (রিফুয়েলিং অ্যান্ড কমপ্লেক্স ওভারহল বা আরসিওএইচ)‌ দীর্ঘ প্রক্রিয়াগুলির মধ্য দিয়ে সেগুলিকে যেতে হয় না। পরমাণুচালিত এয়ারক্রাফ্ট ক্যারিয়ারগুলির তাদের মধ্য-জীবনে শুধু একবার (কমিশন হওয়ার পর ২৫ বছর বরাবর) আরসিওএইচ প্রয়োজন হয়।

একটি পারমাণবিক শক্তি চালিত এয়ারক্রাফ্ট ক্যারিয়ারকে উপকূলে আসতে হতে পারে শুধু তার ফ্রিজগুলি ভরে নেওয়ার জন্য, তবে জ্বালানি এবং জটিল সারাইয়ের (রিফুয়েলিং অ্যান্ড কমপ্লেক্স ওভারহল বা আরসিওএইচ)‌ দীর্ঘ প্রক্রিয়াগুলির মধ্য দিয়ে সেগুলিকে যেতে হয় না।

তবে একটি এয়ারক্রাফ্ট ক্যারিয়ার তৈরি করা ও তার প্রযুক্তি ফিটিং–এর খরচ বিশাল। এখন ভারতের আছে শুধু একটি চিরাচরিত বিমানবাহী রণতরী, পরিমার্জিত কিয়েভ-শ্রেণির বাহক আইএনএস বিক্রমাদিত্য, এবং সেটি দেশের পশ্চিম উপকূলে সক্রিয়। ভারতের দ্বিতীয় এয়ারক্রাফ্ট ক্যারিয়ার আইএনএস বিক্রান্ত ২০২১ সালের আগস্ট থেকে সমুদ্র পরীক্ষা দিচ্ছে, এবং এই বছর চালু হতে চলেছে। এর পরিকাঠামোগত পরিসমাপ্তি শেষ হলে এক বছর পরে এটিকে ভারতের পূর্ব উপকূলে মোতায়েন করা হবে। আইএনএস বিক্রমাদিত্য রাশিয়া থেকে ২০০৪ সালে ২৩৫ কোটি মার্কিন ডলার দিয়ে কেনা হয়েছিল। আইএনএস বিক্রান্ত দেশীয় ভাবে তৈরি করা হয়েছে (আইএসি-১), এবং প্রকল্পের খরচ অনুমান করা হয়েছিল ৩১০-৩৫০ কোটি মার্কিন ডলার। কিন্তু ওভারহল করার খরচ এবং জাহাজে রাখা অস্ত্রের খরচ সহ আইএনএস বিক্রমাদিত্যের জন্য ভারতের মোট খরচ হয়েছে ১০০০-১১০০ কোটি মার্কিন ডলার। সেই দিক থেকে দেখলে, আইএসি-২-এর স্থান এবং আকারের চাহিদা মেটাতে পারে এমন একটি পরমাণু চালিত ক্যারিয়ারের জন্য ভারতকে আধুনিকতম প্রযুক্তি ও পারমাণবিক চুল্লির ডিজাইন ও ফিটিংয়ের অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হবে। ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবর্ষে নৌবাহিনীর খরচের পরিপ্রেক্ষিতে, বিশেষ করে চিনের এ২/‌এডি সক্ষমতার দ্রুত বিকাশের সময়, ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য সি ডিনায়েল (যেমন সাবমেরিন ও ফাইটার জেট)–এর‌ মতো তাৎক্ষণিক-মেয়াদি লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক সম্পদে বিনিয়োগ করা আরও যুক্তিযুক্ত বলে মনে হয়।

আইএনএস বিক্রান্তের (আইএসি-১) ক্ষেত্রে নৌবাহিনীর রিপোর্টে বলা হয়েছে নৌবাহিনী প্রায় ২৩,০০০ কোটি টাকা (ক্যারিয়ারের প্রকল্প খরচের ৮৫ শতাংশ) ইতিমধ্যেই ভারতীয় অর্থনীতিতে ফিরিয়ে দিয়েছে, এবং ক্যারিয়ারটি প্রতিদিন ২,০০০ জনের সরাসরি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করেছে। বেকারত্বের জালে আটকে থাকা অর্থনীতিতে তৃতীয় পারমাণবিক শক্তিচালিত ক্যারিয়ারের জন্য অনুমোদন দেওয়া হলে তা জাহাজে এবং বাড়িতে মিলিয়ে অনেক প্রয়োজনীয় চাকরির সুযোগ তৈরি করবে।

সামনের পথ

প্রযুক্তিগত-লজিস্টিক দৃষ্টিকোণ থেকে, এবং ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য ৪৬,৩২৩ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দের কথা মাথায় রেখে, নৌবাহিনী প্রথমে এখনকার প্ল্যাটফর্মগুলির গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা ফাঁক পূরণে বিনিয়োগের কথা বিবেচনা করতে পারে। যেমন আইএনএস বিক্রমাদিত্য, যাকে ২০১৩ সালে সিনিয়র নৌ–কর্মকর্তা রিয়ার অ্যাডমিরাল এস. মধুসূদনন (অবসরপ্রাপ্ত) ‘‌স্টেট অফ দ্য-আর্ট’‌ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন, তা হাইড্রলিক ওভারলোড এবং বিষাক্ত ধোঁয়া নিঃসরণের কারণে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল৷ শীঘ্রই আমাদের ক্যারিয়ারগুলির অত্যধিক ব্যবহারের বিষয়টিরও সুরাহা করতে হবে (‌এই ঘটনা ইউএসএস হেনরি এস ট্রুম্যান এবং ইউএসএস ডোয়াইট আইজেনহাওয়ারের মতো মার্কিন এয়ারক্র‌্যাফট ক্যারিয়ারগুলির ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে)‌। অত্যধিক ব্যবহার বার্নআউট–এর কারণ হয়, এবং সেই কারণে ঘন ঘন সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয় (যেমনটি ২০১৭ সালে বাতিল করা ভারতের দীর্ঘতম পরিষেবা প্রদানকারী ক্যারিয়ার আইএনএস বিরাটের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে)।

পুরনো ‘‌স্কি-জাম্প’‌-এর পরিবর্তে আইএসি–২-এ ক্যাটাপল্ট-অ্যাসিস্টেড টেক-অফের সফল সংযোজন কিন্তু ডসাউ রাফাল-এম-এর মতো টুইন-ইঞ্জিন ক্যারিয়ার-ভিত্তিক যুদ্ধবিমানের দক্ষ ব্যবহারের ব্যবস্থা করতে পারে।

তবে দীর্ঘমেয়াদে তৃতীয় এয়ারক্রাফ্ট চালু করা খুবই কাজের হবে। দেশীয় নির্মাণক্ষমতা বৃদ্ধি করা হলে তা কেনার খরচ কমাতে সাহায্য করবে;‌ এবং একটি হাইব্রিড ইলেকট্রিক প্রপালশন-ক্যাটোবার সিস্টেম ততটাই সুবিধা দিতে পারে যা একটি পারমাণবিক শক্তিচালিত ক্যারিয়ার দেয়। পুরনো ‘‌স্কি-জাম্প’‌-এর পরিবর্তে আইএসি–২-এ ক্যাটাপল্ট-অ্যাসিস্টেড টেক-অফের সফল সংযোজন কিন্তু ডসাউ রাফাল-এম-এর মতো টুইন-ইঞ্জিন ক্যারিয়ার-ভিত্তিক যুদ্ধবিমানের দক্ষ ব্যবহারের ব্যবস্থা করতে পারে। আইএনএস বিক্রান্তের স্কি-জাম্পের সঙ্গে রাফাল-এম-এর সামঞ্জস্য সাধনের বিষয়টি এখন গোয়ার একটি উপকূল-ভিত্তিক কেন্দ্রে পরীক্ষাধীন, এবং এর ফলাফল তৃতীয় ক্যারিয়ারের ফ্লাইট লঞ্চ ডেকের সম্ভাব্য ডিজাইনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত অন্তর্দৃষ্টি দিতে পারে।

পরিশেষে, প্রতিরক্ষা ও প্রযুক্তি বাণিজ্য উদ্যোগের অধীনে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এয়ারক্র‌্যাফ্ট টেকনলজি–র মাধ্যমে ভারত-মার্কিন অংশীদারি ক্যারিয়ার-ভিত্তিক সক্ষমতার আধুনিকীকরণের উজ্জ্বল সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে, বিশেষ করে আনম্যানড সিস্টেমস–এর ক্ষেত্রে। ২০২১ সালের নভেম্বরে এয়ার সিস্টেম নিয়ে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ–এর একটি বৈঠকে এক দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সম্পন্ন হয়, এবং এই ভাবে একটি এয়ার-লঞ্চড আনম্যান্‌ড এরিয়াল ভেহিক্যালস প্রকল্প তৈরি হয়। মার্কিন নর্থরপ গ্রুমম্যান এক্স-৪৭বি ক্যারিয়ার-ভিত্তিক ড্রোন প্রোগ্রামের সাফল্যের পরিপ্রেক্ষিতে ক্যারিয়ার টেক জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপকে অবশ্যই আলোচনা চালাতে হবে আনম্যান্‌ড সিস্টেম কেনা এবং পরবর্তীতে তার অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে। দীর্ঘমেয়াদে, ক্যারিয়ার-ভিত্তিক ড্রোন ভারতীয় এয়ারক্র‌্যাফ্ট ক্যারিয়ারকে সমুদ্র নিয়ন্ত্রণ এবং ইনটেলিজেন্স, সারভাইল্যান্স ও রিকনায়সান্স (আইএসআর)‌–এর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সুবিধা দিতে পারে।

The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.