ইউরোপীয় ও বৈশ্বিক রাজনীতিতে একটি রূপান্তরমূলক পরিবর্তনের বিন্দুতে ১ জানুয়ারি ২০২৩–এ সুইডেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাউন্সিলের প্রেসিডেন্সি গ্রহণ করেছে। কাউন্সিলের প্রেসিডেন্সিতে এই পরিবর্তনের প্রভাব পড়বে ইইউ–এর মধ্যে এবং ভারত–সহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে ইইউ–এর সম্পর্কের উপর।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে একযোগে চিনের সঙ্গে উত্তেজনা এবং ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চলে বৃহত্তর সহযোগিতার প্রয়োজন–সহ অস্থির আন্তর্জাতিক গতিশীলতার মধ্যে ইউরোপের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক গুণগতভাবে শক্তিশালী হয়েছে, এবং অংশীদারিতে একটি নতুন কৌশলগত উপাদান যুক্ত করেছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ নিয়ে ভারতের নিরপেক্ষতা বজায় রাখা এবং উল্টোদিকে রাশিয়াকে শায়েস্তা করার জন্য ইউরোপের নয়টি নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজ আরোপের মতো বিপরীত অবস্থান সত্ত্বেও এই মতপার্থক্য যে ভালভাবে সামলানো সম্ভব হয়েছে তার কারণ হল কার্যকর যোগাযোগ এবং একে অপরের কৌশলগত বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে আরও ভাল অনুধাবন। ফলে তা সামগ্রিক সম্পর্ককে বাধাগ্রস্ত করছে না।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ফ্রান্সের মতো ঐতিহ্যবাহী ইউরোপীয় শক্তিগুলির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বাইরে সমগ্র ইউরোপে নিজের উপস্থিতির প্রসার ঘটাতে ভারত ছোট ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে সৃজনশীলভাবে তার সম্পর্ক উন্নত করতে তাৎপর্যপূর্ণ সম্পৃক্ততা স্থাপনে উদ্যোগী হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে সুইডেন, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, নরওয়ে ও আইসল্যান্ডকে নিয়ে গঠিত নর্ডিক অঞ্চল এখন ইউরোপের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের উজ্জ্বলতম জায়গায় আবির্ভূত হয়েছে। দুটি দ্বিপাক্ষিক ভারত–নর্ডিক শীর্ষসম্মেলন হয়েছে। ভারত ছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একমাত্র দেশ যেটি এই অঞ্চলের সঙ্গে শীর্ষ সম্মেলন–স্তরের বৈঠক করেছে। ভারতের এই উদ্যোগের ফলে এই অঞ্চলটির সঙ্গে অবিরত সম্মিলিত সম্পৃক্ততা তৈরি হয়েছে।
নর্ডিকদের মধ্যে বাণিজ্য, উদ্ভাবন ও শক্তি স্থানান্তরের ক্ষেত্রে বিশাল দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার পরিসরে সুইডেনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক সবচেয়ে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। ২০১৮ সালে সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী লুফভেনের নেতৃত্বে প্রথম ভারত–নর্ডিক শীর্ষ সম্মেলন আয়োজিত হয়েছিল। ৩০ বছরের মধ্যে সুইডেন সফর করা প্রথম ভারতীয় নেতা হলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এরপর ২০১৯ সালে সুইডিশ রাজা ভারত সফর করেছিলেন। অতিমারি–পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং ইউক্রেন যুদ্ধের কঠিন বৈশ্বিক পরিস্থিতির পটভূমি সত্ত্বেও ২০২২ সালে দ্বিতীয় ভারত–নর্ডিক শীর্ষ সম্মেলনে এই সম্পর্ক আরও গতি পেয়েছে। রাশিয়ার কাছ থেকে ভারতের তেল ক্রয় বৃদ্ধির প্রশ্নে সুইডেনের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন ও বৈদেশিক বাণিজ্য মন্ত্রী জোহান ফরসেল এই বিষয়টিকে ভারতের ‘অভ্যন্তরীণ নীতি’ বলে উল্লেখ করে বলেছেন যে সুইডেন এতে হস্তক্ষেপ করবে না। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক যেভাবে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে তার প্রেক্ষিতে সুইডিশ প্রেসিডেন্সি এসেছে ভারতের জন্য অনুকূল সময়ে।
ইইউ কাউন্সিলের পর্যায়ক্রমিক ছয় মাসের প্রেসিডেন্সির ভূমিকা প্রায়শই ভারতের সঙ্গে ইউরোপের সম্পর্কের উপর একটি নির্দিষ্ট ও ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ফরাসি প্রেসিডেন্সির সময় ফ্রান্স ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চলে ইউরোপীয় সহযোগিতাকে অগ্রাধিকার দিয়েছিল এবং প্যারিসে ইন্দো–প্যাসিফিক মিনিস্টারিয়াল ফোরামের আয়োজন করেছিল। এই ঘটনাগুলি ছিল এই অঞ্চলে ক্ষমতার সুষম বণ্টন নিশ্চিত করার জন্য ভারতের আগ্রহের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। পরবর্তী চেক প্রেসিডেন্সি ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে তাইওয়ানের সঙ্গে সহযোগিতাকে ইইউ অ্যাজেন্ডায় অন্তর্ভুক্ত করে। চিনের সঙ্গে ইউরোপের সংঘাত আর তাইওয়ান প্রণালী নিয়ে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার সময়কাল একে অপরের সঙ্গে মিলে গিয়েছিল; আবার তা চিনের বিরুদ্ধে ভারসাম্য বজায় রাখতে ভারতের আগ্রহের সঙ্গেও সমঞ্জস ছিল। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, ২০২১ সালের জানুয়ারিতে পর্তুগিজ প্রেসিডেন্সির সময় যখন ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে শীর্ষ অগ্রাধিকার হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল, সেই সময় ঐতিহাসিক ইইউ–ভারত নেতৃবৃন্দের সভাটি ২৭+১ ফরম্যাটে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তার আগে এমন ঘটেছিল শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে। এটি ২০১৩ সাল থেকে প্রায় এক দশক ধরে স্থগিত ভারত–ইইউ মুক্ত-বাণিজ্যচুক্তি আলোচনাকে অত্যাবশ্যকীয় নবজন্ম দেওয়ার দিকে চালিত করে। এইভাবে পর্তুগিজদের প্রচেষ্টা ভারত–ইইউ এফটিএ–কে দৃঢ়ভাবে টেবিলে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। ২০২২ সালের জুনে আলোচনার পুনরুজ্জীবনের পর থেকে তিনটি দফায় আলোচনা হয়েছে।
ইউরোপের এখনকার ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি ও জ্বালানি সংকটের সঙ্গে লড়াইয়ের পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় কাউন্সিলের সুইডিশ প্রেসিডেন্সি এর চেয়ে ভাল সময়ে আসতে পারত না।
ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি ও জ্বালানি সংকটের সঙ্গে ইউরোপের চলতি লড়াইয়ের পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় কাউন্সিলের সুইডিশ প্রেসিডেন্সি এর চেয়ে ভাল সময়ে আসতে পারত না। ধনী নর্ডিক দেশগুলি তাদের সফল রাষ্ট্রীয় মডেলে উচ্চস্তরের অর্থনৈতিক বৃদ্ধিকে সামাজিক কল্যাণের সঙ্গে সমন্বিত করে। এই দেশগুলির মধ্যে সুইডেনের জিডিপি সর্বোচ্চ, এবং দেশটি ইইউ স্তরে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। সুইডেন বিশ্বের সর্বাধিক মুক্ত-বাণিজ্য–সমর্থক দেশগুলির মধ্যে একটি, এবং তার সমৃদ্ধির জন্য দেশটি মূলত রপ্তানির উপর নির্ভর করে। সুতরাং এটা আশ্চর্যের কিছু নয় যে সুইডেনের প্রেসিডেন্সির সময় তার শীর্ষ অগ্রাধিকারগুলির মধ্যে থাকবে ইউরোপের অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা জোরদার করার প্রয়োজন তুলে ধরা। তাছাড়াও অ্যাজেন্ডায় রয়েছে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলির সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আসন্ন বাণিজ্যচুক্তির অগ্রগতি। এই ঘটনাটি সুরক্ষাবাদী ফরাসি প্রেসিডেন্সির বিপরীত। নিরাপত্তা দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে ফরাসি প্রেসিডেন্সি ভারতের জন্য ভাল ছিল, কিন্তু এই প্রেসিডেন্সি এপ্রিলে ফরাসি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে কৃষক ও অন্য কিছু ভোটারগোষ্ঠীর উপর সম্ভাব্য প্রভাবের ভয়ে বাণিজ্যচুক্তিগুলি হিমায়িত করেছিল৷
সুইডিশ কোম্পানি ও প্রযুক্তি, যেমন এরিকসন, স্কাইপ, ব্লুটুথ ও স্পটিফাই, ভারতে ঘরে ঘরে পরিচিত নাম। তবুও ভারত ও সুইডেনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, যা ২০১৮–১৯ সালে ছিল ২.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, তা ২০২০–২১ সালে হ্রাস পেয়ে হয়েছে ১.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই সময় সামগ্রিক ভারত–নর্ডিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি এবং চিন ও জাপানের পরে এশিয়ায় সুইডেনের তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার হিসাবে ভারতের উত্থান সত্ত্বেও এক্ষেত্রে চিনের সঙ্গে ব্যবধানটি বিশাল। এই সময়ে চিন–নর্ডিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল মার্কিন ডলারে ৭০ বিলিয়ন।
সুইডেন, বৃহত্তর নর্ডিক অঞ্চল, এবং প্রকৃতপক্ষে সামগ্রিকভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভারতকে একটি বিশাল বাজার হিসেবে দেখে, যেখানে অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততার অগ্রগতির বিশাল সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে।
সুইডেন, বৃহত্তর নর্ডিক অঞ্চল, এবং প্রকৃতপক্ষে সামগ্রিকভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভারতকে একটি বিশাল বাজার হিসেবে দেখে, যেখানে অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততার অগ্রগতির বিশাল সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে। এইভাবে ইইউ–ভারত মুক্ত-বাণিজ্যচুক্তির আলোচনার দিকে এগিয়ে যাওয়া এবং এতে কিছু অর্জন করা সুইডেনের ইইউ প্রেসিডেন্সির অ্যাজেন্ডায় দৃঢ়ভাবে রয়েছে। ভারতের অভ্যন্তরেও সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সম্প্রতি স্বাক্ষরিত চুক্তির পর স্পষ্টভাবে বাণিজ্যচুক্তির প্রতি নতুন করে উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে।
সুইডেন বছরের পর বছর ধরে দ্বিমুখী ব্যবসায়িক সংযোগকে উন্নীত করার জন্য ‘সুইডেন ইন্ডিয়া বিজনেস কাউন্সিল’–এর মতো বেশ কয়েকটি প্রক্রিয়া ও ‘টাইম ফর ইন্ডিয়া’–র মতো বাণিজ্য প্রচারণা স্থাপন করেছে। ২০২৩ সালের শুরুর দিকে আসন্ন উত্তরপ্রদেশ গ্লোবাল ইনভেস্টরস সামিটে উত্তরপ্রদেশ রাজ্য সরকার সেখানে বিনিয়োগে আগ্রহের কারণে অনেক সুইডিশ ব্যবসাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ১৫,০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করার জন্য।
তবে এফটিএ–এর মাধ্যমেই সবচেয়ে বড় বাণিজ্য সম্ভাবনা উন্মোচিত করা যেতে পারে, এবং ভারত–ইইউ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের থেকে দ্বিগুণ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। অতএব, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সুইডেনের প্রেসিডেন্সি ভারতের জন্য সবচেয়ে উপকারী হবে, যেখানে সুইডেনের সক্রিয় সমর্থন আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে এবং কিছু পার্থক্য দূর করতে পারে। প্রকৃতপক্ষে, প্রেসিডেন্সির দায়িত্ব নেওয়ার ঠিক আগে ফরসেল ভারতে এসে ভারতের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের সঙ্গে দেখা করেছিলেন, এবং বলেছিলেন যে সুইডেন আলোচনায় এক ‘সৎ দালাল’ হিসাবে কাজ করবে এবং প্রেসিডেন্সির সময় বাণিজ্যশুল্ক কমানো একটি ‘অসাধারণ অর্জন’ হবে।
এছাড়াও, বিনিয়োগের উপর ইইউ–চায়না কমপ্রিহেনসিভ এগ্রিমেন্ট এখনও ইউরোপীয় পার্লামেন্টে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে, ট্রান্সঅ্যাটলান্টিক ট্রেড অ্যানড ইনভেস্টমেন্ট পার্টনারশিপ সময়ের সঙ্গে হিমায়িত রয়ে গেছে, এবং নতুন মার্কিন মূল্যস্ফীতি হ্রাস আইনের কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সেদেশের বাণিজ্য বিবাদ শুরু হয়েছে। ইউরোপের শীর্ষ ব্যবসায়িক অংশীদার চিন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ার ফলে এই মহাদেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, চিনের সঙ্গে সুইডেনের নিজস্ব দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবনতির সূত্র চিনে সুইডিশ বইবিক্রেতা গুই মিনহাই-এর দণ্ডাদেশে খুঁজে পাওয়া যেতে পারে।
অতিমারি ও ইউক্রেনের যুদ্ধ ইইউকে ভূ–রাজনীতির দৃষ্টিকোণে তার বাণিজ্য কৌশলগুলি পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করেছে। রাশিয়া ও চিনের শক্তি ও বাজারের অস্ত্রীকরণের বিষয়ে ইউরোপের অভিজ্ঞতা ইউরোপীয় ইউনিয়নকে মূল্যবোধভিত্তিক সম্পর্কের পুনরুত্থানের দিকে নিয়ে যাচ্ছে, এবং তার ফলে যাদের সরবরাহ শৃঙ্খলগুলিকে ভূ–রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহারের সম্ভাবনা কম তেমন নিয়মভিত্তিক ব্যবস্থা মেনে–চলা সমমনা গণতান্ত্রিক দেশগুলির সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্যের গভীরতাবৃদ্ধি অগ্রাধিকার পাচ্ছে। মুক্ত বাণিজ্যের জন্য তার অতুলনীয় ঝোঁকসহ সুইডেন এই লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছে, এবং ভারতের উপর তার বিশেষ মনোযোগ রয়েছে। সুইডিশ বিদেশমন্ত্রী টোবিয়াস বিলস্ট্রোম আবার বলেছেন, ‘এটি গণতন্ত্রের জন্য একটি মারাত্মক পরিবেশ, বিশেষ করে ছোট দেশগুলির জন্য।’ ভারতের জন্য অর্থনীতিবিদ অরবিন্দ পানাগড়িয়া সুপারিশ করেছেন: যেহেতু বাণিজ্য-সম্পর্ক সীমিত করে চিনের সীমান্ত লঙ্ঘনের প্রতিক্রিয়া দেখানো শেষ পর্যন্ত ভারতের বৃদ্ধিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, তাই তার পরিবর্তে ভারতের উচিৎ এফটিএ–এর মাধ্যমে ইইউ ও ব্রিটেনের সঙ্গে তার বাণিজ্য প্রসারিত করা।
ব্রাসেলস-স্তরে বৃহত্তর সহযোগিতার ভিত্তি হিসাবে নিজেদের উল্লেখযোগ্য দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের শক্তিকে পুঁজি করাটাই নয়াদিল্লি ও স্টকহলমের পক্ষে কার্যকর হবে, কারণ সেভাবে বাণিজ্যে প্রাথমিক ও সর্বাধিক ফোকাসে রেখে সাধারণ লক্ষ্যগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব৷ কাউন্সিলে তাদের প্রেসিডেন্সির সময় বাস্তববাদী ও উদ্ভাবনী সুইডিশদের লক্ষ্য এফটিএ আলোচনায় নতুন গতি প্রদান করা। যেহেতু অ্যালকোহল, কৃষি ও অটোমোবাইল সম্পর্কিত জটিল দীর্ঘস্থায়ী সমস্যাগুলি এখনও সমাধানের অপেক্ষায়, সামনের পথটি অমসৃণ এবং পুরস্কারও অধরা, তাই চুক্তিটি ২০২৩ সালেও সমাপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবুও রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রাচুর্য থাকায় আলোচনায় যথেষ্ট অগ্রগতির আশা রয়েছে।
ভারত–ইইউ অংশীদারির ক্রমবর্ধমান ‘কৌশলগত’ মাত্রাটি উদযাপনের অনেক কারণ আছে ঠিকই, তবুও সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা রয়েছে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে, যেখানে সম্পর্কটি বাণিজ্য-বাধা অপসারণের মাধ্যমে ও বাজারে প্রবেশের সুবিধা করে দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি তথা সবচেয়ে বড় একক বাজারে সর্বাধিক সুবিধা এনে দিতে পারে, এবং বাস্তব ফলাফল প্রদান করতে পারে। সুতরাং ভারত–ইইউ সম্পর্ক সুসংহত ও সুদৃঢ় করার সর্বোত্তম উপায় এফটিএ চূড়ান্ত করা। এটি অর্জিত না–হওয়া পর্যন্ত এফটিএ–এর দীর্ঘ ছায়া অবিরত পড়বে সম্পর্কর উপর, এবং সহযোগিতার অন্য ক্ষেত্রগুলিকেও প্রভাবিত করবে।
The views expressed above belong to the author(s). ORF research and analyses now available on Telegram! Click here to access our curated content — blogs, longforms and interviews.